গেল রবিবারের সংবাদপত্রে যাঁরা রুহুল কবীর রিজভীর গ্রেপ্তারের 'কাহিনী' পাঠ করেছেন, তাঁরা বিষয়টিকে সবাই স্বাভাবিকভাবে নিয়েছেন বলে আমার মনে হয় না। একজন অসুস্থ মানুষকে ভোর ৪টায় কেন গ্রেপ্তার করা হবে? কেনই বা মই বেয়ে উঠে, গ্রিল কেটে গ্রেপ্তার করা হবে? তাঁকে অভিযুক্ত করা হয়েছে 'শাহবাগে বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনায়'। তিনি 'হুকুমের আসামি'। আমরা মোটামুটি সবাই জানি, রিজভী সাহেব নয়াপল্টনের অফিসে বসেই দলের দাপ্তরিক কাজ যেমনি করেন, তেমনি কর্মসূচিও দেন। তাঁর এই 'কাজের' সঙ্গে আমরা মোটামুটি পরিচিত। এখন পুলিশের কথা অনুযায়ী ধরে নিতে হবে, তিনি শাহবাগে বাসে যে অগ্নিসংযোগ হয়েছিল, তাঁর নির্দেশ দিয়েছিলেন। কারো বিরুদ্ধে যদি কোনো মামলা হয়, তার বিরুদ্ধে পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা নেবে- এটাই স্বাভাবিক। এ জন্য তাঁকে গ্রেপ্তার করার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকতে হবে। আর রাতের আঁধারে কেন? সকালে গ্রেপ্তার করলে কি তিনি পালিয়ে যেতেন? তিনি তো বেশ কিছুদিন ধরেই বিএনপি অফিসে অবরুদ্ধ। যে 'কমান্ডো' স্টাইলে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হলো, তা নিন্দনীয় এবং এ ঘটনা পুলিশ বিভাগের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে না।
এদিকে শাহবাগের বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মির্জা ফখরুলসহ ১৬ জন বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে মামলা করার রেশ ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই আবারও মির্জা ফখরুলের বিরুদ্ধে মালিবাগে গাড়িতে বোমা হামলার কারণে মামলা হয়েছে। এবার আসামি বিএনপির ১৫ নেতা। গত দুই সপ্তাহ ধরে হরতাল আর অবরোধের কারণে যেসব সহিংসতার ছবি সংবাদপত্রে দেখছি, তাতে করে এ দেশে 'বিকাশমান গণতন্ত্রের' ওপর থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলছি! এ কোন গণতন্ত্র! সরকার যেনতেনভাবে একটি নির্বাচন করার ব্যাপারে বদ্ধপরিকর। যদিও সংবিধান তার পক্ষে। প্রধানমন্ত্রী এখনো তাঁর নির্বাহী ক্ষমতা বহাল রেখেছেন। সংসদ এখনো বহাল রয়েছে। এতে করে কি একটি জটিলতা সৃষ্টি হলো না? সংবাদপত্রের খবর অনুযায়ী, আওয়ামী লীগ যে প্রার্থীদের তলিকা প্রকাশ করেছে, তাতে বাদ পড়েছেন সদ্য পদত্যাগকারী ছয় মন্ত্রীসহ ৪৮ জন এমপি। এখন ৫ জানুয়ারি যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, তত দিন পর্যন্ত এই এমপিরা বহাল থাকবেন। নির্বাচনের পর গেজেট প্রকাশের আগ পর্যন্ত এই এমপিরা তাঁদের পদে থাকবেন। কেননা সংসদ তো ভেঙে দেওয়া হয়নি। এমনকি আমরা এটাও এ মুহূর্তে নিশ্চিত নই যে ৫ তারিখের আগেই সংসদ ভেঙে দেওয়া হবে। এবার নির্বাচনের পর যাঁরা নির্বাচিত হবেন, তখন কি কোনো কোনো আসনে দুজন করে এমপি দেখা যাবে না। আমি জানি না ইসি কিভাবে ব্যাপারটা সমাধান করবে? তবে একটি ভালো নির্বাচনের জন্য দরকার সব দলের অংশগ্রহণ, বিশেষ করে প্রধান বিরোধী দলের অংশগ্রহণ জরুরি। দরকার স্থিতিশীলতা। দরকার পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস ও আস্থা। কিন্তু সংবাদপত্রে যখন ঢাকা মেডিক্যালের বার্ন ইউনিটের ছবিগুলো দেখি, তখন দেশের স্থিতিশীলতা নিয়ে প্রশ্ন থাকবেই। যেখানে বিরোধী দলের অংশগ্রহণটা জরুরি, সেখানে তাঁদের সবার নামেই মামলা! হয়তো আজ বা আগামীকাল আমরা দেখব আরেকটি 'কমান্ডো স্টাইলে' গ্রেপ্তারের কাহিনী। এতে করে কি আস্থার সম্পর্ক তৈরি হবে? এটা সত্য, বিরোধী দল এই অবরোধ-কর্মসূচির ডাক দিয়েছে। কিন্তু আমাকে কি বিশ্বাস করতে হবে এসব নেতা বাসে পেট্রলবোমা হামলার নির্দেশ দিয়েছিলেন। পত্রিকায় দু-একজন দুষ্কৃতকারীর ছবিও ছাপা হয়েছে, যারা বাসে হামলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। পুলিশ এদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি কেন? এসব দুষ্কৃতকারীর সঙ্গে রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই। এরা রাজনীতি করে না। এরা সন্ত্রাসী। যারা পেট্রলবোমা মেরে মানুষ মারে, সাধারণ মানুষকে পুড়িয়ে দেয়, অসহায় করে দেয় একটি পরিবারকে, তারা তো জনগণের 'বন্ধু' হতে পারে না। এরা জনগণের শত্রু। এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। তবে এটাও সত্য, 'হুকুমের আসামি' হিসেবে যদি বিরোধী দলের নেতাদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা করা হয়, তাহলে তো আস্থার জায়গাটা আর থাকে না। অবরোধের কারণে আমরা এখন 'জিম্মি'। স্থবির হয়ে গেছে জনজীবন। প্রয়োজন ছাড়া মানুষ আজ আর ঘর থেকে বেরোতে সাহস পাচ্ছে না। এই পরিস্থিতি কোনো ভালো কথা বলে না। এই পরিস্থিতিতে গুজব যে কত ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে, তার বড় প্রমাণ আমরা দেখলাম গাজীপুরে ২৯ নভেম্বর। পুলিশের গুলিতে শ্রমিক নিহতের গুজব ছড়িয়ে মাইকে ঘোষণা দিয়ে আগুন দেওয়া হয়েছিল গাজীপুরের কোনাবাড়ীর জরুন এলাকায় অবস্থিত স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের পোশাক কারখানাগুলোতে। আগুন লাগার কারণে ধ্বংস হয়ে গেছে এক হাজার ২০২ কোটি টাকার সম্পদ। রবিবার কালের কণ্ঠের শেষের পাতায় স্ট্যাস্টার্ড গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মোশাররফ হোসাইনের কান্নার ছবি যখন দেখেছি, তখন আমার মনে হলো প্রকৌশলী মোশাররফ কাঁদছেন না, কাঁদছে বাংলাদেশ! এ কোন বাংলাদেশকে আমরা দেখছি। যে প্রতিষ্ঠান বছরে ৩০০ মিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করত, সেই প্রতিষ্ঠান এখন ধ্বংসস্তূপ! কারা আগুন লাগাল? পুলিশ কি তাদের গ্রেপ্তার করতে পারবে? সারা বিশ্বই আজ বাংলাদেশকে চেনে। বাংলাদেশ আজ একটি শক্তি। বিশ্বের অনেক দেশে বাংলাদেশের সেনারা জাতিসংঘের 'ব্লু হেলমেট' পরে চষে বেড়াচ্ছেন। আমাদের সেনারা যেখানে শান্তিরক্ষায় নিয়োজিত, সেখানে আমাদের দেশে অশান্তি বিরাজ করবে- এটা কাম্য নয়। অবরোধ-হরতালে সহিংসতা বাড়ে। অনেক পরিবার হয়েছে পিতৃহীন। এদের ভবিষ্যৎ এখন অন্ধকার। কে এদের দেখবে? সুতরাং স্থিতিশীলতা ও শান্তি প্রতিষ্ঠা জরুরি। উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকেই। বিশ্বের তৈরি পোশাকে আমরা দ্বিতীয়। আমরা তৈরি পোশাকে একটি দক্ষ কর্মীবাহিনী তৈরি করেছি। যুক্তরাষ্ট্রে আমরা তৈরি পোশাকে শুল্কমুক্ত সুবিধা বা জিএসপি সুবিধা পাই না বটে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে ৪.৫ মিলিয়ন ডলারের বাজার আমরা প্রতিষ্ঠা করেছি। এর বড় অংশই হচ্ছে তৈরি পোশাক। ১৫ শতাংশ হারে শুল্ক পরিশোধ করে আমরা আমাদের তৈরি পোশাকের বাজার ধরে রেখেছি। আমাদের ওষুধশিল্প ৬২টি দেশে রপ্তানি হয়। ভারতের মতো দেশ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ওষুধশিল্পের একটা বিশাল বাজার গড়ে তুলেছে। আমাদেরও একটি সম্ভাবনা আছে আমাদের ওষুধশিল্পের একটা বাজার যুক্তরাষ্ট্রে গড়ে তুলতে। এসব সম্ভাবনা ধূলিস্যাৎ হয়ে যাবে, যদি আমরা একটি সমঝোতায় উপনীত হতে না পারি। সারা বিশ্ব যেখানে অর্থনৈতিক মন্দায় আক্রান্ত, প্রবৃদ্ধি যেখানে এক থেকে দুইয়ের কোঠায় নেমে এসেছে, সেখানে আমাদের প্রবৃদ্ধি একেবারে কম নয়, ছয়ের ওপরে। কিন্তু সহিংসতা, সংলাপে সরকারের আগ্রহ ও সরকারের কঠোর মনোভাব আমাদের সব অর্জনকে একটি ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আমাদের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করছে। মার্কিন কংগ্রেসে বাংলাদেশ নিয়ে শুনানি হয়েছে। সেখানে যেসব কথা বলা হয়েছে, তা বাংলাদেশের জন্য কোনো আশার কথা বলে না। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পার্লামেন্টেও শুনানি হয়েছে বাংলাদেশের ওপরে। তাদের অভিমত 'পজিটিভ' নয়। প্রভাবশালী আমেরিকান কোনো কোনো সংবাদপত্রে অভিমত দেওয়া হয়েছে, বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক ধারা যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে বাংলাদেশ অচিরেই আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হতে পারে! আমরা এটা কেউই চাই না। বিদেশিরা আমাদের অভ্যন্তরীণ ঘটনায় বারবার নাক গলাচ্ছে। একটি দেশের সুস্থ রাজনীতি চর্চার জন্য, গণতন্ত্রের জন্য, এটা কোনো ভালো লক্ষণ নয়।
সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে নির্বাচন হতে হবে। তার পরও বিরোধী দলের অংশগ্রহণটা এখানে জরুরি। এ ক্ষেত্রে সরকারের উদ্যোগটা ছিল প্রধান। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য সরকারের 'উদ্যোগের' পেছনে কোনো আন্তরিকতা ছিল না। এখন জাতি এক কঠিন সময় পার করছে। বারবার 'অবরোধ আর হরতালের' রাজনীতি আমরা প্রত্যক্ষ করছি। এটাও কোনো সমাধান বয়ে আনবে না। তারানকো নয় বরং সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে বিরোধী দলকে নির্বাচনে আনার। আর সেই সময়টা যে ফুরিয়ে গেছে, তা আমি মনে করি না। এখনো সময় আছে। উদ্যোগটা হতে হবে আন্তরিকতাপূর্ণ। তারানকোর দিকে তাকিয়ে আমরা যদি সমাধান প্রত্যাশ্যা করি- সেটা হবে বড় ভুল!
এদিকে শাহবাগের বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মির্জা ফখরুলসহ ১৬ জন বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে মামলা করার রেশ ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই আবারও মির্জা ফখরুলের বিরুদ্ধে মালিবাগে গাড়িতে বোমা হামলার কারণে মামলা হয়েছে। এবার আসামি বিএনপির ১৫ নেতা। গত দুই সপ্তাহ ধরে হরতাল আর অবরোধের কারণে যেসব সহিংসতার ছবি সংবাদপত্রে দেখছি, তাতে করে এ দেশে 'বিকাশমান গণতন্ত্রের' ওপর থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলছি! এ কোন গণতন্ত্র! সরকার যেনতেনভাবে একটি নির্বাচন করার ব্যাপারে বদ্ধপরিকর। যদিও সংবিধান তার পক্ষে। প্রধানমন্ত্রী এখনো তাঁর নির্বাহী ক্ষমতা বহাল রেখেছেন। সংসদ এখনো বহাল রয়েছে। এতে করে কি একটি জটিলতা সৃষ্টি হলো না? সংবাদপত্রের খবর অনুযায়ী, আওয়ামী লীগ যে প্রার্থীদের তলিকা প্রকাশ করেছে, তাতে বাদ পড়েছেন সদ্য পদত্যাগকারী ছয় মন্ত্রীসহ ৪৮ জন এমপি। এখন ৫ জানুয়ারি যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, তত দিন পর্যন্ত এই এমপিরা বহাল থাকবেন। নির্বাচনের পর গেজেট প্রকাশের আগ পর্যন্ত এই এমপিরা তাঁদের পদে থাকবেন। কেননা সংসদ তো ভেঙে দেওয়া হয়নি। এমনকি আমরা এটাও এ মুহূর্তে নিশ্চিত নই যে ৫ তারিখের আগেই সংসদ ভেঙে দেওয়া হবে। এবার নির্বাচনের পর যাঁরা নির্বাচিত হবেন, তখন কি কোনো কোনো আসনে দুজন করে এমপি দেখা যাবে না। আমি জানি না ইসি কিভাবে ব্যাপারটা সমাধান করবে? তবে একটি ভালো নির্বাচনের জন্য দরকার সব দলের অংশগ্রহণ, বিশেষ করে প্রধান বিরোধী দলের অংশগ্রহণ জরুরি। দরকার স্থিতিশীলতা। দরকার পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস ও আস্থা। কিন্তু সংবাদপত্রে যখন ঢাকা মেডিক্যালের বার্ন ইউনিটের ছবিগুলো দেখি, তখন দেশের স্থিতিশীলতা নিয়ে প্রশ্ন থাকবেই। যেখানে বিরোধী দলের অংশগ্রহণটা জরুরি, সেখানে তাঁদের সবার নামেই মামলা! হয়তো আজ বা আগামীকাল আমরা দেখব আরেকটি 'কমান্ডো স্টাইলে' গ্রেপ্তারের কাহিনী। এতে করে কি আস্থার সম্পর্ক তৈরি হবে? এটা সত্য, বিরোধী দল এই অবরোধ-কর্মসূচির ডাক দিয়েছে। কিন্তু আমাকে কি বিশ্বাস করতে হবে এসব নেতা বাসে পেট্রলবোমা হামলার নির্দেশ দিয়েছিলেন। পত্রিকায় দু-একজন দুষ্কৃতকারীর ছবিও ছাপা হয়েছে, যারা বাসে হামলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। পুলিশ এদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি কেন? এসব দুষ্কৃতকারীর সঙ্গে রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই। এরা রাজনীতি করে না। এরা সন্ত্রাসী। যারা পেট্রলবোমা মেরে মানুষ মারে, সাধারণ মানুষকে পুড়িয়ে দেয়, অসহায় করে দেয় একটি পরিবারকে, তারা তো জনগণের 'বন্ধু' হতে পারে না। এরা জনগণের শত্রু। এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। তবে এটাও সত্য, 'হুকুমের আসামি' হিসেবে যদি বিরোধী দলের নেতাদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা করা হয়, তাহলে তো আস্থার জায়গাটা আর থাকে না। অবরোধের কারণে আমরা এখন 'জিম্মি'। স্থবির হয়ে গেছে জনজীবন। প্রয়োজন ছাড়া মানুষ আজ আর ঘর থেকে বেরোতে সাহস পাচ্ছে না। এই পরিস্থিতি কোনো ভালো কথা বলে না। এই পরিস্থিতিতে গুজব যে কত ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে, তার বড় প্রমাণ আমরা দেখলাম গাজীপুরে ২৯ নভেম্বর। পুলিশের গুলিতে শ্রমিক নিহতের গুজব ছড়িয়ে মাইকে ঘোষণা দিয়ে আগুন দেওয়া হয়েছিল গাজীপুরের কোনাবাড়ীর জরুন এলাকায় অবস্থিত স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের পোশাক কারখানাগুলোতে। আগুন লাগার কারণে ধ্বংস হয়ে গেছে এক হাজার ২০২ কোটি টাকার সম্পদ। রবিবার কালের কণ্ঠের শেষের পাতায় স্ট্যাস্টার্ড গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মোশাররফ হোসাইনের কান্নার ছবি যখন দেখেছি, তখন আমার মনে হলো প্রকৌশলী মোশাররফ কাঁদছেন না, কাঁদছে বাংলাদেশ! এ কোন বাংলাদেশকে আমরা দেখছি। যে প্রতিষ্ঠান বছরে ৩০০ মিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করত, সেই প্রতিষ্ঠান এখন ধ্বংসস্তূপ! কারা আগুন লাগাল? পুলিশ কি তাদের গ্রেপ্তার করতে পারবে? সারা বিশ্বই আজ বাংলাদেশকে চেনে। বাংলাদেশ আজ একটি শক্তি। বিশ্বের অনেক দেশে বাংলাদেশের সেনারা জাতিসংঘের 'ব্লু হেলমেট' পরে চষে বেড়াচ্ছেন। আমাদের সেনারা যেখানে শান্তিরক্ষায় নিয়োজিত, সেখানে আমাদের দেশে অশান্তি বিরাজ করবে- এটা কাম্য নয়। অবরোধ-হরতালে সহিংসতা বাড়ে। অনেক পরিবার হয়েছে পিতৃহীন। এদের ভবিষ্যৎ এখন অন্ধকার। কে এদের দেখবে? সুতরাং স্থিতিশীলতা ও শান্তি প্রতিষ্ঠা জরুরি। উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকেই। বিশ্বের তৈরি পোশাকে আমরা দ্বিতীয়। আমরা তৈরি পোশাকে একটি দক্ষ কর্মীবাহিনী তৈরি করেছি। যুক্তরাষ্ট্রে আমরা তৈরি পোশাকে শুল্কমুক্ত সুবিধা বা জিএসপি সুবিধা পাই না বটে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে ৪.৫ মিলিয়ন ডলারের বাজার আমরা প্রতিষ্ঠা করেছি। এর বড় অংশই হচ্ছে তৈরি পোশাক। ১৫ শতাংশ হারে শুল্ক পরিশোধ করে আমরা আমাদের তৈরি পোশাকের বাজার ধরে রেখেছি। আমাদের ওষুধশিল্প ৬২টি দেশে রপ্তানি হয়। ভারতের মতো দেশ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ওষুধশিল্পের একটা বিশাল বাজার গড়ে তুলেছে। আমাদেরও একটি সম্ভাবনা আছে আমাদের ওষুধশিল্পের একটা বাজার যুক্তরাষ্ট্রে গড়ে তুলতে। এসব সম্ভাবনা ধূলিস্যাৎ হয়ে যাবে, যদি আমরা একটি সমঝোতায় উপনীত হতে না পারি। সারা বিশ্ব যেখানে অর্থনৈতিক মন্দায় আক্রান্ত, প্রবৃদ্ধি যেখানে এক থেকে দুইয়ের কোঠায় নেমে এসেছে, সেখানে আমাদের প্রবৃদ্ধি একেবারে কম নয়, ছয়ের ওপরে। কিন্তু সহিংসতা, সংলাপে সরকারের আগ্রহ ও সরকারের কঠোর মনোভাব আমাদের সব অর্জনকে একটি ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আমাদের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করছে। মার্কিন কংগ্রেসে বাংলাদেশ নিয়ে শুনানি হয়েছে। সেখানে যেসব কথা বলা হয়েছে, তা বাংলাদেশের জন্য কোনো আশার কথা বলে না। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পার্লামেন্টেও শুনানি হয়েছে বাংলাদেশের ওপরে। তাদের অভিমত 'পজিটিভ' নয়। প্রভাবশালী আমেরিকান কোনো কোনো সংবাদপত্রে অভিমত দেওয়া হয়েছে, বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক ধারা যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে বাংলাদেশ অচিরেই আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হতে পারে! আমরা এটা কেউই চাই না। বিদেশিরা আমাদের অভ্যন্তরীণ ঘটনায় বারবার নাক গলাচ্ছে। একটি দেশের সুস্থ রাজনীতি চর্চার জন্য, গণতন্ত্রের জন্য, এটা কোনো ভালো লক্ষণ নয়।
সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে নির্বাচন হতে হবে। তার পরও বিরোধী দলের অংশগ্রহণটা এখানে জরুরি। এ ক্ষেত্রে সরকারের উদ্যোগটা ছিল প্রধান। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য সরকারের 'উদ্যোগের' পেছনে কোনো আন্তরিকতা ছিল না। এখন জাতি এক কঠিন সময় পার করছে। বারবার 'অবরোধ আর হরতালের' রাজনীতি আমরা প্রত্যক্ষ করছি। এটাও কোনো সমাধান বয়ে আনবে না। তারানকো নয় বরং সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে বিরোধী দলকে নির্বাচনে আনার। আর সেই সময়টা যে ফুরিয়ে গেছে, তা আমি মনে করি না। এখনো সময় আছে। উদ্যোগটা হতে হবে আন্তরিকতাপূর্ণ। তারানকোর দিকে তাকিয়ে আমরা যদি সমাধান প্রত্যাশ্যা করি- সেটা হবে বড় ভুল!
দৈনিক কালের কন্ঠ, ৫ ডিসেম্বর ২০১৩।
লেখক : অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
লেখক : অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
0 comments:
Post a Comment