রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

চীনের ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড ’ কর্মসূচি ও বাংলাদেশ

 
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং আজ ঢাকা আসছেন। বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কের ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে তার ঢাকা আগমন। তবে বাংলাদেশে তিনি এসেছিলেন ২০১০ সালে, যখন তিনি দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে এটাই তার প্রথম বাংলাদেশ সফর। বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে চীনা প্রেসিডেন্টের এ সফরের গুরুত্ব অনেক। শুধু বাণিজ্যিক সম্পর্ক বৃদ্ধি কিংবা বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থায়নের ব্যাপারে একটি ‘মহাপরিকল্পনা’ নিয়েই তিনি যে বাংলাদেশে আসছেন, এটা ভাবা ঠিক নয়। বরং বাংলাদেশের ব্যাপারে চীনের আগ্রহের অন্যতম একটা কারণ হচ্ছে চীনের ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ মহাপরিকল্পনার প্রতি বাংলাদেশের সমর্থন লাভ করা। চীনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ‘ব্রেন চাইল্ড’ এই ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড মহাপরিকল্পনা। এ মহাপরিকল্পনার আওতায় রয়েছে ৬০টি দেশের সঙ্গে চীনের মূল ভূখণ্ডকে সংযুক্ত করা। মহাপরিকল্পনাটির মূলত দুটো অংশ। এক. সড়কপথে মধ্য এশিয়া ও ইউরোপের সঙ্গে সংযুক্ত হবে চীন। চীন সড়ক পথের সঙ্গে রেলপথ ও তেলের পাইপলাইনও সংযুক্ত করছে। একই সঙ্গে সমুদ্রপথেও, বিশেষ করে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে সংযুক্ত হবে চীন। প্রাচীন সিল্ক রুটের আধুনিক সংস্করণ এটি। সরকারিভাবে ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোডের যে মানচিত্র প্রকাশ করা হয়েছে তাতে দেখা যায় চীনের সিয়ান থেকে উরুমকি, তুরস্কের ইস্তান্বুল এবং ইউরোপের স্পেনের মাদ্রিদ পর্যন্ত সড়কপথ তৈরি হবে, যা কিনা মধ্য এশিয়ার কিরঘিজস্তান, কাজাখস্তান হয়ে মস্কো, পোল্যান্ড, জার্মানির হামবুর্গ, হল্যান্ডের রটারডাম হয়ে মাদ্রিদে গিয়ে শেষ হবে। দুই. একই সঙ্গে চীন একটি মেরিটাইম তথা সামুদ্রিক সিল্ক রোডের মহাপরিকল্পনাও প্রণয়ন করছে। এই সামুদ্রিক সিল্ক রোডের মাধ্যমে একদিকে আফ্রিকার জিবুতি, মোমবাসা (কেনিয়া) বন্দরের সঙ্গে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার শ্রীলংকা, সিঙ্গাপুর ও মিয়ানমারকেও চীনের একটি অংশের সঙ্গে সংযুক্ত করতে চায় চীন।
কথা হচ্ছে, মধ্য এশিয়া, রাশিয়াসহ ‘মেরিটাইম সিল্ক রুট’ভুক্ত অনেক দেশ এই মহাপরিকল্পনায় সংযুক্ত হলেও ভারত ও বাংলাদেশের অবস্থান এ ব্যাপারে স্পষ্ট নয়। এ নিয়ে বাংলাদেশ সরকার কোনো সিদ্ধান্ত নিয়েছে কিনা তাও জানা যায়নি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টি নিয়ে আদৌ চিন্তাভাবনা করছে কিনা জানি না। তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজিক্যাল স্টাডিজে’ (বিস) দু’-একবার সেমিনার হয়েছে। বিস কর্মকর্তারা চীন সফরও করেছেন। কিন্তু খুব সিরিয়াস ধরনের কোনো গবেষণা সেখানে হয়নি। আমার কাছে কখনও মনে হয়নি বাংলাদেশ ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড, বিশেষ করে মেরিটাইম সিল্ক রুটের ব্যাপারে খুব আগ্রহী। তবে বাংলাদেশ বিসিআইএম (বাংলদেশ-চীন-ভারত-মিয়ানমার) উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার আলোকে চীনের ইউনান প্রদেশের কুনমিং থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত সড়কপথ নির্মাণের যে প্রস্তাব রয়েছে, তাতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল।

বস্তুত ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড এবং মেরিটাইম সিল্ক রোডের আওতায় চীন দুটো ‘ইকোনমিক করিডোর’ সৃষ্টি করছে। একটি কুনমিং থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত সড়ক ও রেলপথ। দ্বিতীয়টি, চীনের জিনজিয়াং প্রদেশের খাসগর থেকে পাকিস্তানের বেলুচিস্তানের সমুদ্রবন্দর গাওদার পর্যন্ত রেল ও সড়ক পথ। এই অর্থনৈতিক করিডোরের ব্যাপারে ভারতের আপত্তি রয়েছে। কারণ এ সড়কপথটি বিতর্কিত ‘আজাদ কাশ্মীর’ ও ইসলামাবাদ হয়ে বেলুচিস্তান প্রদেশের ভেতর দিয়ে গাওদার সমুদ্রবন্দরে গিয়ে মিশেছে। এই অর্থনৈতিক করিডোরের ব্যাপারে বেলুচ নেতাদের আপত্তি রয়েছে। বেলুচ নেতা ব্রাহামদাগ বুগতি চীনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করবেন বলে হুমকি দিয়েছেন। পাকিস্তানের অভিযোগ, ভারত ওই অর্থনৈতিক করিডোরের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করছে।

ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড মহাপরিকল্পনার ব্যাপারে চীনের বড় আগ্রহ রয়েছে, এটা অস্বীকার করা যাবে না। তবে এই মহাপরিকল্পনার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোও উপকৃত হতে পারে। ইতিমধ্যে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং মধ্য এশিয়া, রাশিয়া ও পাকিস্তান সফর করেছেন তার মহাপরিকল্পনার ব্যাপারে জনমত সৃষ্টি করতে। ঢাকা সফরের পর তিনি ভারতে যাবেন ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে। ব্রিকস সম্মেলনের পাশাপাশি ব্রিকস-বিম্সটেক শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই শীর্ষ বৈঠকে যোগ দেবেন। ধারণা করছি, ব্রিকস-বিম্সটেক যৌথ শীর্ষ বৈঠকে চীনা প্রেসিডেন্ট তার ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড কর্মসূচির সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে বিম্সটেক দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানাবেন।

বাংলাদেশ ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড মহাপরিকল্পনায় সংযুক্ত হলে অর্থনৈতিকভাবে কতটুকু লাভবান হবে- এ বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করা প্রয়োজন। তবে ভারত মহাপরিকল্পনাটি খুব সহজভাবে নিয়েছে বলে আমার মনে হয় না। কারণ ভারত মহাসাগরে চীন-ভারত দ্বন্দ্ব ধীরে ধীরে স্পষ্ট হচ্ছে। ভারত-চীন দ্বন্দ্বের বিষয়টি তখনই স্পষ্ট হয়ে ওঠে, যখন দেখা যায় ভারত মহাসাগরীয় বিভিন্ন রাষ্ট্রে এই দুটো দেশ নৌ-ঘাঁটি নির্মাণ করছে। জিবুতি, গাওদার, হামবানতোতা (শ্রীলংকা), মিয়ানমার, ইয়েমেন, মোজাম্বিক, মাদাগাস্কার, ওমান কিংবা কেনিয়ায় চীনের নৌ-ঘাঁটি নির্মাণের আগ্রহের খবর সংবাদপত্রে ছাপা হয়েছে। জিবুতি ও মাদাগাস্কারে নৌ-ঘাঁটি নির্মাণ শেষ হয়েছে। একইভাবে ভারত সিসিলি ও মৌরিতুসে নৌ-ঘাঁটি নির্মাণ করছে। ২০১৫ সালের মার্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির এই দ্বীপরাষ্ট্র দুটো সফরের সময় এই নৌ-ঘাঁটি নির্মাণের কথা প্রথমবারের মতো জানা যায়। ভারত এরই মাঝে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি সামরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। ফলে এ অঞ্চলে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র অক্ষ গড়ে উঠছে, যা চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবকে চ্যালেঞ্জ করবে আগামীতে। কাজেই চীনের মেরিটাইম সিল্ক রুট নিয়ে প্রশ্ন থেকেই গেল।

তবে বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থকে অস্বীকার করা যাবে না। চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোরে তেলের পাইপলাইন সংযুক্ত হবে। চীনে পারস্য মহাসাগর অঞ্চলের জ্বালানি তেল এ পথে খুব অল্প সময়ে এবং মধ্য এশিয়ার তেল চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। এই জ্বালানি তেলের ওপর চীন নির্ভরশীল। চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পরিপ্রেক্ষিতে মধ্য এশিয়ার জ্বালানি তেলের ওপর তাদের নির্ভরতা বাড়ছে। একই সঙ্গে চীন এই অর্থনৈতিক করিডোরের সঙ্গে তার ইউনান প্রদেশকেও সংযুক্ত করতে চায়। এটা করতে হলে কুনমিং-কক্সবাজার-কলকাতা সড়কপথ (যা কে-টু-কে নামে পরিচিত) নির্মাণ করতে হবে। ২০১৩ সালে চারটি দেশ এই সড়কপথ নির্মাণের ব্যাপারে নীতিগতভাবে রাজি হয়েছিল। এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন ২০১৪ সালে চীন সফরে যান, তখন তিনি কুনমিংয়ে এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, বাংলাদেশ কুনমিং-কক্সবাজার সড়কপথ নির্মাণের ব্যাপারে আগ্রহী। সম্প্রতি জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামও বলেছেন, চীনের সঙ্গে সড়ক ও রেল যোগাযোগ স্থাপনের ব্যাপারে বাংলাদেশের আগ্রহ রয়েছে। কিন্তু তারপরও কথা থেকে যায়- আদৌ এই সড়ক পথটি নির্মিত হবে কিনা। নির্মিত হলে বাংলাদেশ সড়কপথে চীনা পণ্য আমদানি করতে পারবে। এতে সময় বাঁচবে ও পণ্যের মূল্য কমে যাবে। দ্বিতীয়ত, চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোরের সঙ্গে বাংলাদেশ সংযুক্ত হতে পারে। এতে করে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ এই অর্থনৈতিক করিডোর ব্যবহার করে মধ্য এশিয়া থেকে জ্বালানি (তেল ও গ্যাস) আমদানি করতে পারবে।

সুতরাং ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড কর্মসূচি চীনের স্বার্থে প্রণীত ও বাস্তবায়িত হলেও বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষার বিষয়টিকেও একেবারে ফেলে দেয়া যাবে না। তবে এক্ষেত্রে ভারতের আপত্তির কারণে বাংলাদেশ তার স্বার্থ পূর্ণভাবে রক্ষা করতে পারবে না। চীন কক্সবাজারের অদূরে সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করতে চেয়েছিল। এতে করে আমরা লাভবান হতে পারতাম। কিন্তু ভারত কর্তৃক নিরাপত্তার প্রশ্ন তোলা (শ্রীলংকার হামবানতোতায় নির্মিত গভীর সমুদ্রবন্দরের ব্যাপারেও চীন নিরাপত্তার প্রশ্নটি তুলেছিল), চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোরের ব্যাপারে ভারতের আপত্তি এবং সর্বশেষ চীন-ভারত সীমান্ত উত্তেজনা- সব মিলিয়ে চীনের মেরিটাইম সিল্ক রুটের ব্যাপারে একটা প্রশ্ন রয়ে গেল।

পাঠকদের জানিয়ে রাখি, চীনের মেরিটাইম সিল্ক রুটের ধারণা অনেক পুরনো। প্রাচীন চীনের মিং সাম্রাজ্যের প্রতিনিধি হিসেবে জেং হি (১৩৭১-১৪৩৩), যিনি মা হি নামেও পরিচিত ছিলেন, তিনি বিশাল এক নৌবহর নিয়ে প্রায় ছয়শ’ বছর আগে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ঘুরে বেড়াতেন। এভাবেই তিনি এ অঞ্চলের সঙ্গে চীনের একটি সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন। আজ চীন মূলত সেই ধারাবাহিকতা রক্ষা করেই তার মেরিটাইম সিল্ক রুটের ধারণা নতুনভাবে উপস্থাপন করেছে। জানা যায়, ওই সময় মা হি বাংলার রাজধানী সোনারগাঁয়ে এসেছিলেন। চীন ইতিমধ্যে ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড মহাপরিকল্পনার আওতাধীন ৬০টি দেশের সঙ্গে শুল্কমুক্ত বাণিজ্যিক চুক্তি করার উদ্যোগ নিয়েছে। এখন অব্দি ১২টি দেশের সঙ্গে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে (যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সিঙ্গাপুর, পাকিস্তান, চিলি, পেরু, কোস্টারিকা, আইসল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, হংকং ও তাইওয়ান)। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, শ্রীলংকা, নরওয়েসহ গাল্ফ কো-অপারেশন কাউন্সিলের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গেও শুল্কমুক্ত চুক্তি স্বাক্ষরের ব্যাপারে আলোচনা চলছে। বাংলাদেশ ও ভারত এ তালিকায় নেই। শুল্কমুক্ত বাণিজ্যিক চুক্তি আমাদের জন্যও এক বিশাল সম্ভাবনা সৃষ্টি করতে পারে। বলার অপেক্ষা রাখে না, চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কের অন্যতম ভিত্তি হচ্ছে মূলত অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক। এর বাইরে ২০১২ সালে বাংলাদেশ ও চীন একটি সামরিক সহযোগিতামূলক চুক্তিও স্বাক্ষর করেছিল। বাংলাদেশ চীনে যা রফতানি করে, আমদানি করে তার চেয়ে বেশি। শুধু ২০১২-১৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৫,৮৬৫ দশমিক ৮৮ মিলিয়ন ডলার। এই ঘাটতির পরিমাণ দিন দিন বাড়ছেই। ধারণা করা হচ্ছে, চীনা প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফরের সময় ২৫টি প্রজেক্টে ৪০ বিলিয়ন ডলারের সাহায্যের কথা ঘোষণা করা হবে।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিতে চীনের সঙ্গে সম্পর্ককে গুরুত্ব দেয়া হয়। বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারতকে তুলনামূলকভাবে বেশি গুরুত্ব দিলেও নিকট প্রতিবেশী দেশ হওয়ায় চীনের সঙ্গেও সম্পর্ক রেখে একটি ভারসাম্যমূলক পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করে আসছে। তবে চীন বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে গুরুত্ব দেয় বেশি। চীনের পররাষ্ট্রনীতিতে ‘অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের’ কোনো নজির নেই। চীনের বর্তমান পররাষ্ট্রনীতির ধারাকে কোনো কোনো চীনা পর্যবেক্ষক ‘চীনা মার্শাল পরিকল্পনা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী ইউরোপকে পুনর্গঠনে যুক্তরাষ্ট্র একটি মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করেছিল, যা ‘মার্শাল প্ল্যান’ নামে অভিহিত হয়েছিল। অনেকটা সেই পরিকল্পনার ধাঁচেই চীন এখন পুনর্গঠন ও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে, যাকে অভিহিত করা হচ্ছে ‘চায়না মার্শাল প্ল্যান’ হিসেবে। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এই পরিকল্পনার তিনটি অংশের কথা উল্লেখ করেছেন : ১. অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা, ২. অন্য কোনো দেশকে ‘প্রভাব বলয়ের’ আওতায় না নেয়া, ৩. অন্য দেশে আধিপত্য ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা না করা। সাম্প্রতিক সময়ে চীন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যে সম্পর্ক রক্ষা করছে, তাতে এই নীতি প্রতিফলিত হচ্ছে। তাই চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই ‘আধিপত্য’ বা ‘কর্তৃত্ব’ করার প্রশ্নটি কখনও বড় হয়ে দেখা দেয়নি। আজ চীনের প্রেসিডেন্ট ঢাকা আসছেন। আমরা তাকে স্বাগত জানাই।

নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র
Daily Jugantor
14.10.2016

0 comments:

Post a Comment