রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

নতুন ইতিহাস গড়ার আর মাত্র এক মাস বাকি!


গত ২৬ সেপ্টেম্বরের প্রথম ‘প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কের’ পর হিলারি ক্লিনটনের পক্ষে জনমত বেশি পড়ায় (সিএনএনের মতে শতকরা ৬২ ভাগ হিলারির পক্ষে) তিনি নির্বাচনী প্রচারণায় আরও এক ধাপ এগিয়ে গেলেন। প্রথম নির্বাচনী বিতর্কের ব্যাপারে সর্বত্র আমি এক ধরনের উৎসাহ লক্ষ্য করেছি। এখানে খুব কম বাংলাদেশীই রয়েছেন, যারা এই ‘বিতর্ক’ দেখেননি। প্রশ্ন হচ্ছে, এই ‘বিতর্ক’ এবং এর ফলাফল নির্বাচনে আদৌ প্রভাব ফেলবে কি-না? ১৯৬০ সাল থেকেই এ ধরনের প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। ১৯৬০ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত সব প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্ক নিয়ে গবেষণা করেছেন দু’জন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী- রবার্ট এরিকসন এবং ক্রিস্টোফার ভাইজেন। তাদের মূল্যায়ন হচ্ছে, এ ধরনের বিতর্কের মধ্য দিয়ে জনমত প্রভাবিত হয়। জনমতের কারণে ১৯৭০ সালে ফোর্ড হেরে গিয়েছিলেন। তিনি ভুল তথ্য পরিবেশন করেছিলেন। আজ ডোনাল্ড ট্রাম্পের অবস্থা অনেকটা তেমনি। প্রথম বিতর্কে হিলারি যতটা স্বাভাবিক ও হাস্যোজ্জ্বল ছিলেন, ট্রাম্প ছিলেন ঠিক তার উল্টো। এই বিতর্ক হিলারিকে এগিয়ে রাখল।

১৭৭৬ সালের স্বাধীনতার পর এখন পর্যন্ত যে রাজনৈতিক ইতিহাস, অর্থাৎ ২৪০ বছরের ইতিহাস, তাতে কোনো নারী প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি। এই প্রথম একজন নারী এ পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে একটি ইতিহাস সৃষ্টি করলেন। তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে সেটা হবে আরেক ইতিহাস। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের নারী আন্দোলন তথা নারীদের অধিকারের ক্ষেত্রে এটা হবে একটি মাইলফলক। পাঠকদের জানিয়ে রাখি, যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর বড় অর্থনীতি ও বড় গণতন্ত্রের দেশ হলেও এখানে নারীদের ভোটের অধিকারের বয়স মাত্র ৯৬ বছর। দীর্ঘদিন এখানে নারীদের ভোটের অধিকার দেয়া হয়নি। এ নিয়ে নারী আন্দোলনের ইতিহাসও বিভিন্ন গ্রন্থে পাওয়া যায়। নিঃসন্দেহে হিলারি ক্লিনটনের মনোনয়ন পাওয়া এখানকার নারী আন্দোলনকে আরও উজ্জীবিত করবে। এখানে বলা ভালো, যুক্তরাষ্ট্রের মতো কনজারভেটিভ সোসাইটিতে নারী প্রতিনিধিত্ব সীমিত। ২০১৫ সালের পরিসংখ্যান বলে কংগ্রেসে ৫৩৫টি আসনে (সিনেট ১০০, প্রতিনিধি পরিষদ ৪৩৫) মাত্র ১০৭ জন নারী আইনপ্রণেতা রয়েছেন (ডেমোক্রেট ৭৬, রিপাবলিকান ২৮)। সিনেটে নারী প্রতিনিধি রয়েছেন ২০ জন (১০০ জনের মধ্যে অর্থাৎ শতকরা ২০ ভাগ), আর প্রতিনিধি পরিষদে রয়েছেন মাত্র ৮৪ জন (শতকরা ১৯ দশমিক ৩ ভাগ)। সুতরাং এই সীমিত প্রতিনিধিত্বের মধ্য দিয়ে নারীর পূর্ণ অধিকার রক্ষিত হয়েছে, এটি বলা যাবে না। হিলারি ক্লিনটনের এই মনোনয়ন যুক্তরাষ্ট্রের নারী সমাজের জন্য বড় ধরনের একটি অগ্রগতি। ১৮৪৮ সালে সেনেকা ফলস কনভেনশনে প্রথমবারের মতো নারীদের ভোটাধিকারের দাবি জানানো হয়েছিল। আর এই কনভেনশনের ১৬৮ বছর পর যুক্তরাষ্ট্র এবার একজন নারী প্রার্থী পেল, যিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

প্রায় ১০ কোটি মানুষ এই প্রথমবারের মতো টিভি পর্দায় হিলারি আর ট্রাম্পকে বিতর্কে অংশ নিতে দেখল। নিউইয়র্কে বসে আমি এ বিতর্ক দেখেছি। কিন্তু একজন পর্যবেক্ষক হিসেবে আমার মনে হয়েছে, এ মুহূর্তে বিশ্বের এক নম্বর শক্তিধর দেশের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে যেসব বিষয় নিয়ে দু’জনের আলোচনা করা উচিত ছিল, তা তারা করেননি। এমনকি উপস্থাপকও এ ধরনের তেমন কোনো প্রশ্ন করেননি। যিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন, তার কাছ থেকে এ ধরনের ‘গুরুত্বপূর্ণ’ বিষয়ের একটা ব্যাখ্যা আশা করেছিল এখানকার সাধারণ মানুষ। তারা তা পায়নি। যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে আফগান যুদ্ধের ১৫ বছর পার করেছে। ২ হাজার ২০০ মার্কিন সেনা এই যুদ্ধে মারা গেছেন। আফগানিস্তানের ১০ ভাগ এলাকা এখন তালেবানদের দখলে এবং আরও ২০ ভাগ এলাকা তারা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে। এ প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে কী ভাবছে, এ ব্যাপারে হিলারি ও ট্রাম্পের কোনো বক্তব্য ছিল না। এমনকি ইরাকের বিভক্তি কীভাবে রোধ করা যায়, সে ব্যাপারেও কোনো কথা বলেননি দুই প্রার্থী। দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে উত্তেজনা এখন তুঙ্গে। চীন সেখানে তার শক্তি বৃদ্ধি করছে। এ ব্যাপারেও কোনো সুস্পষ্ট বক্তব্য ছিল না হিলারি ও ট্রাম্পের। বিতর্কে আলেপ্পো (সিরিয়া), যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক মারণাস্ত্রের আধুনিকায়ন, প্রায় ২৫ লাখ মার্কিন সেনার- যারা অবসরে গেছেন- ব্যাপারেও কোনো পরিকল্পনার কথা শোনা যায়নি। প্রথম বিতর্কের পরও ট্রাম্প তার হিলারি-বিদ্বেষী মনোভাব অব্যাহত রেখেছেন। ট্রাম্প অতিমাত্রায় দক্ষিণপন্থী, যুদ্ধাংদেহী, তিনি প্রয়োজনে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধও শুরু করে দিতে পারেন। তিনি অতিমাত্রায় রাশিয়াপন্থী। রাশিয়ায় তার বিশাল বিনিয়োগ আছে। পুতিনকে তিনি ওবামার চেয়েও যোগ্য নেতা মনে করেন। ফলে ট্রাম্পের অতি ‘রাশিয়াপ্রীতি’ যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থকে আঘাত করতে পারে। ট্রাম্প মূলত মুনাফা অর্জনের বিষয়টিই বেশি বোঝেন। তার কাছে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি, মধ্যবিত্তের সামাজিক কাঠামোর মানোন্নয়নের ব্যাপারে কোনো কমিটমেন্ট নেই। সবচেয়ে বড় কথা, তিনি মুসলমান ও মেক্সিকান বিদ্বেষী। যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণ করার কথাও বলেছেন তিনি। তিনি সেনাবাহিনীর ‘গৌরবকে’ আঘাত করেছেন এমন অভিযোগও উঠেছে ডেমোক্রেট শিবিরের পক্ষ থেকে। হিলারি যেখানে সামাজিক ক্ষেত্রে উন্নয়ন, বেতন বৃদ্ধি, সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার অঙ্গীকার করেছেন, সেখানে ট্রাম্প গুরুত্ব দিয়েছেন অভিবাসন রোধ করা ও চাকরির সংখ্যা বাড়ানো ইত্যাদির ওপর।

৮ নভেম্বর নির্বাচন। দুই প্রার্থীই প্রথম বিতর্কের পর প্রচারণায় ব্যাপকভাবে অংশ নিচ্ছেন। হিলারি ক্লিনটনের বক্তব্য, অভিবাসীদের পক্ষে কথা বলা, মধ্যবিত্তকে আকৃষ্ট করা, স্প্যানিশ ভাষায় কথা বলা, টিম কেইনকে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে মনোনয়ন দেয়া- সব মিলিয়ে তার অবস্থান এখন শক্তিশালী বলেই মনে হয়। অন্যদিকে ট্রাম্পের কোনো বক্তব্যই সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করতে পারছে না। তিনি অভিজ্ঞ রাজনীতিকও নন। ওয়াশিংটন ডিসির রিপাবলিকান শিবিরেও তিনি খুব একটা পরিচিত ছিলেন না। ৭০ বছর বয়সী ট্রাম্প বিপুল অর্থবিত্তের (ব্যক্তিগত সম্পদের পরিমাণ ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার) মালিক হলেও তিনি কেবল ১৯৮৭ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত রিপাবলিকান পার্টির রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। ২০০০ সালে তিনি একবার রিফর্ম পার্টির হয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চেয়েছিলেন। তিনি অতীতে কখনও কোনো ‘রাজনৈতিক পদ’ গ্রহণ করেননি। টিভি উপস্থাপকও ছিলেন (রিয়েলটি শো, এবিসি)। অন্যদিকে হিলারি ক্লিনটনের রাজনৈতিক জীবন বেশ বর্ণাঢ্য। তরুণ আইনজীবী হয়ে তিনি রাজনীতির সম্পর্কে আসেন। কর্পোরেট আইনজীবী না হয়ে তিনি শিশু অধিকার, মাতৃ অধিকার নিয়ে তার কর্মময় জীবন শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে ফার্স্টলেডি, নিউইয়র্কের সিনেটর এবং সর্বশেষ সেক্রেটারি অব স্টেট বা পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তুলনামূলক বিচারে রাজনীতি, আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক, বৈদেশিক নীতির প্রশ্নে তার স্পষ্ট ধারণা রয়েছে। এবং তিনি অভিজ্ঞ। পররাষ্ট্র তথা আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কোনো ধারণাই নেই। ন্যাটো, আইএস ও ব্রেক্সিট প্রশ্নে তিনি যেসব মন্তব্য করেছেন, তাতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে তার অজ্ঞতাই প্রকাশ পেয়েছে। নাফটা ও টিপিপি চুক্তির ব্যাপারেও তার অবস্থান হিলারির বিপরীতে। ট্রাম্প মনে করেন, নাফটা ও টিপিপি চুক্তির কারণে যুক্তরাষ্ট্রে বেকারত্ব বেড়েছে। অথচ হিলারি মনে করেন, এ দুটো চুক্তির কারণে মার্কিন স্বার্থ রক্ষিত হয়েছে বেশি। ট্রাম্প মেক্সিকো-যুক্তরাষ্ট্র সীমান্তে উঁচু দেয়াল নির্মাণ করে অবৈধ অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে চান। অন্যদিকে হিলারি মনে করন, মেক্সিকানরা মার্কিন অর্থনীতিতে অবদান রেখেছে। চীনের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়েও প্রশ্ন আছে ট্রাম্পের। ডেমোক্রেটরা গত আট বছরে (ওবামা প্রশাসন) যুক্তরাষ্ট্রকে চীনের হাতে তুলে দিয়েছে- এই অভিযোগ ট্রাম্পের। অন্যদিকে হিলারি মনে করেন, চীনের সঙ্গে ‘সহযোগিতামূলক সম্পর্কই’ নয়া বিশ্ব ব্যবস্থা গড়ার অন্যতম শর্ত। ওবামার শাসনামলে আইএসের জন্ম হয়েছে এবং এজন্য ডেমোক্রেটরাই দায়ী, ট্রাম্পের এ ধরনের অভিযোগ স্বীকার করেন না হিলারি ক্লিনটন। হিলারি বলেছেন, তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকার সময় ১২২টি দেশ সফর করেছেন এবং প্রায় ১০ লাখ মাইল ভ্রমণ করেছেন শুধু যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের জন্য। অথচ ট্রাম্প তার ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্যই নির্দিষ্ট কয়েকটি দেশ সফর করেছেন। তবে ট্রাম্পের একটা প্লাস পয়েন্ট হচ্ছে তিনি সোজাসাপ্টা কথা বলেন। আক্রমণ করে কথা বলেন, যা হিলারি করেন না কখনও। তিনি তার বক্তৃতায় ট্রাম্পকে আক্রমণ করেন সত্য; কিন্তু তা অনেক মার্জিত ভাষায়। তাই একটি প্রাক-গবেষণায় (সিন কোলারেসি পরিচালিত) যখন হিলারিকে সর্বোচ্চ নির্বাচকমণ্ডলীর ভোটে বিজয়ী হবেন বলে মন্তব্য করা হয়, আমি তাতে অবাক হই না। ওই গবেষণায় দেখানো হয়েছে, ৫৩৮টি নির্বাচকমণ্ডলীর ভোটে হিলারি পাবেন ৩৪৭ ভোট, আর ট্রাম্প পাবেন ১৯১ ভোট। নির্বাচকমণ্ডলী গঠিত হয় কংগ্রেস সদস্যদের নিয়ে। অর্থাৎ হাউস অব কংগ্রেসের ৪৩৫ আর সিনেটের ১০০ সিট নিয়েই ৫৩৮টি নির্বাচকমণ্ডলী ভোট। ৫০টি রাজ্যের নির্বাচকমণ্ডলীর ভোটও আলাদা আলাদা। যেমন ক্যালিফোর্নিয়ার নির্বাচকমণ্ডলীর ভোট ৫৫, আর নিউইয়র্কের ২৯। জনগণ ভোট দেয় বটে, কিন্তু তারা প্রেসিডেন্টকে নির্বাচন করে না। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন নির্বাচকমণ্ডলীর ভোটে। আর মজার ব্যাপার হচ্ছে, যে রাজ্যে যে প্রার্থী বিজয়ী হবেন, তিনি নির্বাচকমণ্ডলীর প্রতিটি ভোট পেয়েছেন বলে ধরে নেয়া হয়।

নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই বিতর্ক ঘিরে ধরেছে দুই প্রার্থীকে। হিলারি ক্লিনটনের ই-মেইল বিতর্ক তাকে যথেষ্ট ভোগাচ্ছে। প্রথম বিতর্কেও তিনি এই প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছিলেন। তিনি যখন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন, তখন তিনি বিদেশ মন্ত্রণালয়ের জন্য নির্ধারিত ই-মেইল অ্যাকাউন্ট ব্যবহার না করে ব্যক্তিগত ই-মেইল ব্যবহার করে বিদেশে যোগাযোগ করেছেন। ওইসব ই-মেইলের কিছু অংশ ফাঁস হয়েছে। ডেমোক্রেটদের দাবি, ট্রাম্পের প্ররোচনায় রাশিয়ার হ্যাকাররা এ ই-মেইল ফাঁস করেছে। অন্যদিকে ট্রাম্প দাবি করেছেন, হিলারি ক্লিনটনের বাকি সব ই-মেইল প্রকাশ করা হোক। এটা নিঃসন্দেহে হিলারি ক্লিনটনের জন্য একটি মাইনাস পয়েন্ট। ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেও বিপদে আছেন। ডেমোক্রেট শিবির তার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে ট্যাক্স ফাঁকি দেয়ার। তার স্ত্রী (তৃতীয়) মেলানিয়ার মধ্য নব্বইয়ে তোলা নগ্ন ছবি (তিনি ফটো মডেল ছিলেন) প্রকাশিত হয়েছে, যা ট্রাম্পকে বিব্রত করেছে। সব মিলিয়ে এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে যত বিতর্ক, অতীতে এমনটা দেখা যায়নি। তবে চূড়ান্ত বিচারে পাল্লা কোন দিকে হেলে পড়ে, এ মুহূর্তে বলা খুব কঠিন। ১১টি রাজ্য (কলোরাডো, ফ্লোরিডা, আইওয়া, মিসিগান, নেভাদা, নিউ হ্যাম্পশায়ার, নর্থ ক্যারোলিনা, ওহিও, পেনসেলভেনিয়া, ভার্জিনিয়া ও উইসকনসিন) সম্পর্কে বলা হচ্ছে- এগুলো ‘ব্যাটেলগ্রাউন্ড স্টেটস’। এ রাজ্যগুলো বিগত দুটো নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। এসব রাজ্যের ভোটাররা এখনও দ্বিধাবিভক্ত। তাদের সুনির্দিষ্ট সমর্থন কোনো প্রার্থীর পক্ষেই নেই। কখনও তারা ডেমোক্রেটদের সমর্থন করে, কখনও রিপাবলিকানদের। এখন পর্যন্ত জনমত জরিপে হিলারি ক্লিনটন এগিয়ে থাকলেও ট্রাম্প ব্যবধান অনেকটা কমিয়ে এনেছেন। ফলে সুনির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না কে হতে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট।

দুই প্রার্থীকে আরও দুটো ‘প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কে’ অংশ নিতে হবে। পরবর্তী বিতর্ক ৯ অক্টোবর। এ সময়সীমার মধ্যে ট্রাম্প তার রেটিং বাড়াতে পারবেন কি-না, পারলে কতটুকু পারবেন, এ নিয়ে প্রশ্ন আছে। অনেক রিপাবলিকান সমর্থক ইতিমধ্যে হিলারিকে সমর্থনের কথা ঘোষণা করেছেন। প্রথম বিতর্কের পর ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তিনি নিষেধাজ্ঞা অবজ্ঞা করে কিউবার সঙ্গে অবৈধ ব্যবসা করেছেন। প্রথম বিতর্ক শেষ হওয়ার এক সপ্তাহও পার হয়নি নতুন একটি জনমত জরিপ প্রকাশ করেছে মিডিয়া (টাইমস-পিকেউন/লুসিড প্রেসিডেন্সিয়াল ট্রাকিং পোল)। এতে হিলারির ৫ পয়েন্টে এগিয়ে থাকার কথা বলা হয়েছে। এরই মধ্যে নতুন বিতর্ক উঠেছে- ট্রাম্প নাকি এক সময় ‘পর্নো স্টার’ ছিলেন! সব মিলিয়ে নানা বিতর্ক, নানা প্রশ্নে আটকে আছে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী প্রচারণা। মিডিয়াগুলোও এখন অনেকটা দ্বিধাবিভক্ত। নিউইয়র্ক টাইমস সমর্থন করছে হিলারিকে।

তারপরও কথা থেকে যায়। প্রথম প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কে ‘জয়’ পাওয়া হিলারি ক্লিনটন কি তার এই বিজয়ের ধারা ধরে রাখতে পারবেন? ৮ নভেম্বর নির্বাচন। বাকি আছে মাত্র এক মাস। সময়টা খুব বেশি নয়। দ্বিতীয় প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কে হিলারি যদি ‘বিজয়ী’ হন, তাহলে তিনিই হবেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট- অনেক পর্যবেক্ষকই এটা নিশ্চিত করেছেন।

নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র
Daily Jugantor
08.10.2016

0 comments:

Post a Comment