রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই

এই নির্বাচনের আদৌ কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই আমরা দেখেছি অর্ধেকের বেশি আসনের প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। গতকাল অনুষ্ঠিত হলো ১৪৭টি আসনে নির্বাচন। এই আসনগুলোর আবার বেশ কয়েকটিতে আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী নেই। তার মানে ইচ্ছাকৃতভাবে দশম জাতীয় সংসদের জন্য বিরোধী দল তৈরি করা হলো। যেহেতু বিএনপি নির্বাচনে নেই, তাই কৌশলে কিছু আসন বণ্টনের মাধ্যমে জাতীয় পার্টিকে দিয়ে একটি বিরোধী দল তৈরি করা হলো। ফলে একতরফার এ নির্বাচন তার গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে আগেই। ৩০০টি সংসদীয় আসনের প্রার্থীদের মধ্যে ১৫৩ প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এই আসনের কোনো ভোটারকে ভোটকেন্দ্রে যেতে হয়নি, তারা তাদের ভোটারাধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি। বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থী নির্বাচনের এই প্রক্রিয়া সুস্পষ্টভাবে আমাদের সংবিধানের ১১তম অনুচ্ছেদের পরিপন্থী। অন্যদিকে এই নির্বাচনে অংশ নিয়েছে আওয়ামী লীগসহ বারোটি রাজনৈতিক দল। আমরা যদি আগের নির্বাচনগুলোর ফলাফলের দিকে তাকাই তাহলে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে উঠবে এবং তা হলো, আওয়ামী লীগ ছাড়া অংশগ্রহণকারী দলগুলোর কারো ভোটই পাঁচ শতাংশ নয়। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ইতোমধ্যে যারা জয়ী হয়েছেন তাদের মধ্যে ওয়ার্কার্স পার্টির দুজন সদস্যও রয়েছেন। অথচ বিগত সব সংসদ নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে ওয়ার্কার্স পার্টির ভোট সারাদেশে কখনোই দুই-তিন শতাংশের ঘর অতিক্রম করেনি। অথচ সেই দলের প্রার্থীরা এবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হলেন। এটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্যও বড় প্রশ্ন হয়ে থাকবে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য নির্বাচনের যে দায়িত্ব ছিল, কমিশন তা পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে। কমিশন নির্বাচনের আগেই আরপিও সংশোধনের মাধ্যমে নিজেদের ক্ষমতা খর্ব করেছে। ফলে নির্বাচন কমিশন হয়ে উঠেছে একটি ক্ষমতাশূন্য কমিশন। একটি অকার্যকর প্রতিষ্ঠান। তার প্রমাণ এই নির্বাচনে তফসিল ঘোষণা থেকে নির্বাচনের ভোটগ্রহণের বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এবারের নির্বাচন কমিশনের কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে ভবিষ্যতে নির্বাচন কমিশন যে স্বাধীনভাবে জাতিকে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে পারবে সেই ধারণাও মিথ্যা প্রমাণিত হলো। বর্তমান নির্বাচন কমিশন আগামী সক্ষম নির্বাচন কমিশনের ধারণাই পাল্টে দিয়েছে। আমাদের এখন অবশ্যই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকেও সেই নির্বাচনের পথ তৈরি করার জন্য কাজ করতে হবে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বয়কট করেছে বিরোধী দল। ফলে এই নির্বাচন তার গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে। তবে নির্বাচন বয়কটের জন্য আন্দোলনের নামে বিরোধী দল যেভাবে সহিংস কর্মকাণ্ড চালিয়েছে তাও গ্রহণযোগ্য নয়। এটা সংসদীয় গণতন্ত্রের ভাষা হতে পারে না। তবে এই ধরনের সহিংস কর্মকাণ্ডের দিকে বিএনপিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। বিএনপির আন্দোলনকে সহিংস করে তোলার জন্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তৎপরতা চালানো হয়েছে। তবে পরিস্থিতি যাই হোক, আন্দোলনের নামে সহিংসতা ছড়ানোর ফল শুভ হতে পারে না। ভোটের আগের দিন সারাদেশে দেড় শ’রও বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আগুন দেয়া হয়েছে, এটা দুঃখজনক। আমি মনে করি এটা রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যর্থতা। Manobkontho 06.01.14

0 comments:

Post a Comment