রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

গাদ্দাফি-পরবর্তী রাজনীতি

গাদ্দাফি-পরবর্তী লিবিয়ার রাজনীতিতে স্থিতিশীলতা আসবে কিনা, তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। গণতন্ত্রে উত্তরণের পথটিও সহজ হবে না। কেননা লিবিয়ায় একটি সংবিধান প্রণয়ন, সরকার ব্যবস্থা নির্ধারণ এবং দল ব্যবস্থা প্রবর্তন করার ব্যাপারে অন্তর্বর্তী জাতীয় কাউন্সিলের নেতৃবৃন্দের মধ্যে একটি সমঝোতা প্রয়োজন, যা খুব সহজ কাজ নয়। উপরন্তু কাউন্সিলের নেতৃবৃন্দ ক্ষমতার দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়তে পারেন। অস্ত্র উদ্ধার করা হবে একটি বড় কাজ। এই অস্ত্র ইতিমধ্যে আল কায়দার হাতে পৌঁছে গেছে বলে অনেকে আশংকা করছেন। ইসলামিক জঙ্গিরা গাদ্দাফি-পরবর্তী লিবিয়ায় অন্যতম একটি শক্তিরূপে আবির্ভূত হতে পারে। এরা গাদ্দাফি উৎখাতে অংশ নিয়েছে। বিশেষ করে Islamic Fighting ‡roup wKsev Abdel Hakim Belhadj ‡roup-এর ভূমিকা লক্ষ্য রাখার মতো। গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। গোত্র ও উপজাতীয়ভাবে লিবিয়া বিভক্ত। এ ক্ষেত্রে গাদ্দাফির নিজস্ব গোত্র প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে উঠতে পারে।
জনগোষ্ঠীর ৩০ ভাগ বেকার। আর ৪০ ভাগ হচ্ছে তরুণ সমাজ। এরা একটি ফ্যাক্টর। এদের চাকরিতে নিয়োজিত করা হবে নতুন সরকারের প্রধান কাজ। গাদ্দাফি উৎখাতের ঘটনায় পশ্চিমাদের প্রভাব লিবিয়ায় বাড়বে। যুক্তরাষ্ট্রের জবনঁরষফরহম অসবৎরপধহ উবভবহংব ঝঃৎধঃবমু-তে লিবিয়া একটি বড় ভূমিকা পালন করবে আগামী দিনে।
লিবিয়া হচ্ছে আফ্রিকার ‘গেটওয়ে’। লিবিয়াকে যদি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, তাহলে প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর, চাদ, নাইজার, তিউনেসিয়া ও আলজেরিয়ায় প্রভাব বিস্তার করা সম্ভব। চাদ ও নাইজারে রয়েছে প্রচুর তেল ও ইউরেনিয়াম। ইউরোপ লিবিয়ার তেলের ওপর ৮৫ ভাগ নির্ভরশীল। বিশ্বের তেল রিজার্ভের ৩৫ ভাগ (৬০ মিলিয়ন ব্যারেল) রয়েছে লিবিয়ায়। লিবিয়ার গ্যাস reestream Pipeline-এর মাধ্যমে যায় ইতালিতে। সুতরাং লিবিয়ার তেল ও গ্যাস আগামীতে একটি বড় ভূমিকা পালন করবে। তেল ও গ্যাস বিক্রির পয়সায় এখন লিবিয়ার পুনর্গঠন হবে, আর ইরাকের মতো এ কাজ পাবে আমেরিকান কোম্পানিগুলো।
লিবিয়ায় অব্যাহত ন্যাটোর বোমাবর্ষণ, গাদ্দাফিকে হত্যা একটি বাজে দৃষ্টান্ত হয়ে রইল। মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশে সরকার পরিবর্তনে (যাদের যুক্তরাষ্ট্র মিত্র মনে করে না) এ ধরনের ব্যবস্থা নিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র তথা পশ্চিমা শক্তিগুলো। সিরিয়া ও ইরানে ন্যাটোর বিমান হামলার আশংকা এখন বাড়ল। জাতিসংঘকে ব্যবহার করে (সরকার উৎখাতের কোন সিদ্ধান্ত ছিল না) যুক্তরাষ্ট্রের এই ভূমিকা উন্নয়নশীল বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাবের জš§ দেবে। যুদ্ধ শুরু করার ক্ষেত্রে বুশের সঙ্গে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী (২০০৮) ওবামার কোন পার্থক্য থাকল না এখন।  
ড. তারেক শামসুর রেহমান
অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়,
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক সদস্য,
tsrahmanbd@yahoo.com 

0 comments:

Post a Comment