ডোকলাম নিয়ে ভারত ও চীনের মধ্যকার দ্বন্দ্ব সেখানে একটি যুদ্ধের মতো
পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। একই সঙ্গে লাদাখে দু’পক্ষের মাঝে হাতাহাতির ঘটনাও
ঘটেছে। গত দু’মাস ধরে ভারতীয় ও চীনা সেনারা সেখানে পরস্পর মুখোমুখি
অবস্থানে আছে। সর্বশেষ ঘটনায় ভারত তার পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তে আরও সৈন্য
পাঠিয়েছে। শুধু তাই নয়, ডোকলামের কাছাকাছি একটি গ্রামের (নাথাং)
বাসিন্দাদের তাদের বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ভারতীয়
সেনা কর্তৃপক্ষ। এ গ্রামটি ডোকলাম (চীনারা বলে দং লাং) থেকে মাত্র ৩৫
কিলোমিটার দূরে। সিকিম ও অরুণাচলে মোতায়েন করা ভারতীয় সেনাবাহিনীকেও সেখানে
সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে। অন্যদিকে একজন চীনা কমান্ডার কর্নেল লিলি
বেইজিংয়ের হুয়াইবোউ সেনা ছাউনিতে আয়োজিত এক কর্মসূচিতে ভারতীয় সাংবাদিকদের
উপস্থিতিতে ডোকলাম থেকে ভারতীয় সেনা সরিয়ে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি এ
কথাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে, প্রয়োজন হলে চীন উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ
করবে। আর চীন সরকারের মুখপাত্র হিসেবে বিবেচিত ‘গ্লোবাল টাইমস’ মন্তব্য
করেছে ডোকলাম থেকে ভারতীয় সেনা হটাতে প্রয়োজনে সামরিক অভিযান চালাতে
সম্পূর্ণ প্রস্তুত চীন। যে কোনো মুহূর্তে চীন এ অপারেশন চালাতে পারে বলেও
মন্তব্যে উল্লেখ করা হয়েছে। সামগ্রিকভাবে ডোকলাম নিয়ে বড় ধরনের উত্তেজনা
রয়েছে। এ উত্তেজনা শেষ পর্যন্ত ১৯৬২ সালের মতো দ্বিতীয় চীন-ভারত যুদ্ধের
জন্ম দেবে কিনা, তা এ মুহূর্তে বলা মুশকিল। তবে এশিয়ার দুই বড় শক্তি, চীন ও
ভারতের মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে যে ঐক্যের জন্ম হয়েছিল, ডোকলামের ঘটনায় তা
যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্পষ্টতই এই দেশ দুটির মধ্যে এক ধরনের
আস্থাহীনতার জন্ম হয়েছে, যা ব্রিকসের বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। একই
সঙ্গে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে কিছুটা হলেও এর প্রভাব পড়েছে। ডোকলাম ইস্যুতে
যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্য পশ্চিমা শক্তিগুলো ভারতের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। জাপান ও
অস্ট্রেলিয়ার মতো বড় শক্তিও ভারতের পক্ষে। এ ক্ষেত্রে চীন চেষ্টা করছে
ভুটান ও নেপালের সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধি করতে। বিশেষ করে ডোকলাম থেকে ভারত
যাতে সেনা প্রত্যাহার করে নেয়, সে ব্যাপারে ভুটানকে রাজি করাতে চেষ্টা করছে
চীন। বলা ভালো, ডোকলাম নিয়ে সমস্যা মূলত ভুটান ও চীনের। ভারত সেখানে সৈন্য
পাঠিয়েছে ভুটানের অনুরোধে। ভুটান-ভারত মৈত্রী চুক্তি বলে ভারত সেখানে
সৈন্য পাঠিয়েছে। ডোকলামে চীন সড়ক নির্মাণ করছে। ভারতের ভয় এখানেই।
কৌশলগতভাবে ভারতের জন্য এলাকাটি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। এই এলাকার জম্পলরি
(জামফেরি) পর্বত-শিরা থেকে শিলিগুড়ি করিডোর হাতের তালুর মতো দেখা যায়। চীন
সেখানে তার স্থায়ী উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চাইছে। ইতিমধ্যে ভারতের পররাষ্ট্র
সচিব ও নিরাপত্তা উপদেষ্টা বেইজিং সফর করেছেন; কিন্তু তাতে কোনো ফল হয়নি।
চীন ও ভারত কেউই ডোকলাম থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয়নি। চীন ও ভারত বড়
অর্থনীতির দেশ। বিশ্ব অর্থনীতি দেশ দুটোর অবদান আছে। এখন দেশ দুটোর মধ্যে
যদি উত্তেজনা অব্যাহত থাকে, তা একদিকে যেমনি চীনের জন্যও ভালো নয়, ঠিক
তেমনি ভালো নয় ভারতের জন্যও। ব্রিকস মুখ থুবড়ে পড়বে। অথচ পরিবর্তিত বিশ্ব
রাজনীতির কারণে চীন ও রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন ব্রিকসের গুরুত্ব বাড়ছে। চীন
বৈশ্বিক অর্থনৈতিক শক্তি। এ অঞ্চলের দেশগুলোর উন্নয়নে চীন একটি বড় ভূমিকা
পালন করছে। চীনের ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ কর্মসূচি থেকে ভারতও উপকৃত হতে
পারে। যদিও ভারত এতে যোগ দেয়নি। তারপরও কথা থেকে যায়- ভারত এই বিশাল উন্নয়ন
কর্মকাণ্ড থেকে নিজেকে গুটিয়ে রাখতে পারে না।
চীন বিশ্বের দ্বিতীয় অর্থনৈতিক শক্তি। ২০১০ সালে জিএনপির দিক থেকে জাপানকে
ছাড়িয়ে যায় চীন। যেখানে ১৯৮০ সালে বিশ্ব অর্থনীতিতে চীনের অবদান ছিল মাত্র
২ দশমিক ২ ভাগ (যুক্তরাষ্ট্রের ২৫ ভাগ), সেখানে বলা হচ্ছে ২০৫০ সালে ppp
(Purchasing, Price, Parity)-এর হিসাব অনুযায়ী চীনের অর্থনীতি
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে ছাড়িয়ে যাবে। উৎপাদনশীল পণ্যের, বিশেষ করে
ইকেট্রুনিক্স পণ্যের দিক থেকে চীন এখন এক মহাশক্তি। বিশ্বের যত ফটোকপিয়ার,
মাইক্রোওয়েভ ও জুতা উৎপাদিত হয়, তার ৩ ভাগের ২ ভাগ চীন একা উৎপাদন করে।
সেইসঙ্গে বিশ্বে উৎপাদিত মোবাইল ফোনের ৬০ ভাগ, ডিভিডির ৫৫ ভাগ, ডিজিটাল
ক্যামেরার ৫০ ভাগ, পারসোনাল কম্পিউটারের ৩০ ভাগ, শিশুদের খেলনার ৭৫ ভাগ চীন
একা উৎপাদন করে। ফলে বিশ্বব্যাপী চীনা পণ্যের একটা বাজার তৈরি হয়েছে। চীনে
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ ৩ ট্রিলিয়ন ডলারের ওপরে। ফরচুন
ম্যাগাজিন বিশ্বের বড় ৫০০ কোম্পানির কথা উল্লেখ করেছে, সেখানে চীনের রয়েছে
৩৭টি কোম্পানি। বিশ্বে যত জ্বালানি ব্যবহৃত হয় তার মাঝে এককভাবে চীনে
ব্যবহৃত হয় তার ১৬ ভাগ। আর বিশ্বে জ্বালানি তেলের ব্যবহারের দিক থেকে ৩
ভাগের ১ ভাগ ব্যবহার করে চীন। যে কারণে চীনকে বিশ্বের অন্যতম পরিবেশ
দূষণকারী দেশ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। পরিবেশ দূষণের কারণে চীনে ক্যান্সারে
মৃত্যুর হার বেড়েছে ২৯ ভাগ। চীনে রয়েছে বিশাল এক তরুণ প্রজন্ম, যারা আধুনিক
শিক্ষায় শিক্ষিত। প্রতিবছর ২১ মিলিয়ন তরুণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হয়।
আর প্রতিবছর ৩ লাখ শিক্ষার্থী বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে যায়। তারা
ফিরেও আসে। ১৯৪৮ সালে (স্বাধীনতার ঠিক এক বছর আগে) যেখানে চীনে শিক্ষিতের
হার ছিল মাত্র ২০ ভাগ, এখন সেখানে ১০০ ভাগ শিক্ষিত। অর্থনৈতিক সংস্কারের
কারণে চীনে যে ব্যাপক অর্থনৈতিক পরিবর্তন এসেছে, তাতে প্রায় ২০ কোটি
মানুষকে চীন অতি দরিদ্রতম অবস্থা (প্রতিদিন জাতিসংঘ কর্তৃক নির্ধারিত ১.২৫
ডলার আয় হিসাবে) থেকে বের করে এনে কিছুটা সচ্ছলতা দিয়েছে। যদিও বলা হয়,
এখনও প্রায় ২০৭ মিলিয়ন লোক দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। চীনের অর্থনৈতিক
প্রবৃদ্ধি দেশটিতে একদিকে যেমনি ধনী ও গরিবের মধ্যে এক ধরনের বৈষম্য
সৃষ্টি করেছে, ঠিক তেমনি বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যেও বৈষম্য তৈরি হয়েছে। মানুষ
গ্রাম থেকে শহরে আসছে। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো এখন কর্মজীবী মানুষের
অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান। মানুষের আয় সেখানে বেশি। হাজার হাজার টাউনশিপ এখন
তৈরি হয়েছে, যা বদলে দিয়েছে চীনের প্রত্যন্ত অঞ্চলের জীবনযাত্রা। চীনকে
নিয়ে খারাপ খবরও আছে। যেখানে ২০০৯ সালে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ছিল ৯ ভাগ, ২০১২
সালে তা কমে এসে দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৮ ভাগে। বর্তমানে ৬ দশমিক ৯ ভাগ।
মুদ্রাস্ফীতি ৩ দশমিক ৫ ভাগ। আর শহুরে বেকার সংখ্যা ৪-৬ ভাগের নিচে। এই যে
চীন, এই চীনের নেতৃত্ব দেয়ার দায়িত্বটি এখন বর্তিয়েছে শি জিনপিংয়ের ঘাড়ে।
কোন পথে এখন চীন? শি জিনপিংয়ের এজেন্ডায় রাশিয়া ও ভারতকে প্রাধান্য দিলেও
এটা সত্য, আন্তর্জাতিক ইস্যুকে গুরুত্ব দিচ্ছে চীন। বেশকিছু বিশ্লেষকের
লেখা পড়ে যা মনে হয়েছে, তা হচ্ছে শি জিনপিং এখন প্রথমেই অগ্রাধিকার দিচ্ছেন
তার ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ কর্মসূচিকে। এক বিশাল দেশ চীন। প্রায় ৫৫ জাতি ও
উপজাতি নিয়ে গড়ে উঠেছে দেশটি। ২২ প্রদেশ, ৫ স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল, ৪ বিশেষ
অঞ্চল ও ১৪৭ বিশেষ এলাকা নিয়ে চীন রাষ্ট্র। রাজনৈতিক সংস্কারের প্রশ্নে সেই
রাষ্ট্রটি ভেঙেও যেতে পারে। এ কারণেই চীনা নেতারা রাজনৈতিক সংস্কারের
প্রশ্নে সতর্ক থাকছেন। যে ভুল করেছিলেন গর্বাচেভ, সেই ভুল করেননি চীনা
নেতারা। সেনাবাহিনী এখনও পার্টির প্রতি অনুগত। তাই অর্থনৈতিক সংস্কারকেই
তারা বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। তবে বৈষম্য তৈরি হয়েছে। ফুজিয়ান, ঝে ঝিয়াং কিংবা
সাংহাই প্রদেশগুলো তুলনামূলকভাবে অনেক সমৃদ্ধশালী।
চীন ও ভারত নিকট প্রতিবেশী দুটি দেশ। প্রভাব বলয় বিস্তারের রাজনীতিতে দেশ
দুটির মাঝে এক ধরনের ‘দ্বন্দ্ব’ থাকলেও, পরিবর্তিত বিশ্ব রাজনীতির কারণে
ভারতের যেমনি প্রয়োজন রয়েছে চীনের সাহায্য ও সহযোগিতার; ঠিক তেমনি চীনেরও
প্রয়োজন রয়েছে ভারতের সাহায্য ও সহযোগিতা। ব্রিকস ব্যাংক বিশ্বব্যাংক ও
আইএমএফের কর্তৃত্ব ও প্রভাবকে চ্যালেঞ্জ করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখন চীন ও
ভারত যদি নিজেদের মাঝে বিরোধ অব্যাহত রাখে, তাহলে ব্রিকস ব্যাংক বিকশিত হবে
না। ‘সিকিমকে স্বাধীন করার’ তথাকথিত চীনা বক্তব্য, তা-ও গ্রহণযোগ্য নয়।
এটা ভারতের অভ্যন্তরীণ ঘটনায় হস্তক্ষেপের শামিল। চীন এটা করতে পারে না।
সাধারণত চীন অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ ঘটনায় নাক গলায় না। এ ক্ষেত্রে সিকিম
প্রশ্নে চীনা গণমাধ্যমের সাম্প্রতিক বক্তব্য ভারতের অভ্যন্তরীণ ঘটনায়
হস্তক্ষেপের শামিল, যা নিন্দনীয়। একুশ শতকে আমরা চীনকে দেখব অন্যতম এক
শক্তি হিসেবে।
বিশেষ করে অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে চীনের উত্থান বিশ্বের সব অর্থনীতির
হিসাব-নিকাশ বদলে দিয়েছে। ব্রিকস এ চীন ও ভারত অন্তর্ভুক্ত হলেও এশিয়ার এই
দুই অর্থনৈতিক শক্তির মধ্যকার দ্বন্দ্ব এ অঞ্চলের স্থিতিশীলতাকে একটি
ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিতে পারে। ভারতে জনগোষ্ঠীর ৩৭ দশমিক ০২ভাগ দরিদ্রতার
মধ্যে বসবাস করলেও আগামী ২৫ বছরের মধ্যে ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় অর্থনৈতিক
শক্তিতে পরিণত হবে। তখন সাধারণ মানুষের মাথাপিছু আয় ৯৪০ ডলার থেকে বেড়ে
গিয়ে দাঁড়াবে ২২ হাজার ডলারে। ২০০৭ সালে যেখানে বিশ্ব অর্থনীতিতে ভারত
অবদান রাখত মাত্র ২ ভাগ, তখন অবদান রাখবে ১৭ ভাগ। সুতরাং ভারতকে ফেলে দেয়া
যাবে না। তাই কোনো কোনো বিশ্লেষক, (জনাথন হোলসলাগ, ফরেন পলিসি ম্যাগাজিন)
একসময় একটি সম্ভাব্য ‘chindia’ ধারণার কথা বলেছিলেন, যেখানে চীন ও ভারত
একসঙ্গে কাজ করতে পারে। এ ধারণা অমূলক নয়। সাম্প্রতিক সময়ে চীন-ভারত
বাণিজ্যিক সম্পর্ক বৃদ্ধি পেয়েছে। চীনা নেতারা ভারত সফর করেছেন। সীমান্ত
সমস্যা নিয়েও (অরুণাচল) এক ধরনের স্থিতাবস্থা বিরাজ করছে। ক্ষমতা গ্রহণ করে
শি জিনপিং ভারতবিরোধী তেমন কোনো কথা বলেননি। তিনি ভারত সফরও করেছেন।
সদ্যসমাপ্ত জি-২০ (হামর্বুগ) সম্মেলনে জিনপিং-মোদি সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়েছে।
যদিও সাক্ষাৎকারটি উষ্ণ ছিল না। কিন্তু সাক্ষাৎকারটি না হলেই বরং নানা
প্রশ্নের জন্ম দিত। এমনকি সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়ারও সম্ভাবনা ছিল।
চীন-ভারত সীমান্ত উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিত পরিস্থিতি এখন কোনো দিকে যায়,
বলা মুশকিল। কিন্তু ১৯৬২ সালের মতো আরেকটি ‘যুদ্ধ’ হোক, এটা বোধকরি উভয়
দেশের নেতারা কেউই চাইবেন না। আর্জিত দোভালের পাশাপাশি পররাষ্ট্র সচিব
জয়শঙ্করও বেইজিং সফরের পর আগামী সেপ্টেম্বরে বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে
ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন। মোদি তখন চীনে যাবেন। আসলে উভয় দেশেই কট্টরপন্থী
কিছু লোক আছে, যারা দু’দেশের মাঝে উত্তেজনা বজায় রেখে সুবিধা নিতে চায়। এ
ব্যাপারে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। এই মুহূর্তে ডোকলাম উপত্যকা থেকে উভয় দেশের
সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করে নেয়া জরুরি। এর বাইরে অন্য বিষয়গুলো আলোচনা না
করাই মঙ্গল।
একদিকে অরুণাচল, অন্যদিকে কাশ্মীর- দুটো বিষয়ই খুব স্পর্শকাতর। মাঝে মধ্যে
চীন অরুণাচল নিয়ে তার দাবি উত্থাপন করলেও, সেখানে এক ধরনের ‘স্ট্যাটাস কো’
বজায় রয়েছে। বিতর্কিত কাশ্মীরের ওপর দিয়ে চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক
করিডোরের সড়কপথটি চলে গেছে। যা বেলুচিস্তানের গাওদারে গিয়ে শেষ হয়েছে। এই
সড়কপথের ব্যাপারে ভারতের আপত্তি রয়েছে। এই দুটো বিষয় বাদ রেখে এ মুহূর্তে
সীমান্ত উত্তেজনা হ্রাস করা প্রয়োজন। সেখানে ‘স্ট্যাটাস কো’ বজায় থাকুক-
আমরা এমনটাই প্রত্যাশা করি। যদি ডোকলাম নিয়ে উত্তেজনা অব্যাহত থাকে, তাতে
সুবিধা নেবে তৃতীয় পক্ষ। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
ইতিমধ্যে ভারতের অনুদান তহবিল থেকে বার্ষিক বাজেটের বাইরে আরও ২০ হাজার
কোটি রুপি দাবি করেছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। শুধু তাই নয়, আগামী ৫ বছর
প্রতিরক্ষা বরাদ্দ বাড়িয়ে ২৬ লাখ ৮৪ হাজার কোটি রুপি করারও আবেদন করেছে
মন্ত্রণালয়। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ফান্ড ২ লাখ ৭৪ হাজার ১১৩ কোটি রুপি বরাদ্দ
দিয়েছিল, যা জিডিপির ১ দশমিক ৬২ শতাংশ। ভারত নয়াদিল্লি ও মুম্বাইয়ে
ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে করেই
বোঝা যায় নয়াদিল্লির ভয়টা আসলে পাকিস্তানকে নিয়ে নয়, বরং চীনকে নিয়েই। ভারত
এখন চুক্তি বলে নিজেরাই এফ-১৬ বিমান তৈরি করবে। অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্রও
তারা কিনছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। এটা তো ঠিক এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে
যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে ‘মিত্র’ হিসেবে চাইছে। দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে চীনের
সঙ্গে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর যে বিবাদ তাতে চীনের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়নি ভারত।
এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্বই শেষ পর্যন্ত ডোকলামে দু’পক্ষকে মুখোমুখি
দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। তারপরও কথা থেকে যায়- আদৌ যুদ্ধ হবে কিনা? শেষ পর্যন্ত
হয়তো যুদ্ধ হবে না বরং এক ধরনের ‘স্ট্যাটাস কো’ বজায় থাকবে। তবে ডোকলাম
নিয়ে যে আস্থার ঘাটতির সৃষ্টি হয়েছে, সেই ঘাটতি কীভাবে পূরণ হবে, সেটাই বড়
প্রশ্ন এখন।
Daily Jugantor
21.08.2017
0 comments:
Post a Comment