রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে কিছু কথা

গত ২২ আগস্ট মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, আফগানিস্তান থেকে কোনো সেনা প্রত্যাহার করা হবে না। বরং সেখানে আরো সৈন্য পাঠানো হবে। তাঁর ওই ঘোষণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে দেওয়া তাঁর ঘোষণার ঠিক উল্টো। নির্বাচনী প্রচারাভিযানে তিনি বলেছিলেন, তিনি বিজয়ী হলে আফগানিস্তান থেকে সব সৈন্য প্রত্যাহার করা হবে। ২০১০ সালে ওবামা প্রশাসনের আমলে আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করা হলেও এখনো সেখানে কিছু সৈন্য রয়ে গেছে, যারা আফগান সেনা তথা পুলিশ সদস্যদের প্রশিক্ষণের কাজে নিয়োজিত। এখন ট্রাম্প সেখানে আরো কয়েক হাজার সৈন্য পাঠালে আফগান যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হবে এবং কোনো ধরনের সমঝোতা সেখানে বিলম্বিত হবে। তাঁর এই সিদ্ধান্ত থেকে মনে হচ্ছে মার্কিন যুদ্ধবাজ জেনারেলরা তাঁর পররাষ্ট্রনীতিতে প্রভাব খাটাচ্ছেন। উত্তর কোরিয়া নিয়ে একটা সংকট এখনো রয়ে গেছে। উত্তর কোরিয়া গুয়ামে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাতে পারে—এমন একটি আশঙ্কা থাকলেও আপাতত সেই হামলা হচ্ছে না। রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্ক যে খুব ভালো, তা বলা যাবে না।
রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের জন্য ভবিষ্যতে যে কয়টি বিষয় বেশি গুরুত্ব পাবে, তার অন্যতম হচ্ছে দক্ষিণ চীন সাগর। দক্ষিণ চীন সাগরের স্ট্র্যাটেজিক গুরুত্ব অনেক। যুক্তরাষ্ট্রের নৌ স্ট্র্যাটেজিস্টরা দক্ষিণ চীন সাগরে তাদের কর্তৃত্ব ও প্রভাব বজায় রাখতে চাইছে। এবং এতে করে চীনের সঙ্গে যেকোনো ‘সংঘর্ষে’ জড়িয়ে পড়তে পারে যুক্তরাষ্ট্র! অনেক কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ রয়েছে এ অঞ্চলের ব্যাপারে। শুধু স্ট্র্যাটেজিক গুরুত্বই নয়, বরং দক্ষিণ চীন সাগরে রয়েছে বিপুল জ্বালানি সম্পদ, যে সম্পদের ব্যাপারে মার্কিন বহুজাতিক কম্পানিগুলোর আগ্রহ রয়েছে। এক্সন মোবিল-এর সাবেক প্রধান রেক্স টিলারসন এখন ট্রাম্প প্রশাসনে যুক্তরাষ্ট্রের নয়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বহুজাতিক তেল কম্পানির প্রধানকে যে কেন ট্রাম্প তাঁর পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে বেছে নেন, এখন এটা বুঝতে কারো বাকি থাকে না। পররাষ্ট্রনীতি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এখন ‘ব্যবসায়িক মনোবৃত্তি’ প্রাধান্য পাচ্ছে বেশি। দক্ষিণ চীন সাগরে তেল ও গ্যাসের যে বিপুল রিজার্ভ রয়েছে, তার হিসাব অনেকটা এ রকম : তেল ১১ বিলিয়ন ব্যারেল, গ্যাস ১৯০ ট্রিলিয়ন কিউবিক ফিট। এখন ব্যবসায়ী ও সাবেক এক্সন মোবিল প্রধান তাঁর ‘আগ্রহ’ অস্বীকার করবেন কিভাবে? ওবামা প্রশাসন এটা অনুধাবন করেই ভিয়েতনামের সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধি করেছিল। ওবামা ভিয়েতনামের সঙ্গে টিপিপি চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন, যা ট্রাম্প বাতিল করেছেন এরই মধ্যে। এই তেল ও গ্যাস উত্তোলনের সঙ্গে ভারতও জড়িত। ২০১৬ সালে ভারতের চারটি যুদ্ধজাহাজ এ অঞ্চলে মোতায়েন করা হয়েছিল। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের যে স্ট্র্যাটেজি, সেই স্ট্র্যাটেজির অংশীদার ভারতও।
অর্থাৎ এ অঞ্চলজুড়ে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র ঐক্য গড়ে উঠছে। ওবামা প্রশাসন ২০০৭ সালে ভিয়েতনামের বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সদস্যপদ পাওয়াকে সমর্থন করেছিল। ওবামা নিজে গত ২০১৬ সালের জুনে ভিয়েতনাম সফর করেছিলেন। চীনের বিরুদ্ধে একটি বলয় তৈরিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রয়োজন রয়েছে ভিয়েতনামের। ভিয়েতনাম হচ্ছে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের নীতির কেন্দ্রবিন্দু। ফলে ওবামার ভিয়েতনাম সফর শুধু সাধারণ একটি সফর ছিল না। চীনের বিরুদ্ধে সামরিক ও অর্থনৈতিক বলয় সৃষ্টি করার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র একটি মহাপরিকল্পনা তৈরি করছে। আর এই মহাপরিকল্পনায় একাধিক দেশকে জড়িত করছে যুক্তরাষ্ট্র। এখানে বলা ভালো, চীনের বিরুদ্ধে একটি সামরিক বলয় তৈরি করার অংশ হিসেবেই গত বছর দক্ষিণ চীন সাগরে ফিলিপাইনসহ একাধিক দেশের সঙ্গে সামরিক মহড়ায় অংশ নিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রকে পাঁচটি প্রাথমিক ঘাঁটি ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিল ফিলিপাইন। ২০১৬ সালের মাঝামাঝি ভারত দক্ষিণ চীন সাগরে তাদের নৌ ইস্টার্ন কমান্ডের চারটি গাইডেড মিসাইল সজ্জিত যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়েছিল। নির্দিষ্ট সময়ের জন্য এই জাহাজগুলো দক্ষিণ চীন সাগর ও উত্তর-পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে মোতায়েন করা হয়েছিল। এর অর্থ পরিষ্কার, এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের চীনবিরোধী যে নীতি, তাতে ভারতকেও পাশে চায় যুক্তরাষ্ট্র। এর আগে আমরা ভারত মহাসাগরে ভারতীয় নৌ স্ট্র্যাটেজি নিয়ে কালের কণ্ঠে লিখেছি। ভারত এ অঞ্চলে অন্যতম নৌ শক্তি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে চায়। আর তার অংশ হিসেবেই ভারত এই প্রথমবারের মতো তাদের ইস্টার্ন কমান্ডের চারটি যুদ্ধজাহাজকে এ অঞ্চলে মোতায়েন করেছিল। যদিও দক্ষিণ চীন সাগরে তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানে ভারতের স্বার্থ রয়েছে। ভারত ভিয়েতনামের সঙ্গে চুক্তি করে এ অঞ্চলে তেল ও গ্যাসের অনুসন্ধান চালাচ্ছে।
২০১৬ সালে ভিয়েতনামের ওপর থেকে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা এবং ৩২০ কোটি ডলারের ছয়টি ইলেকট্রিক সাবমেরিন বিক্রির যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অস্ত্র প্রতিযোগিতাকে উসকে দিয়েছে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ কোরিয়ায় থাড ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধব্যবস্থা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। যদিও বলা হচ্ছে উত্তর কোরিয়ার ক্রমবর্ধমান হুমকির মুখে দক্ষিণ কোরিয়াই এই সিদ্ধান্তটি নিয়েছে। তবে চীনে আধা ঘণ্টারও কম সময়ে আঘাত হানতে সক্ষম এমন হাইপারসনিক গ্লিড ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থাও মোতায়েন করা হয় সেখানে। চীন বিষয়গুলো খুব সহজভাবে দেখছে না। এতে করে এ অঞ্চলে উত্তেজনা আরো বাড়ছে। সর্বশেষ ট্রাম্পের ‘এক চীনা নীতি’ পরিত্যাগের হুমকি একটি নতুন মাত্রা এনে দিয়েছে।
এখানে দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে কিছু কথা বলা প্রয়োজন। দক্ষিণ চীন সাগরের স্ট্র্যাটেজিক ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে। আগামী দিনে এই অঞ্চলের রাজনীতির উত্থান-পতন বিশ্ব রাজনীতিতে প্রভাব ফেলবে। প্রায় ৩৫ লাখ বর্গকিলোমিটার জুড়ে রয়েছে চীন সাগরের বিস্তৃতি। এই অঞ্চলটি চীনের মূল ভূখণ্ডের দক্ষিণে, ফিলিপাইনের পশ্চিমে, মালয়েশিয়ার উত্তরে, ব্রুনাইয়ের উত্তর-পশ্চিম, ইন্দোনেশিয়ার উত্তরে এবং ভিয়েতনামের পূর্বে অবস্থিত। এ অঞ্চলের গুরুত্ব বেড়েছে এ কারণে যে দক্ষিণ চীন সাগরে প্রায় ১১ দশমিক ২০ বিলিয়ন ব্যারেল অপরিশোধিত তেল রয়েছে। এবং গ্যাস রয়েছে ১৯০ দশমিক ২০ ট্রিলিয়ন ঘনমিটার। চীনের আগ্রহ সে কারণেই দিনে দিনে বেড়েছে। চীনের প্রচুর ‘জ্বালানি ক্ষুধা’ রয়েছে। চীনের অর্থনীতিকে সঠিক পথে চালাতে প্রচুর জ্বালানি দরকার। এ ক্ষেত্রে এই অঞ্চলে যদি চীনের কর্তৃত্ব থাকে, তাহলে চীন তার জ্বালানি চাহিদা এখান থেকে মেটাতে পারবে। এই সমুদ্রপথটি পৃথিবীর অন্যতম ব্যস্ত সমুদ্রপথ। এ কারণে এর গুরুত্ব আরো বেড়েছে। পৃথিবীর সমুদ্রপথে যত বাণিজ্য হয়, তার এক-তৃতীয়াংশ হয় এই পথে। চীন, জাপান, কোরিয়া দক্ষিণ এশিয়া ও পূর্ব এশিয়ায় যাওয়ার বাণিজ্যিক রুট হিসেবে এ পথকে ব্যবহার করে। দক্ষিণ চীন সাগরে অবস্থিত স্প্রাটলি, প্যারাসেল ও টনকিন উপসাগরে অবস্থিত কয়েকটি ছোট ছোট দ্বীপ নিয়ে আশপাশের দেশ, বিশেষ করে ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, তাইওয়ান ও মালয়েশিয়ার সঙ্গেই চীনের বিরোধ। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এই অঞ্চলের, অর্থাৎ দক্ষিণ চীন সাগরের গুরুত্ব বেড়েছে একাধিক কারণে। শুধু চীনকে ‘ঘিরে ফেলা’ কিংবা চীনের বিরুদ্ধে এ অঞ্চলের দেশগুলোকে নিয়ে একটি ‘ঐক্য’ করার পাশাপাশি জাপানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক হুমকির মোকাবেলা করা, এই সাগর দিয়ে মার্কিন যুদ্ধজাহাজের প্রশান্ত মহাসাগরে প্রবেশ করার ব্যাপারে মার্কিনি স্বার্থ রয়েছে। এর ওপরে রয়েছে এ এলাকার তেল ও গ্যাস সম্পদের ওপর মার্কিন বহুজাতিক কম্পানির লোলুপ দৃষ্টি। ফলে এই অঞ্চলটি যে আগামী দিনের প্রভাব বলয় বিস্তারের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ একটি ভূমিকা পালন করবে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এই অঞ্চলে নিজেদের কর্তৃত্ব ও প্রভাব বলয় বৃদ্ধি করতে আজ চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, তাইওয়ান, জাপান, এমনকি ভারতও তৎপর। যুক্তরাষ্ট্র এ দেশগুলোকে পরোক্ষভাবে উৎসাহিত করছে। এটি বিশ্বের বড় সামুদ্রিক বাণিজ্য রুটের একটি। বিশ্ব বাণিজ্যের ৩২ শতাংশ এ পথ দিয়ে পরিবাহিত হয়। চীনের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে এটি সংযুক্ত নয়। মূল ভূখণ্ড থেকে এক হাজার নটিক্যাল মাইল দূরে এই দ্বীপপুঞ্জগুলো অবস্থিত। জাপান এই রুট দিয়ে মধ্যপ্রাচ্য থেকে তেল আমদানি করে এবং ইউরোপের সঙ্গে বাণিজ্যিক রুট হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। জাপান এই দ্বীপগুলোর নাম দিয়েছে সেনকাকু, যা চীনের কাছে পরিচিত দিয়াওইউ নামে। ঐতিহাসিকভাবে চীনের শি ও হান রাজবংশের কর্তৃত্ব অনুযায়ী চীন এ অঞ্চলের মালিকানা দাবি করে এলেও এ অঞ্চলের আশপাশের দেশগুলো তা মানতে নারাজ। জাপানের নিজস্ব কোনো তেল ও গ্যাস নেই। মধ্যপ্রাচ্যের তেলের ওপর দেশটি পরিপূর্ণভাবে নির্ভরশীল। জাপান দৈনিক ১০ মিলিয়ন ব্যারেল তেল এই সামুদ্রিক পথটি ব্যবহার করে আমদানি করে থাকে।
এ অঞ্চলের স্ট্র্যাটেজিক গুরুত্ব থাকায় চীন এ অঞ্চলে নতুন করে একটি কৃত্রিম দ্বীপ বানিয়েছে। সেখানে যুদ্ধবিমান মোতায়েনের জন্য বড় বড় রানওয়ে তৈরি করছে। মিসাইল ব্যাটারি স্থাপন করেছে। এমনকি ভবিষ্যতে এখানে পারমাণবিক সাবমেরিন যাতে ‘ডক’ করতে পারে, সে ব্যবস্থাও করেছে চীন। ফলে এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে একটি আতঙ্ক ছড়িয়ে গেছে। আর যুক্তরাষ্ট্র এই আতঙ্ককে ব্যবহার করছে তার স্বার্থে। বলা ভালো, দক্ষিণ চীন সাগরের এই বিরোধটি জাতিসংঘের সামুদ্রিক বিবাদ নিষ্পত্তিসংক্রান্ত ট্রাইব্যুনালে উত্থাপিত হয়েছিল। ফিলিপাইন ছিল এর উদ্যোক্তা। তবে চীন এই শুনানিতে অংশ নেয়নি। কিন্তু আদালত চীনের বিরুদ্ধে রায় দিলেও চীন কূটনীতিতে বড় সাফল্য পেয়েছে। ফিলিপাইনের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট দুতার্তেকে চীনে রাষ্ট্রীয় সফরে আমন্ত্রণ জানিয়ে চীন ফিলিপাইনের সঙ্গে একটি  বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলছে। দুতার্তের আমলে ফিলিপাইনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের যথেষ্ট অবনতি ঘটেছে। দুতার্তে ব্যক্তিগত পর্যায়ে ওবামাকে আক্রমণ করেছিলেন। দুতার্তের স্ট্র্যাটেজি থেকে এটা বোঝা যায়, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ওপর থেকে সব নির্ভরশীলতা কাটিয়ে উঠতে চান। ফিলিপাইনে মার্কিন ঘাঁটি রয়েছে এবং মার্কিন সেনারা চুক্তিবলে ফিলিপাইনের একাধিক সামরিক ঘাঁটি ব্যবহার করে। এখন ট্রাম্পের শাসনামলে এই সম্পর্ক কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়, সেটাও দেখার বিষয়। ট্রাম্প প্রশাসনে একাধিক সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল রয়েছেন। তাঁরা সবাই বহির্বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপক ‘প্রভাব’ দেখতে চান। এখন ট্রাম্প যতই বলুন না কেন তিনি আর ন্যাটোর খরচ বহন করবেন না, কিন্তু পেন্টাগন এটা কি চাইবে? খুব স্বাভাবিকভাবেই পেন্টাগন এটা চাইবে না। আর চাইবে না বিধায় একদিকে সিরিয়ায় যুদ্ধও থামছে না, অন্যদিকে আফগানিস্তানে নতুন করে সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ট্রাম্প। যদিও বলা হচ্ছে, অব্যাহত তালেবান আর আইএসের আক্রমণ ঠেকাতেই আফগানিস্তানে সেনা মোতায়েনের এই সিদ্ধান্ত। তবে ট্রাম্প প্রশাসন এটাও চাইছে ভারত আফগানিস্তানে একটি বড় ভূমিকা পালন করুক। এবং পাকিস্তানের সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের সম্পর্কের যে অবনতি ঘটতে যাচ্ছে, সে রকমটির আভাসও পাওয়া যাচ্ছে। সুতরাং এশিয়া-প্যাসিফিক তথা দক্ষিণ এশিয়ার ব্যাপারে মার্কিন নীতিতে ‘কিছুটা’ পরিবর্তন আসছে। যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে সম্মতি দিয়েছে বিশ্বের পরমাণু সরবরাহকারী গোষ্ঠী বা এনএসজিতে ভারতের অন্তর্ভুক্তির (৪৮ দেশ এর সদস্য)। চীনের আপত্তি আছে ভারতের ব্যাপারে। মিসাইল টেকনোলজি কন্ট্রোল এমটিসিতেও ভারত ঢুকতে চায়। নীতিগতভাবে তাতে সমর্থন রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। এতে অত্যাধুনিক মিসাইল টেকনোলজি পাবে ভারত। ভারত যুক্তরাষ্ট্র থেকে কিনতে চায় এফ-১৬ ও এফ-১৮ জঙ্গি বিমান। এটা স্পষ্ট, যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্ক এখন অনেক উষ্ণ। এশিয়া-প্যাসিফিক ও দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের যে স্ট্র্যাটেজি, তাতে স্পষ্টতই ভারত পালন করতে যাচ্ছে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। চীনের বিরুদ্ধে একটি বৃহত্তর অ্যালায়েন্স গড়ে তুলতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র। ট্রাম্পের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত কিংবা মোদির ওয়াশিংটন সফর মূলত সবই এক সূত্রে গাঁথা। তাই আগামী দিনগুলোয় এশিয়া-প্যাসিফিক ও দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে তৈরি হবে যুদ্ধের একটি নয়া আবহ। স্নায়ুযুদ্ধের নয়া এক রূপ আমরা প্রত্যক্ষ করব এ অঞ্চলে।
Daily Kalerkontho

29.08.2017



0 comments:

Post a Comment