রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

ট্রাম্প বিশ্বকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?



মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বকে কোন দিকে নিয়ে যাচ্ছেন কিংবা মার্কিন সমাজের জন্য কী মেসেজ তিনি দিচ্ছেন? সম্প্রতি তার একাধিক সিদ্ধান্ত তাকে যেমন বিতর্কিত করেছে, তেমনি তার পরিবারের সদস্যরা প্রেসিডেন্সির ভাবমূর্তিও নষ্ট করেছেন। ছয়টি আরব তথা মুসলিম দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ব্যাপারে যে নিষেধাজ্ঞা তিনি জারি করেছিলেন, তা একাধিক আদালতে বাতিল ঘোষিত হলেও শেষ পর্যন্ত সুপ্রিমকোর্টের এক আদেশে সে নিষেধাজ্ঞার আংশিক বাস্তবায়নে তিনি সফল হয়েছেন। পাঠকদের স্মরণ করিয়ে দিই, ডোনাল্ড ট্রাম্প কম গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করেছিলেন। জানুয়ারিতে (২০১৭) তার গ্রহণযোগ্যতা ছিল শতকরা ৪০ ভাগ। অথচ ওবামা যখন দায়িত্ব নিয়েছিলেন (২০০৯), তখন তার গ্রহণযোগ্যতা ছিল ৭৯ ভাগ। আর বুশের (২০০১) ছিল ৬২ ভাগ, ক্লিনটনের (১৯৯৩) ৬৮ ভাগ। আর গেল জুনে অর্থাৎ দায়িত্ব নেয়ার ৫ মাস পরও একটি পরিসংখ্যান আমরা দিতে পারি। পিউ রিসার্চের গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে, শতকরা ৩৯ ভাগ মার্কিন নাগরিক ট্রাম্পের কর্মকা- সমর্থন করছেন; অন্যদিকে ৫৬ ভাগ সমর্থন করছেন না। নির্বাচকম-লীর ভোটে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন সত্য; কিন্তু তিনি ৫ মাস পরও তার বিশ্বাসযোগ্যতার স্তর বাড়াতে পারেননি। পিউ রিসার্চের গবেষণায় উঠে এসেছে অতীতে প্রেসিডেন্টদের ওপর আস্থা রখার বিষয়টিও। প্রেসিডেন্ট ক্লিনটন যখন দায়িত্ব নেন (১৯৯৩) তার ১ মাস পর ৬৩ ভাগ মানুষ তার ওপর আস্থা রেখেছিল। বুশের (২০০১) ওপর ৬০ ভাগ, ওবামার (২০০৯) ওপর ৭৬ ভাগ মানুষের আস্থা ছিল (ট্রাম্পের মাত্র ৩৯ ভাগ)। প্রথমে সাতটি মুসলমান দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা তিনি নির্বাহী আদেশ বলে জারি করেছিলেন। ইরাককে তিনি পরে এ তালিকা থেকে বাদ দেন। আদালত ওই নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করেছিলেন। কিন্তু ট্রাম্প বিষয়টি নিয়ে গিয়েছিলেন সুপ্রিমকোর্টে। সেখানে তিনি আংশিক বিজয়ী হন। ট্রাম্প থেমে থাকেননি। ট্রাম্প প্রশাসন নতুন একটি অভিবাসন নীতিমালার ব্লুপ্রিন্ট প্রকাশ করেছে। ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি থেকে ইস্যু করা দুইটি মেমোয় উল্লেখ করা হয়েছে, অনথিভুক্ত অভিবাসীদের বের করে দেয়া হবে এবং দ্রুততার সঙ্গে তাদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে। নতুন এ অভিবাসনসংক্রান্ত নীতিমালা বা নির্দেশনামাকে দেখা হচ্ছে নিরাপত্তা পরিকল্পনার অংশ হিসেবে। এর অর্থ হচ্ছে ট্রাম্প অভিবাসনসংক্রান্ত তার অবস্থান থেকে এতটুকুও সরে আসছেন না। এরই মধ্যে তার দুই মন্ত্রী মেক্সিকো গেছেন এবং অবৈধ মেক্সিকান অভিবাসীদের ফেরত পাঠানো নিয়ে কথা হয়েছে। ইউরোপে ট্রাম্পবিরোধী জনমত বাড়ছে। চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নিয়ে এরই মধ্যে নানা প্রশ্ন উঠেছে।
গেল জানুয়ারিতে ডাভোসে যে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের সম্মেলন হয়ে গেল, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সেখানে একটি অনুষ্ঠানে জানিয়েছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন মডেলের একটি সম্পর্ক শুরু করতে চায় বেইজিং। যদিও এ নয়া সম্পর্ক নিয়ে শি জিনপিং বিস্তারিত কিছু বলেননি, তবে চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে যে আগামীতে অন্যতম আলোচিত বিষয় হয়ে থাকবে, সে ব্যাপারে দ্বিমত করার কোনো সুযোগ নেই। এরই মধ্যে ইউরোপ এমনকি জার্মানি সম্পর্কে তিনি যেসব মন্তব্য করেছেন, তা তাকে আরও বিতর্কিত করেছে। জার্মানিতে ১০ লাখ সিরীয় অভিবাসীকে সে দেশে আশ্রয় দেয়ার ঘটনাকে ট্রাম্প আখ্যায়িত করেছিলেন ‘সর্বনাশা ভুল’ হিসেবে। জার্মানরা এটা পছন্দ করেনি। জার্মান চ্যান্সেলর মকেল এর প্রত্যুত্তরে বলেছিলেন, তাদের ভাগ্য তাদের হাতে ছেড়ে দেয়ার জন্য। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রন এক ধাপ এগিয়ে গিয়ে বলেছিলেন, তাদের বাইরের কোনো লোকের উপদেশের প্রয়োজন নেই। ট্রাম্প ন্যাটোকে আখ্যায়িত করেছিলেন ‘সেকেলে’ হিসেবে। এটা নিয়ে ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোয় এক ধরনের শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ট্রাম্প ব্রেক্সিটকে সমর্থন করেছিলেন। ব্রিটেন এখন ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে আলাদা হয়ে যাচ্ছে। অন্য ইউরোপিয়ান রাষ্ট্রগুলো ব্রিটেনকে অনুসরণ করুক, এটাও ট্রাম্প চান। ফলে ইইউর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যে ট্র্যাডিশনাল সম্পর্ক, তাতে এখন একটি অবিশ্বাসের জন্ম হয়েছে।
নির্বাচনে বিজয়ের পর তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তার ‘ফোনালাপে’ একটি সম্ভাবনার জন্ম হয়েছিল যে, যুক্তরাষ্ট্র ‘এক চীন নীতি’ পরিত্যাগ করতে পারে! চীন বিষয়টিকে খুব সহজভাবে নেয়নি। চীন তার ‘টুইটার কূটনীতি’ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। তবে একটা বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন রেক্স টিলারসন, যিনি এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নয়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী। টিলারসন বলেছেন, দক্ষিণ চীন সাগরে চীন যে কৃত্রিম দ্বীপ বানাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত সেখানে চীনাদের যাওয়ার পথ বন্ধ করে দেয়া। এর প্রতিবাদে চীন বলছে, যুক্তরাষ্ট্র যদি তা করে, তাহলে তা এক ‘ভয়ংকর সংঘাতে’ রূপ নেবে। তবে রাশিয়া সম্পর্কে তিনি বরাবরই নরম মনোভাব দেখিয়ে আসছেন। যুক্তরাষ্ট্র ওবামার শাসনামলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করে। এমনকি রাশিয়াকে জি-৮ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। রাশিয়া এখন চাইছে ওই অবরোধ প্রত্যাহার হোক এবং জি-৮ এ আবার রাশিয়ার অন্তর্ভুক্তিকে সমর্থন করুক যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু ট্রাম্পের জন্য কাজটি খুব সহজ নয়। গেল ৫ মাসে তিনি একের পর এক যেসব সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন এবং তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিচ্ছেন, তা তার নিজ দল তথা বিশ্ববাসীর কাছে তার গ্রহণযোগ্যতাকে একটি প্রশ্নের মাঝে ফেলে দিয়েছে। রিপাবলিকান দলীয় সিনেটর ম্যাককেইন ট্রাম্পের ‘মুসলমান নিষিদ্ধ’ করার সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করবেন বলে জানিয়েছেন। অন্যদিকে ওবামা প্রশাসনের দুই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি জন কেরি (পররাষ্ট্রমন্ত্রী) ও সুসান রাইস (জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা) সানফ্রান্সিসকোর আপিল কোর্টে একটি লিখিত বক্তব্যে জানিয়েছিলেন, ট্রাম্পের এ মুসলমান নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত কোনোমতেই ‘গ্রহণযোগ্য’ নয়। তাদের ভাষায়, এসব দেশের নাগরিকরা কোনো ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকিতেও ছিলেন না। ফলে বোঝাই যায়, ট্রাম্পের ওই সিদ্ধান্ত খোদ যুক্তরাষ্ট্রেই বড় বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। এটা এখনও স্পষ্ট নয়, ট্রাম্প যে নয়া অভিভাসন কর্মসূচি গ্রহণ করতে যাচ্ছেন, তাতে কী কী বিষয় অন্তর্ভুক্ত করবেন। তবে আন্তর্জাতিক সম্পর্কে তার নিজের অজ্ঞতা এবং তার প্রশাসনে যথেষ্ট যোগ্য লোকের অভাব থাকায় আগামী দিনের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটা ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাবে। উপরন্তু জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত কপ-২১ চুক্তির (যা প্যারিসে ও জাতিসংঘে স্বাক্ষরিত হয়েছে) সমর্থন না করা, কিউবার সঙ্গে ‘সমঝোতা’কে অস্বীকার করা, চীনের সঙ্গে এক ধরনের ‘বাণিজ্য যুদ্ধ’, ন্যাটোয় যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণ কমিয়ে আনা, ইরানের সঙ্গে সঙ্গে পারমাণবিক সমঝোতাকে অস্বীকার, মুক্তবাণিজ্য চুক্তি বাতিল ইত্যাদি আগামীতে বিশ্বে ট্রাম্পের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে না; তার গ্রহণযোগ্যতা হ্রাস পাবে। এখন আমাদের দেখতে হবে, তার এ ‘রাজনীতি’ ২১ শতকের তৃতীয় দশকে যুক্তরাষ্ট্রকে কোথায় নিয়ে যায়। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, যুক্তরাষ্ট্রের যে কোনো সিদ্ধান্ত বিশ্বে বড় পরিবর্তন ডেকে আনার জন্য যথেষ্ট। তার বিষয়ে বিশ্ব নেতাদের যে ‘হতাশা’ এরই মধ্যে প্রকাশিত হয়েছে, তা যে কোনো প্রেসিডেন্টের জন্য খারাপ খবর। মানসিকভাবে তিনি কতটুকু সুস্থ, সে ব্যাপারে এরই মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। বহুল প্রচারিত ইকোনমিস্ট পত্রিকায় ৪ ফেব্রুয়ারি তাকে নিয়ে যে প্রচ্ছদ প্রতিবেদন তৈরি করেছে(An Insurgent in the White House), তা শুধু লজ্জাজনকই নয়, বরং একটি আতঙ্কের কারণও বিশ্ববাসীর জন্য। প্রচ্ছদের ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ট্রাম্প একটি ‘মনোটোভ ককটেল’ নিক্ষেপ করছেন! এ ‘ছবি’ অনেক কিছুই বলে।
সাপ্তাহিক ইকোনমিস্টের মন্তব্যও এখানে উল্লেখ করা যায়। সাময়িকীটি মন্তব্য করেছে এভাবেÔIt is not too late for him to conclude how much worse, to ditch his bomb-throwers and switch courses. The world should hope for that out come. But it must prepare for troubleবিশ্ব তৈরি থাকবে নতুন সংকটের জন্য! আমরা জানি না, এ ‘সংকট’টা নয়া বিশ্ব ব্যবস্থাকে কীভাবে প্রভাবিত করবে। তবে মাত্র ৫ মাসে তিনি যে একের পর এক বিতর্ক সৃষ্টি করে চলেছেন, তা আমাদের জন্য কোনো ভালো সংবাদ নয়। তবে একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের এক সিনিয়র এজেন্ট (সাবেক) জুরাল আভিভ। আভিভের মতে, ট্রাম্প আগামী কিছুদিন, ১ বছরের মধ্যে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’র জন্য ‘ইমপিচ’ বা অভিশংসিত হতে পারেন! শুধু যে জুরাল আভিভের মুখ থেকে এ ধরনের কথা বেরিয়েছে তা নয়; বরং অনেক পর্যবেক্ষকের লেখায় আমি এ ধরনের আভাস পেয়েছি। অভিশংসনের মূল কারণ হচ্ছে রাশিয়ার সঙ্গে তার সম্পর্ক। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য তিনি নির্বাচনের আগে (নভেম্বর ২০১৬) রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন তথা রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে একটা সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন। এ বিষয়টি এখন স্পষ্ট। ট্রাম্প ক্ষমতা নেয়ার আগেই তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা, যারা এখন প্রশাসনে আছেন, তারা রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করতেন। তাদের সে কল রেকর্ড মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের কাছে আছে। এর রেশ ধরেই ট্রাম্প প্রশাসনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ফ্লিন পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন।
নিউইয়র্ক টাইমস আমাদের জানাচ্ছে, ট্রাম্প প্রশাসনের চার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি নিয়মিত রাশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। নির্বাচনের আগে রাশিয়া ট্রাম্পের দুর্বলতা বুঝে তাকে রাশিয়ার স্বার্থে ব্যবহার করেছিল। বিশ্লেষকরা এ ঘটনাকে এখন আখ্যায়িত করেছেন Russia Gate হিসেবে (Institute for policy studies)। অনেকটা নিক্সনের Water Gate কেলেঙ্কারির মতো। সর্বশেষ ঘটনায় তার বড় ছেলে ট্রাম্প জুনিয়র স্বীকার করেছেন, তিনি নির্বাচনের আগে রাশিয়ার সঙ্গে (জনৈক রাশিয়ান আইনজীবী, সম্ভবত রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে জড়িত) যোগাযোগ করেছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল, হিলারি ক্লিনটনের নির্বাচনী প্রচারণাসংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করা। এর আগে তার মেয়ের জামাই কুশনারের (হোয়াইট হাউস উপদেষ্টা) সঙ্গে রাশিয়ার যোগাযোগের বিষয়টি জানা গিয়েছিল। ফলে এটা এখন স্পষ্ট, ট্রাম্প নিজে ও তার পরিবারের সদস্যরা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে রাশিয়ার শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন এবং রাশিয়ার সাহায্য নিশ্চিত করেছিলেন, যাতে ট্রাম্প নিজে নির্বাচনে বিজয়ী হতে পারেন। বিষয়টি এখন স্পষ্ট। ভবিষ্যতে এ বিষয়টি তার বিরুদ্ধে অভিশংসনের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। সম্প্রতি দুইটি বিষয়ে তিনি অভ্যন্তরীণভাবে ও বহির্বিশ্বে ব্যাপক বিতর্কের সম্মুখীন হয়েছেন। প্রথমটি হচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত কপ-২১ এর সিদ্ধান্ত থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত। জুলাই মাসে হামবুর্গে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল জি-২০ এর শীর্ষ সম্মেলন। সেখানে জি-২০ ভুক্ত ১৯ দেশ (ইউরোপিয়ান ইউনিয়নসহ) যুক্তরাষ্ট্রকে বাদ দিয়ে কপ-২১ এর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে তাদের পূর্ণ প্রতিশ্রুতি আবার ব্যক্ত করেছে। এর অর্থ হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব আসরে একা হয়ে যাওয়া।
দ্বিতীয়টি হচ্ছে, তার পরিবারের সদস্যদের ‘অবৈধ ক্ষমতা’ প্রয়োগ। হামবুর্গে তার মেয়ে ইভানকা ট্রাম্পের মার্কিন প্রেসিডেন্টের জন্য বরাদ্দকৃত চেয়ারে বসা, তার জ্যেষ্ঠ সন্তানের কাতারে ব্যবসায়িক স্বার্থ ও প্রশাসনকে ব্যবহার করা, তার মেয়ের জামাই কুশনারের (যিনি এখন প্রশাসনের অংশ) অবৈধ ব্যবসায়িক ‘কানেকশন’। প্রতিটি বিষয় তিনি নিজেকে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেছেন। ফলে ট্রাম্পের আগামী দিনগুলো যে তাকে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিবর্তন করবে, তা বলার আর অপেক্ষা রাখে না। অতীতে কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট এভাবে বিতর্কিত হননি। এতে বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের গ্রহণযোগ্যতা ব্যাপকভাবে হ্রাস পাচ্ছে। কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের জন্য তা ভালো খবর নয়।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বকে কোন দিকে নিয়ে যাচ্ছেন কিংবা মার্কিন সমাজের জন্য কী মেসেজ তিনি দিচ্ছেন? সম্প্রতি তার একাধিক সিদ্ধান্ত তাকে যেমন বিতর্কিত করেছে, তেমনি তার পরিবারের সদস্যরা প্রেসিডেন্সির ভাবমূর্তিও নষ্ট করেছেন। ছয়টি আরব তথা মুসলিম দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ব্যাপারে যে নিষেধাজ্ঞা তিনি জারি করেছিলেন, তা একাধিক আদালতে বাতিল ঘোষিত হলেও শেষ পর্যন্ত সুপ্রিমকোর্টের এক আদেশে সে নিষেধাজ্ঞার আংশিক বাস্তবায়নে তিনি সফল হয়েছেন। পাঠকদের স্মরণ করিয়ে দিই, ডোনাল্ড ট্রাম্প কম গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করেছিলেন। জানুয়ারিতে (২০১৭) তার গ্রহণযোগ্যতা ছিল শতকরা ৪০ ভাগ। অথচ ওবামা যখন দায়িত্ব নিয়েছিলেন (২০০৯), তখন তার গ্রহণযোগ্যতা ছিল ৭৯ ভাগ। আর বুশের (২০০১) ছিল ৬২ ভাগ, ক্লিনটনের (১৯৯৩) ৬৮ ভাগ। আর গেল জুনে অর্থাৎ দায়িত্ব নেয়ার ৫ মাস পরও একটি পরিসংখ্যান আমরা দিতে পারি। পিউ রিসার্চের গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে, শতকরা ৩৯ ভাগ মার্কিন নাগরিক ট্রাম্পের কর্মকা- সমর্থন করছেন; অন্যদিকে ৫৬ ভাগ সমর্থন করছেন না। নির্বাচকম-লীর ভোটে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন সত্য; কিন্তু তিনি ৫ মাস পরও তার বিশ্বাসযোগ্যতার স্তর বাড়াতে পারেননি। পিউ রিসার্চের গবেষণায় উঠে এসেছে অতীতে প্রেসিডেন্টদের ওপর আস্থা রখার বিষয়টিও। প্রেসিডেন্ট ক্লিনটন যখন দায়িত্ব নেন (১৯৯৩) তার ১ মাস পর ৬৩ ভাগ মানুষ তার ওপর আস্থা রেখেছিল। বুশের (২০০১) ওপর ৬০ ভাগ, ওবামার (২০০৯) ওপর ৭৬ ভাগ মানুষের আস্থা ছিল (ট্রাম্পের মাত্র ৩৯ ভাগ)। প্রথমে সাতটি মুসলমান দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা তিনি নির্বাহী আদেশ বলে জারি করেছিলেন। ইরাককে তিনি পরে এ তালিকা থেকে বাদ দেন। আদালত ওই নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করেছিলেন। কিন্তু ট্রাম্প বিষয়টি নিয়ে গিয়েছিলেন সুপ্রিমকোর্টে। সেখানে তিনি আংশিক বিজয়ী হন। ট্রাম্প থেমে থাকেননি। ট্রাম্প প্রশাসন নতুন একটি অভিবাসন নীতিমালার ব্লুপ্রিন্ট প্রকাশ করেছে। ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি থেকে ইস্যু করা দুইটি মেমোয় উল্লেখ করা হয়েছে, অনথিভুক্ত অভিবাসীদের বের করে দেয়া হবে এবং দ্রুততার সঙ্গে তাদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে। নতুন এ অভিবাসনসংক্রান্ত নীতিমালা বা নির্দেশনামাকে দেখা হচ্ছে নিরাপত্তা পরিকল্পনার অংশ হিসেবে। এর অর্থ হচ্ছে ট্রাম্প অভিবাসনসংক্রান্ত তার অবস্থান থেকে এতটুকুও সরে আসছেন না। এরই মধ্যে তার দুই মন্ত্রী মেক্সিকো গেছেন এবং অবৈধ মেক্সিকান অভিবাসীদের ফেরত পাঠানো নিয়ে কথা হয়েছে। ইউরোপে ট্রাম্পবিরোধী জনমত বাড়ছে। চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নিয়ে এরই মধ্যে নানা প্রশ্ন উঠেছে।
Daily Alokito Bangladesh
16.07.2017

1 comments:

  1. sir, the last part of recent articles are being doubled.

    ReplyDelete