রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

সার্ক কি ভেঙে যাবে!



অনেকদিন থেকেই একটা কথা বিভিন্ন মহলে আলোচিত হয়ে আসছে যে, সার্ক কি তার অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলছে? নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের পর যখন বিবিআইএন (বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত-নেপাল) নামে একটি উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থার আত্মপ্রকাশ ঘটে তখনই প্রস্তাবটি উঠেছিল যে, একটি আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থার ভেতরে উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা কীভাবে কাজ করবে? কিংবা উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা যদি শক্তিশালী হয়, তাহলে আঞ্চলিক সংস্থা সার্ক দুর্বল হয়ে যাবে কি না? সার্ক ধীরে ধীরে বিলুপ্তির দিকে যাচ্ছে এমন কথাও বলেছিলেন তখন কেউ কেউ। সার্ক-এর বয়স একেবারে কম নয়। ৩১ বছর। এই দীর্ঘ সময়ে সার্ক আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে যতটুকু অবদান রাখার কথা ছিল, তা রাখতে পারেনি। দেশগুলোর মধ্যে অধিকারের মাত্রা ছিল বেশি, যা এখনও আছে। বিশেষ করে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের ক্ষেত্রেও কথাটা প্রয়োজন বেশি। অতি সম্প্রতি উরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারত-পাকিস্তান সামরিক উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে ভারত সার্ক সম্মেলনে (নভেম্বর ২০১৬) যোগ দেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশ তার 'অভ্যন্তরীণ ঘটনায় পাকিস্তানের হস্তক্ষেপের' পরিপ্রেক্ষিতে সার্ক সম্মেলনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শ্রীলংকা, ভুটান ও আফগানিস্তানও যাচ্ছে না। ইতোমধ্যে সার্ক সম্মেলন (১৯৩৪) স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। পাকিস্তানের সঙ্গে ভারত এবং বাংলাদেশের সম্পর্ক বর্তমানে এমন পর্যায়ে গিয়ে উন্নীত হয়েছে যে, আগামীতেও এ সম্মেলন আয়োজন করা যাবে কি না, তাতে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। কেননা ভারত কর্তৃক 'সার্জিকাল স্ট্রাইক' দু'দেশের মাঝে যুদ্ধের সম্ভাবনার জন্ম দিয়েছে।
অনেক পর্যবেক্ষকই এখন মনে করেন সার্ক তার গুরুত্ব হারাচ্ছে। কেননা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জনগণের মনোনয়নের ক্ষেত্রে সার্ক ৩১ বছর আগে গঠিত হলেও, সার্ক এর উন্নয়ন তেমন একটা চোখে পড়ে না। এ অঞ্চলের মানুষের মাঝে দরিদ্রতার হার বেড়েছে বৈ কমেনি। কিন্তু ব্যাংকের রিপোর্ট অনুযায়ী পৃথিবীর সবচেয়ে দারিদ্র্যতম অঞ্চলগুলোর মাঝে একটি হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়া। বিপুলসংখ্যক মানুষের বসবাস এখানে। কিন্তু দরিদ্রতা এখানে কমেনি। পরিসংখ্যান বলছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মাঝে আফগানিস্তানে দরিদ্রতার হার সবচেয়ে বেশি, শতকরা ৩৬ ভাগ। বাংলাদেশে এটা ৩২ ভাগ, নেপালে ২৫ ভাগ, পাকিস্তানে ২২ ভাগ, ভুটানে ১২ ভাগ, শ্রীলংকায় ৯ ভাগ, আর ভারতে ৩০ ভাগ। ভারতে হাজার হাজার কোটিপতির জন্ম হয়েছে। কিন্তু জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি মানুষের নিজস্ব কোনো পায়খানা নেই। তারা প্রকাশ্যে মলমূত্র ত্যাগ করেন। জাতিসংঘ প্রণীত মিলিনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোলস বা এসডিজি অর্জনে পূর্ণ সক্ষম হয়নি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো। তবে এসডিজি অর্জনে বাংলাদেশের অবস্থান ভারতের চাইতে ভালো। বিশেষ করে নারী শিক্ষায় বাংলাদেশের অগ্রগতি ভারতের চাইতে অনেক এগিয়ে। পিছেয়ে আছে আফগানিস্তান। এক্ষেত্রে সার্ক .... কোনো বড় ভূমিকা নিতে পারেনি।
মূলত দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে এক ধরনের পার্থক্য লক্ষ রাখার মতো। পাকিস্তান ও আফগানিস্তান চরিত্রগত দিক দিয়ে বেশি মাত্রায় মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত। খাদ্যাভ্যাস কিংবা জীবনযাত্রার দিক দিয়ে এই দুটো দেশের সঙ্গে অবশ্য দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর পার্থক্য রয়েছে। উপরন্তু রয়েছে এক ধরনের অবিশ্বাস পাকিস্তান ও ভারতের বৈরিতা ঐতিহাসিক। এই বৈরিতা দীর্ঘ প্রায় ৭০ বছরেও কমেনি। একইসঙ্গে ভারতের একটি 'বড়ভাই' সুলভে আচরণে আতঙ্কিত থাকে পার্শ্ববর্তী ছোট ছোট দেশগুলো। শ্রীলংকা ও নেপালের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের অভিযোগ রয়েছে ভারতের বিরুদ্ধে। ভারতের ভূমিকা নিয়ে এসব দেশে এক মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়াতে ভারত বড় অর্থনীতির দেশ। এশিয়ার দ্বিতীয় অর্থনীতি এখন ভারতের। কিন্তু ভারতের এই অর্থনীতি দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়নে তেমন একটা কাজে লাগেনি। ভারত সাধারণত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও উন্নয়নকে বেশি গুরুত্ব দেয়। ফলে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক গড়ে উঠেছে এই দ্বিপাক্ষিকতার আলোকে। এখানে বহুপাক্ষিকতা গুরুত্ব পায়নি। অথচ দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়নে এই বহুপাক্ষিকতা কেন গুরুত্ব পায়নি। দক্ষিণ এশিয়ার একটি অন্যতম সমস্যা জ্বালানি। অর্থাৎ বিদ্যুৎ। এ অঞ্চলে প্রচুর জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা থাকলেও ভারত এটাকে ব্যবহার করছে তার নিজের স্বার্থে। ভারত ভুটানের সঙ্গে ও নেপালের সঙ্গে আলাদা আলাদা চুক্তি করে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। এই প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশকে সংযুক্ত করা হয়নি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ভারত থেকে বিদ্যুৎ পাচ্ছে বটে, কিন্তু তা ত্রি-দেশীয় উদ্যোগে উৎপাদিত কোনো বিদ্যুৎ নয়। তাছাড়া এই বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়েও নানা কথা আছে। আঞ্চলিক সহযোগিতার আলোকে ভুটান-বাংলাদেশ-নেপাল ও ভারতের সমন্বয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা গেলে, তা থেকে উপকৃত হতো এ অঞ্চলের জনগণ। কিন্তু তা হয়নি। আঞ্চলিক বাণিজ্য নিয়েও কথা আছে। এ অঞ্চলের প্রতিটি দেশের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। ভারত রপ্তানি করে বেশি, আমদানি করে কম। উপরন্তু দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে ইউরোপ ও যুক্তরষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বেশি। আন্তঃআঞ্চলিক বাণিজ্য সীমিত। এখানেও সমস্যা ভারতকে নিয়ে। টেরিফ এবং প্যারাটেরিফের কারণে পণ্যের দাম বেশি হয়ে যায়, যাতে ভারতের আমদানিকারকদের আর আগ্রহ থাকে না। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ভারত বাণিজ্যিক সম্পর্কের কথা আলোচনা করা যেতে পারে। এই সম্পর্ক ভারতের অনুকূলে। ভারত অনেক সময় সেবা কিছু পণ্যের শুল্ক সুবিধা দেয়ার কথা বলে বটে কিন্তু বাংলাদেশে ওইসব পণ্য আদৌ উৎপাদিত হয় না।
ভারত ইতোমধ্যে সার্ক-এর ভেতরে সদ্য গঠিত উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। মোদির ঢাকা সফরের সময় ঘোষিত হয়েছিল ওই উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা যা বিবিআইএন (বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপাল) নামে পরিচিত। এই উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা পূর্ণ বাস্তবায়িত হলে সঙ্গত কারণেই সার্ক দুর্বল হয়ে যেতে পারে। শুধু তাই নয়_ ভারত বিবিআইএনের পাশাপাশি বিমসটেক ও ভারত মহাসাগরভুক্ত দেশগুলোর সমন্বয়ে অপর দুটি জোটের ব্যাপারেও আগ্রহ দেখিয়েছে বেশি। দুটো জোটেই পাকিস্তান নেই। এতে করে একটা ধারণা করা স্বাভাবিক যে, ভারত চূড়ান্ত বিচারে সার্ক-এর ব্যাপারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারে। শুধু তাই নয়_ চীন যে বিসিআইএম (বাংলাদেশ-চীন-ভারত ও মিয়ানমার) জোটের ব্যাপারে উদ্যোগ নিয়েছিল (যা একসময় পরিচিত ছিল কুনসিং উদ্যোগ নামে) তাতেও সস্নথগতি আসতে পারে। বিসিআইএম জোট, যা চীনের ইউনান প্রদেশকে এ অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত করবে এবং বাংলাদেশি পণ্যের জন্য দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বাজার উন্মুক্ত করবে, এই মুহূর্তে ভারতের অগ্রাধিকার তালিকায় নেই। ভারতের এই মুহূর্তের স্ট্রাটেজি হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন নিয়ে এ অঞ্চলে চীনের প্রভাবকে সংকুচিত করা। ফলে চীনের বন্ধু হিসেবে পাকিস্তানকে ভারত 'কূটনৈতিক জালে' আটকে ফেলে পাকিস্তানের ভূমিকাকে সংকুচিত করতে চাইছে। তাই আগামীতে ২০১৭ সালে নির্দিষ্ট সময়ে আদৌ সার্ক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে এ ব্যাপারে আমি অন্তত নিশ্চিত নই। যেহেতু কাশ্মির নিয়ে উত্তেজনা এখনো রয়েছে এবং একটি 'সীমিত যুদ্ধ' এর সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না, সেহেতু এটা ধারণা করা স্বাভাবিক যে, ১৯৩৪ সার্ক শীর্ষ সম্মেলন শেষ পর্যন্ত অন্য কোনো দেশেও অনুষ্ঠিত হবে না। দক্ষিণ এশিয়া পৃথিবীর দারিদ্র্যতম অঞ্চলগুলোর একটি। এখন যদি দক্ষিণ এশিয়ার দুটি বড় দেশ ভারত ও পাকিস্তান কাশ্মিরের উত্তেজনাকে কেন্দ্র করে নিজেদের মাঝে আন্তঃপ্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়, তাহলে তা এ অঞ্চলের উন্নয়ন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হবে। ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আশঙ্কাজনক হলেও ভারতের অর্ধেক জনগোষ্ঠীর সেখানে কোনো টয়লেট সুবিধা নেই। ভারতে মেয়ে খুন হত্যার কাহিনী সারাবিশ্বে আজ আলোচিত। কৃষকদের আত্মহত্যার কাহিনী মানুষ জানে। একাধিক গবেষণা প্রবন্ধেও তা প্রকাশিতও হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে ভারত এশিয়ার দ্বিতীয় অথবা তৃতীয় অর্থনেতিক শক্তিতে পরিণত হলেও সাধারণ মানুষের নূ্যনতম যে চাহিদা, তা পূরণ করতে পারছে না। এখন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ভারত যদি সামরিক খাতে ব্যয় বরাদ্দ বাড়ায়, তাহলে তা ভারতের উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। একই কথা প্রযোজ্য পাকিস্তানের ক্ষেত্রেও। জঙ্গিবাদ আজ পাকিস্তানকে ভেঙে ফেলার একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। জঙ্গিবাদের কারণে পাকিস্তানের 'জিডিপি গ্রোথ' এখন সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। দরিদ্রতা, সমাজে অসমতা, ধর্মীয় উন্মত্ততা পাকিস্তানের ভাবমূর্তি বিদেশে নষ্ট করছে। মার্কিন কংগ্রেস পাকিস্তানকে 'সন্ত্রাসী রাষ্ট্র' হিসেবে ঘোষণা করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এমনি এক পরিস্থিতিতে পাকিস্তান আবারও অস্ত্রসজ্জার উদ্যোগ নিচ্ছে। ফলে উপমহাদেশের পরিস্থিতি দিনে দিনে জটিল হচ্ছে। এতে করে সার্ক-এর উন্নয়ন যে বাধাগ্রস্ত হবে, এটাই স্বাভাবিক। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় আসিয়ান আঞ্চলিক সহযোগিতার অন্যতম একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। কিন্তু সার্ক তেমনটি পারল না। শুধুমাত্র নিজেদের মধ্যে আস্থার অভাব অন্যদেশের অভ্যন্তরীণ ঘটনায় হস্তক্ষেপ কর্তৃত্ব করার মানসিকতা ও ভারতের 'বড়ভাই' সুলভ আচরণ ইত্যাদি নানা কারণে সার্ক একটি গ্রহণযোগ্য আঞ্চলিক সহেযাগিতা সংস্থা হিসেবে দাঁড়াতে পারছে না। পাকিস্তান ভারত কর্তৃক কাশ্মিরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি তথ্য-প্রমাণসহ জাতিসংঘের ৭১তম অধিবেশনে (সেপ্টেম্বর ২০১৬) উপস্থাপন করেছে। ১৯৬০ সালে স্বাক্ষরিত সিন্ধু পানি বণ্টন চুক্তি ভারত বাতিল করার কথা বলছে। অথচ এই পানির ওপর পাকিস্তান আনেকটাই নির্ভরশীল। পাকিস্তান এখন বলছে প্রয়োজনে তারা ভারতে নির্মিত বাঁধ বোমা মেরে উড়িয়ে দিতেও দ্বিধা করবে না। দুটি দেশই পারমাণবিক শক্তির অধিকারী। ভারতে পারমাণবিক কার্যক্রমের নিয়ন্ত্রণ সিভিলিয়ান প্রশাসনের হাতে থাকলেও পাকিস্তানে এই পারমাণবিক কার্যক্রমে নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করে সেনাবাহিনী। ফলে একটা আতঙ্ক থাকলই।
দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক সহযোগিতা বিকাশে অন্যতম সমস্যা হচ্ছে দেশগুলোর মধ্যে আস্থা ও বিশ্বাসের অভাব। দীর্ঘ ৩১ বছরেও এই আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপিত হয়নি। এটা সার্কের বিকাশে অন্যতম সমস্যা। দ্বিতীয়ত, জঙ্গিবাদের উত্থান এবং অন্যদেশের অভ্যন্তরীণ ঘটনায় এই জঙ্গিবাদকে ব্যবহার। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ অত্যন্ত শক্তিশালী। পাকিস্তানের মদদপুষ্ট জঙ্গিরা (বিশেষ করে জই-ই মোহাম্মদ) যে প্রায়ই ভারতের অভ্যন্তরে সন্ত্রাসী হামলা চালায় তা প্রমাণিত। অভিযোগ আছে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এসব জঙ্গিকে প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র দিয়ে থাকে। এত অভিযোগের পরও পাকিস্তান এটা বন্ধ করতে পারেনি। তৃতীয়ত, সার্কভুক্ত দেশগুলো নিজেদের মধ্যে আন্তঃরাষ্ট্রীয় বাণিজ্য বাড়াতে পারেনি। দেখা গেছে এখনো সার্কভুক্ত দেশগুলোর বাণিজ্যিক সম্পর্ক পশ্চিমা দেশ, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে। ফলে সার্কভুক্ত দেশগুলোর মাঝে বাণিজ্যিক নির্ভরতা গড়ে ওঠেনি। চতুর্থত, ভারতের সঙ্গে প্রতিটি সার্কভুক্ত দেশের বিশাল বাণিজ্যিক ঘাটতি রয়েছে। ভারত এই ঘাটতি ব্যবহার করছে তার স্বার্থে। ভারত ঘাটতি কমাতে 'শুল্কমুক্ত' পণ্যের প্রবেশাধিকারের কথা বললেও, কার্যক্ষেত্রে দেখা গেছে ওইসব পণ্য সার্কের কোনো কোনো দেশ (যেমন বাংলাদেশ) উৎপাদন করে না। ট্যারিফ ও প্যারা ট্যারিফ কমানোর উদ্যোগ ভারত কখনো নেয়নি। পঞ্চমত, ভারত এ অঞ্চলে শুধু বড় অর্থনৈতিক শক্তিই নয়, বরং সামরিক শক্তিও বটে। অনেক ক্ষেত্রেই ভারতের আচরণ বন্ধুসুলভ নয়। নেপাল ও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এ কথাটা অনেক ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য (ট্রানজিটের নামে শুল্কমুক্ত ট্রানজিট সুবিধা নেয়া। ফেনী নদী থেকে এককভাবে পানি প্রত্যাহার ইত্যাদি।) এসব কারণের জন্যই সার্কের বিকাশ হচ্ছে না।
সার্ক এখন মুখ থুবড়ে পড়েছে। ভারত এখন উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতাকেই গুরুত্ব দেবে। বিবিআইএন-র মতো ভারত এখন শ্রীলংকা ও মালদ্বীপের সমন্বয়ে অপর একটি উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা গড়ে তুলবে। ফলে সার্ক ধীরে ধীরে তার অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলবে। ভারতের একটা বড় প্লাস পয়েন্ট হচ্ছে বর্তমানে নূ্যনতম ৪টি দেশে (ভুটান, বাংলাদেশ, নেপাল, আফগানিস্তান, শ্রীলংকা) যে সরকার রয়েছে, এই সরকারগুলো 'ভারতবান্ধব' সরকার হিসেবে পরিচিত। ফলে ভারতের ভূমিকা একটি বড় ভূমিকা পালন করে এখানে। ১৯৮৫ সালের ডিসেম্বর জন্ম নেয়া সার্ক ৩১ বছর পার করলেও, এই সহ আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থার 'মৃত্যু' এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

(নিউইর্য়ক, যুক্তরাষ্ট্র)
Daily Jai Jai Din05.10.2016

0 comments:

Post a Comment