প্রধানমন্ত্রীর নিউইর্য়কে দেওয়া বক্তব্য ও এরপর প্রধান বিরোধী দল নেত্রী খালেদা জিয়া গত ২৭ সেপ্টেম্বর যে কর্মসূচির কথা ঘোষণা করেন, তাতে করে রাজনীতিতে অস্থিরতা আরও বাড়ল। প্রধানমন্ত্রী গত ২৬ সেপ্টেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে বিরোধী দলের সঙ্গে যে কোনো সংলাপের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন। আর খালেদা জিয়া তিনটি বিভাগীয় শহরে রোডমার্চের কর্মসূচির কথা ঘোষণা করেছেন। অনেকেই আশঙ্কা করেছিলেন যে, চারদলীয় জোট হয়ত হরতালের ডাক দেবে; কিন্তু খালেদা জিয়া হরতাল আহ্বান না করে স্পষ্টতই এমন একটা অবস্থান নিলেন, যাতে সাধারণ মানুষ তথা ব্যবসায়ীদের ক্ষতি না হয়। প্রধানমন্ত্রী তো রসিকতা করেই বলেছিলেন, 'দিন তারিখ ঠিক করে মাসে একবার হরতাল ডাকলে মানুষ বিশ্রাম পাবে' (যায়যায়দিন, ২৭ সেপ্টেম্বর)। এখন বেগম জিয়া হরতাল ডাকলেন না বটে; কিন্তু আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করলেন। বাংলাদেশের রাজনীতির বাস্তবতায় যেখানে দুটি প্রধান বিরোধী দলের মাঝে একটি 'সংলাপ' অত্যন্ত জরুরি, সেখানে প্রধানমন্ত্রীর সংলাপের সম্ভাবনা নাকচ করে দেওয়ার ঘটনা রাজনীতিতে উত্তাপ বাড়াবে মাত্র। প্রধানমন্ত্রী নিউইর্য়কে বসে যখন এ ধরনের বক্তব্য রাখেন, এখন বাংলাদেশের সংবাদপত্রে দুটি সংবাদ ছাপা হয়। একটিতে থাইল্যান্ডে দুর্নীতিবিরোধী একটি শোভাযাত্রায় অংশ নিয়েছেন সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রা। তার সঙ্গে আছেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ও বর্তমানে বিরোধী দলের নেতা অভিজিত ভেজ্জাজিভা। অথচ কে না জানে ইংলাকের দল থাইল্যান্ডে 'লালমাটি' আন্দোলন শুরু করে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ভেজ্জাজিভার পতন ডেকে এনেছিল। এখন দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনে তারা একসঙ্গে হলেন। এটাই নিয়ম। দ্বিতীয় সংবাদটি পাকিস্তানের রাজনীতি নিয়ে। হাক্কানি নেটওর্য়াকের সন্ত্রাসী কর্মকা- নিয়ে পাকিস্তানও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক যখন তিক্ততার পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে, তখন ঐক্যবদ্ধভাবে একটি অবস্থান গ্রহণের জন্য সর্বদলীয় একটি বৈঠকের উদ্যোগ নিয়েছিল গিলানি সরকার। বৈঠকটি ইতিমধ্যে অনুষ্ঠিতও হয়েছে। বৈঠকে সরকারের অবস্থানকে সমর্থন করেছে বিরোধী দল। গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির এটাই মূল কথা। এই ব্যবস্থায় সরকার ও বিরোধী দলের সমন্বয়েই রাষ্ট্র ব্যবস্থা পরিচালনা করা হয়; কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, বাংলাদেশে এটি নেই। উচ্চআদালতের রায় অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল হয়ে গেছে। সংবিধান সংশোধন হয়েছে, যেখানে বিরোধী দলের কোনো অংশগ্রহণ নেই। বেগম জিয়া আবারও দাবি করেছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনের। সেটি কীভাবে সম্ভব, এটা একটা বড় প্রশ্ন। বাস্তবতা হচ্ছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাংলাদেশে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছিল ও পরপর তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন এ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আওতায় অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং তা গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল হয়ে গেল। আর বিএনপি চাচ্ছে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনের। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। তবে পরবর্তী দুটি সংসদ নির্বাচন (দশম ও একাদশ) 'নিরপেক্ষ' একটি সরকারের মাধ্যমে আয়োজন করা সম্ভব। এটা সংবিধানের কোনো অংশ হবে না। কিন্তু সংসদে একটি সিদ্ধান্ত গৃহিত হবে। সরকার এ ব্যাপারে সংসদে একটি প্রস্তাব আনতে পারে। অথবা শরিক দলের পক্ষ থেকেও যে কেউ এ ধরনের একটি প্রস্তাব আনতে পারে, যাতে সরকারের সমর্থন থাকবে। এটা একটা 'কমপ্রোমাইজিং ফর্মুলা', বিএনপিকে আস্থায় নেওয়ার একটি উদ্যোগ হতে পারে। তাতে করে অন্তত অস্থিরতার রাজনীতি থেকে আমরা মুক্ত হতে পারব। এই 'নিরপেক্ষ সরকার'-এ কারা থাকবেন, কাঠামো কী হবে, তা বিরোধি দলের সঙ্গে আলোচনা করেই ঠিক করতে হবে। 'নিরপেক্ষ' সরকারের কাঠামোর ব্যাপারে সংসদের স্পিকারও একটি উদ্যোগ নিতে পারেন। সুশীল সমাজকে ও উৎসাহিত করা যেতে পারে একটি ফর্মুলা উপস্থাপন করতে; কিন্তু এর আগে অন্তবর্তীকালীন সরকারের যে ফর্মুলা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত উপস্থাপন করেছিলেন, তা ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। কেননা ওই ফর্মুলা অনুযায়ী মোট ৯০ দিন তো মহাজোট সরকারই ক্ষমতায় থেকে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে দলীয়ভাবে নির্বাচন আয়োজনের প্রশ্ন উঠবে এবং সেক্ষেত্রে বিরোধী দলকে আস্থায় নেওয়া যাবে না। সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করার কথা বলা হচ্ছে। এখন পঞ্চদশ সংশোধনী বলে নির্বাচন কমিশনারদের সংখ্যাও বেড়েছে। কিন্তু নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য তা যথেষ্ট নয়। প্রথমত, বর্তমান সরকারই আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে সিইসি তথা নতুন দুই কমিশনারের নিয়োগ দেবে। এর আগেই নিয়োগ পাবে নতুন দু'জন। সংগত কারণেই তাই দলীয় আনুগত্যের প্রশ্ন উঠবে। সামরিক ও বেসামরিক আমলাদের অবসরের পর রাজনীতি করার প্রবণতা বেড়েছে।
এদের অনেকেই বিশেষ করে বেসামরিক আমলারা ক্ষমতায় থাকার সময়ই একটি 'বিশেষ সম্পর্ক' গড়ে তোলেন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে। কবিতা ও প্রবন্ধ লিখে কেউ নেতা-নেত্রীকে খুশি করেন। এরা যখন এ ধরনের সাংবিধানিক পদে নিয়োগ পান, তখন তাদের 'আনুগত্য' নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। দ্বিতীয়ত, বর্তমান কাঠামোয় নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ-এটা বলা যাবে না। অর্থের জন্য তাদের সরকারের মুখাপেক্ষি হতে হয়। নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব 'ক্যাডার' তৈরি হয়নি, যারা নির্বাচন পরিচালনা করতে পারে। স্থানীয় পর্যায়ে নির্বাচনে সরকারি প্রভাব অস্বীকার করা যাবে না। যতদিন পর্যন্ত না নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব জনবল থাকবে এবং আইন এদের নির্বাচন পরিচালনায় যথেষ্ট ক্ষমতা দেবে, আর্থিক স্বাধীনতা দেবে, সিইসি ও নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগের নিরপেক্ষ 'মেকানিজম' তৈরি হবে, তত দিন পর্যন্ত নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন থাকবেই। ইভিএম মেশিনও গ্রহণযোগ্য নয়। খোদ যুক্তরাষ্ট্রের সর্বত্র তা ব্যবহৃত হয়নি। আমাদের দেশের নিরক্ষরতা, প্রযুক্তি না জানার ব্যর্থতা, ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত ব্যক্তিদের ভূমিকা ও সর্বোপরি 'প্রযুক্তি কারচুপি' নির্বাচনে ইভিএম মেশিন ব্যবহারকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে। সিইসির 'অতি উৎসাহ' ইতিমধ্যে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। নির্বাচনে ইভিএমের ব্যবহার নিয়ে তার সাম্প্রতিক বক্তব্য বিতর্কের মাত্রা আরও বাড়াবে।
সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনী এখন সংবিধানের অংশ। এটা নিয়ে আপত্তি থাকতে পারে; কিন্তু এটা আর পরিবর্তন করা যাবে না। বাস্তবতা হচ্ছে শুধুমাত্র সংসদই পারে ষোলতম সংশোধনী এনে সংবিধানকে পুনরায় আগের অবস্থানে নিয়ে যেতে; কিন্তু তাও খুব সহজ হবে বলে মনে হয় না। কেননা সংবিধান সংশোধন প্রক্রিয়ায় (১৪২ আ) পরিবর্তন আনা হয়েছে। এতে (৭খ) যোগ করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে এ সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদে যাহাই কিছু থাকুক না কেন, সংবিধানের প্রস্তাবনা, প্রথম ভাগের সব অনুচ্ছেদ, দ্বিতীয় ভাগের সব অনুচ্ছেদ, নবম-ক ভাগে বর্ণিত অনুচ্ছেদগুলোর বিধানাবলি সাপেক্ষে তৃতীয় ভাগের সব অনুচ্ছেদ এবং একাদশ ভাগের অনুচ্ছেদ ১৫০সহ সংবিধানের অন্যান্য মৌলিক কাঠামো সংক্রান্ত অনুচ্ছেদগুলোর বিধানাবলি সংযোজন, পরিবর্তন, প্রতিস্থাপন, রহিতকরণ কিংবা অন্য কোনো পন্থায় সংশোধনের অযোগ্য হইবে'। সংবিধানে ৭(খ)-এর অন্তর্ভুক্তি এখন নানা প্রশ্নের জন্ম দেবে এবং সংবিধান সংশোধন কমিটির আসল উদ্দেশ্যকে বড় ধরনের প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেবে। কেননা এর ফলে 'জাতির পিতা' শিরোনামের অনুচ্ছেদ ৪-এ যা কিছু সংযোজিত হয়েছে (ছবি প্রদর্শন) তাতে সংশোধনী আনা যাবে না। ৭ মার্চের ভাষণ, ২৬ মার্চের স্বাধীনতা ঘোষণা, মুজিবনগর সরকারের জারিকৃত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র ইত্যিাদি সংযুক্তি (অনুচ্ছেদ ১৫০.২) সংশোধন কঠিন হবে। এমনকি রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতি, জাতি হিসেবে বাঙালি ও নাগরিকতায় বাংলাদেশি বাতিল করা কিংবা 'আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস' পুনঃস্থাপন করা সহজ হবে না। আমাদের দুর্ভাগ্য 'জাতির পিতা', 'স্বাধীনতার ঘোষণা' ইত্যাদি প্রশ্নে জাতি এখনও বিভক্ত থেকে গেল। স্বাধীনাতর বীর সৈনিকদের নিয়ে যে জাতি ৪০ বছর পরও বিতর্ক করে, সে জাতির ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কা মুক্ত হওয়া যায় না।
বেগম জিয়ার আন্দোলনের কর্মসূচি রাজনীতিতে উত্তেজনা বাড়াবে। চারদলীয় জোট এ দেশের জনগোষ্ঠীর ৩৭ ভাগের প্রতিনিধিত্ব করে। দেশে নানা সমস্যা রয়েছে। বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দাভাব বিরাজ করছে। এমতাবস্থায় বিরোধী দলের সহযোগিতা নিয়েই রাষ্ট্র ব্যবস্থা পরিচালনা করা শ্রেয়। জাতির তাতে মঙ্গল নিহিত। রাজনীতিতে উত্তেজনা সহিংসতার জন্ম দেয়। দেশের উন্নয়নের জন্য তা কখনই ভালো হতে পারে না। তাই সরকার ও বিরোধী দলের সঙ্গে সংলাপটা জরুরি।
এদের অনেকেই বিশেষ করে বেসামরিক আমলারা ক্ষমতায় থাকার সময়ই একটি 'বিশেষ সম্পর্ক' গড়ে তোলেন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে। কবিতা ও প্রবন্ধ লিখে কেউ নেতা-নেত্রীকে খুশি করেন। এরা যখন এ ধরনের সাংবিধানিক পদে নিয়োগ পান, তখন তাদের 'আনুগত্য' নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। দ্বিতীয়ত, বর্তমান কাঠামোয় নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ-এটা বলা যাবে না। অর্থের জন্য তাদের সরকারের মুখাপেক্ষি হতে হয়। নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব 'ক্যাডার' তৈরি হয়নি, যারা নির্বাচন পরিচালনা করতে পারে। স্থানীয় পর্যায়ে নির্বাচনে সরকারি প্রভাব অস্বীকার করা যাবে না। যতদিন পর্যন্ত না নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব জনবল থাকবে এবং আইন এদের নির্বাচন পরিচালনায় যথেষ্ট ক্ষমতা দেবে, আর্থিক স্বাধীনতা দেবে, সিইসি ও নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগের নিরপেক্ষ 'মেকানিজম' তৈরি হবে, তত দিন পর্যন্ত নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন থাকবেই। ইভিএম মেশিনও গ্রহণযোগ্য নয়। খোদ যুক্তরাষ্ট্রের সর্বত্র তা ব্যবহৃত হয়নি। আমাদের দেশের নিরক্ষরতা, প্রযুক্তি না জানার ব্যর্থতা, ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত ব্যক্তিদের ভূমিকা ও সর্বোপরি 'প্রযুক্তি কারচুপি' নির্বাচনে ইভিএম মেশিন ব্যবহারকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে। সিইসির 'অতি উৎসাহ' ইতিমধ্যে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। নির্বাচনে ইভিএমের ব্যবহার নিয়ে তার সাম্প্রতিক বক্তব্য বিতর্কের মাত্রা আরও বাড়াবে।
সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনী এখন সংবিধানের অংশ। এটা নিয়ে আপত্তি থাকতে পারে; কিন্তু এটা আর পরিবর্তন করা যাবে না। বাস্তবতা হচ্ছে শুধুমাত্র সংসদই পারে ষোলতম সংশোধনী এনে সংবিধানকে পুনরায় আগের অবস্থানে নিয়ে যেতে; কিন্তু তাও খুব সহজ হবে বলে মনে হয় না। কেননা সংবিধান সংশোধন প্রক্রিয়ায় (১৪২ আ) পরিবর্তন আনা হয়েছে। এতে (৭খ) যোগ করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে এ সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদে যাহাই কিছু থাকুক না কেন, সংবিধানের প্রস্তাবনা, প্রথম ভাগের সব অনুচ্ছেদ, দ্বিতীয় ভাগের সব অনুচ্ছেদ, নবম-ক ভাগে বর্ণিত অনুচ্ছেদগুলোর বিধানাবলি সাপেক্ষে তৃতীয় ভাগের সব অনুচ্ছেদ এবং একাদশ ভাগের অনুচ্ছেদ ১৫০সহ সংবিধানের অন্যান্য মৌলিক কাঠামো সংক্রান্ত অনুচ্ছেদগুলোর বিধানাবলি সংযোজন, পরিবর্তন, প্রতিস্থাপন, রহিতকরণ কিংবা অন্য কোনো পন্থায় সংশোধনের অযোগ্য হইবে'। সংবিধানে ৭(খ)-এর অন্তর্ভুক্তি এখন নানা প্রশ্নের জন্ম দেবে এবং সংবিধান সংশোধন কমিটির আসল উদ্দেশ্যকে বড় ধরনের প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেবে। কেননা এর ফলে 'জাতির পিতা' শিরোনামের অনুচ্ছেদ ৪-এ যা কিছু সংযোজিত হয়েছে (ছবি প্রদর্শন) তাতে সংশোধনী আনা যাবে না। ৭ মার্চের ভাষণ, ২৬ মার্চের স্বাধীনতা ঘোষণা, মুজিবনগর সরকারের জারিকৃত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র ইত্যিাদি সংযুক্তি (অনুচ্ছেদ ১৫০.২) সংশোধন কঠিন হবে। এমনকি রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতি, জাতি হিসেবে বাঙালি ও নাগরিকতায় বাংলাদেশি বাতিল করা কিংবা 'আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস' পুনঃস্থাপন করা সহজ হবে না। আমাদের দুর্ভাগ্য 'জাতির পিতা', 'স্বাধীনতার ঘোষণা' ইত্যাদি প্রশ্নে জাতি এখনও বিভক্ত থেকে গেল। স্বাধীনাতর বীর সৈনিকদের নিয়ে যে জাতি ৪০ বছর পরও বিতর্ক করে, সে জাতির ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কা মুক্ত হওয়া যায় না।
বেগম জিয়ার আন্দোলনের কর্মসূচি রাজনীতিতে উত্তেজনা বাড়াবে। চারদলীয় জোট এ দেশের জনগোষ্ঠীর ৩৭ ভাগের প্রতিনিধিত্ব করে। দেশে নানা সমস্যা রয়েছে। বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দাভাব বিরাজ করছে। এমতাবস্থায় বিরোধী দলের সহযোগিতা নিয়েই রাষ্ট্র ব্যবস্থা পরিচালনা করা শ্রেয়। জাতির তাতে মঙ্গল নিহিত। রাজনীতিতে উত্তেজনা সহিংসতার জন্ম দেয়। দেশের উন্নয়নের জন্য তা কখনই ভালো হতে পারে না। তাই সরকার ও বিরোধী দলের সঙ্গে সংলাপটা জরুরি।
দৈনিক ডেসটিনি,বুধবার | ৫ অক্টোবর ২০১১
ড. তারেক শামসুর রেহমান
ড. তারেক শামসুর রেহমান
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক সদস্য,
tsrahmanbd@yahoo.com
tsrahmanbd@yahoo.com
0 comments:
Post a Comment