রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

একজন ডোনাল্ড ট্রাম্প ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন

                 

একজন ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বিশ্বের মানুষ এখন চিনেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রার্থী হিসেবে। তিনি রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী। ৮ নভেম্বর এখানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। তার অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী হিলারি ক্লিনটন, যিনি ডেমোক্র্যাট পার্টির হয়ে নির্বাচনে লড়ছেন। নির্বাচনে আরও দুইজন প্রার্থী রয়েছেন বটে। কিন্তু নির্বাচনে তাদের কোনো ভূমিকা বা গুরুত্ব নেই। মিডিয়া তাদের নিয়ে খুব একটা মাতামাতিও করে না। এর কারণ অর্থ ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিদলীয় রাজনীতি। তবে এবারের নির্বাচন নানা কারণে এরই মধ্যে বিতর্কিত হয়ে উঠছে। ট্রাম্প সনাতন রাজনীতিক নন। তিনি ধনী ব্যবসায়ী। একাধিক নারী কেলেঙ্কারিতে তিনি অভিযুক্ত হয়েছেন। নারীরা প্রকাশ্যেই মিডিয়ায় তার বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ এনেছেন। অতীতে কখনও এমনটি দেখা যায়নি। তিনি নির্বাচনী প্রচারণা কিংবা টিভি বিতর্কে যে ভাষা ব্যবহার করছেন, তা অশোভন ও দৃষ্টিকটু। এভাবে একজন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী প্রকাশ্যে বিরোধী দল প্রার্থীকে ‘নষ্ট মহিলা’, ‘মিথ্যাবাদী’ হিসেবে আক্রমণ করে বক্তব্য রাখেন। এটা অতীতে কেউ কখনও দেখেননি। এমনকি তিনি মুসলমানদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেবেন, মেক্সিকান-যুক্তরাষ্ট্র সীমান্তে দেয়াল তুলবেন, তার এ ধরনের বক্তব্য ‘নেতৃত্বসুলভ’ কোনো বক্তব্য নয়। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র সম্পর্কে একটি খারাপ ধারণা দিয়েছেন।
প্রায় ১০ কোটি মানুষ ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে তিন-তিনবার টিভি পর্দায় হিলারি আর ট্রাম্পকে বিতর্কে অংশ নিতে দেখেছেন। এই নিউইয়র্কে বসে আমি এ বিতর্ক দেখেছি। কিন্তু একজন পর্যবেক্ষক হিসেবে আমার মনে হয়েছে, এ মুহূর্তে বিশ্বের এক নম্বর শক্তি হিসেবে দুইজন প্রার্থীর যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করা উচিত ছিল, তা তারা করেননি। এমনকি উপস্থাপকও এ ধরনের তেমন কোনো প্রশ্ন করেননি। যিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন তার কাছ থেকে এ ধরনের ‘গুরুত্বপূর্ণ’ বিষয়ের একটি ব্যাখ্যা আশা করেছিল এখানকার সাধারণ মানুষ। তারা তা পাননি। যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে আফগান যুদ্ধের ১৫ বছর পার করেছে। ২ হাজার ২০০ মার্কিন সেনা এ যুদ্ধে মারা গেছেন। আফগানিস্তানের ১০ ভাগ এলাকা এখন তালেবানদের দখলে এবং আরও ২০ ভাগ এলাকা তারা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে। এখন যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে কী ভাবছে, এ ব্যাপারে হিলারি ও ট্রাম্পের কোনো বক্তব্য ছিল না। এমনকি ইরাক বিভক্তিকে কীভাবে রোধ করা যায়, সে ব্যাপারে কোনো কথা বলেননি দুইজন প্রার্থী। দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে উত্তেজনা এখন তুঙ্গে। চীন সেখানে তার শক্তি বৃদ্ধি করছে। এ ব্যাপারেও কোনো সুস্পষ্ট বক্তব্য ছিল না হিলারি ও ট্রাম্পের। বিতর্কে দুই প্রার্থী এটা নিশ্চিত করেননি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে তারা কী পরিবর্তন আনতে চান। হিলারি যখন সামাজিক ক্ষেত্রে উন্নয়ন, বেতন বৃদ্ধি, সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার অঙ্গীকার করেছেন, সেখানে ট্রাম্প গুরুত্ব দিয়েছেন অভিবাসন রোধ করা ও চাকরির সংখ্যা বাড়ানো ইত্যাদির ওপর। ইরাক ও সিরিয়ার সমস্যার সমাধান কীÑ তার কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।
৮ নভেম্বর নির্বাচন। দুই প্রার্থী এখনও বিতর্কের পর প্রচারণায় ব্যাপক অংশ নিচ্ছেন। হিলারি ক্লিনটনের বক্তব্য, অভিবাসীদের পক্ষে কথা বলা, মধ্যবিত্তকে আকৃষ্ট করা, স্প্যানিশ ভাষায় কথা বলা, টিম কেইনকে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে মনোনয়ন দেয়াÑ সব মিলিয়ে তার অবস্থান এখন শক্তিশালী বলেই মনে হয়। অন্যদিকে ট্রাম্পের কোনো বক্তব্যই সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করতে পারছে না। তিনি পুরনো রাজনীতিবিদও নন। ওয়াশিংটন ডিসির রিপাবলিকান শিবিরেও তিনি খুব একটা পরিচিত ছিলেন না। ৭০ বছর বয়সী ট্রাম্প বিপুল অর্থবিত্তের (ব্যক্তিগত সম্পদের পরিমাণ ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার) মালিক হলেও, ১৯৮৭ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত রিপাবলিকান পার্টির রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। ২০০০ সালে তিনি একবার রিফর্ম পার্টির হয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চেয়েছিলেন। তিনি অতীতে কখনও কোনো ‘রাজনৈতিক পদ’ গ্রহণ করেননি। টিভি উপস্থাপকও ছিলেন (রিয়েলটি শো, এবিসি)। অন্যদিকে হিলারি ক্লিনটনের রাজনৈতিক জীবন বেশ বর্ণাঢ্যময়। তরুণ আইনজীবী হয়ে তিনি রাজনীতির সংস্পর্শে আসেন। করপোরেট আইনজীবী না হয়ে তিনি শিশু অধিকার, মাতৃ অধিকার নিয়ে তার কর্মময় জীবন শুরু করেন। পরে ফার্স্ট লেডি, নিউইয়র্কের সিনেটর এবং সর্বশেষ ছিলেন সেক্রেটারি অব স্টেট বা বিদেশমন্ত্রী। তুলনামূলক বিচারে রাজনীতি, আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক, বৈদেশিক নীতির প্রশ্নে তার স্পষ্ট ধারণা রয়েছে এবং তিনি অভিজ্ঞ। পররাষ্ট্র তথা আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কোনো ধারণাই নেই। ন্যাটো প্রশ্নে, আইএস প্রশ্নে, ব্রেক্সিট প্রশ্নে তিনি যেসব মন্তব্য করেছেন, তাতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে তার অজ্ঞতাই প্রমাণ করেছে। নাফটা ও টিপিপি চুক্তির ব্যাপারেও তার অবস্থান হিলারির বিপরীতে। তিনি মনে করেন, নাফটা ও টিপিপি চুক্তির কারণে যুক্তরাষ্ট্রে বেকারত্ব বেড়েছে। অথচ হিলারি মনে করেন, এই দুইটি চুক্তির কারণে মার্কিন স্বার্থ রক্ষিত হয়েছে বেশি। ট্রাম্প মেক্সিকো-যুক্তরাষ্ট্র সীমান্তে উঁচু দেয়াল নির্মাণ করে অবৈধ অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে চান। অন্যদিকে হিলারি মনে করেন, মেক্সিকানরা মার্কিন অর্থনীতিতে অবদান রেখেছে। চীনের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়েও প্রশ্ন আছে ট্রাম্পের। ডেমোক্র্যাটরা গত আট বছর (ওবামা প্রশাসন) যুক্তরাষ্ট্রকে চীনের হাতে তুলে দিয়েছেÑ এই অভিযোগ ট্রাম্পের। অন্যদিকে হিলারি মনে করেন, চীনের সঙ্গে ‘সহযোগিতামূলক’ সম্পর্কই নয়া বিশ্বব্যবস্থা গড়ার অন্যতম শর্ত। ওবামার শাসনামলে আইএসের জন্ম হয়েছে এবং এ জন্য ডেমোক্র্যাটরাই দায়ীÑ ট্রাম্পের এ ধরনের অভিযোগ স্বীকার করেন না হিলার ক্লিনটন।  হিলারি বলেছেন, তিনি বিদেশমন্ত্রী থাকার সময় ১২২টি দেশ সফর করেছেন এবং প্রায় ১০ লাখ মাইল ভ্রমণ করেছেন শুধু যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের জন্যই। অথচ ট্রাম্প তার ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্যই নির্দিষ্ট কয়েকটি দেশ সফর করেছেন। তবে ট্রাম্পের একটা প্লাস পয়েন্ট হচ্ছে, তিনি সোজাসাপটা কথা বলেন। আক্রমণ করে কথা বলেন, যা হিলারি করেন না কখনও। তিনি তার বক্তৃতায় ট্রাম্পকে আক্রমণ করেন সত্য; কিন্তু তা অনেক মার্জিত ভাষায়। তাই একটি প্রাক-গবেষণায় (সিন কোলারোসি কর্তৃক পরিচালিত) যখন হিলারিকে সর্বোচ্চ নির্বাচকম-লীর ভোটে বিজয়ী হবেন বলে মন্তব্য করা হয়, আমি তাতে অবাক হই না। উক্ত গবেষণায় দেখানো হয়েছে, ৫৩৮টি নির্বাচকম-লীর ভোটে হিলারি পাবেন ৩৪৭ ভোট আর ট্রাম্প পাবেন ১৯১ ভোট। নির্বাচকম-লী গঠিত হয় কংগ্রেস সদস্যদের নিয়ে। অর্থাৎ হাউস অব কংগ্রেসের ৪৩৫ আর সিনেটের ১০০ সিট নিয়েই ৫৩৮টি নির্বাচকম-লীর ভোট। ৫০টি রাজ্যের নির্বাচকম-লীর ভোটও আলাদা আলাদা। যেমন ক্যালিফোর্নিয়ার নির্বাচকম-লীর ভোট ৫৫, আর নিউইয়র্কের ২৯। জনগণ ভোট দেন বটে; কিন্তু তারা প্রেসিডেন্টকে নির্বাচিত করেন না। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন নির্বাচকম-লীর ভোটে। আর মজার ব্যাপার হচ্ছে যে, রাজ্যে যে প্রার্থী বিজয়ী হবেন, তিনি নির্বাচকম-লীর প্রতিটি ভোট পেয়েছেন বলে ধরে নেয়া হয়।
নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই বিতর্ক ঘিরে ধরেছে দুই প্রার্থীকে। হিলারি ক্লিনটনের ই-মেইল বিতর্ক তাকে যথেষ্ট ভোগাচ্ছে। সর্বশেষ টিভি বিতর্কেও তিনি এই প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছিলেন। তিনি যখন বিদেশমন্ত্রী ছিলেন, তখন তিনি বিদেশ মন্ত্রণালয়ের জন্য নির্ধারিত ই-মেইল অ্যাকাউন্ট ব্যবহার না করে ব্যক্তিগত ই-মেইল ব্যবহার করে বিদেশে যোগাযোগ করেছেন। ওইসব ই-মেইলের কিছু অংশ ফাঁস হয়েছে। ডেমোক্র্যাটদের দাবি, ট্রাম্পের প্ররোচনায় রাশিয়ার হ্যাকাররা ওই ই-মেইল ফাঁস করেছে। অন্যদিকে ট্রাম্প দাবি করেছেন, হিলারি ক্লিনটনের বাকি সব ই-মেইল প্রকাশ করা হোক। এটা নিঃসন্দেহে হিলারি ক্লিনটনের জন্য একটি মাইনাস পয়েন্ট। ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেও বিপদে আছেন। ডেমোক্র্যাট শিবির তার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে ট্যাক্স ফাঁকি দেয়ার। তার স্ত্রী (তৃতীয়) মেলানিয়ার মধ্য নব্বইয়ে তোলা নগ্ন ছবি (তিনি ফটো মডেল ছিলেন) প্রকাশিত হয়েছে, যা ট্রাম্পকে বিব্রত করেছে। সব মিলিয়ে এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে যত বিতর্ক, অতীতে এমনটা দেখা যায়নি। তবে চূড়ান্ত বিচারে পাল্লা হিলারির দিকে হেলে পড়েছে এখন। ট্রাম্প পিছিয়ে পড়েছেন। ১১টি রাজ্যের কথা বলা হচ্ছে (কলোরাডো, ফ্লোরিডা, আইওয়া, মিসিগান, নেভাদা, নিউ হ্যাম্পশায়ার, নর্থ ক্যারোলিনা, ওহিও, পেনসেলভেনিয়া, ভার্জিনিয়া এবং উইনকিনসন), যাদের বলা হচ্ছে ‘ব্যাটেলগ্রাউন্ড স্টেটস’ (Battleground states). এ রাজ্যগুলো বিগত দুইটি নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। এসব রাজ্যের ভোটাররা এখনও দ্বিধাবিভক্ত। তাদের কোনো সুনির্দিষ্ট সমর্থন কোনো প্রার্থীর পক্ষেই নেই। কখনও তারা ডেমোক্র্যাটদের সমর্থন করে, কখনও রিপাবলিকানদের। এতদিন পর্যন্ত জনমত জরিপে হিলারি ক্লিনটন এগিয়ে থাকলেও, ট্রাম্প ব্যবধান এতদিনে আর কমিয়ে আনতে পারেননি। ফলে সুনির্দিষ্ট করে হয়তো বলা যাচ্ছে না। তবে মিডিয়া বলছে, হিলারি হতে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট। দুইজন প্রার্থীকে আর কোনো ‘প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্ক’ এ অংশ নিতে হবে না। তারা প্রচারণা চালাবেন। এ সময়সীমার মধ্যে ট্রাম্প তার রেটিং বাড়াতে পারবেন কিনা, পারলে কতটুকু পারবেন, এটা নিয়ে প্রশ্ন আছে। অনেক রিপাবলিকান সমর্থক এরই মধ্যে হিলারিকে সমর্থনের কথা ঘোষণা করেছেন। প্রথম বিতর্কের পর ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল, তিনি নিষেধাজ্ঞা অবজ্ঞা করে কিউবার সঙ্গে অবৈধ ব্যবসা করেছেন। বিতর্ক শেষ হওয়ার এক সপ্তাহও পার হয়নি, নতুন একটি জনমত জরিপ প্রকাশ করেছে মিডিয়া (টাইমস-পিকেউন/লুসিড প্রেসিডেন্সিয়াল ট্রাকিং পোল)। তাতে হিলারিকে ৫ পয়েন্টে এগিয়ে থাকার কথা বলা হয়েছে। এরই মধ্যে নতুন বিতর্ক উঠেছে ট্রাম্প নাকি একসময় ‘পর্নো স্টার’ ছিলেন! সব মিলিয়ে নানা বিতর্ক, নানা প্রশ্নে আটকে আছে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী প্রচারণা। মিডিয়াগুলোও এখন অনেকটা প্রো-হিলারি। নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকা সমর্থন করছে হিলারিকে। তারপরও কথা থেকে যায়। তিনটি ‘প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্ক’ এ ‘জয়’ পাওয়া হিলারি ক্লিনটন কী তার এ বিজয়ের ধারা ধরে রাখতে পারবেন? ৮ নভেম্বর নির্বাচন। মাত্র বাকি আছে এক সপ্তাহ। সময়টা খুব বেশি নয়। এরই মাঝে হিলারি ক্লিনটনের জয় একরকম নিশ্চিত হয়ে গেছে। কিন্তু ঈশানকোণে কোথায় যেন একটি কালো মেঘ! সর্বশেষ তৃতীয় বিতর্কে ট্রাম্পকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তিনি যদি নির্বাচনে হেরে যান(?), তাহলে কী তিনি নির্বাচনের ফল মেনে নেবেন? ট্রাম্প সরাসরি হ্যাঁ বা না বলেননি। ট্রাম্প বারবার বলে আসছেন, নির্বাচনে কারচুপি হবে! তার এ  কারচুপির বক্তব্য এবং নির্বাচনের ফল মেনে নেয়ার স্পষ্ট ঘোষণা না থাকায় রাজনৈতিক পন্ডিতরা এখন নানা অঙ্ক করার চেষ্টা করছেন। নির্বাচন হবে। নির্বাচকম-লীর ভোট যদি ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যায়, তাহলে তিনি কি উচ্চ আদালতে যাবেন? কংগ্রেসকে ব্যবহার করবেন তার স্বার্থে? এরই মধ্যে খোদ রিপাবলিকান শিবিরে তার বিরুদ্ধে একটা মত শক্তিশালী হচ্ছে। পল রায়ানের মতো উঠতি নেতারা ট্রাম্পের বিরোধিতা করছেন। তবে নির্বাচনী ফল যাই হোক না কেন, ট্রাম্পের নানা বক্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ব্যবস্থার ওপর একটা কালো দাগ এঁকে দিয়েছে। খোদ যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রকে তিনি বিতর্কিত করেছেন। মানুষের কাছে প্রচুর টাকা হলে তিনি যে কী করতে পারেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প তার বড় প্রমাণ। যুক্তরাষ্ট্র উন্নয়নশীল বিশ্বের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নিয়ে নানা মন্তব্য করে। সমালোচনা করে। এখন খোদ যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি প্রশ্নবিদ্ধ হলো। নির্বাচন একটি হবে। এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র একজন নয়া প্রেসিডেন্ট পাবে, যিনি ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে দায়িত্ব নেবেন। এতে যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতিতে কী পরিবর্তন আসে, সেটাই দেখার বিষয়।
নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র
Daily Alokito Bangladesh
30.10.2016
 

0 comments:

Post a Comment