এক জটিল রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সঙ্কটে পড়েছে দেশ। ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের সিডিউল ঘোষিত হলেও, বিএনপির তাতে অংশ না নেয়ার ও সেই সঙ্গে নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা জটিল এক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। এমনকি জাতিসংঘের দূত তারানকোকে পর্যন্ত সমঝোতার জন্য আসতে হয়েছে। ঢাকায় এসে তিনি দৌড়ঝাঁপ করছেন। নির্বাচন কমিশন থেকে শুরু করে সব রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের সঙ্গে তিনি বৈঠক করেছেন। তিনিও কতোটুকু সফল হবেন সেটাই এখন দেখার বিষয়।
তবে অসাংবিধানিক শক্তিকে ক্ষমতায় আসা রোধ করতে হলে নির্বাচন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। সংবিধান নির্বাচনের কথাই বলছে। আর এই নির্বাচনটি হতে হবে ২৪ জানুয়ারির আগে। ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের তারিখ ঘোষিত হয়েছে। ইতোমধ্যে নির্বাচনের তফসিলও ঘোষিত হয়েছে এবং সরকার ও সরকারের সমর্থক কিছু দলের পক্ষ থেকে মনোনয়নপত্র দাখিল করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত যেটা স্পষ্ট, তা হচ্ছে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র দাখিল করলেও পার্টির চেয়ারম্যান তাদের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছেন। অন্যদিকে বাস্তবতা হচ্ছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি তথা ১৮ দল শুধু নির্বাচন বয়কটই নয়, বরং নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে। এখন পরস্পরবিরোধী এই দুই ধারার মধ্যে সমঝোতা কীভাবে হবে, তার কোনো হিসাব মিলছে না। দিন যতই যাচ্ছে, ততই সঙ্কটের গভীরতা বাড়ছে। বিশ্বসম্প্রদায় একটি 'গ্রহণযোগ্য' ও সব দলের অংশগ্রহণে একটি নির্বাচনের কথা বললেও এর সম্ভাবনা ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হয়ে আসছে।
আমাদের রাজনীতিবিদদের যে দূরদর্শিতার পরিচয় দেয়ার প্রয়োজন ছিল, তা তারা দিতে পারছেন না। যেখানে সমঝোতা মুখ্য ছিল, সেখানে দুঃখজনক হলেও সত্য, প্রধান বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দেয়া হচ্ছে। বিএনপির শীর্ষ স্থানীয় বেশ কজন নেতা এখন জেলে। এর মধ্যে সাদেক হোসেন খোকা একটি 'রাজনৈতিক বোমা' ফাটিয়েছেন। তিনি বলেছেন তাকে মন্ত্রী হওয়ার 'অফার' দেয়া হয়েছিল। কথাটার পেছনে 'সত্যতা' কতটুকু আছে, আমরা বলতে পারব না, কিন্তু বাজারে বড় গুজব যে বিএনপির শীর্ষ স্থানীয় বেশ কয়েকজন নেতাকে 'মন্ত্রী' হওয়ার টোপ দেয়া হয়েছিল। সরকার যে 'সর্বদলীয় ঐকমত্য'-এর সরকার গঠন করেছে, তাতে বিএনপির 'যোগদান' ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শেষ মুহূর্তে জাতীয় পার্টির মন্ত্রীদের পদত্যাগের সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একটি বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দিয়েছে, সন্দেহ নেই তাতে। কিন্তু তারপরও দেখা গেছে সরকার দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সহযোগীদের সঙ্গে সিট ভাগ-বাটোয়ারার মিটিং করছে। যাদের সঙ্গে সিট ভাগ-বাটোয়ারার কথা বলা হচ্ছে, তারা হচ্ছে জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, সাম্যবাদী দল, গণতন্ত্রী দল, তরিকত ফেডারেশন প্রমুখ। এতে সরকারের 'উদ্দেশ্য' কতটুকু সফল হবে বলতে পারব না। কিন্তু এই নির্বাচনের যে কোনো গ্রহণযোগ্যতা থাকবে না, তা দিব্যি দিয়ে বলতে পারি। অতীতে, ১৯৮৬, ১৯৮৮, ১৯৯৬ সালে আমরা এ ধরনের নির্বাচন প্রত্যক্ষ করেছি, যার কোনো গ্রহণযোগ্যতা ছিল না। এমনকি সরকারের সর্বদলীয় সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত ছিল ভুল। এর প্রয়োজন ছিল না। একটি 'সর্বদলীয়' সরকার গঠিত হয়েছে। অথচ সংবিধান এভাবে কোথাও 'সর্বদলীয়' সরকারের ব্যাখ্যা নেই। সরকারপ্রধান সংবিধানের ৫৬(২) ধারা বলে একটি মন্ত্রিসভা গঠন করতে পারেন, কিন্তু তাকে যে কোনো নামে ডাকা যেতে পারে। কিন্তু 'সর্বদলীয় সরকার' নামে ডাকা যাবে না। সর্বদলীয় সরকার হতে পারত, যদি সেখানে বিএনপির প্রতিনিধিত্ব থাকত। এখন মূলত যাদের মন্ত্রিসভায় প্রতিনিধিত্ব রয়েছে, তাদের গণ ভিত্তি নেই। যেমন বলা যেতে পারে জাসদের কথা। ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে জাসদ ২৩৭টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে একটিতে বিজয়ী হয়েছিল। প্রাপ্ত ভোটের হার ৬ দশমিক ৫২ ভাগ। ১৯৭৯ সালে ২৪০টি আসনে (দ্বিতীয় সাংসদ) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আটটিতে বিজয়ী হয়েছিল। প্রাপ্ত ভোটের হার ৪ দশমিক ৮৩ ভাগ। ১৯৮৬ সালে রবের জাসদ পেয়েছিল ৪ দশমিক ৫৪ ভাগ ভোট। ১৯৯১ সালে একটি আসনে (১৬১টিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে) শূন্য দশমিক ৭৯ ভাগ ভোট। ১৯৯৬ সালে রব জাসদ একটি আসন, প্রাপ্ত ভোট শূন্য দশমিক ২৩ ভাগ ভোট। আর ইনু জাসদ কোনো আসন নেই, শূন্য দশমিক ০২ ভাগ ভোট মাত্র। অথচ এরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল ৬৭ ও ৩১টি আসনে। ২০০১ সালে জাসদ ৭৬টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে কোনো আসন পায়নি, প্রাপ্ত ভোট শূন্য দশমিক ২১ ভাগ। ২০০৮ সালে আসন তিন, প্রাপ্ত ভোট শূন্য দশমিক ৭৪ ভাগ। মজার কথা ইনু আর মইনুদ্দিন-বাদলরা 'নৌকা' মার্কা নিয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন। ওইসব আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিল না। এবার আসুন, ওয়ার্কার্স পার্টির ক্ষেত্রে। ২০০৮ সালে নৌকা মার্কা নিয়ে মেনন ও বাদশা সাহেব দুটো আসন নিশ্চিত করেছেন, কিন্তু প্রাপ্ত ভোট মাত্র শূন্য দশমিক ৩৮ ভাগ। ২০০১ সালে প্রাপ্ত ভোট (বাম দলগুলোর সঙ্গে) শূন্য দশমিক ২৫ ভাগ। ১৯৯৬ ও ১৯৯১ সালে প্রাপ্ত ভোট যথাক্রমে শূন্য দশমিক ১৩ ও শূন্য দশমিক ১৯ ভাগ। এরশাদীয় জমানায় ১৯৮৬ সালে তিনটি আসন পেয়েছিল বটে (শূন্য দশমিক ৫৩ ভাগ) কিন্তু ওই নির্বাচনের কোনো গ্রহণযোগ্যতা ছিল না। জাতীয় পার্টিকে কিছুটা গ্রহণযোগ্যতা দেয়া যেতে পারে। ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালে জাতীয় পার্টির প্রাপ্ত ভোট গড়ে সাত শতাংশের ওপরে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে যাদের গণ ভিত্তি এত দুর্বল, তাদের নিয়ে সরকার গঠন করে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় ঐক্য কীভাবে নির্মিত করবেন? একটি জাতীয় ঐকমত্য প্রয়োজন। সমঝোতা দরকার। যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীও বলেছিলেন সে কথা। সংলাপ, সমঝোতা কিছুই হলো না। বরং বিএনপির শীর্ষ নেতারা এখন কারাগারে। খালেদা জিয়া দেখা করেছিলেন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে। আমাদের সংবিধানে রাষ্ট্রপতির ভূমিকা সীমিত। তার পক্ষে কিছু করা সম্ভব নয়। তিনি তা করবেনও না। সিদ্ধান্ত এখনো প্রধানমন্ত্রীর হাতে। কিন্তু বিএনপির দাবি অনুযায়ী একটি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার তিনি করবেন, তা এখন চিন্তাও করা যায় না। এর অর্থ এখন পরিষ্কার। একটি নির্বাচন যদি হয়ও (?) সেখানে বিএনপি তো বটেই, জাতীয় পার্টিও থাকছে না। তাহলে এই নির্বাচন করে সরকারের অর্জন কতটুকু? এরই মধ্যে একটি 'নাটকীয় ঘটনার' অবতারণা হয়েছে গত বুধবার গভীর রাতে। দীর্ঘ ২৭ ঘণ্টা পর এরশাদের নিজ বাসায় ফিরে আসা, সুজাতা সিং-এর সঙ্গে তার বৈঠকের পর নির্বাচনে না যাওয়া ও মন্ত্রীদের পদত্যাগের নির্দেশের পর পুলিশ ও র্যাব তার বাড়ি ঘিরে ফেলে। একপর্যায়ে তিনি আত্মহত্যা করারও হুমকি দেন! সুজাতা সিং-এর সঙ্গে তার কথোপকথনও সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে। অনলাইন সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে দেখা যায় সুজাতা সিং তাকে (এরশাদ) নির্বাচনে অংশ নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। সুজাতা সিং-এর ভাষায় জাপা নির্বাচনে অংশ না নিলে দেশে জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটবে। ভারত আমাদের বন্ধু দেশ। আমাদের উন্নয়নে ভারত আমাদের পার্টনার। কিন্তু ভারতের 'একজন আমলা' আমাদের অভ্যন্তরীণ ঘটনায় হস্তক্ষেপ করবে, এটা প্রত্যাশিত নয়।
রাজনীতিবিদরাই সমস্যার সমাধান করবেন_ এ বিশ্বাস আমাদের আছে। আজ তাই প্রয়োজন রাজনীতিবিদদের দূরদর্শিতার প্রমাণ দেয়া। সহিংসতা যদি এভাবে চলতে থাকে, তাহলে দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা ছাড়া সরকারের হাতে যেমন আর কোনো সুযোগ নাকি থাকবে না, অন্যদিকে তেমনি সরকারের হার্ড লাইনে আবার সিদ্ধান্তও কোনো 'ভালো' ফল সহজে আসবে না। এতে মানুষের মধ্যে হতাশা, ক্ষোভ, বিদ্বেষ বাড়তে থাকবে। আমরা বারবার অনির্বাচিত অগণতান্ত্রিক ব্যক্তিকে দোষারোপ করছি। কিন্তু পরিস্থিতি যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তাহলে ওই অগণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর দিকেই চোখ থাকবে সবার। এখনো সময় আছে একটা সমঝোতার। সুজাতা সিং কিংবা তারানকো আমাদের কোনো সমাধান দিয়ে যাবেন না। আমাদের সমস্যার সমাধান আমাদেরই করতে হবে। তাই প্রয়োজন দূরদর্শিতার। প্রয়োজন আন্তরিকতার।
প্রয়োজন 'রিয়েল পলিটিকস'-এর বাস্তব প্রয়োগ। রাজনীতিবিদরা সেই কাজটিই করবেন, আমাদের এটাই প্রত্যাশা। সংবাদপত্রের পাতায় কিংবা টকশোতে আমরা বারবার এ কথাটাই বলে আসছি। রাজনীতিবিদরা যদি দূরদর্শিতার পরিচয় দিতে না পারেন, তাহলে তা দেশকে আরো বড় ধরনের সঙ্কটের মধ্যে ফেলে দেবে। দুঃখ লাগে যারা সরকারে আছেন, তারা এই 'সরল অঙ্কটি' বুঝতে পারছেন না। গত তিন সপ্তাহে দেশজুড়ে যে তা-ব চলেছে, তা কারোর কাছেই 'কাম্য' নয়, প্রত্যাশিত নয়। একটা 'মেসেজ' কিন্তু এর মধ্যে পেঁৗছে দিয়েছে বিশুদ্ধ জনতা। আমি যখন কানসাটে গেলাম রব্বানীর বাড়ি পুড়তে দেখি, তখন আমাকে মনে করিয়ে দেয় তার সেই অবিসংবাদিত ভূমিকার কথা। তিনি স্থানীয় একটি ইস্যু নিয়ে (কয়লা উত্তোলন) বহুজাতিক বাহিনীর বিরুদ্ধে যে প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন, তা তাকে অবিসংবাদিত নেতায় পরিণত করেছিল। তিনি হয়ে উঠেছিলেন 'নেতা'। যে জনগণ তাকে 'হিরোতে' পরিণত করেছিল, তারাই আবার তাকে 'পরিত্যাগ' করল। তার বাড়িতে আগুন দিল। এর অর্থ পরিষ্কার, স্থানীয় জনগণের সায় নেই এই নির্বাচনের। যেভাবে তথাকথিত প্রার্থীদের বাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে, তা সুস্থতার কোনো কথা বলে না। এটা সুস্থ রাজনীতির লক্ষণ নয়। এটা 'অসুস্থ' রাজনীতির লক্ষণ। এই 'অসুস্থ রাজনীতি' থেকে সবাইকে বের হয়ে আসতে হবে। আর উদ্যোগটি নিতে হবে সরকারকেই। যারা সাধারণ নির্বাচনে জামানত হারায়, যাদের কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই, চাঁদাবাজির ওপর যাদের সংগঠন চলে, তাদের মন্ত্রী বানিয়ে উপদেষ্টা করে প্রধানমন্ত্রী তার এই সিদ্ধান্তের পেছনে জনসমর্থন পেয়েছেন বলে মনে হয় না। বরং তার উপদেষ্টারা তাকে সঠিক 'উপদেশটি' দিতে পারেননি।
সুবিধাভোগীরা সবসময় ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট পেতে উৎসাহী নয়। চাঁদা নিয়ে যার সারাজীবন চলেছে, প্রধানমন্ত্রীর বদৌলতে তিনি মন্ত্রী-উপদেষ্টা হয়েছেন বটে, কিন্তু এতে মূল সমস্যার সমাধান হয়নি। মূল সংগঠনকে বাদ দিয়ে নির্বাচন, সে নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। তাই এখনো সময় আছে।
এক তরফা নির্বাচন বা জরুরি অবস্থা জারি কোনো সমাধান নয়। রাষ্ট্রপতি একটি উদ্যোগ নিতে পারেন। এটা নৈতিক, সাংবিধানিক নয়। সংবিধানে তার ক্ষমতা একেবারেই সীমিত। কিন্তু যিনি ৫০ বছর শুধু রাজনীতিই করেছেন, তিনি তো সাধারণ মানুষের 'পাল্স' বুঝতে পারবেন। জাতিসংঘের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে উদ্যোগ নিতে হবে রাষ্ট্রপতিকেই।
আবারো শনিবার থেকে লাগাতার অবরোধ চলছে। অবরোধের সময়সীমা বাড়ানোর কথাও শুনছি। শুধু রাজনীতি নয়_ অর্থনীতিও আজ হুমকির মুখে। এক ধরনের আতঙ্কের মধ্যে বাস করছে মানুষ। মানুষের জন্যই সংবিধান। সংবিধানের জন্য মানুষ নয়। তাই প্রয়োজনে আবারো সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। কিন্তু এই মুহূর্তে প্রয়োজন একটি সমঝোতা। নির্বাচনের তফসিল বাতিল করাও সম্ভব। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় সংবিধান মুখ্য হয়ে দেখা দেয়নি। বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান করা হয়েছিল, তাও সংবিধানকে অনুসরণ করা হয়নি। আজো সম্ভব। রাষ্ট্রপতির উদ্যোগ কিংবা একটি 'সাহাবুদ্দীন ফর্মূলা' এই সঙ্কট থেকে জাতিকে উদ্ধার করতে পারে। আর তাই আন্তরিকতা ও দূরদর্শিতা খুবই প্রয়োজন।
তবে অসাংবিধানিক শক্তিকে ক্ষমতায় আসা রোধ করতে হলে নির্বাচন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। সংবিধান নির্বাচনের কথাই বলছে। আর এই নির্বাচনটি হতে হবে ২৪ জানুয়ারির আগে। ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের তারিখ ঘোষিত হয়েছে। ইতোমধ্যে নির্বাচনের তফসিলও ঘোষিত হয়েছে এবং সরকার ও সরকারের সমর্থক কিছু দলের পক্ষ থেকে মনোনয়নপত্র দাখিল করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত যেটা স্পষ্ট, তা হচ্ছে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র দাখিল করলেও পার্টির চেয়ারম্যান তাদের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছেন। অন্যদিকে বাস্তবতা হচ্ছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি তথা ১৮ দল শুধু নির্বাচন বয়কটই নয়, বরং নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে। এখন পরস্পরবিরোধী এই দুই ধারার মধ্যে সমঝোতা কীভাবে হবে, তার কোনো হিসাব মিলছে না। দিন যতই যাচ্ছে, ততই সঙ্কটের গভীরতা বাড়ছে। বিশ্বসম্প্রদায় একটি 'গ্রহণযোগ্য' ও সব দলের অংশগ্রহণে একটি নির্বাচনের কথা বললেও এর সম্ভাবনা ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হয়ে আসছে।
আমাদের রাজনীতিবিদদের যে দূরদর্শিতার পরিচয় দেয়ার প্রয়োজন ছিল, তা তারা দিতে পারছেন না। যেখানে সমঝোতা মুখ্য ছিল, সেখানে দুঃখজনক হলেও সত্য, প্রধান বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দেয়া হচ্ছে। বিএনপির শীর্ষ স্থানীয় বেশ কজন নেতা এখন জেলে। এর মধ্যে সাদেক হোসেন খোকা একটি 'রাজনৈতিক বোমা' ফাটিয়েছেন। তিনি বলেছেন তাকে মন্ত্রী হওয়ার 'অফার' দেয়া হয়েছিল। কথাটার পেছনে 'সত্যতা' কতটুকু আছে, আমরা বলতে পারব না, কিন্তু বাজারে বড় গুজব যে বিএনপির শীর্ষ স্থানীয় বেশ কয়েকজন নেতাকে 'মন্ত্রী' হওয়ার টোপ দেয়া হয়েছিল। সরকার যে 'সর্বদলীয় ঐকমত্য'-এর সরকার গঠন করেছে, তাতে বিএনপির 'যোগদান' ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শেষ মুহূর্তে জাতীয় পার্টির মন্ত্রীদের পদত্যাগের সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একটি বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দিয়েছে, সন্দেহ নেই তাতে। কিন্তু তারপরও দেখা গেছে সরকার দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সহযোগীদের সঙ্গে সিট ভাগ-বাটোয়ারার মিটিং করছে। যাদের সঙ্গে সিট ভাগ-বাটোয়ারার কথা বলা হচ্ছে, তারা হচ্ছে জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, সাম্যবাদী দল, গণতন্ত্রী দল, তরিকত ফেডারেশন প্রমুখ। এতে সরকারের 'উদ্দেশ্য' কতটুকু সফল হবে বলতে পারব না। কিন্তু এই নির্বাচনের যে কোনো গ্রহণযোগ্যতা থাকবে না, তা দিব্যি দিয়ে বলতে পারি। অতীতে, ১৯৮৬, ১৯৮৮, ১৯৯৬ সালে আমরা এ ধরনের নির্বাচন প্রত্যক্ষ করেছি, যার কোনো গ্রহণযোগ্যতা ছিল না। এমনকি সরকারের সর্বদলীয় সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত ছিল ভুল। এর প্রয়োজন ছিল না। একটি 'সর্বদলীয়' সরকার গঠিত হয়েছে। অথচ সংবিধান এভাবে কোথাও 'সর্বদলীয়' সরকারের ব্যাখ্যা নেই। সরকারপ্রধান সংবিধানের ৫৬(২) ধারা বলে একটি মন্ত্রিসভা গঠন করতে পারেন, কিন্তু তাকে যে কোনো নামে ডাকা যেতে পারে। কিন্তু 'সর্বদলীয় সরকার' নামে ডাকা যাবে না। সর্বদলীয় সরকার হতে পারত, যদি সেখানে বিএনপির প্রতিনিধিত্ব থাকত। এখন মূলত যাদের মন্ত্রিসভায় প্রতিনিধিত্ব রয়েছে, তাদের গণ ভিত্তি নেই। যেমন বলা যেতে পারে জাসদের কথা। ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে জাসদ ২৩৭টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে একটিতে বিজয়ী হয়েছিল। প্রাপ্ত ভোটের হার ৬ দশমিক ৫২ ভাগ। ১৯৭৯ সালে ২৪০টি আসনে (দ্বিতীয় সাংসদ) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আটটিতে বিজয়ী হয়েছিল। প্রাপ্ত ভোটের হার ৪ দশমিক ৮৩ ভাগ। ১৯৮৬ সালে রবের জাসদ পেয়েছিল ৪ দশমিক ৫৪ ভাগ ভোট। ১৯৯১ সালে একটি আসনে (১৬১টিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে) শূন্য দশমিক ৭৯ ভাগ ভোট। ১৯৯৬ সালে রব জাসদ একটি আসন, প্রাপ্ত ভোট শূন্য দশমিক ২৩ ভাগ ভোট। আর ইনু জাসদ কোনো আসন নেই, শূন্য দশমিক ০২ ভাগ ভোট মাত্র। অথচ এরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল ৬৭ ও ৩১টি আসনে। ২০০১ সালে জাসদ ৭৬টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে কোনো আসন পায়নি, প্রাপ্ত ভোট শূন্য দশমিক ২১ ভাগ। ২০০৮ সালে আসন তিন, প্রাপ্ত ভোট শূন্য দশমিক ৭৪ ভাগ। মজার কথা ইনু আর মইনুদ্দিন-বাদলরা 'নৌকা' মার্কা নিয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন। ওইসব আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিল না। এবার আসুন, ওয়ার্কার্স পার্টির ক্ষেত্রে। ২০০৮ সালে নৌকা মার্কা নিয়ে মেনন ও বাদশা সাহেব দুটো আসন নিশ্চিত করেছেন, কিন্তু প্রাপ্ত ভোট মাত্র শূন্য দশমিক ৩৮ ভাগ। ২০০১ সালে প্রাপ্ত ভোট (বাম দলগুলোর সঙ্গে) শূন্য দশমিক ২৫ ভাগ। ১৯৯৬ ও ১৯৯১ সালে প্রাপ্ত ভোট যথাক্রমে শূন্য দশমিক ১৩ ও শূন্য দশমিক ১৯ ভাগ। এরশাদীয় জমানায় ১৯৮৬ সালে তিনটি আসন পেয়েছিল বটে (শূন্য দশমিক ৫৩ ভাগ) কিন্তু ওই নির্বাচনের কোনো গ্রহণযোগ্যতা ছিল না। জাতীয় পার্টিকে কিছুটা গ্রহণযোগ্যতা দেয়া যেতে পারে। ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালে জাতীয় পার্টির প্রাপ্ত ভোট গড়ে সাত শতাংশের ওপরে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে যাদের গণ ভিত্তি এত দুর্বল, তাদের নিয়ে সরকার গঠন করে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় ঐক্য কীভাবে নির্মিত করবেন? একটি জাতীয় ঐকমত্য প্রয়োজন। সমঝোতা দরকার। যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীও বলেছিলেন সে কথা। সংলাপ, সমঝোতা কিছুই হলো না। বরং বিএনপির শীর্ষ নেতারা এখন কারাগারে। খালেদা জিয়া দেখা করেছিলেন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে। আমাদের সংবিধানে রাষ্ট্রপতির ভূমিকা সীমিত। তার পক্ষে কিছু করা সম্ভব নয়। তিনি তা করবেনও না। সিদ্ধান্ত এখনো প্রধানমন্ত্রীর হাতে। কিন্তু বিএনপির দাবি অনুযায়ী একটি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার তিনি করবেন, তা এখন চিন্তাও করা যায় না। এর অর্থ এখন পরিষ্কার। একটি নির্বাচন যদি হয়ও (?) সেখানে বিএনপি তো বটেই, জাতীয় পার্টিও থাকছে না। তাহলে এই নির্বাচন করে সরকারের অর্জন কতটুকু? এরই মধ্যে একটি 'নাটকীয় ঘটনার' অবতারণা হয়েছে গত বুধবার গভীর রাতে। দীর্ঘ ২৭ ঘণ্টা পর এরশাদের নিজ বাসায় ফিরে আসা, সুজাতা সিং-এর সঙ্গে তার বৈঠকের পর নির্বাচনে না যাওয়া ও মন্ত্রীদের পদত্যাগের নির্দেশের পর পুলিশ ও র্যাব তার বাড়ি ঘিরে ফেলে। একপর্যায়ে তিনি আত্মহত্যা করারও হুমকি দেন! সুজাতা সিং-এর সঙ্গে তার কথোপকথনও সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে। অনলাইন সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে দেখা যায় সুজাতা সিং তাকে (এরশাদ) নির্বাচনে অংশ নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। সুজাতা সিং-এর ভাষায় জাপা নির্বাচনে অংশ না নিলে দেশে জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটবে। ভারত আমাদের বন্ধু দেশ। আমাদের উন্নয়নে ভারত আমাদের পার্টনার। কিন্তু ভারতের 'একজন আমলা' আমাদের অভ্যন্তরীণ ঘটনায় হস্তক্ষেপ করবে, এটা প্রত্যাশিত নয়।
রাজনীতিবিদরাই সমস্যার সমাধান করবেন_ এ বিশ্বাস আমাদের আছে। আজ তাই প্রয়োজন রাজনীতিবিদদের দূরদর্শিতার প্রমাণ দেয়া। সহিংসতা যদি এভাবে চলতে থাকে, তাহলে দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা ছাড়া সরকারের হাতে যেমন আর কোনো সুযোগ নাকি থাকবে না, অন্যদিকে তেমনি সরকারের হার্ড লাইনে আবার সিদ্ধান্তও কোনো 'ভালো' ফল সহজে আসবে না। এতে মানুষের মধ্যে হতাশা, ক্ষোভ, বিদ্বেষ বাড়তে থাকবে। আমরা বারবার অনির্বাচিত অগণতান্ত্রিক ব্যক্তিকে দোষারোপ করছি। কিন্তু পরিস্থিতি যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তাহলে ওই অগণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর দিকেই চোখ থাকবে সবার। এখনো সময় আছে একটা সমঝোতার। সুজাতা সিং কিংবা তারানকো আমাদের কোনো সমাধান দিয়ে যাবেন না। আমাদের সমস্যার সমাধান আমাদেরই করতে হবে। তাই প্রয়োজন দূরদর্শিতার। প্রয়োজন আন্তরিকতার।
প্রয়োজন 'রিয়েল পলিটিকস'-এর বাস্তব প্রয়োগ। রাজনীতিবিদরা সেই কাজটিই করবেন, আমাদের এটাই প্রত্যাশা। সংবাদপত্রের পাতায় কিংবা টকশোতে আমরা বারবার এ কথাটাই বলে আসছি। রাজনীতিবিদরা যদি দূরদর্শিতার পরিচয় দিতে না পারেন, তাহলে তা দেশকে আরো বড় ধরনের সঙ্কটের মধ্যে ফেলে দেবে। দুঃখ লাগে যারা সরকারে আছেন, তারা এই 'সরল অঙ্কটি' বুঝতে পারছেন না। গত তিন সপ্তাহে দেশজুড়ে যে তা-ব চলেছে, তা কারোর কাছেই 'কাম্য' নয়, প্রত্যাশিত নয়। একটা 'মেসেজ' কিন্তু এর মধ্যে পেঁৗছে দিয়েছে বিশুদ্ধ জনতা। আমি যখন কানসাটে গেলাম রব্বানীর বাড়ি পুড়তে দেখি, তখন আমাকে মনে করিয়ে দেয় তার সেই অবিসংবাদিত ভূমিকার কথা। তিনি স্থানীয় একটি ইস্যু নিয়ে (কয়লা উত্তোলন) বহুজাতিক বাহিনীর বিরুদ্ধে যে প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন, তা তাকে অবিসংবাদিত নেতায় পরিণত করেছিল। তিনি হয়ে উঠেছিলেন 'নেতা'। যে জনগণ তাকে 'হিরোতে' পরিণত করেছিল, তারাই আবার তাকে 'পরিত্যাগ' করল। তার বাড়িতে আগুন দিল। এর অর্থ পরিষ্কার, স্থানীয় জনগণের সায় নেই এই নির্বাচনের। যেভাবে তথাকথিত প্রার্থীদের বাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে, তা সুস্থতার কোনো কথা বলে না। এটা সুস্থ রাজনীতির লক্ষণ নয়। এটা 'অসুস্থ' রাজনীতির লক্ষণ। এই 'অসুস্থ রাজনীতি' থেকে সবাইকে বের হয়ে আসতে হবে। আর উদ্যোগটি নিতে হবে সরকারকেই। যারা সাধারণ নির্বাচনে জামানত হারায়, যাদের কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই, চাঁদাবাজির ওপর যাদের সংগঠন চলে, তাদের মন্ত্রী বানিয়ে উপদেষ্টা করে প্রধানমন্ত্রী তার এই সিদ্ধান্তের পেছনে জনসমর্থন পেয়েছেন বলে মনে হয় না। বরং তার উপদেষ্টারা তাকে সঠিক 'উপদেশটি' দিতে পারেননি।
সুবিধাভোগীরা সবসময় ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট পেতে উৎসাহী নয়। চাঁদা নিয়ে যার সারাজীবন চলেছে, প্রধানমন্ত্রীর বদৌলতে তিনি মন্ত্রী-উপদেষ্টা হয়েছেন বটে, কিন্তু এতে মূল সমস্যার সমাধান হয়নি। মূল সংগঠনকে বাদ দিয়ে নির্বাচন, সে নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। তাই এখনো সময় আছে।
এক তরফা নির্বাচন বা জরুরি অবস্থা জারি কোনো সমাধান নয়। রাষ্ট্রপতি একটি উদ্যোগ নিতে পারেন। এটা নৈতিক, সাংবিধানিক নয়। সংবিধানে তার ক্ষমতা একেবারেই সীমিত। কিন্তু যিনি ৫০ বছর শুধু রাজনীতিই করেছেন, তিনি তো সাধারণ মানুষের 'পাল্স' বুঝতে পারবেন। জাতিসংঘের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে উদ্যোগ নিতে হবে রাষ্ট্রপতিকেই।
আবারো শনিবার থেকে লাগাতার অবরোধ চলছে। অবরোধের সময়সীমা বাড়ানোর কথাও শুনছি। শুধু রাজনীতি নয়_ অর্থনীতিও আজ হুমকির মুখে। এক ধরনের আতঙ্কের মধ্যে বাস করছে মানুষ। মানুষের জন্যই সংবিধান। সংবিধানের জন্য মানুষ নয়। তাই প্রয়োজনে আবারো সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। কিন্তু এই মুহূর্তে প্রয়োজন একটি সমঝোতা। নির্বাচনের তফসিল বাতিল করাও সম্ভব। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় সংবিধান মুখ্য হয়ে দেখা দেয়নি। বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান করা হয়েছিল, তাও সংবিধানকে অনুসরণ করা হয়নি। আজো সম্ভব। রাষ্ট্রপতির উদ্যোগ কিংবা একটি 'সাহাবুদ্দীন ফর্মূলা' এই সঙ্কট থেকে জাতিকে উদ্ধার করতে পারে। আর তাই আন্তরিকতা ও দূরদর্শিতা খুবই প্রয়োজন।
দৈনিক যায় যায় দিন, ১০ নভেম্বর ২০১৩।
0 comments:
Post a Comment