তরুণদের আবেগকে আমি সমর্থন করি। ওরাই পারে সমাজটা বদলে দিতে। অনেক আগে কবি হেলাল হাফিজ লিখেছিলেন, ‘এখন যৌবন যার, যুদ্ধে যাবার শ্রেষ্ঠ সময় তার’। যৌবনের এই তাগিদ হাজার হাজার তরুণকে শাহবাগে নিয়ে এসেছে। সেখানে স্লোগানের ভাষায় গণমানুষের কোনো কথা নেই। তরুণরা প্রতিবাদী হবে, এটা আমরা চাই। কিন্তু তাদের মুখে দুর্নীতি, শেয়ারবাজার, পদ্মাসেতু, হলমার্ক, ডেসটিনির দুর্নীতির বিরুদ্ধে স্লোগান নেই কেন? নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ঊর্ধ্বগতিতে প্রতিক্রিয়া নেই কেন? সারা দেশ ও জাতি একটি নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন চায়। একবারও আমি শুনলাম না নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি। তাহলে কী আমরা ধরে নেব সাধারণ মানুষের সাথে সম্পর্কিত বিষয়গুলো আমাদের শাহবাগে জড়ো হওয়া তরুণ সমাজকে স্পর্শ করেনি? কেন করেনি? অতীতে তো আমরা দেখেছি বামমনা ছাত্র সংগঠনগুলো সাধারণ মানুষের পক্ষে স্লোগান দিতো। কিছুদিন আগে বামমনা সংগঠনগুলো ঢাকায় হরতালের ডাক দিয়েছিল (যদিও বলা হয় সেটি ছিল ‘সরকারের হরতাল’)। সেখানে কিন্তু নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ঊর্ধ্বগতির প্রশ্নটিও ছিল। তাহলে বামমনা সংগঠনগুলোর ছাত্র সংগঠনগুলো, যারা শাহবাগে জমায়েত হয়েছিল, তাদের মুখে এই স্লোগান নেই কেন? শেয়ারবাজার থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা ‘লুট’ করে নিয়ে যাওয়া হলো। সরকার যে তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল (ইব্রাহিম খালেদের নেতৃত্বে), সেখানেও অনিয়ম ও আর্থিক লুটপাটের তথ্য প্রমাণিত হলো। কমিটি কিছু ব্যক্তিকে চিহ্নিতও করেছিল। সুশীল সমাজ তাদের গ্রেফতার ও লুটপাটকৃত টাকা ফেরত আনার দাবি করে আসছে। আজ কেন শাহবাগে এ দাবি উচ্চারিত হলো না? নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ আজ অসহায়। নতুন ভিত্তি বছর (২০০৫-০৬) অনুযায়ী ডিসেম্বরে (২০১২) মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয়েছে ৭ দশমিক ১৪ শতাংশ। অথচ নভেম্বরে ছিল ৬ দশমিক ১৪ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী ডিসেম্বর (২০১২) মাসে চাল, আটা, ডাল, মাছ-মাংস, মসলা, দুধ ও তেলের দাম বেড়েছে। ওই সময় খাদ্যে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে দশমিক ৩৫ শতাংশ। একই সঙ্গে খাদ্য বহির্ভূত পণ্যের দাম বেড়েছে দশমিক ৩৮ শতাংশ। আমরা জানুয়ারির (২০১৩) পরিসংখ্যান যদি নেই, তাহলে দেখবো, খাদ্যে মূল্যস্ফীতি আরো বেড়েছে। এই মূল্যস্ফীতি কী আমাদের তরুণদের স্পর্শ করে না? শাহবাগের তরুণ নেচেগেয়ে উৎসব করে, শাহবাগ চত্বরে ঘুমিয়ে দিন কাটাল। কিন্তু জানল না তাদের বাবারা কী কষ্ট করে সংসার চালান? জিজ্ঞেস করল না বাবাকে, সীমিত আয়ে বাবা কীভাবে সংসার চালান? নিউইয়র্কে ‘অক্যুপাই মুভমেন্ট’ হয়েছিল অসমতা, বৈষম্য ও দারিদ্র্যতার বিরুদ্ধে। মার্কিন সমাজে শ্রেণীতে শ্রেণীতে ব্যবধান বাড়ছে। একটি ধনিক শ্রেণীর জন্ম হয়েছে, যাদের কাছে সম্পদ কেন্দ্রীভূত হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সরব ছিল ‘অক্যুপাই মুভমেন্ট’। কায়রোতে তাহরির স্কোয়ারে আন্দোলন হয়েছিল স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে। ১৯৮১ সাল থেকেই ক্ষমতায় ছিলেন হোসনি মোবারক। গণতন্ত্র চর্চা সেখানে ছিল না। তরুণ প্রজন্ম সেখানে বিক্ষোভকে সংগঠিত করেছিল সরকারের বিরুদ্ধে। আজ দেখলাম ভিন্ন চিত্র। সরকারই মদদ দিচ্ছে বিক্ষোভকারীদের অবস্থান ধর্মঘট করতে! তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ‘সিসি ক্যামেরা’ বসিয়েছে। ভাল, সন্দেহ নেই।
পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির বিষয়টি আজ আন্তর্জাতিক আসরে অন্যতম একটি আলোচিত বিষয়। কিন্তু ব্যক্তির দুর্নীতির কারণে আমাদের ভাবমূর্তি যথেষ্ট নষ্ট হয়েছে। ট্রিআই’র রিপোর্টেও আছে এই দুর্নীতির খবর। কিন্তু শাহবাগে দুর্নীতির কোনো স্লোগান নেই। পদ্মা সেতু আর আবুল হোসেন পরস্পর সম্পর্কিত। কিন্তু কোনো স্লোগান নেই। কেন নেই? শুভঙ্করের ফাঁকিটি এখানেই। গণমানুষের দাবি ছিল দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করার। এই দাবি গণদাবিতে পরিণত হয়েছিল। বেগম জিয়া এই অসুস্থ শরীর নিয়ে রোড মার্চ করেছেন একাধিক। ঢাকায় সর্বকালের বৃহৎ গণজমায়েত করেছে বিএনপি। বিএনপি যখন ধীরে ধীরে এই আন্দোলনকে একটি চূড়ান্ত পরিণতির দিকে নিয়ে যাচ্ছিল, ঠিক তখনই জনগণের দৃষ্টিকে অন্যদিকে নিয়ে যাবার জন্য তৈরি করা হলো এই গণআন্দোলন। এখানে আবেগ আছে। কিন্তু বাস্তবতার কোনো মিল নেই। আদালতে একটি রায় হয়েছে। এই রায় নিয়ে কেউ খুশি হতে পারেন। কেউ অখুশি হতে পারেন। কিন্তু রায় বাতিল করা ও প্রকাশ্যে ফাঁসি দাবি করা, এসব কর্মকাণ্ড কী ‘আদালত অবমাননার’ পর্যায়ে পড়ে না? আদালত কী কারো দাবিতে চলে? আদালত বিচার করেন আইন, সাক্ষী-সাবুদ ইত্যাদি বিশ্লেষণ করে। আদালত তো অন্ধ। আদালতকে তো ‘হুকুম’ দেয়া যায় না? এতে করে কী আইনের শাসনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয় না? তরুণদের আবেগ থাকতে পারে। আবেগ দিয়ে বিচার হয় না।
আমি চাই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ক্রয়মূল্য আমাদের সাধ্যের মধ্যে থাকবে। আমি চাই পদ্মা সেতুর দুর্নীতির সাথে যারা জড়িত ছিল, তার বিচার। যারা বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে, তাদের দাঁড় করানো হোক আসামির কাঠগড়ায়। যারা শেয়ারবাজার, হলমার্ক, ডেসটিনির অর্থ পাচারের সাথে জড়িত, তাদের বিচার। আমি বিশ্বাস করি তরুণ প্রজন্ম যদি এসব বিষয়ে আন্দোলন গড়ে তোলে সাধারণ মানুষ তাদের পাশে থাকবে। এ দেশের তরুণদের একটি ‘ঐতিহ্য’ রয়েছে। বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা আন্দোলন, কিংবা পরবর্তীতে নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের সময় স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে তরুণ সম্প্রদায়ের অবদান ইতিহাসে সোনালী অক্ষরে লিপিবদ্ধ রয়েছে।
পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির বিষয়টি আজ আন্তর্জাতিক আসরে অন্যতম একটি আলোচিত বিষয়। কিন্তু ব্যক্তির দুর্নীতির কারণে আমাদের ভাবমূর্তি যথেষ্ট নষ্ট হয়েছে। ট্রিআই’র রিপোর্টেও আছে এই দুর্নীতির খবর। কিন্তু শাহবাগে দুর্নীতির কোনো স্লোগান নেই। পদ্মা সেতু আর আবুল হোসেন পরস্পর সম্পর্কিত। কিন্তু কোনো স্লোগান নেই। কেন নেই? শুভঙ্করের ফাঁকিটি এখানেই। গণমানুষের দাবি ছিল দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করার। এই দাবি গণদাবিতে পরিণত হয়েছিল। বেগম জিয়া এই অসুস্থ শরীর নিয়ে রোড মার্চ করেছেন একাধিক। ঢাকায় সর্বকালের বৃহৎ গণজমায়েত করেছে বিএনপি। বিএনপি যখন ধীরে ধীরে এই আন্দোলনকে একটি চূড়ান্ত পরিণতির দিকে নিয়ে যাচ্ছিল, ঠিক তখনই জনগণের দৃষ্টিকে অন্যদিকে নিয়ে যাবার জন্য তৈরি করা হলো এই গণআন্দোলন। এখানে আবেগ আছে। কিন্তু বাস্তবতার কোনো মিল নেই। আদালতে একটি রায় হয়েছে। এই রায় নিয়ে কেউ খুশি হতে পারেন। কেউ অখুশি হতে পারেন। কিন্তু রায় বাতিল করা ও প্রকাশ্যে ফাঁসি দাবি করা, এসব কর্মকাণ্ড কী ‘আদালত অবমাননার’ পর্যায়ে পড়ে না? আদালত কী কারো দাবিতে চলে? আদালত বিচার করেন আইন, সাক্ষী-সাবুদ ইত্যাদি বিশ্লেষণ করে। আদালত তো অন্ধ। আদালতকে তো ‘হুকুম’ দেয়া যায় না? এতে করে কী আইনের শাসনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয় না? তরুণদের আবেগ থাকতে পারে। আবেগ দিয়ে বিচার হয় না।
আমি চাই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ক্রয়মূল্য আমাদের সাধ্যের মধ্যে থাকবে। আমি চাই পদ্মা সেতুর দুর্নীতির সাথে যারা জড়িত ছিল, তার বিচার। যারা বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে, তাদের দাঁড় করানো হোক আসামির কাঠগড়ায়। যারা শেয়ারবাজার, হলমার্ক, ডেসটিনির অর্থ পাচারের সাথে জড়িত, তাদের বিচার। আমি বিশ্বাস করি তরুণ প্রজন্ম যদি এসব বিষয়ে আন্দোলন গড়ে তোলে সাধারণ মানুষ তাদের পাশে থাকবে। এ দেশের তরুণদের একটি ‘ঐতিহ্য’ রয়েছে। বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা আন্দোলন, কিংবা পরবর্তীতে নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের সময় স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে তরুণ সম্প্রদায়ের অবদান ইতিহাসে সোনালী অক্ষরে লিপিবদ্ধ রয়েছে।
স্যার শাহবাগীরা তো সরকারের কতিপয় দালাল।প্রো-ইন্ডিয়ান
ReplyDelete