অর্থনৈতিক সেক্টরে এই দুর্নীতির খবর বিদেশে আমাদের ভাবমূর্তির যথেষ্ট ক্ষতি করেছে। এটা আরো দুঃখজনক যে আমাদের দেশে যেসব দুর্নীতির তদন্ত হয়, দাতাগোষ্ঠী ওই তদন্তের ওপর আস্থা রাখতে পারছে না। ইতিমধ্যে সাবেক মন্ত্রী আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে উত্থাপিত দুর্নীতির অভিযোগের কোনো সত্যতা পায়নি দুদক। আবুল হোসেন কোনো দুর্নীতি করেননি- এসব সার্টিফিকেটও দিয়েছিল দুদক। সাধারণ মানুষ এতে আস্থা রাখতে পারেনি। দুদকের তদন্তে বিশ্বব্যাংকের যদি আস্থা থাকত, তাহলে বিশ্বব্যাংক ওকাম্পোর মতো একজন দক্ষ প্রসিকিউটরকে বিষয়টি তদন্ত করতে এ দেশে পাঠাত না। যদিও তারা সেই অর্থে কোনো তদন্ত করবে না। তারা দুই দেশের তদন্তকাজ পর্যালোচনা করবে। তবে তারা পদ্মা সেতুসংক্রান্ত সব কাগজপত্র দেখবে। সেখানে কোনো অনিয়ম হয়েছে কি না, তারা সেটা পর্যালোচনা করবে। এটা ব্যক্তি আবুল হোসেন নয়, বরং বাংলাদেশের জন্যও মঙ্গল। সাবেক মন্ত্রী আবুল হোসেন বারবার বলে আসছেন, তিনি কোনো দুর্নীতি করেননি এবং দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেননি। দুদক তাঁকে দুর্নীতিমুক্ত বলে সার্টিফিকেটও দিয়েছিল। এখন দুদকের জন্যও একটি সুযোগের সৃষ্টি হলো- তাদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর। বিশ্বব্যাংক টিম তাদের তদন্তে যদি অনিয়ম খুঁজে পায় কিংবা দুর্নীতির অভিযোগের সত্যতা খুঁজে পায়, তাহলে পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন তো বন্ধ হয়ে যাবেই, তার চেয়েও বড় কথা বাংলাদেশ বড় ধরনের ইমেজ সংকটের মুখে পড়বে। যদিও দুদক চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, রবিবার বিশ্বব্যাংক প্যানেলের বিশেষজ্ঞরা দুদকের সহযোগিতায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
বাংলাদেশে দুর্নীতির অভিযোগ বিশ্বব্যাংকের পুরোনো। শীর্ষ পর্যায়ে দুর্নীতি হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা প্রমাণিতও হয়েছে। একজন মন্ত্রী কিংবা একটি সরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তারা যদি লুটপাটের সঙ্গে জড়িত থাকেন, তাহলে এর চেয়ে দুঃখজনক কিছু থাকতে পারে না। দুর্নীতির এই 'ইমেজ' যদি আমরা ভাঙতে না পারি, তাহলে ভবিষ্যতে দাতারা আদৌ কোনো সাহায্য দেবে না। তাদের মধ্যে এমন একটি ধারণার জন্ম হবে যে প্রকল্পে দেওয়া সাহায্য আদৌ ব্যবহৃত হবে না। আমরা, আমাদের নীতিনির্ধারকরা বিশ্বব্যাংকের তদন্ত টিমের ঢাকা আগমনকে কতটুকু গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন বলতে পারব না। তবে এটা বলতে পারব, বাংলাদেশ এখন বিশ্ব মিডিয়ার ওয়াচলিস্টে রয়েছে। দাতাগোষ্ঠী এই তদন্তকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। আমরা একান্তভাবেই কামনা করি, বিশ্বব্যাংকের তদন্ত টিমের পর্যবেক্ষণে বেরিয়ে আসুক পদ্মা সেতু নির্মাণে কোনো দুর্নীতি হয়নি কিংবা আমাদের সাবেক মন্ত্রী ও উপদেষ্টা কোনোভাবেই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। সেই সঙ্গে অতি সাম্প্রতিককালে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের তদন্ত করুক একটি বিচার বিভাগীয় টিম। দুদক তো একবার তদন্ত করেছে। সেখানে তো তারা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের কোনো সম্পৃক্ততা খুঁজে পায়নি। যেহেতু অভিযোগটি আবারও উঠেছে, সে ক্ষেত্রে সরকার তার স্বচ্ছতার খাতিরে হাইকোর্টের একজন বিচারপতির নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করতে পারে। আর অভিজ্ঞ সুরঞ্জিত বাবু নিশ্চয়ই জানেন তিনি যদি ক্যাবিনেটে থাকেন, তাহলে তদন্তের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। তাই তিনিও 'ছুটিতে' যেতে পারেন। আমরা চাই তিনি দুর্নীতিমুক্ত হয়েই ফিরে আসুন। তিনি ক্যাবিনেটে থাকলে তাঁকে নিয়ে আরো লেখালেখি হবে। অনেক সত্য-অসত্য সংবাদ, ব্যঙ্গচিত্র ফেসবুকে নিত্য ছাপা হবে- এটা তাঁর নামের প্রতি সুবিচার হবে না।
আসলে সময় এসেছে সরকারের শক্ত অবস্থানে থাকার। তানভীর গ্রেপ্তার হয়েছেন। এটাই শেষ কথা নয়। তাঁকে আর্থিক অনিয়মে যে সহযোগিতা করেছে, কারা কারা অর্থ লুটপাটের সঙ্গে জড়িত ছিল, তাঁদের শুধু গ্রেপ্তারই যথেষ্ট নয়, বরং তাঁদের সব সম্পদ বাজেয়াপ্ত করাও প্রয়োজন। একটি দৃষ্টান্ত স্থাপিত হোক। অন্তত বিশ্ববাসী দেখুক, আমরাও দুর্নীতির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিতে পারি। এতে করে বহির্বিশ্বে আমাদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। বিশ্বব্যাংকের টিম এসেছে। এটা আমাদের জন্য লজ্জার। কেন বিদেশ থেকে টিম আসবে তদন্ত করতে? কেন আমরা দুর্নীতিবাজদের বারবার প্রোটেকশন দেব? আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে যদি শক্ত অবস্থানে যেতে পারি, তাহলে আগামী নির্বাচন সরকারের জন্য যেমন একটি 'প্লাস পয়েন্ট', ঠিক তেমনি বিশ্ব আসরে মাথা তুলে দাঁড়ানোরও একটি সুযোগ তৈরি হবে। বিশ্বব্যাংকের তদন্ত টিমের ঢাকা আগমনকে কেন্দ্র করে আমাদের নীতিনির্ধারকরা যদি পুরো বিষয় নিয়ে ভাবেন, সেখানেই আমাদের সবার মঙ্গল নিহিত।Daily KALERKONTHO16.10.12
0 comments:
Post a Comment