রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

মোদি-মমতা বৈঠকে বাংলাদেশের জন্য কোনো মেসেজ আছে কি

বহুল প্রত্যাশিত মোদি-মমতা বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৯ মার্চ নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই বৈঠকের যথেষ্ট তাৎপর্য ছিল। কেননা এই বৈঠবের সঙ্গে তিস্তার পানি বণ্টনচুক্তি ও স্থলসীমান্ত চিহ্নিতকরণের প্রশ্নটি সরাসরিভাবে জড়িত। মমতা ব্যানার্জির ঢাকা সফরের সময় তিনি বলে গিয়েছিলেন তিস্তাচুক্তির ব্যাপারে তার ওপর আস্তা রাখতে। বাংলাদেশ ওই আস্থাটা রেখেছিল। এ জন্যই একটা প্রত্যাশা ছিল, মমতা ব্যানার্জি যখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেনÑ তখন হয়তো তিস্তাচুক্তির জট খুলবে। শেষ পর্যন্ত নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে মমতার সাক্ষাৎ হলো। কিন্তু এতে তিস্তাচুক্তির জট খুলল কি? ১০ মার্চ ঢাকার পত্রপত্রিকায় মোদি-মমতার সাক্ষাৎকারের বিষয়টি গুরুত্বসহকারে ছাপা হয়েছে। ভারতীয় পত্রপত্রিকায়. বিশেষ করে কলকাতার পত্রিকাগুলো ঘেঁটে দেখছি। সেখানে সাক্ষাৎকারের বিষয়টি আছে। কিন্তু তিস্তা নিয়ে জট খুলছে কি না, এ ব্যাপারে কোনো তথ্য নেই। মোদি নিজে অথবা মমতা ব্যানার্জি নিজেও কোনো কথা বলেননি। ফলে তিস্তাচুক্তির ভবিষ্যৎ একটি প্রশ্নের মুখে থাকল। মোদি তিস্তাচুক্তির ব্যাপারে এবং চুক্তি করতে মমতার পূর্ণ সমর্থন পেয়েছেনÑ এটা বলা যাবে না। বাংলাদেশের ব্যাপারে মোদি সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি কী? এর কিছুটা আভাস আমরা পেয়েছিলাম পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের ঢাকা সফরের সময়। তাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রালয়ে লাল গালিচা সংবর্ধনা দিয়ে তার সফরের গুরুত্ব আমরা বাড়িয়ে দিয়েছিলাম। জাপান সবচেয়ে বড় ঋণদাতা দেশ হলেও জাপানি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফরের সময় তাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়নি। পাকিস্তানি সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রীও এই সংবর্ধনা পাননি। এরপরও সুষমা স্বরাজের ঢাকা সফরের সময় দু’দেশের মাঝে বিরাজমান সমস্যাগুলোর ব্যাপারে কোনো ইতিবাচক মনোভাব আমরা দেখিনি। তিস্তার পানি বণ্টনের ব্যাপারে যে সমস্যা ছিল, তা মমতার ব্যানার্জি ঢাকা সফরের পরও রয়ে গেছে। কৌশলী মমতা আস্থা রাখার কথা বলে গেলেও এটা বলতে ভোলেননি, দু’দেশের স্বার্থ বিবেচনা করে পানি বণ্টন সমস্যার সমাধান হবে। এক্ষেত্রে মেসেজটা স্পষ্টÑ পশ্চিম বাংলার স্বার্থ উপেক্ষা করে কেন্দ্র এককভাবে বাংলাদেশের সঙ্গে কোনো চুক্তি করতে পারবে না। ২০১৬ সালে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভার নির্বাচন। সুতরাং কৌশলী মমতা ‘তিস্তা কার্ড’টি কখনোই বিজেপির হাতে তুলে দেবেন না। তবে স্থলসীমানা চুক্তিটি ভারতীয় লোকসভায় চলতি বাজেট অধিবেসনই পাস হবে। কেননা মমতা ব্যানার্জি তার আপত্তি তুলে নিয়েছেন। আসাম বিজেপির আপত্তিও নেই। ফলে এই একটি ক্ষেত্রে আমরা সমাধানটা পেতে যাচ্ছি। নরেন্দ্র মোদি আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়ন করার কথা বলেছেন। বাংলাদেশের জন্য এটা নিঃসন্দেহে একটা চিন্তার কারণ। তিস্তায় যেমন পানি নেই, তেমন চুক্তি করার পরও পদ্মায় পানি হ্রাস পেয়েছে। এখন ভারত যদি শেষ পর্যন্ত ভারতীয় পরিবেশবাদীদের বিরোধিতা করে আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প নিয়ে এগিয়ে যায়, তাহলে বাংলাদেশের নদীগুলো পানিশূন্য হয়ে যাবে। ভারত গত ছয় বছর বাংলাদেশের কাছ থেকে বেশকিছু সুবিধা নিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ওই অর্থে তেমন সুবিধা পায়নি। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে বিদ্যুৎ সঞ্চালন করিডর পেতে যাচ্ছে ভারত। অরুণাচল থেকে বাংলাদেশের দিনাজপুরের ভেতর দিয়ে বিদ্যুৎ যাবে বিহারে। চলতি বছরই বহুল বিতর্কিত রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করবে ভারত। প্রতিটি ক্ষেত্রে ভারতের স্বার্থ রয়েছে। এক্ষেত্রে আঞ্চলিক সহযোগিতার ভিত্তিতে বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধানের যে আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছিলেন, তা থেকে যাচ্ছে উপেক্ষিত। ১০০ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছিল ভারত। ভারতীয় রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি ঢাকায় এসে ২০ কোটি ডলারের অনুদান দিয়েছিলেন। প্রায় ১৪টি প্রকল্পে এই অর্থ ব্যয় করার কথা। কিন্তু প্রকল্পের অগ্রগতি আশাব্যঞ্জক নয়। ভারতের সঙ্গে আমাদের রয়েছে বিশাল এক বাণিজ্য ঘাটতি। ২০০৯-১০ সালে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ২ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলার। আর ২০১০-১১ সালে তা এসে দাঁড়ায় ৩ দশমিক ৫০ মিলিয়ন ডলারে। সর্বোচ্চ তথ্য নিলে দেখা যাবে, ঘাটতির পরিমাণ ৪ বিলিয়ন ডলারও (অর্থাৎ ৪ হাজার মিলিয়ন) ছাড়িয়ে গেছে। এই বাণিজ্য ঘাটতি এখন ভারত ব্যবহার করছে তার স্বার্থে। অথচ ভারতে বাংলাদেশি পণ্যের বিশাল চাহিদা রয়েছে। কিন্তু শুল্ক ও অশুল্ক বাধার কারণে বাংলাদেশি পণ্য ভারতে বাজার পাচ্ছে না। মাঝে মধ্যে ভারতের পক্ষ থেকে কিছু পণ্যের শুল্ক ছাড়ের কথা বলা হয় বটে কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, বাংলাদেশ ওইসব পণ্য উৎপাদন করে না। ভারত আমাদের জমি ব্যবহার করছে তথাকথিত কানেকটিভির নামে। কিন্তু কোনো ফি প্রদান করছে না। উপরন্তু নেপাল ও ভুটান এ সুবিধা পাচ্ছে না। ভারত এখন পর্যন্ত এ দুটি দেশে ট্রানজিট সুবিধা দেয়নি। নরেন্দ্র মোদি তার পররাষ্ট্রনীতিতে দক্ষিণ এশিয়ার প্রতি বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। তবে দুটি দেশেÑ ভুটান ও শ্রীলংকায় ভারতের ভূমিকাটি প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। উভয় দেশই ভারতের ভূমিকা চিনের স্বার্থে আঘাত করেছে। শ্রীলংকায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সিরি সেনার বিজয়ের পেছনে ভারত একটি বড় ভূমিকা পালন করেছিল বলে সংবাদপত্রে খবর এসেছে। সিরি সেনা চিনের প্রভাব থেকে শ্রীলংকাকে বের করে আনার উদ্যোগ নিয়েছেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট রাজপক্ষে ছিলেন অতিমাত্রায় চিননির্ভর। প্রথম বিদেশ সফর হিসেবে সিরি সেনার নয়াদিল্লি সফর দু’দেশের সম্পর্ককে আরও ঘনিষ্ঠ করেছে। নরেন্দ্র মোদি তার প্রথম বিদেশ সফর হিসেবে ভুটানে গিয়েছিলেন। অতীতে ভারতের কোনো সরকারপ্রধানই ভুটানকে তেমন একটা গুরুত্ব দেননি। ভুটান-ভারত বাণিজ্যিক সম্পর্কও তেমন আশাব্যঞ্জক নয়। তবে ভুটানের একটা স্ট্র্যাটেজিক গুরুত্ব রয়েছে। আর এটি বিবেচনায় নিয়েই মোদি ভুটানে গিয়েছিলেন। শুধু তা-ই নয়, ভুটান সফরের পর যেসব সিদ্ধান্তের কথা জানা গিয়েছিল, এর যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। যেমনÑ ভুটানে মোদি সফরের পর পরই ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং টোগবে এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, ভুটান দূতাবাস খুলতে চিনকে অনুমতি দেওয়া হবে না। ভুটানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য সম্প্রতি খুব তোড়জোড় শুরু করেছে চিন। চিনের ওই উদ্যোগে স্বাভাবিকভাবেই উদ্বিগ্ন ভারত। শুধু তা-ই নয়, সফর শেষে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, জাতীয় স্বার্থে দু’দেশÑ ভারত ও ভুটান একে অপরকে সাহায্য করবে। মোদির ভুটান সফর ও যৌথ বিবৃতি প্রকাশিত হওয়ার পর এটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল, ভুটান ও ভারতের নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ একই। ভারতের সীমান্তে চিনের ‘আগ্রাসন’ ও ভুটানের উত্তরেও চিনের আগ্রাসন একই রকমের উদ্যোগের কারণ। চিনের সম্ভাব্য আগ্রাসন রোধে ভারত ও ভুটান একে অপরকে সাহায্য করবে বলেও যৌথ বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, ভারতের জি নিউজ আমাদের জানাচ্ছে যে, চিন সীমান্তে দ্বিগুণ সেনা মোতায়েন করছে ভারত। এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, নিয়ন্ত্রণওরখা বরাবর চিন শক্তি বৃদ্ধি করছে এবং চিনা হামলা বাড়ছে। বলা ভালো, ভারত-চিন সীমান্তে ইন্দো-তিব্বত বর্ডারে পুলিশের ৪০টি ঘাঁটি রয়েছে। মোতায়েন রয়েছে ১৫ হাজার সেনা। এখন দ্বিগুণ সেনা মোতায়েনের বিষয়টি এবং ভুটানে চিনা দূতাবাস না খোলার সিদ্ধান্ত ভারত-চিন সম্পর্কে প্রভাব ফেলতে পারে। অথচ বলা হয়েছিল, মোদির জমানায় চিন-ভারত সম্পর্কে উন্নতি হবে। এমনকি মোদির শপথ নেওয়ার পর পরই চিনা পররাষ্ট্রুমন্ত্রীর নয়াদিল্লি সফর ওই আভাসই দিয়েছিল, এই দু’দেশের মাঝে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হবে। এখন মনে হচ্ছে, চিনের ব্যাপারেই মোদির মনোভাবে পরিবতর্তন এসেছে। চিনকে ভারত এখন এ অঞ্চলে তার অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মনে করছে। এ অঞ্চলের উন্নয়নে চিন নাক গলাক তা ভারত কোনোভাবেই চাইবে না। আমরা মোদির শাসনামলে ইন্ডিয়া ডকট্রিনের নতুন এক রূপ দেখতে পাব। মোদির ভুটান সফরের সময় চিন প্রসঙ্গ প্রকাশ্যে আলোচিত হলেও বাংলাদেশে সুষমা স্বরাজের সফরের সময় এ প্রসঙ্গটি প্রকাশ্যে আসেনি। তবে একটা খবর এসেছে, চিনা অর্থায়নে গোনাদিয়ায় যে গভীর সমুদ্রবন্দরটি নির্মাণ হওয়ার কথা ছিল, তা ভারত তার নিরাপত্তার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেছে। ভারত মনে করে, এটা নির্মিত হলে এ অঞ্চলে চিনের প্রভাব বাড়বে। একই সঙ্গে চিনা পণ্যে এ অঞ্চল সয়লাব হয়ে যাবে এবং প্রতিযোগিতায় ভারতীয় পণ্য মার খাবে। এখন গভীর সমুদ্রবন্দরটি নির্মিত হচ্ছে পায়রাবন্দে। ফলে আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা বিসিআইএমের (বাংলাদেশ, চিন, ভারত ও মিয়ানমার) ভবিষ্যৎ একটা প্রশ্নের মুখে থাকল। এখন প্রত্যাশিত নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফর সম্পর্কেও নানা প্রশ্নের জন্ম দিতে বাধ্য। কেননা বাংলাদেশে তার যে জনপ্রিয়তা, ওই জনপ্রিয়তা তিনি ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেবেন না। তিনি ভালো করেই জানেন তার ঢাকা সফরের সময় তাকে তিস্তাচুক্তির মুখোমুখি হতে হবে। তিনি একটি নিশ্চয়তা ছাড়া ঢাকা আসবেন না। উপরন্তু বাংলাদেশের কোনো কোনো রাজীতিবিদ তাকে এই মুহূর্তে ঢাকা সফরে না আসতে অনুরোধ করেছেন। সংবাদপত্রে প্রবন্ধ লিখে তাকে ঢাকা সফরে না আসতে বলা হয়েছে। ফলে নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরও একটি অনিশ্চিয়তার মধ্যে থাকল। অথচ আমাদের জন্য এ সফরটি ছিল অনেক গুরুত্বপূর্ণ। অনেক বিষয় রয়েছেÑ যা দু’দেশের স্বার্থেই সমাধান হওয়া বাঞ্ছনীয়। একদিকে আমাদের পানিসম্পদমন্ত্রীর উদ্ধৃতি উল্লেখ করে কোনো কোনো সংবাদপত্রে একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে যে, টিপাইমুখ ড্যামে কোনো যৌথ সমীক্ষা হচ্ছে না। গত মনমোহন সিং সরকারের সময় এটা বলা হয়েছিল, ভারত টিপাইমুখে এমন কিছু করবে নাÑ যাতে বাংলাদেশের ক্ষতি হয়। তখন দু’দেশ টিপাইমুখে একটি যৗথ সমীক্ষা চালাবেÑ এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। এখন যৌথ সমীক্ষা না হওয়ায় এটা ধরে নেওয়া যায়, মোদি সরকার টিপাইমুখে একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে সিরিয়াস। দু’দেশের মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে এটা নতুন করে এখন প্রশ্নের জন্ম দিল। প্রত্যাশিত মোদি-মমতা বৈঠকটি আমাদের জন্য কোনো সুসংবাদ বয়ে এনেছেÑ এটা বলা যাবে না। আমাদের প্রত্যাশা ছিল অনেক। কিন্তু নয়াদিল্লি থেকে আদৌ কোনো সুসংবাদ আমরা পেলাম না। এক্ষেত্রে আমাদের দাবি অব্যাহত রাখতে হবে। প্রতিটি দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় আমাদের ওই দাবিটি আরও স্পষ্ট করতে হবে। তিস্তায় পানিপ্রাপ্তির দাবিটি আমাদের ন্যায্য এবং আন্তর্জাতিক আইনে স্বীকৃত। মনে রাখতে হবে, তিস্তায় পানিপ্রাপ্তির বিষয়টি আমাদের জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এই বিষয়ে আমরা কোনো ছাড় দিতে পারি না। Daily AMADER SOMOY 16.03.15

0 comments:

Post a Comment