তিনটি
সিদ্ধান্ত হয়েছে তিনটি দেশে। কিন্তু দেশ একটি। দেশটি বাংলাদেশ। সিদ্ধান্ত
হয়েছে ওয়াশিংটন, ব্রাসেলস আর লন্ডনে। যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট একটি সিদ্ধান্ত
নিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পার্লামেন্টের সিদ্ধান্তও বাংলাদেশকে নিয়ে। আর
ব্রিটেনের হাউস অব কমনসের সিদ্ধান্তও এলো বাংলাদেশকে নিয়ে। পুরো বিষয়টিই
বাংলাদেশকে নিয়ে, ৫ জানুয়ারির দশম জাতীয় সংসদের নির্বাচনকে নিয়ে। এ সংসদ
এখন গঠিত হয়েছে। একটি মন্ত্রিসভাও আমরা পেয়েছি। এ নির্বাচন নিয়ে সাধারণ
মানুষের আগ্রহ ছিল কম। এ নিয়ে এন্তার আলোচনা হয়েছে। টকশোগুলোয় আলোচনা চলছে
আজও। আমি নিজেও একাধিক টকশোতে অংশ নিয়েছি।একটি নির্বাচন হয়েছে। আমরা
চাই বা না চাই, জনগোষ্ঠীর প্রায় ৫২ ভাগ মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগ করার সুযোগ
পাক বা না পাক, বাস্তবতা হচ্ছে নির্বাচনটি হয়ে গেছে। আর ২৯ জানুয়ারি বসছে
ওই সংসদের প্রথম অধিবেশন। এখানে যে বিষয়টি আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ তা
হচ্ছে উপরে উল্লিখিত তিনটি পার্লামেন্টের সিদ্ধান্তগুলো। অতীতে কোনো দেশের
ক্ষেত্রে এমনটি হয়েছে বলে আমার জানা নেই। যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট
সুনির্দিষ্টভাবে ছয়টি বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। এগুলো হচ্ছে-
১. রাজনৈতিক সহিংসতার নিন্দা জানিয়ে অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য
নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সরাসরি ও সত্যিকার অর্থে সংলাপ, ২. রাজনৈতিক
অচলাবস্থার জন্য উদ্বেগ প্রকাশ, ৩. শান্তিপূর্ণভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচি
পালনের পথ সুগম করা, ৪. নির্বাচনী পর্যবেক্ষকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, ৫.
জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব ফার্নান্দেজ তারানকোর উদ্যোগের প্রতি সমর্থন এবং
৬. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, মানবাধিকার কর্মীদের হেনস্থা বন্ধ ও গ্রামীণ
ব্যাংকের ‘স্বাধীনতা’ ফিরিয়ে দেয়া। সিনেটে গৃহীত এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে
সিনেটর রবার্ট মেনডেজ কর্তৃক দুই নেত্রীকে লেখা চিঠির কথাও আমরা এখানে
উল্লেখ করতে পারি। ওই চিঠিতে রাজনৈতিক অচলাবস্থা কাটানো, সহিংসতা বন্ধ ও
অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবি জানানো হয়েছে। সিনেটর মেনডেজ মার্কিন সিনেটের
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ফরেন রিলেশনস কমিটির চেয়ারম্যান।ইউরোপীয়
ইউনিয়নের পার্লামেন্টে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে ১৬ জানুয়ারি। এক্ষেত্রে
সিদ্ধান্ত হয়েছে সাতটি বিষয়ে। এগুলো অনেকটা এরকম- ১. নির্বাচনকে কেন্দ্র
করে সহিংসতা ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনার নিন্দা, ২. সহিংসতা
বন্ধে সংকট উত্তরণের পথ বের করতে সব পক্ষের কার্যকর আলোচনায় বসা, ৩.
স্বচ্ছ, অংশগ্রহণমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য একটি নির্বাচন আয়োজন, ৪. বিরোধী
নেতাদের কারাবন্দি রাখার ঘটনায় নিন্দা এবং সহিংসতার ঘটনায় বিরোধী দলের (নবম
সংসদের) জড়িত থাকার নিন্দা ও দল নিষিদ্ধ, ৫. গণগ্রেফতার বন্ধ ও
শান্তিপূর্ণভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন, ৬. ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা
বৃদ্ধি এবং ৭. আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাক্ষীদের সুরক্ষা
নিশ্চিত করা।ব্রিটেনের হাউস অব কমনসে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে ১৭
জানুয়ারি। সেখানে আছে পাঁচটি প্রস্তাব। ১. একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন, ২.
সব রাজবন্দির মুক্তি, ৩. সবার অংশগ্রহণমূলক একটি নির্বাচন, ৪. সহিংসতা
বন্ধ এবং ৫. একটি ‘বিতর্কিত’ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার বিলুপ্তি।
মোটা দাগে আমরা এ তিন সিদ্ধান্ত যদি বিশ্লেষণ করি, তাহলে এতে অন্তত তিনটি ক্ষেত্রে আমরা অদ্ভুত একটি মিল খুঁজে পাই। এগুলো হচ্ছে- ১. অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন আয়োজন, ২. অবিলম্বে স্থগিত হয়ে যাওয়া সংলাপ প্রক্রিয়া শুরু করা এবং ৩. সহিংসতা বন্ধ করা। লক্ষণীয়, সবাই একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের কথা বললেও বর্তমান দশম সংসদ ভেঙে দেয়ার কথা কেউ বলেনি। তবে যে ভাষা তারা ব্যবহার করেছে, তাতে এটা ধারণা করা স্বাভাবিক যে, দশম সংসদ গঠন প্রক্রিয়ায় তারা খুশি নয়। সব দলের অংশগ্রহণ এতে হয়নি, এমন অভিমতও দিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত বিদেশী কূটনীতিকরা। এ ক্ষেত্রে ব্রিটেনের হাউস অব কমনসে গৃহীত সিদ্ধান্তে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা বলা হয়েছে, যা অন্য কেউ বলেনি। এটা বিশেষ গুরুত্বের দাবি রাখে। ইউরোপীয় পার্লামেন্টে ‘সন্ত্রাসে জড়িত দল নিষিদ্ধ করা উচিত’ বলে যে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে, তাও গুরুত্বপূর্ণ। যদিও এ ক্ষেত্রে কোনো বিশেষ দলকে বোঝানো হয়নি। সাম্প্রতিককালে সহিংস ঘটনাবলীর জন্য জামায়াত ও হেফাজতে ইসলাম অভিযুক্ত। সাধারণ মানুষের মনে একটা প্রশ্ন উঁকি দেবে- ইইউ’র এ সিদ্ধান্ত কি জামায়াতের ক্ষেত্রে প্রয়োগ হবে? সরকার কি সিদ্ধান্তটি নেবে? সরকারের হাতে একাধিক ‘অপশন’ আছে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার। কী করবে সরকার এখন?এসব প্রস্তাব ও সিনেটর মেনডেজের চিঠির মধ্য দিয়ে একটি মেসেজ আমরা পাচ্ছি আর তা হচ্ছে, রাজনৈতিক অচলাবস্থা কাটানোর একটা পথ হল একটি নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যাপারে ‘সংলাপ’ শুরু করা। এদিকে ব্রিটেনের টেলিগ্রাফ পত্রিকায় একটি আশংকার কথা ব্যক্ত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, দুই বড় দলের মাঝে যদি সমঝোতা না হয়, তাহলে আংশিক ব্রিটিশ সহযোগিতা হারাতে পারে বাংলাদেশ।এসব মন্তব্য এখন বিবেচনায় নিতে হবে। সরকার হার্ড লাইনে গেলে ভুল করবে। ১৩ জানুয়ারি বিএনপি ঢাকায় কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। বৈঠক শেষে কূটনীতিকরা মন্তব্য করেছেন, দশম সংসদ নির্বাচনে গণরায়ের প্রতিফলন ঘটেনি। তারা সহিংসতা পরিহার করে সব দলের প্রতি সমঝোতার মাধ্যমে যত দ্রুত সম্ভব সবার অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের তাগিদ দিয়েছেন। এটাই হচ্ছে মোদ্দা কথা। সহিংসতা কোনো সমাধান নয়। জাতির জন্য, সমাজের জন্য সহিংসতা কোনো ভালো ফল বয়ে আনে না। রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে, বিশেষ করে বিরোধী দলের মাঝে এ উপলব্ধিটা আসতে হবে। তবে এটা ভালো খবর, নির্বাচনের পরপরই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। নির্বাচনের পর দেশে তেমন সহিংসতার খবর আসছে না। সরকারও তেমন শক্ত অবস্থানে যায়নি।উপরে উল্লিখিত তিনটি সিদ্ধান্তেই হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার প্রসঙ্গটি এসেছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক যে, নির্বাচনের আগে ও পরে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন আক্রান্ত হয়েছেন বেশি। আমরা প্রায়ই লক্ষ্য করি, নির্বাচনের আগে ও পরে এ সম্প্রদায়ের লোকদের টার্গেট করে আক্রমণ করা হয়। ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হয়। এটা অতীতে বারবার হয়েছে। এবারও হল এবং খুব আশ্চর্যজনকভাবে আমরা এবার লক্ষ্য করলাম, এ সহিংস ঘটনার সঙ্গে কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরকারি দলের লোকজনও জড়িত। এ ধরনের একটি অভিযোগ এনেছেন হিন্দু-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের জনৈক নেতা। বিষয়টা হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত যেই থাকুক, সে রাষ্ট্রের শত্র“, সমাজের শত্র“। আমরা চাইব, সরকার একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে এসব ঘটনায় যারা জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেবে। এ ঘটনায়ও বিদেশে আমাদের ভাবমূর্তি যথেষ্ট নষ্ট হয়েছে।বিদেশের পার্লামেন্টে বাংলাদেশ নিয়ে যখন কোনো সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়, তখন আগামীতে বিএনপি ভূমিকাও একটা প্রশ্নের মুখে থাকবে অনেকের কাছে। আশার কথা, বিএনপি কোনো হরতাল আর অবরোধের কর্মসূচি দেয়নি। এটা একটা প্লাস পয়েন্ট সরকারের সঙ্গে সমঝোতায় যাওয়ার। খালেদা জিয়া উপলব্ধি করেছেন, হরতাল আর অবরোধে সহিংসতা বৃদ্ধি পায়। আর এতে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয় বেশি। সহিংসতায় সাধারণ মানুষের যেমন সমর্থন থাকে না, তেমনি বিদেশী বন্ধু রাষ্ট্রগুলোও তা সমর্থন করে না। বিএনপি ঢাকায় নিযুক্ত বিদেশী কূটনীতিকদের সঙ্গে যে বৈঠক করেছিল, তাতে কূটনীতিকরা সবাই সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছিলেন। এদিকে বিএনপি ২০ জানুয়ারি ঢাকায় একটি গণসমাবেশ করেছে। সরকারের ওপর ‘চাপ’ প্রয়োগ করার জন্য এ ধরনের সমাবেশ বৈধ ও যুক্তিসঙ্গত। সরকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দিয়ে শুভবুদ্ধির পরিচয় দিয়েছে। একই সঙ্গে বিএনপি ২৯ জানুয়ারি কালো পতাকা প্রদর্শনের ডাক দিয়েছে। সবার জানা, ওইদিন দশম সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে। এরই মধ্যে খালেদা জিয়া আবার প্রতিটি বিভাগীয় শহরে গণসমাবেশ করার কথা বলেছেন। এটাও ভালো দিক। এতে করে কর্মীদের ধরে রাখা ও উজ্জীবিত করা সহজ হবে। খালেদা জিয়া সংলাপের কথা বলেছেন। এ অ্যাপ্রোচটাও ভালো। মূলত একটি সমঝোতা ও সংলাপের কথা সবাই বলছেন। দাতাদের কাছ থেকে যেসব প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে, তাতে এ সংলাপের ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়ার কথা বলা হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়ার এ আহ্বান নিঃসন্দেহে এখন একটি সংলাপের ক্ষেত্র তৈরি করতে পারে। পারস্পরিক বিশ্বাস আর আস্থা না থাকলে গণতন্ত্র বিকশিত হবে না। গণতন্ত্র মুখ থুবড়ে পড়বে। এ বক্তব্যের মধ্য দিয়ে আপতত সহিংসতানির্ভর রাজনীতির অবসান ঘটল।দু’সপ্তাহ পরই ভাষা আন্দোলনের মাস। সুতরাং ভাষার মাসে বিএনপি কোনো বড় কর্মসূচি দেবে না, এটাই প্রত্যাশিত। একই সঙ্গে মার্চ হচ্ছে স্বাধীনতার মাস। এ মাসেও বিএনপি হরতাল আর অবরোধের মতো কর্মসূচি দেবে না, এটাও ধারণা করা যায়। কিন্তু তাতে করে রাজনৈতিক অচলাবস্থার কোনো অবসান হবে কি? আমার মনে হয় না। সরকার যদি কোনো বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ না করে, তাহলে সমস্যা যা ছিল, তাই থেকে যাবে। খালেদা জিয়ার সংবাদ সম্মেলনের পর ‘রাজনীতির বলটি’ এখন স্পষ্টতই তিনি ঠেলে দিলেন সরকারের কোর্টে। সরকার যদি নমনীয় না হয়, তাহলে সমস্যা যা ছিল, তা-ই থেকে যাবে। তবে একটি আশার কথা শুনিয়েছেন নতুন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোঃ শাহ্রিয়ার আলম। একেবারেই আনকোরা একজন মানুষ। ঢাকায় নিযুক্ত কূটনীতিকদের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি বলেছেন, আগামী নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় তিনি প্রস্তুত। তিনি দলের শীর্ষ নেতা নন। নীতি নির্ধারণী প্রক্রিয়ায়ও তিনি জড়িত নন। তবু তার অ্যাপ্রোচটি আমার ভালো লেগেছে। রাজনীতিতে এ ‘রিয়েল পলিটিকস’টাই হল আসল কথা। বাস্তবতা মেনে নেয়ার মধ্যেই দেশ ও জাতির মঙ্গল নিহিত। আর বাস্তবতা বলে বিএনপি একটি বড় দল। এ দলকে বাইরে রেখে দেশে স্থিতিশীল রাজনীতি প্রত্যাশা করা যাবে না। এতে করে নানা জটিলতা তৈরি হবে। তবে সরকারপ্রধান একটি শর্ত জুড়ে দিয়েছেন। শর্তটি হচ্ছে বিএনপিকে জামায়াতের সঙ্গ ছাড়তে হবে। বিএনপির জন্য কাজটি কঠিন, সন্দেহ নেই। তবে সরকারের জন্য একটি সুযোগ তো আছে। সংবিধানের ৩৮(গ) ও (ঘ), রিপ্রেজেনটেশন অব পিপলস্ অর্ডিন্যান্স ১৯৭২, দ্য পলিটিক্যাল পার্টিস অর্ডিন্যান্স ১৯৭৮-এর ধারা-উপধারা বলে সরকার জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে পারে। এছাড়া আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের একটি পর্যবেক্ষণ কিংবা উচ্চ আদালতে একটি রিট মামলার ফয়সালা করে সরকার জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে পারে। নির্বাচন কমিশন এরই মধ্যে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করেছে। আগামী নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী নামে কোনো দল নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার বিষয়টি আইনগত ও সাংবিধানিকভাবেই যাওয়া উচিত। এটাকে সংলাপের পূর্বশত করা উচিত নয়। তবে এটা তো ঠিক, বিএনপির নেতৃস্থানীয়দের মাঝে এ উপলব্ধি এসেছে যে, বিএনপির জামায়াতকে পরিত্যাগ করা উচিত।তবে আমার ভাবনা অন্য জায়গায়। যদি সংলাপ হয়ও, তাতে কি কোনো ফল পাওয়া যাবে? সংলাপে মূল আলোচ্য বিষয় কী? একটি মধ্যবর্তী নির্বাচন? তাতে সরকার হয়তো রাজি হবে। কিন্তু নির্বাচনটা হবে কোন সরকারের অধীনে? অন্তবর্তীকালীন সরকার? সংবিধানে তো সেভাবেই লেখা আছে। সে ক্ষেত্রে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বেই তো নির্বাচন হওয়ার কথা। বিএনপি তা কি মানবে? যদি এটা বিএনপিকে মানতেই হয় তাহলে প্রশ্ন উঠবে, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিল না কেন? আমি নিশ্চিত করেই বলতে পারি, সংবিধানে বর্ণিত অন্তবর্তীকালীন সরকারের ফর্মুলা বাদ দিয়ে (যেখানে শেখ হাসিনাই থেকে যাবেন সরকারপ্রধান হিসেবে) অন্য কোনো ফর্মুলায় বিএনপি রাজি হবে। ফলে সংলাপ হলেও তা কোনো ফল দেবে না- আমার আশংকা এখানেই। তাহলে কী হতে পারে ভবিষ্যতে? নতুন এক রাজনৈতিক সংস্কৃতির জন্ম হতে যাচ্ছে বাংলাদেশে, যেখানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একটি সত্যিকার অর্থেই ‘ঐকমত্যের সরকার’ প্রতিষ্ঠিত হবে। ১৮ দলীয় জোট থেকে কেউ যদি মন্ত্রিসভায় যোগ দেয়, আমি অবাক হব না। গুজব আছে ১৮ দলের দুই দলীয় প্রধানকে নিয়ে। বিএনপির ভেঙে যাওয়া এবং সরকারে যোগ দেয়ার সম্ভাবনাকেও আমি উড়িয়ে দেই না। বিএনপির প্রতি সাধারণ মানুষের সমর্থন আছে। সরকার উপজেলা নির্বাচন দিতে যাচ্ছে। আমার ধারণা, বিএনপির সমর্থকরা এতে অংশ নেবেন এবং ওই নির্বাচনের ফলাফল বিএনপিকে একসময় বাধ্য করতে পারে প্রধানমন্ত্রীকে রেখেই একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে। একটা বড় ধরনের অবরোধ আর হরতালের কর্মসূচির পর বিএনপির পক্ষে কঠিন হবে আন্দোলন সংগঠিত করা। বিএনপির নীতিনির্ধারকদের এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে কীভাবে এবং কোন প্রতিক্রিয়ায় জনগণকে আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা যায়।বাংলাদেশে এখন একধরনের কর্তৃত্ববাদী শাসন প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। রাশিয়ার গণতন্ত্র কিংবা মালয়েশিয়ার ঐকমত্যের রাজনীতি এ ক্ষেত্রে একটি মডেল হতে পারে। সরকার যদি এখন সিঙ্গাপুরের গণতান্ত্রিক মডেল ও অর্থনৈতিক উন্নয়নকে গুরুত্ব দেয়, আমার ধারণা তাতে সাধারণ মানুষের অসন্তুষ্টি থাকবে না। সেই সঙ্গে দরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান গ্রহণ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা। সব ধরনের প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে সংসদ নির্বাচন হয়েছে। বিদেশ থেকে সমর্থনও আসছে। এখন তিনটি দেশের পার্লামেন্টে গৃহীত সিদ্ধান্তে দেশে সরকার পরিচালনায় আদৌ কোনো পরিবর্তন আসবে বলে আমার মনে হয় না। Daily JUGANTOR 23.01.14
মোটা দাগে আমরা এ তিন সিদ্ধান্ত যদি বিশ্লেষণ করি, তাহলে এতে অন্তত তিনটি ক্ষেত্রে আমরা অদ্ভুত একটি মিল খুঁজে পাই। এগুলো হচ্ছে- ১. অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন আয়োজন, ২. অবিলম্বে স্থগিত হয়ে যাওয়া সংলাপ প্রক্রিয়া শুরু করা এবং ৩. সহিংসতা বন্ধ করা। লক্ষণীয়, সবাই একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের কথা বললেও বর্তমান দশম সংসদ ভেঙে দেয়ার কথা কেউ বলেনি। তবে যে ভাষা তারা ব্যবহার করেছে, তাতে এটা ধারণা করা স্বাভাবিক যে, দশম সংসদ গঠন প্রক্রিয়ায় তারা খুশি নয়। সব দলের অংশগ্রহণ এতে হয়নি, এমন অভিমতও দিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত বিদেশী কূটনীতিকরা। এ ক্ষেত্রে ব্রিটেনের হাউস অব কমনসে গৃহীত সিদ্ধান্তে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা বলা হয়েছে, যা অন্য কেউ বলেনি। এটা বিশেষ গুরুত্বের দাবি রাখে। ইউরোপীয় পার্লামেন্টে ‘সন্ত্রাসে জড়িত দল নিষিদ্ধ করা উচিত’ বলে যে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে, তাও গুরুত্বপূর্ণ। যদিও এ ক্ষেত্রে কোনো বিশেষ দলকে বোঝানো হয়নি। সাম্প্রতিককালে সহিংস ঘটনাবলীর জন্য জামায়াত ও হেফাজতে ইসলাম অভিযুক্ত। সাধারণ মানুষের মনে একটা প্রশ্ন উঁকি দেবে- ইইউ’র এ সিদ্ধান্ত কি জামায়াতের ক্ষেত্রে প্রয়োগ হবে? সরকার কি সিদ্ধান্তটি নেবে? সরকারের হাতে একাধিক ‘অপশন’ আছে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার। কী করবে সরকার এখন?এসব প্রস্তাব ও সিনেটর মেনডেজের চিঠির মধ্য দিয়ে একটি মেসেজ আমরা পাচ্ছি আর তা হচ্ছে, রাজনৈতিক অচলাবস্থা কাটানোর একটা পথ হল একটি নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যাপারে ‘সংলাপ’ শুরু করা। এদিকে ব্রিটেনের টেলিগ্রাফ পত্রিকায় একটি আশংকার কথা ব্যক্ত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, দুই বড় দলের মাঝে যদি সমঝোতা না হয়, তাহলে আংশিক ব্রিটিশ সহযোগিতা হারাতে পারে বাংলাদেশ।এসব মন্তব্য এখন বিবেচনায় নিতে হবে। সরকার হার্ড লাইনে গেলে ভুল করবে। ১৩ জানুয়ারি বিএনপি ঢাকায় কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। বৈঠক শেষে কূটনীতিকরা মন্তব্য করেছেন, দশম সংসদ নির্বাচনে গণরায়ের প্রতিফলন ঘটেনি। তারা সহিংসতা পরিহার করে সব দলের প্রতি সমঝোতার মাধ্যমে যত দ্রুত সম্ভব সবার অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের তাগিদ দিয়েছেন। এটাই হচ্ছে মোদ্দা কথা। সহিংসতা কোনো সমাধান নয়। জাতির জন্য, সমাজের জন্য সহিংসতা কোনো ভালো ফল বয়ে আনে না। রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে, বিশেষ করে বিরোধী দলের মাঝে এ উপলব্ধিটা আসতে হবে। তবে এটা ভালো খবর, নির্বাচনের পরপরই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। নির্বাচনের পর দেশে তেমন সহিংসতার খবর আসছে না। সরকারও তেমন শক্ত অবস্থানে যায়নি।উপরে উল্লিখিত তিনটি সিদ্ধান্তেই হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার প্রসঙ্গটি এসেছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক যে, নির্বাচনের আগে ও পরে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন আক্রান্ত হয়েছেন বেশি। আমরা প্রায়ই লক্ষ্য করি, নির্বাচনের আগে ও পরে এ সম্প্রদায়ের লোকদের টার্গেট করে আক্রমণ করা হয়। ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হয়। এটা অতীতে বারবার হয়েছে। এবারও হল এবং খুব আশ্চর্যজনকভাবে আমরা এবার লক্ষ্য করলাম, এ সহিংস ঘটনার সঙ্গে কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরকারি দলের লোকজনও জড়িত। এ ধরনের একটি অভিযোগ এনেছেন হিন্দু-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের জনৈক নেতা। বিষয়টা হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত যেই থাকুক, সে রাষ্ট্রের শত্র“, সমাজের শত্র“। আমরা চাইব, সরকার একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে এসব ঘটনায় যারা জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেবে। এ ঘটনায়ও বিদেশে আমাদের ভাবমূর্তি যথেষ্ট নষ্ট হয়েছে।বিদেশের পার্লামেন্টে বাংলাদেশ নিয়ে যখন কোনো সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়, তখন আগামীতে বিএনপি ভূমিকাও একটা প্রশ্নের মুখে থাকবে অনেকের কাছে। আশার কথা, বিএনপি কোনো হরতাল আর অবরোধের কর্মসূচি দেয়নি। এটা একটা প্লাস পয়েন্ট সরকারের সঙ্গে সমঝোতায় যাওয়ার। খালেদা জিয়া উপলব্ধি করেছেন, হরতাল আর অবরোধে সহিংসতা বৃদ্ধি পায়। আর এতে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয় বেশি। সহিংসতায় সাধারণ মানুষের যেমন সমর্থন থাকে না, তেমনি বিদেশী বন্ধু রাষ্ট্রগুলোও তা সমর্থন করে না। বিএনপি ঢাকায় নিযুক্ত বিদেশী কূটনীতিকদের সঙ্গে যে বৈঠক করেছিল, তাতে কূটনীতিকরা সবাই সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছিলেন। এদিকে বিএনপি ২০ জানুয়ারি ঢাকায় একটি গণসমাবেশ করেছে। সরকারের ওপর ‘চাপ’ প্রয়োগ করার জন্য এ ধরনের সমাবেশ বৈধ ও যুক্তিসঙ্গত। সরকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দিয়ে শুভবুদ্ধির পরিচয় দিয়েছে। একই সঙ্গে বিএনপি ২৯ জানুয়ারি কালো পতাকা প্রদর্শনের ডাক দিয়েছে। সবার জানা, ওইদিন দশম সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে। এরই মধ্যে খালেদা জিয়া আবার প্রতিটি বিভাগীয় শহরে গণসমাবেশ করার কথা বলেছেন। এটাও ভালো দিক। এতে করে কর্মীদের ধরে রাখা ও উজ্জীবিত করা সহজ হবে। খালেদা জিয়া সংলাপের কথা বলেছেন। এ অ্যাপ্রোচটাও ভালো। মূলত একটি সমঝোতা ও সংলাপের কথা সবাই বলছেন। দাতাদের কাছ থেকে যেসব প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে, তাতে এ সংলাপের ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়ার কথা বলা হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়ার এ আহ্বান নিঃসন্দেহে এখন একটি সংলাপের ক্ষেত্র তৈরি করতে পারে। পারস্পরিক বিশ্বাস আর আস্থা না থাকলে গণতন্ত্র বিকশিত হবে না। গণতন্ত্র মুখ থুবড়ে পড়বে। এ বক্তব্যের মধ্য দিয়ে আপতত সহিংসতানির্ভর রাজনীতির অবসান ঘটল।দু’সপ্তাহ পরই ভাষা আন্দোলনের মাস। সুতরাং ভাষার মাসে বিএনপি কোনো বড় কর্মসূচি দেবে না, এটাই প্রত্যাশিত। একই সঙ্গে মার্চ হচ্ছে স্বাধীনতার মাস। এ মাসেও বিএনপি হরতাল আর অবরোধের মতো কর্মসূচি দেবে না, এটাও ধারণা করা যায়। কিন্তু তাতে করে রাজনৈতিক অচলাবস্থার কোনো অবসান হবে কি? আমার মনে হয় না। সরকার যদি কোনো বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ না করে, তাহলে সমস্যা যা ছিল, তাই থেকে যাবে। খালেদা জিয়ার সংবাদ সম্মেলনের পর ‘রাজনীতির বলটি’ এখন স্পষ্টতই তিনি ঠেলে দিলেন সরকারের কোর্টে। সরকার যদি নমনীয় না হয়, তাহলে সমস্যা যা ছিল, তা-ই থেকে যাবে। তবে একটি আশার কথা শুনিয়েছেন নতুন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোঃ শাহ্রিয়ার আলম। একেবারেই আনকোরা একজন মানুষ। ঢাকায় নিযুক্ত কূটনীতিকদের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি বলেছেন, আগামী নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় তিনি প্রস্তুত। তিনি দলের শীর্ষ নেতা নন। নীতি নির্ধারণী প্রক্রিয়ায়ও তিনি জড়িত নন। তবু তার অ্যাপ্রোচটি আমার ভালো লেগেছে। রাজনীতিতে এ ‘রিয়েল পলিটিকস’টাই হল আসল কথা। বাস্তবতা মেনে নেয়ার মধ্যেই দেশ ও জাতির মঙ্গল নিহিত। আর বাস্তবতা বলে বিএনপি একটি বড় দল। এ দলকে বাইরে রেখে দেশে স্থিতিশীল রাজনীতি প্রত্যাশা করা যাবে না। এতে করে নানা জটিলতা তৈরি হবে। তবে সরকারপ্রধান একটি শর্ত জুড়ে দিয়েছেন। শর্তটি হচ্ছে বিএনপিকে জামায়াতের সঙ্গ ছাড়তে হবে। বিএনপির জন্য কাজটি কঠিন, সন্দেহ নেই। তবে সরকারের জন্য একটি সুযোগ তো আছে। সংবিধানের ৩৮(গ) ও (ঘ), রিপ্রেজেনটেশন অব পিপলস্ অর্ডিন্যান্স ১৯৭২, দ্য পলিটিক্যাল পার্টিস অর্ডিন্যান্স ১৯৭৮-এর ধারা-উপধারা বলে সরকার জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে পারে। এছাড়া আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের একটি পর্যবেক্ষণ কিংবা উচ্চ আদালতে একটি রিট মামলার ফয়সালা করে সরকার জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে পারে। নির্বাচন কমিশন এরই মধ্যে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করেছে। আগামী নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী নামে কোনো দল নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার বিষয়টি আইনগত ও সাংবিধানিকভাবেই যাওয়া উচিত। এটাকে সংলাপের পূর্বশত করা উচিত নয়। তবে এটা তো ঠিক, বিএনপির নেতৃস্থানীয়দের মাঝে এ উপলব্ধি এসেছে যে, বিএনপির জামায়াতকে পরিত্যাগ করা উচিত।তবে আমার ভাবনা অন্য জায়গায়। যদি সংলাপ হয়ও, তাতে কি কোনো ফল পাওয়া যাবে? সংলাপে মূল আলোচ্য বিষয় কী? একটি মধ্যবর্তী নির্বাচন? তাতে সরকার হয়তো রাজি হবে। কিন্তু নির্বাচনটা হবে কোন সরকারের অধীনে? অন্তবর্তীকালীন সরকার? সংবিধানে তো সেভাবেই লেখা আছে। সে ক্ষেত্রে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বেই তো নির্বাচন হওয়ার কথা। বিএনপি তা কি মানবে? যদি এটা বিএনপিকে মানতেই হয় তাহলে প্রশ্ন উঠবে, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিল না কেন? আমি নিশ্চিত করেই বলতে পারি, সংবিধানে বর্ণিত অন্তবর্তীকালীন সরকারের ফর্মুলা বাদ দিয়ে (যেখানে শেখ হাসিনাই থেকে যাবেন সরকারপ্রধান হিসেবে) অন্য কোনো ফর্মুলায় বিএনপি রাজি হবে। ফলে সংলাপ হলেও তা কোনো ফল দেবে না- আমার আশংকা এখানেই। তাহলে কী হতে পারে ভবিষ্যতে? নতুন এক রাজনৈতিক সংস্কৃতির জন্ম হতে যাচ্ছে বাংলাদেশে, যেখানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একটি সত্যিকার অর্থেই ‘ঐকমত্যের সরকার’ প্রতিষ্ঠিত হবে। ১৮ দলীয় জোট থেকে কেউ যদি মন্ত্রিসভায় যোগ দেয়, আমি অবাক হব না। গুজব আছে ১৮ দলের দুই দলীয় প্রধানকে নিয়ে। বিএনপির ভেঙে যাওয়া এবং সরকারে যোগ দেয়ার সম্ভাবনাকেও আমি উড়িয়ে দেই না। বিএনপির প্রতি সাধারণ মানুষের সমর্থন আছে। সরকার উপজেলা নির্বাচন দিতে যাচ্ছে। আমার ধারণা, বিএনপির সমর্থকরা এতে অংশ নেবেন এবং ওই নির্বাচনের ফলাফল বিএনপিকে একসময় বাধ্য করতে পারে প্রধানমন্ত্রীকে রেখেই একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে। একটা বড় ধরনের অবরোধ আর হরতালের কর্মসূচির পর বিএনপির পক্ষে কঠিন হবে আন্দোলন সংগঠিত করা। বিএনপির নীতিনির্ধারকদের এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে কীভাবে এবং কোন প্রতিক্রিয়ায় জনগণকে আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা যায়।বাংলাদেশে এখন একধরনের কর্তৃত্ববাদী শাসন প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। রাশিয়ার গণতন্ত্র কিংবা মালয়েশিয়ার ঐকমত্যের রাজনীতি এ ক্ষেত্রে একটি মডেল হতে পারে। সরকার যদি এখন সিঙ্গাপুরের গণতান্ত্রিক মডেল ও অর্থনৈতিক উন্নয়নকে গুরুত্ব দেয়, আমার ধারণা তাতে সাধারণ মানুষের অসন্তুষ্টি থাকবে না। সেই সঙ্গে দরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান গ্রহণ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা। সব ধরনের প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে সংসদ নির্বাচন হয়েছে। বিদেশ থেকে সমর্থনও আসছে। এখন তিনটি দেশের পার্লামেন্টে গৃহীত সিদ্ধান্তে দেশে সরকার পরিচালনায় আদৌ কোনো পরিবর্তন আসবে বলে আমার মনে হয় না। Daily JUGANTOR 23.01.14
0 comments:
Post a Comment