রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

ব্রিকস-বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলন প্রসঙ্গে কিছু কথা

 

    
             
ভারতের গোয়ায় একটি গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষ সম্মেলন চলছে। ১১টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান তথা সরকারপ্রধানরা এ শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন। সমসাময়িক বিশ্ব রাজনীতি তথা আঞ্চলিক রাজনীতির আলোকে এ শীর্ষ সম্মেলনের গুরুত্ব অনেক। গতকাল অনুষ্ঠিত হলো ব্রিকসের অষ্টম শীর্ষ সম্মেলন। এতে ভারতের পাশাপাশি ব্রাজিল, রাশিয়া, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার রাষ্ট্রপ্রধান তথা সরকারপ্রধানরা যোগ দেন।  আজ ব্রিকস-বিসমটেক যৌথ শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বিমসটেক বা ‘বে অব বেঙ্গল ইনেশিয়েটিভ ফর মাল্টি সেক্টরাল টেকনিক্যাল কো-অপারেশন’ এর ছয়জন সরকার তথা রাষ্ট্র্রপ্রধান (বাংলাদেশ, ভুটান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড) এ ব্রিকস-বিমসটেক যৌথ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ যৌথ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিবেন। ব্রিকস সম্মেলন ও ব্রিকস বিমসটেক যৌথ শীর্ষ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে এমন একসময়, যখন ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীন ও ভারতের মধ্যে দ্বন্দ্ব দিন দিন স্পষ্ট হচ্ছে। শুধু তাই নয়, চীন পাকিস্তানকে সঙ্গে নিয়ে যে ‘অর্থনৈতিক করিডোর’ গড়ে তুলছে (যাতে ব্যয় হবে ১১ বিলিয়ন ডলার), তাতে ভারতের আপত্তি রয়েছে। ভারত বেলুচিস্তানের অভ্যন্তরীণ ঘটনায় হস্তক্ষেপ করছে; এমন অভিযোগ পাকিস্তানের পক্ষ থেকে উত্থাপন করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, ভারত অতি সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, যা কিনা চীন খুব সহজভাবে নেয়নি। এমনকি অনেক পশ্চিমা পর্যবেক্ষকও মনে করছেন, এ চুক্তি স্বাক্ষরের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্য হচ্ছে ‘চীনকে ঘিরে ফেলার’ একটি উদ্যোগ! তৃতীয়ত, চীন যে ‘মেরিটাইম সিল্ক রোড’র এক মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করছে, তা ভারত সন্দেহের চোখে দেখছে। ভারতের এ ‘সন্দেহের’ কারণেই কক্সবাজারের কাছে সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দরটি নির্মিত হয়নি। ফলে চীন ও ভারত পরস্পর পরস্পরকে এক ধরনের সন্দেহের চোখে দেখছে। এ ‘সন্দেহ’ ও ‘আস্থার অভাব’ চীন ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্ককে আরও উচ্চতায় নিয়ে যাবে না। এতে করে ব্রিকস যে অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে দাঁড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল, তা বিস্মিত হবে। ভারতের ভূমিকা, বিশেষ করে চীন-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সামরিক চুক্তিটি চীনা নেতাদের খুশি করেনি কোনোভাবেই। ওই চুক্তিটি, যা লামোয়া (LEMOA- Logistic Exchange Memorandum of Agreement) নামে অভিহিত, তা ভারতের পররাষ্ট্রনীতির জন্য একটি টার্নিং পয়েন্ট। এ চুক্তির ফলে ভারতকে আরও বেশি করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি নির্ভরশীল করে তুলবে। যুক্তরাষ্ট্র আরও দুইটি চুক্তি নিয়ে বর্তমানে ভারতের সঙ্গে কথাবার্তা বলছে এবং ধারণা করছি, অতি শিগগিরই ভারত এ দুইটি চুক্তিতেও স্বাক্ষর করবে। এর একটি হচ্ছে, সিসমোয়া (CISMOA- Communications Interoperability and Security Memorandum of Agreement) এবং অপরটি হচ্ছে, বেকা (BECA- Basic Exchange and Cooperation Agreement for Geospatial cooperation) । ‘সিসমোয়া’ চুক্তির ফলে নিরাপত্তা সংক্রান্ত সব তথ্য পাবে যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে ‘বেকা’ চুক্তির আওতায় বিভিন্ন স্থানের ডিজিটাল মানচিত্র ও সমীক্ষা রিপোর্ট ব্যবহারের সুযোগ পাবে যুক্তরাষ্ট্র। সুতরাং এ ধরনের চুক্তির ধরন এবং এর ব্যবহার যে ভারতকে আরও বেশি মাত্রায় যুক্তরাষ্ট্রমুখী করবে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। উল্লেখ করা প্রয়োজন, ১৬ বছর ধরে ভারতের রাজনীতিতে, বৈদেশিক সম্পর্কের প্রশ্নে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের প্রশ্নে একটি পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে। ২০০৮ সালে ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি অসামরিক পারমাণবিক চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। ফলে পারমাণবিক চুল্লি নির্মাণসহ সব ধরনের পারমাণবিক প্রযুক্তি, যা শুধু অসামরিক কাজে ব্যবহৃত হবে, তা যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে সরবরাহ করছে। ভারত এখন নিউক্লিয়ার সাপ্লাইস গ্রুপ বা এনএসজির সদস্য হতে চায়, যা কিনা যুক্তরাষ্ট্রও সমর্থন করছে। যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্ক বৃদ্ধির পেছনে বেশকিছু কারণ রয়েছে। প্রধান কারণ হচ্ছে, এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান ক্ষমতা ও প্রভাব বৃদ্ধিকে চ্যালেঞ্জ করে ভারতকে এ অঞ্চলে চীনের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দাঁড় করানো। যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন মনে করে, ২১ শতকের মূল কেন্দ্রবিন্দু হবে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চল। বাংলাদেশ ও ভারত যুক্তরাষ্ট্রের এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের জন্য প্রণীত নীতির আওতাভুক্ত। এ অঞ্চলের রাজনীতির উত্থান-পতন, এ অঞ্চলের তিনটি শক্তির (চীন, ভারত, জাপান) মধ্যকার সম্পর্ক ২১ শতকের বিশ্ব রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করবে। এজন্যই যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতিতে অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে এ অঞ্চলের গুরুত্ব পাচ্ছে বেশি। পাঠক স্মরণ করতে পারেন, ওবামার ‘Pivot to Asia’ পলিসির প্রধান বিষয় হচ্ছে, এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চল। এ অঞ্চলের উত্থান-পতনে এবং বৈদেশিক সম্পর্কের প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র একটি ভূমিকা রাখতে চায়। চীনের ভূমিকাকে খর্ব করে যুক্তরাষ্ট্র এ অঞ্চলে তার প্রভাব বাড়াচ্ছে। পাঠক স্মরণ করতে পারেন, প্রেসিডেন্ট ওবামা দুই-দুইবার ভারত সফর করেছেন। প্রতিবারই তিনি বিশাল এক ভারতীয় ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল নিয়ে ভারত গেছেন এবং একাধিক বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন। শুধু তাই নয়, ওবামা তার ভারত সফরের সময় ভারতের জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী পরিষদের স্থায়ী সদস্য পদের দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। এতেই বোঝা যায়, যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে চীনের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করাতে চাইছে। যুক্তরাষ্ট্রের এ অঞ্চলের ব্যাপারে আর একটা স্ট্র্যাটেজি হচ্ছে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে জাপান, ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার সমন্বয়ে এবং সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণে একটি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা। ২০১৬ সালের মার্চে নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত ‘রাইসিনা ডায়ালগে’ যুক্তরাষ্ট্রের এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের ষষ্ঠ ফ্লিটের প্রধান অ্যাডমিরাল হ্যারি হারিস এ ধরনের একটি প্রস্তাব করেছিলেন। তবে এ ধরনের একটি প্রস্তাব নতুন নয়। জাপানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শিনজে আবে এ ধরনের একটি প্রস্তাব করেছিলেন ২০০৬-০৭ সালে। জাপানি প্রধানমন্ত্রীর ওই প্রস্তাব Quadrilateral Initiative হিসেবে পরিচিত। এ থেকেই বোঝা যায়, এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের Pivot to Asia পলিসির আসল উদ্দেশ্য কী। চীনের ক্রমবর্ধমান শক্তি বৃদ্ধি ও দক্ষিণ চীন সাগরে চীনা নৌবাহিনীর উপস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রের জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও গুয়ামে সাপ্লাই লাইনের জন্য রীতিমতো হুমকিস্বরূপ। যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্য তাই পরিষ্কার এ অঞ্চলভুক্ত জাপান ও অস্ট্রেলিয়া এবং ভারতকে সংযুক্ত করে একটি সামরিক অ্যালায়েন্স গড়ে তোলা। যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্র্যাটেজি বুঝতে আমাদের সহজ হবে যদি আমরা অতি সাম্প্রতিককালে এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র যে সামরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করেছে, তার দিকে তাকাই। যুক্তরাষ্ট্র জুলাইয়ে ফিলিপাইনের নৌবাহিনীকে USA Bout well নামে একটি বড় ধরনের ডেস্ট্রয়ার সরবরাহ করেছে। উদ্দেশ্য হচ্ছে, দক্ষিণ চীন সাগরে চীনা নৌবাহিনীর গতিবিধি লক্ষ রাখা ও প্রয়োজনে চীনা জাহাজকে চ্যালেঞ্জ করা। বেশ কিছুদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্র ফিলিপাইনের সঙ্গে ঊহEnhanced Defense cooperation নামে একটি চুক্তি করার ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে আসছে। এ চুক্তির ফলে যুক্তরাষ্ট্র ফিলিপাইনের সামরিক ঘাঁটিতে মার্কিন সেনা অথবা মেরিন সেবাকে স্থায়ীভাবে মোতায়েনের সুযোগ পাবে। যুক্তরাষ্ট্র ২০১৫ সালে South East Asia Maritime Security Initiative (MSI) এর আওতায় ৪২৫ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করেছে। এর আগে ২০১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র South East Asia Maritime Law Enforcement Initiative গ্রহণ করেছিল। উদ্দেশ্য হচ্ছে, এ অঞ্চলের দেশগুলোর সমুদ্রসীমার ব্যাপারে সচেতনতা বৃদ্ধি করা ও প্রশিক্ষণ দেয়া। মূল কথা একটাই, চীনের বিরুদ্ধে এ অঞ্চলের দেশগুলোকে দাঁড় করানো।
চীনা নেতারা এটা যে বোঝেন না তেমনটিও নয়। ফলে আজ যখন গোয়ায় নরেন্দ্র মোদি ও শি জিনপিং হাত ধরাধরি করে এক টেবিলে বসতে যাচ্ছেন, তখন এ ‘দ্বন্দ্বের’ খবরটি তারা অস্বীকার করবেন কীভাবে? পাঠকদের এখানে আরও জানিয়ে রাখি, ভারত ও চীনের মধ্যকার দ্বন্দ্ব ও প্রভাব বলয় বিস্তারের প্রতিযোগিতা সুদূর চীন সাগরেও সম্প্রসারিত হয়েছে। এরই মধ্যে চীন সাগরের কর্তৃত্ব নিয়ে একদিকে চীনের সঙ্গে ফিলিপাইন, অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও ‘দ্বন্দ্বে’ জড়িয়ে গেছে চীন। ভারত এ দ্বন্দ্বে যুক্তরাষ্ট্রের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারত এ অঞ্চলে ভিয়েতনাম নিয়ন্ত্রিত এলাকায় গভীর সমুদ্রে তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানে ব্যস্ত। অতি সম্প্রতি চারটি ভারতীয় যুদ্ধ জাহাজ এ অঞ্চলে মোতায়েন করা হয়েছিল। দক্ষিণ চীন সাগরে রয়েছে বিশাল জ্বালানি সম্পদ (১১ বিলিয়ন ব্যারেল তেল, ১৯০ ট্রিলিয়ন কিউবিক ফিট গ্যাস)। চীন এ সম্পদের একক ভাগিদার হতে চায়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের তাতে আপত্তি রয়েছে। এক্ষেত্রে চীন ভারতের সহযোগিতা প্রত্যাশা করলেও, তা চীন পায়নি। যুক্তরাষ্ট্র দাবি করছে, তাদের সাপ্লাই রুটের জন্য দক্ষিণ চীন সাগরের সামুদ্রিক পথ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গুয়াম, দক্ষিণ কোরিয়া, ফিলিপাইনে মার্কিন মেরিন সেনাদের সহায়তার জন্য এ রুটটির নিরাপত্তা তারা চায়। কিন্তু পর্যবেক্ষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্য ভিন্নÑ সাপ্লাই রুটের নাম করে এ অঞ্চলে যুদ্ধ জাহাজ মোতায়েন করে যুক্তরাষ্ট্র মূলত চীনের ওপর এক ধরনের ‘চাপ’ প্রয়োগ করছে। যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্য যে সৎ নয়, তা বোঝা যায়, যখন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে এ অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।Foreign military financing কিংবা Development of Asian reassurance এর আওতায় যুক্তরাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন ও ভিয়েতনামকে সামরিক সহযোগিতা দিয়ে আসছে, যার অন্যতম একটি দিক হচ্ছে প্রশিক্ষণ দেয়া ও ‘ক্যাপাসিটি বিল্ডিং’। উদ্দেশ্যটা পরিষ্কার, চীনের বিরুদ্ধে ওই অঞ্চলের দেশগুলোকে সহযোগিতা করা। এখানে বলা ভালো, যুক্তরাষ্ট্র ভিয়েতনামের ওপর থেকে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিয়েছে। অন্যদিকে ভারতও ভিয়েতনামকে ৫০ কোটি ডলারের সামরিক সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়েছে। ভারত ভিয়েতনাম নিয়ন্ত্রিত এলাকায় তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কাজ চালিয়ে চীনবিরোধী কর্মকান্ডে অংশ নিচ্ছে। আজ তাই গোয়ায় যখন দুই দেশের নেতারা মিলিত হতে যাচ্ছেন, তখন একটা প্রশ্ন উঠবেই দুই দেশের মাঝে যে আস্থাহীনতার জন্ম হয়েছে, তা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে কিনা?
অন্যদিকে ব্রিকস-বিমসটেক শীর্ষ বৈঠক নিয়েও কথা আছে। ভারত এখন সার্কের পরিবর্তে বিমসটেক উপআঞ্চলিক সহযোগিতাকে গুরুত্ব দিচ্ছে। ভারত বিমসটেক সদস্য নয়, এমন দুইটি দেশকে (মালদ্বীপ ও আফগানিস্তান) এ যৌথ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। এর অর্থ পরিষ্কার, ভারত চায় সার্ক বিলুপ্ত হোক! এবং পাকিস্তান ‘একঘরে’ হয়ে যাক। এরই মধ্যে সার্ক শীর্ষ সম্মেলন (ইসলামাবাদ, ২০১৬) বাতিল ঘোষিত হয়েছে। ১৯৯৭ সালে ব্যাংককে বিমসটেকের জন্ম। তবে বিমসটেক একটি কার্যকরী উপআঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা হিসেবে গড়ে ওঠেনি। এরই মাঝে ১৪টি অগ্রাধিকার এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে এবং একেকটি দেশকে একেকটি দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ওই বিষয়ে কাজ করার জন্য। যেমন বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে, সন্ত্রাস দমনে ভারতকে, দারিদ্র্য দূরীকরণে নেপালকে, জ্বালানি ক্ষেত্রে মিয়ানমারকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এ দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্যিক ও বিনিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে। মিয়ানমারের বিশাল জ্বালানি রিজার্ভ কাজে লাগিয়ে এ দেশগুলো উন্নয়নের ক্ষেত্রে বড় অবদান রাখতে পারে। কিন্তু দ্বিপক্ষীয় সমস্যাও রয়েছে। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সম্পর্ক যতটুকু বৃদ্ধি পাওয়ার কথা ছিল, তা হয়নি।
উপরন্তু রোহিঙ্গা নিয়ে যে সমস্যা ছিল, মিয়ানমারে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হলেও  সেই সমস্যা রয়ে গেছে। ফলে ব্রিকস-বিমসটেক যৌথ শীর্ষ সম্মেলন কী ফল বয়ে আনবে, সে প্রশ্ন থাকলোই। ব্রিকসের জনসংখ্যাকে যদি একসাথ করা যায়, তাহলে দেখা যাবে, বিশ্বের জনসংখ্যার ৪২ ভাগ মানুষ এ পাঁচটি দেশে বাস করে। এ পাঁচটি দেশের মোট অর্থনীতির পরিমাণ ১৬ ট্রিলিয়ন ডলার। পৃথিবীর দুইটি বড় অর্থনীতি, চীন ও ভারত ব্রিকসে অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু ভারত ও চীন যদি নিজেদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব কাটিয়ে উঠতে না পারে, তাহলে ব্রিকস তার সাফল্য পাবে না। এক্ষেত্রে ব্রিকস-বিমসটেক শীর্ষ বৈঠকও কোনো ফল দেবে না। এর আগে ২০১৪ সালে ব্রাজিলে ব্রিকসের যে ষষ্ঠ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল, তাতে ব্রাজিল লাতিন আমেরিকার দেশ আর্জেন্টিনা, বলিভিয়া, চিলি, কলম্বিয়া, ইকুয়েডরকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। ব্রিকসের সঙ্গে ওই দেশের নেতারা শীর্ষ সম্মেলনে অংশও নিয়েছিলেন। ২০০১ সালে রাশিয়ার উদ্যোগে ব্রিকস সম্মেলনে ‘সাংহাই কোঅপারেটিভ অর্গানাইজেশন’ (এসসিও) এর সদস্যভুক্ত দেশগুলোকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তাতে কাজের কাজ হয়নি। ফটোসেশন হয়েছে মাত্র। এবারও গোয়ায় সে ধরনের একটি ফটোসেশনের সম্ভাবনা বেশি। নিজেদের মধ্যে আস্থা ও সহযোগিতার মনোভাব বৃদ্ধি করতে না পারলে কোনো সংস্থাই দাঁড়াতে পারবে না। ব্রিকসের ক্ষেত্রে এ কথাটা প্রযোজ্য। তবে গোয়ায় ১১টি দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানরা মিলিত হচ্ছেন এটা নিঃসন্দেহে একটা বড় সংবাদ। খুব বড় কিছু এতে অর্জিত হবে, তা মনে হয় না।
নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র
Daily Alokito Bangladesh
16.10.2016

0 comments:

Post a Comment