রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

বঙ্গোপসাগরে ভারতের মিসাইল পরীক্ষা ও পরাশক্তির দ্বন্দ্ব

ঘটনাটি ছোট্ট। কিন্তু এর সুদূরপ্রসারী একটি প্রতিক্রিয়া রয়েছে। গত মার্চ মাসের শেষের দিকে বঙ্গোপসাগরে সাবমেরিন থেকে পরমাণু বোমা বহনে সক্ষম ব্যালিস্টিক মিসাইল পরীক্ষা চালিয়েছে ভারত। এতে চীনের কোনো প্রতিক্রিয়ার খবর সংবাদপত্রে প্রকাশিত না হলেও মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের একটি প্রতিক্রিয়া সংবাদপত্রে ছাপা হয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র মার্ক টোনার বলেছেন, এই মিসাইল পরীক্ষা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকে ক্ষুণ্ন করবে। তিনি এ অঞ্চলের দেশগুলোকে পরমাণু অস্ত্রের ব্যবহার ও উন্নয়ন কমিয়ে আনারও আহ্বান জানিয়েছেন। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা লক্ষ করেছেন, ভারত মহাসাগরে তিনটি পরাশক্তির (যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ভারত) তত্পরতা সাম্প্রতিক সময়গুলোয় বেড়েছে। এতে এ অঞ্চলে ‘প্রভাববলয় বিস্তারের’ রাজনীতিকে কেন্দ্র করে একদিকে চীন ও ভারত, অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে দ্বন্দ্ব বাড়ছে। এই ‘দ্বন্দ্ব’কে কেন্দ্র করে ভারত মহাসাগরের অঞ্চলভুক্ত দেশগুলোও ‘আক্রান্ত’ হচ্ছে। চীন যখন তার ওয়ান বেল্ট ওয়ান কোড কর্মসূচির আওতায় এ অঞ্চলের দেশগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করছে, ঠিক তখনই ভারত এগিয়ে এসেছে তার প্রাচীন ‘কটন রুট’ নিয়ে। ভারত এরই মধ্যে ভারত মহাসাগরভুক্ত অঞ্চলে তার তত্পরতা বাড়িয়েছে। ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন ও ব্রুনেইয়ের সঙ্গে চুক্তি করে সেখানে তার সামরিক তত্পরতা নিশ্চিত করেছে। এর আগে ভারত শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপে যুদ্ধজাহাজ বিক্রমাদিত্যকে পাঠিয়েছিল। চীন-ভারত দ্বন্দ্বের প্রতিক্রিয়া হিসেবে চীন অতি সম্প্রতি আন্দামান ও নিকোবর অঞ্চল তার বলে দাবি করেছে। পাঠকরা নিশ্চয়ই স্মরণ করতে পারেন, কলম্বোতে গেল বছর চীনা ডুবোজাহাজের উপস্থিতিকে কেন্দ্র করে শ্রীলঙ্কায় সরকার পর্যন্ত পরিবর্তন হয়েছিল। এই ডুবোজাহাজের উপস্থিতিকে ভারত দেখেছিল তার নিরাপত্তার প্রতি হুমকি হিসেবে। সাবেক শ্রীলঙ্কান রাষ্ট্রপতি রাজাপাকসে ছিলেন অতিমাত্রায় চীনানির্ভর। চীন শ্রীলঙ্কার হামবানতোতা ও কলম্বোয় দুটি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করে দিয়েছিল। কিন্তু বিষয়টি খুব সহজভাবে দেখেনি ভারত। শেষ পর্যন্ত ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা সেখানে এক ধরনের হস্তক্ষেপ করে এবং সিরিসেনাকে রাজাপাকসের ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ হিসেবে দাঁড় করায়। অবশ্য নির্বাচনে সিরিসেনা বিজয়ী হয়েছিলেন, এটা সত্য। ভারতে মোদি ক্ষমতায় আসার পর ভারতীয় মহাসাগর তথা মহাসাগরভুক্ত অঞ্চলকে ঘিরে নয়া ভারতীয় স্ট্র্যাটেজি রচিত হয়েছে। গেল বছর (মার্চ) ভারতের ওড়িশার ভুবনেশ্বরে ভারতীয় মহাসাগরভুক্ত দেশগুলোর সমন্বয়ে গঠিত ‘ইন্ডিয়ান ওশেন’-এর একটি শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। বাংলাদেশও তাতে অংশ নিয়েছিল। সম্মেলনে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ সুস্পষ্ট করেই বলেছিলেন, ভারত মহাসাগরে চীনের প্রবেশ ভারতের কাছে কাঙ্ক্ষিত নয়। ভুবনেশ্বর শীর্ষ সম্মেলনের আগে মোদি সরকার মরিশাসে ভারতীয় ঘাঁটি স্থাপনের ব্যাপারে একটি চুক্তি করেছে। মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে একটি মৈত্রী জোট গড়ার উদ্যোগ নিয়েছিল ভারত। এই জোটে মরিশাস ও সিসিলিকে পর্যবেক্ষক হিসেবে রাখারও উদ্যোগ নেওয়া হয়।
এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চল তথা ভারত মহাসাগর আগামী দিনে প্রত্যক্ষ করবে এক ধরনের প্রভাব বিস্তার করার প্রতিযোগিতা। এই দুটি অঞ্চলে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু ‘সামরিক তত্পরতা’ লক্ষণীয়। দক্ষিণ চীন সাগরে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার সমন্বয়ে একটি সামরিক ঐক্যজোট গঠিত হয়েছে। উদ্দেশ্য হচ্ছে চীনের ওপর ‘চাপ’ প্রয়োগ করা। অন্যদিকে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীন তার নৌবাহিনীর তত্পরতা বাড়িয়েছে। দক্ষিণ চীন সাগর থেকে মালাক্কা প্রণালি হয়ে ভারত মহাসাগর অতিক্রম করে অ্যারাবিয়ান গালফ পর্যন্ত যে সমুদ্রপথ, তার নিয়ন্ত্রণ নিতে চায় চীন। কারণ এ পথ তার জ্বালানি সরবরাহের পথ। চীনের জ্বালানি চাহিদা প্রচুর। এদিকে ভারতও ভারত মহাসাগরে তার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চায়। ভারতের নৌবাহিনীর ‘নিউ ইস্টার্ন ফ্লিট’-এ যুক্ত হয়েছে বিমানবাহী জাহাজ। রয়েছে পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন। আন্দামান ও নিকোবরে রয়েছে তাদের ঘাঁটি। ফলে এক ধরনের প্রতিযোগিতা এর মধ্যেই চীন ও ভারতের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে। এশিয়া-প্যাসিফিক ও দক্ষিণ এশিয়ার কর্তৃত্ব নিয়ে চীন ও ভারতের অবস্থান এখন অনেকটা পরস্পরবিরোধী। যেখানে চীনা নেতৃত্ব একটি নয়া ‘মেরিটাইম সিল্করুট’-এর কথা বলছে, সেখানে মোদি সরকার বলছে ‘ইন্দো-প্যাসিফিক ইকোনমিক করিডর’-এর কথা। স্বার্থ মূলত এক ও অভিন্ন—এ অঞ্চলে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা। আর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে গিয়েই এশিয়ার এ দুটি বড় দেশের মধ্যে দ্বন্দ্ব অনিবার্য। আর এটাকেই কাজে লাগাতে চায় যুক্তরাষ্ট্র।
একসময় মার্কিনি গবেষকরা একটি সম্ভাব্য চীন-ভারত অ্যালায়েন্সের কথা বলেছিলেন। জনাথন হোলসলাগ ফরেন পলিসি ম্যাগাজিনে লিখিত একটি প্রবন্ধে Chindia (অর্থাৎ চীন-ভারত)-এর ধারণা দিয়েছিলেন। চীনা প্রেসিডেন্টের ভারত সফরের (২০১৪ সাল) পর ধারণা করা হয়েছিল যে দেশ দুটি আরো কাছাকাছি আসবে। কিন্তু শ্রীলঙ্কার অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ভারতের ভূমিকা, চীন-ভারত সীমান্ত নিয়ে দ্বন্দ্ব ও সর্বশেষ চীনের আন্দামান-নিকোবর অঞ্চল দাবি দেখে মনে হয়েছে এই সম্ভাবনা এখন ক্ষীণ। নতুন আঙ্গিকে ‘ইন্ডিয়া ডকট্রিনে’র ধারণা আবার ফিরে এসেছে। এই ‘ইন্ডিয়া ডকট্রিন’ মনরো ডকট্রিনের দক্ষিণ এশীয় সংস্করণ। অর্থাৎ দক্ষিণ এশিয়ায় অন্য কারো কর্তৃত্ব ভারত স্বীকার করে নেবে না। একসময় এই এলাকা অর্থাৎ ভারত মহাসাগরীয় এলাকা ঘিরে ‘প্রিমাকভ ডকট্রিন’ (২০০৭ সালে রচিত। শ্রীলঙ্কা, চীন, ইরান ও রাশিয়ার মধ্যকার ঐক্য)-এর যে ধারণা ছিল, শ্রীলঙ্কায় সিরিসেনার বিজয়ের সঙ্গে সঙ্গে এই ধারণা এখন আর কাজ করবে না। ফলে বাংলাদেশ তার পূর্বমুখী ধারণাকে আরো শক্তিশালী করতে বিসিআইএম (বাংলাদেশ, চীনের ইউনান রাজ্য, ভারতের সাতবোন, মিয়ানমার) যে আগ্রহ দেখিয়েছিল, তাতে এখন শ্লথগতি আসতে পারে। সামরিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তার প্রশ্নে ভারত এখন আর বিসিআইএম ধারণাকে ‘প্রমোট’ করবে না। আর বাংলাদেশের একার পক্ষে চীন ও মিয়ানমারকে সঙ্গে নিয়ে ‘বিসিএম’ ধারণাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াও সম্ভব হবে না। ভারত এখন উপ-আঞ্চলিক জোট বিবিআইএনের কথা ভাবছে।
ভারতের কর্তৃত্ব করার প্রবণতা এ অঞ্চলের দৃশ্যপটকে আগামী দিনে বদলে দিতে পারে। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকাও লক্ষণীয়। ভারত বড় অর্থনীতির দেশে পরিণত হয়েছে। এখানে মার্কিন বিনিয়োগ বাড়ছে। ফলে এখানে মার্কিনি স্বার্থ থাকবেই। এ অঞ্চলে মার্কিনি স্বার্থের অপর একটি কারণ হচ্ছে চীন। চীনকে ‘ঘিরে ফেলা’র একটি অপকৌশল নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এগিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যেই ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র একটি ‘কৌশলগত সম্পর্কে’ নিজেদের জড়িত করেছে। এই দুই দেশের স্বার্থ এক ও অভিন্ন। তবে ভারত মহাসাগর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে অবিশ্বাসের জন্ম হওয়া বিচিত্র কিছু নয়।
আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ছাত্ররা জানেন, সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের নৌ স্ট্র্যাটেজি এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলকে ঘিরেই আবর্তিত হচ্ছে। অর্থাৎ একসময় যুক্তরাষ্ট্রের নৌ স্ট্র্যাটেজি শুধু প্যাসিফিক অঞ্চলকে ঘিরে রচিত হলেও এখন তা সম্প্রসারিত হয়েছে ভারত মহাসাগরে। একই স্ট্র্যাটেজির আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে ভারত মহাসাগরকে, যাকে ওবামা আখ্যায়িত করেছেন 'Pivot to Asia' হিসেবে। বাংলাদেশও এই স্ট্র্যাটেজির আওতায়। এই স্ট্র্যাটেজির অন্তর্ভুক্ত চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াও। উল্লেখ করা প্রয়োজন যে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র তার অবস্থান শক্তিশালী করার জন্য এখানে মোতায়েনরত যুক্তরাষ্ট্রের ষষ্ঠ ফ্লিটের ছয়টি যুদ্ধজাহাজকে ভারত মহাসাগরে মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে এ অঞ্চলের গুরুত্ব আরো বেড়েছে। এতে চীনা নেতাদের উদ্বেগ ও শঙ্কা বাড়ছে। অতি সম্প্রতি ওয়াশিংটনে (১ এপ্রিল) যে চতুর্থ পারমাণবিক নিরাপত্তা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে গেল, সেখানে ওবামার সঙ্গে চীনা প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের আলাপচারিতায় চীনা নেতা তাঁদের উদ্বেগ ও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এর কারণ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে Terminal High Altitude Area Defense (THAAD) আলোচনা শুরু করেছে; যদিও বলা হচ্ছে THAAD এক ধরনের মিসাইল প্রতিরক্ষাব্যবস্থা (৪০ থেকে ১৫০ কিলোমিটার উচ্চতায় আগত শত্রুপক্ষের মিসাইল ধ্বংস করা)। কিন্তু চীন মনে করছে, এই প্রতিরক্ষাব্যবস্থা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবহূত হবে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক দক্ষিণ চীন সাগরে যুদ্ধজাহাজ পাঠানোকে চীন মনে করছে তাদের ‘স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বে’র প্রতি এক ধরনের হুমকিস্বরূপ। ওবামা-শি চিনপিং আলোচনায় এই প্রসঙ্গগুলো উত্থাপিত হয়েছে এবং শি চিনপিং এটা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে চীন এ ধরনের ‘কর্মকাণ্ড’ সহ্য করবে না। স্পষ্টতই এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ভূমিকা’ নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
তাতে এটা স্পষ্ট, ওই ভূমিকা এই অঞ্চলে চীনা স্বার্থকে আঘাত করবে। ফলে এ অঞ্চল অর্থাৎ ভারত মহাসাগরভুক্ত অঞ্চলে আগামী দিনগুলোতে যে এক ধরনের প্রভাববলয় বিস্তার করার প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হবে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এর মধ্যেই মিয়ানমারে একটি নয়া সরকার গঠিত হয়েছে। অং সান সু চি আগামী দিনে মিয়ানমারে একটি গুরুত্বপূর্ণ ‘ভূমিকা’ পালন করতে যাচ্ছেন। মিয়ানমারকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ বাড়ছে। মিয়ানমারের জ্বালানিসম্পদ, বিশেষ করে গভীর সমুদ্রে গ্যাস ও তেল প্রাপ্তিকে কেন্দ্র করে মিয়ানমারে আগামী দিনে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এক ধরনের দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হতে পারে। এই জ্বালানিসম্পদের ব্যাপারে আগ্রহ রয়েছে ভারতেরও, যেখানে ভারতের বিনিয়োগ বাড়ছে। স্পষ্টতই ভারত মহাসাগরকে ঘিরে একদিকে ভারত, অন্যদিকে চীন ও মধ্যখানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের নিজ নিজ স্ট্র্যাটেজি ও সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। তবে এই স্ট্র্যাটেজি এই দেশগুলোর স্বার্থে কতটুকু আঘাত করে কিংবা এই স্ট্র্যাটেজি আদৌ কোনো ‘সংঘর্ষের’ পর্যায়ে রূপ নেয় কি না, তা দেখার জন্য আমাদের আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। Daily Kalerkontho 10.04.16

3 comments: