রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কি ভেঙে পড়বে?

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির আলোচনা সভায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করা হয়েছে ১৩ অক্টোবর। মূল প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। বাংলাদেশে গণতন্ত্রের বিকাশ নিয়ে যারা কাজ করেন তারা জানেন, এ ধরনের মন্তব্য কোন হালকা মন্তব্য নয়। এ ধরনের মন্তব্যের পেছনে যুক্তি রয়েছে। বাংলাদেশে সংসদীয় সরকার পুনঃপ্রবর্তিত হয় ১৯৯১ সালের ৬ আগস্ট, যখন সংসদে দ্বাদশ সংশোধনী আইন গৃহীত হয়। বিএনপি রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারব্যবস্থার পক্ষে থাকলেও সংবিধান সংশোধনীতে সেদিন বিএনপি সংসদীয় সরকারব্যবস্থার পক্ষে তার মত দিয়েছিল। সম্ভবত ওই একটি ইস্যুতেই বিএনপি ও আওয়ামী লীগের অবস্থান ছিল এক ও অভিন্ন। এরপর আও কোন ইস্যুতেই বিএনপি ও আওয়ামী লীগ এক হতে পারেনি। ১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর আরও তিনটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে যেখানে গণতন্ত্র আরও শক্তিশালী হওয়ার কথা, সেখানে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি শক্তিশালী তো হয়ইনি, বরং দুটি বড় দলের মাঝে অবিশ্বাস আর আস্থাহীনতা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে, যা গণতন্ত্রের বিকাশকে শক্তিশালী করছে না।
গণতন্ত্রের মূল কথা হচ্ছে, একটি ‘কনফিডেন্স বিল্ডিং মেজারস’-এর আবহ তৈরি করা, অর্থাৎ পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস আর আস্থা স্থাপনের নামই হচ্ছে গণতন্ত্র। কিন্তু এর বড় অভাব বাংলাদেশে। যে দলই ক্ষমতায় যায়, বিরোধী দলকে তারা গ্রহণযোগ্যতায় না নিয়ে তাদের ‘শত্র“’ মনে করে। তাদের আচরণও গণতন্ত্রসম্মত নয়। নির্বাচন একটি দল বা গোষ্ঠীকে ক্ষমতায় বসায় বটে, কিন্তু নির্বাচনের নামই গণতন্ত্র নয়। যুক্তরাষ্ট্রের Foreign Policy Research Institute এর সিনিয়র ফেলো আদ্রিয়ান এ বাসোরা তাই মন্তব্য করেছেন এভাবে `Regime change does not make democratization a foregone conclusionÕ (FP, 1 October 2005)। এটাই হচ্ছে মোদ্দাকথা। ক্ষমতার পরিবর্তন গণতন্ত্রকে নিশ্চিত করে না। বাংলাদেশে ১৯৯১ সালের পর বারবার সরকার পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু গণতন্ত্র আরও শক্তিশালী হয়েছে, তা বলা যাবে না। বরং যে ‘আস্থার রাজনীতি’ আমরা ১৯৯১ সালে লক্ষ্য করেছিলাম, সেই আস্থার রাজনীতিতে ধস নেমেছে। গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিতে এক ধরনের ‘চেকস অ্যান্ড ব্যালেন্স’ দরকার, যাতে করে সরকার অগণতান্ত্রিক আচরণ না করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের Council on Foreign Relations-এর ফেলো জোসেফ সিগলের মতে, ‘ Democratization of some countries has had a more successful developmental outcome, primarily due to institutional accountability, a free press and a system of checks and balances exist between the partiesÕ’।
‘চেকস অ্যান্ড ব্যালেন্স’-এর অভাবেই রাষ্ট্র একনায়কতান্ত্রিক হয়ে ওঠে। ইতিহাসে এর ভূরি ভূরি প্রমাণ রয়েছে। বাংলাদেশের বর্তমান যে পরিস্থিতি, তাতে এই ‘চেকস অ্যান্ড ব্যালেন্স’-এর অভাবটি অত্যন্ত প্রবল। সরকার এককভাবে যে সিদ্ধান্ত নেয়, সেই সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করার কেউ নেই। সরকার বিরোধী দলের মতামত গ্রহণ করার প্রয়োজনীয়তাও বোধ করে না। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের গণতন্ত্রের একটা বড় সমস্যা হচ্ছে সংসদকে কার্যকর না করা। পঞ্চম জাতীয় সংসদ থেকে সংসদ বয়কটের যে সংস্কৃতি চালু হয়েছে, বিশ বছর পরও সেই সংস্কৃতি অব্যাহত রয়েছে। প্রধান বিরোধী দল পঞ্চম সংসদে ১১৮ দিন (৯টি অধিবেশনে), সপ্তম সংসদে ১৬৫ দিন (৯টি অধিবেশনে) ও অষ্টম সংসদে ২২৩ দিন (৯টি অধিবেশনে) সংসদ বয়কট করে। নবম সংসদের সংসদ বয়কটের হিসাব-নিকাশ আমরা আরও পরে পাব। তবে সংসদ বয়কট অব্যাহত রয়েছে।
উপরোল্লিখিত তিনটি সংসদেই মারাÍক কোরাম সংকট পরিলক্ষিত হয়। সপ্তম সংসদের নবম অধিবেশনে মোট ৩ ঘণ্টা ১২ মিনিট কোরাম সংকটের কারণে ব্যয় হয়। অষ্টম সংসদে ২২৭ ঘণ্টা অপচয় হয় কোরাম সংকটে, যা সংসদের মোট কার্যকালের এক-পঞ্চমাংশ। এর জন্য আর্থিক ক্ষতি হয় প্রায় ২০ কোটি ৪৫ লাখ টাকা (টিআইবি রিপোর্ট)। এই যে পরিসংখ্যান, এটা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় কার্যকরী জাতীয় সংসদ আমরা গড়ে তুলতে পারিনি। নির্বাচন হয়েছে। সরকার পরিবর্তন হয়েছে। নতুন সংসদ গঠিত হয়েছে। কিন্তু সংসদীয় রাজনীতিতে যা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, তা হচ্ছে সংসদকে শক্তিশালী করা। দুঃখজনক হলেও সত্য, আমরা সংসদকে শক্তিশালী করতে পারিনি। সরকারে যারা থাকেন তাদের দায়িত্বটি বেশি। কিন্তু এ কথাটা আমরা ভুলে যাই। তৃতীয়ত, সংসদ হচ্ছে সিদ্ধান্ত নেয়ার জায়গা। জাতীয় নীতি এখানে প্রণীত হবে। জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়াদি নিয়ে সংসদে ডিবেট হবে। সরকারের নীতির সমালোচনা করে বিরোধী দল বিকল্প প্রস্তাব উপস্থাপন করবে। কিন্তু এই সংস্কৃতি আমরা গড়ে তুলতে পারিনি। যে কারণে সরকারি নীতি হয়ে যাচ্ছে একপক্ষীয়। জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট অনেক চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও তা সংসদে উপস্থাপিত হয় না। আলোচনাও হয় না। সিপিডির অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি স্পিকার। তিনি বলেছেন, সংসদ সদস্যরা জাতীয় নীতি-নির্ধারণ বিষয়ে বক্তব্য দেন না, প্রস্তাবও রাখেন না, এমনকি কোন প্রশ্নও উত্থাপন করেন না।
অতি সম্প্রতি ট্রানজিট ফি ছাড়াই ট্রান্সশিপমেন্টের দ্বিতীয় চালান ত্রিপুরা গেছে। যেখানে এখনও ট্রানজিট ফি নির্ধারিত হয়নি, সেখানে কী করে ভারতীয় পণ্য পরিবহন করা হয়? বিষয়টি বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। অথচ বিষয়টি নিয়ে সংসদে আলোচনা হয় না। শুধু তাই নয়, ভারতীয় ৪২ চাকার যান চলাচলের ফলে বাংলাদেশ যে পরিবেশগত ক্ষতির সম্মুখীন হবে, সেই ক্ষতি আমরা কীভাবে পূরণ করব, সে ব্যাপারেও কোন ব্যাখ্যা নেই। ইতিমধ্যে ট্রানজিট বা ট্রান্সশিপমেন্টের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে, তারও কোন সুস্পষ্ট জবাব আমরা পাইনি। অথচ সংসদে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা কিংবা সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত ছিল। ডেপুটি স্পিকার এটা স্বীকার করলেও সংসদে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনার কোন পরিবেশ তিনি সৃষ্টি করতে পারেননি।
চতুর্থত, সংসদীয় রাজনীতিতে একটি ‘ছায়া মন্ত্রিসভা’ থাকে। এটা সংসদীয় রাজনীতির একটি সৌন্দর্য। কিন্তু বাংলাদেশে এই সংস্কৃতি আমরা গড়ে তুলতে পারিনি। বর্তমান বিরোধী দলও সংসদে একটি ‘ছায়া মন্ত্রিসভা’ গঠন করতে পারেনি। এই ‘ছায়া মন্ত্রিসভায়’ যারা থাকবেন, তারা সরকারের বিভিন্ন নীতির সমালোচনা করে বিকল্প একটি নীতি উপস্থাপন করবেন। বাংলাদেশে এ সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি। পঞ্চমত, বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি অনিবার্যভাবে দুটি শক্তি। গণতন্ত্র বিনির্মাণে এদের মাঝে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক থাকা প্রয়োজন। এটি না থাকলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে বাধ্য। পঞ্চম জাতীয় সংসদে বিএনপি পেয়েছিল প্রাপ্ত ভোটের ৩০.৮১ ভাগ, আর আওয়ামী লীগ ৩০.০৮ ভাগ, সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৩৭.৪৪ ভাগ ভোট, আর বিএনপি ৩৩.৬১ ভাগ, অষ্টম জাতীয় সংসদে বিএনপি ৪০.৯৭ ভাগ ভোট, আর আওয়ামী লীগ ৪০.১৩ ভাগ ভোট। আর সর্বশেষ নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রাপ্তি ৪৮.০৬ ভাগ আর বিএনপি ৩২.৪৫ ভাগ। পরিসংখ্যানই বলে দেয় বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মাঝে একটি ‘সমঝোতা’ কেন প্রয়োজন। এই সমঝোতা নেই বিধায় গণতন্ত্র এখানে ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে।
সিপিডির আলোচনা সভাটি অনুষ্ঠিত হল এমন এক সময় যখন বিরোধী দল সরকার পতনের লক্ষ্যে রোডমার্চ কর্মসূচি শুরু করেছে। এই রোডমার্চ কর্মসূচি গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিরই একটি অংশ। সরকারের নানা ব্যর্থতা যখন দিনে দিনে স্পষ্ট হয়ে উঠছে, ঠিক তখনই বিএনপি তথা চারদল সরকার পতনের আন্দোলন শুরু করল। দুঃখজনক হলেও সত্য, একটি নির্বাচিত সরকার তার টার্ম শেষ করার আগেই বিরোধী দলের আন্দোলনের মুখে পড়ল। বিরোধী দলের আন্দোলনের মুখে সরকারের হয়তো পতন ঘটবে না। কিন্তু বিরোধী দল একটি মেসেজ পৌঁছে দিয়েছে আর তা হচ্ছে বিরোধী দলকে গ্রহণযোগ্যতায় নেয়া। এটাই গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি।
দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে মারাÍকভাবে। গেল সেপ্টেম্বরের হিসাব অনুযায়ী রফতানিতে আয় কমেছে ৩৯ ভাগ। ইউরোপজুড়ে মন্দার ধাক্কা বাংলাদেশে লাগতে শুরু করেছে। রফতানি কমছে। বস্ত্র ও তৈরি পোশাক খাতে বড় ধরনের বিপর্যয়ের আশংকা করছেন অনেকেই। ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে তিন হাজার ওভেন ও নিট গার্মেন্টস। গেল সেপ্টেম্বর মাসে রফতানি আয় হয়েছে ১৪৪৭ দশমিক ৪৭ মিলিয়ন ডলার, যা প্রায় ১০ হাজার ৮৫৬ কোটি টাকার সমান। এই পরিমাণ অর্থ লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ২৩ শতাংশ কম। বিশ্বমন্দা কীভাবে মোকাবেলা করা যায়, সে ব্যাপারে বিরোধী দলের একটা মতামত থাকা প্রয়োজন। এমনকি বিরোধী দলকে সঙ্গে নিয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন করাও জরুরি। সেটি হচ্ছে না। সরকার বিরোধী দলের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীলÑ এটা মনে করারও কোন কারণ নেই। ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে। সংকট ঘনীভূত হচ্ছে। আর তা গণতন্ত্রের পথযাত্রাকে একটি ঝুঁকির মাঝে ঠেলে দিয়েছে।
সিপিডির আলোচনা সভায় যারা প্রবন্ধ পড়েছেন, যারা আলোচনায় অংশ নিয়েছেন, তারা সবাই নামিদামি ব্যক্তি। আন্তর্জাতিক পরিসরেও তাদের একটা গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। সুতরাং তারা যখন বলেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে, তখন এদিকে দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। বিরোধী দলের সহযোগিতা নিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা পরিচালনা করতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রবর্তনের যে দাবি উঠেছে, সে ব্যাপারে একটা সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। সংবিধানে এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা এখন নেই বটে, কিন্তু নির্বাচন পরিচালনার জন্য একটি নিরপেক্ষ সরকার গঠন করা সম্ভব। উচ্চ আদালতের রায়ের মাঝেও এই নিরপেক্ষ সরকার গঠনের ইঙ্গিত রয়েছে। শুধু নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করে সুষ্ঠু নির্বাচনের নিশ্চয়তা দেয়া যাবে না। এমনকি এককভাবে (যা হয়তো সরকার পারে) সিইসি তথা অন্য কমিশনারদের নিয়োগ দেয়াও ঠিক হবে না। তাতে জটিলতা আরও বাড়বে। এ মুহূর্তে যা জরুরি, তা হচ্ছে বিরোধী দলকে আস্থায় নেয়া এবং বিরোধী দলের সঙ্গে একটা ‘সংলাপ’ শুরু করা। নির্বাচন হতে এখনও বেশ কিছুটা সময় বাকি। ২০১৩ সালের শেষের দিকে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তার আগেই বেশকিছু ইস্যুতে (নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ, তত্ত্বাবধায়ক তথা নির্দলীয় সরকার কাঠামো) দুটি বড় দলের মাঝে একটি ঐকমত্য প্রয়োজন। না হলে বাংলাদেশে বিকাশমান গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রশ্নের মুখে থাকবে। তাই সিপিডির আলোচনায় যে প্রশ্নটি উত্থাপিত হয়েছে, এদিকে সরকার যদি দৃষ্টি দেয়, তাহলে তা সবার জন্যই মঙ্গল।
দৈনিক যুগান্তর ১৯ অক্টোবর, ২০১১.
ড. তারেক শামসুর রেহমান
অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়,
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক সদস্য,
tsrahmanbd@yahoo.com

0 comments:

Post a Comment