চলমান রাজনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণের কোনো একটি পথ বের করা জরুরি এবং
সংবিধান সমুন্নত রেখেই তা সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন জাহাঙ্গীরনগর
বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর
রেহমান। তিনি বলেছেন, বর্তমানে যে অবস্থা চলছে তাতে সংবিধান সমুন্নত রেখেও
একটি সমাধান করা যায়। এ কৌশলই চূড়ান্ত আমরা এখনো বলছি না। তবে সরকার বা
রাজনৈতিক দলগুলো মনে করলে সে পথেও এগোতে পারে।
শনিবার রাতে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল দেশ টিভির সমসাময়িক বিষয় নিয়ে
পর্যালোচনাভিত্তিক টক শো 'আরএফএল কিং চেয়ার সোজা কথা' অনুষ্ঠানে আলোচনা
করতে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন। ড. রেহমান আরো বলেন, অনেকে বলছেন
সাংবিধানিকভাবে বিএনপি এখন সংসদে নেই, সরকার চাইলেও বিএনপির সঙ্গে আলোচনা
করতে পারবে না। তাহলে বিএনপির সঙ্গে কিভাবে আলোচনা করা যাবে? একটি সমাধান
হতে পারে। তা হচ্ছে, বিএনপিকে সংসদে নেওয়ার জন্য সরকার বা বিরোধী দলের সংসদ
সদস্যদের কাছ থেকে পাঁচ বা ছয়জনকে পদত্যাগ করিয়ে সেখানে উপনির্বাচনে
বিএনপির মনোনীতদের জিতিয়ে এনে তারপর তাঁদের সঙ্গে নিয়ে সংসদে আলাপ-আলোচনা
করা।
সাংবাদিক সুকান্ত দত্ত অলকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো আলোচনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে সঞ্চালক জানতে চান, আন্দোলনের নামে একটি রাজনৈতিক দল
টানা অবরোধ ডেকে দেশে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করেছে। সরকারও সেটিকে
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি হিসেবে নিয়ে সমাধানের চেষ্টা করছে। আসলে কিভাবে এ
সমস্যার সমাধান করা যায়
জবাবে সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, আগে তো সহিংসতা বন্ধ করতে হবে, তারপর
আলাপ-আলোচনা বা সরকার বা রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্যোগের বিষয় আসে। বিএনপিকেও
রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে ভাবতে হবে। তারা বছরের পর বছর তো এভাবে কর্মসূচি
চালিয়ে যেতে পারবে না। কারণ সাধারণ মানুষেরও ধৈর্যের একটি সীমা আছে। তবে
তারেক শামসুর রেহমান যেটা বললেন, সেটা সরকার ভেবে দেখতে পারে। আমি জানি না
সরকার এ বিষয়টি আদৌ মেনে নেবে কি না। আর সরকারের কাছেই বা কে এমন প্রস্তাব
নিয়ে যাবে?
এ পর্যায়ে টেলিফোনে অংশ নিয়ে একজন দর্শক বলেন, বয়স বেশি হলে স্মৃতি,
কর্মক্ষমতা সবই হ্রাস পায়। তাই রাজনৈতিক সমাধান না হলে তাঁদের দুজনকেই
বাইরে রাখতে হবে। কারণ তাঁরা যেহেতু নিজেদের 'ইগো'র বাইরে যেতে চাইছেন না।
তাই জনগণ এখন নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
জবাবে সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, আপনি তো 'মাইনাস টু' ফর্মুলায় চলে গেলেন।
এটা আগের তত্ত্বাবধায়ক সরকারও চেষ্টা করেছিল। সেটি হালে পানি পায়নি। দেশের
মানুষ সে উদ্যোগের বিরুদ্ধে নেমেছিল। আসলে এভাবে সমাধান হবে না। কারণ
বাংলাদেশে দুই নেত্রীরই সমর্থক রয়েছে। আর এটিও ঠিক, বর্তমান রাজনৈতিক
অস্থিরতার কারণে রাজনীতিবিদদের প্রতি মানুষ কিছুটা বিরক্ত।
এ পর্যায়ে ড. তারেক শামসুর রেহমান বলেন, শুধু বিএনপির পাঁচ বা ছয়জনকে
সংসদে নিয়ে আসা হবে তা নয়, সংকট সমাধানে বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও জাতীয়
পার্টিকে নিয়ে একটি ত্রিপক্ষীয় সরকার গঠনও করা যেতে পারে। এ সরকার দেশে
আগামী নির্বাচন সঠিক ও সুষ্ঠুভাবে করে দেবে। এ নির্বাচনে যেই পরাজিত হবে
সে-ই দেশের মানুষের স্বার্থে তার পরাজয় মেনে নিয়ে সরকার পরিচালনায় সহায়তা
করবে।
আলোচনার এ পর্যায়ে সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, এটা আমাদের দেশের সংস্কৃতি হয়ে
গেছে যে এক দল ক্ষমতায় গেলে অন্য দল তাদের ক্ষমতা থেকে নামাতে উঠেপড়ে লেগে
যায়। রাজনীতিবিদদেরই রাজনৈতিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে,
অন্যদের নয়। একদল আনলিমিটেড কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। কখন যে এ আন্দোলন শেষ
হবে, তা বলা মুশকিল।
সৈয়দ আনোয়ার হোসেন আরো বলেন, গত বছরের ৫ জানুয়ারি ছিল একটি টার্নিং
পয়েন্ট। যদি সেই সময় কোনো পক্ষ কিছু করতে পারত, তাহলে তার রেজাল্ট ছিল অন্য
রকম। এখন একটি সরকার ক্ষমতায় এক বছর অতিবাহিতও করে ফেলেছে। এ অবস্থায়
আন্দোলন করে কতটা সফল হওয়া যাবে, এটা তারাই ভালো বলতে পারবে। তবে সাধারণ
মানুষ এ থেকে মুক্তি চায়।
DESH TV Talk Show
09.02.15
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
0 comments:
Post a Comment