রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

মির্জা ফখরুলের স্বীকারোক্তি ও বিএনপির ভবিষ্যৎ রাজনীতি



মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে দুইটি জাতীয় সংবাদপত্রে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। এসব সাক্ষাৎকারে তিনি যেসব মন্তব্য করেছেন, তাতে করে বিএনপির ভবিষ্যৎ রাজনীতি সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যাবে। মির্জা ফখরুল স্বীকার করেছেন, এর আগে যেসব আন্দোলন-সংগ্রাম তারা করেছেন, তাতে কিছু ভুলত্রুটি ছিল। আর সেসব ভুলত্রুটি সংশোধন করে নতুনভাবে আন্দোলন-সংগ্রামের রূপরেখা তৈরি করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন। (সকালের খবর, ১১ এপ্রিল)। যদিও সুস্পষ্টভাবে তিনি কোনো আন্দোলনের কথা বলেননি। তবে এটা তো সত্য, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর দেশে যে সহিংস রাজনীতি শুরু হয়েছিল, তাতে বিএনপিকে দায়ী করা হয়। বিএনপি ওই সময় লাগাতার অবরোধের ডাক দিলেও  তাতে তারা সফল হয়নি। দেশে ব্যাপক সহিংস ঘটনা ঘটেছে। আগুনে মানুষ পুড়িয়ে মারার ঘটনাও ঘটে। বিএনপি এসব অহিংস ঘটনার সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করলেও, সরকার বারবার বিএনপিকেই দায়ী করে আসছে। আজ যখন প্রকাশ্যে মির্জা ফখরুল ‘ভুলত্রুটি’র কথা স্বীকার করেন, তাকে ধন্যবাদ দিতে হয়। কেননা রাজনীতিবিদরা সাধারণত তাদের দলের ‘ভুলত্রুটি’র কথা স্বীকার করেন না। সরকারি দলের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। এক্ষেত্রে মির্জা ফখরুল অবশ্যই সাধুবাদ পেতে পারেন। মির্জা ফখরুল অপর একটি জাতীয় দৈনিকের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে একটি জাতীয় ঐক্যের কথা বলেছেন। (সমকাল, ১২ এপ্রিল), যা কিনা নতুন করে ব্যাপক আলোচনার সূত্রপাত করতে পারে। দেশে বর্তমানে ইউপি নির্বাচন হচ্ছে। বিএনপি তাতে অংশ নিচ্ছে। বিএনপির নেতাদের ভাষায় তারা আওয়ামী লীগকে ‘খালি মাঠে গোল দিতে চায় না’। বলার অপেক্ষা রাখে না, বিএনপির ব্যাপারে সরকারি দলের নেতাকর্মীদের নেগেটিভ প্রচারণা থাকলেও বিএনপি এখনও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। বিএনপি তার কাউন্সিল সম্পন্ন করেছে। গেল সপ্তাহে দল পুনর্গঠনের লক্ষ্যে একাধিক যুগ্ম সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদককে মনোনয়ন দিয়েছেন খালেদা জিয়া। কাউন্সিলে তার হাতেই এ ক্ষমতা অর্পণ করা হয়েছিল। সব কাউন্সিলর এমনটিই চেয়েছেন। তবে দলের বাইরে বিভিন্ন মহল থেকে এমন প্রশ্ন উঠেছে, কেন কমিটি গঠনের দায়িত্ব এককভাবে খালেদা জিয়ার হাতে তুলে দেয়া হলো? একটি ধ্রুপদী গণতান্ত্রিক সমাজে হয়তো এমনটি হয় না। কিন্তু আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে এটি একটি স্বাভাবিক ঘটনা। বড় দল আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রেও এমনটি আমরা দেখেছি। এমনকি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানও একই ‘কাজ’ করেন। এককভাবে তিনি কো-চেয়ারম্যান নিয়োগ দিয়ে কম বিতর্ক সৃষ্টি করেননি। ফলে এগুলো একটি ‘স্বাভাবিক’ প্রক্রিয়া। খালেদা জিয়া দল পুনর্গঠন করবেন এটাই স্বাভাবিক। তবে কাউন্সিলরদের ভোটে নেতা-নেত্রী নির্বাচিত হলে আমি খুশি হতাম। কিন্তু বাংলাদেশের আর্থসামাজিক পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখানে ব্যক্তিই মুখ্য। ব্যক্তিকে কেন্দ্র করেই রাজনীতি, দল বিকশিত হচ্ছে। সব দলের ক্ষেত্রেই এ কথাটা প্রযোজ্য।
বলতে দ্বিধা নেই, বিএনপি বড় একটি রাজনৈতিক দল। দলটির নেতাদের অভিজ্ঞতা অনেক বেশি। সাম্প্রতিক দলটির নেতাকর্মীরা যেভাবে জেল-জুলুম মোকাবিলা করছেন, অন্য কোনো দলের নেতারা তা করেননি। পহেলা সেপ্টেম্বর বিএনপি ৩৭ বছরে পা রেখেছে। একটি রাজনৈতিক দলের জন্য এ ৩৭ বছর একেবারে কম সময় নয়। দলটি একাধিকবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিল। ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর জন্ম নেয়া এ রাজনৈতিক দলটি বর্তমানে এক কঠিন সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বোধ করি, অতীতে কখনোই দলটি এ ধরনের সংকটে পড়েনি, যারা রাজনীতির গতি-প্রকৃতি নিয়ে কাজ করেন তারা জানেন, বাংলাদেশের সংসদীয় রাজনীতিতে দলটির একটি শক্ত অবস্থান আছে। তিনবার দলটি ক্ষমতায় ছিল (১৯৭৮-১৯৮২, ১৯৯১-’৯৬, ২০০১-২০০৬)। ফলে তৃণমূল পর্যায়ে দলটির একটি অবস্থান আছে। ১৯৮২ সালে এরশাদের সামরিক অভ্যুত্থান ও ক্ষমতা থেকে বিএনপির উৎখাতের পর ওই সময় যখন বিএনপির অস্তিত্ব হুমকির মুখে ছিল, ঠিক তখনই একজন গৃহবধূ থেকে (১৯৮৩) রাজনীতির পাদপ্রদীপে আসেন খালেদা জিয়া। এখন তিনিই বিএনপির অবিসংবাদিত নেত্রী। তাকে কেন্দ্র করেই বিএনপির রাজনীতি আবর্তিত হচ্ছে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, ৯০’র এরশাদবিরোধী আন্দোলনে সাধারণ মানুষ যে খালেদা জিয়াকে দেখেছিল একজন অবিসাংবাদিত নেত্রী হিসেবে, সেই খালেদা জিয়াকে এখন খুঁজে পাওয়া মুশকিল। বয়স বেড়েছে। অসুস্থ তিনি। ৫ জানুয়ারির (২০১৪) নির্বাচনে অংশ না নেয়া কিংবা পরবর্তী সময়ে সরকারবিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে যে সহিংস রাজনীতির জন্ম হয়েছে এদেশে, তা ব্যক্তিগতভাবে খালেদা জিয়া তথা বিএনপির রাজনীতিকে উজ্জ্বল করেনি। খালেদা জিয়াকে আমার মাঝেমধ্যে মনে হয়েছে, ‘নিঃসঙ্গ একজন নাবিক’ হিসেবে, যিনি আদৌ জানেন না, কোন দিকে এবং কোন পথে বিএনপি নামে ‘জাহাজ’টিকে তিনি পরিচালনা করবেন। এক সন্তানহারা, অপর সন্তান অনেক দূরে, নেতাকর্মীরা জেলে। নিঃসঙ্গ খালেদা জিয়া এখন একাই বিএনপি।
বিএনপি নানা সমস্যায় আক্রান্ত এটা তো অস্বীকার করা যাবে না। বাস্তবতা হচ্ছে, কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে বিএনপি ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। একটি মধ্যবর্তী নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। বিএনপি দল গোছানোর কাজ শুরু করেছে। তবে অতীতে বিএনপির কয়েকজন নেতার ফোনালাপ ফাঁস হয়ে যাওয়ার ঘটনা প্রমাণ করে, শীর্ষস্থানীয় বিএনপি নেতাদের মাঝে এক ধরনের হতাশা আছে। বিএনপি ভাঙার ‘গুজব’ ছিল এ কারণেই। ‘খালেদা জিয়াকে দিয়ে হবে না’ কিংবা ‘জিয়ার আদর্শে ফিরে যেতে হবে’ এ ধরনের বক্তব্য যখন বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মুখ থেকে বের হয়, তখন গুজবের নানা ডালপালা গজায়। মির্জা ফখরুল জামিন পেলেও কেউ কেউ জেলে আছেন এখনও। অনেকের বিরুদ্ধেই মামলা আছে। আর যারা হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়েছেন, ওই জামিনের বিরুদ্ধে আপিল করেছে সরকার। এর অর্থ পরিষ্কার মামলা, মোকদ্দমা দিয়ে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের ‘ব্যস্ত’ রাখতে চায় সরকার, যাতে করে তারা ‘আন্দোলনে’ নিজেদের জড়িত করতে না পারেন। বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে অতীতে এমনটি কখনোই দেখা যায়নি এত বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা! ফলে এসব নেতাকর্মী আর রাজপথে সক্রিয় হতে পারেননি। খালেদা জিয়াকে সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯ এর ২৭ ধারা অনুযায়ী (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন সংক্রান্ত ধারা) বিচার, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় কিংবা গ্যাটকো দুর্নীতি মামলায় শাস্তি দিয়ে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা, একই সঙ্গে ডান্ডি ডায়িং মামলায় তারেক রহমানকে ‘শাস্তি’ দিয়ে তাকেও অযোগ্য ঘোষণার মধ্য দিয়ে সরকার ‘মাইনাস ওয়ান’ ফর্মুলার দিকেই ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে বলে অনেকের ধারণা। এক্ষেত্রে খালেদা জিয়াকে নির্বাচনে ‘অযোগ্য ঘোষণা’(?) করা হলে আইনি প্রক্রিয়ায় তিনি নির্বাচনের জন্য যোগ্য হবেন কিনা জানি না। তবে নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রশ্ন হবে তখন অবান্তর। খালেদা জিয়াই বিএনপির মূল শক্তি। খালেদা জিয়া যদি নির্বাচনে অংশ নিতে না পারেন, বিএনপির ‘বিকল্প নেতৃত্ব’ নির্বাচনে অংশ নেবে এটা মনে করার কোনো কারণ নেই। খালেদা জিয়া কিংবা তারেক রহমানকে বাদ দিয়ে কেউ যদি বিএনপিকে সংগঠিত করে এটাও গ্রহণযোগ্য হবে বলে আমার মনে হয় না। সরকারের নীতিনির্ধারকরা যদি ‘মাইনাস ওয়ান’ ফর্র্মুলা কার্যকরী করতে চান, আমার ধারণা, তা কোনো কার্যকর ‘ফল’ দেবে না। ‘আসল বিএনপি’ কিংবা নাজমুল হুদার অসংলগ্ন কথাবার্তায় মানুষ খুব আস্থাশীল, এটা আমার মনে হয় না। জাতীয় পার্টিকে বিরোধী দলের আসনে বসিয়েও সরকার খুব লাভবান হয়নি। জাতীয় পার্টি আগামীতে অস্তিত্বের সম্মুখীন হতে পারে। বাহ্যত জাতীয় পার্টির মাঝে দুইটি ধারা বিদ্যমান। একটি ধারা, যারা সরকারের অংশ হিসেবেই থাকতে চায়। আর অন্য একটি ধারা, সত্যিকার অর্থেই ‘বিরোধী দলের’ ভূমিকা পালন করতে চায়। তাদের এ ‘দ্বৈত ভূমিকা’ জাতীয় পার্টিকে এরশাদের অবর্তমানে; এমনকি ২০১৯ সালে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের আগে আরও একবার ভাঙনের মুখে ঠেলে দিতে পারে। বিএনপির অবর্তমানে জাতীয় পার্টির একটা সম্ভাবনা ছিল বিরোধী দল হিসেবে দাঁড়িয়ে যাওয়ার, কিন্তু তা হয়নি। ফলে জাতীয় পার্টি নিয়ে সাধারণ মানুষের তেমন কোনো আগ্রহ নেই। ব্যক্তি এরশাদের নিজস্ব একটা ‘ইমেজ’ আছে, তাও আবার তার নিজস্ব এলাকায়। তিনি শারীরিকভাবে সুস্থ আছেন। ফলে ২০১৯ সালে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে তার নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি অবস্থান ধরে রাখতে পারবে। বিএনপির কাউন্সিলে হাজার হাজার ডেলিগেটের উপস্থিতি প্রমাণ করে রাজনীতিতে ‘বিএনপির অবস্থানটি’ জাতীয় পার্টি নিতে পারেনি। যদিও জাতীয় পার্টি এ মুহূর্তে সংসদে আছে।
এটা স্বীকার করতেই হবে, বাংলাদেশে একটি দ্বি-দলীয় ব্যবস্থার জন্ম হয়েছে। আওয়ামী লীগের বিকল্পই বিএনপি, ঘুরে-ফিরে এটা প্রমাণিত। দশম সংসদে জাতীয় পার্টি পারেনি। তাই যে কোনো বিবেচনায় বিএনপির সঙ্গে একটা আস্থার সম্পর্ক গড়ে তোলা সরকারের জন্য তথা গণতন্ত্রের জন্য মঙ্গল। বাংলাদেশ নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৭ ভাগের উপরে, যেখানে ইউরোপে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে শ্লথগতি এসেছে। এখন নিম্নমধ্যম আয়ের দেশের চূড়ান্ত স্বীকৃতি পেতে হলে এ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে হবে। আর এর পূর্বশর্ত হচ্ছে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। বিএনপিকে আস্থায় নিয়েই এ স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে হবে। এটা সবাই বলেন। সংসদীয় রাজনীতিতে শক্তিশালী একটি বিরোধী দল থাকা দরকার। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেয়ায় জাতীয় পার্টি সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু প্রায় ২ বছরের সংসদীয় রাজনীতির কার্যক্রম পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, জাতীয় পার্টি সেই দায়িত্বটি পালন করতে পারছে না। জাতীয় পার্টিতে দ্বন্দ্ব আছে সরকারে থাকা-না থাকা নিয়ে। ফলে সংসদকে আরও গ্রহণযোগ্য, আরও অর্থবহ এবং সর্বোপরি একটি সঠিক জাতীয় নীতি প্রণয়নে সংসদে একটি শক্তিশালী বিরোধী দল থাকা বাঞ্ছনীয়। আর বিএনপিই সেই দায়িত্বটি পালন করতে পারে। বলা ভালো, বিএনপি সংসদে না থাকলেও,  বিএনপি যে বাংলাদেশের রাজনীতির একটি অপরিহার্য অংশ, দাতাগোষ্ঠী এটা স্বীকার করে এবং তারা সবাই বিএনপিকে মূলধারার রাজনীতিতেই দেখতে চায়। ভারতীয় নীতিনির্ধারকদের অবস্থান ও আমার ধারণা অনেকটা সেরকম। সরকারের ভূমিকা তাই এক্ষেত্রে অগ্রগণ্য। এটা স্বীকার করতেই হবে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি অন্যতম দুইটি শক্তি। এ দুইটি দল দুইটি রাজনৈতিক ধারার প্রতিনিধিত্ব করছে। অতীত ইতিহাস প্রমাণ করে, এ দুইটি দলের একটিকে বাদ দিয়ে যে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি, তা স্থায়ী হয়নি। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরে এসেছিল জনগণের ভোটে। এর আগে ১৯৮৬ সালে এরশাদীয় জমানায় যে সংসদ নির্বাচন হয়েছিল, তাতে আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণ করলেও বিএনপি নির্বাচন বয়কট করায় ওই সংসদ টিকে থাকেনি। ১৯৮৮ সালের সংসদও টেকেনি আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অংশ না নেয়ার কারণে। এ দুই দলের অংশগ্রহণ থাকার কারণেই পঞ্চম সংসদ (১৯৯১), সপ্তম সংসদ (১৯৯৬), অষ্টম সংসদ (২০০১) ও নবম সংসদ (২০০৮) গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছিল। কিন্তু বিএনপির অংশগ্রহণ না থাকায় ৫ জানুয়ারির (২০১৪) নির্বাচন কোনো গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। তাই ঘুরে-ফিরে বিএনপি আলোচনায় আছে এবং আমার বিবেচনায় আগামীতেও থাকবে।
কাউন্সিলে বিএনপি তার আগামী দিনের ‘রাজনীতি’ চূড়ান্ত করেছে। খালেদা জিয়ার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে এ ‘রাজনীতি’ প্রকাশ পেয়েছে। কতগুলো বিষয়কে কেন্দ্র করে বিএনপির রাজনীতি এখন আবর্তিত হবে। প্রথমত, বিএনপি ‘ভিশন ২০৩০’ এর কথা বলেছে। অর্থাৎ বিএনপি কীভাবে ২০৩০ সালের বাংলাদেশকে দেখতে চায়, তার কিছু রূপকল্পের কথা বলেছে। যদিও বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি। একটি বড় দলের জন্য এ ধরনের সুস্পষ্ট পরিকল্পনা থাকা দরকার। দ্বিতীয়ত, বিএনপি দ্বিকক্ষবিশিষ্ট একটি সংসদের কথা বলছে। বিএনপির জন্য এটা নতুন। তবে এক্ষেত্রে জটিলতা রয়েছে। এ ব্যাপারে আরও গবেষণা, আলাপ-আলোচনা প্রয়োজন। এক সময় জাসদ (রব) এর প্রবক্তা ছিল। সংবিধানে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের কথা বলা হয়নি। তৃতীয়ত, একটি অন্তর্বর্তীকালীন ও নিরপেক্ষ সরকারের কথা বিএনপি বলছে। যদিও এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা বিএনপির পক্ষ থেকে দেয়া হয়নি। সংবিধানে একটি নির্বাচনকালীন সরকারের ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। সেটা বিএনপি মানবে কিনা এটা একটা প্রশ্ন বটে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ এরই মধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন, বর্তমান সরকারপ্রধানের আওতায় বিএনপি জাতীয় নির্বাচনে যাবে না। এখন এটাই বিএনপির শেষ কথা কিনা জানি না। তবে ‘সব দলের অংশগ্রহণের’ যে নীতি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন গ্রহণ করেছে, সেটা নিশ্চিত করতে হলে বিএনপির সঙ্গে একটি সহাবস্থানে যেতে হবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এ সহাবস্থানের রূপটি কী? আমি ধারণা করছি, আগামীতে বিএনপির কাছ থেকে আমরা এ ব্যাপারে একটি ‘ফর্মুলা’ পাব, যাতে করে সংবিধানকে অক্ষুণ্ণ রেখেই বিএনপিকে সঙ্গে নিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেশে করা যায়।
বিএনপি পুনর্গঠিত হয়েছে। এখনও স্থায়ী পরিষদ পুনর্গঠিত হয়নি। সেখানেও পরিবর্তন আসবে। তবে সেখানেও যোগ্যদের স্থান দেয়া উচিত। নতুন এক বিএনপি ধীরে ধীরে ‘জন্ম’ হচ্ছে। নেতৃত্বে তরুণদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। এমনটাই হওয়া উচিত। বিএনপি একটি ‘এলডার্স কাউন্সিল’ গঠন করে স্থায়ী কমিটির বয়োজ্যেষ্ঠ নেতাদের সেখানে স্থান দিতে পারে। এতে করে তাদের প্রতি সম্মান দেখানোও হবে।
Daily Alokito Bangladesh
17.04.16

0 comments:

Post a Comment