রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

জরুরী অবস্থা জারির মতো পরিস্থিতি হয়নি’

ফারিহা হোসেন : বাংলাদেশের সংসদে চলমান সহিংসতা বন্ধে ‘সেনাবাহিনী-বিহীন জরুরী অবস্থা’ জারির দাবি ওঠার একদিন পর আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তা নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, দেশে জরুরী অবস্থা জারির মতো কোন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি। সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে সংসদ সদস্য নজিবুল বাশার মাইজভা-ারী এক-দেড় মাসের জন্য সেনাবাহিনী-বিহীন জরুরী অবস্থা জারীর প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তার উত্তরে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জরুরি অবস্থা জারি করা লাগবে কেন, প্রচলিত আইনেই নাশকতা দমন সম্ভব। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা আছে। কিভাবে সন্ত্রাস দমাতে হয় তার যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া আছে। জনগণ যতক্ষণ আমাদের সাথে আছে আমরা দেশের এ অবস্থা মোকাবেলা করতে পারব।
তিনি বলেন, এখানে জরুরী অবস্থা জারি করার পরিস্থিতি এখনো কেউ সৃষ্টি করতে পারে নাই। এখন যখন জনগণের সমর্থন নাই সেখানে এরা এখন সন্ত্রাসী। এ স্বপ্ন দেখে কোনো লাভ হবে না। দেশকে আবার অসাংবিধানিক পন্থায় আমরা কখনো ছেড়ে দেব না। জনগণ তা চায় না। আলৌকিক স্বপ্ন দেখে এ দেশকে এখন একটা ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া আমাদের রক্ত থাকতে হতে দেব না।
বাংলাদেশে বিএনপি জোটের অবরোধ কর্মসূচির মধ্যে গত প্রায় এক মাস জুড়ে নানা ধরনের সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। স্থানীয় গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী গত ৪ঠা জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ৫৮ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে অধিকাংশই যানবাহনে পেট্রোল বোমা হামলায় নিহত হয়েছেন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এসব ঘটনার জন্য বিএনপি-জামায়াতকে দায়ী করলেও তারা পাল্টা এসবের জন্য সরকারকেই দায়ী করছে। এছাড়া আইন শৃক্সখলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে কিংবা তাদের সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধেও নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তবে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন সন্ত্রাস মোকাবেলার জন্য আইন শৃক্সখলা বাহিনী রয়েছে এবং সহিংসতা দমনে নতুন কোন আইনেরও প্রয়োজন নেই।
বাংলাদেশে কি জরুরি অবস্থা জারির মতো পরিস্থিতি হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক অধ্যাপক তারেক সামসুর রহমান বিবিসিকে বলেন, এখানে দুটো বিষয় আছে। একটি হচ্ছে সংবিধান আমাদের কি বলছে, আর দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে বাস্তবতা। আমরা যদি সংবিধানের ১৪১ (ক) ধারা অনুসরন করি তাহলে এখানে স্পষ্ট বলা আছে, আমাদের মাননীয় রাষ্ট্রপতি ইচ্ছা করলে জরুরী অবস্থা জারি করতে পারেন। যদি তার কাছে মনে হয় দেশের অভ্যন্তরীন অবস্থা দূর্যোগের মধ্যে পড়েছে তাহলে তিনি করতে পারেন। তবে তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুমোদন সাপেক্ষে।
আরা দ্বিতীয় হলো দেশের বাস্তবতা এখন কি বলে? আমার কাছে মনে হয় এ সময় ঠিক সে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি যে বাংলাদেশে এখনই জরুরি অবস্থা জারি করতে হবে। এখন দেশের অবস্থা অনেকটাই স্বাভাবিক আছে। দেশে চোরাগুপ্তা হামলা হচ্ছে এ নিয়ে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক আছে । এ বিষয়টা যদি সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে তাহলে আমার মনে হয় এ জরুরী অবস্থা জারির কোনো প্রয়োজন নেই।
বর্তমানে দুই পক্ষ এখন মুখোমুখি অবস্থ্ানে দাঁড়িয়েছে। শেখ হাসিনা বলছেন জরুরী অবস্থা জারির মতো এখনো সে রকম পরিস্থিতি হয়নি। তার এ বক্তব্য থেকে আপনার কি মনে হয়? আপনার কি মনে হয় প্রধানমন্ত্রী কিভাবে দেখছেন বিষয়টা?
এমন পরিস্থিতির ব্যাখ্যা করে তারেক সামসুর রহমান বলেন, আমার কাছে যেটা মনে হয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আমাদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পুরো সমর্থন আছে। বিশেষ করে পুলিশ, র‌্যাব এবং সেনাবাহিনীতে তার সমর্থন আছে। সেনাবাহিনী, পুলিশ এবং র‌্যাবের বক্তব্য থেকে আমার কাছে যেটা মনে হয় যে চোরাগুপ্তা হামলা এসবকে তারা নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায়। এসবের সাথে যারা জড়িত তাদেরকে তারা আইনের আওতায় আনতে তারা দ্বিধা করবে না। এমনকি প্রধানমন্ত্রীা একটি বক্তব্যে তিনি বলেছেন, যারা সহিংস ঘটনার সাথে জড়িত এবং তাদের হুকুমদাতা, প্রয়োজন হলে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসবেন। বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে দুটো মামলাও হয়েছে। সুতরাং আমার কাছে যেটা মনে হয় প্রধানমন্ত্রী বুঝাতে চাচ্ছেন তিনি এসব আর সহ্য করবেন না।
একটা বিষয় গণতন্ত্র নিয়ন্ত্রণের জন্য অনেকেই বলছেন দু’পক্ষ আলোচনায় বসা জরুরী। কিন্তু দু’পক্ষের যে মুখোমুখি অবস্থান পরিস্থিতি যে রকম তাতে দূরত্ব কমানোর জন্য মধ্যস্থতাকারী প্রয়োজন আপনি দেখছেন?
এবিষয়টা অনেকবার আলোচনা হয়েছে আমরা দেখেছি জাতিসংঘ মহাসচিবের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি পাঠানো হয়েছিল কিন্তু তাতে কোনো ফল হয়নি। আসলে আমাদের সমস্যা আমাদেরকে সমাধান করতে হবে। সেক্ষেত্রে আমি মনে করি উভয়পক্ষকে একটু ছাড় দিতে হবে। সরকারের ছাড় দেওয়ার পরিমানটা বেশী হলে ভালো হয়। সরকার যদি আর একটু উদ্যোগী হয়ে বিএনপির সাথে কথা বলতে চান তাহলেই বরফ গলতে শুরু করবে। তবে বিএনপি কিন্তু একটি সংলাপ চাচ্ছে। সংলাপটা হলে কিন্তু অনেক জটিলতা কমে যাবে। মানুষের মধ্যে ভয় ও ভীতি অনেক কমে যাবে। তাতে আমাদের জন্য মঙ্গল। এতে বাইরের কোনো শক্তির প্রয়োজন নেই। যদি দুটো বড় দল নিজেরাই উদ্যোগ নিয়ে যদি কাজটা করতে পারে তবে সরকার ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে নিজেকে এগিয়ে আসতে হবে। বিবিসি
BBC Interview
04.02.15
০৪.০২.১৫

0 comments:

Post a Comment