রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

পারস্য উপসাগরীয় সংকটের সমাধান কোন পথে


তাহলে যুদ্ধ কি আসন্ন? সৌদি আরব এরই মধ্যে ইয়েমেনে হুথিগোষ্ঠী, যা শিয়া তথা ইরান সমার্থিত, নিয়ন্ত্রিত এলাকায় বোমা বর্ষণ করে সেখানে একটি ফ্রন্ট ‘ওপেন’ করেছে। এখন কুয়েতে আগ্রাসন চালিয়ে দ্বিতীয় আরেকটি ফ্রন্ট ‘ওপেন’ করতে চাইবে না খুব সহজেই। কিন্তু ইসরাইলি ও আমেরিকান লবির চাপে সৌদি আরব শেষ পর্যন্ত কী করে, বলা মুশকিল। সৌদি আরব এরই মধ্যে মুসলমানপ্রধান দেশগুলো নিয়ে একটি সামরিক জোট গঠন করেছে (বাংলাদেশ এর সদস্য)। মজার ব্যাপার, কাতার ও তুরস্ক ওই জোটের সদস্য। অথচ এ সংকটে তুরস্কের অবস্থান কাতারের পক্ষে। সৌদি-কাতার দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে বৃহৎ শক্তি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সৌদি আরবের পক্ষে। অন্যদিকে রাশিয়া সমর্থন করছে কাতারকে। আর আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে ইরানের অবস্থান কাতারের পক্ষে। ফলে একটি যুদ্ধ যদি শুরু হয়ে যায় (?), তাহলে ইরান জড়িয়ে পড়তে পারে। ইরান ‘স্ট্রেট অব হরমুজ’ প্রণালি বন্ধ করে দিতে পারে। সেখান থেকে প্রতিদিন ১৫ দশমিক ৭ মিলিয়ন জ্বালানি তেল পরিবাহিত হয়। বিশ্বে যে জ্বালানি তেল সমুদ্রপথে পরিবাহিত হয়, তার ২০ ভাগ এই ‘স্ট্রেট অব হরমুজ’ থেকে পরিবাহিত হয়। এখন ইরানের রেভ্যুলেশনারি গার্ড যদি এ প্রণালিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে, তা বিশ্বে মারাত্মক প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে। সুতরাং একটা প্রশ্ন থাকলই যুক্তরাষ্ট্র এ যুদ্ধের অনুমোদন দেবে কিনা? যুদ্ধ না হলেও এ অঞ্চলে উত্তেজনা বাড়ছে। একদিকে সিরিয়া সংকটের যখন কোনো সমাধান হয়নি, তখন সৌদি-কাতার যুদ্ধ নতুন আরেকটি ফ্রন্ট ‘ওপেন’ হলো। সৌদি লবি এখন যে ১৩ দফা দাবি উত্থাপন করেছে, তার অনেকগুলোই কাতারের জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী। আলজাজিরা বন্ধ করে দেয়ার দাবি উঠেছে। এটা কাতার করবে না। আলজাজিরা যেসব প্রতিবেদন সম্প্রচার করে, তা যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল এবং মিসরবিরোধী। ফলে এ দেশগুলো এ সম্প্রচার চাইবে না এটাই স্বাভাবিক। এটা কাতার বন্ধ করবে না। তুরস্কের সেনাঘাঁটি বন্ধ করার দাবি উঠেছে। তুরস্ক কাতারের নিরাপত্তা দিচ্ছে এবং কাতারের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। তাই কাতার এটিও চাইবে না। হামাস ও ইসলামিক ব্রাদারহুডের মতো সংগঠনের সঙ্গে কাতারের সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবি জানানো হয়েছে। এক্ষেত্রে কাতার হয়তো কিছুটা নমনীয় হতে পারে। এ ব্যাপারে কাতার চায় একটি ‘ডায়ালগ’, অর্থাৎ আলাপ-আলোচনা। আরব লিগ অথবা জিসিসি এ উদ্যোগটি নিতে পারে। একটা কথা বিবেচনায় নেয়া প্রয়োজন আর তা হচ্ছে, যদি কাতারের ওপর ‘চাপ’ অব্যাহত রাখা হয়, তাহলে কাতার বেশি মাত্রায় ইরান, রাশিয়া ও তুরস্কের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে। কাতার-ইরান-রাশিয়া-তুরস্ক একটি সামরিক জোট গঠিত হলেও আমি অবাক হব না।
সৌদি আরব-কাতার দ্বন্দ্ব কোন দিকে মোড় নিচ্ছে, এ মুহূর্তে তা বলা যাবে না। মনে রাখতে হবে, কাতারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বড় ঘাঁটি রয়েছে। সেখানে প্রায় ১১ হাজার মার্কিন সেনা রয়েছে। অন্যদিকে তুরস্ক সেখানে ৫০০ সেনাবাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কোন কোন মার্কিন সাময়িকীতে কাতারে ‘রেজিম চেঞ্জ’ এর আভাস দেয়া হয়েছে। সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা (?) নিয়ে কাতারের শাসনকর্তা আমির তামিম বিন হামাদ আল থানিকে উৎখাত করতে পারে! তবে বিষয়টি অত সহজ নয়। তুরস্কের সামরিক বাহিনীর উপস্থিতি আমিরকে নিরাপত্তা দিতে পারে। তবে আল থানি পরিবার, যারা ১৯৭২ সাল থেকে কাতার শাসন করে আসছেন, এ পরিবারে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব নতুন কিছু নয়। ১৯৯৫ সালের জুনে বর্তমান শাসক তামিম বিন হামাদ তার বাবা আমির খলিফাকে ‘প্রাসাদ ষড়যন্ত্রে’র মাধ্যমে উৎখাত করে ক্ষমতা নিজের হাতে করায়ত্ত করেছিলেন। এখন পরিস্থিতি সেদিকে যাচ্ছে কিনা, সেটাও বলার বিষয়। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, দুটি ভ্রাতৃপ্রতিম দেশের মাঝে বিবাদ ও সংঘাত সমগ্র মুসলিমবিশ্বকে প্রভাবিত করতে পারে। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হচ্ছে। এরই মধ্যে কুয়েতি আমিরের দূতিয়ালিও ব্যর্থ হয়েছে। কোনো ফল তাতে পাওয়া যায়নি। কাতারের আমিরের সঙ্গে টেলিফোন আলাপের পর ইরানি প্রেসিডেন্ট রুহানি জানিয়েছেন, তার দেশ কাতারের পাশে থাকবে। ফলে পরিস্থিতি জুলাই মাসে কোন দিকে মোড় নেয়, সেটাই দেখার বিষয়।
পারস্য উপসাগরে জিসিসিভুক্ত চারটি দেশের সঙ্গে কাতারে দ্বন্দ্বের সমাধান হবে কোন পথে? সারা বিশ্বের দৃষ্টি এখন এ অঞ্চলের দিকে। সৌদি আরবের সঙ্গে কাতারের যুদ্ধ হবে কি হবে না, এ নিয়ে পশ্চিমা গণমাধ্যম এখন ‘অতি উৎসাহী’। এরই মধ্যে ১৩ দফা দেয়া হয়েছে কাতারকে এবং সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে ১০ দিন। এ ১০ দিন শেষ হয়ে যাবে জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহেই। তারপর কী? অনেক প্রশ্ন এখন সামনে। এ ১৩ দফা বাস্তবায়নে সৌদি আরব-আরব আমিরাত লবি কি কাতারকে বাধ্য করাতে পারবে? সৌদি আরবের সঙ্গে কাতারকে কোনো অংশেই মেলানো যাবে না। সৌদি আরব অনেক বড় দেশ। বড় অর্থনীতি। উপরন্তু সৌদি আরবের নেতৃত্বে রয়েছে একটি সামরিক জোট। প্রিন্স সালমান, যিনি এখন সৌদি আরবের দেশরক্ষামন্ত্রী, তিনি কি এই সামরিক জোটকে কাতারের বিরুদ্ধে ব্যবহার করবেন সেটাও একটা বড় প্রশ্ন। এরই মধ্যে ওই সংকটের নেপথ্যে ‘নায়ক’ হিসেবে ইসরাইলের নাম কোনো কোনো পশ্চিমা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এ সংক্রান্ত কয়েকটি সংবাদ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ইসরাইল প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এ সংকটে জড়িয়ে গেছে। ইসরাইলের উদ্দেশ্য হচ্ছে আরব দেশগুলোর স্বীকৃতি, ন্যূনতম অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটা মদদ আছে এই সংকটে। পাঠক স্মরণ করতে পারেন, ট্রাম্প মে মাসে তার প্রথম বিদেশ সফরে সৌদি আরব গিয়েছিলেন। সেখানে আরব-যুক্তরাষ্ট্র শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন এবং সৌদি আরবের সঙ্গে অস্ত্র বিক্রয়সংক্রান্ত একটি চুক্তিও স্বাক্ষর করেছিলেন। ওই সম্মেলনে তিনি হামাস ও ইসলামিক ব্রাদারহুডের মতো সংগঠনের সঙ্গে সম্পর্ক রাখায় কাতারের সমালোচনা করেছিলেন। একই সঙ্গে ইরানেরও সমালোচনা করেছিলেন। এর পরপরই পারস্য উপসাগরে এ সংকটের জন্ম হয়। অথচ সৌদি আরব ও কাতার উভয় রাষ্ট্রই ইসলামিক ঐক্য সংস্থা ও জিসিসির সদস্য। এ সংকট শীর্ষ পর্যায়ে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যেত। কিংবা ওআইসি ও জিসিসি একটি উদ্যোগ নিতে পারত; কিন্তু তা হলো না। দিন যতই যাচ্ছে ততই সংকটের গভীরতা বাড়ছে। প্রশ্ন হচ্ছে ওই সংকট যদি বাড়ে, যদি আদৌ একটি ‘যুদ্ধ’ শুরু হয়ে যায়, তাহলে লাভ হবে কার? কাতার, সৌদি আরব কিংবা আরব আমিরাত কোনো দেশেরই লাভ হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। স্পষ্ট করে বলা যায়, এতে লাভ হবে ইসরাইলের। পাঠকদের এ প্রসঙ্গে ইনন পরিকল্পনা (Yinon Plan) সম্পর্কে একটা ধারণা দিতে চাই। যুদ্ধ যদি প্রলম্বিত হয়, তাহলে অনেক রাষ্ট্র ভেঙে যাবে। আর তাতে লাভ ইসরাইলের। কট্টরপন্থী ওদেদ ইনন (Oded Yinon)  ১৯৮২ সালে বিশ্ব ইহুদি কংগ্রেসে ইসরাইলের নিরাপত্তার স্বার্থে একটি বৃহত্তর ইসরাইলি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন। এ পরিকল্পনায় বৃহত্তর ইসরাইলি রাষ্ট্রটি হবে একদিকে নীল নদ, অন্যদিকে ইউফ্রেটিস নদী পর্যন্ত বিস্তৃত। একই সঙ্গে বর্তমানে এ অঞ্চলে যেসব রাষ্ট্র রয়েছে, তা ভেঙে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিভিত্তিক ও নৃতাত্ত্বিক একাধিক রাষ্ট্র হবে। ওই রাষ্ট্রগুলো তাদের স্বার্থে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলবে। বর্তমান পরিস্থিতি কি সেদিকেই যাচ্ছে? প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মে মাসে রিয়াদে আরব-আমেরিকান সম্মেলনে যোগদান, সৌদি আরবের সঙ্গে ১১ হাজার ডলারের অস্ত্রচুক্তি স্বাক্ষর, তার ইসরাইল সফর, কাতারের সঙ্গে কয়েকটি আরব রাষ্ট্রের সম্পর্কছেদ, কায়রোয় গোপনে সিসি-নেতানিয়াহু সাক্ষাৎ মূলত সব একই সূত্রে গাঁথা। কাতারে ক্ষমতার পরিবর্তন ও কাতারের বিশাল গ্যাস রিজার্ভের ওপর পূর্ণ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনাকেও একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না। বিশ্বের তৃতীয় বড় গ্যাস রিজার্ভ রয়েছে কাতারে (রাশিয়া ও ইরানের পর) কাতারের ডলফিন পাইপলাইন দিয়ে প্রতিদিন ১ দশমিক ৮ বিলিয়ন কিউবিক ফুট গ্যাস আরব আমিরাতে সরবরাহ করা হয়। এ গ্যাস দিয়ে আরব আমিরাত বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। আরব আমিরাত চায় কম মূল্যে এ গ্যাস। ইউরোপেও যায় কাতারের গ্যাস। কাতার তার গ্যাস দিয়ে এলএনজি তৈরি করে, যা বিশ্বে রফতানি করা হয়। বাংলাদেশ ২০১৩ সালে কাতার থেকে এলএনজি কেনার জন্য একটি চুক্তি করেছিল। এখন সমুদ্রেও কাতারি গ্যাস রফতানিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে। উদ্দেশ্য একটাই, কাতারের অর্থনীতিতে ধস নামানো। মাত্র ২৬ লাখ লোকের দেশ কাতার, যে লোক সংখ্যার একটা বড় অংশ আবার পাকিস্তান-ভারত-বাংলাদেশ থেকে যাওয়া। আদি কাতারিরা মূলত সরকারি কাজ করেন। আধাদক্ষ জনগোষ্ঠী কাজ করে কনস্ট্রাকশন সেক্টরে, যার শতভাগ উপমহাদেশের মানুষ। অথচ কাতারের জিডিপির পরিমাণ ৩৫৩ দশমিক ১৪৩ বিলিয়ন ডলার। মাথাপিছু আয় ১ লাখ ৪৫ হাজার ৮৯৪ ডলার, যা সৌদি আরবের চেয়ে বেশি (৫৫ হাজার ২২৯ ডলার)। এ সংকটের পেছনে কাতারের জ্বালানি সম্পদ এবং কাতারের বিশাল অর্থনীতি একটা ফ্যাক্টর। বর্তমান সংকটকে কেন্দ্র করে কাতারের ওপর ‘চাপ’ প্রয়োগ করে নিজেদের স্বার্থ (বিশেষ করে ইসরাইলি স্বার্থ) আদায় করার একটি ‘উদ্যোগ’ আমরা আগামীতে লক্ষ করব। যুক্তরাষ্ট্র কাতারের ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করতে পারে এবং জাতিসংঘকেও বাধ্য করতে পারে এ ধরনের একটি উদ্যোগ গ্রহণ করতে। এর পেছনে কলকাঠি নাড়ছে ইসরাইল। এক তথ্যে দেখা গেছে, মার্কিন কংগ্রেসে কাতারের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করা সম্পর্কিত একটি বিল জমা দেয়া হয়েছে। বিলটি যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ ‘হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভসে’র কমিটিতে জমা দেয়া হয়েছে। একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘রেসপনসিভ পলিটিকস’ (ওয়াশিংটন) এর তথ্য অনুযায়ী, যেসব কংগ্রেস সদস্য এ বিল উত্থাপন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত, তারা ২০১৬ সালের মার্কিন কংগ্রেস নির্বাচনের সময় প্রত্যেকে ইসরাইলি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে মোট ১০ লাখ ৯ হাজার ৭৯৬ ডলার ‘সাহায্য’ পেয়েছেন। ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা কর্তৃক পরিচালিত ‘ফাউন্ডেশন ফর ডিফেন্স অব ডেমোক্র্যাসির পক্ষ থেকেও ওইসব কংগ্রেসম্যানকে আর্থিক সাহায্য দেয়া হয়েছে। ক্রিড নিউটন ‘ইনফরমেশন ক্লিয়ারিং হাউসে’ যে প্রবন্ধটি লেখেন (জুন ১২, ২০১৭), তাতে উল্লেখ করা হয়েছে ‘হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভসে’র ফরেন রিলেশন্স কমিটির সদস্য কংগ্রেসম্যান এড রয়েস ও এলিয়ট অ্যাঙ্গেল একেকজন প্রায় ২ লাখ বা তারও বেশি অর্থ ‘গ্রহণ’ করেছেন। এর অর্থ পরিষ্কার একটি সৌদি-ইসরাইল-আরব আমিরাত লবি চাচ্ছে, কাতারের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করা হোক। তারা এজন্য ওয়াশিংটনে ‘লবিজ ফার্ম’ও নিয়োগ করেছে। কাতারের বিরুদ্ধে যে অভিযোগটি আনা হয়েছে, অর্থাৎ কাতার সন্ত্রাসীদের অর্থায়ন করেছে, তার পেছনে সত্যতা কতটুকু এটা নিয়ে প্রশ্ন আছে। কাতার ইসলামিক ব্রাদারহুড, হামাস কিংবা হিজবুল্লাহ গ্রুপকে সমর্থন করছে, এর পেছনে সত্যতা আছে। এখানে সমস্যাটা মূলত ইসলামিক বিশ্বের নেতৃত্ব কার হাতে থাকবে, সৌদি আরব না কাতারের হাতে সমস্যাটা মূলত সেখান থেকেই শুরু। সাম্প্রতিকালে মুসলিমবিশ্বের যে সংকট, সে সংকটের সমাধানের ব্যাপারে সৌদি আরব কোনো ভূমিকা পালন করতে পারেনি। হামাস ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিল এবং তাদের নেতৃত্বে একটি সরকারও গঠিত হয়েছিল, যা ইসরাইলের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। গাজা নিয়ন্ত্রণ করে হামাস। আর ইসরাইলি ট্যাংক এবং বিমান যখন গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছিল, তখন এগিয়ে এসেছিল কাতার। এমনকি সিরিয়া, ইরাক, লিবিয়া সংকটেও কোনো সৌদি ভূমিকা ছিল না। আফ্রিকার মুসলমানপ্রধান দেশগুলোর দারিদ্র্য (সুদান, দারফুর, সাদ, সোমালিয়া, নাইজেরিয়া) দূরীকরণে সৌদি আরবের কোনো আর্থিক সহযোগিতা নেই। অথচ সৌদি আরবের অর্থনীতি ১ দশমিক ৮০৩ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি। এ অর্থ সৌদি রাজপরিবারের শত শত প্রিন্স ও প্রিন্সেস নিজেদের ব্যক্তিগত বিলাস ও কাজে ব্যবহার করেন। অন্যদিকে কাতারের তরুণ আমিরের নিজস্ব একটি চিন্তাভাবনা আছে। ২০১২ সালে কাতার প্রায় ১০০টি দেশে, যার মাঝে মুসলমানপ্রধান দেশ বেশি, ৫২৪ মিলিয়ন পাউন্ড আর্থিক সহায়তা দিয়েছিল যাতে এ গরিব দেশগুলো এসডিজি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারে। কাতার একটি ছোট দেশ হওয়া সত্ত্বেও (আয়তন ১১ হাজার ৫৮৬ বর্গকিলোমিটার) সুদান-সাদ দ্বন্দ্বে, সুদানের দারফুর সংকটে, জিবুতি-ইরিত্রিয়া দ্বন্দ্বে এবং আফগানিস্তানের তালেবান সংকটে একটি বড় ভূমিকা পালন করেছেÑ যা সৌদি আরবের নীতিনির্ধারক, বিশেষ করে যুবরাজ প্রিন্স সুলতানের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এতে মুসলিমবিশ্বে সৌদি আরবের গ্রহণযোগ্যতা ছিল প্রশ্নের মুখে। আর এভাবেই ধীরে ধীরে সংকটের গভীরতা বেড়েছিল। এখানে বলা ভালো, সৌদি আরবের সঙ্গে কাতারের যুদ্ধ এই প্রথম নয় এর আগেও ১৯৯২ সালে, ২০০২ সালে ও ২০১৪ সালে সৌদি আরব কাতারের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে গিয়েছিল এবং দোহা থেকে তার রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। তবে এবারের প্রেক্ষাপট কিছুটা ভিন্ন।
Daily Alokito Bangladesh
02.07.2017

1 comments: