রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

যুক্তরাষ্ট্র কি পুনরায় যুদ্ধে ফিরছে

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াকার বুশ তথাকথিত নাইন-ইলেভেন’র ঘটনাকে কেন্দ্র করে যুদ্ধ শুরু করেছিলেন। প্রথমে আফগানিস্তান (২০০১) ও পরে ইরাক দখল করে নিয়েছিলেন। সেই দখলিস্বত্ব খোদ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কোনো ভালো সংবাদ বয়ে আনেনি। শুধু তাই নয়, আফগানিস্তান নামক দেশটি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। এরপর ২০০৩ সালে বুশ ইরাক দখল করার নির্দেশ দিলেন। যুক্তি ছিল, ইরাকের কাছে গণবিধ্বংসী অস্ত্র রয়েছে। কিন্তু পরে প্রমাণিত হয়েছিল, ইরাকের কাছে এ ধরনের অস্ত্র ছিল না। কিন্তু ইরাক আগ্রাসনের ফলে দেশটি ধ্বংস হয়ে যায়। এর পরের ঘটনা লিবিয়া নিয়ে। সেটা ২০১১ সালে। ততদিনে হোয়াইট হাউস থেকে বিদায় নিয়েছেন বুশ। ক্ষমতায় ওবামা, যিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। তিনি অনিশ্চিত বুশের মতো লিবিয়ায় মার্কিন সেনা পাঠাননি। কিন্তু তিনি বোমা হামলার নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং মার্কিনি বিমান হামলায় গাদ্দাফির সরকারের পতন ঘটেছিল। এরপর অবশ্য ওবামা সামরিকভাবে আর কোথাও মার্কিন সেনাবাহিনীকে জড়িত করেননি। তবে তার শাসনামলেই সিরীয় সংকটের সৃষ্টি হয়েছিল। ওবামা বুশের মতো অত যুদ্ধংদেহী ছিলেন না। পেন্টাগনের যুদ্ধবাজ জেনারেলদের কিছুটা হলেও নিবৃত্ত করতে পেরেছিলেন। তিনিই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের। সাধারণত ডেমোক্র্যাটরা কিছুটা শান্তিবাদী হন আর রিপাবলিকানরা হন যুদ্ধবাজ। ওবামা ছিলেন ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রেসিডেন্ট, আর বুশ ছিলেন রিপাবলিকান দলীয়। এখন হোয়াইট হাউসে আবার একজন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দায়িত্ব নিয়েছেন ২০ জানুয়ারি। তিনি এরই মধ্যে ক্ষমতা নেয়ার ১০০ দিন পূরণ করেছেন।
আন্তর্জাতিক রাজনীতির পর্যবেক্ষকরা একটি বিষয় খুব গভীরভাবে লক্ষ করছেন। আর তা হচ্ছে, ট্রাম্প তার আগের অবস্থান থেকে সরে আসছেন। নির্বাচনের আগে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মার্কিন সেনাবাহিনীকে বিশ্বের অন্যত্র ব্যবহার করবেন না। ন্যাটোকে তিনি সেকেলে হিসেবেও অভিহিত করেছিলেন। কিন্তু উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক বোমা (ষষ্ঠ) বিস্ফোরণের সম্ভাবনা এবং কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের পর পরই যুক্তরাষ্ট্র ওই অঞ্চলে তিন-তিনটি বিমানবাহী যুদ্ধ জাহাজ পাঠিয়েছে। উত্তর কোরিয়া হুমকি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে পারমাণবিক বোমা হামলার। এখন টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে কোরীয় উপদ্বীপে। এ উত্তেজনা শেষ অবধি একটি যুদ্ধের জন্ম দেবে কিনা, এ মুহূর্তে তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স সেখানে ছুটে গেছেন। তিনি দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান সফর করেছেন। চীন ও রাশিয়া মার্কিন জাহাজগুলোর ওপর নজরদারি বাড়িয়েছে। পশ্চিমা গণমাধ্যম বলছে, উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে এক ধরনের ‘প্রক্সি যুদ্ধ’ শুরু হয়ে গেছে। এ ‘প্রক্সি যুদ্ধে’ রয়েছে তিন শক্তিÑ যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও রাশিয়া। চীন ও রাশিয়া উত্তর কোরিয়ার সমর্থক।
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, ২০০৬ সালের অক্টোবরে উত্তর কোরিয়া কর্তৃক পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণের পর থেকেই উত্তর কোরিয়া আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আছে। পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণের মধ্য দিয়েই উত্তর কোরিয়া বিশ্বে অষ্টম পারমাণবিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়। এরপর থেকেই উত্তর কোরিয়ার ব্যাপারে এ অঞ্চলের বিশেষ করে দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের আতঙ্ক বাড়তে থাকে। এরপর থেকেই আলোচনা শুরু হয়, কীভাবে উত্তর কোরিয়াকে পরমাণুমুক্ত করা সম্ভব। একপর্যায়ে চীনের উদ্যোগে ২০০৭ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি উত্তর কোরিয়া একটি চুক্তি স্বাক্ষরে রাজি হয়। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, উত্তর কোরিয়া অবিলম্বে তার ইয়ংবাইঅনের (ণড়হমনুড়হ) পারমাণবিক চুক্তিটি বন্ধ করে দেয়। যেখানে পশ্চিমা বিশ্বের ধারণা, উত্তর কোরিয়া ৬ থেকে ১০টি পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে পারত। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, উত্তর কোরিয়া ৬০ দিনের মধ্যে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের তার পারমাণবিক চুক্তিগুলো পরিদর্শনেরও সুযোগ করে দেয়। বিনিময়ে উত্তর কোরিয়াকে ৫০ হাজার টন জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হয়। এরপর ২০০৭ সালের অক্টোবরে দুই কোরিয়ার মধ্যে একটি শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। দক্ষিণ কোরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট রোহ মু হিউম ২ অক্টোবর উত্তর কোরিয়া যান এবং সেখানে উত্তর কোরিয়ার প্রয়াত প্রেসিডেন্ট কিম জং ইলের সঙ্গে শীর্ষ বৈঠক করেন। এটা ছিল দুই কোরিয়ার রাষ্ট্রপ্রধানের মধ্যে দ্বিতীয় শীর্ষ বৈঠক। এর আগে ২০০০ সালের ১২ জুন দুই কোরিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান প্রথমবারের মতো একটি শীর্ষ বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন। কোরিয়া বিভক্তকারী অসামরিক গ্রাম পানমুনজমে সাবেক প্রেসিডেন্ট কিম দাই জং মিলিত হয়েছিলেন উত্তর কোরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট কিম জং ইলের সঙ্গে। এ অঞ্চলের ৫৩ বছরের রাজনীতিতে ওই ঘটনা ছিল একটি ঐতিহাসিক। এর আগে আর দুই কোরিয়ার নেতারা কোনো শীর্ষ বৈঠকে মিলিত হননি। স্নায়ুযুদ্ধ-পরবর্তী বিশ্বব্যবস্থা ও দুই জার্মানির একত্রীকরণের (১৯৯০) পর রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের দৃষ্টি এখন কোরীয় উপদ্বীপের দিকে। সেই থেকে দুই কোরিয়ার পুনরেকত্রীকরণের সম্ভাবনাও দেখছেন অনেকে। অনেকেরই মনে থাকার কথা, ২০০০ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট কিম দাই জংকে ‘দুই কোরিয়ার পুনরেকত্রীকরণের অব্যাহত প্রচেষ্টা’র জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কার দেয়া হয়েছিল।
কোরিয়া একটি বিভক্ত সমাজ। দুই কোরিয়ায় দুই ধরনের সমাজ ব্যবস্থা চালু রয়েছে। উত্তর কোরিয়ায় সমাজতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা চালু রয়েছে। আর দক্ষিণ কোরিয়ায় রয়েছে পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থা। ১ লাখ ২০ হাজার ৫৩৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনবিশিষ্ট উত্তর কোরিয়ার লোকসংখ্যা মাত্র ২ কোটি ২৫ লাখ। আর ৯৯ হাজার ২২২ বর্গকিলোমিটার আয়তনবিশিষ্ট দক্ষিণ কোরিয়ার লোকসংখ্যা ৪ কোটি ২৮ লাখ। একসময় যুক্ত কোরিয়া চীন ও জাপানের উপনিবেশ ছিল। ১৯০৪-০৫ সালে রাশিয়া ও জাপানের মধ্যকার যুদ্ধের পর কোরিয়া প্রকৃতপক্ষে জাপানের আশ্রিত রাজ্যে পরিণত হয়। ১৯১০ সালের ২৯ আগস্ট জাপান আনুষ্ঠানিকভাবে কোরিয়াকে সাম্রাজ্যভুক্ত করে। ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের পরাজয়ের পর মার্কিন ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সেনাবাহিনী কোরিয়ায় ঢুকে পড়ে এবং জাপানি সৈন্যদের আত্মসমর্পণে বাধ্য করার জন্য কৌশলগত কারণে কোরিয়াকে দুই ভাগ করে। এক অংশে মার্কিন বাহিনী এবং অপর অংশে সোভিয়েত ইউনিয়নের বাহিনী অবস্থান নেয়। সোভিয়েত বাহিনীর উপস্থিতিতেই কোরিয়ার উত্তরাঞ্চলে (আজকের যা উত্তর কোরিয়া) একটি কমিউনিস্ট সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৪৬ সালে নিউ ন্যাশনাল পার্টির সঙ্গে নবগঠিত কোরিয়ান কমিউনিস্ট পার্টি একীভূত হয়ে কোরিয়ান ওয়ার্র্কার্স পার্টি গঠন করে। জাতিসংঘের আহ্বানে সেখানে নির্বাচনের আয়োজন করা হলেও দেখা গেল নির্বাচন শুধু দক্ষিণ কোরিয়াতেই অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৯৪৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর উত্তর কোরিয়া একটি আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে তার অস্তিত্বের কথা ঘোষণা করে। ১৯৫০ সালের ২৫ জুন উত্তর কোরিয়ার বাহিনী ৩৮তম সমান্তরাল রেখা অতিক্রম করে দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রবেশ করলে যুদ্ধ বেধে যায়। জাতিসংঘ এ যুদ্ধে দক্ষিণ কোরিয়াকে সমর্থন করার জন্য সব রাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানায়। জাতিসংঘ বাহিনী মাঞ্চুরিয়া সীমান্তে উপস্থিত হলে ১৯৫০ সালের ২৬ নভেম্বর চীন উত্তর কোরিয়ার পক্ষে যুদ্ধে জড়িয়ে যায় এবং চীনা সৈন্যরা দক্ষিণ কোরিয়ার অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ে। ১৯৫১ সালের এপ্রিলে জাতিসংঘ বাহিনী ৩৮তম সমান্তরাল রেখা পুনরুদ্ধার করে। ১৯৫১ সালের ২৩ জুন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ যুদ্ধ বিরতি প্রস্তাব দেয়। কিন্তু যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাব কার্যকর হয় ২ বছর পর ১৯৫৩ সালের ২৭ জুলাই। এরপর থেকে কার্যত উত্তর কোরিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়া দুইটি রাষ্ট্র হিসেবে তাদের অস্তিত্ব বজায় রেখে আসছে। ১৯৫৩ সালে স্বাক্ষরিত একটি চুক্তিবলে দক্ষিণ কোরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী মোতায়েন থাকলেও উত্তর কোরিয়ায় কোনো চীনা সৈন্য নেই। উত্তর কোরিয়া চীনের সঙ্গে ১৯৬১ সালে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ ও সহযোগিতামূলক চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। ৭০ বছরে দক্ষিণ কোরিয়ায় একাধিক সরকার গঠিত হলেও উত্তর কোরিয়ায় ক্ষমতার পটপরিবর্তন হয়েছে দুইবারÑ ১৯৯৪ সালে কিম উল সুংয়ের মৃত্যুর পর তার ছেলে কিম জং ইল ক্ষমতা গ্রহণ করেছিলেন। দীর্ঘদিন কিম জং ইল অসুস্থ ছিলেন। তার মৃত্যুর পর (২০১১) তার ছোট সন্তান কিম জং উনকে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয়। উন অনেকটা খেপাটে স্বভাবের। স্বৈরাচারী। তিনি যা বোঝেন, তাই করেন। তার হাতে সাবেক দেশরক্ষামন্ত্রীও মারা গেছেন।
উনের মতোই চরিত্র অনেকটা ডোনাল্ড ট্রাম্পের। তিনি যা বোঝেন তাই করেন। অতীতে যা বলেছিলেন, এখন তাতে পরিবর্তন আনছেন। ট্রাম্পের অতি সাম্প্রতিক কিছু ভূমিকা নতুন করে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্র কি আবারও ‘বিশ্ব পুলিশের’ ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছে? দায়িত্ব নেয়ার আগে তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন, বৈশ্বিক রাজনীতিতে সামরিকভাবে আর যুক্তরাষ্ট্রকে জড়িত করবেন না! কিন্তু সেই অবস্থান থেকে তিনি বেরিয়ে আসছেন বলেই মনে হয়। ২৯ জানুয়ারি তিনি ইয়েমেনে আল কায়দা সংশ্লিষ্ট জঙ্গিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। ৪ এপ্রিল সিরিয়ায় সরকারি বাহিনীর রাসায়নিক হামলায় শতাধিক বেসামরিক ব্যক্তির মৃত্যুর পর তিনি সিরীয় বিমান ঘাঁটিতে ৫৯টি টমহক মিসাইল হামলার নির্দেশ দিয়েছিলেন। আর আফগানিস্তানে ১৩ এপ্রিল ‘সব বোমার জননী’ (মাদার অব অল বম্বস, ওজন ৯.৮ টন। দৈর্ঘ্য ৯.১ মিটার। ৮.৪৮ টন এইচ ৬ বিস্ফোরক) ব্যবহৃত হয় আইএস জঙ্গিদের বিরুদ্ধে। সোমালিয়ায় আল শাবাব জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ‘আফ্রিকম’ সেনা কমান্ডারদের নির্দেশ দিয়েছেন। মেসেজটি স্পষ্ট। যুক্তরাষ্ট্র তার সামরিক উপস্থিতি বহাল রাখতে চাইছে। ফলে উত্তর কোরিয়ার ব্যাপারে তার যে একটি ‘আগ্রাসী’ ভূমিকা থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে উত্তর কোরিয়া নিয়ে একটা ‘ভয়’ও আছে। উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ধ্বংস করে দেয়ার যে কোনো ‘পরিকল্পনা’ হিতে বিপরীত হতে পারে। এ অঞ্চলে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়তে পারে। উত্তর কোরিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ার হাতে রয়েছে বিশাল সমরাস্ত্র। যেখানে উত্তর কোরিয়ার হাতে রয়েছে ৯৪৪টি যুদ্ধ বিমান, সেখানে দক্ষিণ কোরিয়ার হাতে রয়েছে ১ হাজার ৪৫১টি। হেলিকপ্টারের সংখ্যা উত্তর কোরিয়ার ২০২টি, আর দক্ষিণ কোরিয়ার ৬৭৯টি। ট্যাঙ্ক রয়েছে উত্তর কোরিয়ার ৪ হাজার ২০০টি আর দক্ষিণ কোরিয়ার ২ হাজার ৩৮১টি। সাবমেরিন উত্তর কোরিয়ার ৭০টি আর দক্ষিণ কোরিয়ার ১৫টি। ফ্রিগেট উত্তর কোরিয়ার ৩টি, দক্ষিণ কোরিয়ার ১১টি। ডেস্ট্রয়ার আছে দক্ষিণ কোরিয়ার ১২টি। আর সেনাবাহিনীর সংখ্যা উত্তর কোরিয়ার যেখানে ৭ লাখ, সেখানে দক্ষিণ কোরিয়ার ৬ লাখ ২৫ হাজার। সামরিক খাতে উত্তর কোরিয়ার বাজেট হলো ৭৫০ কোটি ডলার, আর দক্ষিণ কোরিয়ার ৩ হাজার ৩২০ কোটি ডলার। তুলনামূলক বিচারে দক্ষিণ কোরিয়ার ‘অবস্থান’ ভালো হলেও, উত্তর কোরিয়া পারমাণবিক প্রযুক্তি অর্জন করেছে, যা দক্ষিণ কোরিয়া এখনও পারেনি। পাঠকদের এখানে যুক্তরাষ্ট্রের প্যাসিফিক কমান্ডের সামরিক শক্তিরও একটা তুলনা দিই। বাংলাদেশসহ কোরীয় উপদ্বীপ, জাপান, এমনকি চীনও যুক্তরাষ্ট্রের প্যাসিফিক কমান্ডের আওতায়। মোট ৩৬টি দেশ এর প্রভাব বলয়ের আওতায়। বিশ্বের অর্ধেক জনগোষ্ঠী এ অঞ্চলে বাস করে। চীন, জাপান এবং ভারতের মতো বড় অর্থনীতি এ কমান্ডের নিয়ন্ত্রিত এলাকার মাঝে রয়েছে। এ কমান্ডের (মোট ৬ কমান্ডের ১টি) আওতায় রয়েছে ৫টি বিমানবাহী জাহাজ, ১ লাখ ৩ হাজার মেরিন ও ১ হাজার ১০০ যুদ্ধবিমান। যে কোনো ‘যুদ্ধে’ যুক্তরাষ্ট্রের ‘অবস্থান’ যে শক্তিশালী, তা বলার আর অপেক্ষা রাখে না। শেষ মুহূর্তে যুদ্ধ হয়তো হবে না কিংবা দ্বিতীয় আরেকটি কোরীয় যুদ্ধ হয়তো আমরা প্রত্যক্ষ করব না, কিন্তু এ অঞ্চলে উত্তেজনা থাকবেই। কিম জং উন উত্তেজনা জিইয়ে রেখে কিছু সুবিধা আদায় করে নিতে চান। চীনের অবস্থানও অনেকটা তেমনিÑ উত্তর কোরিয়াকে সাহায্য করা। অতীতেও এমনটি হয়েছিল। তবে মনে রাখতে হবে, বিশ্বের অষ্টম পারমাণবিক শক্তিধর দেশ হচ্ছে উত্তর কোরিয়া। দেশটির পারমাণবিক কর্মকা-কে হালকাভাবে দেখার কোনো সুযোগ নেই।
Daily Alokito Bangladesh
23.04.2017

0 comments:

Post a Comment