যুক্তরাষ্ট্রে আমরা যখন রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটিক পার্টির জাতীয় কনভেনশন নিয়ে আলোচনায় মগ্ন, ঠিক তখনই এলো ঢাকার কল্যাণপুরে জঙ্গি আস্তানায় পুলিশি অভিযানের খবর। একটি টিভি চ্যানেল স্কাইপিতে আমন্ত্রণ জানাল এ বিষয়ে কথা বলার জন্য। বেশ কিছুটা সময় আলাপ হল বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থান ও জঙ্গিবাদের বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট নিয়ে। ঢাকার কল্যাণপুরে জঙ্গিদের আস্তানায় অভিযানের খবর এলো এমন একসময়, যখন সিরিয়া-ইরাক ছাড়াও বিশ্বের বেশ কটি দেশের বড় শহরে জঙ্গি হামলা হয়েছে, যেখানে তথাকথিত ইসলামিক স্টেটের সংশ্লিষ্টতার দাবি উঠেছে। ফ্রান্সের নরম্যান্ডিতে জঙ্গিরা গির্জায় প্রবেশ করে ধর্মযাজককে গলা কেটে হত্যা করেছে। এর আগে এই ফ্রান্সেরই নিস শহরে (১৪ জুলাই) এক ট্রাকচালকের বেপরোয়া গাড়ি চালনা ও গুলিবর্ষণে মারা গেছেন ৮৪ জন সাধারণ মানুষ। ১৮ জুলাই মিউনিখ শহরে জনৈক বন্দুকধারীর গুলিতে ১০ জন মারা গেলে এর সঙ্গে আইএস-সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত না হলেও আন্সবাক শহরে উন্মুক্ত সঙ্গীত উৎসবে আত্মঘাতী বোমা হামলায় অভিযুক্ত আইএস। সোমালিয়ার রাজধানী মোগাদিসুতে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে মারা গেছেন ১৩ জন সাধারণ মানুষ। এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে যারা জড়িত, তাদের সবার সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে আইএসের। এর আগে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের অরল্যান্ডে, তুরস্কের ইস্তান্বুল বিমানবন্দরে, ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জার্কাতায় কূটনৈতিক পাড়ায়। প্রতিটি ঘটনায় ঘুরেফিরে একটি নামই আসছে- আইএস। আইএস এখন এক ধরনের ‘আতংকের’ নাম।
সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে মুসলমানদের এখন তীর্যক দৃষ্টিতে দেখা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে। খোদ রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প মন্তব্য করেছেন একাধিকবার। এতদিন তিনি বলেছেন মুসলমানদের নিয়ে। এবার ফ্রান্স ও জার্মানিতে সংঘটিত হওয়া সন্ত্রাসী ঘটনার পর আক্রমণ করলেন ফ্রান্স আর জার্মানির নেতৃবৃন্দকে। বললেন, এ জন্য তারা নিজেরা দায়ী! ট্রাম্প বোঝাতে চাইছেন এ দুটো দেশে বারবার সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটছে। কারণ তারা সিরীয় শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছে। আগামীতে তিনি এই দুটো দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশাধিকারের ব্যাপারে বিশেষ সতর্কতা নেয়া হবে বলেও জানিয়েছেন! কী ঔদ্ধত্যপূর্ণ কথাবার্তা ডোনাল্ড ট্রাম্পের। শুধু মুসলমানবিদ্বেষীই তিনি নন, এখন তিনি ইউরোপবিদ্বেষীও হয়ে উঠছেন ধীরে ধীরে। আর তার ক্ষেত্র তৈরি করেছে আইএস। সুযোগ করে দিচ্ছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো কট্টরপন্থীদের মুসলমানবিরোধী একটা অবস্থান নিতে।
এমনই এক পরিস্থিতিতে আমরা দেখলাম ঢাকার কল্যাণপুরে জঙ্গি আস্তানায় পুলিশি অভিযানের খবর। এটা কোনো জঙ্গি হামলার ঘটনা ছিল না, ঢাকার আর্টিজান বেকারির হামলার মতো। তাই আইএসের পক্ষ থেকে কোনো বিবৃতি থাকবে না বলেই আমার ধারণা। তবে এই হামলা ও ৯ জন জঙ্গির মৃত্যুর খবর অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। এক. আইএস বলি আর জেএমবি বলি, জঙ্গিরা যে বাংলাদেশে তৎপর, তা তারা প্রমাণ করল। হলি আর্টিজান ঘটনার মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে কল্যাণপুরে একটা আস্তানা গড়ে তোলার বিষয়টি প্রমাণ করে জঙ্গিরা একটা বড় ধরনের ‘হামলার’ প্রস্তুতি নিচ্ছিল। গোয়েন্দারা সক্রিয় থাকায় তাদের সেই তৎপরতা বাস্তবে রূপ নেয়নি সত্য। কিন্তু আশংকা থেকেই গেল, তারা আবার অন্যত্র সংগঠিত হতে পারে এবং যে কোনো স্থাপনায় হামলা চালাতে পারে। কলকাতার একটি জনপ্রিয় বাংলা দৈনিকে খবর প্রকাশিত হয়েছিল, ঢাকার আশপাশে জঙ্গিরা ১৯টি আস্তানা গড়ে তুলেছে। কল্যাণপুরের ঘটনা প্রমাণ করল ওই সংবাদের পেছনে সত্যতা আছে। এখন গোয়েন্দাদের দায়িত্ব ঢাকার আশপাশে নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য যেসব আবাসস্থল গড়ে উঠেছে (বাড্ডা, বাসাবো, আদাবর ইত্যাদি) সেসব জায়গায় গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো।
দুই. পুলিশের পক্ষ থেকে অনেক আগেই প্রতিটি থানাধীন এলাকায় বসবাসরতদের ডাটাবেজ তৈরি করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। আমার ধারণা, সেই কার্যক্রমে কিছুটা হলেও স্থবিরতা এসে গেছে। না হলে কল্যাণপুরের মতো একটি নিুমধ্যবিত্ত এলাকায় একটি বাড়ির মালিক ভাড়াটিয়াদের সম্পর্কে তথ্য দেবে না, এটা কী করে সম্ভব হল? এ ঘটনা প্রমাণ করল ভাড়াটিয়াদের সম্পর্কে তথ্য নেয়ার উদ্যোগটি সঠিক ছিল। প্রাপ্ত তথ্যগুলো দ্রুত বিচার-বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন।
তিন. আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এখন গুরুত্ব দিতে হবে নতুন আবাসিক এলাকাগুলোর দিকে, যেখানে শত শত মেস তৈরি করে সীমিত আয়ের মানুষের বসবাসের সুযোগ করে দিয়েছে কিছু বাড়িওয়ালা। জঙ্গিরা এসব জায়গা বেছে নিচ্ছে। সাধারণত উচ্চমধ্যবিত্তের জন্য যেসব আবাসিক এলাকা রয়েছে (গুলশান, ধানমণ্ডি), সেখানে উচ্চ ভাড়ার কারণে জঙ্গিরা বাসা ভাড়া নেবে না। তাদের টার্গেট থাকে নিুমধ্যবিত্ত এলাকার দিকে।
চার. পুলিশের পক্ষে প্রতিটি বাসায় যাওয়া সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে পাড়ায় পাড়ায় স্থানীয় নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সঙ্গে সমন্বয় করে স্থানীয় মুরুব্বিদের সঙ্গে নিয়ে একটি ‘জঙ্গিবিরোধী সেল’ গঠন করা যেতে পারে। কিন্তু এতে যদি ‘রাজনীতি’ ঢুকে যায়, যদি বিরোধীদলীয় কর্মীদের জঙ্গি হিসেবে চিহ্নিত করার উদ্যোগ নেয়া হয়(!), তাহলে এটা কোনো ফল দেবে না।
পাঁচ. যারা নিয়মিত মসজিদে নামাজ আদায় করে, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের একটা বড় অংশ, তাদের দিকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে তাকালে তাও কোনো ফল দেবে না। যারা নিয়মিত মসজিদে যায়, তারা মৌলবাদী(!) এটা আমি বিশ্বাস করি না। ইসলামের সঙ্গে জঙ্গিবাদের কোনো সম্পর্ক নেই। ইসলাম জঙ্গিবাদকে সমর্থন করে না। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, ইসলামের নামেই এই জঙ্গিবাদ বিস্তার হচ্ছে। এবং আমি অনেক তথ্য যাচাই করে দেখেছি, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে যারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত এবং জঙ্গি তৎপরতা চালাতে গিয়ে মারা গেছে, তারা কেউই ব্যক্তিগত জীবনে নামাজি ছিল না। ধর্ম-কর্মও করত না। ফলে যারা নিয়মিত নামাজ আদায় করে, তাদের ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখলে আমরা ভুল করব।
ছয়. হলি আর্টিজান, শোলাকিয়া এবং এখন কল্যাণপুর প্রতিটি ক্ষেত্রে দেখা গেছে উচ্চশিক্ষিত, ধনীর দুলাল এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। কল্যাণপুরের ঘটনায় যেসব জঙ্গি নিহত হয়েছে, আমার ধারণা, তাদের মধ্যে উচ্চশিক্ষিত তরুণরাও আছে। এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীদের দিকে নজরদারি বাড়ানোটা জরুরি। এ ক্ষেত্রে যেটা করা প্রয়োজন তা হচ্ছে, প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে (সরকারি ও বেসরকারি) একটি সেল গঠন করতে হবে, তাদের কাজ হবে অনিয়মিত ছাত্রদের দিকে নজরদারি বাড়ানো। দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যৌন নির্যাতন বেড়ে যাওয়ায় উচ্চ আদালতের নির্দেশে প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি যৌন নির্যাতন প্রতিরোধ সেল গঠন করা হয়েছিল। সেই আদলে একটি জঙ্গি পর্যবেক্ষণ সেল গঠন করা যায়। সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সঙ্গে কথা বলেছেন। কিন্তু এ ব্যাপারে করণীয় কী, সে ব্যাপারে কোনো সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত হয়নি। ‘লোকদেখানো’ এ ধরনের সভার আয়োজন করে পত্রিকায় সংবাদ হওয়া যায় বটে; কিন্তু তাতে মূল সমস্যা যা ছিল, তা রয়েই যায়। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজন দূরদর্শিতা আর দক্ষতা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব আজ অনেক। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ছাত্র মাসের পর মাস ক্লাসে অনুপস্থিত থাকার পরও ‘রাজনৈতিক বিবেচনায়’ তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না কখনোই।
সাত. জঙ্গি কার্যক্রমের সঙ্গে একটি অর্থের প্রশ্ন জড়িত। কারা জঙ্গিদের অর্থ জোগায়, কীভাবে তারা বিস্ফোরক সংগ্রহ করে, তা জানা জরুরি। বিদেশ থেকে অর্থ আসতে পারে। অভ্যন্তরীণভাবেও অর্থের জোগান থাকতে পারে। কোনো কোনো এনজিওর নামেও অর্থ আসতে পারে। এ ক্ষেত্রে নজরদারি বাড়ানোটা খুবই জরুরি।
আট. টিভি টকশোতে আলোচনায় কোনো কোনো বক্তার মুখে ‘রেজিম চেঞ্জ’ বা সরকার পরিবর্তনের কথা আমি শুনেছি। অর্থাৎ তারা বলতে চেয়েছেন, জঙ্গি কার্যক্রমের একটি মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সরকারের পরিবর্তন। এটি একটি ভুল ব্যাখ্যা। হলি আর্টিজানে ১৭ জন বিদেশীকে হত্যা করে কখনও কোনো দেশে সরকার পরিবর্তন করা যায়নি। বাংলাদেশেও জঙ্গিদের টার্গেট সরকার পরিবর্তন নয়, বরং তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে ‘ইসলামী খেলাফত’ প্রতিষ্ঠার আন্দোলন জোরদার করা। বৃহত্তর পরিসরে আইএস যে ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছে, সেই আদর্শেই স্থানীয় জঙ্গিরা ‘মোটিভেটেড’ বা অনুপ্রাণিত হয়েছে। আমাদের ব্যর্থতা এখানেই যে, এসব বিভ্রান্ত তরুণদের ভুলগুলো আমরা ভাঙাতে পারিনি।
নয়. তরুণদের একটা অংশের জঙ্গিবাদী আদর্শ গ্রহণ করার পেছনে অনেক কারণের মধ্যে হতাশা, বেকারত্ব, রাজনৈতিক অস্থিরতা অন্যতম। আমরা ফ্রান্সের দৃষ্টান্ত থেকে দেখেছি, সেখানে নর্থ আফ্রিকা থেকে আসা ইমিগ্র্যান্টরা, যারা পারিবারিকভাবে ফ্রান্সের নাগরিকত্ব গ্রহণ করার পরও ‘বেকারত্ব’ ও ‘ছদ্ম বেকারত্ব’ তাদের জঙ্গিবাদের দিকে ঠেলে দিয়েছিল। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এমন বেকারত্ব তরুণ সমাজের একটা অংশকে হতাশাগ্রস্ত করে তুলতে পারে। বাংলাদেশে কর্মজীবী মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। পৃথিবীর কোনো দেশেই সরকার একমাত্র চাকরিদাতা নয়। আমাদের দেশে বেসরকারি খাত বিকশিত হওয়ার সুযোগ ছিল, তা হয়নি। উপরন্তু আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় মারাত্মক সব ত্রুটি রয়েছে। এই শিক্ষা ব্যবস্থা বেশি মাত্রায় ‘রাজনীতিনির্ভর’। ‘রাজনৈতিক বিবেচনায়’ একশ’র ওপর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, যেখানে ‘সার্টিফিকেট’ বিক্রির উদ্দেশ্যই প্রধান। ৩৭টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এতে করে বাড়ছে শিক্ষাবৈষম্য। এই বৈষম্য দূর করার ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন তথা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোনো উদ্যোগ আমি কখনও দেখিনি। দক্ষ নেতৃত্বের অভাবে যা হয়, তা-ই হয়েছে। মঞ্জুরি কমিশনের কোনো ‘ভিশন’ নেই। তারা সবাই যেন সেখানে ‘চাকরি’ করেন! তাই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র বিবিএ’র একখানা সার্টিফিকেট সংগ্রহ করে যখন ‘বেকার’ থাকে, তখন তার মধ্যে হতাশা আসতে বাধ্য। আর এ সুযোগটিই নেয় ‘অদৃশ্য শক্তি’। এরা হতাশাগ্রস্ত তরুণদের ‘হুর-পরী’দের কথা শোনায়। রিক্রুট করে। ২৪-২৫ বছরের একটি যুবকের এতে করে বিভ্রান্ত হওয়া স্বাভাবিক। আমাদের দুর্ভাগ্য, এসব তরুণকে যারা রিক্রুট করে সেসব ‘অদৃশ্য শক্তি’কে আমরা চিহ্নিত করতে পারিনি। এখানেই বোধহয় আমাদের বড় ত্রুটি। রাজনৈতিক বিবেচনায় কখনও কখনও এসব ‘অদৃশ্য শক্তি’কে চিহ্নিত করা হয় বটে, কিন্তু ‘মূল শক্তি’ থেকে যায় আলোচনার বাইরে।
দশ. আমাদের দেশে ‘তাবলিগ জামাত’-এর নাম করে বিশেষ কয়েকটি দেশ থেকে প্রতিবছর প্রচুর মুসল্লি এ দেশে আসেন এবং থেকে যান অবৈধভাবে। বিশেষ করে মধ্য এশিয়ার দেশগুলো থেকে আসা নাগরিকদের দিকে দৃষ্টি দেয়া এখন প্রয়োজন। এসব অঞ্চল থেকে প্রচুর লোক আইএসে যোগ দিয়েছে। তুরস্কের ইস্তান্বুলে আত্মঘাতী বোমা হামলায় এরা জড়িত ছিল। আমি ওসব অঞ্চল থেকে আসা মুসল্লিদের সঙ্গে আমাদের তরুণদের ঢাকাসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইসলাম প্রচার করতে দেখেছি। এদের দিকে নজরদারি বাড়ানো দরকার। এদের দিয়ে অর্থ সরবরাহ, জঙ্গি তৎপরতা, প্রশিক্ষণ ইত্যাদি দেয়া হয়। আপাতত সীমিত সময়ের জন্য নির্দিষ্ট কিছু দেশের মুসল্লিদের জন্য ‘ভিসা সীমাবদ্ধতা’ থাকা উচিত। কিংবা তাদের দেয়া ঠিকানা, তদের অবস্থান, কর্মকাণ্ড মনিটরিং করা উচিত। এ ক্ষেত্রে আমাদের দুর্বলতা আছে, এটা স্বীকার করতেই হবে।
এগারো. একজন তরুণের পক্ষে বিস্ফোরক ব্যবহার, স্থানীয় গ্রেনেড তৈরি কিংবা অস্ত্র ব্যবহার করার কথা নয়। এর অর্থ, এদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছিল। তাহলে প্রশ্ন ওঠে, প্রশিক্ষণটা হয়েছিল কোথায়? এখানে একটা বিষয় লক্ষণীয়। হলি আর্টিজানে যারা হামলা চালিয়েছিল, তাদের কেউ কেউ বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী কোনো কোনো জেলায় কিছুদিন থেকেছে। এর অর্থ কী? পাঠক, ২০১৪ সালে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার খাগড়াগড়ে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনাটি স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। ওই বোমা বিস্ফোরণের পর ভারতীয় গোয়েন্দারা জানতে পারে এর সঙ্গে বাংলাদেশের জেএমবি জড়িত। এর পরপরই জানা গেল পশ্চিমবঙ্গের বেশ কয়টি সীমান্তবর্তী জেলায় জেএমবির ক্যাডারদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। ফলে এটা স্পষ্ট, বাংলাদেশী তরুণদের রিক্রুট করে কৌশলে সীমান্ত অতিক্রম করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের ওইসব অঞ্চলে। সেখানে তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে বাংলাদেশের ভেতরে। এ বিষয়টির দিকে নজর দেয়া প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদানের ব্যাপারটি জরুরি হয়ে পড়েছে।
হলি আর্টিজান, শোলাকিয়ার পর কল্যাণপুরের ঘটনায় অন্তত একটি বিষয় আমার কাছে স্পষ্ট- জেএমবির একটা অংশ ওই অপতৎপরতা তথা জঙ্গি কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত। তাদের সঙ্গে বাইরের একটি ‘শক্তি’র যোগাযোগ রয়েছে। বাংলাদেশে একটি ভীতি সৃষ্টি করাই হচ্ছে তাদের লক্ষ্য। এতে করে তারা আইএসের আরও কাছাকাছি যেতে চাইছে। জেএমবিই মূলত আইএসের নাম ব্যবহার করছে এবং ‘বোকো হারামের’ (নাইজেরিয়া) মতো আইএসের প্রতি তাদের আনুগত্য প্রকাশ করছে। আমাদের গোয়েন্দারা কল্যাণপুরের ঘটনায় সফল হয়েছেন। কিন্তু জঙ্গি দমনে যেতে হবে বহুদূর। জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। গড়ে তুলতে হবে জাতীয় ঐক্য।
ডালাস, যুক্তরাষ্ট্র
Daily Jugantor
31.07.2016