রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে কী পেল বাংলাদেশ


বহুল প্রত্যাশিত ভারত সফর শেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সোমবার ঢাকায় ফিরে এসেছেন। এই সফরে ৩৪টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এই সফর থেকে কী পেল বাংলাদেশ? অনেক দিন থেকেই প্রধানমন্ত্রীর এই সফর আলোচিত ও সমালোচিত। এই সফর নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশা ছিল অনেক। তবে অনেক ক্ষেত্রেই এই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। বাংলাদেশের প্রত্যাশা ছিল তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষরিত না হলেও একটা সমঝোতা অন্তত হবে। অন্যদিকে ভারতের প্রত্যাশা ছিল একটি প্রতিরক্ষা চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রত্যাশা পুরোপুরি পূরণ না হলেও কিছুটা ‘অগ্রগতি’ হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নয়াদিল্লি উপস্থিতি, রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের নৈশভোজে অংশগ্রহণ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক একটি ভালো দিক। আবার মমতার বিকল্প প্রস্তাব অন্তত একটি মেসেজ দিচ্ছে যে চলতি বছরের কোনো একসময় তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হচ্ছে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চাইছেন একটি আর্থিক প্যাকেজ, যাতে তিনি পশ্চিম বাংলায় ছোট ছোট জলাধার নির্মাণ করে পানি ধরে রাখবেন এবং শুষ্ক মৌসুমে সেই পানি সেচকাজে ব্যবহার করবেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মমতাকে এ ব্যাপারে কিছুটা আশ্বস্ত করেছেন বলেই মনে হয়। তিস্তা চুক্তি বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ, ঠিক তেমনি ভারতের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা সমঝোতাটি ভারতের জন্য ছিল বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশ বেশি মাত্রায় চীনের প্রতি ঝুঁকে গেছে, এমন একটা মনোভাব ভারতীয় নীতিনির্ধারকদের মধ্যে কাজ করছিল। বিশেষ করে বাংলাদেশের নৌবাহিনীতে দুটি চীনা সাবমেরিন সংযোজনের পর ভারতীয় পক্ষ হঠাৎ করেই বাংলাদেশের সঙ্গে একটি সামরিক চুক্তি (?) করতে তত্পর হয়ে ওঠে। সাবেক দেশরক্ষামন্ত্রী মনোহর পরিকরের ঢাকা সফর ও ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়াতের ঢাকা সফর এ আলোকেই রচিত হয়েছিল। জেনারেল রাওয়াত ২৫ বছর মেয়াদি একটি চুক্তি করতে চেয়েছিলেন, এমন সংবাদ ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশ এমনটি চায়নি। বাংলাদেশ চেয়েছিল একটি পাঁচ বছর মেয়াদি সমঝোতা। এখন প্রতিরক্ষা সহযোগিতার ক্ষেত্রে সমঝোতা হয়েছে। তবে কত বছর মেয়াদি তা স্পষ্ট নয়। যদিও এটা বলা হয় অনেক আগে থেকেই দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে এক ধরনের সহযোগিতা ছিল। এখন তা একটি আইনি রূপ পেল মাত্র। এর বিস্তারিত জানা না গেলেও যত দূর জানা গেছে, বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর সদস্যরা ভারতীয় স্টাফ কলেজে প্রশিক্ষণ নেবেন। ভারতীয় প্রশিক্ষকরা মিরপুর সেনাবাহিনীর স্টাফ কলেজে আসবেন। প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে অংশ নেবেন। এটা নিয়ে চুক্তি হলো এখন। তবে যত দূর জানা যায়, বাংলাদেশ যৌথ মহড়া ও সমুদ্রে যৌথ টহলে রাজি হয়নি। এখন ভবিষ্যৎই বলতে পারবে এই প্রতিরক্ষা সহযোগিতা আদৌ কোনো বিতর্কের জন্ম দেয় কি না? তবে তিস্তার ব্যাপারে কোনো সমঝোতা না হওয়ায় অন্য সব চুক্তি ও সমঝোতা গুরুত্বহীন হয়ে পড়বে।
তিস্তা একটি আন্তর্জাতিক নদী। এ ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ এককভাবে পানি প্রত্যাহার করতে পারে না। আন্তর্জাতিক নদীর পানি ব্যবহারসংক্রান্ত ১৯৬৬ সালের আন্তর্জাতিক আইন সমিতির হেলসিংকি নীতিমালার ৪ ও ৫ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রতিটি অববাহিকাভুক্ত রাষ্ট্র অভিন্ন নদীগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই অন্য রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রয়োজনকে বিবেচনায় নেবে। এখন পশ্চিমবঙ্গের পানি প্রত্যাহার বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রয়োজনকে বিবেচনায় নেয়নি। হেলসিংকি নীতিমালার ১৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রতিটি তীরবর্তী রাষ্ট্র তার সীমানায় আন্তর্জাতিক পানিসম্পদ ব্যবহারের অধিকার ভোগ করবে যুক্তি ও ন্যায়ের ভিত্তিতে। কিন্তু এই ‘যুক্তি ও ন্যায়ের ভিত্তি’টি উপেক্ষিত থাকে যখন পশ্চিমবঙ্গ বাংলাদেশকে তার ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে। ১৯৯২ সালের ডাবলিগ নীতিমালার ২ নং নীতিতে বলা হয়েছে, পানি উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা অবশ্যই সবার অংশগ্রহণমূলক হতে হবে। তিস্তার পানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে এটা হয়নি। ১৯৯৭ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ‘জলপ্রবাহ কনভেনশন’ নামে একটি নীতিমালা গ্রহণ করে। এই নীতিমালার ৬ নং অনুচ্ছেদে পানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে ‘যুক্তি ও ন্যায়পরায়ণতা’র কথা বলা হয়েছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের ব্যবহার, অর্থাৎ এককভাবে তিস্তার পানির ব্যবহার এই ‘যুক্তি ও ন্যায়পরায়ণতা’র ধারণাকে সমর্থন করে না। আমরা আরো আন্তর্জাতিক আইনের ব্যাখ্যা দিতে পারব, যেখানে বাংলাদেশের অধিকারকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। বিশেষ করে পরিবেশসংক্রান্ত জীববৈচিত্র্য কনভেনশনের ১৪ নং অনুচ্ছেদ, জলাভূমিবিষয়ক রামসার কনভেনশনের ৫ নং অনুচ্ছেদে প্রতিটি ক্ষেত্রে পরিবেশের প্রভাব এবং উদ্ভিদ ও প্রাণী সংরক্ষণের যে কথা বলা হয়েছে, তা রক্ষিত হচ্ছে না। এখানে সমস্যাটা ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের। ভারতের ফেডারেল কাঠামোয় রাজ্য কিছু সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে। কিন্তু কোনো রাজ্য (এ ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ) এমন কিছু করতে পারে না, যা আন্তর্জাতিক আইনের বরখেলাপ ও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে। সমস্যাটা ভারতের। পশ্চিমবঙ্গকে আশ্বস্ত করার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকারের। আমরা আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ীই আমাদের পানির হিসসা নিশ্চিত করতে চাই।
তিস্তায় পানির প্রবাহ মারাত্মকভাবে কমে যাওয়ায় এটি এখন আমাদের নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। আমাদের নীতিনির্ধারকরা যদি বিষয়টিকে হালকাভাবে দেখেন, তাহলে এ দেশ, বিশেষ করে উত্তরবঙ্গ একটি বড় ধরনের সংকটে পড়বে। খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে থাকবে। এমনকি রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এতে বাড়বে। তিস্তায় পানি প্রাপ্তি আমাদের ন্যায্য অধিকার। আন্তর্জাতিক আইন আমাদের পক্ষে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের দায়িত্ব আমাদের অধিকার নিশ্চিত করা। এ ক্ষেত্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তি বা সমর্থন—এটা আমাদের বিষয় নয়। আমাদের নেতৃত্ব বিষয়টিকে হালকাভাবে নেননি। আমাদের অধিকার, যা আন্তর্জাতিক আইন স্বীকৃত, তা নিশ্চিত করবে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। এখানে বলা ভালো, সিকিম হয়ে ভারতের দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ি হয়ে পশ্চিমবঙ্গের ডুয়ারের সমভূমি দিয়ে চিলাহাটি থেকে চার-পাঁচ কিলোমিটার পূর্বে বাংলাদেশের নীলফামারী জেলার উত্তর খড়িবাড়ির কাছে ডিমলা উপজেলার ছাতনাই দিয়ে প্রবেশ করেছে তিস্তা নদী। ছাতনাই থেকে এ নদী নীলফামারীর ডিমলা, জলঢাকা, লালমনিরহাট সদর, পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ, রংপুরের কাউনিয়া, পীরগাছা, কুড়িগ্রামের রাজারহাট, উলিপুর হয়ে চিলমারীতে গিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদে মিশেছে। ডিমলা থেকে চিলমারী এ নদীর বাংলাদেশ অংশের মোট ক্যাচমেন্ট এরিয়া প্রায় এক হাজার ৭১৯ বর্গকিলোমিটার। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ নদী কমিশন গঠনের পর তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। ১৯৮৩ সালের জুলাই মাসে দুই দেশের মন্ত্রিপর্যায়ের এক বৈঠকে তিস্তার পানিবণ্টনে ৩৬ শতাংশ বাংলাদেশ, ৩৯ শতাংশ ভারত ও ২৫ শতাংশ নদীর জন্য সংরক্ষিত রাখার বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল। কিন্তু কোনো চুক্তি হয়নি। পরে ২০০৭ সালের ২৫, ২৬, ২৭ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত বৈঠকে বাংলাদেশ তিস্তার পানির ৮০ শতাংশ দুই দেশের মধ্যে বণ্টন করে বাকি ২০ শতাংশ নদীর জন্য রেখে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল। ভারত সে প্রস্তাবে রাজি হয়নি। এরপর যুক্ত হয়েছিল মমতার আপত্তি। বাংলাদেশের কোনো প্রস্তাবের ব্যাপারেই অতীতে মমতার সম্মতি পাওয়া যায়নি। এখানে আরো একটি বিষয় বিবেচনায় নেওয়া প্রয়োজন। তিস্তার পানিবণ্টনে সিকিমকে জড়িত করারও প্রয়োজনীয়তা পড়েছে। কেননা সিকিম নিজে উজানে পানি প্রত্যাহার করে বাঁধ দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। ফলে তিস্তায় পানির প্রবাহ কমে যাচ্ছে দিন দিন। পশ্চিমবঙ্গের উত্তরবঙ্গে কৃষকদের কাছে তিস্তার পানির চাহিদা বেশি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই পানি চাইবেন, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু আন্তর্জাতিক নদীর পানি তিনি এককভাবে ব্যবহার করতে পারেন না। নয়াদিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে তিনি এবার একটি ‘নতুন ফর্মুলা’ দিলেন। তিনি তোর্সা ও জলঢাকাসহ চারটি নদীর নাম বললেন, যেখান থেকে পানি নিয়ে বাংলাদেশের চাহিদা পূরণ করা যায়। বাংলাদেশে তোর্সা ও জলঢাকা দুধকুমার ও ধরলা নামে পরিচিত। মমতার এই বক্তব্য তো মূলত ভারতের আন্ত নদীসংযোগ প্রকল্পেরই নামান্তর। এর আগে ঢাকায় এসে মমতা অভিযোগ করেছিলেন, বাংলাদেশ আত্রাই নদী থেকে পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। এই হচ্ছে মমতা। এখন নয়াদিল্লিতে মোদি বললেন, মমতার সম্মতি নিয়েই তিস্তা চুক্তি হবে। মমতার বক্তব্যের পর মোদির আশ্বাস শুধু আশ্বাসের মধ্যে থেকে যায় কি না, সে আশঙ্কা থাকলই। সীমান্ত হত্যা বন্ধের ব্যাপারে যৌথ ঘোষণাপত্রে কোনো উল্লেখ নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রেস ব্রিফিংয়ে পাটজাত পণ্যের ওপর ১৩ শতাংশ হারে ভারত যে অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক ও ৩০ শতাংশ হারে তৈরি পোশাকের ওপর কাউন্টার ভেইলিং শুল্ক আরোপ করেছে, তা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু ভারতের অঙ্গীকার তাতে পাওয়া যায়নি। ভারত যে সাড়ে চার বিলিয়ন ডলারের ঋণের প্রস্তাব করেছে, তা নিয়েও প্রশ্ন আছে। ২০১০ সালে ভারত যে এক বিলিয়ন ডলার ঋণের প্রস্তাব করেছিল, তার প্রায় ৫০ শতাংশ এখনো অব্যবহৃত রয়ে গেছে। ২০১৬ সালে আরো দুই বিলিয়ন ডলার ঋণের প্রস্তাব দিয়েছিল ভারত। ওই অর্থের ব্যবহার এখনো শুরুই হয়নি। এখন এলো প্রায় পাঁচ বিলিয়ন ডলারের প্রস্তাব। এতে যেসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হওয়ার কথা, কিংবা কবে নাগাদ তা ছাড় দেওয়া হবে, তাতে রয়ে গেছে অস্পষ্টতা। উপরন্তু এসব ঋণ প্রকল্পে প্রকারান্তরে লাভবান হবে ভারতই। প্রতিরক্ষা খাতে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের প্রস্তাব আছে। এর একটি ভালো দিক হচ্ছে বাংলাদেশ তার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এই অর্থ দিয়ে সামরিক সরঞ্জাম কিনবে। প্রতিরক্ষা সহযোগিতার ক্ষেত্রে দুই দেশের সামরিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে যে চুক্তি হয়েছে, তা এখন একটি আইনি কাঠামোর মধ্যে গেল। অনেক আগে থেকেই সেনাসদস্যরা এসব ভারতীয় প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণ তথা শিক্ষালাভ করেন। পরমাণু শক্তি কেন্দ্র নির্মাণে ও প্রশিক্ষণে যে সহযোগিতা কিংবা সাইবার নিরাপত্তা চুক্তি, বিচারপতিদের প্রশিক্ষণ ইত্যাদি নিঃসন্দেহে ভালো দিক। খুলনা-কলকাতা ট্রেন সার্ভিস, কিংবা ঢাকা-খুলনা-কলকাতা বাস সার্ভিসও ভালো দিক। সাধারণ মানুষ এ থেকে উপকৃত হবে। তবে ভিসা সহজীকরণের ক্ষেত্রে যদি কোনো ঘোষণা আসত, তা বাংলাদেশিদের জন্য সুসংবাদ বয়ে আনত। কিন্তু তা আসেনি। বাণিজ্য বৈষম্য কমিয়ে আনার ব্যাপারেও কোনো সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা নেই। গঙ্গা ব্যারাজ নির্মাণে ভারতের সহযোগিতার ব্যাপারে আমাদের প্রত্যাশা ছিল, তাও পূরণ হয়নি।
সব মিলিয়ে ‘ভালো-মন্দ’ নিয়েই প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর শেষ হয়েছে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এটাকে ভালো চোখে দেখছে না। খালেদা জিয়া এসব চুক্তিকে আখ্যায়িত করেছেন ‘দেশবিরোধী’ চুক্তি হিসেবে। আর রিজভীর ভাষায়, ‘প্রতিরক্ষা চুক্তির মাধ্যমে দেশের নিরাপত্তা দুর্বল করল সরকার। ’ এটা ঠিক, চুক্তি ও সমঝোতায় বাংলাদেশের প্রত্যাশা ১০০ ভাগ পূরণ হয়নি। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে ভারত বড় দেশ। ২.১ ট্রিলিয়ন ডলারের (বিশ্বে সপ্তম) অর্থনীতি ভারতের। ভারতের এই অর্থনীতি থেকে আমরা যতটুকু লাভবান হব, ততই আমাদের মঙ্গল। প্রধানমন্ত্রী চীনে গিয়েছিলেন। এবার ভারত গেলেন। চীনের প্রেসিডেন্ট ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। এতেই প্রমাণিত হয় বাংলাদেশের গুরুত্ব বাড়ছে। আমাদের সাফল্য এখানেই যে আমরা এই দুই এশীয় তথা উঠতি বিশ্বশক্তির সঙ্গে এক ধরনের ভারসাম্য রক্ষা করে আমাদের জাতীয় স্বার্থ আদায় করতে সচেষ্ট হচ্ছি। এটাই সঠিক নীতি। ভারত আমাদের প্রতিবেশী দেশ। ভারতকে যেমন আমরা অস্বীকার করতে পারব না, ঠিক তেমনি উন্নয়নের জন্য আমাদের চীনেরও প্রয়োজন রয়েছে।
Daily Kalerkontho
11.04.2017

0 comments:

Post a Comment