রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

ঐতিহাসিক বিজয়ের পথে হিলারি ক্লিনটন

 
গত ১৯ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের লাস ভেগাসে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল তৃতীয় ‘প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্ক’। ওই দিন নিউইয়র্কে বেশ গরম পড়েছিল। এর আগে দু’দিন বেশ ঠাণ্ডা পড়েছিল। পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছিল রাজনৈতিক উত্তাপও। আগের দুটি বিতর্কের মতো এবারও সর্বশেষ বিতর্কে অংশ নিলেন হিলারি ক্লিনটন ও ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফক্স নিউজ এ টিভি বিতর্কের আয়োজন করেছিল। সারা দেশের মানুষ এবং আমাদের মতো ‘বিদেশীরাও’ প্রত্যক্ষ করলাম এক নোংরা বিতর্কের। আমেরিকার মতো একটি ‘সভ্য’ দেশে দু’জন প্রার্থীর একজন যিনি যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হবেন, কিংবা হতে চান, তাদের বক্তব্য, পরমতসহিষ্ণুতার অভাব ইতিমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের ‘নগ্ন চরিত্রটাকেই’ উšে§াচন করেছে। তৃতীয় বিতর্কের প্রথম ২০ মিনিট পরিবেশ কিছুটা স্বাভাবিক ও শান্ত থাকলেও বেশি সময় লাগেনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘আসল চরিত্র’ ফুটে উঠতে। তিনি প্রকাশ্যেই বললেন, হিলারি একজন ‘নষ্ট মহিলা’। মিথ্যাবাদী বলতেও তিনি দ্বিধা করলেন না।

আমি আগের কয়েকটি নির্বাচনের টিভি বিতর্কও দেখেছি। তখনও আমি যুক্তরাষ্ট্রে ছিলাম। কিন্তু এবারের বিতর্ক এবং পরস্পরকে আক্রমণ করে যেভাবে বক্তব্য রাখা হয়েছে এমনটি অতীতে আমি কখনও দেখিনি। দ্বিতীয় বিতর্কের সময়ও আমি প্রত্যক্ষ করেছিলাম ডোনাল্ড ট্রাম্প কীভাবে আগ্রাসী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। লাখ লাখ মানুষ দ্বিতীয় বিতর্কের সময়ও প্রত্যক্ষ করেছিল ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রকাশ্যে বলছেন, তিনি প্রেসিডেন্ট হলে হিলারি ক্লিনটনকে জেলে পাঠাবেন! কী উদ্ধত আচরণ। একজন সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট কি এমন কথা প্রতিপক্ষ প্রার্থীকে বলতে পারেন? তাহলে তৃতীয় বিশ্বের রাজনীতির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ২৪০ বছরের গণতন্ত্রের পার্থক্য রইল কোথায়? যুক্তরাষ্ট্র তো বিশ্বে ‘গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার’ সবক দেয়। গণতন্ত্রের তত্ত্ব দেয়। শর্ত দেয় গণতন্ত্র, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার। কিন্তু এবার কেমন গণতন্ত্র দেখছে মার্কিন নাগরিকরা? অভিযোগের তীরটা যেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের দিকে বেশি যাচ্ছে। তবে হিলারি ক্লিনটনও কম যান না।

গত ক’দিন ধরেই দেখছি মার্কিন টিভি চ্যানেলগুলোতে একাধিক মহিলা বক্তব্য দিচ্ছেন- তারা ডোনাল্ড ট্রাম্প কর্তৃক অতীতে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। এসব মহিলার প্রায় সবাই এখন প্রৌঢ়, বয়স ৫০ অতিক্রম করেছেন আগেই। তারাই এখন বলছেন একজন প্রার্থীর বিরুদ্ধে, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হতে চান। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এত বছর পর এ যৌন নির্যাতনের অভিযোগ এলো কেন? কেন তারা আগে অভিযোগ করেননি? একজন মহিলা বললেন, ট্রাম্প তাকে তার ফ্লোরিডার ম্যানশনে নিয়ে গিয়েছিলেন এবং তার শরীরের সংবেদনশীল অংশে স্পর্শ করেছিলেন। এসব অভিযোগ ট্রাম্প নিজে অস্বীকার করেছেন বটে; কিন্তু সাধারণ মানুষ এসব উপভোগ করছে। যদিও যৌনতা মার্কিন সমাজের একটি সাধারণ বিষয়। হিলারি ক্লিনটনের স্বামী বিল ক্লিনটন প্রেসিডেন্ট থাকাবস্থায় মনিকা লিউন্স্কির সঙ্গে এক ‘যৌন সম্পর্কে’ জড়িয়ে গিয়েছিলেন। ট্রাম্প এ প্রসঙ্গটিও এনেছেন বিভিন্ন সময়ে। তবে ট্রাম্পের তৃতীয় স্ত্রী মেলেনিয়া তার স্বামীর এসব ‘কর্মকাণ্ডের’ জন্য ক্ষমা চেয়েছেন; এবং বলেছেন, ‘এই ট্রাম্পকে তিনি চেনেন না।’ স্পষ্টতই তিনি মহিলা ভোটারদের আকৃষ্ট করতে চাচ্ছেন। কিন্তু তিনি কতটুকু সফল হয়েছেন, বলা মুশকিল। ইতিমধ্যে ট্রাম্পের বিপক্ষে একটা জনমত শক্তিশালী হয়েছে। সর্বশেষ টিভি বিতর্কের পর সিএনএন/ওআরসি জরিপে দেখা গেছে, হিলারির পক্ষে ৫২ ভাগ মানুষ তাদের মতামত দিয়েছে। আর ট্রাম্পের পক্ষে দিয়েছে ৩৯ ভাগ। এ নিয়ে আরও দুটি টিভি বিতর্কের পর যে জনমত পাওয়া গেছে, তাতেও হিলারির পক্ষে ৫০ ভাগের ওপর রায় পড়েছিল। এর অর্থ, জনমত জরিপকারীদের মতে, স্পষ্টতই হিলারিই হতে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট। আর এর ফলে রচিত হতে যাচ্ছে একটি ইতিহাস। হিলারি ক্লিনটন ঢুকে যাচ্ছেন ইতিহাসের পাতায়।

তবে হিলারি ক্লিনটনের বিরুদ্ধেও যে অভিযোগ নেই, তা নয়। তার বিরুদ্ধে ট্রাম্প বারবার অভিযোগ আনছেন। প্রথম অভিযোগটি ছিল ‘ক্লিনটন ফাউন্ডেশন’ নিয়ে। ক্লিনটনের পরিবার এ সেবামূলক প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করেন। ক্লিনটন ও হিলারি এ ফাউন্ডেশনের জন্য বিদেশ থেকে অবৈধ অর্থ গ্রহণ করেছেন এবং তাদের স্বার্থে কাজ করেছেন- এমন অভিযোগ বারবার করা হয়েছে। সর্বশেষ টিভি বিতর্কেও ট্রাম্প বললেন, সৌদি আরব থেকে হিলারি বেশ কয়েক মিলিয়ন ডলার গ্রহণ করেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে সৌদি আরবের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক খুব ভালো যাচ্ছে না। বিশেষ করে ৯/১১-এর ঘটনায় সৌদি নাগরিকদের সংশ্লিষ্টতা এবং এ ব্যাপারে সৌদি আরবের বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত কংগ্রেস গ্রহণ করলে যুক্তরাষ্ট্রের সমাজে এ নিয়ে একটি মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। এমনই এক সময়ে খোদ ট্রাম্প যখন বলেন, হিলারি সৌদি আরব থেকে টাকা নিয়েছেন, তখন বিষয়টি বড় বিতর্ক সৃষ্টি করতে পারত। কিন্তু ট্রাম্প বলেই বোধহয় তা হয়নি। এমনকি হিলারির ‘যোগ্যতা’ নিয়েও ট্রাম্প প্রশ্ন তুলেছেন। হিলারি যখন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন, তখন তিনি বেনগাজি (লিবিয়া) দূতাবাসে জঙ্গি হামলা, মার্কিন রাষ্ট্রদূতের মৃত্যু রোধ করতে পারেননি। ট্রাম্প ছয়জনকে হাজির করেছিলেন, যাদের স্বজনরা বেনগাজি দূতাবাসে হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন। এমনকি তিনি কেনিয়া থেকে ওবামার সৎ ভাইকেও নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। অন্যদিকে হিলারি বারবার ট্রাম্পের সঙ্গে পুতিনের ‘সখ্য’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি তৃতীয় বিতর্কেও বলেছেন, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে তিনি হবেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ‘পুতিনের পুতুল’।

তৃতীয় টিভি বিতর্কের পরদিন আমি যুক্তরাষ্ট্রের মিডিয়া পর্যালোচনা করে দেখেছি। প্রায় সবাই হিলারির পক্ষে কথা বলেছেন। ৮ নভেম্বর নির্বাচন। কিন্তু তার আগেই মিডিয়া হিলারিকে প্রেসিডেন্ট ভাবতে শুরু করেছে। বলা হচ্ছে, বিতর্কে হিলারি প্রেসিডেন্টের মতোই আচরণ করেছেন। এমনকি ইউরোপের সংবাদপত্রগুলোর সুরও হিলারির পক্ষে। বলা ভালো, ১৭৭৬ সালে স্বাধীনতার পর বিগত ২৪০ বছরের ইতিহাসে কোনো নারী প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি। এই প্রথম একজন নারী এ পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ইতিহাস সৃষ্টি করতে যাচ্ছেন। তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে সেটা হবে আরেক ইতিহাস। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের নারী আন্দোলন তথা নারীদের অধিকারের ক্ষেত্রে এটা হবে একটি মাইলফলক। পাঠকদের জানিয়ে রাখি, যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর বড় অর্থনীতি ও বড় গণতন্ত্রের দেশ হলেও এখানে নারীদের ভোটের অধিকারের ইতিহাস মাত্র ৯৬ বছরের। দীর্ঘদিন এখানে নারীদের ভোটের অধিকার দেয়া হয়নি। এ নিয়ে নারী আন্দোলনের ইতিহাসও বিভিন্ন গ্রন্থে পাওয়া যায়। নিঃসন্দেহে হিলারি ক্লিনটনের মনোনয়ন পাওয়া এখানকার নারী আন্দোলনকে আরও উজ্জীবিত করবে। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের মতো কনজারভেটিভ সোসাইটিতে নারী প্রতিনিধিত্ব সীমিত। ২০১৫ সালের পরিসংখ্যান বলে, কংগ্রেসের ৫৩৫টি আসনে (সিনেট ১০০, প্রতিনিধি পরিষদ ৪৩৫) মাত্র ১০৭ নারী আইনপ্রণেতা রয়েছেন (ডেমোক্রেট ৭৬, রিপাবলিকান ২৮ জন)। সিনেটে নারী প্রতিনিধি রয়েছেন ২০ জন (১০০ জনের মধ্যে, অর্থাৎ শতকরা ২০ ভাগ), আর প্রতিনিধি পরিষদে রয়েছেন মাত্র ৮৪ জন (শতকরা ১৯ দশমিক ৩ ভাগ)। সুতরাং এই সীমিত প্রতিনিধিত্বের মধ্যে দিয়ে নারীর পূর্ণ অধিকার রক্ষিত হয়েছে, এটি বলা যাবে না। হিলারি ক্লিনটনের সম্ভাব্য বিজয় যুক্তরাষ্ট্রের নারী সমাজের জন্য বড় ধরনের একটি অগ্রগতি।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় ভোটাররা সাধারণভাবে কতগুলো বিষয় বিবেচনায় নেন। অতীতে কখনও কখনও অর্থনীতি, বৈদেশিক নীতি প্রাধান্য পেয়েছে। ভোটাররা দেখতে চান এসব বিষয়ে প্রার্থীদের ভাবনা কী। এবার নির্দিষ্ট কোনো একটি বিষয় উঠে আসেনি। ট্রাম্প ইমিগ্রেশন তথা মুসলিমবিদ্বেষী একটা মনোভাব নিলেও জনমত জরিপে তা গুরুত্ব পায়নি। তৃতীয় বিতর্কের সময়ও এ ধরনের কিছু বিষয় উঠে এসেছে। বিশেষ করে আইএস, রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ইত্যাদি নিয়ে ট্রাম্প ও হিলারি বিতর্ক করলেও তারা ভবিষ্যতে কী করবেন, তা স্পষ্ট হয়নি। তবে হিলারি বলেছেন, তিনি প্রেসিডেন্ট হলে ১০০ দিনের মধ্যে ইমিগ্রেশনের ব্যাপারে একটা রূপরেখা উপস্থাপন করবেন। সেটা কী তা তিনি বলেননি। ট্রাম্পের অভিযোগ, হিলারি প্রেসিডেন্ট হলে ওবামা প্রশাসনের নীতিই তিনি অব্যাহত রাখবেন। ট্রাম্পের অভিযোগ, ডেমোক্রেটরা আইএসকে সৃষ্টি করেছে, হিলারি প্রেসিডেন্ট হলে আইএস আরও শক্তিশালী হবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা আরও বেশি ঝুঁকির মুখে পড়বে। ট্রাম্পের আরও অভিযোগ, ওবামা টিপিপি (ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপ) চুক্তি করে অনেক মার্কিনির চাকরি হারানোর ব্যবস্থা করেছিলেন। তিনি প্রেসিডেন্ট হলে এই চুক্তি ও নাফটা চুক্তির (কানাডা, মেক্সিকো আর যুক্তরাষ্ট্রের সমন্বয়ে মুক্তবাজার) বিষয়টির পুনর্বিবেচনা করবেন। চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক নিয়েও কথা বলেছেন ট্রাম্প। তার অভিযোগ, মার্কিন নীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রে চীনের অর্থনৈতিক ‘প্রভাব’ বাড়ছে। এই ‘প্রভাব’ তিনি কমাতে চান।

অন্যদিকে ডেমোক্রেট শিবিরের বক্তব্য- ট্রাম্প অতিমাত্রায় দক্ষিণপন্থী ও যুদ্ধংদেহী। তিনি প্রয়োজনে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধও শুরু করে দিতে পারেন। তিন অতিমাত্রায় রাশিয়াপন্থী। রাশিয়ায় তার বিশাল বিনিয়োগ আছে। পুতিনকে তিনি ওবামার চেয়েও যোগ্য নেতা মনে করেন! ফলে ট্রাম্পের অতি ‘রাশিয়াপ্রীতি’ যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থে আঘাত করতে পারে। ট্রাম্প মূলত মুনাফা অর্জনের বিষয়টিই বেশি বোঝেন। শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি, মধ্যবিত্তের সামাজিক কাঠামোর মানোন্নয়নের ব্যাপারে তার কোনো কমিটমেন্ট নেই। সবচেয়ে বড় কথা, তিনি মুসলমানবিদ্বেষী ও মেক্সিকানবিদ্বেষী। যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণ করার কথাও বলেছেন তিনি। তিনি সেনাবাহিনীর ‘গৌরবকে’ আঘাত করেছেন, এমন অভিযোগও উঠেছিল ডেমোক্রেট শিবিরের পক্ষ থেকে।

ইতিমধ্যে কোনো কোনো অঙ্গরাজ্যে ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে গেছে। পোস্টাল ব্যালটও শুরু হয়ে গেছে। নিঃসন্দেহে তৃতীয় বিতর্কের পর হিলারির অবস্থান অনেক শক্তিশালী। তবে একটি প্রশ্ন বেশ আলোচিত হচ্ছে। তৃতীয় বিতর্কের শেষ সময়ে এসে ফক্সের উপস্থাপক ক্রিস ওয়ালেস যখন ট্রাম্পকে শেষ প্রশ্নটি করেন- তিনি হেরে গেলে এ নির্বাচনের ফলাফল মেনে নেবেন কিনা- তখন ট্রাম্প স্পষ্ট করে কোনো জবাব দেননি। অর্থাৎ প্রশ্ন থেকেই গেল, ফলাফল তিনি মেনে নিতে নাও পারেন! কারণ এর আগে তিনি বারবার বলে আসছিলেন, নির্বাচনে কারচুপি হতে পারে! তবে কীভাবে কারচুপি হবে, কারা কারচুপি করবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এটা আদৌ সম্ভব কিনা- সেসব ট্রাম্প স্পষ্ট করেননি। তিনি মিডিয়াকে দুষছেন বারবার। মিডিয়া অসত্য কথা বলছে, এমনটি তিন একাধিকবার বলেছেন। এটা সত্য, মিডিয়া তার নিরপেক্ষ অবস্থান নিশ্চিত করতে পারেনি। নিউইয়র্ক টাইমসের মতো প্রভাবশালী পত্রিকা হিলারিকে সমর্থন করছে।

নির্বাচনের আর বেশিদিন বাকি নেই। এ নিয়ে মানুষের মনে খুব যে আগ্রহ আছে, তা বলা যাবে না। কর্পোরেট হাউসগুলোও ট্রাম্পের পাশে এসে দাঁড়ায়নি। মহিলাদের সম্পর্কে বারবার কটূক্তি করা, তাদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করা, যৌন নির্যাতনের অভিযোগ ওঠা- এসব কারণে ট্রাম্প মহিলা ভোটারদের ভোট কম পাবেন বলেই মনে হয়। এটা হিলারির জন্য প্লাস পয়েন্ট। ট্রাম্প দীর্ঘ প্রায় দু’দশক কোনো ট্যাক্স পরিশোধ করেননি। যিনি বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের মালিক, পৃথিবীর অনেক দেশে যার ব্যবসা রয়েছে, তিনি কিনা আদৌ ট্যাক্স দেন না! এটা ট্রাম্প স্বীকার করে বলেছেন, তিনি আইন মেনেই এ কাজটি করেছেন। আইন তাকে এই সুযোগ এনে দিচ্ছে। এটাকে ইস্যু করেছেন হিলারি।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ৫৩৮টি নির্বাচকমণ্ডলীর ভোটে। কোনো রাজ্যে কোনো প্রার্থী কম ভোট পেলে যিনি বিজয়ী হবেন, তিনি ওই রাজ্যের নির্বাচকমণ্ডলীর সব ভোট পেয়েছেন বলে গণ্য করা হয়। এ নিয়ে কথা বলার সুযোগ নেই। এখন যতই দিন যাচ্ছে, ততই উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হচ্ছেন হিলারি। নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করা সময়ের ব্যাপার মাত্র।

নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র
Daily Jugantor
25.10.2016

0 comments:

Post a Comment