রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

মোদির ওপর আস্থা রাখাটা জরুরি




ভারতের স্বাধীনতার ৭১তম বছর পালন উপলক্ষে গত ১৫ আগস্ট নয়াদিলি্লর ঐতিহাসিক মাঠে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যে ভাষণটি দিয়েছেন, তা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। ভারতে উগ্র হিন্দুত্ববাদ যখন মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে, যখন সদ্য বিদায়ী ভাইস প্রেসিডেন্ট তার আশঙ্কার কথা বলেছেন। তখন মোদি তার ভাষণে স্পষ্ট করেছেন ভারতে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই। এটা একটা আশার জাগানিয়া মন্তব্য। নিঃসন্দেহে আমরা মোদির ওপর আস্থা রাখতে পারি। তবে অনেক কাজ বাকি। দরিদ্রতা দূরীকরণ, একটি সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। মুসলমানদের আস্থায় নেয়া_ এ কাজগুলো করতে হবে। ভারত তার স্বাধীনতার ৭০ বছর পার করেছে। অনেক অর্জন ভারতের আছে। অর্থনীতি শক্তিশালী হয়েছে। অর্থনীতির আকার বেড়েছে। কিন্তু দরিদ্রতা কমেনি। প্রশ্ন তাই সেখানেই ৭০ বছরের এই ভারতকে নিয়ে আমরা কতটুকু আশাবাদী হতে পারব? গণপিটুনিতে মৃত্যু, কুসংস্কার বিরোধিতাকারীদের মৃত্যু, ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে কৃষকদের আত্মহত্যা, কিংবা 'অর ওয়াপসি' (ঘরে ফেরা, হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে যারা অন্য ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন, তাদের পুনরায় হিন্দু ধর্মে প্রত্যবর্তন)_ এসব ঘটনাবলি ভারতীয় মূল্যবোধের পতনের উদাহরণ। মোদি এর আগে নিজে বলেছেন, 'অবৈধ মুসলমান'দের (?) ভারত থেকে বের করে দেয়ার! টার্গেট করা হচ্ছে ভারতীয় মুসলমানদের। ভারতীয় জনগোষ্ঠীর মাঝে শতকরা ২৪.৬৪ ভাগ হচ্ছে মুসলমান (১৮৯ মিলিয়ন, মোট জনগোষ্ঠী ১৩৪ কোটি)। ২০২৫ সালে মুসলমানদের সংখ্যা দাঁড়াবে ৩১০ মিলিয়ন, যা বিশ্বের মুসলমান জনগোষ্ঠীর ১১ ভাগ। অথচ এই মুসলমানরাই আজ নির্যাতনের শিকার। মোদির এই হিন্দুত্ববাদের দর্শনে উৎসাহিত হয়ে উত্তর প্রদেশের এক সংসদ সদস্য সুরেন্দ্র সিং প্রকাশেই বলেছেন। 'ভারত হিন্দুরাষ্ট্র হবে, মুসলমানদের হিন্দু বানানো হবে।' একুশ শতকে এসে মানুষ দেখছে ভারতীয় গণতন্ত্রের এক রূপ।
এই গণতন্ত্র উগ্র হিন্দুবাদকে উসকে দেয়া। কিন্তু কৃষকদের ঋণ পরিশোধ সহায়তা করতে পারে না। এই গণতন্ত্র ভারতে শতশত 'হাজার কোটিপতি' সৃষ্টি করেছে, কিন্তু ধর্ষণ বন্ধ করতে পারেনি। ইন্ডিয়া টুডে সাময়িকীর মতে, প্রতিদিন আন্তত ৩ জন দলিত নারী ধর্ষণের শিকার হন, অথচ এরা জনগোষ্ঠীর ৫ ভাগের মাত্র ১ ভাগ। জাতপাতের সমস্যা ভারতে অনেক বেশি। ভারতের গণতন্ত্র নিয়ে আমরা গর্ব করি। কিন্তু এই গণতন্ত্র হায়দরাবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের দলিত ছাত্র রোহিত ভেমুলার উচ্চ শিক্ষা নিশ্চিত করতে পারেনি। দলিত শ্রেণির প্রতিনিধি হিসেবে তিনি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছিলেন বটে, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে সন্ত্রাসী ও ভারত বিদ্বেষী হিসেবে আখ্যায়িত করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করেছিল। প্রতিবাদে রোহিত আত্মহত্যা করেছিল। ভারতে গণতন্ত্র ধনীদের আরও ধনী করেছে। কিন্তু জাতিসংঘের রিপোর্ট অনুযায়ী ৬০ কোটি মানুষের সেখানে কোন 'টয়লেট' নেই, সেই টয়লেট ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারেনি। ২ দশমিক ৩০৮ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি ভারতের (পিপিপিতে ৭ দশমিক ৯৯৬ বিলিয়ন ডলার)। কিন্তু কৃষক ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে আত্মহত্যা করে।
ভারতে কৃষক আত্মহত্যার 'কাহিনী' নতুন নয়। খরা, কিংবা প্রচুর বৃষ্টি ইত্যাদির কারণে প্রচুর কৃষক আত্মহত্যা করে থাকে। মোদি যখন ২০১৪ সালের মে মাসে ভারতের বিধানসভার নির্বাচনের বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছিলেন, তখন তিনি এক স্বপ্নের কথা শুনিয়েছিলেন। নির্বাচনের আগে ৪৭৭টি জনসভার বক্তৃতা করেছিলেন। ৩ লাখ কিলোমিটার পথ ভ্রমণ করেছিলেন। ৫১৮৭টি আনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। ৩৯ লাখ অনুসারী তার টুইটারে। আর ফেসবুকে নির্বাচনের আগে তার 'লাইক'-এর সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৩০ লাখ। কিন্তু নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর তিনি খুব কমই গ্রামে গেছেন। তবে ১৯ দেশ সফর করে বিশ্ব নেতাদের কাতারে তার নামকে স্থান দিতে পেরেছেন। কী পরিমাণ বদলে গেছেন মোদি, তার বড় প্রমাণ ১০ লাখ রুপির স্যুট পরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে নয়াদিলি্লতে আমন্ত্রণ করা। এক সময় ট্রেনে ট্রেনে চা বিক্রি করে যিনি কৈশোরে জীবিকা নির্বাহ করতেন, সেই মোদি কৃষক লাল সিং গত এক বছরে কোনো আশার বাণী নিয়ে আসেননি। গরিব ঘরের সন্তান হয়েও মোদি এখন অভিজাততন্ত্রের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। জাত-পাতে বিভক্ত ভারতীয় সমাজের জন্য তিনি কোনো 'মডেল' হতে পারেননি এখনও। জমি অধিগ্রহণ বিল নিয়েও একটি মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে ভারতে। কংগ্রেস এটাকে পুঁজি করে ভারতব্যাপী একটা জনমত গড়ে তোলার উদ্যোগ নিলেও, তাতে তারা খুব লাভবান হয়েছে। তা বলা যাবে না; কিন্তু ভারতের জন্য যে সমস্যাটা প্রকট, অর্থাৎ সমাজে অসঙ্গতি তা মোদি দূর করতে পারেননি।
নিঃসন্দেহে গত তিন বছরে মোদি নিজেকে একজন উদ্যমী ও শক্তিশালী নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন। দলে আদভানীর (যিনি প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়ে ছিলেন) মতো নেতাকে পাশে সরিয়ে রেখে তিনি তার অবস্থানকে শক্তিশালী করেছেন। কিন্তু তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগটি বড় তা হচ্ছে তিনি গরিব দেশের ধনী প্রধানমন্ত্রী। প্রেসিডেন্ট ওবামাকে স্বাগত জানাতে (জানুয়ারি ২০১৫) তিনি ১০ লাখ রুপির স্যুট পরিধান করে প্রমাণ করেছিলেন, তিনি আসলে ধনী শ্রেণিরই প্রতিনিধি! এক সময় যে নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদি কৈশোরে ট্রেনের কামরায় কামরায় চা বিক্রি করতেন, মা পরের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে সংসার চলাতেন (২০১৫ সালের মে মাসের টাইম সাময়িকীর প্রতিবেদকের কাছে তা তিনি স্বীকারও করেছেন), সেই মোদির সঙ্গে এখন করপোরেট জগতের বাসিন্দাদের সম্পর্ক বেশি। ট্রেনে চা বিক্রেতাদের মতো সাধারণ ভারতীয়দের কাছে এখন তিনি 'অনেক দূরের মানুষ'। তিনি যখন বিদেশ যান, তখন তার সঙ্গে যান ব্যবসায়ীরা, যান করপোরেট হাউসের প্রতিনিধিরা। কিন্তু গত তিন বছরে তার শরীরে দশ লাখ রুপির স্যুট উঠেছে সত্য, কিন্তু দরিদ্র ভারতের চেহার তিনি পরিবর্তন করতে পারেননি। কৃষকদের আত্মহত্যার প্রবণতা তিনি দূর করতে পারেননি। ইন্টরন্যাশনাল কম্পারিজন প্রোগ্রামের মতে জাপানকে হটিয়ে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে পরিণত হয়েছে ভারত। ২০০৫ সালে ভারত দশম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ ছিল, আজ তৃতীয় অবস্থানে (সাধারণ নিয়মে এই অবস্থান সপ্তম)। আর গত বছর জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিল। তাতে বলা হয়েছে ২০২২ সালে ভারতের জিডিপি প্রবৃদ্ধি চীনের চেয়ে বেশি হবে। যেখানে চীনের প্রবৃদ্ধি হবে ৭ দশমিক ২ ভাগ, সেখানে ভারতের হবে ৭ দশমিক ৭ ভাগ। নরেন্দ্র মোদি এই ভারতকেই প্রতিনিধিত্ব করছেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে ভারতের জনগোষ্ঠীর ৩৭ ভাগ মানুষ এখনো গরিব। ৫৩ ভাগ জনগোষ্ঠীর কোনো টয়লেট নেই। যারা প্রকাশ্যেই এই কাজটি নিত্য সমাধান করেন। পরিসংখ্যান বলে বিশ্বের দুই-তৃতীয়াংশ গরিব মানুষের বাস ভারতে, যাদের দৈনিক আয় বিশ্ব ব্যাংক নির্ধারিত ১ দশমিক ২৫ সেন্টের নিচে। চিন্তা করা যায় প্রতিদিন ভারতে ৫ হাজার শিশু মারা যায় ক্ষুধা ও অপুষ্টির কারণে (ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ৮ সেপ্টেম্বর ২০১০)! গত বছর আগের এই পরিসংখ্যানে খুব পরিবর্তন এসেছে। এটা মনে করার কোনো কারণ নেই। শুধু দরিদ্রতা কেন বলি, প্রায় ৮০ কোটি লোকের দৈনিক আয় ২ দশমিক ৫০ ডলার। ৭০ ভাগ লোক গ্রামে বাসবাস করে। নারী-পুরুষের পার্থকের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের যেখানে অবস্থান (জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র ১৮৬ কে হিসাবে ধরে) ১৪৬, ভারতের সেখানে ১৩৬। নারী নির্যাতন আর নারী ধর্ষণ এত ঘটনা ঘটার পরও বন্ধ হয়নি। নারী নির্যাতনের কাহিনী নিয়ে তৈরি ছবি (যা বস্তব ঘটনার ওপর ভিত্তি করে তৈরি) গুলাব গ্যাংয়ের (উত্তর প্রদেশের বুন্দেলখ-ে গ্রামের সত্য কাহিনী) কথা নিশ্চই অনেকের মনে আছে। মোদি গত তিন বছরে এদের জন্য কি করেছেন? যদিও মাত্র তিন বছরে দরিদ্রতা কমানো সম্ভব নয়। কিংবা বিপুল তরুণ প্রজন্মের জন্য চাকরির সংস্থান করাও সম্ভব নয়। তিনি মনে করেন বিনিয়োগ বাড়ালে কর্মসংস্থান বাড়বে। কিন্তু দরিদ্রতা কমানো তার জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ। তার গুজরাট মডেল নিয়েও নানা প্রশ্ন আছে। গুজরাটে তিনি সড়ক, মহা সড়ক করেছেন। কিন্তু সাধারণ মানুষের নূ্যনতম চাহিদা পুরনে তিনি ব্যর্থ হয়ে ছিলেন। শিক্ষা খাতে বরাদ্দ অন্যান্য পণ্যের চাইতে গুজরাটে তার আমলে কম ছিল। মাত্র ১৩ দশমিক ৪ ভাগ (২০১২-১৩ সালে আসামে ছিল ২১.১ ভাগ, উত্তর খ-ে ২০.৮ ভাগ, মহারাষ্ট্র ১৯.৮ ভাগ)। শিশুমৃত্যুর হার গুজরাটে হাজারে ৩৮, অথচ কেরেলাতে ১২, তামিলনাড়ু ২১, মহারাষ্ট্র ২১। শিশুজন্ম দেবার সময় মাতৃমৃত্যুর হার গুজরাটে ৯.৫, কেরেলাতে ৩.৩, তামিলনাড়ু ৫, মহারাষ্ট্র ৫.২। যেখানে গুজরাটে খাবার পানি নিশ্চিত করা হয়েছে জনগোষ্ঠীর ৮৪ দশমিক ১ ভাগ মানুষকে, সেখানে পাঞ্জাবে এ সংখ্যা ৯৭.৬, উত্তর প্রদেশে ৮৭.৮, দিলি্লতে ৯৭.২। পাকাঘর হারিয়ানাতে ৯৪ দশমিক ৮ ভাগ মানুষের। দিলি্লর ৯৪.৭, উত্তরখ-ে ৯৩.৯। অথচ গুজরাটে মাত্র ৭৫.৭ ভাগ। ইন্ডিয়ান সেনসাস থেকে এসব তথ্য সংগ্রহ করা । ফলে গুজরাট মডেল কীভাবে সারা ভারতের জন্য একটা মডেল হবে, সেটা একটা প্রশ্ন বটে। আসলে সড়ক মহাসড়ক নির্মাণ করে ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব একটি অর্থনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তুলেছেন গুজরাটে। কিন্তু তাতে করে সাধারণ মানুষের প্রতি তার দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে। এখন এই মানসিকতায় তিনি যদি ভারতকে পরিচালনা করতে চান, তিনি ভুল করবেন। দরিদ্রতা দূর হবে না। দরিদ্রতা থেকে উঠে আসা নরেন্দ্রমোদি এখন আর দরিদ্রতম মানুষকে স্মরণ করেন না। কাজপাগলা মানুষ তিনি। সন্দেহ নেই তাতে। মাত্র ৩ ঘণ্টা তিনি ঘুমান। এ কথাটা নিজেই স্বীকার করেছেন তিনি টাইম প্রতিবেদকের কাছে। কম সরকার অনেক বেশি প্রশাসন এই হচ্ছে তার এপ্রোচ। তাতে করে ভারতকে কতটুকু বদলে দিতে পারবেন তিনি? টাইম মোদিকে নিয়ে প্রচ্ছদ করেছিল। শিরোনাম ছিল যিু সড়ফর সধঃঃবৎং মোদি কেন গুরুত্বপূর্ণ? তিনি গুরুত্বপূর্ণ বলেই গোধরায় ট্রেনে ৫৪ জন হিন্দু পুড়িয়ে মারার প্রতিবাদে গুজরাটে হাজারের মতো মুসলমান হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত ও যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও ট্রাম্প এবং ওবামা তাকে হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। তিনি গুরুত্বপূর্ণ বিধায় চীনা প্রেসিডেন্ট ছুটে গিয়েছিলেন আহমেদাবাদে। তিনি গুরুত্বপূর্ণ এবং মাত্র সাড়ে তিন বছরে শীর্ষ বিশ্ব নেতাদের তালিকায় নিজের নামটাকেও অন্তর্ভুক্ত করেছেন (টাইম সাময়িকীর মতে, বিশ্বের ১০০ জন প্রভাবশালী নেতার একজন তিনি) তাই খুব সঙ্গত কারণেই মোদি বারবার আলোচনায় থাকলেও দরিদ্রতা দূরীকরণ ও সমাজে যে বৈষম্য তা দূরীকরণের ব্যাপারে কোনো বড় উদ্যোগ নিতে পারেননি। তাই অসন্তোষ বাড়ছে। মোদির জমানায় দলিত শ্রেণি যে কীভাবে প্রতিনিয়ত নিগৃহীত হচ্ছেন, তার প্রমাণ পাওয়া যায় ইন্ডিয়া টুডের প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে দলিত শ্রেণির স্কুল ত্যাগের হার শতকরা ৫০ ভাগ। প্রতিদিন ২ জন করে দলিত খুন হচ্ছেন। ২টি করে বাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। মোদি নিজে নিম্নশ্রেণির থেকে উঠে এলেও এ শ্রেণির মানুষের তিনি এখন আর প্রতিনিধিত্ব করেন না। তিনি এখন উচ্চ শ্রেণির প্রতিনিধি। ক্ষমতা গ্রহণ করার পর মোদি বলেছিলেন তিনি গত তিন বছর দুর্নীতিমুক্ত একটি সমাজ উপহার দিতে পেরেছেন। তিনি বলেছিলেন, তিনি প্রধানমন্ত্রী নন, তিনি প্রধান পাহারাদার, দেশের সম্পদের পাহারাদার; কিন্তু বাস্তবতা বলে ভিন্ন কথা। যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ মাধ্যমে মোদির মেক ইন ইন্ডিয়া (ভারত নির্মাণ) অভিযানকে অতিরঞ্জিত প্রচার বলে মন্তব্য কারা হয়েছে। মোদি সরকারের কাছে বিপুল প্রত্যাশা থাকলেও কর্মসংস্থানের হাল যথেষ্ট খারাপ বলেও মন্তব্য করেছেন তারা। প্রভাবশালী দৈনিক ওয়ালস্ট্রিট জার্নালে ২০১৫ সালে মোদি সরকারের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে ভারতে মোদির এক বছর উচ্ছ্বাসের বাঁধ শেষ। সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ শিরোনামে একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করা হয়েছিল। তাতে বলা হয়েছিল ভারতে এক বছর আগে পরিবর্তন পুনরুজ্জীবনের আশায় নরেন্দ্র মোদি বিপুল জনসমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। কিন্তু এবার চূড়ান্ত বাস্তবতার সম্মুখীন হয়েছে মোদি সরকার। কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে মেকইন ইন্ডিয়ার অভিযান শুরু করলেও, ভারতের অর্থনীতি খুড়িয়েই চলছে। আর নিউইয়র্ক টাইসের মতে মোদির অধিকাংশ কর্মসূচি এখনো কথার কথাই রয়ে গেছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের মতে, দেশের অভ্যন্তরে আর্থিক অবস্থার খুব একটা উন্নতি হয়নি। কর্মসংস্থান বৃদ্ধির হার এখনো বেহাল। ব্যবসায়িক উদ্যোগেও তেমন দানা বাঁধছে না। একই সঙ্গে রাজনৈতিকভাবেও চাপে পড়েছেন মোদি। সমাজের দলিত শ্রেণি তার ওপর থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে। এসব নরেন্দ্র মোদির সম্পর্কে কোনো ভালো ধারণা দেয় না। নিশ্চয়ই গত তিন বছরে মোদি অনেক কিছু শিখিয়েছেন। তবে এটা স্বীকার করতেই হবে তিনি নিজস্ব একটি স্টাইল তৈরি করেছেন। উন্নয়নকে প্রধান্য দিচ্ছেন। ভারতকে নিয়ে গেছেন বিশ্ব আসরে।
কিন্তু আগামী বছর সেখানে নির্বাচন। সাধারণ মানুষের জন্য তাকে কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। মুসলমানদের আস্থায় নিতে হবে। ধর্ম নিরপেক্ষ ভারতই হওয়া উচিত তার আদর্শ। তাই তিনি যখন সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে কথা বলেন, তখন তার ওপর আস্থাটা রাখতে চাই।
Daily Jai Jai Din22.08.2017

0 comments:

Post a Comment