রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

বাংলাদেশে আইএস বিতর্ক

বাংলাদেশে ইসলামিক স্টেট বা আইএসের অস্তিত্ব নিয়ে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। আইএসের মুখপত্র ‘দাবিগ’-এর ১৪তম সংখ্যায় জনৈক শেখ আবু ইব্রাহিম আল হানিফের একটি সাক্ষাৎকারে বলা হয়েছে, আইএস বাংলাদেশে ঘাঁটি করতে চায়, যাতে করে এখান থেকে ভারত ও মিয়ানমারে আক্রমণ পরিচালনা করা সম্ভব হয়। এই ইব্রাহিমকে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়েছে আইএসের বাংলাদেশ প্রধান হিসেবে। বিবিসি বাংলা ১৩ এপ্রিল এ সংবাদটি পরিবেশন করে, যা কোনো কোনো অনলাইন সংবাদপত্রেও প্রকাশিত হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি আবারও বলেছেন, বাংলাদেশে আইএসের কোনো ঘাঁটি নেই। কিন্তু একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন আমাদের তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। তিনি ভারতীয় পত্রিকা দি হিন্দুকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘আফগানিস্তানে প্রায় ৮ হাজার বাংলাদেশীকে ওসামা বিন লাদেন প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। তারা দেশে ফিরে এসেছে এবং তখন থেকে জনমনে হুমকির অনুভূতি প্রবল’ (দি হিন্দু, ১৫.০৪.১৬)। যেখানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, স্থানীয় জঙ্গিদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠীর কোনো সম্পর্ক নেই; সেখানে তথ্যমন্ত্রী বলেছেন, দেশীয় সন্ত্রাসীদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কের যোগাযোগ রয়েছে! তবে ‘দাবিগে’ যার সাক্ষাৎকার প্রচারিত হয়েছে, তিনি কে বা তার পরিচিতি কী, এ ব্যাপারে বিস্তারিত কোনো তথ্য জানা না গেলেও এভাবে ‘দাবিগ’ যখন সরাসরি কোনো ব্যক্তিকে আইএসের প্রধান হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়, তখন বিষয়টিকে গুরুত্ব না দিয়ে পারা যায় না।

এটা সত্য, সাম্প্রতিক সময়ে আইএস তাদের কর্মকাণ্ড বিশ্বব্যাপী সম্প্রসারিত করেছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ইন্দোনেশিয়ায় যে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়, তাতে আইএস জড়িত বলে দাবি করেছে। আইএস তার ‘দূরবর্তী খেলাফত’ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এ সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছিল বলে তাদের মুখপত্র ‘দাবিগে’ উল্লেখ করা হয়েছিল। এজন্য সিরিয়া ও ইরাকে যেসব ইন্দোনেশীয় যুবক যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল, তাদের দিয়ে তারা ‘কাতিবা নুসানতারা’ নামে একটি ব্রিগেড গঠনও করেছিল। ওই ব্রিগেডই জাকার্তায় আত্মঘাতী বোমা হামলা চালিয়েছিল। আইএস পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তবর্তী বিস্তীর্ণ অঞ্চল নিয়ে নতুন একটি রাজ্যের ঘোষণা দিয়েছে। তারা এর নামকরণ করেছে খোরাসান। এ খোরাসান রাজ্যের একজন আমীরের নামও তারা প্রকাশ করেছে। তার নাম আমীর শায়খ হাফিজ সাইদ খান। ‘দাবিগে’র ১৩তম সংখ্যায় তার একটি সাক্ষাৎকারও প্রচার করা হয়েছে। ‘দাবিগে’ বলা হয়েছে, মধ্য এশিয়ার একটি ঐতিহাসিক অঞ্চল খোরাসান। মধ্যযুগে যেমনটা ছিল, তেমন করে ইরানের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, প্রায় সমগ্র আফগানিস্তান, দক্ষিণ তুর্কমেনিস্তান, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান, ভারত ও চীনের একটা অংশকে খোরাসানের অন্তর্ভুক্ত করে এ অঞ্চল দখলে নিতে চায় আইএস।

আইএস আফ্রিকার দিকেও তাদের প্রভাব সম্প্রসারিত করেছে। সচেতন পাঠকদের স্মরণ থাকার কথা, গত ৭ মার্চ নাইজেরিয়ার সন্ত্রাসবাদী সংগঠন বোকো হারাম আইএসের প্রতি তাদের আনুগত্য প্রকাশ করেছে। বোকো হারাম ইতিমধ্যে তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড উত্তর নাইজেরিয়া থেকে শুরু করে সীমান্তবর্তী নাইজার, শাদ, ক্যামেরুন ও মালিতে সম্প্রসারিত করেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এ অঞ্চলের দরিদ্রতা, অসমতা বোকো হারামের উত্থানের পেছনে দায়ী। অতি সম্প্রতি ফ্রান্স ও বেলজিয়ামে যে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে, তা ইউরোপে তাদের তথাকথিত খেলাফত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই চালানো হয়। ইউরোপে যে ‘খেলাফত’ প্রতিষ্ঠিত হবে, তাকে তারা বলছে ‘আমিরাত অব আন্দালুসিয়া’। লিবিয়ার উপকূলীয় শহর দারনাকে আইএসের প্রদেশ হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। আইএসের টার্গেট মাগরেব অঞ্চল তাদের নিয়ন্ত্রণে নেয়া। তবে একটা প্রশ্ন আছে। তা হচ্ছে, আইএসের সঙ্গে আল কায়দার সম্পর্ক কী হবে? কারণ মধ্যপ্রাচ্যের তথা উপসাগরীয় অঞ্চলে আল কায়দার একটা বিশাল নেটওয়ার্ক রয়েছে এবং তারা সক্রিয়। বলা ভালো, আল কায়দার তাত্ত্বিক হচ্ছেন আবু মুসাব আল সুরি। সুরি আল কায়দার স্ট্র্যাটেজির কথা বলতে গিয়ে ‘Spider Web’-এর কথা বলেছেন। অর্থাৎ মাকড়সা যেমন এখানে সেখানে জাল তৈরি করে তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখে এবং সেই জাল ভেঙে দিলে অন্যত্র গিয়ে ঠিক একইভাবে জাল তৈরি করে, আল কায়দার স্ট্র্যাটেজিও ঠিক তেমনি। ছোট ছোট গ্রুপে অঞ্চল ভিত্তিতে তারা সংগঠিত হয় এবং তাদের ওপর আক্রমণ হলে তারা অন্যত্র গিয়ে সংগঠিত হয়। Al-Qaeda in Arabian Peninsula, Al-Qaeda in Islamic Maghreb, Al-Qaeda in Iraq এভাবেই সংগঠিত। এর বাইরে তারা ভিন্ন নামেও অপারেট করে। যেমন আল নুসরা ফ্রন্ট (সিরিয়া), আল-গামা আল ইসলামিয়া। এ দুটি সংগঠনের সঙ্গে আদর্শগতভাবে আল কায়দার মিল আছে। এখানে ইসলামিক স্টেট জঙ্গি সংগঠনটির সঙ্গে তাদের অমিলের কথা উল্লেখ করা প্রয়োজন। আল কায়দার সঙ্গে ইসলামিক স্টেটের আদর্শগতভাবে অমিল রয়েছে। আল কায়দা যেখানে শরিয়াহভিত্তিক ইসলামিক শাসন চায়, সেখানে ইসলামিক স্টেট চায় একটি ইসলামিক খেলাফত। অর্থাৎ একটি খেলাফত রাষ্ট্রের আওতায় সব মুসলিম রাষ্ট্র একত্রিত হবে। সেখানে একজন খলিফা বা রাষ্ট্রপ্রধান থাকবেন। আল কায়দার সঙ্গে পার্থক্য এখানেই যে, আল কায়দা খেলাফতের পরিবর্তে ইসলামিক আমিরাতে বিশ্বাসী।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, উপমহাদেশে আল কায়দা কি আদৌ স্থান করে নিতে পেরেছে? ভারতে এর কোনো স্থান নেই। পাকিস্তানে তালেবানদের প্রভাব বেশি, আল কায়দা তার শাখা স্থাপন করতে পেরেছে, এমন খবর আমাদের জানা আছে। তবে বিভিন্ন জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে তাদের সম্পর্ক থাকতে পারে। আর বাংলাদেশে তাদের আদৌ কোনো অস্তিত্ব নেই। বাংলাদেশে জঙ্গিগোষ্ঠী হিসেবে যারা পরিচিত তাদের সঙ্গে আল কায়দার যোগাযোগ আছে, এমন কোনো তথ্যভিত্তিক প্রমাণও আমাদের কাছে নেই। ফলে বাংলাদেশে বড় ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েছে এটা বলা যাবে না। কিন্তু আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় বাংলাদেশকে বারবার টার্গেট করা হয়েছে। অতি সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশে সংঘটিত হওয়া বেশ কয়েকটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সঙ্গে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসকে জড়িত করে SITE-এ যে তথ্য পরিবেশন করা হয়েছে, তাতে এই প্রচারণা বাড়ছে। এখন তথ্যমন্ত্রী নিজে স্বীকার করলেন, বাংলাদেশে আল কায়দার জঙ্গি রয়েছে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বারবার এসব জঙ্গি সংগঠনের অস্তিত্বের কথা অস্বীকার করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্কে প্রথমে বলেছিলেন, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের কোনো স্থান নেই। এটাই হচ্ছে আসল কথা। বাংলাদেশে ইসলামের নামে যারা উগ্রবাদ প্রচার করছে, তারা বিভ্রান্ত। আল কায়দা কিংবা ইসলামিক স্টেটের জঙ্গিদের সঙ্গে তাদের মেলানো যাবে না। তবে এটা সত্য, কোনো কোনো মন্ত্রী, সরকারের সমর্থক বুদ্ধিজীবী যখন মিডিয়ায়, টিভির টকশোতে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থান নিয়ে প্রকাশ্যে মন্তব্য করেন, তখন তা শুধু দেশে নয়, বিদেশেও বিভ্রান্তি তৈরি করে।

বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমান। এখানে উগ্রপন্থী ইসলামিক দল আছে। ফলে বাংলাদেশ যে কোনো কোনো দেশের গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারিতে রয়েছে, তা অস্বীকার করা যাবে না। বাংলাদেশ একটি মডারেট ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের দেশ। এখানে উগ্রবাদের কোনো স্থান নেই। উগ্রবাদকে মানুষ পছন্দ করে না। সাধারণ মানুষের মাঝে এদের কোনো গ্রহণযোগ্যতাও নেই। তাই জঙ্গিবাদকে নিয়ে যত কম কথা বলা যায়, ততই মঙ্গল। মনে রাখতে হবে, দলের সিনিয়র নেতারা, মন্ত্রীরা জঙ্গিবাদ নিয়ে কথা বললে তাতে সমর্থকরা প্রভাবিত হন। তাই তাদের সংযত কথাবার্তা বলা উচিত। জঙ্গিবাদ একটি বৈশ্বিক সমস্যা। আমরা কেন, কোনো দেশই এ সমস্যার বাইরে নয়। এ সমস্যার সঙ্গে আমাদের জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নটি সরাসরিভাবে জড়িত। এ ক্ষেত্রে সরকার ও প্রধান বিরোধী দলের মাঝে সমঝোতা প্রয়োজন। জঙ্গিবাদ নিয়ে কোনো ব্লেমগেম কাম্য নয়। বরং সরকার ও প্রধান বিরোধী দলের মধ্যে যদি সমঝোতা প্রতিষ্ঠিত না হয়, তাহলে তৃতীয় পক্ষ এ থেকে ফায়দা তুলবে, এটাই স্বাভাবিক। বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উদ্ধারে তাই এ মুহূর্তে প্রয়োজন একটি সমঝোতার। বেশ কিছুদিন আগে ঢাকায় দেয়া মার্কিন রাষ্ট্রদূতের একটি মন্তব্য আমার কাছে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়েছে। রাষ্ট্রদূত বার্নিকাট বলেছিলেন, ‘আইএসের উগ্রবাদ দমনে যৌথ উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ।’ এ বক্তব্যের মধ্য দিয়ে বার্নিকাট আসলে কী বোঝাতে চেয়েছেন, তা পুরোপুরি স্পষ্ট না হলেও তথাকথিত ‘সন্ত্রাস দমনে’ বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগ ইতিমধ্যে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। এ নিয়ে গেল ফেব্র“য়ারিতে (২০১৬) একুশের বইমেলায় আমার একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। এ তথাকথিত সন্ত্রাস দমনের নামে যুক্তরাষ্ট্র যেখানেই সাময়িকভাবে নিজেদের জড়িত করেছে, সেখানে সন্ত্রাস দমন তো হয়ইনি, বরং সন্ত্রাসের মাত্রা বেড়েছে। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড জিইয়ে রেখে যুক্তরাষ্ট্র তার স্বার্থ আদায় করে নিচ্ছে। পাঠক আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়া কিংবা সিরিয়ার বর্তমান অবস্থা বিবেচনায় নিতে পারেন। আমার আতংকটা সেখানেই- আইএসের উগ্রবাদ দমনে বার্নিকাট যৌথ উদ্যোগের কথা বলে কোনো ইঙ্গিত করেছিলেন কি-না?

একাধিক কারণে বাংলাদেশ ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্রের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। একদিকে চীনের উত্থান, অন্যদিকে চীন-রাশিয়া মৈত্রী যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থকে আঘাত করছে। ভারত মহাসাগর ক্রমেই মার্কিন সামরিক নীতিনির্ধারকদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্যাসিফিক ফ্লিটের কর্মকাণ্ড এখন সম্প্রসারিত হচ্ছে ভারত মহাসাগরে। অনেকেই মনে করতে পারেন, ২০১২ সালের ২ মার্চ মার্কিন সিনেটের এক অধিবেশনে যুক্তরাষ্ট্রের প্যাসিফিক ফ্লিটের (বাংলাদেশও এর আওতার মধ্যে রয়েছে) তৎকালীন কমান্ডার অ্যাডমিরাল রবার্ট উইলার্ড বলেছিলেন, বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার ৫টি দেশে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ বাহিনী মোতায়েন রয়েছে। এ নিয়ে ওই সময় বাংলাদেশে কম বিতর্ক হয়নি। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ বেশ ক’টি চুক্তিতে আবদ্ধ (যেমন, অংশীদারিত্ব সংলাপ চুক্তি ২০১৩, টিকফা চুক্তি ইত্যাদি), যেখানে সন্ত্রাস দমনে যৌথ কর্মসূচি নেয়ার কথা বলা হয়েছে। অনেকেই জানেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে SOFA (Status of Forces Agreement) চুক্তি ও আকসা (Acquisition and Cross Servicing Agreement) চুক্তি নামে দুটি চুক্তি করতে চাচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর সামরিক উপস্থিতি, জ্বালানি গ্রহণ, ‘পোর্স্ট অব কল’ সুবিধা দেয়া হবে। বাংলাদেশ এখন অব্দি এ ব্যাপারে সম্মতি না দিলেও চাপে আছে। ফলে SITE-এর ওয়েবসাইটে বাংলাদেশে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের অস্তিত্ব আবিষ্কার এবং বার্নিকাটের যৌথ উদ্যোগের কথা বলার মধ্যে কোনো যোগসূত্র আছে কি-না, তা ভবিষ্যৎই বলতে পারবে। এটা সত্য, বিশ্বে মুসলমান জনগোষ্ঠীর প্রাধান্য যেখানে বেশি, সেখানেই ইসলামের নামে উগ্রবাদ জন্ম হচ্ছে। ইন্দোনেশিয়া, সোমালিয়া, এমনকি দক্ষিণ থাইল্যান্ডের নারাথিওয়াত, পাট্টানি, ইয়ালা ইত্যাদি অঞ্চলে (যেখানে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ) ইসলামের নামে উগ্রবাদ বিস্তার লাভ করছে। নাইজেরিয়ায় বোকো হারাম কিংবা সোমালিয়ায় আল সাবাব সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর খবর আমরা জানি। সেখানে ‘সন্ত্রাস দমনে’ মার্কিন সেনাবাহিনী পাঠানো এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। এখানে পাঠকদের কিছু তথ্য দিতে চাই। যুক্তরাষ্ট্র আফ্রিকায় তাদের প্রথম সেনা কমান্ড AFRICOM (US-African Command) প্রতিষ্ঠা করেছে। বর্তমানে আফ্রিকার ২৮টি দেশে ১৩০০ মার্কিন সৈন্য Counter Terrorism কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। ২০০৫ সাল থেকেই বেশ কয়েকটি আফ্রিকান দেশে FINTLOCK বা US Training Exercise নামে মার্কিন সেনারা তৎপর। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র ক্যামেরুনে ৩০০ সেনা পাঠিয়েছে। সূক্ষ্মভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, যুক্তরাষ্ট্র ধীরে ধীরে মধ্যপ্রাচ্য থেকে তার দৃষ্টি আফ্রিকাতে সম্প্রসারিত করছে। আফ্রিকার ইউরেনিয়াম ও তেল সম্পদের দিকে এখন তাদের দৃষ্টি। যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টি সম্প্রসারিত হচ্ছে ভারত মহাসাগরভুক্ত অঞ্চলগুলোর দিকেও। যুক্তরাষ্ট্রের প্যাসিফিক ফ্লিটের ৬টি যুদ্ধজাহাজ ২০২০ সালের মধ্যে ভারত মহাসাগরে মোতায়েন করা হবে। আর ভারত মহাসাগর ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে বৃহৎ শক্তির কাছে। একদিকে চীন তার সিল্ক রুটকে নতুন করে সাজাচ্ছে, যেখানে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চল এর একটি অংশ। ভারতও এগিয়ে এসেছে তার প্রাচীন কটন রুট নিয়ে। ভারত ‘ইন্ডিয়ান ওসেন রিম’ভুক্ত দেশগুলোকে তার নেতৃত্বের আওতায় আনছে। এ নিয়ে চীনের উদ্যোগ আছে। ফলে এ অঞ্চলে সন্ত্রাসী তৎপরতা বাড়বে, আর তাকে কেন্দ্র করে বাড়বে মার্কিনি তৎপরতা!

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আবারও বলেছেন, বাংলাদেশে আইএসের কোনো সাংগঠনিক ভিত্তি নেই। তবে আল কায়দা আছে, তথ্যমন্ত্রীর এ ধরনের স্বীকারোক্তি বিভ্রান্তি বাড়াবে। আইএস নেই এটা বিবেচনায় নিয়েই যা বলা যায় তা হচ্ছে, দাবিগ যখন শেখ আবু ইব্রাহিম আল হানিফ নামে তথাকথিত আইএস নেতার সাক্ষাৎকার প্রচার করে, তখন এটাকে হালকাভাবে দেখা উচিত নয়। এটা তো সত্য, এখানে কিছু জঙ্গি গোষ্ঠী রয়েছে, যারা চেষ্টা করছে আইএসের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে। এসব সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই। বাংলাদেশে দরিদ্র জনগোষ্ঠী আছে। এখানে অসমতা বাড়ছে। প্রত্যক্ষ অঞ্চলে জঙ্গিরা তাদের তৎপরতা বাড়াচ্ছে। সেখানে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তৎপরতা সীমিত। তাই ‘সম্ভাব্য আইএসে’র উত্থান ঠেকাতে (?) রাষ্ট্রের সব গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকাণ্ড বাড়াতে হবে। দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনবল সৃষ্টি করতে হবে। আইএস নিয়ে কোনো বিতর্ক হোক, এটা আমরা চাই না। Daily Jugantor 17.04.16

0 comments:

Post a Comment