রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প ও ভারতের প্রতিশ্রুতি

একটি উদ্বেগের খবর গত ১৬ জুলাই বাংলাদেশের পত্রপত্রিকায় ছাপা হয়েছে। বিবিসি বাংলার একটি প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে ওই সংবাদে বলা হয়েছে, ভারতে নদী সংযোগের বিতর্কিত পরিকল্পনার আওতায় এবারে মানস-সংকোস-তিস্তা-গঙ্গাকে যুক্ত করার প্রকল্প নিয়ে এগিয়ে যাবে বলে ঘোষণা করেছে সে দেশের সরকার। বিবিসির বাংলার ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ভারতের জলসম্পদ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ প্রকল্পের জন্য সংশ্লিষ্ট রাজ্য আসাম, পশ্চিমবঙ্গ ও বিহারের সঙ্গে তারা শিগগিরই আলোচনায় বসবে (যুগান্তর, ১৬ জুলাই)। এ ধরনের একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের অন্যতম একটি কারণ। বাংলাদেশ সেই উদ্বেগটিই প্রকাশ করেছে ভারতকে একটি ‘নোট ভারবাল’ পাঠিয়ে। ওই নোট ভারবালে বাংলাদেশের ভয়াবহ ক্ষতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ভারতের আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পের বিশেষ কমিটির পঞ্চম বৈঠকে মানস-সংকোস-তিস্তা-গঙ্গা সংযোগের মাধ্যমে দক্ষিণে পানি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে (জাতীয় দৈনিক, ২৩ জুলাই)। শুধু সরকারের পক্ষ থেকে নয়, বরং প্রধান বিরোধী দল বিএনপির পক্ষ থেকেও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই ইস্যুতে (ভারতের আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প) সরকারকে বিএনপি সব ধরনের সাহায্য করতে প্রস্তুত। আন্তঃনদী সংযোগ ইস্যুতে ভারতের সঙ্গে দেনদরবারে বিএনপি সরকারকে ‘সøাইড সাপোর্ট’ দেবে বলেও বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। ধারণা করছি, বাংলাদেশের অন্যান্য রাজনৈতিক সংগঠনও এই ইস্যুতে সরকারের পাশে থাকবে। তবে বিষয়টি ভারত সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত কি না এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত নই। যদিও ভারতের পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আনোয়ার লাল জাতের উদ্ধৃতি উল্লেখ করে সংবাদটি প্রচারিত হয়েছে, তারপরও ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যাখ্যা এতে পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশ সরকারের উচিত অতিদ্রুত বিষয়টির ব্যাপারে ভারত সরকারের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া। সাধারণত নোট ভারবাল একটি রুটিন ওয়ার্ক। এটা কোনো প্রতিবাদ নয়। ভারত যদি সত্যি সত্যিই এই প্রকল্পটি কার্যকর করে, তাহলে তা হবে মোদির ঢাকা সফরের সময় যে ৬৫ দফা যৌথ ঘোষণা স্বাক্ষরিত হয়েছিল, তার বরখেলাপ। কেননা ৬৫ দফাসংবলিত যৌথ ঘোষণাপত্রের ২১নং দফায় বলা হয়েছে, ‘হিমালয় অঞ্চলের আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পের বিষয়ে বাংলাদেশের জন্য ক্ষতিকর কোনো সিদ্ধান্ত এককভাবে না নেওয়ার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভারতের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।’ এখন ভারতের পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আনোয়ার লাল জাতের বক্তব্য কিংবা ভারতের আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পের বিশেষ কমিটির পঞ্চম বৈঠকের সিদ্ধান্তটি কি যৌথ ঘোষণার ২১নং দফার পরিপন্থী নয়? তাই বিষয়টিকে হালকাভাবে দেখার কোনো সুযোগ নেই। এখানে বলা ভালো, ভারতের আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পটি মূলত আজকের নয়। এই প্রকল্প নিয়ে খোদ ভারতেই বিতর্ক রয়েছে। এই বিশাল নদী সংযোগ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে ভারতের অভ্যন্তরে ৩৭টি নদীকে ৯ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ ৩১টি খালের মাধ্যমে সংযোগ প্রদান করে ১৫০ মিলিয়ন হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা প্রদান করার জন্য। প্রকল্পটির মাধ্যমে ব্রহ্মপুত্রের পানি নিয়ে যাওয়া হবে গঙ্গায়। সেখান থেকে তা নিয়ে যাওয়া হবে মহানন্দা ও কাবেরীতে। গোদাবরির পানি নিয়ে যাওয়া হবে কৃষ্ণায় এবং সেখান থেকে পেনার ও কাবেরীতে। নর্মদার পানি নিয়ে যাওয়া হবে সবরমতিতে। এই বিশাল আন্তঃঅববাহিকা পানি প্রত্যাহার প্রকল্প সম্পন্ন করা হবে ২০১৬ সালের মধ্যে। ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট একটি অভূতপূর্ব সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সরকারকে এ প্রকল্প একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করার পরামর্শ প্রদান করেছেন (আগে নির্ধারিত ৪৫ বছরের পরিবর্তে ১০ বছরের মধ্যে)। কিন্তু ভারতের সর্বোচ্চ আদালত এই সত্য অনুধাবনে ব্যর্থ হয়েছেন যে, গঙ্গা-কাবেরী সংযোগ প্রকল্প কোনো নতুন ধারণা নয়। এ প্রকল্প কৌশলগতভাবে অগ্রহণযোগ্য ও অবাস্তব হওয়ার আগেই বেশ কয়েকবার পরিত্যক্ত হয়েছিল। এ কাজের সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক দিক হচ্ছে, ভারত সরকারের এই প্রকল্প তার ক্ষুদ্র প্রতিবেশীর জন্য কী ভয়াবহ পরিণতি বয়ে আনবে, তা বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। একই সঙ্গে এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অনুসরণযোগ্য আন্তর্জাতিক আইনের স্বীকৃত সব রীতিনীতির প্রতি নিদারুণ উদাসীনতা প্রদর্শন করা হয়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের ওপর মারাত্মক আর্থ-সামাজিক ও পরিবেশগত নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া এ প্রকল্পের কারণে বাংলাদেশের নদী ব্যবস্থার ভয়াবহ প্রকৃতিগত পরিবর্তন সাধিত হতে পারে। এ প্রকল্পে বাংলাদেশের যেসব ক্ষতি হতে পারে তা নিম্নবর্ণিতভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। ১. বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বর্তমানে পাওয়া প্রাকৃতিক পানিপ্রবাহ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী বাংলাদেশের যে পানি পাওয়ার কথা, তা থেকে বাংলাদেশ বঞ্চিত হবে। ২. বাংলাদেশের মিঠা পানির শতকরা ৮৫ ভাগের উৎস হচ্ছে ব্রহ্মপুত্র ও গঙ্গা। ব্রহ্মপুত্র থেকেই শতকরা ৬৫ ভাগ পানি পায় বাংলাদেশ। এখন এই পানি প্রাপ্তি বিঘিœত হতে পারে। ৩. ভারতের পানি প্রত্যাহারের ফলে ভূ-উপরিস্থ পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। একই সঙ্গে আর্সেনিক সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করবে। ৪. মিঠা পানির প্রবাহ হ্রাস পাওয়ায় মৎস্য উৎপাদন কমে যাবে এবং জল পরিবহন ব্যাহত হবে। ৫. পানির অভাবে কৃষি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ৬. দূষিত নদীগুলোর পানি অন্যান্য নদীকেও ধূষিত করবে। ৭. গ্রিনহাউস প্রতিক্রিয়া ত্বরান্বিত হবে। ৮. লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশে মরুকরণ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হবে। ভারতের নীতিনির্ধারকরা বাংলাদেশের এই যে পরিবেশগত সমস্যা, সে ব্যাপারে অবগত নন, তা নয়। এটা জেনেও ভারতের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে, আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পটি ধারণাগত পর্যায়ে রয়েছে। ভারত এই প্রকল্পের ব্যাপারে সিরিয়াস। তারা ধীরে ধীরে এই প্রকল্পটি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। ভারতের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যই তা প্রমাণ করে। তবে এখানে একটা প্লাস পয়েন্ট হচ্ছে, ভারতের বুদ্ধিজীবীদের একটা অংশ এবং পরিবেশবাদীরা এই প্রকল্পের বিরোধী। প্রখ্যাত সাংবাদিক কুলদীপ নায়ার ২০০৫ সালে নর্মদা বাঁধের বিপর্যয়ের কথা উল্লেখ করে লিখেছিলেন, নর্মদা বাঁধের চেয়েও আরও বেশি বিপর্যয় অপেক্ষা করছে নদী সংযোগ প্রকল্পে (ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকায় লিখিত প্রবন্ধের বাংলা অনুবাদ নয়া দিগন্ত ৩ মে, ২০০৫)। কুলদীপ নায়ার ওই প্রবন্ধে সুপ্রিম কোর্টের অপর একটি রায়ের কথা উল্লেখ করে লিখেছিলেন, ‘ছিন্নমূল জনগণকে সম্পূর্ণভাবে পুনর্বাসিত করার আগ পর্যন্ত কোনো অঞ্চলকে বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে প্লাবিত করা যাবে না। সুতরাং সংগত কারণেই প্রশ্ন এসে যায়, নদী সংযোগ প্রকল্পের কারণে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, তাদের কী হবে? ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের অন্য একটি রায় অনুযায়ী এ ধরনের প্রকল্প তো অবৈধ।’ কুলদীপ নায়ারের এই মন্তব্যকে তো হালকাভাবে নেওয়া যায় না। ভারতের খরা এলাকার জন্য পানি দরকার। কিন্তু এক নদী থেকে পানি প্রত্যাহার করে খালের মাধ্যমে অন্য এলাকায় (দক্ষিণে) নিয়ে যাওয়া কোনো সমাধান নয়। ভারতের ভাকরা বাঁধ নিয়ে একটি গবেষণায় দেখানো হয়েছিল, পাঞ্জাব ও হরিয়ানা প্রদেশের জন্য ভাকরা থেকে পাওয়া পানি নয়, বরং ভূগর্ভস্থ পানি ও উন্নত কৃষিব্যবস্থা বেশি জরুরি। পাঞ্জাবের মোট ২০ শতাংশ এবং হরিয়ানার ৩১ শতাংশ চাষযোগ্য জমি বাঁধনিয়ন্ত্রিত। এমনকি ৫০ বছর পর আজও সেখানকার বাস্তুহারা মানুষ কঠোর সংগ্রাম করে যাচ্ছে মাথা গোঁজার ঠাঁইয়ের জন্য। ওই গবেষণার ফলাফলই বলে দিচ্ছে, নর্মদা বাঁধের উচ্চতা না বাড়িয়ে কীভাবে আরও বেশি পানি ও বিদ্যুৎ পাওয়া যেতে পারে, সে বিষয়ে মাথা ঘামানো দরকার। নর্মদা বাঁধসংলগ্ন অঞ্চলের বাস্তুহারা ৫০ হাজার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে কীভাবে ক্ষতিপূরণ দেবে গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্র, যখন কি না ওইসব রাজ্যে বাড়তি কোনো জমি নেই তাদের পুনর্বাসনের জন্য? তিহরি বাঁধের শিকার হয়েছে যারা, তারাই সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার। কেননা না ইউপি, না কেন্দ্র সরকার কোনোরূপ সহানুভূতি নিয়ে এগিয়ে এসেছিল তাদের সাহায্যার্থে। এখন আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প যে শুধু বাংলাদেশকেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে তা নয়। বরং খোদ ভারতও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কিন্তু ভারতের নীতিনির্ধারকরা এটা বিবেচনায় নিচ্ছেন না। এখানে আরও একটা কথা বলা প্রয়োজন। আর তা হচ্ছে, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পটি অবৈধ। আন্তর্জাতিক আইন বিশারদ অধ্যাপক ওপেনহেইম বলেছেন, কোনো রাষ্ট্রকে নিজ ভূখ-ের প্রাকৃতিক অবস্থা এমনভাবে পরিবর্তন করতে দেওয়া যাবে না, যার ফলে তা প্রতিবেশী কোনো রাষ্ট্রের ভূখ-ের প্রাকৃতিক অবস্থার কোনো অসুবিধা সৃষ্টি করে। এ আলোকেই আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পটি অবৈধ। যখন কোনো রাষ্ট্র একটি অভিন্ন সম্পত্তির উন্নতি, পরিবর্তন বা ধ্বংস সাধনের জন্য কোনো প্রকল্প গ্রহণ করে, তখন ওই রাষ্ট্রকে আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে কিছু নীতিমালা অনুসরণ করতে হয়। আন্তর্জাতিক আইন আরও বেশি সুনির্দিষ্ট যখন তা আন্তর্জাতিক নদী সম্পর্কিত হয়। আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পের সব ক’টি নদীই আন্তর্জাতিক নদী। তাই এসব নদীর একতরফা পরিবর্তন, পরিবর্ধন বা পানি প্রত্যাহার আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে বেআইনি এবং অগ্রহণযোগ্য। আন্তর্জাতিক নদীর পানি ব্যবহার সংক্রান্ত ১৯৬৬ সালের আন্তর্জাতিক আইন সমিতির হেলসিংকি নীতিমালার ৪ ও ৫ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রতিটি অববাহিকাভুক্ত রাষ্ট্র, অভিন্ন নদীগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই অন্য রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রয়োজনকে বিবেচনায় নেবে। তা অবশ্যই অন্য রাষ্ট্রের কোনো ক্ষতি না করেই হতে হবে। কিন্তু ভারতের এ উদ্যোগে একটা বিষয় সুস্পষ্ট যে, ভারত বাংলাদেশের ওপর এ প্রকল্পের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণভাবেই উপেক্ষা করছে। হেলসিংকি নীতিমালার অনুচ্ছেদ ২৯-এ বলা হয়েছে, এক অববাহিকাভুক্ত রাষ্ট্র অপর অববাহিকাভুক্ত রাষ্ট্রকে অবশ্যই আন্তর্জাতিক নিষ্কাশন অববাহিকার পানি ব্যবহারের ব্যাপারে কৃত পদক্ষেপ সম্পর্কে অবহিত করবে। ১৯৯২ সালের ডাবলিন নীতিমালার (আন্তর্জাতিক নদী ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত) ২নং নীতিতে বলা হয়েছে, পানি উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা অবশ্যই সবার অংশগ্রহণমূলক হতে হবে। কিন্তু আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পের ক্ষেত্রে ভারত একটি অস্বচ্ছ ও স্বেচ্ছাচারমূলক পদ্ধতিতে অগ্রসর হচ্ছে। ১৯৯৭ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে জলপ্রবাহ কনভেশনটি গ্রহণ করা হয়। এই কনভেনশনে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও সৎ প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্কের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। কনভেনশনের ৬ অনুচ্ছেদে যুক্তি ও ন্যায়পরায়ণতার ব্যবহার নির্দিষ্টকরণে কতগুলো শর্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। যুক্তি ও ন্যায়পরায়ণতার ব্যবহার নির্ধারণে এ অনুচ্ছেদে উল্লিখিত সব ক’টি শর্তকে একই সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে এবং সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে বিবদমান দেশগুলোকে আলোচনার মাধ্যমে একটি ঐকমত্যে পৌঁছতে হবে। জলপ্রবাহ কনভেনশনে উল্লিখিত নীতিমালাগুলোর আলোকে ভারতে প্রস্তাবিত নদী সংযোগ প্রকল্পকে বিচার করলে দেখা যাবে, ভারত সুস্পষ্টভাবে কনভেনশনে বিধিবদ্ধ প্রথাগত আন্তর্জাতিক আইনের লংঘন করছে। এমনকি জলাভূমিবিষয়ক রামসার কনভেনশনের ৫নং অনুচ্ছেদ অনুসারে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রগুলো পরস্পর পরামর্শ করবে। একই সঙ্গে জলাভূমির এবং সেখানকার উদ্ভিদ ও প্রাণীগুলোর সংরক্ষণের স্বার্থে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নীতিমালা ও বিধিবিধান প্রণয়ন করবে। কিন্তু আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পে ভারতের একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের জলাভূমিগুলোকে ধ্বংস করার নামান্তর, যা কি না রামসার কনভেনশনের সুস্পষ্ট লংঘন। আমরা ১৯৯৬ সালে স্বাক্ষরিত গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তির ৯ অনুচ্ছেদের কথাও উল্লেখ করতে পারি। যেখানে ওই অনুচ্ছেদে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘উভয় পক্ষ সমতা, ন্যায়পরায়ণতা এবং পারস্পরিক ক্ষতি না করার নীতির ভিত্তিতে পরিচালিত হবে’, সেখানে আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পে একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহার করা হলে তা হবে ওই চুক্তির বাধ্যবাধকতা ও অঙ্গীকারের চরম লংঘন। তাই ভারতের আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প কার্যকর করার সিদ্ধান্তে আমরা উদাসীন থাকতে পারি না। অতিদ্রুত দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় এই বিষয়টির সমাধান হওয়া প্রয়োজন। ভারত যেখানে অঙ্গীকার করেছে তারা ‘আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পে এমন কিছু করবে না, যাতে বাংলাদেশের ক্ষতি হয়’ সেখানে ভারতের বর্তমান ভূমিকার ব্যাপারে একটা ব্যাখ্যা থাকা প্রয়োজন। Daily Amader Somoy 26.07.15

0 comments:

Post a Comment