রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

ওবামার এশিয়া সফর ও আমাদের পররাষ্ট্রনীতি


ওবামা মিয়ানমারে যাচ্ছেন আজ ১৯ নভেম্বর। তার এশিয়া সফরে তিনি তিনটি দেশে যাবেনÑ মিয়ানমার, থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া। দ্বিতীয় টার্মে বিজয়ী হওয়ার পর প্রথম সফর হিসেবে তিনি যখন মিয়ানমারকে বেছে নেন, তখন বুঝতে হবে যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারকে গুরুত্ব দিচ্ছে। এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরকে ঘিরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে স্ট্র্যাটেজি, সেই স্ট্র্যাটেজিতে দক্ষিণ এশিয়ার একটি বড় ভূমিকা রয়েছে। আমেরিকান নীতিতে যে পরিবর্তন আসছে, তাতে বাংলাদেশও একটি অংশ। বাংলাদেশের ব্যাপারেও যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ বেড়েছে। হিলারি ক্লিনটনের বাংলাদেশ সফরের সময় একটি ‘যৌথ অংশীদারিত্ব সংলাপ’ চুক্তি স্বাক্ষর, প্রস্তাবিত ‘আকসা’ (অ্যাকুইজেশন অ্যান্ড ক্রস সার্ভিসেস এগ্রিমেন্ট) চুক্তি বাংলাদেশের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহেরই বহিঃপ্রকাশ। এ অঞ্চল ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের যে স্ট্র্যাটেজি, তাতে আগামীতে বাংলাদেশ একটি বড় ভূমিকা পালন করবে। এখন এই স্ট্র্যাটেজিতে যোগ হল মিয়ানমারের নাম। ওবামার মিয়ানমার সফরের সুযোগটি আমরা গ্রহণ করতে পারতাম। যদিও একটি সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি সামনে রেখেই ওবামা এ অঞ্চলে আসছেন। কম্বোডিয়ায় পূর্ব এশিয়া শীর্ষ সম্মেলনে তিনি যোগ দেবেন। আর থাইল্যান্ডে একটি সামরিক মহড়ায়ও উপস্থিত থাকবেন। আমাদের পররাষ্ট্রনীতির ব্যর্থতা এখানেই যে, আমরা এই সুযোগটি কাজে লাগাতে পারলাম না এবং ওবামাকেও বাংলাদেশ সফরে আমন্ত্রণ জানাতে পারলাম না। আমাদের স্বার্থেই এ সফর আমাদের প্রয়োজন ছিল।
আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একটি ‘কাজে’ অত্যন্ত দক্ষ। তিনি ভ্রমণ করতে ভালোবাসেন। নিজে সব প্রটোকল ভেঙে শীর্ষ সম্মেলন চলাকালীনই ছবি তোলেন এবং নিজের ‘অবস্থান’-এর কথা ভুলে গিয়ে ভিভিআইপিদের ‘অটোগ্রাফ’ নেন। পররাষ্ট্রনীতি বাস্তবায়ন কিংবা সফলতার জন্য তার এই ‘ফটোগ্রাফি’ কিংবা ‘অটোগ্রাফ’ নেয়া আদৌ কোন ভূমিকা পালন করতে পেরেছে কিনা, সেটা ভিন্ন প্রশ্ন। তবে আমি নিশ্চিত কোন কোন ‘ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট’ কোম্পানি তার তোলা ছবি ও ‘অটোগ্রাফ’ নিয়ে একটি প্রদর্শনী করতে পারে আগামীতে (প্রদর্শনীর নাম হতে পারে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর চোখে বিশ্ব)। কিছুদিন আগে একটি দৈনিক পত্রিকা তাদের প্রথম পাতার সংবাদে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিদেশ সফর নিয়ে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করেছিল। তাতে দেখা যায়, গত ৪৬ মাসে তিনি ১৪৯ বার বিদেশ সফর করেছেন। ৪৫২ দিন সফরে বিদেশে কাটিয়েছেন। এর পরে যোগ হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার কম্বোডিয়া ও লাওস সফর। তিনি জিবুতিতেও গিয়েছিলেন। এখন যাবেন রাশিয়া সফরে। তার পেছনে ২০০৯ সালে খরচ হয়েছিল ৬৬ লাখ ৭৮ হাজার ৮৫ টাকা (হাত খরচ, দৈনিক ভাতা, আপ্যায়ন ভাতা, আনুষঙ্গিক ভাতা, ট্রানজিট ভাতা ইত্যাদি)। মাত্র ১৩টি দেশের খরচ ছিল ওটি। এরপর কোন অনুসন্ধানী সাংবাদিক ২০১০, ২০১১ ও ২০১২ সালের খরচ বের করতে পারেন। তার সফরের একটা বড় অংশজুড়ে থাকে সেমিনারে অংশগ্রহণ। এসব সফরে দেশের স্বার্থ সুরক্ষা ও কূটনৈতিক দরকষাকষির কোন সুযোগ নেই। বাংলাদেশের মতো একটি গরিব দেশে, যেখানে কৃচ্ছ্রসাধন জরুরি, সেখানে সেমিনারকেন্দ্রিক সফরে না যাওয়াই উত্তম। যেখানে বাংলাদেশের স্বার্থ জড়িত রয়েছে, কিংবা দ্বিপক্ষীয় আলোচনার সুযোগ আছে, সেখানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী অবশ্যই যাবেন। পত্রিকায় দেখলাম, আমাদের ‘রবীন্দ্রপ্রেমিক’ ও ‘চিত্রকলা বিশেষজ্ঞ’ পররাষ্ট্র সচিব জাতিসংঘের সিভিল সার্ভিস সমিতির সদস্য মনোনীত হয়েছেন। এটা নিঃসন্দেহে তার জন্য একটি বড় পাওয়া। কিন্তু পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে তিনি কতটুকু সাফল্য বয়ে আনতে পেরেছেন, সে প্রশ্ন থেকেই গেল।
প্রসঙ্গে আসছি। ওবামার এশিয়া সফর আমাদের জন্য একটি বড় সম্ভাবনা সৃষ্টি করতে পারতÑ যদি ওবামাকে বাংলাদেশে আসার ব্যবস্থা আমরা করতে পারতাম। বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক ভালো। ড. ইউনূসের কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের নাম-যশ আরও বেড়েছে। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অংশগ্রহণ বারবার প্রশংসিত হয়েছে। একাধিক মার্কিন প্রেসিডেন্ট এই ভূমিকার প্রশংসা করেছেন। এটা আমাদের বড় পাওয়া। আমাদের সেনাবাহিনী প্রকারান্তরে আমাদের বৈদেশিক নীতির সাফল্যের পেছনে একটি বড় ভূমিকা পালন করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে দু-একটি বিষয় এখনও ঝুলে আছে। এর একটি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাকের কোটামুক্ত সুবিধা। অনেক দিন থেকেই আমাদের ব্যবসায়িক নেতারা শুল্কমুক্ত কোটা সুবিধা চেয়ে আসছেন। যুক্তরাষ্ট্র আফ্রিকার অনেক দেশকেই এ সুবিধা দেয়। আমাদের ব্যবসায়ীরা প্রায় ১৫ ভাগ শুল্ক দিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তাদের পণ্য (তৈরি পোশাক) নিয়ে মার্কিন বাজারে টিকে আছেন। আজ ওবামার সফরের মধ্য দিয়ে আমরা এ ধরনের একটি প্রতিশ্র“তি আদায় করতে পারতাম। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সাহায্য সংস্থা ‘মিলেনিয়াম চ্যালেঞ্জ করপোরেশন’ (এমসিসি) থেকে বাংলাদেশ কোন সাহায্য পাচ্ছে না। ২০০৪ সালে এমসিসি গঠিত হয়েছিল। ওবামার সফরের মধ্যে দিয়ে আমরা এ ব্যাপারে সুবিধা নিতে পারতাম। বিশ্বব্যাপী জঙ্গি উচ্ছেদে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের পার্টনার। এ লক্ষ্যে হিলারি ক্লিনটনের বাংলাদেশ সফরের সময় আমরা একটা ‘যৌথ অংশীদারিত্ব সংলাপ’ চুক্তি স্বাক্ষর করেছি। ‘আকসা’ বা ‘অ্যাকুইজেশন অ্যান্ড ক্রস সার্ভিসেস এগ্রিমেন্ট’ নিয়েও আলোচনা অনেক দূর এগিয়ে গেছে। প্রস্তাবিত ওই চুক্তি অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র তার সশস্ত্র বাহিনীর জ্বালানি সংগ্রহ, যাত্রাবিরতি, সাময়িক অবস্থানসহ বিভিন্ন সুবিধার জন্য ‘পোর্ট অব কল’ সুবিধা পাবে। এই চুক্তির কিছু ধারা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও সরকার ‘আকসা’ চুক্তি স্বাক্ষর করবে। যুক্তরাষ্ট্র ‘টিকফা’ বা ‘ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কো-অপারেশন ফোরাম এগ্রিমেন্ট’ চুক্তিতে আগ্রহী। ‘টিফা’র পরিবর্তিত নামই হচ্ছে ‘টিকফা’। এখানে মার্কিন স্বার্থ অনেক বেশি। ‘আকফা’ ও ‘টিকফা’ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ অনেক। ওবামার সফর অনুষ্ঠিত হলে এ ব্যাপারে একটি চুক্তি হতে পারত। ওয়াশিংটনের বাংলাদেশ দূতাবাস এ ব্যাপারে আদৌ কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। দূতাবাস এবং রাষ্ট্রদূত তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেননি। এটা সত্য, বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাবান মার্কিন রাষ্ট্রপতির ব্যস্ততা অনেক বেশি। তিনি এর আগে যখন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এসেছিলেন, তখনও একাধিক দেশ সফর করেছিলেন। এ ধরনের সফর অনেক আগেই নির্ধারিত থাকে। ‘হুট’ করে তা পরিবর্তন করা যায় না। তুলনামূলক বিচারে এ মুহূর্তে বাংলাদেশের চেয়ে মিয়ানমার মার্কিন প্রশাসনের কাছে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। প্রেসিডেন্ট থেইন সেইন নিজে বেসামরিক প্রেসিডেন্টের তকমা লাগিয়েছেন। বিরোধী নেত্রী অং সান সু চিকে উপনির্বাচনের মাধ্যমে সংসদে আসার সুযোগ করে দিয়েছেন। সু চি এখন সারা বিশ্ব ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ভারতেও গেলেন। প্রেসিডেন্ট সেইনের এই ‘দুয়ার খোলা’ নীতির সুযোগ নিচ্ছেন মার্কিন বিনিয়োগকারীরা। মার্কিন রাষ্ট্রদূতের অফিস আবার খোলা হয়েছে। কোকাকোলাও এসেছে। মিয়ানমারে রয়েছে বিপুল জ্বালানিসম্পদের (গ্যাস ও তেল) রিজার্ভ। মার্কিন বিনিয়োগকারীরা আসবে এটাই স্বাভাবিক। ওবামার সঙ্গে যে বিপুলসংখ্যক বিনিয়োগকারী আসবেন, তা বলে দিতে হয় না। এখানেই আমাদের ব্যর্থতা। ওবামা ভারতেও এসেছিলেন। তখনও আমরা সুযোগটি নিতে পারিনি। এখন মিয়ানমারে আসছেন। আমরা এই ‘সুযোগ’টিও কাজে লাগাতে পারলাম না। মার্কিন বিনিয়োগকারীদের আমরা আকৃষ্ট করতে পারলাম না। আমাদের অর্থমন্ত্রী দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, দেশে বিনিয়োগ নেই। এর জন্য তিনি দায়ী করেন অধ্যাপক ইউনূসকে (?)। অথচ বিনিয়োগ প্রক্রিয়ার সঙ্গে অধ্যাপক ইউনূস কোনভাবেই জড়িত নন। আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ ক্ষেত্রে ব্যর্থ। বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার ব্যাপারে দূতাবাসগুলোর কোন ভূমিকা নেই।
প্রসঙ্গক্রমে এসে গেল একটা কথাÑ বাংলাদেশ পর্তুগালে নতুন দূতাবাস খুলেছে। এটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি অবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্ত। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্তাব্যক্তিরা নিশ্চয়ই জানেন, সারা ইউরোপেই অর্থনৈতিক মন্দা চলছে। মন্দার কারণে সেখানে একাধিক রাষ্ট্রে কৃচ্ছ্রসাধন চলছে। সরকারেরও পতন হয়েছে (গ্রিস, ইতালি)। পর্তুগালের অবস্থা আরও খারাপ। একক মুদ্রা হিসেবে ইউরো ব্যবহারকারী ১৭ দেশের এ অঞ্চলের দ্বিতীয় প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি আরও শূন্য দশমিক ২ শতাংশ কমেছে। শুধু ইউরো অঞ্চল নয়, ২৭ দেশের ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রবৃদ্ধি শূন্য দশমিক ২ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। তাই পর্তুগালে নয়া দূতাবাস খুলে আমাদের প্রাপ্তি কী? কিছুই না। বরং গোল্ডম্যান স্যাকসের অর্থনীতিবিদ জিম ও’নেইল সম্ভাব্য অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে গওকঞ দেশগুলোর (মেক্সিকো, ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, তুরস্ক) কথা বলছেন, সেসব দেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও বাড়ানো উচিত। গওকঞ দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক বাড়িয়ে আমরা আমাদের জাতীয় স্বার্থ আদায় করতে পারব বেশি।
বিশ্ব দ্রুত বদলে যাচ্ছে। প্রতিটি দেশের পররাষ্ট্রনীতিতেও পরিবর্তন আসছে। সনাতন পররাষ্ট্রনীতি আর থাকছে না। এক্ষেত্রে আমাদের দূতাবাসগুলো পরিচালনায়ও পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। অনেক দেশে দূতাবাস খোলা হয়েছে, যার আদৌ প্রয়োজন ছিল না। খুব কম ক্ষেত্রেই রাষ্ট্রদূতরা ‘সফলতা’ দেখাতে পারছেন। রাষ্ট্রদূত নিয়োগের ক্ষেত্রে সনাতন নিয়োগের প্রক্রিয়া বাতিল করাও প্রয়োজন। মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশ একটি ‘সফ্ট স্টেট’ (ঝড়ভঃ ঝঃধঃব)। আমাদের অনেক কিছু দেয়ার আছে বিশ্বে। আমাদের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশকে সঠিকভাবে তুলে ধরতে পারছেন না। বারাক ওবামাকে আমরা যদি বাংলাদেশে আনতে পারতাম, তাতে করে বিনিয়োগ বাড়ত। বাংলাদেশের ভাবমূর্তিও বিশ্বে উজ্জ্বল হতো। আমরা অধ্যাপক ইউনূসকে ব্যবহার করেও বারাক ওবামার বাংলাদেশ সফর নিশ্চিত করতে পারতাম। কিন্তু সেখানেও আমাদের ব্যর্থতা। অধ্যাপক ইউনূস আমাদের ‘সম্পদ’। এই সম্পদকেও আমরা আমাদের উন্নয়নে কাজে লাগাতে পারলাম না। একটি বড় দেশের প্রেসিডেন্ট যখন তৃতীয় বিশ্বের কোন দেশে যান, তখন ওই দেশের গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেড়ে যায়। এখন মিয়ানমারের গ্রহণযোগ্যতা বিশ্ব আসরে বাড়বে। সুযোগ থাকা সত্ত্বেও আমাদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ল না।
Daily JUGANTOR
19.11.12

0 comments:

Post a Comment