বাংলাদেশ আর ভারত যে ২২টি চুক্তি ও চারটি মউ সম্পাদিত করেছে, তার প্রতিটিই গুরুত্বপূর্ণ। এর ফলে ভারত বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী হিসাবে আবির্ভূত হল। খুলনা ও কলকাতা বাস ও ট্রেন সার্ভিস চালুর মধ্যে দিয়ে সংস্লিষ্ট অঞ্চলের মানুষের অনেক দিনের প্রত্যাশা পূরণ হল। এই এলাকার মানুষ এই ট্রেন সার্ভিসের মধ্যে দিয়ে বেশ উপকৃত হবেন।
একই সঙ্গে দু’দেশের দু্ই প্রধানমন্ত্রী প্রেস ব্রিফিংয়ে তিস্তার জলবণ্টন নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন- সেটি খুবই ইতিবাচক। তিস্তার জলবণ্টন বাংলাদেশের মানুষের অনেক দিনের প্রত্যাশা। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই প্রত্যাশা করবেন বলেই আশা।
আমরা দেখলাম, সামরিক সরঞ্জাম কিনতে ৫০ কোটি ডলার ঋণের প্রস্তাব করেছে ভারত। এই ঋণ-সহযোগিতা বাংলাদেশের সেনাবাহিনী তাদের উন্নয়নে কাজে লাগাতে পারে। ৪৫০ কোটি ডলার রাষ্ট্রীয় ঋণের অর্থ বাংলাদেশের উন্নয়নে, বিশেষ করে অবকাঠামোগত উন্নয়নে, একটি বড় ভুমিকা রাখবে।
এটি স্পষ্ট- বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে রাজনৈতিক ভাবে উভয় দেশই লাভবান হবে। আমরা দেখলাম পানাম বিমানবন্দরে ব্যক্তিগত প্রটোকল ভেঙ্গে নরেন্দ্র মোদী শেখ হাসিনাকে সম্বর্ধনা জানিয়েছেন। এর অর্থ পরিষ্কার- ভারত বাংলাদেশকে গুরুত্ব দেয়। এই বিমানবন্দরে মোদীর উপস্থিতি শেখ হাসিনার সরকারের প্রতি ভারতের সমর্থন প্রমাণ করে। অন্য দিকে শেখ হাসিনাও নিশ্চিত করেছেন, ভারত সরকার তার সঙ্গে আছে।
আমরা দেখেছি অনেকের মনেই প্রশ্ন ছিল- বাংলাদেশে চিনের বিনিয়োগ কি ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে কোনও প্রভাব ফেলবে? আমার তা মনে হয় না। আমার মূল্যায়ন- বাংলাদেশ একই সাথে চিন ও ভারতের থেকে বিনিয়োগ চায়। এই বিনিয়োগ বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে সম্পর্কিত। জাতীয় স্বার্থ নিশ্চিত করেই বাংলাদেশ এই দুটো দেশ থেকে সহায়তা প্রত্যাশা করে।
ভারত বাংলাদেশ সম্পর্কের ক্ষেত্রে ট্যারিফ, নন ট্যারিফ সমস্যার প্রভাবে সংকট বাড়ছে। আমাদের বাংলাদেশ থেকে ভারতে রফতানি কমেছে। পাট ও পাটজাত দ্রব্য এবং সেই সঙ্গে তৈরি পোশাক রফতানিতে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপেই রফতানির পরিমাণ কমেছে। এই সমস্যাটি সমাধান খুবই জরুরি, কারণ বানিজ্যের সাম্যতার প্রত্যাশা আমাদের রয়েছে। অন্য দিকে বঙ্গোপসাগরের গভীর সমুদ্রে তেল ও গ্যাস আহরণে বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। আমাদের সমুদ্র সম্পদ আহরণে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে ভারত সহযোগিতা করতে পারে। গভীর সমুদ্রে যৌথ টহলের ব্যবস্থা করা যায়। কারণ আমরা জানি বাংলাদেশের যে সমুদ্র সম্পদ রয়েছে- সেই সমুদ্র সম্পদের যথাযথ ব্যাবহার আমাদের সামনে এগিয়ে যাওয়াকে আরও অনেক গতিশীল করবে।
বিশ্বব্যাপী-ই সন্ত্রাসবাদ এখন সবচেয়ে আলোচিত সমস্যা। এই সন্ত্রাসবাদ দমনে ও প্রতিরোধে কী করণীয়? সেটি দু’দেশের নীতি নির্ধারকদের ভাবতে হবে। দু দেশ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, সন্ত্রাসের ধরণ ইত্যাদি ব্যাপারে তথ্য আদান প্রদান করতে পারে। ভারতের মাটিতে যাতে কোনও বাংলাদেশি সন্ত্রাসী আশ্রয় ও ট্রেনিং নিতে না পারে, ভারত তা নিশ্চিত করতে পারে। অবৈধ অস্ত্র আসা যাওয়া বন্ধ করতে হবে। সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিতে দু দেশ একসঙ্গে কাজ করলে তা উভয় দেশের জন্যই সুফল বয়ে আনবে।
Daily Anandabazar
Kolkatta
09.04.2017
0 comments:
Post a Comment