তুরস্কে একটি ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের পর যে প্রশ্নটি এখন বড় হয়ে উঠেছে, তা হচ্ছে তুরস্কের গণতন্ত্র এখন কোন পথে? প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ান এই সেনা অভ্যুত্থান ব্যর্থ করে দিতে সমর্থ্য হলেও এই সেনা অভ্যুত্থান তুরস্কের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির জন্য খুব ভালো খবর নয়। তুরস্কের সেনাবাহিনী একটি শক্তিশালী ‘শক্তি’ সে দেশে। আধুনিক তুরস্কের জনক কামাল পাশা নিজে ছিলেন সেনাবাহিনীর সদস্য। ১৯২৩ সালে তিনি যে আধুনিক তুরস্ক রাষ্ট্রটির জন্ম দিয়েছিলেন, সেখানে তিন তিনবার সেনাবাহিনী সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা গ্রহণ করেছিল। ১৯৬০, ১৯৭১ ও ১৯৮০ সালে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা গ্রহণের পর দীর্ঘদিন সেনাবাহিনী ক্ষমতার বাইরে থেকেছে। তবে সেনাবাহিনীর সঙ্গে এরদোয়ান তথা জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির সম্পর্ক খুব যে ভালো, তা বলা যাবে না। সেনাবাহিনীর ভেতরে নানা অসন্তোষ আছে। এরদোয়ান প্রশাসনের দুর্নীতি, স্বয়ং এরদোয়ানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ, এমনকি সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেটের জঙ্গিদের পরোক্ষ সমর্থন, তুরস্কে জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা ও জঙ্গিবাদ দমনে ব্যর্থতা ইতাদি কারণে সেনাবাহিনীর তরুণ অফিসারদের মধ্যে ক্ষোভ আছে। আর এই ক্ষোভেরই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল বিমানবাহিনীর কিছু অফিসারের ক্ষমতা গ্রহণ করার উদ্যোগের মধ্য দিয়ে। সেটা ব্যর্থ হয়েছে। মূলত সেনাপ্রধান এই সেনা অভ্যুত্থান সংঘটিত করেননি এবং গ্যারিসন কমান্ডারদের তাতে সমর্থনও ছিল না। তথ্যগতভাবে দেখা যায়, খুব কম ক্ষেত্রেই এ ধরনের সামরিক অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়। তুরস্কে তাই সেনা অভ্যুত্থান সফল হয়নি। বিংশ শতাব্দীতে ষাটের দশকে আফ্রিকার কোনো কোনো দেশে জুনিয়র অফিসাররা সেনা অভ্যুত্থান সংঘটিত করে সফল হলেও সাম্প্রতিক সময়ে সামরিক অভ্যুত্থানের খবর তেমন একটা পাওয়া যায় না। বরং দুটি বড় শক্তি-যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া এখন আর অতীতের মতো কোনো সামরিক অভ্যুত্থান সমর্থন করে না। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন সত্তরের দশকে আফ্রিকায় সেনাবাহিনীর অফিসারদের দিয়ে ‘সমাজতন্ত্র’ বিনির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিল (ইথিওপিয়া, মোজাম্বিক, সিয়েরা লিওন ইত্যাদি)। এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। ফলে তুরস্কের বিমানবাহিনীর তরুণ অফিসাররা মূলত যে উদ্যোগ নিয়েছিলেন, তাতে সব সিনিয়র জেনারেলের কোনো সমর্থন ছিল না। এখন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীর সঙ্গে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের সম্পর্ক কোন পর্যায়ে গিয়ে উন্নীত হয়, সেটা দেখার বিষয়। এমনিতেই সেনাবাহিনীতে কিছুটা অসন্তোষ আছে। ২০১০ সালে তিনি ৪০ জন সেনা অফিসারকে (চারজন অ্যাডমিরাল, একজন জেনারেলসহ) গ্রেপ্তার করে তাঁদের বিচার করেছিলেন ‘অভ্যুত্থানে প্ররোচনা’ দেওয়ার অভিযোগে। উপরন্তু সেনাবাহিনী মূলত ধর্মনিরপেক্ষ নীতি অনুসরণ করে আসছে। স্বাধীন তুরস্কে কামাল পাশা (জাতির পিতা, আতাতুর্ক) যে সেনাবাহিনীর জন্ম দিয়েছিলেন, সেই আদর্শ থেকে (ধর্মনিরপেক্ষতা) সেনাবাহিনী আজও সরে আসেনি। অন্যদিকে একেপি পার্টি ও এরদোয়ান নিজে ইসলামপন্থী। এখানে ইসলামী আদর্শ আর ধর্মনিরপেক্ষতার একটা দ্বন্দ্ব আছে। ফলে ছয় লাখ ৪০ হাজার সদস্যবিশিষ্ট সেনাবাহিনীর সঙ্গে তাঁর দ্বন্দ্ব থাকাটা স্বাভাবিক। এবারে তিনি অভ্যুত্থান নস্যাৎ করে দিতে পেরেছেন বটে। কিন্তু ভবিষ্যৎ এ সেনাবাহিনীকে তিনি কতটা আস্থায় রাখতে পারবেন, সেটা একটা প্রশ্ন বটে।
এরদোয়ান যেভাবে শাসনকার্য পরিচালনা করছেন, সে ব্যাপারে অনেকেরই আপত্তি আছে। তাঁর বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগের একটি হচ্ছে, তিনি ক্ষমতা নিজের হাতে রাখতে চান। ২০০৩ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ২০১৪ সাল পর্যন্ত তিনি একটানা প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে গেছেন। কিন্তু সংবিধান তাঁকে আরো একবার দায়িত্ব পালনের সুযোগ না দেওয়ায় তিনি ২০১৪ সালের ২৮ আগস্ট প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেন। একপর্যায়ে নিজের ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করতে তিনি প্রেসিডেন্টশাসিত সরকারব্যবস্থা প্রবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। ফলে তিনি তাঁর এক সময়ের বিশ্বস্ত ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী আহমেদ দাভুলগলুর সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে যান এবং দাভুলগলুকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেন। দ্বিতীয়ত, তিনি রাজধানী আঙ্কারার একটি পাহাড়ে প্রেসিডেন্ট হাউস নির্মাণ করছেন, যার পরিচিতি ‘হোয়াইট প্যালেস’ হিসেবে। প্রায় এক হাজার কক্ষবিশিষ্ট এই বাড়িটি ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত মার্কিন প্রেসিডেন্টের বাসস্থান হোয়াইট হাউসের চেয়েও বড়। নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল ৬১৫ মিলিয়ন ডলার, বাংলাদেশি টাকায় প্রায় চার হাজার ৯২০ কোটি টাকা। এত বিপুল অর্থ ব্যয় করে প্রাসাদতুল্য এ ধরনের একটি ভবন তৈরি করা আদৌ উচিত কি না, সে প্রশ্ন কোনো কোনো মহলে উঠেছে। তৃতীয়ত, এরদোয়ানের মন্ত্রিসভার অনেক সদস্য ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা সরাসরি দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে গেছেন। একেপি দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের এই দুর্নীতি তিনি রোধ করতে পারেননি। চতুর্থত, ইরানের বিরুদ্ধে যখন আন্তর্জাতিক অবরোধ বজায় ছিল, তখন তুরস্ক ইরান থেকে তেল ও গ্যাস আমদানি করে অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করেছে। একই কথা প্রযোজ্য সিরিয়ার আইএসের (ইসলামিক স্টেট) ক্ষেত্রেও। সিরিয়া ও ইরাকের অনেক তেলক্ষেত্র দখল করে নিয়েছিল আইএস বিদ্রোহীরা। তারা ওই তেলক্ষেত্র থেকে তেল উত্তোলন করে অবৈধপথে তুরস্ক দিয়ে বিদেশে রপ্তানি করত। এই তেল বিক্রি ছিল আইএসের অর্থ আয়ের অন্যতম উৎস। সারা বিশ্ব যখন মোটামুটিভাবে আইএসের জঙ্গি তত্পরতার ব্যাপারে উত্কণ্ঠিত, তখন তুরস্ক আইএসের আয়ের ব্যবস্থা করে দিয়েছিল। এমন কথাও শোনা যায়, জঙ্গিদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হয় তুরস্কের কোনো কোনো গোপন আস্তানায়(?)। পঞ্চমত, খোদ এরদোয়ানের বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ, তিনি নিজেকে এরই মধ্যে তুরস্কের ‘সুলতান’ ভাবতে শুরু করেছেন। তুরস্কের অটোমান সাম্রাজ্য ১৮০৮ থেকে ১৯২২ সাল পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। একদিকে দক্ষিণপূর্ব ইউরোপ, পশ্চিম এশিয়া, মধ্য এশিয়ার ককেসিয়ান অঞ্চল; অন্যদিকে উত্তর আফ্রিকা পর্যন্ত বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন তুরস্কের শাসকরা, যাঁরা সুলতান হিসেবে পরিচিত ছিলেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অবসানের পরপরই এই রাজতন্ত্রের অবসান ঘটে। ১৯২২ সালের ১ নভেম্বর অটোমান সাম্রাজ্যের অবসান ঘোষণা করা হয়। এরপর কামাল পাশার নেতৃত্বে আধুনিক তুরস্কের গোড়াপত্তন হয়। এখন এরদোয়ান যেভাবে শাসনকার্য পরিচালনা করছেন, যেভাবে মুসলিম বিশ্বের নেতৃত্ব দেওয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করছেন, তাতে করে কেউ কেউ তাঁকে সাবেক অটোমান শাসকদের সঙ্গে তুলনা করছেন। ষষ্ঠত, গেল বছর তুরস্কের জনপ্রিয় পত্রিকা ‘জামান’-এর নিয়ন্ত্রণভার সরকারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। অর্থাৎ দৈনিক পত্রিকাটি সরকারীকরণ করা হয়। এর মাধ্যমে তিনি মিডিয়ার ওপর তাঁর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন।
তবে এটা স্বীকার করতেই হবে তিনি যথেষ্ট জনপ্রিয়। নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা তাঁর আছে। রাজনীতি বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে ‘ক্যারিসমেটিক’ বা সম্মোহনী নেতৃত্ব বলে, সেই সম্মোহনী নেতৃত্ব তাঁর রয়েছে। মুসলিমপ্রধান দেশগুলোকে এক প্লাটফর্মে নিয়ে আসার এক মহাপরিকল্পনা তাঁর রয়েছে। চীনের মতোই পুরনো ‘সিল্ক রোড’কে তিনি পুনরুজ্জীবিত করতে চান। তুরস্কে আমি দেখেছি আফ্রিকার অনেক গরিব দেশের শিশুদের তুরস্ক সরকার আশ্রয় দিয়েছে। ইসলামিক মতাদর্শের প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস থাকলেও তিনি ওয়াহাবি বা জিহাদি মতাদর্শে বিশ্বাসী নন। এক সময়ের ফুটবল খেলোয়াড় এরদোয়ান তাঁর রাজনৈতিক জীবন গড়ে তুলেছেন ইসলামিক ওয়েলফেয়ার পার্টির নেতা নেকমাতিন এরবাকনের ছত্রচ্ছায়ায়। তিনি ছিলেন প্রাচীন নগরী ইস্তাম্বুলের জনপ্রিয় মেয়র। এই ইস্তাম্বুলই হচ্ছে তাঁর ‘ক্ষমতার ঘাঁটি’। যখন অভ্যুত্থানকারীরা আঙ্কারার বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়েছিল, তখন তিনি ছিলেন অবসরকালীন ছুটিতে। তিনি কর্মীদের আহ্বান জানিয়েছিলেন রাস্তায় অবস্থান নিতে। আর হাজার হাজার সমর্থক ইস্তাম্বুলের রাস্তায় অবস্থান নিয়ে অভ্যুত্থানকারীদের ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দিয়েছে। এখানে বলা দরকার, নেকমাতিন এরবাকনের নেতৃত্বে ইসলামিক ওয়েলফেয়ার পার্টি ‘অতি ইসলামিক’ ও তুরস্কের সংবিধানের মূলধারার (অর্থাৎ ধর্মনিরপেক্ষতার) পরিপন্থী হওয়ায় দলটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল, যা কি না সেনাবাহিনী চেয়েছিল। দলটি নিষিদ্ধ ঘোষিত হওয়ায় ওই দলের সমর্থকরা প্রথমে ভার্চু পার্টি গঠন করে এবং পরে গঠন করে জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি, যা একেপি নামেও পরিচিত। আবদুল্লাহ গুল ও এরদোয়ান একেপি পার্টি গঠনের উদ্যোক্তা। ২০০২ সালের নির্বাচনে একেপি পার্টি বিজয়ী হওয়ায় আবদুল্লাহ গুল প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। এরদোয়ান তখন ছিলেন জেলে। একটি কবিতা আবৃত্তি করার অভিযোগে, সেখানে তিনি তুরস্কের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রকে কটাক্ষ করেছিলেন, তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। একেপি পার্টি সরকার গঠন করে তাঁর সাজা মওকুফ করে দেয়। তিনি উপনির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সংসদে আসেন, প্রধানমন্ত্রী হন আর আবদুল্লাহ গুল হন প্রেসিডেন্ট। সেই থেকে তাঁর যাত্রা শুরু। ২০১৪ সাল পর্যন্ত তিনি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে তিনি আর প্রধানমন্ত্রী হতে পারেননি। হয়েছেন প্রেসিডেন্ট। এবং সংবিধানে পরিবর্তন এনে তুরস্ককে রাষ্ট্রপতিশাসিত একটি দেশে পরিণত করেছেন। দেশটিতে একজন প্রধানমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি কেবিনেট থাকলেও মূল ক্ষমতা প্রেসিডেন্টের হাতে।
এখন ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানের পর সন্দেহাতীতভাবে এরদোয়ানের হাত আরো শক্তিশালী হয়েছে। একটি শক্তিশালী প্রেসিডেন্সি কি তুরস্কের গণতন্ত্রকে আরো উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারবে? একটি জিনিস অবশ্য লক্ষণীয় আর তা হচ্ছে এরদোয়ান আর একেপি পার্টির ক্ষমতা পরিচালনা নিয়ে নানা প্রশ্ন ও বিতর্ক থাকলেও সংসদে সব বিরোধী দল একত্রে সামরিক অভ্যুত্থানের উদ্যোগের সমালোচনা করেছে। এরদোয়ানের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানও সব বিরোধী দলকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। গণতন্ত্রের জন্য এটি একটি বার্তা। জাতীয় ঐক্যের প্রশ্নে জাতি যদি বিভক্ত থাকে, তাহলে গণতন্ত্র শক্তিশালী হয় না। তুরস্কের গণতন্ত্র মুখ থুবড়ে পড়েনি, একটি ধাক্কা খেয়েছে। এ ক্ষেত্রে জাতীয় ঐক্য বড় প্রয়োজন। তবে সেই সঙ্গে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানেরও দায়িত্ব রয়েছে অনেক। ‘জনগণই সব ক্ষমতার উৎস’ এটা তুরস্কের জনগণ প্রমাণ করেছে। কিন্তু ব্যক্তিস্বাধীনতা, আইনের শাসন, মিডিয়ার স্বাধীনতা, স্বাধীন বিচার বিভাগ—এসব যদি নিশ্চিত করা না যায়, তাহলে সত্যিকার গণতন্ত্রের স্বাদ তুরস্কের জনগণ পাবে না। অভ্যুত্থান-পরবর্তী তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের কাছে প্রত্যাশা তাই অনেক বেশি
Daily Kalerkontho
19.07.2016
-f
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
0 comments:
Post a Comment