রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

দক্ষিণ এশিয়ায় সমরাস্ত্রের প্রতিযোগিতা

গত ১০ ফেব্রুয়ারি সংবাদপত্রগুলোয় ছাপা হয় একটি প্রতিবেদন। এতে বলা হয়, ২০২০ সালের মধ্যে প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয়ের দিক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়ার পর চতুর্থ স্থানটি দখল করে নেবে ভারত। ওই সময় দেশটির প্রতিরক্ষা ব্যয় ৬৫ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে পৌঁছবে। ৫ ফেব্রুয়ারি অন্য এক সংবাদে বলা হয়, ভারত চীনের সীমান্তজুড়ে নতুন একটি পার্বত্য কোর গঠন করবে এবং এ বাহিনী গঠনে খরচ হবে ৬৯ হাজার কোটি রুপি। ভারতের ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকায় এ খবর ছাপা হয়েছিল। আর ওই পত্রিকার সূত্র ধরে বাংলাদেশের পত্রপত্রিকায়ও সংবাদটি ছাপা হয়। এর আগে বাংলাদেশ রাশিয়ার কাছ থেকে যে ৮ হাজার কোটি টাকার অস্ত্র ক্রয়ে চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল, তাও কোনো কোনো মহলে সমালোচিত হয়েছে। অবশ্য ভারতের ৬৯ হাজার কোটি রুপির পাশাপাশি বাংলাদেশের ৮ হাজার কোটি টাকা সমান্যই বলতে হবে। পাকিস্তানও তার অস্ত্র সম্ভার বাড়িয়েছে।
 
ভারতের উৎক্ষেপনকৃত অগ্নি-৫ মিসাইল
  তবে ভারতের এ অস্ত্র ক্রয়ের সিদ্ধান্তটি দেশটিতে বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। প্রথমত. ভারতে দারিদ্র্য অনেক বেশি। গেল সপ্তাহেই দারিদ্রের একটি করুণ কাহিনী সংবাদপত্রে ছাপা হয়েছে। এক মা তার ১১ বছরের মেয়েকে মুম্বাইয়ের এক পতিতালয়ে বিক্রি করে দিয়েছিলেন। মেয়েটি বুদ্ধি করে পুলিশের কাছে যাওয়ায় তা জানাজানি হয়ে যায়। দ্বিতীয়ত. চীন যখন ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনের প্রস্তাব দিচ্ছে, তখন বিপুল অর্থ ব্যয়ে একটি বাহিনী গঠনের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নিঃসন্দেহে ভারতের এ সিদ্ধান্ত শুধু চীন-ভারত সীমান্তেই উত্তেজনা ছড়াবে না, বরং তা পাকিস্তান সীমান্তেও উত্তেজনা বাড়াবে। সূক্ষ্মভাবে দেখলে দেখা যাবে, উপমহাদেশে পাক-ভারত এক ধরনের অস্ত্র প্রতিযোগিতা চলছে। ভারত সাম্প্রতিক সময়ে অগ্নি-৫ ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে, যা পারমাণবিক অস্ত্র বহন করতে সক্ষম। ভারতের অগ্নি ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালানোর পর পাকিস্তান হাতেফ গজনবি নামক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছিল। অগ্নির মতো হাতেফও পারমাণবিক বোমা বহনযোগ্য। অগ্নির পর ভারত নতুন ক্ষেপণাস্ত্র আকাশ ও পাকিস্তান হাতেফ-৯ নামে আরো দুই ধরনের ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছিল। এর মধ্য দিয়ে দেশ দুটো এক ধরনের পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছে। এতে দেশ দুটোর দারিদ্র্য দূরীকরণ কর্মসূচি ব্যাহত হতে বাধ্য।
এর কি আদৌ কোনো প্রয়োজন ছিল? প্রশ্ন হচ্ছে, বিশাল এক জনগোষ্ঠীকে দারিদ্রতার মধ্যে রেখে দুই দেশের এ ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি কার বিরুদ্ধে পরিচালিত হবে? পাঠকদের একটা ধারণা দিয়ে রাখি। একটা দূরপাল্লার (যেমন অগ্নি-৫) মিসাইলের দাম ৫ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ডলার। অর্থাৎ বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ৫ কোটি টাকা। একটি ব্রুজ মিসাইলের (সাবমেরিন থেকে নিক্ষেপযোগ্য) দাম ১ দশমিক ৪১ মিলিয়ন ডলার (প্রায় সাড়ে ১১ কোটি টাকা) আর বিমান থেকে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্রের (যা ভারত এরই মধ্যে অজর্ন করেছে) ৬ লাখ ডলার। এ অর্থ সামরিক খাতে ব্যয় না করে তা হাসপাতাল বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণকাজে ব্যবহার করা যেত। এমনকি ভারতে চরম দরিদ্রতম রাজ্য হিসেবে পরিচিত (দারিদ্র্যের কারণে যেখানে মাওবাদীদের তত্পরতা বেশি) মধ্য প্রদেশে, উত্তর প্রদেশ কিংবা ঝাড়খণ্ডে ক্ষুদ্র ঋণদান প্রকল্প চালু করতে পারত। ভারত তা করেনি। মুম্বাইয়ের চাকচিক্যময় ছবি দেখে ভারতের সব মানুষের জীবনযাত্রার মান বিচার করা যাবে না। ভারতে ১ লাখ ৮৩ হাজার কৃষক ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে গত ১০ বছরে আত্মহত্যা করেছে— এ রকম একটি সংবাদ সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় ছাপা হয়েছে। পাকিস্তান থেকে এ ধরনের সংবাদ তেমন একটা শোনা যায় না। এ কারণেই নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অধ্যাপক অমর্ত্য সেন বলেছিলেন এমডিজি (মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোলস) অর্জনে কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জন ভারতের চেয়ে ভালো।

সাম্প্রতিক সময়ে ভারত প্রতিরক্ষা খাতে যথেষ্ট ব্যয় বরাদ্দ বাড়িয়েছে। সিপরির (SIPRI) বার্ষিক গবেষণা গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ভারত ২০১৫ সালের মধ্যে প্রতিরক্ষা খাতে ৮০ বিলিয়ন ডলার খরচ করবে। জিডিপিতে প্রতিরক্ষা খাতে প্রবৃদ্ধির হার আড়াই থেকে ৩ শতাংশ। ২০০০ সালের পর প্রতিরক্ষা খাতে বাজেট বরাদ্দ বেড়েছে ৬৪ শতাংশ। এ সময়সীমায় ভারতে যে অস্ত্রসস্ত্র সরবরাহ করা হয়েছে, তার মধ্যে রাশিয়া একাই সরবরাহ করেছে ৮২ শতাংশ। অনেকেরই স্মরণ থাকার কথা, ভারত এরই মধ্যে তার নৌবহরে পারমাণবিক শক্তিচালিত বিমানবাহী জাহাজ অন্তর্ভুক্ত করেছে। ভারত মহাসাগরে অন্যতম নৌশক্তিরূপে আবির্ভূত হতে চায় দেশটি। ফরেন পলিসি ম্যাগাজিনে প্রকাশিত এক প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে যে, চীনের নৌবাহিনীতে যেখানে জাহাজের সংখ্যা ১৩৫, সেখানে ভারতের জাহাজ রয়েছে ১০৩টি। অর্থাৎ প্রায় কাছাকাছি। ভারতের উদ্দেশ্য যে কী, তা সহজেই অনুমেয়। পাঠক, স্মরণ করার চেষ্টা করুন, প্রেসিডেন্ট ওবামার ভারত সফরের সময় যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র কেনার জন্য চুক্তি করেছিল। চুক্তি অনুযায়ী ১১ বিলিয়ন ডলার দামে যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে ১২৬টি অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান সরবরাহ করবে। যেখানে জনগোষ্ঠীর অর্ধেক মানুষ ন্যূনতম টয়লেট সুবিধা পায় না, ৩১ শতাংশ জনগোষ্ঠীর দৈনিক আয় ১ দশমিক ২৫ সেন্টের নিচে (যা কিনা জাতিসংঘ কর্তৃক নির্ধারিত অতিদরিদ্রের মানদণ্ড), সেখানে শত শত কোটি রুপি ভারত ব্যয় করছে অস্ত্র খাতে। এরই মধ্যে প্রমাণ হয়েছে যে, অগ্নি-৫ উেক্ষপণের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত ছিল। যুক্তরাষ্ট্র চায়, ভারত এ অঞ্চলে অন্যতম পারমাণবিক শক্তিরূপে আবির্ভূত হোক। সুদূরপ্রসারী এক মহাপরিকল্পনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে অস্ত্রসজ্জায় সজ্জিত করছে। তার টার্গেট মূলত চীন, চীনকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলা। এ লক্ষ্যেই দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত-যুক্তরাষ্ট্র অক্ষ গড়ে উঠছে। ভারত এখন আর পাকিস্তানকে অন্যতম শত্রু বলে মনে করে না। ভারতের অন্যতম শত্রু এখন চীন। এ কারণেই যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের স্বার্থ এখানে এক ও অভিন্ন।

সাম্প্রতিক সময়ে অনেকেই দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেছেন। গেল বছর বাংলাদেশ ঘুরেও গেছেন সাবেক মার্কিন ফার্স্ব লেডি আর সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন। হিলারি ক্লিনটনের ঝুড়িতে যে নিরাপত্তার বিষয়টি ছিল, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় যে মার্কিন কৌশল অর্থাৎ ভারত-যুক্তরাষ্ট্র রাজনৈতিক ও সামরিক বলয়, সে বলয়ে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। ভারতকে দিয়ে পারমাণবিক বোমা বহনযোগ্য অগ্নি-৫ ও আকাশ উেক্ষপণ এ কৌশলেরই একটি অংশ। ভারতকে চীনের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করানো কিংবা ভারতকে ৩০ বছরের মধ্যে বিশ্বের দ্বিতীয় অর্থনীতিতে পরিণত করার উদ্যোগ কতটুকু সফল হবে বলতে পারব না, কিন্তু যে দেশ তার দারিদ্র্য দূরীকরণে কোনো বড় কর্মসূচি নিতে পারে না কিংবা কৃষকের আত্মহত্যা রোধ করার উদ্যোগ নিতে পারে না বা অগ্নি-৫ মিসাইল ক্ষেপণাস্ত্র উদ্ভাবন করে তারা আমাদের জন্য কোনো ‘মডেল’ হতে পারে না। আগামী দিনে ভারতে দরিদ্র জনগোষ্ঠী যেমন বাড়বে, তেমনি বাড়বে কন্যাশিশুর ভ্রূণ হত্যার প্রবণতা; একটি সভ্য সমাজে যা কল্পনাও করা যায় না। অগ্নি-৫ উেক্ষপণ ছিল একটি প্রহসন। আর পাকিস্তানের পরিস্থিতি যে ভারতের চেয়ে ভালো, তা বলা যাবে না। পাকিস্তান বাহ্যত আরেকটি ‘তালেবানি রাষ্ট্রে’ পরিণত হতে যাচ্ছে। একুশ শতকে এসেও দেশটির কোনো কোনো প্রদেশে মেয়েদের শিক্ষা সীমিত। তালেবান জঙ্গিরা মেয়েদের স্কুল বন্ধ করে দিয়েছে— এ রকম সংবাদ আমরা একাধিকবার পাঠ করেছি। পাকিস্তানের মতো দেশে যেখানে তারা জঙ্গি তত্পরতা দমন করতে পারছে না, সেখানে শাহীন (১ হাজার ৮০০ মাইল দূরপাল্লা) কিংবা হাতেফ গজনবির (১৮০ মাইল দূরে আঘাত হানার ক্ষমতাসম্পন্ন) মতো মিসাইল উদ্ভাবন করে পাকিস্তান পারমাণবিক প্রতিযোগিতাকে উসকে দিল। পাকিস্তান বা ভারতের এ থেকে লাভবান হওয়ার কিছু নেই। এতে দুই দেশের দারিদ্র্য আরো বাড়বে। আর লাভবান হবে যুক্তরাষ্ট্র। অস্ত্র ব্যবসায় তাদের প্রসার ঘটবে। এরই মধ্যে খবর বেরিয়েছে, ভারত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৬৬ কোটি ডলার ব্যয়ে ১৪৫টি হালকা কামান আমদানি করছে। একসময় তথাকথিত ‘নিরাপত্তা সুরক্ষা’র নাম করে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে ১০০ মিলিয়ন ডলার দিয়ে সাহায্য করেছিল (বিবিসি, ডিসেম্বর ১৬, ২০১০)। এখানে বলা ভালো, ভারত ও পাকিস্তান এনপিটি চুক্তিতে সই করেনি। পারমাণবিক অস্ত্র সীমিতকরণে উত্তর কোরিয়ার ব্যাপারে মার্কিন দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে ভারতের ক্ষেত্রে তার নীতির যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। উপমহাদেশে আগামী দিনগুলোয় এ প্রতিযোগিতা বাড়বে বলেই মনে হয়।

দক্ষিণ এশিয়ায় এ পারমাণবিক প্রতিযোগিতায় অন্য দেশগুলোও আক্রান্ত হতে পারে। প্রভাববলয় বিস্তারের রাজনীতিতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো দুই ব্লকে বিভক্ত হয়ে যেতে পারে। এতে দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়নের ধারা ব্যাহত হতে বাধ্য। বিশ্বব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ১৯৮১ সালে দক্ষিণ এশিয়ায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ছিল ৫৪৯ মিলিয়ন (প্রতিদিনের আয় ১ ডলার ২৫ সেন্ট হিসেবে)। ২০০৫ সালে তা দাঁড়ায় ৫৯৫ মিলিয়নে। বর্তমান হিসাব অনুযায়ী এ সংখ্যা ৬৫০ মিলিয়নের কাছাকাছি। পরিসংখ্যানে আরো দেখা গেছে, ২৫০ মিলিয়ন শিশু অপুষ্টির শিকার। ৩০ মিলিয়ন শিশু কোনো দিন স্কুলে যাওয়ার সুযোগ পায় না। মোট নারী জনগোষ্ঠীর তিন ভাগের এক ভাগ রক্তশূন্যতায় ভোগে। ভারতে প্রতি তিনজনের একজন দরিদ্র। ১২১ কোটি জনসংখ্যার দেশ ভারতে অর্ধেক জনগোষ্ঠীর জন্য টয়লেট সুবিধা নেই। প্রতিদিন ভারতে মারা যায় পাঁচ হাজার শিশু। এ পরিসংখ্যান কোনো আশার কথা বলে না। সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে দারিদ্র্য বিমোচনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছিল। কিন্তু তাতে দারিদ্র্য কমেনি। অথচ দুটি বড় দেশ ভারত ও পাকিস্তান আজ কোটি কোটি ডলার খরচ করছে পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র উদ্ভাবনে। দক্ষিণ এশিয়ার এ মুহূর্তে সমস্যা হচ্ছে দারিদ্র্য দূর করা, জাতিগত দ্বন্দ্বের অবসান, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা এবং সেই সঙ্গে জেন্ডার সমতা আনা। ব্যাপক কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর জন্য চাকরির ব্যবস্থা করাও জরুরি। দক্ষিণ এশিয়ার নেতারা এদিকে দৃষ্টি দিলে ভালো করবেন।
লেখক: অধ্যাপক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
www.tsrahmanbd.blogspot.com




0 comments:

Post a Comment