রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন, গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি ও আমাদের স্বার্থ

পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভার নির্বাচন শুরু হয়েছে। প্রথম দফার প্রথম পর্বের নির্বাচন শেষ হলেও শেষ পর্ব অনুষ্ঠিত হবে ৫ মে। আর ফল ঘোষণা করা হবে ১৯ মে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে যেভাবে নির্বাচন হচ্ছে, তা যেন অনেকটা বাংলাদেশের কার্বন কপি। বহুল আলোচিত দৈনিক আনন্দবাজারে ৭ এপ্রিল তাদের এক প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়েছে, ‘তালাবদ্ধ গণতন্ত্র’ হিসেবে। আর ৮ এপ্রিল তাদের সম্পাদকীয়তে কোনো কোনো ভোট কেন্দ্রে অতিরিক্ত ভোট পড়াকে বলা হয়েছে ‘ভুতুড়ে কা-’ হিসেবে। খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও মন্তব্য করেছেন। তিনি মন্তব্য করেছেন, এভাবে ‘মওত, মানি, আউর ধোঁকা, সিন্ডিকেটরাজ চলছে বাংলায়।’ সব মিলিয়ে নির্বাচনটি ভালো হচ্ছে এটা বলা যাবে না। গোপীবল্লভ ডালকাঠি গ্রামের ভোট কেন্দ্রে তৃণমূলের পক্ষে ভোট না পড়ায় দলের নেতাকর্মীরা গ্রামের খাবার পানির জন্য যে একমাত্র টিউবওয়েলটি রয়েছে, তা তালাবদ্ধ করে চলে যায়। বলা হয়েছে, সরকারের পক্ষ থেকে আর জল দেয়া সম্ভব নয়। নির্বাচন নিয়ে নানা কাহিনী ছাপা হচ্ছে। তবে এ নির্বাচন নিয়ে আমাদের স্বার্থ অনেক। আমরা চাই, তিস্তার পানিবণ্টন। আবার এটি পশ্চিমবঙ্গে একটি রাজনৈতিক ইস্যুও। তিস্তার পানিবণ্টনকে ইস্যু করে মমতা ব্যানার্জি উত্তরবঙ্গে তার জনপ্রিয়তা বাড়াতে চেয়েছিলেন। অতীতে যদি চুক্তি হতো এবং তাতে যদি বাংলাদেশের শতকরা ৫০ ভাগের ওপর পানিপ্রাপ্তি নিশ্চিত হতো, তাতে মমতার ভোট কাটত। তিনি জনপ্রিয়তা হারাতেন। এখন মে মাসে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভার নির্বাচন শেষ হবে। তাই ঝুঁকি তিনি নেননি ভোটের স্বার্থে। একটি ‘সমঝোতায়’ তিনি এখন রাজি হতে পারেন। তবে তা পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে নয়। ঢাকায় এসে তিনি সেই পুরনো কথা-ই বলেছিলেন। তার ওপর আস্থা রাখতে বলেছিলেন। বলা ভালো, তিস্তার পানিবণ্টনের ব্যাপারে তিনি একবার একটি ফর্মুলা দিয়েছিলেনÑ শতকরা ৭৫ ভাগ পানি পশ্চিমবঙ্গের জন্য রেখে বাকি পানি বাংলাদেশকে দেয়া। এ ফর্মুলায় বাংলাদেশ রাজি হয়নি তখন। কেননা এতে আমাদের স্বার্থ রক্ষিত হয়নি। পরবর্তী সময়ে মমতা ব্যানার্জি পশ্চিমবঙ্গের পানি বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্রকে আহ্বায়ক করে একটি কমিশন গঠন করেছিলেন। তাদের দায়িত্ব ছিল তিস্তার পানিবণ্টনের ব্যাপারে একটা সুপারিশ করা। রুদ্র কমিশন তার সুপারিশে উল্লেখ করেছিলেন এবং যার আংশিক রিপোর্ট পশ্চিমবঙ্গের সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছিল। তাতে তিনি অভিমত দিয়েছিলেন যে, পশ্চিমবঙ্গের চাহিদা মিটিয়েও বাংলাদেশে তিস্তার ৫০ ভাগ পানি দেয়া সম্ভব। তিনি এও মত দিয়েছিলেন যে, ‘ম্যানেজমেন্ট প্রযুক্তি’ ব্যবহার করে তিস্তার পানি মজুদ করা। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক প্রণব কুমারও তার সঙ্গে একমত হয়েছিলেন। কিন্তু যতদূর জানা যায়, মমতা ব্যানার্জি রুদ্র কমিশনের মতামতের ব্যাপারে সন্তুষ্ট ছিলেন না। যে কারণে রুদ্র কমিশনের রিপোর্টটি তিনি প্রকাশ করেননি। আজ তিনি সেই রুদ্র কমিশনের ফর্মুলায় পানি ভাগাভাগিতে রাজি হবেনÑ এটা মনে হয় না। তাহলে তিনি কি নরেন্দ্র মোদির প্রস্তাবে রাজি হয়ে এখন নির্বাচনের পর একটি চুক্তিতে রাজি হবেন? অতীতে মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে তার ঢাকায় আসা চূড়ান্ত হলেও শেষ মুহূর্তে তিনি বেঁকে বসেছিলেন। পরে এসেছিলেন মোদির সঙ্গে। কিন্তু কোনো চুক্তিতে সম্মত হননি। নির্বাচনের পর তিনি কী সিদ্ধান্ত নেন তা দেখার বিষয়। এখানে অনেক সম্ভাবনা আছে। একটি ‘প্যাকেজ ডিল’ এর আওতায় তিনি স্থলসীমান্ত চুক্তি সমর্থন করেছিলেন। রাজ্যসভায় তৃণমূল সমর্থন না করলে বিলটি পাস হতো না। কেন্দ্র থেকে তার আর্থিক সাহায্য ও সহযোগিতা দরকার। নরেন্দ্র মোদি এ আর্থিক সহযোগিতার বিষয়টিকে তার স্বার্থে ব্যবহার করেছেন। মমতা ঢাকায় আসার ব্যাপারেও সেই মানসিকতা কাজ করেছিল। নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের অগ্রাধিকার তালিকায় ছিল কানেকটিভিটির প্রশ্নটি। তিনি ভারতের এক অঞ্চলকে অন্য অঞ্চলের সঙ্গে সংযুক্ত করতে চেয়েছেন বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে। আসাম, মেঘালয় ও পশ্চিমবঙ্গ এ তিনটি রাজ্য এই প্রক্রিয়ায় জড়িত। মোদি এজন্যই চেয়েছিলেন ওই তিন রাজ্যের তিন মুখ্যমন্ত্রী ঢাকায় যাবেন। তাই মমতা এসেছিলেন। তিস্তা এখানে প্রাধান্য ছিল না। অনেক পরিকল্পনা মমতা বাস্তবায়ন করতে পারবেন না, যদি না কেন্দ্র আর্থিকভাবে তাকে সাহায্য করে। তখন সামনে নির্বাচন ছিল। মমতা তাই ঝুঁকিটি নিতে চাননি। তখন কেন্দ্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআইএ’র একটি চাপ ছিল মমতার ওপর। সারদা কেলেঙ্কারি, তৃণমূল কংগ্রেসের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের ওপর সিবিআই’র নজরদারি ছিল বেশি। ফলে এ ‘চাপ’কে অনেকটা নিউট্রাল করতে তিনি মোদির সঙ্গে ঢাকায় আসতে রাজি হয়েছিলেন। কোনো চুক্তি করতে নয়। তবে মমতা ব্যানার্জি আবার বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটে যোগ দিতে পারেন। এক সময় তিনি এ জোটে ছিলেন। কেন্দ্র্রের রেলমন্ত্রী ছিলেন। আবার বেরিয়েও এসেছিলেন। এখন যদি পশ্চিমবঙ্গে তার বিজয় নিশ্চিত হয় ও সব কেলেঙ্কারি থেকে ‘মুক্ত’ হতে তিনি যদি আবারও এনডিএ জোটে ফিরে যান, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই! যতদূর জানা যায়, তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে ঢাকায় আসেননি একটাই কারণে। আর তা হচ্ছে, মমতাকে উপেক্ষা করে কেন্দ্র এককভাবে বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি করতে চাচ্ছিল, যা মমতার মনঃপূত হয়নি। ভারতের সংবিধানে রাজ্য সরকারের কিছুটা অধিকার স্বীকৃত। রাজ্য সরকারকে উপেক্ষা করে কেন্দ্র এককভাবে কোনো চুক্তি করতে পারে না। ঢাকা সফরের আগে মোদি তাকে কথা দিয়েছিলেন, তিনি ঢাকায় তিস্তার ব্যাপারে কোনো চুক্তি করবেন না এবং তিস্তার ব্যাপারে ঢাকার সঙ্গে কোনো কথা হবে না। যদি কথা বলতেই হয়, এ ব্যাপারে মমতাই কথা বলবেন।
মমতা কথা বলেছিলেন। কূটনৈতিক ভাষায় বলেছিলেন, তার ওপর আস্থা রাখতে। বাংলাদেশের মানুষ আস্থা রেখেছিল। এখন নির্বাচন শেষ হবে এবং সবকিছু ঠিক থাকলে তিনি ৫ বছরের জন্য জনগণের ম্যান্ডেট পাবেন। বিহারে নীতিশ কুমারের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে (বিহারের রাজধানী পাটনায়) তিনি যোগ দিয়ে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন একটা মহাজোট গঠনের সম্ভাবনা  জাগিয়ে তুলেছিলেন। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে জাতীয় কংগ্রেসের সঙ্গে তার কোনো সহাবস্থান হলো না। জাতীয় কংগ্রেস ঐক্য করল বামফ্রন্টের সঙ্গে। তার জাতীয় কংগ্রেসের সঙ্গে ঐক্য না করা কেন্দ্রে মোদি সরকারকে খুশি করে থাকবে। ফলে মমতা যদি না চান, তাহলে তিস্তার পানি ভাগাভাগির ব্যাপারে মোদি সরকার তাকে চাপ দেবে না। আমাদের জন্য তিস্তার পানিবণ্টনের বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি। আন্তর্জাতিক আইন আমাদের পক্ষে। ভাটির দেশ হিসেবে আমাদের অধিকার স্বীকৃত। ভারত (এক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ) পানি একতরফাভাবে প্রত্যাহার করে নিতে পারে না। পশ্চিমবঙ্গ তাই করছে। ফলে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল পানিশূন্য হচ্ছে। উল্লেখ্য, তিস্তা একটি আন্তর্জাতিক নদী। সিকিম হয়ে ভারতের দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ি হয়ে পশ্চিমবঙ্গের ডুয়ারের সমভূমি দিয়ে চিলাহাটির ৪ থেকে ৫ কিলোমিটার আগে বাংলাদেশের নীলফামারী জেলার উত্তর গাড়িবাড়ির কাছে ডিমলা উপজেলার ছাতনাই দিয়ে প্রবেশ করেছে তিস্তা নদী। ছাতনাই থেকে এ নদী নীলফামারীর ডিমলা, জলঢাকা, লালমনিরহাটের সদর, পাটগ্রাম, হাতিবান্ধা, কালীগঞ্জ, রংপুরের কাউনিয়া, পীরগাছা, কুড়িগ্রামের রাজারহাট, উলিপুর হয়ে চিলমারীতে গিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদে মিশেছে। ডিমলা থেকে চিলমারী এ নদীর বাংলাদেশ অংশের মোট ক্যাচমেন্ট এরিয়া প্রায় ১ হাজার ৭১৯ বর্গকিলোমিটার। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ নদী কমিশন গঠনের পর তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। ১৯৮৩ সালের জুলাইয়ে দুই দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের এক বৈঠকে তিস্তার পানিবণ্টনে শতকরা ৩৬ ভাগ বাংলাদেশ ও ৩৯ ভাগ ভারত এবং ২৫ ভাগ নদীর জন্য সংরক্ষিত রাখার বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল। কিন্তু ওই সিদ্ধান্তে তিস্তার পানি প্রবাহের পরিমাণ বা কোন জায়গায় পানি ভাগাভাগি হবে এ ধরনের কোনো বিষয় উল্লেখ না থাকায় তা আর আলোর মুখ দেখেনি। ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বরে তিস্তার পানির ৮০ ভাগ দুই দেশের মধ্যে বণ্টন করে বাকি ২০ ভাগ নদীর জন্য রেখে দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ভারত সেই প্রস্তাবে রাজি না হয়ে উল্টো তিস্তার কমান্ড এরিয়া তাদের বেশি এ দাবি তুলে বাংলাদেশ তিস্তার পানির সমান ভাগ পেতে পারে না দাবি উপস্থাপন করেছিল। এরপর আর তিস্তার পানিবণ্টনের জট খোলেনি। এখানে বলা ভালো, বাংলাদেশ উত্তরাঞ্চলের নীলফামারী, রংপুর, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, জয়পুরহাট ও বগুড়া জেলার ৩৫টি উপজেলায় তিস্তা সেচ প্রকল্প থেকে বর্ষা মৌসুমে সম্পূরক ও শুষ্ক মৌসুমে সেচ দেয়ার উদ্দেশ্যে ১৯৭৯ সালের আগস্টে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের প্রথম  ফেজ কাজের উদ্বোধন করে। এরপর ভারত ১৯৮৫ সালে তিস্তার উৎসমুখে এবং তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্পের মাত্র ৬৫ কিলোমিটার উজানে গজলডোবা নামক স্থানে গজলডোবা ব্যারাজ নির্মাণ করে। ফলে তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্পটি সেচ প্রদানে অকার্যকর হয়ে পড়ে। ওই সেচ প্রকল্পের উপকৃত এলাকা ৭ লাখ ৫০ হাজার হেক্টর। এদিকে কিশোরগঞ্জ উপজেলার (নীলফামারী জেলার অন্তর্গত) বাহাগিলি নামক স্থানে তিস্তা প্রকল্পের দ্বিতীয় প্রকল্পের কাজও হাতে নেয়া হয়েছে। এ কাজ সম্পন্ন হলে রংপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া ও জয়পুরহাট জেলার ৪ লাখ ৪৮ হাজার হেক্টর জমি সেচের আওতায় আসবে। কিন্তু পানির অভাবে তিস্তা এখন শুধু নামে আছে। পানি নেই বললেই চলে। ভরাট হয়ে গেছে ৬৫ কিলোমিটার নদী। তিস্তা আন্তর্জাতিক নদী হওয়ায় জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক পানিপ্রবাহ কনভেনশন ১৯৯৭ অনুযায়ী বাংলাদেশের পানিপ্রাপ্তি সেখানে স্বীকৃত। এখানে ভারতের কাছে চাওয়ার কিছু নেই। মমতা ব্যানার্জির আপত্তিও গ্রহণযোগ্য নয়। তিস্তা চুক্তিটি হওয়া বাঞ্ছনীয়। তিস্তা চুক্তি না হলে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ককে আরও উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া যাবে না। নরেন্দ্র মোদি নিশ্চয়ই এটি বোঝেন। মমতা ব্যানার্জিকে বোঝানোর দায়িত্ব তার। বাংলাদেশের করণীয় কিছু নেই। এখানে একটা কথা বিবেচনায় নিতে হবে। এপ্রিল-মে মাসে বিধানসভা নির্বাচনের পর (পশ্চিমবঙ্গ) একটি সমঝোতা যদি হয়, তাতে যেন বাংলাদেশের স্বার্থ অক্ষুণœ থাকে। আমরা যেন মমতা ব্যানার্জির চাপের কাছে আত্মসমর্পণ না করি।
পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভার নির্বাচনের পরপরই আমাদের উচিত হবে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় তিস্তার পানিবণ্টনের প্রশ্নটি উত্থাপন করা। আমাদের দাবি ভারত সরকারের কাছে, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে নয়। আমরা শুধু স্মরণ করিয়ে দেব, মমতা ব্যানার্জি আমাদের আশ্বস্ত করেছিলেন। আস্থা রাখতে বলেছিলেন। সামনে বর্ষার পরে আসছে শুষ্ক মৌসুম। সুতরাং তিস্তার পানিবণ্টনের প্রশ্নে আলোচনাটা জরুরি।
তিস্তায় পানির প্রবাহ মারাত্মকভাবে কমে যাওয়ায় বাংলাদেশ এখন বড় ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। আমরা চাই, এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান। এক্ষেত্রে প্লাস পয়েন্ট হচ্ছে মোদি সরকার একটি চুক্তিতে যেতে চায়। এরই মধ্যে স্থল সীমানা চুক্তিতে সম্মতি দিয়ে মমতা ইতিহাসে নাম লিখিয়েছেন। এখন তিস্তার ব্যাপারেও তিনি পারেন। এটা কঠিন নয়। তিনি যদি সত্যিই আন্তরিক হন, তাহলে তিনি কল্যাণ রুদ্র কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে পারেন। তিনি নিজে এ কমিশন গঠন করেছিলেন। কলকাতার পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, রুদ্র কমিশন পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে দেয়া রিপোর্টে বলেছে, পশ্চিমবঙ্গকে ক্ষতি না করেও বাংলাদেশকে শতকরা ৫০ ভাগ পানি দেয়া সম্ভব। তার এ বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন আরেকজন পানি বিশেষজ্ঞ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক প্রণব কুমার রায়। আগেই উল্লেখ করেছি, অধ্যাপক রায়ের অভিমত হচ্ছে তিস্তায় পানি নেই কথাটা ঠিক নয়। পানি মজুদ রাখা (বর্ষা মৌসুমে) ও ম্যানেজমেন্ট প্রযুক্তি ব্যবহার করে এ সমস্যার সমাধান করা যায়। সে কারণেই বিধানসভার নির্বাচনে মমতা ব্যানার্জিকে সম্ভাব্য বিজয়ী হিসেবে যখন চিহ্নিত করা হচ্ছে, তখন এ প্রশ্নটা করাই যায় যে, ‘আস্থা ও বিশ্বাসের’ কথা তিনি ঢাকায় বলে গিয়েছিলেন, তা তিনি রাখবেন কিনা? নির্বাচন শেষ হবে ৫ জুন। ৫ বছর অর্থাৎ ২০২১ সাল পর্যন্ত তিনি মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে থাকছেন। এক্ষেত্রে একটি চুক্তিতে উপনীত হতে তার ‘গ্রিন সিগন্যাল’ শুধু বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ককেই উন্নত পর্যায়ে নিয়ে যাবে না, বরং তিনি বাংলাদেশেও তার জনপ্রিয়তা বাড়াতে পারবেন। এখন দেখার পালা, ১৯ মে’র পর তিনি আমাদের কোনো সুখবর দেন কিনা। পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন আমাদের মুখ্য নয়। আমাদের কাছে বিবেচ্য, আমাদের স্বার্থ। আর তিস্তার পানিবণ্টনের মধ্য দিয়ে আমাদের স্বার্থ নিশ্চিত হতে পারে।
Daily Alokito Bangladesh
10.04.16

0 comments:

Post a Comment