রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

জঙ্গি তৎপরতা দেশকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে?

একের পর এক জঙ্গি হামলায় সাধারণ মানুষের মাঝে জঙ্গিবিরোধী একটি জনমত যখন শক্তিশালী হচ্ছে, তখন একটি প্রশ্ন ঘুরেফিরে বিভিন্ন মহলে আলোচিত হচ্ছে- এই জঙ্গি তৎপরতা বাংলাদেশকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে? বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের পরিচিতি ছিল ‘সহনশীল ইসলাম’ ধর্মের অনুসারী একটি দেশ হিসেবে। কিন্তু হলি আর্টিজানের ঘটনা বদলে দিল সবকিছু। গত ক’দিন আমি এখানে (নিউইয়র্ক) বেশ ক’জন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়েছি। ম্যানহাটনের ওয়েল কর্নেল মেডিকেল সেন্টারের ডাক্তারদের সঙ্গে আমার পরিচয় বেশ ক’বছরের। এরা আমার চিকিৎসা করেন। আমার হৃদযন্ত্রে ‘স্টেন্ট’ এরাই লাগিয়েছিলেন। কিন্তু গত সপ্তাহে যখন ‘ফলোআপ’ চিকিৎসার জন্য গেলাম, দেখলাম এক ভিন্ন মনোভাব। এক ধরনের উষ্মা, ঘৃণা আর বিতৃষ্ণা লক্ষ করলাম তাদের মনোভাবে। মুখে তারা বললেন না বটে, কিন্তু প্রকাশ ভঙ্গিতে বুঝিয়ে দিলেন কী বলতে চাচ্ছেন তারা। আমি তাদের দোষ দিই না। বিশেষ করে হলি আর্টিজানের হত্যাযজ্ঞের পরপরই যখন শোলাকিয়ার ঈদের জামাতের পাশেই জঙ্গিরা আক্রমণ করল এবং সেই সংবাদটি স্থানীয় গণমাধ্যমে গুরুত্বের সঙ্গে স্থান পেল, তখন আমি কাউকে দোষ দিতে পারি না। দশ-পনেরো বছর আগের বাংলাদেশের সঙ্গে বর্তমান বাংলাদেশকে কেউই মেলাতে পারবে না। বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের বিস্তার ঘটছে। হলি আর্টিজানের ঘটনার ৬ দিন পর তিন বাংলাদেশী জঙ্গি রাকা থেকে এক ভিডিও বার্তায় আবারও হামলার হুমকি দিয়েছিল। আর সেই হুমকি তারা কার্যকর করল শোলাকিয়ায় হামলার মধ্য দিয়ে। তাই ৭ জুলাই নিউইয়র্ক টাইমস যে সম্পাদকীয়টি প্রকাশ করেছে, তাতে এক ধরনের নেতিবাচক মনোভাবই প্রতিফলিত হয়েছে। সম্পাদকীয়তে যেসব মন্তব্য করা হয়েছে, তা আমাদের জন্য কোনো ভালো খবর নয়। ‘জঙ্গিবাদ দমনে সরকারের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে’, ‘এ ঘটনা সহনশীল রাজনীতির যে ধারা তাতে বড় ক্ষত সৃষ্টি করবে’ কিংবা ‘এটা বিষাক্ত রাজনীতিকে আরও লালন করবে’- নিউইয়র্ক টাইমসের এসব সম্পাদকীয় মন্তব্যের (‘শক অ্যান্ড ডিনায়েল ইন বাংলাদেশ’, ৭ জুলাই) সঙ্গে হয়তো অনেকে একমত হবেন না; কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, হলি আর্টিজান ও শোলাকিয়ার ঘটনায় বাংলাদেশের অনেক ক্ষতি হয়ে গেল। এ থেকে আমাদের রাজনীতিকরা কী শিক্ষা নেবেন, তাও আমার কাছে স্পষ্ট নয়। রাজনীতিকদের মধ্যে অনৈক্য এখনও স্পষ্ট। খালেদা জিয়া একটি জাতীয় ঐক্যের ডাক দিলেও এ নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। টিভি টকশোতে দেখলাম সরকার সমর্থক বুদ্ধিজীবীরা এ ব্যাপারে এক ধরনের নেতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন। বাস্তবতা হচ্ছে, এই সন্ত্রাসী ঘটনায় বাংলাদেশের অনেক ‘ক্ষতি’ হয়ে গেল। এই ক্ষতি বাংলাদেশ কীভাবে কাটিয়ে উঠবে, এটা একটা বড় প্রশ্ন এখন। এক সময় বাংলাদেশ ‘সহনীয় ইসলামে’র দেশ হিসেবে পরিচিত ছিল। একাধিক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের এই ‘সহনীয় ইসলাম’ চর্চার প্রশংসা করেছেন এবং একটি মডারেট ইসলামিক রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ বহির্বিশ্বে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে। কিন্তু হলি আর্টিজানের ঘটনা বদলে দিল সবকিছু। বাংলাদেশে জঙ্গিরা তাদের অবস্থান শক্তিশালী করেছে- এই তথ্যটি এখন ব্যাপকভাবে পরিচিতি পাবে। এতে করে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে। দুঃখ লাগে তখনই যখন দেখি বাংলাদেশকে সোমালিয়া কিংবা আফগানিস্তানের কাতারে ফেলে দেয়ার একটি উদ্যোগ পশ্চিমা বিশ্বে নেয়া হয়। বাংলাদেশ কখনও সোমালিয়া কিংবা আফগানিস্তান হবে না। আফগানিস্তানে জঙ্গিদের প্রতি সেখানকার সাধারণ মানুষের প্রচ্ছন্ন একটা সমর্থন থাকলেও বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতাকে মানুষ সমর্থন করে না। এটি বাস্তব সত্য। তবে সেই সঙ্গে এটাও সত্য, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যদি বিরোধ বাড়ে, দ্বন্দ্ব বাড়ে, দলগুলো যদি পরস্পর পরস্পরের বিরুদ্ধে জঙ্গি তৎপরতা উসকে দেয়ার অভিযোগ আনে, তাতে করে সুযোগ পাবে জঙ্গিরাই। জঙ্গি দমনে ন্যূনতম প্রশ্নে সব দলের মধ্যে ঐকমত্য প্রয়োজন। হলি আর্টিজানের পর শোলাকিয়ার ঘটনা একটা মেসেজ দিয়ে গেল। এই মেসেজ যদি আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো অনুধাবন করতে না পারে, সেটা হবে আমাদের জন্য দুঃখজনক ঘটনা। আর্থিকভাবেও বাংলাদেশের ক্ষতির আশংকা আছে। জাপান ও ইতালি আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দুটি দেশ। দুটি দেশেরই বিশাল বিনিয়োগ আছে বাংলাদেশে। অথচ এই দুই দেশের নাগরিকরাই বেশি প্রাণ হারালেন। জাপানি প্রধানমন্ত্রীর অসন্তোষের খবর আমরা পত্রিকায় দেখেছি। এ ঘটনায় ভবিষ্যতে বিদেশী বিশেষজ্ঞরা এ দেশে আসতে যেমনি সাহস পাবেন না, ঠিক তেমনি এসব দেশের অর্থে পরিচালিত সাহায্যদাতা সংস্থাগুলো তাদের কার্যক্রম গুটিয়ে নিতে পারে। জাইকার কথা আমরা শুনেছি। পরিস্থিতির যদি আরও অবনতি হয়, তাহলে জাইকা বাংলাদেশ থেকে চলেও যেতে পারে! ঠিক তেমনি অন্যান্য ইউরোপীয় দেশের যেসব সাহায্যদাতা সংস্থা রয়েছে, তারাও চলে যেতে পারে। বাংলাদেশের পোশাক শিল্প থাকবে এখন ঝুঁকির মুখে। বড় বড় ক্রেতারা এখানে আসতে সাহস পাবে না। তারা চলে যাবে ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ায়। মিয়ানমার হতে যাচ্ছে আমাদের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী। টিপিপি চুক্তির ফলে ভিয়েতনাম এখন শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা পাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। ফলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক থাকল একটি অনিশ্চয়তার মুখে। সুতরাং বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উদ্ধারে সরকারকে এখন বড় উদ্যোগ নিতে হবে। যে নিরাপত্তাহীনতার সংকট সৃষ্টি হয়েছে, তা কাটিয়ে উঠে একটা আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। প্রশিক্ষণ ও মোটিভেশনের অভাব রয়েছে তাদের মধ্যে। প্রচুর অর্থ ব্যয় করার পরও কাঙ্ক্ষিত ফলাফল আমরা পাচ্ছি না। তথাকথিত সিসিটিভির ব্যবহার এখন প্রশ্নের মুখে। বিদেশে এ ধরনের ঘটনা ঘটলে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীতে ব্যাপক পরিবর্তন আসত। বাংলাদেশে এ রকমটি হয় না কখনও। প্রধানমন্ত্রী জঙ্গি দমনে জনসচেতনতার কথা বলেছেন। এটা সত্য কথা, জঙ্গিবিরোধী একটা জনমত গড়ে তোলা প্রয়োজন। প্রতিটি সরকারি স্থাপনায়, বড় বড় বিপণিবিতানে নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতা নিয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় আরও কড়াকড়ি ব্যবস্থা আরোপ করা প্রয়োজন। গুলশান-বারিধারা এলাকাকে পরিপূর্ণভাবে একটি নিয়ন্ত্রিত এলাকা ঘোষণা করে এখান থেকে সব বাণিজ্যিক স্থাপনা, বিপণিবিতান, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান প্রত্যাহার করে নিতে হবে। এই এলাকায় যান চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করতে হবে। এ এলাকা কূটনীতিকপাড়া হিসেবে পরিচিত। এই এলাকার নিরাপত্তা দিতে না পারলে অনেক রাষ্ট্র নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে দূতাবাস দিল্লি অথবা ব্যাংককে সরিয়ে নেবে! বস্তুত হলি আর্টিজানের ঘটনার পর শোলাকিয়ার ঘটনা আমাদের চোখ খুলে দিল। অনেক বিদেশী এ দেশে প্রাণ দিলেন। এটা দুর্ভাগ্যজনক। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি এ ঘটনা সব দল ও মতের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করবে। কতিপয় জঙ্গির কাছে বাংলাদেশ মাথানত করতে পারে না। জনসচেতনতা আর ঐক্যবদ্ধ সমাজই পারে এদেশ থেকে জঙ্গি নির্মূল করতে। সেই সঙ্গে যে বিষয়টি জরুরি তা হচ্ছে, জঙ্গি দমনে করণীয় নির্ধারণের প্রশ্নে সরকার একটি ‘সংলাপ’ আহ্বান করতে পারে। সব বিধিবদ্ধ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে একটি ‘সংলাপ’ শুরু করতে পারে। মনে রাখতে হবে, সংলাপ চলাকালীন যদি দলগুলোর অতীত ভূমিকা আলোচিত হয়, তা কোনো ফল বয়ে আনবে না। অতীতমুখিতা আমাদের কোনো সিদ্ধান্তে আসতে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। অতীত নয়, বরং সামনের দিকে তাকাতে হবে। নিউইয়র্ক টাইমস যেভাবে বলছে- কারা কারা এই জঙ্গি হামলার উৎসাহদাতা, অর্থের জোগানদাতা- তা খুঁজে বের করা জরুরি। এখানে যেন কোনো ‘রাজনীতি’ কাজ না করে, অপর পক্ষকে দমন করার কোনো অভিপ্রায় যেন কাজ না করে। গোয়েন্দাদের সক্ষমতা বাড়ানো প্রয়োজন। কোথায় যেন এক ধরনের শৈথিল্য আছে। তাদের মোটিভেশন দরকার। আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর নেতৃত্বে যারা রয়েছেন, তাদের বক্তব্যের ব্যাপারে সচেতন থাকা উচিত। যে কোনো সন্ত্রাসী ঘটনায় একজনের বক্তব্য দেয়াই শ্রেয়। নানাজন বক্তব্য দিলে বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে। জঙ্গি দমন প্রশ্নে কতগুলো বিষয়ের দিকে নজর দেয়া প্রয়োজন। এক. তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, ‘বাংলাদেশে আইএস সম্পৃক্ততার দাবি সরকার উড়িয়ে দিচ্ছে না।’ এর অর্থ কী? আমরা এর ব্যাখ্যা কীভাবে করব? ইনু সাহেব গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী। তিনি যখন পরোক্ষভাবে অনেকটা স্বীকার (?) করে নেন বাংলাদেশে আইএস থাকতে পারে, তখন কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এটা স্বীকার করেন না। এ ধরনের স্পর্শকাতর বিষয়ে মন্ত্রীরা ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য দিলে তাতে বিভ্রান্তি আরও বাড়বে। জঙ্গি প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য দেয়াই শ্রেয়। এখানে অন্য কেউ উপযাচক হয়ে বক্তব্য দিলে বহির্বিশ্বে তার বক্তব্যকে ‘কোট’ করা হবে। বাংলাদেশে আইএস আছে, এ ধরনের স্বীকারোক্তি বাংলাদেশের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। বাংলাদেশে বিদেশী সৈন্য মোতায়েনের সম্ভাবনা (?) এতে বাড়তে পারে। একদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন তথাকথিত ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের’ নামে এ অঞ্চলে তাদের উপস্থিতি বাড়ানোর সুযোগ খুঁজছে, ঠিক তখনই ভারতের টাইমস অব ইন্ডিয়া পত্রিকা ভারতীয় গোয়েন্দা সূত্রের উল্লেখ করে বলেছে, ‘জেএমবিকে ব্যবহার করে ভারতকে টার্গেট করছে আইএস।’ বাংলাদেশে জঙ্গি উত্থান ভারতের নিরাপত্তাকে বিঘিœত করতে পারে (?)- এ প্রশ্ন ভারতের ক্ষমতাসীন সরকারের নেতৃবৃন্দ তুলতে পারে। দুই. ইতিমধ্যে কলকাতার আনন্দবাজারের উদ্ধৃতি দিয়ে বাংলাদেশে প্রকাশিত এক সংবাদে বলা হয়েছে, গুলশানের জঙ্গি হামলা তদন্ত করতে ভারত তার ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ডের (এনএসজি) বিশেষ একটি টিমকে বাংলাদেশে পাঠাবে। তবে এটা স্পষ্ট নয় ইতিমধ্যে ওই টিম বাংলাদেশে এসেছে কিনা। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম অবশ্য আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, বাংলাদেশে কোনো বিদেশী সংস্থা আসছে না। এটাই সঠিক সিদ্ধান্ত। দু’দেশের গোয়েন্দাদের মাঝে তথ্য আদান-প্রদান জরুরি। এ মুহূর্তে সেটা বড় প্রয়োজন। আমি মনে করি, ভারতীয় গোয়েন্দাদের আরও সক্রিয় হওয়া দরকার। পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে ২০১৪ সালের অক্টোবরে বিস্ফোরণের ঘটনায় জেএমবির নাম জড়িয়ে গিয়েছিল। পরবর্তী সময় (২০১৬) দু’জন বাংলাদেশী নাগরিক হাফিজ শেখ ও সেলিম রেজা গ্রেফতার হয়েছিল জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার কারণে। ফলে এটা স্পষ্ট, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া, বর্ধমানের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বাংলাদেশী ও ভারতীয় জঙ্গিদের তথাকথিত ঘাঁটি রয়েছে। সেখানে তাদের জঙ্গি প্রশিক্ষণ হয়। বাংলাদেশে হলি আর্টিজানে যারা জঙ্গি হামলা চালিয়েছে, তাদের প্রশিক্ষণ বর্ধমানে হয়েছিল বলে আমার ধারণা। তাই জঙ্গি উৎখাতে ভারতের গোয়েন্দারা যদি তৎপর না হন, তাহলে এরা প্রশিক্ষণ নিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে নাশকতা করবে। তাই এনএসজি পাঠানোর প্রয়োজন নেই। বাংলাদেশের সেনাবাহিনী, সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থা জঙ্গি দমন ও জঙ্গি নির্মূলের জন্য যথেষ্ট। ভারতকে এখন পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশী জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ শিবির বন্ধ করতে হবে। তিন. শোলাকিয়ার ঘটনায় নিহত জঙ্গি আবির হোসেন নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। এর আগে হলি আর্টিজানে হামলায় নিহত জঙ্গিও ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিল। আবিরও নিখোঁজ ছিল বেশ কয়েক মাস। তাই প্রতিটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি জঙ্গি পর্যবেক্ষণ সেল (এটা অন্য নামেও হতে পারে) গঠন করা জরুরি, যাদের কাজ হবে ছাত্রদের ডাটাবেজ তৈরি করে অনুপস্থিত ছাত্রদের ব্যাপারে খোঁজখবর নেয়া। ছেলেরা যাতে বিপথগামী না হয়, এজন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষেরও উচিত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া। চার. কলকাতার আনন্দবাজারের খবর (৮ জুলাই), বাংলাদেশে আরও জঙ্গি হামলা হতে পারে এবং জঙ্গিরা একটি বড়সড় রিজার্ভ বেস তৈরি করেছে রাজধানীর ১৫ কিলোমিটার বৃত্তের মধ্যে। বাংলাদেশের গোয়েন্দারাই বলতে পারবেন এর পেছনে সত্যতা কতটুকু আছে। তবে আরও জঙ্গি হামলার আশংকাকে আমি উড়িয়ে দিতে পারি না। জঙ্গি তৎপরতা একটি বাস্তব সত্য। আমাদের তরুণ সমাজের একটা ক্ষুদ্র অংশ বিপথগামী হয়েছে। এই বিপথগামী তরুণ সমাজকে মিডিয়া রক্ষা করতে পারে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ইসলামিক স্কলারদের ভূমিকা পালন করার কথা থাকলেও তাদের ভূমিকা লক্ষণীয় নয়। যাদের টিভির পর্দায় নিত্য দেখা যায়, তারা বেশি মাত্রায় সরকার ঘেঁষা। তাদের বক্তব্যে ‘প্রকৃত সত্য’ ফুটে ওঠে না কখনও। ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মধ্যেও তাদের কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই। তাই হলি আর্টিজান আর শোলাকিয়ার ঘটনা জাতিকে কতটুকু ঐক্যবদ্ধ করবে, তা নির্ভর করছে রাজনীতিকদের ওপর। এই দুই ঘটনা দিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা আদায়ের কোনো সুযোগ নেই। সব বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জঙ্গি দমনে একসঙ্গে কাজ করাই হচ্ছে সর্বপ্রথম অগ্রাধিকার। কিছু বিভ্রান্তকারী তরুণের কাছে আমরা আত্মসমর্পণ করতে পারি না। নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র থেকে Daily Jugantor 10.07.2016 

0 comments:

Post a Comment