রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

কোন পথে ইউরোপের রাজনীতি

 ড. তারেক শামসুর রেহমান সম্পাদকীয় আপডেট: ১২:০০:০০ AM, রবিবার, জুলাই ৩, ২০১৬ ইউরোপীয় রাজনীতি এক অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ১৯৬৭ সালে ইউরোপীয় ইকোনমিক কমিউনিটি (ইইসি) তার যাত্রা শুরু করেছিল। ইইসি পরে ১৯৯৩ সালের নভেম্বরে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ২৩ বছর পর ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ভাঙন দেখা দিল ব্রিটেনের গণভোটে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত শুধু ব্রিটেনে বড় ধরনের বিতর্ক সৃষ্টি করেনি, বরং সারা বিশ্বেই এটা নিয়ে তোলপাড় হচ্ছে। ২৩ জুনের ভোট গ্রহণের পর এ বিতর্কের মাত্রা আরও ছাড়িয়ে গেছে। ইউরোপে ব্রিটেনের স্ট্যাটাস এখন কী হবে, ইইউ’র সঙ্গে সম্পর্কইবা কী হবে আগামীতে, কিংবা স্কটল্যান্ড কি আগামীতে যুক্তরাজ্য ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাবেÑ এসব প্রশ্ন এখন সর্বত্র আলোচিত হচ্ছে। শুধু ব্রিটেনের সংবাদপত্রই নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রে প্রভাবশালী সংবাদপত্রগুলোতেও ব্রিটেনের ভবিষ্যৎ নিয়ে একাধিক প্রবন্ধ ছাপা হয়েছে। ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারও গেল সপ্তাহে নিউইয়র্ক টাইমসে একটি প্রবন্ধ লিখেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এটা চিন্তারও কারণ বটে। কেননা ঐতিহাসিকভাবেই প্রতিটি আন্তর্জাতিক ইস্যুতে অতীতে যুক্তরাষ্ট্র ব্রিটেনকে তার পাশে পেয়েছে। সিরীয় সংকট, ইরাকে সামরিক আগ্রাসন, লিবিয়ায় বোমাবর্ষণ করে গাদ্দাফিকে উৎখাতÑ প্রতিটি ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল ব্রিটেন। এমনকি ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন অনেক ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকাকে সমর্থন না করলেও ব্রিটেন সমর্থন করে আসছিল বারবার। ফলে ব্রিটেনের প্রতি বরাবরই একটা ‘সফট কর্নার’ ছিল যুক্তরাষ্ট্রের। তবে ওবামা প্রশাসন চেয়েছিলেন ব্রিটেন ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে থাকুক। ব্রিটেন ইইউতে থাকলে তাতে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ বেশি। এজন্যই গণভোটের আগে প্রেসিডেন্ট ওবামা ছুটে গিয়েছিলেন লন্ডনে। প্রকাশ্যে আবেদন জানিয়েছিলেন ব্রিটেনবাসীর প্রতি, তারা যেন ইইউতে থাকে। কিন্তু ওবামার আবেদনের প্রতি সম্মান জানায়নি ব্রিটেনের ভোটাররা। শতকরা ৫২ ভাগ মানুষ রায় দিলেন ইইউ ছেড়ে যাওয়ার। তাই যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টকে যে একটা চিন্তায় ফেলে দিয়েছে, এটাই স্বাভাবিক। তাই পররাষ্ট্র সচিব জন কেরিকে দ্রুত ছুটে যেতে হয়েছে লন্ডনে। গেল সপ্তাহে তিনি গেছেন। কথা বলেছেন, ব্রাসেলসে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের নেতাদের সঙ্গে। তার মন্তব্য ছাপাও হয়েছে পত্রপত্রিকায়। এখন যে প্রশ্নটি ওয়াশিংটনকে ভাবিত করেছে, তা হচ্ছে একটি দুর্বল যুক্তরাজ্য কতটুকু মার্কিনি স্বার্থ রক্ষা করতে পারবে? এখানে বলা ভালো, গণভোটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ২ বছরের মধ্যে ব্রিটেনের ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ছেড়ে যাওয়ার চূড়ান্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। এ সময় ব্রিটেন ইইউ’র সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশ নিতে পারবে না। ইইউ মূলত একটি অর্থনৈতিক জোট হলেও সাম্প্রতিক আন্তর্জাতিক আসরে এর গুরুত্ব বেড়েছে। প্রায় ৪৩ লাখ ২৪ হাজার ৭৮২ বর্গকিলোমিটার আয়তন-বেষ্টিত ইইউ’র জনসংখ্যা ৫০৮ মিলিয়ন। ২৮টি দেশ একটি অর্থনৈতিক ইউনিয়নে আবদ্ধ হলেও নিজস্ব পার্লামেন্ট, নিজস্ব সরকার ও নিজস্ব সংবিধান তারা বজায় রেখেছে। ফলে দেখা যায়, পৃথিবীর প্রায় প্রত্যেকটি দেশেই ইইউ’র অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর নিজস্ব দূতাবাস রয়েছে। ওই দেশগুলোতে আবার ইইউ’র মিশনও রয়েছে। (যেমন বাংলাদেশ)। নিঃসন্দেহে ইইউ অন্যতম অর্থনৈতিক শক্তি। ক্রয়ক্ষমতার ভিত্তিতে (পিপিপি) ইইউ’র জিডিপির পরিমাণ ১৯ দশমিক ২০৫ ট্রিলিয়ন ডলার (সাধারণ হিসাবে ১৬ দশমিক ২২০ ট্রিলিয়ন ডলার), যা বিশ্বের তৃতীয় বড় অর্থনীতি। মাথাপিছু আয়ের পরিমাণ ৩৭ হাজার ৮৫২ ডলার (পিপিপি, সাধারণ হিসাবে ৩১ দশমিক ৯১৮ ডলার), যা বিশ্বের ১৮তম। এ অর্থনৈতিক শক্তির বলেই ইইউ বর্তমানে অন্যতম একটি রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে। দেখা গেছে, অনেক আন্তর্জাতিক ইস্যুতে ইইউ একটি ‘অবস্থান’ নিয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ইইউ’র সেই ‘অবস্থান’ যুক্তরাষ্ট্রের ‘অবস্থান’ এর বাইরে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গণতন্ত্রায়ন ও মানবাধিকার রক্ষার প্রশ্নে ইইউ সোচ্চার। এখন খুব সঙ্গতকারণেই ব্রিটেন ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ায়, ইইউ দুর্বল হয়ে যাবে। এতে করে বিশ্ব আসরে তার গ্রহণযোগ্যতা হ্রাস পাবে। প্রশ্ন হচ্ছে, ব্রিটেন কী এখনই ইইউ থেকে বেরিয়ে যাবে? জনমতে বেরিয়ে যাওয়ার পক্ষে রায় হয়েছে বটে; কিন্তু এর আইনগত ভিত্তি কী? ইইউ’র গঠনের জন্য যে লিসবন চুক্তির প্রয়োজন ছিল, তার ৫০তম ধারায় বলা আছে, যে কোনো দেশ ইইউ’র কাঠামো থেকে বেরিয়ে যেতে পারবে। সে ক্ষেত্রে ওই দেশের সাংবিধানিক আইন প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ ওই দেশের পার্লামেন্ট, জনগণ এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন। ব্রিটেনের জনগণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এখন ব্রিটেনের পার্লামেন্ট তা অনুমোদন করবে। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট এ সিদ্ধান্ত বাতিল করতে পারবে না। তবে ব্রিটেন এখন থেকে ২ বছর সময় পাবে সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে। তবে এ গণভোটের রায়ের একটি ভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়েছেন ব্রিটিশ আইনজীবী ডেভিড অ্যালেন গ্রিন। ফিন্যান্সিয়াল টাইমসে একটি প্রবন্ধ লিখে তিনি মন্তব্য করেছেন, এ রায়টি বাধ্যতামূলক নয়, বরং এক ধরনের উপদেশমূলক। তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, সরকার এ রায় ‘উপেক্ষা’ করতে পারে। এ ব্যাপারে পার্লামেন্ট সিদ্ধান্ত নেবে, এটা তার অভিমত। বাস্তবতা হচ্ছে, এ রায় উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ নেই। পার্লামেন্টে এ রায় অনুমোদিত হবে, এটাই স্বাভাবিক। ডেভিড ক্যামেরন ব্রিটেনের ইইউতে থাকার পক্ষে ক্যাম্পেইন করেছিলেন। কিন্তু ভোটাররা তার কথা শোনেনি। ব্রেক্সিট বিরোধ ক্যাম্পেইনে বিরোধী লেবার পার্টির যে ভূমিকা রাখা উচিত ছিল তা তারা করেনি। তখন লেবার পার্টির এমপিদের প্রায় ৯০ ভাগই ছিলেন ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে থাকার পক্ষে। যে অভিযোগটি উঠেছিলÑ ইইউ ছাড়লে ব্রিটিশ আরও গরিব হয়ে যাবে। এ অভিযোগটির কোনো সত্যতা খোঁজে পায়নি ভোটাররা। মূলত ইউরোপে ব্যাপক অভিবাসন এ গণভোটে একটি বড় ভূমিকা পালন করে। সাম্প্রতিক ব্যাপক হারে সিরীয়, ইরাকি ও আফগান নাগরিকদের ইউরোপে আগমন এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বিভিন্ন দেশে পুনর্বাসনের সিদ্ধান্ত ব্রিটেনের ভোটারদের মাঝে একটি মারাত্মক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। তাদের মাঝে এমন একটা শঙ্কার জন্ম হয় যে, ব্যাপকসংখ্যক অভিবাসন গ্রহণের ফলে ব্রিটেন তার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি হারিয়ে ফেলবে। এদের মাঝে একটা ‘ইসলামফোবিয়াও’ কাজ করেছিল। এটা উসকে দিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্র্যাম্প। তিনি ব্রেক্সিটকে সমর্থন করেছিলেন এবং গণভোটে ব্রেক্সিটের পক্ষে রায় পড়লে, তিনি তাদের শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন। ক্যামেরন ব্রেক্সিটের বিপক্ষে, অর্থাৎ ইইউ’র পক্ষে জনসংযোগ করলেও মন্ত্রিসভার দুই সদস্য মাইকেল গেভি ও বরিস জনসন এর বিরোধিতা করেছিলেন। অর্থাৎ তারা ছিলেন ব্রেক্সিটের পক্ষে। ব্রিটেনের প্রবীণদের সমর্থন নিশ্চিত করতে পারেননি ক্যামেরন। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বিরোধীরা যুক্তি তুলে ধরেছিলেন একটিইÑ ইইউ বা যুক্তরাষ্ট্র। ইউকে ইনডিপেনডেন্স পার্টির নেতা নাইজেল ফরাজ সেøাগান তুলে ধরেছিলেন যুক্তরাজ্যের পক্ষেই। তাতে তিনি জয়ী হলেন। এ জয় তাকে যদি ভবিষ্যৎ এ যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর পদে একধাপ এগিয়ে নিয়ে যায়, তাহলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। নিঃসন্দেহে ফরাজ এখন যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতে অন্যতম একটি ফ্যাক্টর। মানুষ তার কথায় আস্থা রেখেছে। গেল বছর ব্রিটেনের সাধারণ নির্বাচনে ক্যামেরনের নেতৃত্বাধীন কনজারভেটিভ পার্টি বিজয়ী হয়েছিল। কিন্তু ক্রমবর্ধমান অভিবাসন আগমন, ব্রিটেনের দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ইত্যাদি কারণে ক্যামেরন বাধ্য হয়েছিলেন গণভোট দিতে। সেই গণভোটেই শেষ পর্যন্ত তার পরাজয় ঘটল। তিনি যা চেয়েছিলেন, তাতে কোনো সমর্থন ছিল না যুক্তরাজ্যবাসীর। তিনি পরাজয় মেনে নিয়েছেন। তিনি পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। অক্টোবরে পার্টি কনভেনশনে নয়া নেতা নির্বাচিত হবে। শুধু কনজারভেটিভ পার্টি কেন বলি, বিরোধী লেবার পার্টিতেও এর বড় ধাক্কা লেগেছে। লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিনের চেয়ারও এখন টলটলায়মান। তাকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন লেবার পার্টির অনেক এমপি। যদিও করবিন এ চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছেন। বলেছেন, তিনি নেতৃত্বের প্রশ্নে আবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। পশ্চিমা গণতন্ত্রের এটাই সৌন্দর্য, যখন দলীয় নেতা তার নীতি জাতীয় পর্যায়ে অনুমোদন করতে পারেন না, তখন তিনি পদত্যাগ করবেন। অতীতে প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে এ রকমটি হয়েছে। নেতা পদত্যাগ করেছেন। নির্বাচনে হেরে গিয়ে দলীয় প্রধানের পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। ক্যামেরন সেই ধারাবাহিকতা রক্ষা করলেন। সম্ভবত জেরেমি করবিনকেও যেতে হবে। ব্রিটেনের এ গণভোট আরও অনেক বিষয়ের জন্ম দিয়েছে। এক. এক ধরনের জাতিগত বিদ্বেষের জন্ম দিয়েছে। একাধিক ঘটনা ঘটেছে, যেখানে মুসলমান তথা এশিয়ান অধ্যুষিত এলাকায় বর্ণবাদী প্লাকার্ড ও ফেস্টুন প্রদর্শন করা হয়েছে। তাতে এশিয়ানদের ব্রিটেন ত্যাগ করার কথা বলা হয়েছে। শুধু এশিয়ানই নন, বরং পূর্ব ইউরোপ থেকে আসা পোল্যান্ড ও লাটভিয়ার শ্বেতাঙ্গ নাগরিকরাও এ জাতিগত বিদ্বেষের শিকার হয়েছেন। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অবাধ চলাচলের (শেভেন চুক্তির বলে) সুবিধা নিয়ে পোল্যান্ডের অধিবাসীদের একটা অংশ লন্ডনে বসবাস ও চাকরি করতেন। এরা এখন হুমকির মুখে আছেন। একদিকে চাকরি হারানোর, অন্যদিকে জাতিগত হামলার। দুই. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক ব্যাংক তথা আর্থিক প্রতিষ্ঠান লন্ডনে অবস্থানরত তাদের অফিস থেকে কর্মী ছাঁটাই এবং অফিস ইউরোপের অন্য শহরে সরিয়ে নেয়ার কথা ঘোষণা করেছে। এটা ব্রিটেনের অর্থনীতিতে আঘাত হানবে। অর্থনীতি দুর্বল হবে। এরই মধ্যে ব্রিটিশ মুদ্রা পাউন্ডের মান আন্তর্জাতিক বাজারে হ্রাস পেয়েছে। ফলে তা গিয়ে আঘাত হানবে ব্রিটিশ অর্থনীতিতে। ব্রিটেনের জিডিপিতে তখন শ্লথগতি আসবে। যুক্তরাষ্ট্র তার বাজার হারাবে। রফতানি আয়ে ধস নামবে। তিন. বাংলাদেশী তথা ভারতীয়রা এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাদের ব্যবসা মার খাবে। বাজার সংকুচিত হয়ে আসবে। ইউরোপে রফতানি কমে যাবে। নয়া ট্যারিফের মুখোমুখি হবে ব্রিটিশ পণ্য। বাংলাদেশ কিংবা ভারত থেকে পণ্য আমদানি কমে যাবে। বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে আসবে। ব্রিটেন থেকে বাংলাদেশে বিনিয়োগও তেমন একটা হবে না। বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য ব্যবসাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আগামী ১ বছর ব্রিটেনের রাজনীতি ও অর্থনীতি একটা অস্থিরতার মধ্যে থাকবে। ব্রিটেনের অর্থনীতির স্বার্থেই ব্রিটেনকে ইইউ’র সঙ্গে একটা ‘সমঝোতায়’ যেতে হবে। সেই ‘সমঝোতাটি’ যে কী, তাতে ব্রিটেন কতটুকু লাভবান হবে, তা দেখার জন্য আমাদের আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। বাস্তবতা হচ্ছে, ব্রিটেনের ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তটি ইউরোপের ঐক্যকে একটি বড় প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিল। আগামীতে এক ইউরোপের প্রশ্নে নানা কথা, নানা প্রশ্ন শোনা যাবে। এতে করে নয়া বিশ্ব ব্যবস্থার একটি নতুন রূপও আমরা দেখতে পাব। চূড়ান্ত বিচারে এতে করে লাভ হবে পরোক্ষভাবে রাশিয়ার। ইউরোপের বিভক্তি তার অবস্থানকে শক্তিশালী করবে। কেননা অতীতে ইউক্রেন সংকটে রাশিয়ার বিরোধিতা করে ব্রিটেন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানকে শক্তিশালী করেছিল। রাশিয়া ব্রিটেনের অবস্থানকে ভুলে যায়নি। ইউরোপের রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বিভক্তি যত বাড়বে, ততই লাভ রাশিয়ার। ইউরোপীয় রাজনীতি এক অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ১৯৬৭ সালে ইউরোপীয় ইকোনমিক কমিউনিটি (ইইসি) তার যাত্রা শুরু করেছিল। ইইসি পরে ১৯৯৩ সালের নভেম্বরে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ২৩ বছর পর ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ভাঙন দেখা দিল। এ ভাঙন শেষ পর্যন্ত ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অস্তিত্বকে বিপন্ন করে তুলতে পারে। যদি ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ভেঙে যায়, তাহলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র
 Daily Alokito Bangladesh
03.07.2016

0 comments:

Post a Comment