বিএনপির প্রথম রোডমার্চ শেষ হয়েছে গত ১১ অক্টোবর। প্রথম রোডমার্চ ঢাকা থেকে শুরু হয়ে শেষ হয়েছে সিলেটে। সেখানে খালেদা জিয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দিয়েছেন। প্রায় তিন হাজার গাড়ির বহর নিয়ে এই রোডমার্চের নেতৃত্ব দেন খালেদা জিয়া। দ্বিতীয় আরেকটি রোডমার্চ শুরু হয়েছে গতকাল, যা আজ শেষ হবে। এবার দ্বিতীয় রোডমার্চটি গেল রাজশাহীতে। এই রোডমার্চে সরকার কিংবা সরকার সমর্থকরা কোনো বাধা দেয়নি। এটা একটা ভালো দিক। রোডমার্চ গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির একটি অংশ। বিরোধী দল সরকারের ব্যর্থতার প্রতিবাদে এই রোডমার্চের আয়োজন করে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের ব্যর্থতা এখন আলোচিত বিষয়। দুর্নীতির বিষয়টি এখন বহুল আলোচিত। পদ্মা সেতু শুরু করার আগেই প্রশ্ন তুলেছে দাতারা। বিশ্বব্যাংক এ খাতে অর্থসাহায্য বন্ধ করে দিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে যে নষ্ট করবে, তা বলার আর অপেক্ষা রাখে না। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার চরমভাবে ব্যর্থ। মধ্যস্বত্বভোগীরা এখন বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। মধ্যস্বত্বভোগীরা সরাসরি সরকারি দলের লোক না হলেও সরকারি দলের নেতাদের ছত্রচ্ছায়ায় অবৈধভাবে প্রভাব খাটাচ্ছে। চাঁদা তুলছে। যে কারণে সবজির বাজার এখন চড়া। কিন্তু প্রশাসন এদের নিয়ন্ত্রণ করছে না, অথবা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। সংসার চালাতে মধ্যবিত্ত পরিবারের একজন কর্তা যখন ব্যর্থ, তখন দাবি উঠেছে মহার্ঘ ভাতা প্রদানের। বৈদেশিক বাণিজ্যে কোনো আশার খবর নেই। বাংলাদেশি টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে মারাত্মকভাবে। সারা বিশ্বে যেখানে ডলারের মান কমে গেছে, সেখানে আমাদের দেশে বাড়ছে ডলারের দাম। গেল সেপ্টেম্বরের হিসাব অনুযায়ী, রপ্তানিতে আয় কমেছে ৩৯ শতাংশ। ইউরোপজুড়ে মন্দার ধাক্কা বাংলাদেশে লাগতে শুরু করেছে। রপ্তানি কমছে। বস্ত্র ও তৈরি পোশাক খাতে বড় ধরনের বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছে অনেকেই। ইতিমধ্যে অর্ডার না পাওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে সাড়ে তিন হাজার ওভেন ও নিট গার্মেন্টস। গেল সেপ্টেম্বরে (২০১১) রপ্তানি আয় হয়েছে ১৪৪৭ দশমিক ৪৭ মিলিয়ন ডলার, যা প্রায় ১০ হাজার ৮৫৬ কোটি টাকার সমান। এই পরিমাণ অর্থ লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ২৩ শতাংশ কম। চলতি ২০১১-১২ অর্থবছরের প্রথম মাসে (জুলাই) রপ্তানি আয় হয়েছিল ২৩৩৯ দশমিক ৫২ মিলিয়ন ডলার, যা প্রায় ১৭ হাজার ৫৪৬ কোটি টাকার সমান। জুলাইয়ের তুলনায় সেপ্টেম্বরে আয় কমেছে প্রায় ছয় হাজার ৬৯০ কোটি টাকা, অর্থাৎ ৩৮ দশমিক ১৩ শতাংশ কম। এমনি এক পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি লংমার্চ সম্পন্ন করল। খালেদা জিয়া জানিয়ে দিয়েছেন যে সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা আর ঘরে ফিরে যাবেন না। এর অর্থ পরিষ্কার, বিএনপি এখন সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলনে যাচ্ছে। যদিও পরবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ২০১৩ সালের শেষের দিকে।
বিএনপি যেসব এজেন্ডা সামনে রেখে রোডমার্চের আয়োজন করেছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করা। পাঁচ দফা সংবিধান সংশোধনী অনুযায়ী এখন আর তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার আওতায় নির্বাচন পরিচালনা করার কোনো সুযোগ নেই। উচ্চ আদালতের একটি রায় অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করতে হলে সরকারকে নতুন করে সংসদে একটি বিল আনতে হবে। এটা যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার হিসেবে নামকরণ করতে হবে, তার কোনো মানে নেই। কাঠামোতেও পরিবর্তন আনতে হবে। হতে পারে এটি একটি নির্দলীয় সরকার। এই নির্দলীয় সরকারে কারা থাকবেন, তা সংসদ ঠিক করে দিতে পারে। উচ্চ আদালতের রায় অনুসরণ করেই এই নির্দলীয় সরকার গঠন করা সম্ভব। বর্তমান প্রধান বিচারপতি তাঁর দায়িত্বের অতিরিক্ত হিসেবে এই নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারেন। বিকল্প হিসেবে ব্যারিস্টার রফিকুল হকের মতো সর্বজনগ্রহণযোগ্য একজন ব্যক্তিকে এই দায়িত্বটি দেওয়া যেতে পারে। তিনজন গুণী ব্যক্তির সমন্বয়ে একটি টিমও গঠন করা যেতে পারে, যাদের দায়িত্ব হবে শুধু একটি নির্বাচন পরিচালনা করা। তবে মূল কথা হচ্ছে, এসব ক্ষেত্রে বিরোধী দলের সম্মতির প্রয়োজন রয়েছে। বিরোধী দলের সম্মতি না পেলে কোনো প্রস্তাবই জট খুলবে না। এ জন্য একটি সংলাপ অত্যন্ত জরুরি। সরকারের মন্ত্রীরা বারবার বিএনপিকে সংসদে আনার ও সেখানে গিয়ে প্রস্তাব দেওয়ার কথা বলেছেন। কিন্তু অভিজ্ঞতা বলে অতীতে বিরোধী দলকে সংসদে কথা বলতে দেওয়া হয়নি। সংসদে গালাগাল ও অতীত বারবার টেনে আনা হয়েছে। বিচারাধীন মামলা নিয়ে মন্তব্য করা হয়েছে। সংসদ হয়ে পড়েছে একদলীয়। এ ক্ষেত্রে সরকারের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই। সরকার এখন যে কাজটি করতে পারে, তা হচ্ছে নিজেদের উদ্যোগে একটি নির্দলীয় সরকারের কাঠামো সংসদে উপস্থাপন করা ও তা পাস করানো। মহাজোটের শরিকরাও পারে এ ধরনের একটি প্রস্তাব উপস্থাপন করতে। বিএনপি ওই প্রস্তাবে সমর্থন জানাতে পারে অথবা তাতে সংশোধনী আনতে পারে। এর মাধ্যমে সরকার তার আন্তরিকতা প্রমাণ করতে পারে। সরকার যদি এ ধরনের কোনো প্রস্তাব না আনে, তাহলে রাজনৈতিক সংকট আরো ঘনীভূত হবে। ১৯৯৬ সালেও বিএনপি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করেছিল। কিন্তু ওই সংসদ টিকে ছিল মাত্র ১৩ দিন। ওই সংসদেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পাস হয়েছিল। এখন দেয়ালের লিখন থেকে সরকার কি কিছু শিখবে?
সরকার যদি নমনীয় হয়, তাহলে তা আমাদের জন্য মঙ্গল। পত্রপত্রিকায় যেসব জনমত প্রতিফলিত হয়েছে, তাতে দেখা যায়, একটি নিরপেক্ষ তথা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে জনমত সবচেয়ে বেশি। সরকার যদি একটি নিরপেক্ষ সরকারের আওতায় নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেয়, আমার বিশ্বাস তাতে সরকারের ভাবমূর্তি বাড়বে বৈ কমবে না। দুঃখজনক হলেও সত্য, আমরা দেয়ালের লিখন থেকে কেউ কিছু শিখি না।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রশ্নে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে যদি কোনো সমঝোতা না হয়, তাহলে তা হবে আমাদের জন্য দুঃখজনক একটি সংবাদ। সিপিডির আলোচনায় ইতিমধ্যে মন্তব্য করা হয়েছে যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। গত ১৩ অক্টোবর সিপিডির আলোচনা সভায় যিনি মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, তিনি এ দেশের একজন বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী। অধ্যাপক রওনক জাহান যখন এ ধরনের একটি আশঙ্কা ব্যক্ত করেন, তখন তাকে গুরুত্ব দিতে হয় বৈকি! যারা এ দেশের গণতন্ত্রের বিকাশ নিয়ে গবেষণা করেন, তারা এটা স্বীকার করবেন যে ওই মন্তব্যের পেছনে কোনো মিথ্যা নেই। এমনকি একটা সত্য কথাও স্বীকার করেছেন ডেপুটি স্পিকার ওই অনুষ্ঠানে। তিনি বলেছেন, সংসদ সদস্যরা জাতীয় নীতিনির্ধারণী বিষয়ে বক্তব্য দেন না, প্রস্তাবও রাখেন না, এমনকি কোনো প্রশ্নও উত্থাপন করেন না (সকালের খবর, ১৪ অক্টোবর)। মিথ্যা বলেননি তিনি। দেশের অর্থনীতি যখন বড় ধরনের ঝুঁকির মুখে, যখন রপ্তানি আয় কমছে, বাংলাদেশ ব্যাংকে রিজার্ভের পরিমাণ কমছে_তখন আমাদের করণীয় কী, এ বিষয়টি নিয়ে সংসদ সদস্যরা আলোচনা করেন না। সাধারণ জনগণের স্বার্থের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়াদিকে বাদ দিয়ে আমাদের যোগাযোগমন্ত্রী যখন হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নিয়ে ব্যস্ত থাকেন, তখন সংসদে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয় না। আমাদের পররাষ্ট্রনীতি যখন ভারতমুখী, এটা নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা আমি শুনিনি। তাই ডেপুটি স্পিকারের বক্তব্যকে আমি গুরুত্ব দিতে চাই। গুরুত্ব দিতে চাই সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের বক্তব্যকে, যখন তিনি বলেন আমরা সবাই মিলে সংসদকে ধ্বংস করার কাজে লিপ্ত হয়েছি। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত অভিজ্ঞ পার্লামেন্টারিয়ান। তিনি জানেন ও বোঝেন সংসদ কেন কাজ করছে না। আজ সংসদকে শক্তিশালী করার কথা বলা হলেও অতীত অভিজ্ঞতা আমাদের সুখের নয়। আজ মন্ত্রীরা যখন বিএনপিকে সংসদে এসে নতুন প্রস্তাব উত্থাপন করার আহ্বান জানান, তখন এটা একটা ফাঁকা বুলিতে পরিণত হয়। কেননা অতীতেও বিএনপিকে হেনস্তা করা হয়েছে। বিরোধী দলকে গ্রহণযোগ্যতায় নিতে হবে। তাদের আস্থায় নিতে হবে। শুনতে হবে তাদের কথা। এই সংস্কৃতি আমাদের দেশে গড়ে ওঠেনি। বিএনপির রোডমার্চ একটা মেসেজ পেঁৗছে দিয়েছে সরকারকে_আর তা হচ্ছে তত্ত্বাবধায়ক বা নির্দলীয় সরকার ছাড়া পরবর্তী সংসদ নির্বাচন নয়। দুই পক্ষের মাঝে একটা সংলাপ হওয়া উচিত। সংলাপ ছাড়া সংকট সমাধানের কোনো বিকল্প নেই।
বিএনপি যেসব এজেন্ডা সামনে রেখে রোডমার্চের আয়োজন করেছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করা। পাঁচ দফা সংবিধান সংশোধনী অনুযায়ী এখন আর তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার আওতায় নির্বাচন পরিচালনা করার কোনো সুযোগ নেই। উচ্চ আদালতের একটি রায় অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করতে হলে সরকারকে নতুন করে সংসদে একটি বিল আনতে হবে। এটা যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার হিসেবে নামকরণ করতে হবে, তার কোনো মানে নেই। কাঠামোতেও পরিবর্তন আনতে হবে। হতে পারে এটি একটি নির্দলীয় সরকার। এই নির্দলীয় সরকারে কারা থাকবেন, তা সংসদ ঠিক করে দিতে পারে। উচ্চ আদালতের রায় অনুসরণ করেই এই নির্দলীয় সরকার গঠন করা সম্ভব। বর্তমান প্রধান বিচারপতি তাঁর দায়িত্বের অতিরিক্ত হিসেবে এই নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারেন। বিকল্প হিসেবে ব্যারিস্টার রফিকুল হকের মতো সর্বজনগ্রহণযোগ্য একজন ব্যক্তিকে এই দায়িত্বটি দেওয়া যেতে পারে। তিনজন গুণী ব্যক্তির সমন্বয়ে একটি টিমও গঠন করা যেতে পারে, যাদের দায়িত্ব হবে শুধু একটি নির্বাচন পরিচালনা করা। তবে মূল কথা হচ্ছে, এসব ক্ষেত্রে বিরোধী দলের সম্মতির প্রয়োজন রয়েছে। বিরোধী দলের সম্মতি না পেলে কোনো প্রস্তাবই জট খুলবে না। এ জন্য একটি সংলাপ অত্যন্ত জরুরি। সরকারের মন্ত্রীরা বারবার বিএনপিকে সংসদে আনার ও সেখানে গিয়ে প্রস্তাব দেওয়ার কথা বলেছেন। কিন্তু অভিজ্ঞতা বলে অতীতে বিরোধী দলকে সংসদে কথা বলতে দেওয়া হয়নি। সংসদে গালাগাল ও অতীত বারবার টেনে আনা হয়েছে। বিচারাধীন মামলা নিয়ে মন্তব্য করা হয়েছে। সংসদ হয়ে পড়েছে একদলীয়। এ ক্ষেত্রে সরকারের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই। সরকার এখন যে কাজটি করতে পারে, তা হচ্ছে নিজেদের উদ্যোগে একটি নির্দলীয় সরকারের কাঠামো সংসদে উপস্থাপন করা ও তা পাস করানো। মহাজোটের শরিকরাও পারে এ ধরনের একটি প্রস্তাব উপস্থাপন করতে। বিএনপি ওই প্রস্তাবে সমর্থন জানাতে পারে অথবা তাতে সংশোধনী আনতে পারে। এর মাধ্যমে সরকার তার আন্তরিকতা প্রমাণ করতে পারে। সরকার যদি এ ধরনের কোনো প্রস্তাব না আনে, তাহলে রাজনৈতিক সংকট আরো ঘনীভূত হবে। ১৯৯৬ সালেও বিএনপি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করেছিল। কিন্তু ওই সংসদ টিকে ছিল মাত্র ১৩ দিন। ওই সংসদেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পাস হয়েছিল। এখন দেয়ালের লিখন থেকে সরকার কি কিছু শিখবে?
সরকার যদি নমনীয় হয়, তাহলে তা আমাদের জন্য মঙ্গল। পত্রপত্রিকায় যেসব জনমত প্রতিফলিত হয়েছে, তাতে দেখা যায়, একটি নিরপেক্ষ তথা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে জনমত সবচেয়ে বেশি। সরকার যদি একটি নিরপেক্ষ সরকারের আওতায় নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেয়, আমার বিশ্বাস তাতে সরকারের ভাবমূর্তি বাড়বে বৈ কমবে না। দুঃখজনক হলেও সত্য, আমরা দেয়ালের লিখন থেকে কেউ কিছু শিখি না।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রশ্নে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে যদি কোনো সমঝোতা না হয়, তাহলে তা হবে আমাদের জন্য দুঃখজনক একটি সংবাদ। সিপিডির আলোচনায় ইতিমধ্যে মন্তব্য করা হয়েছে যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। গত ১৩ অক্টোবর সিপিডির আলোচনা সভায় যিনি মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, তিনি এ দেশের একজন বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী। অধ্যাপক রওনক জাহান যখন এ ধরনের একটি আশঙ্কা ব্যক্ত করেন, তখন তাকে গুরুত্ব দিতে হয় বৈকি! যারা এ দেশের গণতন্ত্রের বিকাশ নিয়ে গবেষণা করেন, তারা এটা স্বীকার করবেন যে ওই মন্তব্যের পেছনে কোনো মিথ্যা নেই। এমনকি একটা সত্য কথাও স্বীকার করেছেন ডেপুটি স্পিকার ওই অনুষ্ঠানে। তিনি বলেছেন, সংসদ সদস্যরা জাতীয় নীতিনির্ধারণী বিষয়ে বক্তব্য দেন না, প্রস্তাবও রাখেন না, এমনকি কোনো প্রশ্নও উত্থাপন করেন না (সকালের খবর, ১৪ অক্টোবর)। মিথ্যা বলেননি তিনি। দেশের অর্থনীতি যখন বড় ধরনের ঝুঁকির মুখে, যখন রপ্তানি আয় কমছে, বাংলাদেশ ব্যাংকে রিজার্ভের পরিমাণ কমছে_তখন আমাদের করণীয় কী, এ বিষয়টি নিয়ে সংসদ সদস্যরা আলোচনা করেন না। সাধারণ জনগণের স্বার্থের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়াদিকে বাদ দিয়ে আমাদের যোগাযোগমন্ত্রী যখন হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নিয়ে ব্যস্ত থাকেন, তখন সংসদে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয় না। আমাদের পররাষ্ট্রনীতি যখন ভারতমুখী, এটা নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা আমি শুনিনি। তাই ডেপুটি স্পিকারের বক্তব্যকে আমি গুরুত্ব দিতে চাই। গুরুত্ব দিতে চাই সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের বক্তব্যকে, যখন তিনি বলেন আমরা সবাই মিলে সংসদকে ধ্বংস করার কাজে লিপ্ত হয়েছি। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত অভিজ্ঞ পার্লামেন্টারিয়ান। তিনি জানেন ও বোঝেন সংসদ কেন কাজ করছে না। আজ সংসদকে শক্তিশালী করার কথা বলা হলেও অতীত অভিজ্ঞতা আমাদের সুখের নয়। আজ মন্ত্রীরা যখন বিএনপিকে সংসদে এসে নতুন প্রস্তাব উত্থাপন করার আহ্বান জানান, তখন এটা একটা ফাঁকা বুলিতে পরিণত হয়। কেননা অতীতেও বিএনপিকে হেনস্তা করা হয়েছে। বিরোধী দলকে গ্রহণযোগ্যতায় নিতে হবে। তাদের আস্থায় নিতে হবে। শুনতে হবে তাদের কথা। এই সংস্কৃতি আমাদের দেশে গড়ে ওঠেনি। বিএনপির রোডমার্চ একটা মেসেজ পেঁৗছে দিয়েছে সরকারকে_আর তা হচ্ছে তত্ত্বাবধায়ক বা নির্দলীয় সরকার ছাড়া পরবর্তী সংসদ নির্বাচন নয়। দুই পক্ষের মাঝে একটা সংলাপ হওয়া উচিত। সংলাপ ছাড়া সংকট সমাধানের কোনো বিকল্প নেই।
ড. তারেক শামসুর রেহমান
অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়,
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক সদস্য,
tsrahmanbd@yahoo.com
অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়,
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক সদস্য,
tsrahmanbd@yahoo.com
0 comments:
Post a Comment