রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

কোরীয় উপদ্বীপে উত্তেজনা বাড়ছে




কোরীয় উপদ্বীপে নতুন করে উত্তেজনা বাড়ছে। এরই মধ্যে উত্তর কোরিয়া সমুদ্রে সাবমেরিন থেকে নিক্ষেপযোগ্য একাধিক স্বল্পপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রে পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র হামলারও হুমকি দিয়েছে উত্তর কোরিয়া। গেল বছর উত্তর কোরিয়া দু-দুবার ভূগর্ভে পারমাণবিক বোমার পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর আভাস অনুযায়ী ষষ্ঠ আরেকটি পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণের প্রস্তুতি নিচ্ছে উত্তর কোরিয়া। যদিও সর্বশেষ একটি প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে বলে দক্ষিণ কোরিয়া ও মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। কিন্তু উত্তর কোরিয়ার ব্যাপারে দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের উৎকণ্ঠা বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্র সেখানে বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়েছে। এমনকি মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স সেখানে ছুটে গেছেন। ১০ দিনের এশিয়া সফরে তিনি এখন এ অঞ্চল সফর করছেন। দক্ষিণ কোরিয়া সফরের সময় তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, ওবামার সময় উত্তর কোরিয়ার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের যে নীতি, তথা Strategic patience, অর্থাৎ ‘কৌশলগত ধৈর্যধারণ’, তা এখন পরিত্যক্ত। যুক্তরাষ্ট্রের সেনা কমান্ডাররা এখন উত্তর কোরিয়ার এই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছেন। বিবিসির সঙ্গে এক সাক্ষাৎফরে উত্তর কোরিয়ার সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী হান সং রিযল জানিয়েছেন, এই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা সাপ্তাহিক, মাসিক, এমনকি সারা বছর চলতে থাকবে। উত্তর কোরিয়া রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট কিম জং উনের দাদা কিম উল সুংয়ের ১০৫তম জন্মবর্ষ উপলক্ষে উত্তর কোরিয়া ব্যাপক সমরসজ্জা প্রদর্শন করে আসছে, যা বিদেশি গণমাধ্যমে প্রদর্শিত হয়েছে। এর অংশ হিসেবেই ষষ্ঠ পারমাণবিক পরীক্ষা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে উত্তর কোরিয়া! এটা তারা আগেই ঘোষণা দিয়েছিল। উত্তর কোরিয়ার এই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা ও যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক বোমা হামলার হুমকি এ অঞ্চলে নতুন করে উত্তেজনার জন্ম দিয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানে এক ধরনের নিরাপত্তা সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এর মধ্যেই ঘোষণা করেছে, তারা দক্ষিণ কোরিয়ায় মিসাইল প্রতিরক্ষাব্যবস্থা, যা THAAD নামে পরিচিত, তা মোতায়েন করবে। এ অঞ্চলে উত্তেজনা আদৌ কোনো বড় ধরনের সংঘর্ষের জন্ম দেবে কি না বলা মুশকিল। তবে উত্তর কোরিয়াকে কেন্দ্র করে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণে ছয় জাতি আলোচনা কার্যত ব্যর্থ। উত্তর কোরিয়াকে আলোচনার টেবিলে আনা যাচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্র এখন বাহ্যত তিন জাতি (যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া) আলোচনায় উৎসাহী।
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে ২০০৬ সালের অক্টোবরে উত্তর কোরিয়া কর্তৃক পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণের পর থেকেই উত্তর কোরিয়া আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আছে। পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণের মধ্য দিয়েই উত্তর কোরিয়া বিশ্বে অষ্টম পারমাণবিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়। এরপর থেকেই উত্তর কোরিয়ার ব্যাপারে এ অঞ্চলের, বিশেষ করে দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের আতঙ্ক বাড়তে থাকে। এরপর থেকেই আলোচনা শুরু হয় কিভাবে উত্তর কোরিয়াকে পরমাণমুক্ত করা সম্ভব। একপর্যায়ে চীনের উদ্যোগে ২০০৭ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি উত্তর কোরিয়া একটি চুক্তি স্বাক্ষরে রাজি হয়। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী উত্তর কোরিয়া অবিলম্বে তার ইয়ংবাইয়নের (Yongbyon) পারমাণবিক চুল্লিটি বন্ধ করে দেয়, যেখানে পশ্চিমা বিশ্বের ধারণা উত্তর কোরিয়া ছয় থেকে ১০টি পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে পারত। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী উত্তর কোরিয়া ৬০ দিনের মধ্যে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের তার পারমাণবিক চুল্লিগুলো পরিদর্শনেরও সুযোগ করে দেয়। বিনিময়ে উত্তর কোরিয়াকে ৫০ হাজার টন জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হয়। এরপর ২০০৭ সালের অক্টোবরে দুই কোরিয়ার মধ্যে একটি শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। দক্ষিণ কোরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট রোহ মু হিউম ২ অক্টোবর উত্তর কোরিয়া যান এবং সেখানে উত্তর কোরিয়ার প্রয়াত প্রেসিডেন্ট কিম জং ইলের সঙ্গে শীর্ষ বৈঠক করেন। এটা ছিল দুই কোরিয়ার রাষ্ট্রপ্রধানদের মধ্যে দ্বিতীয় শীর্ষ বৈঠক। এর আগে ২০০০ সালের ১২ জুন দুই কোরিয়ার রাষ্ট্রপ্রধানরা প্রথমবারের মতো একটি শীর্ষ বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন। কোরিয়া বিভক্তকারী অসামরিক গ্রাম পানমুনজমে সাবেক প্রেসিডেন্ট কিম দাই জং মিলিত হয়েছিলেন উত্তর কোরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট কিম জং ইলের সঙ্গে। এ অঞ্চলের গত ৫৩ বছরের রাজনীতিতে ওই ঘটনা ছিল একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। এর আগে আর দুই কোরিয়ার নেতারা কোনো শীর্ষ বৈঠকে মিলিত হননি। স্নায়ুযুদ্ধ-পরবর্তী বিশ্বব্যবস্থা ও দুই জার্মানির একত্রীকরণের (১৯৯০) পর রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের দৃষ্টি এখন কোরীয় উপদ্বীপের দিকে। সেই থেকে দুই কোরিয়ার পুনরেকত্রীকরণের সম্ভাবনাও দেখছেন অনেকে। অনেকেরই মনে থাকার কথা ২০০০ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট কিম দাই জংকে ‘দুই কোরিয়ার পুনরেকত্রীকরণের অব্যাহত প্রচেষ্টার’ জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল।
কোরিয়া একটি বিভক্ত সমাজ। দুই কোরিয়ায় দুই ধরনের সমাজব্যবস্থা চালু রয়েছে। উত্তর কোরিয়ায় সমাজতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা চালু রয়েছে। আর দক্ষিণ কোরিয়ায় রয়েছে পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থা। এক লাখ ২০ হাজার ৫৩৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনবিশিষ্ট উত্তর কোরিয়ার লোকসংখ্যা মাত্র দুই কোটি ২৫ লাখ। আর ৯৯ হাজার ২২২ বর্গকিলোমিটার আয়তনবিশিষ্ট দক্ষিণ কোরিয়ার লোকসংখ্যা চার কোটি ২৮ লাখ। একসময় যুক্ত কোরিয়া চীন ও জাপানের উপনিবেশ ছিল। ১৯০৪-০৫ সালে রাশিয়া ও জাপানের মধ্যকার যুদ্ধের পর কোরিয়া প্রকৃতপক্ষে জাপানের আশ্রিত রাজ্যে পরিণত হয়। ১৯১০ সালের ২৯ আগস্ট জাপান আনুষ্ঠানিকভাবে কোরিয়াকে সাম্রাজ্যভুক্ত করে। ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের পরাজয়ের পর মার্কিন ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সেনাবাহিনী কোরিয়ায় ঢুকে পড়ে ও জাপানি সৈন্যদের আত্মসমর্পণে বাধ্য করার জন্য কৌশলগত কারণে কোরিয়াকে দুই ভাগ করে। এক অংশে মার্কিন বাহিনী ও অন্য অংশে সোভিয়েত ইউনিয়নের বাহিনী অবস্থান নেয়। সোভিয়েত বাহিনীর উপস্থিতিতেই কোরিয়ার উত্তরাঞ্চলে (আজকের যে উত্তর কোরিয়া) একটি কমিউনিস্ট সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৪৬ সালে নিউ ন্যাশনাল পার্টির সঙ্গে নবগঠিত কোরিয়ান কমিউনিস্ট পার্টি একীভূত হয়ে কোরিয়ান ওয়ার্কার্স পার্টি গঠন করে। জাতিসংঘের আহ্বানে সেখানে নির্বাচনের আয়োজন করা হলেও দেখা গেল নির্বাচন শুধু দক্ষিণ কোরিয়াতেই অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৯৪৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর উত্তর কোরিয়া একটি আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে তার অস্তিত্বের কথা ঘোষণা করে। ১৯৫০ সালের ২৫ জুন উত্তর কোরিয়ার বাহিনী ৩৮তম সমান্তরাল রেখা অতিক্রম করে দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রবেশ করলে যুদ্ধ বেধে যায়। জাতিসংঘ এই যুদ্ধে দক্ষিণ কোরিয়াকে সমর্থন করার জন্য সব রাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানায়। জাতিসংঘ বাহিনী মাঞ্চুরিয়া সীমান্তে উপস্থিত হলে ১৯৫০ সালের ২৬ নভেম্বর চীন উত্তর কোরিয়ার পক্ষে যুদ্ধে জড়িয়ে যায় এবং চীনা সৈন্যরা দক্ষিণ কোরিয়ার অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ে। ১৯৫১ সালের এপ্রিলে জাতিসংঘ বাহিনী ৩৮তম সমান্তরাল রেখা পুনরুদ্ধার করে। ১৯৫১ সালের ২৩ জুন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেয়। কিন্তু যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব কার্যকর হয় দুই বছর পর ১৯৫৩ সালের ২৭ জুলাই। এরপর থেকে কার্যত উত্তর কোরিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়া দুটি রাষ্ট্র হিসেবে তাদের অস্তিত্ব বজায় রেখে আসছে। ১৯৫৩ সালে স্বাক্ষরিত একটি চুক্তিবলে দক্ষিণ কোরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী মোতায়েন থাকলেও উত্তর কোরিয়ায় কোনো চীনা সৈন্য নেই। উত্তর কোরিয়া চীনের সঙ্গে ১৯৬১ সালে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ ও সহযোগিতামূলক চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। গত ৭০ বছরে দক্ষিণ কোরিয়ায় একাধিক সরকার গঠিত হলেও উত্তর কোরিয়ায় ক্ষমতার পটপরিবর্তন হয়েছে দুবার, ১৯৯৪ সালে কিম উল সুংয়ের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র কিম জং ইল ক্ষমতা গ্রহণ করেন। দীর্ঘদিন কিম জং ইল অসুস্থ ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর এখন তাঁর ছোট সন্তান কিম জং উনকে সেখানে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি যদি দায়িত্ব পালনকালে দুই কোরিয়ার একত্রীকরণের উদ্যোগে নেন, সেটা হবে একুশ শতকের শুরুতে একটি বড় ধরনের ঘটনা। তবে যেকোনো মুহূর্তে সংঘর্ষ সেখানে ছড়িয়ে পড়তে পারে। উত্তর কোরিয়া তাদের প্রধান পারমাণু স্থাপনা ছাড়াও গোপনে আরো কয়েকটি স্থাপনায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে বলে দক্ষিণ কোরিয়া অভিযোগ করেছে। একই সঙ্গে বিশ্ববাসীর প্রতি একটি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে উত্তর কোরিয়া আরো পরমাণু পরীক্ষা চালানোর পরিকল্পনাও করছে। এ জন্য তারা সুড়ঙ্গ খুঁড়ছে। এ হারে সুড়ঙ্গ খোঁড়া হলে আগামী (২০১৭) মে মাস নাগাদ প্রয়োজনীয় এক হাজার মিটার সুড়ঙ্গ খোঁড়ার কাজ শেষ হবে। এর অর্থ হচ্ছে, উত্তর কোরিয়া আরেকটি পারমাণবিক পরীক্ষা চালাতে পারে। এতে করে কোরীয় উপদ্বীপে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে না। যুদ্ধ হবে কি না বলা মুশকিল। কেননা উত্তর কোরিয়া যেখানে বড় ধরনের খাদ্য সংকটের মুখে, সেখানে তারা এত বড় ঝুঁকি কি নেবে? উত্তেজনা জিইয়ে রেখে তারা সুবিধা আদায় করে নিতে চায়। এর মধ্যেই উত্তর কোরিয়া সেখানে একটি হাইড্রোজেন বোমারও বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে।
এই মুহূর্তে উত্তর কোরিয়ার বড় বন্ধু চীন। চীন যদি তার সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয়, তাহলে উত্তর কোরিয়া ‘একা’ হয়ে পড়বে। তখন আলোচনায় যাওয়া ছাড়া তার কোনো বিকল্প থাকবে না। উত্তর কোরিয়া বারবার বলে আসছে, তার পারমাণবিক কর্মসূচির উদ্দেশ্য হচ্ছে বিদ্যুৎ উৎপাদন। কিন্তু পশ্চিমা বিশ্ব ও দক্ষিণ কোরিয়া এই কথায় বিশ্বাস রাখতে পারছে না। একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা ও একই সঙ্গে ষষ্ঠ পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণের হুমকিতে এ অঞ্চলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী উত্তর কোরিয়াগামী বিমানের সব ফ্লাইট বাতিলের ঘোষণা দিয়েছে চীন। উত্তর কোরিয়ার বর্তমান রাষ্ট্রপ্রধান কিম জং উনের ভূমিকার ব্যাপারেও উদ্বিগ্ন পশ্চিমা বিশ্ব। উন কিছুটা খ্যাপাটে ধরনের। নিজের ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে তিনি নিজ আত্মীয়স্বজন, সত্ভাইকে ‘খুন’ করতে দ্বিধাবোধ করেননি। এমনকি তাঁকে পরিপূর্ণ সম্মান না দেওয়ায় সিনিয়র জেনারেল ও সাবেক দেশরক্ষামন্ত্রীকে পর্যন্ত তিনি ফায়ারিং স্কোয়াডে পাঠিয়েছিলেন। এমন একজন খ্যাপাটে ব্যক্তি কি পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ কিংবা কোরিয়ার একত্রীকরণের পক্ষে কোনো আলোচনায় মিলিত হবেন, এটা বিশ্বাস করা যায় না। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক কিছু ভূমিকা নতুন করে আবার প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে যে যুক্তরাষ্ট্র কি আবারও ‘বিশ্ব পুলিশের’ ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছে? দায়িত্ব নেওয়ার আগে তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন, বৈশ্বিক রাজনীতিতে সামরিকভাবে আবার যুক্তরাষ্ট্রকে জড়িত করবেন না তিনি! কিন্তু সেই অবস্থান থেকে তিনি বেরিয়ে আসছেন বলেই মনে হয়। ২৯ জানুয়ারি তিনি ইয়েমেনে আল-কায়েদাসংশ্লিষ্ট জঙ্গি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। ৪ এপ্রিল সিরিয়ায় সরকারি বাহিনীর রাসায়নিক হামলায় শতাধিক বেসামরিক ব্যক্তির মৃত্যুর পর তিনি সিরীয় বিমান ঘাঁটিতে ৫৯টি টমাহক মিসাইল হামলার নির্দেশ দিয়েছিলেন। আর আফগানিস্তানে ১৩ এপ্রিল সব বোমার ‘জননী’ (মাদার আর অল বোম্বস, ওজন ৯.৮ টন, দৈর্ঘ্য ৯.১ মিটার, ৮.৪৮ টন এইচ৬ বিস্ফোরক) ব্যবহূত হয় আইএস জঙ্গিদের বিরুদ্ধে। সোমালিয়ায় আল শাবাব জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আফ্রিকান সেনা কমান্ডারদের নির্দেশ দিয়েছেন। মেসেজটি স্পষ্ট। যুক্তরাষ্ট্র তার সামরিক উপস্থিতি বহাল রাখতে চাইছে। ফলে উত্তর কোরিয়ার ব্যাপারে তার যে একটি ‘আগ্রাসী’ ভূমিকা থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে উত্তর কোরিয়া নিয়ে একটা ‘ভয়’ও আছে। উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ধ্বংস করে দেওয়ার যেকোনো ‘পরিকল্পনা’ হিতে বিপরীত হতে পারে। এ অঞ্চলে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই চীন সব পক্ষকে ‘শান্ত’ থাকার আহ্বান জানিয়েছে এবং আলোচনার টেবিলে ফিরে আসার কথাও বলছে চীন। এখন দেখার পালা পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়।
Daily Kalerkontho
19.04.2017

0 comments:

Post a Comment