রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর ও আমাদের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান



প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চার দিনের ভারত সফর শেষ করেছেন ১০ এপ্রিল। এরপর তিনি ১১ এপ্রিল ঢাকায় একটি সংবাদ সম্মেলন করেন। আর প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এ সফরের তার দলের প্রতিক্রিয়া জানান ১২ এপ্রিল। এর বাইরে সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি তাদের কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। যদিও ৩ বছরে কখনও জাতীয় পার্টিকে কোনো জাতীয় ইস্যুতে কোনো মন্তব্য করতে দেখিনি। এ সময় এবং এখন অবধি জাতীয় পার্টি সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করে আসছে। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের গুরুত্ব অনেক। এ সফরে ৩৫টির মতো  চুক্তি তথা সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে, যার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি হচ্ছে প্রতিরক্ষা সমঝোতা স্মারক। সেই সঙ্গে ভারত ৫০ কোটি ডলারের ঋণ সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে, তার মাধ্যমে অস্ত্র কেনা যাবে। এ প্রতিরক্ষা সহযোগিতা স্মারক ও অস্ত্র ক্রয়ের বিষয়টি বেশ বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির মন্তব্য পাওয়া না গেলেও বিএনপির বক্তব্য পাওয়া গেছে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ১২ এপ্রিল যে সংবাদ সম্মেলন করেছেন, তাতে নিম্নলিখিত বক্তব্যগুলো উঠে এসেছেÑ ১. আশ্বাস নিয়ে খালি হাতে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী; ২. ভারতের অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত এ প্রস্তাবিত বিষয়গুলোতেই শুধু চুক্তি ও সমঝোতা হয়েছে; ৩. পার্লামেন্টে চুক্তি ও সমঝোতা সম্পর্কে কোনো আলোচনা হয়নি; ৪. শুল্ক ও অশুল্ক বাধা দূর করার ব্যাপারে কোনো অগ্রগতি হয়নি; ৫. প্রতিরক্ষা বিষয়ে যেসব সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে, তাতে সুদূরপ্রসারী প্রতিক্রিয়া হতে পারে; ৫. আমরা সবাই মিলে একটি অভিন্ন অবস্থান গ্রহণের পক্ষে; ৬. ভারতীয় ঋণে ভারতই একমাত্র অস্ত্র সরবরাহকারী; ৭. স্বাধীনতা অর্জনে ভারতের সহযোগিতায় আমরা কৃতজ্ঞ। গণতন্ত্র রক্ষায় এ দেশের জনগণের প্রতি ভারত সম্মান দেখাবে, এটা মানুষ প্রত্যাশা করে; ৮. বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা ব্যাহত করতে ভারতের বিগত শাসকদের একতরফা ভূমিকায় বাংলাদেশের মানুষ ক্ষুব্ধ; ৯. তিস্তার পানিবণ্টনের বিষয়টি দুই সার্বভৌম দেশের মধ্যকার বিষয়; ১০. গঙ্গা ব্যারাজ প্রকল্পে ভারতের সম্মতি আদায়ে ব্যর্থ হয়ে শেখ হাসিনা এখন এ প্রকল্পের উপযোগিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন; ১১. দেশের স্বার্থে এসব চুক্তি ও সমঝোতা পুনর্মূল্যায়ন হবে; ১২ রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ভারতেরও ক্ষতি হবে। এর বাইরে কওমি মাদরাসা সনদ, আলেম সম্মেলন ও সুপ্রিমকোর্ট চত্বরে গ্রিক ভাস্কর্য নিয়েও খালেদা জিয়া মন্তব্য করেন। (কালের কণ্ঠ, ১৩ এপ্রিল)। খুব স্বাভাবিক কারণেই দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। দলটি এ মুহূর্তে সংসদে না থাকলেও বাস্তবতা হচ্ছে, এ দলটিই প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করছে। বিদেশি দাতাগোষ্ঠীও দলটিকে প্রধান বিরোধী দলের মর্যাদা দেয়। অতীতে দলটি একাধিকবার ক্ষমতায় ছিল। ফলে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর নিয়ে দলটির মূল্যায়ন যে কোনো বিবেচনায় গুরুত্বের দাবি রাখে। আমাদের সঙ্গে ভারতের পার্থক্য এখানেই যে, জাতীয় ইস্যুতে ভারতে সব রাজনৈতিক দলের অবস্থান এক ও অভিন্ন। কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী, কংগ্রেসের ঊর্ধ্বতন নেতা রাহুল গান্ধী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে নয়াদিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবনে দেখা করতে এসেছিলেন তখন তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশের ব্যাপারে তাদের অবস্থান সবার এক। পার্থক্যটা এখানেই। আমাদের অবস্থান ভিন্ন ভিন্ন। প্রধানমন্ত্রীর এ সফরে অনেক চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। বাংলাদেশের জন্য এসব চুক্তি ও সমঝোতা কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। প্রতিরক্ষা সমঝোতা ও তিস্তা চুক্তি না হওয়া আমার কাছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। বাকি সব চুক্তি ও সমঝোতা আমার কাছে গতানুগতিক বলে মনে হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে নতুন একটি কথা বলেছেন। বাকি বক্তব্য সম্পর্কে আমরা এরই মধ্যেই ধারণা পেয়ে গিয়েছিলাম। নতুন সংবাদটি হচ্ছে, প্রস্তাবিত গঙ্গা ব্যারাজ নিয়ে। এতদিন আমাদের কাছে যে তথ্য ছিল তা হচ্ছে, রাজবাড়ীর পাংশায় একটি স্থান নির্বাচন করা হয়েছিল যেখানে একটি বিস্তীর্ণ এলাকায় রিজার্ভিয়ার নির্মাণ করা হবে, যাতে বর্ষা মৌসুমের পানি ধরে রাখা যায়। এ পানি শুষ্ক মৌসুমে ব্যবহার করা যাবে। এক্ষেত্রে ভারতের সমর্থন ও আর্থিক সহযোগিতার প্রশ্ন ছিল। দুইটি চীনা কোম্পানি এবং জাপান এ খাতে ২ বিলিয়ন ডলার সাহায্যের তথা বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছিল। ওই পরিকল্পনা অনুযায়ী ২ দশমিক ৯০ ট্রিলিয়ন লিটার পানি ধরে রাখার কথা। ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনাও ছিল। এতে করে ভারতও উপকৃত হতো। এখন প্রধানমন্ত্রী জানালেন, পাংশায় যে ব্যারাজ নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল, তা তিনি বাতিল করে দিয়েছেন। তবে একটি উপযুক্ত স্থান দেখার জন্য তিনি মমতা ব্যানার্জির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি যৌথ উদ্যোগের কথাও বলেছেন। তবে একই সঙ্গে তিনি পানি ধরে রাখার জন্য নদী ড্রেজিংয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। দুই প্রধানমন্ত্রী যে যৌথ ঘোষণা প্রকাশ করেছেন, তার ৪১ নং ধারায় গঙ্গা ব্যারাজের কথা বলা হয়েছে। সেখানে দুই দেশের সমন্বয়ে একটি ‘যৌথ কারিগরি টিম’ গঠন করার কথাও বলা হয়েছে। এ যৌথ কারিগরি টিমের ভারতীয় পক্ষ বাংলাদেশ সফর করবে এবং বাংলাদেশে তারা একটি সমীক্ষা চালাবে।
তিস্তায় পানি না পাওয়া এখন আমাদের নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। আমাদের নীতিনির্ধারকরা যদি বিষয়টিকে হালকাভাবে দেখেন, তাহলে এ দেশ, বিশেষ করে উত্তরবঙ্গ একটি বড় ধরনের সংকটে পড়বে। খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে থাকবে। এমনকি রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এতে করে বাড়বে। মনে রাখতে হবে, তিস্তায় পানিপ্রাপ্তি আমাদের ন্যায্য অধিকার। আন্তর্জাতিক আইন আমাদের পক্ষে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের দায়িত্ব আমাদের অধিকারকে নিশ্চিত করা। এক্ষেত্রে মমতা ব্যানার্জির আপত্তি বা সমর্থন এটা আমাদের বিষয় নয়। আমাদের নেতৃত্ব বিষয়টিকে হালকাভাবে নেয়নি। আমাদের অধিকার, যা আন্তর্জাতিক আইনে স্বীকৃত, তা নিশ্চিত করবে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। এখানে বলা ভালো, সিকিম হয়ে ভারতের দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ি হয়ে পশ্চিমবঙ্গের ডুয়ারের সমভূমি দিয়ে চিলাহাটি থেকে চার-পাঁচ কিলোমিটার পূর্বে বাংলাদেশের নীলফামারীর উত্তর খড়িবাড়ীর কাছে ডিমলা উপজেলার ছাতনাই দিয়ে প্রবেশ করেছে তিস্তা নদী। ছাতনাই থেকে এ নদী নীলফামারীর ডিমলা, জলঢাকা, লালমনিরহাট সদর, পাটগ্রাম, হাতিবান্ধা, কালীগঞ্জ, রংপুরের কাউনিয়া, পীরগাছা, কুড়িগ্রামের রাজারহাট, উলিপুর হয়ে চিলমারীতে গিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদে মিশেছে। ডিমলা থেকে চিলমারী এ নদীর বাংলাদেশ অংশের মোট ক্যাচমেন্ট এরিয়া প্রায় ১ হাজার ৭১৯ বর্গকিলোমিটার। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ নদী কমিশন গঠনের পর তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। ১৯৮৩ সালের জুলাইয়ে দুই দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের এক বৈঠকে তিস্তার পানিবণ্টনে শতকরা ৩৬ ভাগ বাংলাদেশ ও ৩৯ ভাগ ভারত এবং ২৫ ভাগ নদীর জন্য সংরক্ষিত রাখার বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল। কিন্তু কোনো চুক্তি হয়নি। পরে ২০০৭ সালের ২৫, ২৬ ও ২৭ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত বৈঠকে বাংলাদেশ তিস্তার পানির ৮০ ভাগ দুই দেশের মধ্যেই বণ্টন করে বাকি ২০ ভাগ নদীর জন্য রেখে দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল। ভারত সে প্রস্তাবে রাজি হয়নি। এরপর যুক্ত হয়েছিল মমতার আপত্তি। বাংলাদেশের কোনো প্রস্তাবের ব্যাপারেই অতীতে মমতার সম্মতি পাওয়া যায়নি। এখানে আরও একটা বিষয় বিবেচনায় নেয়া প্রয়োজন। তিস্তার পানিবণ্টনে সিকিমকে জড়িত করার প্রয়োজনীয়তা পড়েছে। কেননা সিকিম নিজে উজানে পানি প্রত্যাহার করে বাঁধ দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। ফলে তিস্তায় পানির প্রবাহ কমে যাচ্ছে দিন দিন। পশ্চিমবঙ্গের উত্তরবঙ্গে কৃষকের কাছে তিস্তার পানির চাহিদা বেশি। মমতা ব্যানার্জি এ পানি চাইবেন, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু আন্তর্জাতিক নদীর পানি তিনি এককভাবে ব্যবহার করতে পারেন না। নয়াদিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে তিনি এবার একটি ‘নতুন ফর্মুলা’ দিলেন। তিনি তোর্সা ও জলঢাকাসহ চারটি নদীর নাম বললেন, যেখান থেকে পানি নিয়ে বাংলাদেশের চাহিদা পূরণ করা যায়! বাংলাদেশে তোর্সা এবং জলঢাকা দুধকুমার ও ধরলা নামে পরিচিত। মমতার এ বক্তব্য তো মূলত ভারতের আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পেরই নামান্তর। এর আগে ঢাকায় এসে মমতা অভিযোগ করেছিলেন, বাংলাদেশ আত্রাই নদী থেকে পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে! এই হচ্ছে মমতা। এখন নয়াদিল্লিতে মোদি বললেন, মমতার সম্মতি নিয়েই তিস্তা চুক্তি হবে। মমতার বক্তব্যের পর মোদির আশ্বাস শুধু আশ্বাসের মধ্যেই থেকে যায় কিনা, সে আশঙ্কা থাকলই। সীমান্তহত্যা বন্ধের ব্যাপারে যৌথ ঘোষণাপত্রে কোনো উল্লেখ নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নয়াদিল্লিতে প্রেস ব্রিফিংয়ে পাটজাত পণ্যের ওপর ১৩ ভাগ হারে ভারত যে এন্টি ডাম্পিং শুল্ক এবং ৩০ ভাগ হারে তৈরি পোশাকের ওপর কাউন্টার ডেইলিং শুল্ক আরোপ করেছে, তা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন। যৌথ ঘোষণাপত্রে ভারতের অঙ্গীকার তাতে পাওয়া গেছে। ভারত যে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলারের ঋণের প্রস্তাব করেছে, তা নিয়েও প্রশ্ন আছে। ২০১০ সালে ভারত যে ১ বিলিয়ন ডলার ঋণের প্রস্তাব করেছিল, তার প্রায় ৫০ ভাগ এখনও অব্যবহৃত রয়ে গেছে। ২০১৬ সালে আরও ২ বিলিয়ন ঋণের প্রস্তাব দিয়েছিল ভারত। ওই অর্থের ব্যবহার এখনও শুরুই হয়নি। এখন এলো প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলারের প্রস্তাব। এতে যেসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ার কথা, কিংবা কবে নাগাদ তা ছাড় দেয়া হবে, তাতে রয়ে গেছে অস্পষ্টতা। উপরন্তু এসব ঋণ প্রকল্পে প্রকারান্তরে লাভবান হবে ভারতই। প্রতিরক্ষা খাতে ৫০ মিলিয়ন ডলারের প্রস্তাব আছে। এর একটা ভালো দিক হচ্ছে, বাংলাদেশ তার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ অস্ত্র দিয়ে সামরিক সরঞ্জাম কিনবে। সংবাদ সম্মেলনে এটা নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। প্রতিরক্ষা সহযোগিতার ক্ষেত্রে দুই দেশের সামরিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে যে চুক্তি হয়েছে, তা এখন একটি আইনি কাঠামোর মধ্যে গেল। অনেক আগে থেকেই সেনা সদস্যরা এসব ভারতীয় প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণ তথা শিক্ষা লাভ করেন। পরমাণু শক্তি কেন্দ্র নির্মাণে ও প্রশিক্ষণে যে সহযোগিতা কিংবা সাইবার নিরাপত্তা চুক্তি, বিচারপতিদের প্রশিক্ষণ ইত্যাদি নিঃসন্দেহে ভালো দিক। খুলনা-কলকাতা ট্রেন সার্ভিস কিংবা ঢাকা-খুলনা-কলকাতা বাস সার্ভিসও ভালো দিক। সাধারণ মানুষ এ থেকে উপকৃত হবে। তবে ভিসা সহজীকরণের ক্ষেত্রে যদি কোনো ঘোষণা আসত, তা বাংলাদেশীদের জন্য সুসংবাদ বয়ে আনত; কিন্তু তা আসেনি। বাণিজ্য বৈষম্য (২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৪ হাজার ৭৬১ দশমিক ০৮ মিলিয়ন ডলার) কমিয়ে আনার ব্যাপারেও কোনো সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা নেই।
সব মিলিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর একটি ‘ভালো-মন্দ’র সফর। প্রত্যাশা ছিল হয়তো বেশি। কিন্তু পেয়েছি কম। এখন যতটুকু পেয়েছি, তা আমাদের কাজে লাগাতে হবে। ভারতের ওপর ‘চাপ’ অব্যাহত রাখতে হবে। তিস্তার পানিবণ্টনের ব্যাপারে ভারতের ওপর একদিকে যেমনি ‘চাপ’ অব্যাহত রাখতে হবে, অন্যদিকে গঙ্গা ব্যারাজ নির্মাণের ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। নদীতে ড্রেজিং করে পানি ধরে রাখা যেতে পারে। কিন্তু এটা দীর্ঘস্থায়ী কোনো সমাধান দেবে না। বরং বর্ষা মৌসুমে যে পানি আসে, তা ধরে রাখার উদ্যোগ নিতে হবে। এজন্যই গঙ্গা ব্যারাজ নির্মাণ জরুরি। ভারত থেকে অস্ত্র ক্রয়ের ব্যাপারে যেহেতু ‘অভিযোগ’ উঠেছে, সেহেতু অস্ত্র ক্রয় না করাই মঙ্গল। অস্ত্র ক্রয়ের ক্ষেত্রে যেহেতু কোনো বাধ্যবাধকতা নেই, আমরা এ সুযোগটি নিতে পারি। প্রয়োজনে এ খাতে ৫০ কোটি ডলারের ঋণ প্রস্তাব অন্য কোনো খাতে ব্যবহার করা যায় কিনা, তা নিয়ে ভারতের সঙ্গে আলোচনা হতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা, জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে ঐকমত্য প্রয়োজন। ঐকমত্য না হলে ভারত সুযোগ নেবে। ভারত বড় দেশ। বড় অর্থনীতি। আমাদের উন্নয়নে তাদের সাহায্য-সহযোগিতা প্রয়োজন। কিন্তু তা যেন একতরফা হয়ে না যায়।
Daily Alokito Bangladesh
16.04.2017

1 comments:

  1. আমার নিকট লেখাটি খুব ভালো লেগেছে তবে দুইটি কথা আরো স্পষ্ট করে বললে ভালো ঞতো-
    ১. তিস্তার পানি ৮০ভাগ ভারত বাংলাদেশ নিবে আর ২০ ভাগ নদী সংরক্ষনের জন্য থাকবে। এ প্রস্তাবে ভারত রাজি হয়নি। কেনো হবে তারাতো এখন ৯০ ভাগ প্রত্যাহর করছে।
    ২. ৫০ কোটি ডলার কিভাবে ফেরত দিবে। সুদ কত% দিতে হবে। বা
    লোন সুদ মুক্ত কী না?

    ReplyDelete