ফেব্রুয়ারির
প্রথম সপ্তাহে বেশকিছু সংবাদ পত্রপত্রিকায় ছাপা হয়েছে, যা আমাদের জন্য
কোনো ভালো খবর নয়। ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে ৭২ ঘণ্টার হরতাল। আর ৭
ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অবরোধের ৩৩ দিনে নিহত হয়েছেন ৭৭ জন। ৫৫১টি গাড়িতে আগুন
দেয়া হয়েছে। আর গ্রেপ্তার হয়েছেন ১৫ হাজার ৪০৭ জন। বাংলাদেশের সহিংসতার খবর
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও ছাপা হয়েছে। সহিংস ঘটনাবলিতে যুক্তরাষ্ট্র যেমনি
উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, তেমনি বহুল আলোচিত লন্ডনের দি ইকোনমিস্ট সাপ্তাহিকেও
মন্তব্য করা হয়েছে 'খাদের কিনারে দাঁড়িয়ে আছে দেশটি'। এ উদ্বেগ আর
অনাকাঙ্ক্ষিত মন্তব্য যে এই প্রথম এলো, তা নয়। আমরা এ ধরনের মন্তব্য শুনতে
শুনতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। এরই মধ্যে ৭ ফেব্রুয়ারি টিভির সংবাদে দেখলাম সংসদে
বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম রওশন এরশাদ সরাসরিই বিদেশি কূটনৈতিক মিশনের
প্রতিনিধিদের বলছেন, 'আপনারা আমাদের সাহায্য করুন'। সরাসরি তিনি এভাবেই
কথাটি বলেছেন। সংসদে যিনি তথাকথিত বিরোধী দলের নেতা তিনি কি এভাবে কথা বলতে
পারেন? আমার সীমিত জ্ঞানে এ বিষয়টি মাথায় আসে না। এর আগে অধ্যাপক
এমাজউদ্দীন আহমদ সরাসরি জাতিসংঘের মহাসচিবকে একটি চিঠি দিয়েছেন বাংলাদেশের
ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করার জন্য। আমি জানি না তার মতো একজন বিজ্ঞ ও
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের একজন শিক্ষক হিসেবে তিনি কী করে এ ধরনের একটি চিঠি লিখতে
পারেন। এর প্রতিক্রিয়ায় কি না জানি না, এমাজউদ্দীন সাহেবের বাসভবন লক্ষ্য
করে গুলি করা হয়েছে। এর ব্যাখ্যা আমরা কিভাবে দেব? যারা এ কাজটি করেছেন
তারা কি কোনো মেসেজ দিতে চেয়েছেন? তারা কি বলতে চেয়েছেন সরকারের সমালোচনা
সহ্য করা হবে না? নাকি এমাজউদ্দীন সাহেবের ব্যক্তিগত কিছু 'শত্রু' আছেন,
যারা এ কাজটি করেছেন। কোনটা 'সত্য' বলে ধরে নেব, আমরা তা জানি না। একজন
বুদ্ধিজীবী ও প্রবীণ ব্যক্তির ওপর এ ধরনের হামলা অনাকাঙ্ক্ষিত। যারাই আজ
টকশোতে কিংবা আলেচানা অনুষ্ঠানে সরকারকে গঠনমূলক উপদেশ দেন তারা সবাই এ
ঘটনায় সতর্ক হবেন। তবে পুলিশ বলছে তারা গুলিবর্ষণের কোনো আলামত পায়নি। তবে
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের কর্তাব্যক্তিরা যে ভাষায় কথা
বলেন তাও কাম্য নয়। আজ হরতাল, অবরোধের নামে যা হচ্ছে তা তো গণতন্ত্রের
চর্চার সঙ্গে মেলে না। চোরাগোপ্তা আক্রমণকে যেভাবে চিহ্নিত করা যাক না কেন,
এটা গণতন্ত্রের সঙ্গে বেমানান। ডিএমসির বার্ন ইউনিটের যে ছবি ও সংবাদ
প্রতিদিন পত্রপত্রিকায় ছাপা হচ্ছে তা হৃদয়বিদারক। ঝলসে গেছে মুখ, ছোট্ট
বাচ্চা চিনতে পারছে না বাবাকে। ফ্যালফ্যাল করে 'অচেনা' এক বাবার দিকে
তাকিয়ে আছে। ছোট্ট মনে তার হাজারো প্রশ্ন_ এমন কেন বাবা? এর জবাব কে দেবে?
মার কোলে এই ছোট্ট সোনামণির ছবিও পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। কিন্তু ওই পর্যন্তই।
আমি জানি না যারা বোমা মেরে মানুষ পুড়িয়েছে তাদের কজনকে গ্রেপ্তার করা
হয়েছে? কিন্তু সংবাদপত্রে ছাপা হয়েছে একটি সংবাদ_ ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে
অগি্নবোমা ছুড়ে, বাসে অগি্নসংযোগের ঘটনায় বেগম জিয়াকে 'হুকুমের আসামি' করে
দুটি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। আর ডিএমপির কমিশনার আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন
প্রমাণসাপেক্ষে খালেদা জিয়াকেও গ্রেপ্তার করা হবে। অর্থাৎ খালেদা জিয়াও
গ্রেপ্তার হতে পারেন যদি 'প্রমাণ' পাওয়া যায়। বেগম জিয়া অবরোধ, হরতালের ডাক
দিয়েছেন। নিজে সংবাদ সম্মেলন করে এ কথা জানিয়েছেন। তার ওই বক্তব্য
পত্রপত্রিকায় ছাপাও হয়েছে। কিন্তু যাত্রাবাড়ীতে বাসে তিনি কি বোমা হামলার
নির্দেশ দিয়েছিলেন? কী জানি হয়তো পুলিশি তদন্তে তা বেরিয়েও আসতে পারে।
যাত্রাবাড়ীতে বাসে বোমা হামলা হয়েছিল ২৩ জানুয়ারি আর মামলা হলো ২৪ তারিখ।
ওই হামলায় ৩১ জন দগ্ধ হয়েছিলেন। এটা একটা বড় ধরনের অপরাধ। এর শাস্তি হওয়া
উচিত। এটা যেমন সত্য, তেমনি এও সত্য, বিএনপির সঙ্গে কোনো সমঝোতায় না গেলে এ
সঙ্কট থেকে বের হয়ে আসা যাবে না। কিন্তু বেগম জিয়াকে হুকুমের আসামি করায়
(কুমিল্লায় তার বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা হয়েছে), এ সমঝোতার ক্ষেত্রে কিছুটা
হলেও জটিলতা সৃষ্টি হলো বৈকি।
বেগম জিয়া এখন পুত্রহারা। ছোট ছেলে কোকোকে হারানোর ব্যথা কাটিয়ে উঠতে সময়
লাগবে। কিন্তু অবরোধ-হরতাল আর সন্ত্রাসী কর্মকা- যদি চলতে থাকে তা তো
দেশটির জন্য কোনো মঙ্গল ডেকে আনবে না। ক্ষতির পরিমাণ একেকজন একেকভাবে
দিচ্ছেন। পোশাকশিল্পে অর্ডার কমেছে। প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না
এ বছর। এখন সমঝোতা যদি না হয় তাহলে কোনো দায়বদ্ধতা সৃষ্টি হবে না। আর
দায়বদ্ধতা সৃষ্টি না হলে বাড়বে দুর্নীতি। বাড়বে অসহিষ্ণুতা। এ অসহিষ্ণুতা
দেশ ও জাতির কোনো মঙ্গল ডেকে আনতে পারবে না। বর্তমান যে সঙ্কট, সেই সঙ্কট
রাজনীতিবিদদেরই কাটিয়ে উঠতে হবে। কোনো 'তৃতীয় শক্তি' এর সমাধান করতে পারবে
না। যারা বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের দিকে হাত বাড়ান তারাও ভুল করছেন। এটা
সমাধানের পথ নয়।
বাংলাদেশের রাজনীতি একটি অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। অবরোধ আর হরতালের
মধ্য দিয়ে প্রতিদিন আমরা পার করছি। আর প্রতিদিনই অগি্নবোমা আক্রমণের শিকার
হচ্ছে সাধারণ মানুষ। বার্ন ইউনিটগুলোয় অগি্নদগ্ধ মানুষের করুণ কাহিনী
প্রতিদিনই ছাপা হচ্ছে সংবাদপত্রে। ছোট্ট শিশুরা অগি্নদগ্ধ বাবাকে চিনতে
পারছে না। প্রশ্ন রাখছে_ সে তো কোনো অন্যায় করেনি। তাহলে তাকে মানুষ পোড়ালো
কেন? এ প্রশ্নের জবাব কারো কাছে নেই। সাধারণ মানুষ জানেও না এ পরিস্থিতির
অবসান হবে কিভাবে? বা কখন আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে দেশ? এমনিতেই
অবরোধের মধ্যে ঢাকার বাইরে থেকে রাজধানীতে খুব বেশি যানবাহন না এলেও খোদ
রাজধানীতে কিছুটা স্বাভাবিকতা ফিরে এসেছে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয়
অনিয়মিতভাবে ক্লাস হচ্ছে। ভয়ের মধ্যেও মানুষ তার নিত্যদিনের কাজ করে
নিচ্ছে। কিন্তু তাদের মধ্যে আছে অসন্তোষ আর রাজনীতিবিদদের প্রতি একধরনের
বিদ্বেষ।
এ পরিস্থিতিতেও দোষারোপের রাজনীতি আমরা লক্ষ্য করছি। সরকার দায়ী করছে
বিএনপিকে। সন্ত্রাসী কর্মকা-ের জন্য বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরকে অভিযুক্ত
করছে। অন্যদিকে বিএনপির অভিযোগ বর্তমান পরিস্থিতির জন্য সরকারই দায়ী। তাদের
দাবি, ৫ জানুয়ারি (২০১৪) নির্বাচন না হলে এ পরিস্থিতির জন্ম হতো না।
পরস্পর দোষারোপের মধ্য দিয়ে এক অসহিষ্ণু রাজনীতির জন্ম হয়েছে এ দেশে। এ বড়
দল দুটোর বাইরে শীর্ষস্থানীয় রাজনীতিবিদদের কেউই কোনো সমাধান বের করতে
পারছেন না। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সরকারের 'বিশেষ দূত' এইচএম এরশাদ
পাঁচ ঘণ্টা অনশন পর্যন্ত করেছেন ৩০ জানুয়ারি। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীও
অবস্থান ধর্মঘট করেছেন। কিন্তু পরিস্থিতির আদৌ কোনো পরিবর্তন হয়নি। এরই
মধ্যে বেগম জিয়ার পুত্র আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যু, প্রধানমন্ত্রীর বেগম
জিয়ার গুলশান অফিসে যাওয়া এবং গেট বন্ধ থাকায় সমবেদনা না জানিয়ে ফেরত আসা_
সব মিলিয়ে একটা সংলাপের এবং পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস ও আস্থার সম্ভাবনা
সৃষ্টি করলেও এ ক্ষেত্রেও 'বরফ' গলেনি। কেন বেগম জিয়ার অফিস খোলা হলো না, এ
নিয়েও কম বিতর্ক হয়নি। তবে কোকোর জানাজায় লাখ লাখ মানুষের উপস্থিতি
সরকারের নীতিনির্ধারকরা কিভাবে নিয়েছেন আমি জানি না। তবে এটা একটা মেসেজ
পেঁৗছে দিয়েছে। কোকো রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হয়েও রাজনীতি করেননি। জিয়া
পরিবারের প্রতি মানুষ যে সহানুভূতিশীল এটাই প্রমাণিত হলো। সরকারের
নীতিনির্ধারকরা এটা থেকে একটা সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। তবে আমি সরকার ও
আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনীকে ধন্যবাদ জানাই একটা কারণে_ আর তা হচ্ছে
তারা নির্বিঘ্নে এই জানাজা সম্পন্ন করতে দিয়েছেন। কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা
ঘটেনি। এর পরও সরকারের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে দু-এক জন ব্যক্তি 'মৃত
ব্যক্তি' সম্পর্কে এমন মন্তব্য করেছেন, যা অনাকাঙ্ক্ষিত। এ ধরনের মন্তব্য
তার নিজের অবস্থানকে জনমানসে শক্তিশালী করে না।
একটা প্রশ্ন এখন বিভিন্ন মহলে আলোচিত হচ্ছে_ আর তা হলো, সঙ্কট থেকে
উত্তরণের পথ কী? এটা সত্য সরকার সাংবিধানিকভাবে ক্ষমতায় আছে। সংবিধান
অনুযায়ীই একটা নির্বাচন হয়েছে গেল বছরের ৫ জানুয়ারি। ওই নির্বাচনে সব দল
অংশ না নিলেও নির্বাচন ছিল সাংবিধানিকভাবে বৈধ। কিন্তু এ নির্বাচন
গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করতে পারেনি। কেননা গণতন্ত্রে
'কনফিডেন্স বিল্ডিং মেজারস'-এর যে কথা বলা হয় তা রক্ষিত হয়নি। আবার বিশ্বাস
ও আস্থা স্থাপিত হয়নি। বিএনপিসহ আরো কয়েকটি দল নির্বাচনে অংশ নেয়নি। তখন
অবশ্য বলা হয়েছিল ৫ জানুয়ারির নির্বাচন 'নিয়ম রক্ষার নির্বাচন'। আমরা সেটাই
ধরে নিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম সরকার এক বছরের মধ্যে আরেকটি নির্বাচনের কথা
বলবে। কিন্তু সরকারের নীতিনির্ধারকরা প্রায় সবাই বলছেন পরবর্তী নির্বাচন
হবে ২০১৯ সালে। সংবিধান আমাদের এ কথাটাই বলে_ পাঁচ বছর পরপর নির্বাচন। এটাই
গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি। কিন্তু যে প্রক্রিয়ায় ৫ জানুয়ারির নির্বাচন সম্পন্ন
হয়েছিল তা স্বাভাবিক ছিল না। অস্বাভাবিক একটি পরিস্থিতিতে ১৫৪ জন সংসদ
সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। বাকি আসনগুলোয় যে
নির্বাচন হয়েছে, সেখানে ভোটারদের উপস্থিতির হার ছিল কম। তার পরও নির্বাচন
হয়েছে। ১৯৯৬ সালেও তেমন একটি নির্বাচন (ষষ্ঠ সংসদ) আমরা দেখেছিলাম। কিন্তু
ওই সংসদ টিকে ছিল মাত্র ১৩ দিন। ওই নির্বাচনের সঙ্গে ৫ জানুয়ারির
নির্বাচনকে আমি তুলনা করতে চাই না। দুটো নির্বাচনের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। তবে
গণতন্ত্রে 'সব দলের অংশগ্রহণে' যে নির্বাচনের কথা বলা হয়, ষষ্ঠ সংসদ
নির্বাচনে তা ছিল না এবং দশম সংসদ নির্বাচনেও (২০১৪) সব দলের অংশগ্রহণ
নিশ্চিত হয়নি। ফলে এক জায়গায় মিলটা আছেই। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপট একটি
ভিন্ন সংস্কৃতির জন্ম দিয়েছে। বোমাবাজি আর অগি্নবামা এখন রাজনীতিকে
'নিয়ন্ত্রণ' করছে। অদৃশ্য বোমাবাজরা আমাদের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিকে ধ্বংস
করে দিচ্ছে। যেখানে সংসদ দেশের জনগণের ভাগ্য নির্ধারণ করবে, আইন প্রণয়ন
করবে, জাতিকে নেতৃত্ব দেবে, সেখানে অদৃশ্য বোমাবাজরা রাজপথে থেকে রাজনীতিকে
কলুষিত করছে। বোমাবাজদের শিকারে পরিণত হয়েছে শিশুরা পর্যন্ত।
এ পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন
সংলাপের কথা। বলেছেন রাষ্ট্রপতির সংলাপের দায়িত্ব নেয়ার কথা। কিন্তু
সংবিধানে তো এর কোনো সুযোগ নেই। সংলাপ হলেই 'সব সমস্যার সমাধান' হয়ে যাবে
তা মনে করারও কোনো কারণ নেই। দুই দলের মধ্যে মানসিকতায় যদি পরিবর্তন না আসে
তাহলে সংলাপ করেও কোনো লাভ হবে না
বাংলাদেশের চলমান রাজনীতিতে এটাই বড় সমস্যা। যদি মনমানসিকতায় পরিবর্তন না
আসে, যদি বিশ্বাস ও আস্থা রাখা না যায় তাহলে বর্তমান পরিস্থিতি থেকে বের
হয়ে আসা কষ্টকর। তাই বড় দল দুটোকেই উদ্যোগ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারের
দায়িত্বটা অনেক বেশি।
Daily JAI JAI DIN
10.02.15
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
0 comments:
Post a Comment