গ্রিসের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং এর আগে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের ২০১৬ সালেই ইউরোপীয় ইউনিয়নে ব্রিটেনের থাকা না থাকা নিয়ে একটি গণভোট করার সিদ্ধান্ত এমন একটা আশঙ্কার জš§ দিয়েছে যে, শেষ অবদি হয়তো আর অভিন্নœ ইউরোপের ধারণাটি টিকে থাকছে না। গত ৩০ জুন ছিল গ্রিসের ১০০ কোটি ৭০ লাখ ডলারের ঋণ পরিশোধের সময়সীমা। গ্রিস ঋণ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়েছে। ঋণদাতা গোষ্ঠীর চাপিয়ে দেয়া শর্ত গ্রিস সরকার মানেনি। অর্থনীতি রক্ষায় তারা ৫ জুলাই এক গণভোটে যাচ্ছে। ওই গণভোটে যদি ‘না’ ভোট জয়যুক্ত হয় (যা কিনা গ্রিক সরকার চাচ্ছে), তাহলে ইউরো জোন থেকে গ্রিস বেড়িয়ে যাবে। ইউরোর বদলে মুদ্রা হিসেবে দ্রাকমা আবারো পুনঃস্থাপিত হবে এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পথ প্রশস্ত হবে। অন্যদিকে ১১ মের নির্বাচনে (২০১৫) ব্রিটেনের কনজারভেটিক পার্টির পুনরায় ফিরে আসা প্রমাণ করল ব্রিটেনের মানুষ ইউরোপীয় ইউনিয়ন নয়, বরং তাদের নিজস্ব ঐতিহ্য নিয়েই ইউরোপে টিকে থাকতে চায়। এখন ব্রিটেনের পথেই এগুচ্ছে গ্রিস। আগামীতে পর্তুগাল ও ইতালিও যদি একই পথ অবলম্বন করে তাহলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
যুক্তরাজ্যের গেল নির্বাচন অনেক প্রশ্ন ও জিজ্ঞাসার জš§ দিয়েছিল। যুক্তরাজ্যের গত ৯৩ বছরের যে গণতন্ত্র (১৯২২ থেকে) যেখানে মূলত দুটি প্রধান দলই সমতা পরিচালনা করে এই ধারা থেকে যুক্তরাজ্য এবারো বেরিয়ে আসতে পারেনি। প্রতিদ্বন্দ্বিতা বরাবরই কনজারভেটিক ও লেবার পার্টির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে এবং এরাই সরকার গঠন করে। ২০১০ সালে কিছুটা ব্যতিক্রম ছিল বটে। সেবার সরকার গঠনের মধ্য কনজারভেটিভ দলের প্রয়োজন ছিল তৃতীয় একটি দলের সমর্থনের। লিভডেম বা লিবারেল ডেমোক্র্যাটরা কনজারভেটিভ পার্টির নেতা ডেভিড ক্যামেরনের প্রতি সমর্থন দিয়ে যৌথভাবে একটি সরকার গঠন করেছিলেন এবং লিভডেম নেতা নিক ব্লেগ উপ-প্রধানমন্ত্রীর পদ পেয়েছিলেন। কিন্তু এবার ইইউ প্রশ্নে লিবডেমের বড় ধরনের পরাজয় হয়েছে। এই মুহূর্তে লিবডেমকে বাদ দিয়ে ডেভিড ক্যামেরন এককভাবেই সরকার গঠন করেছেন। তিনি এবার আর একটি কোয়ালিশন সরকার গঠন করেননি। চারটি জাতি নিয়ে যুক্তরাজ্য গঠিত এবং হাউস অব কমনস’র আসনও সেভাবে নির্ধারিত। যেমন ইংল্যান্ডের রয়েছে ৫৩৩ আসন, ওয়েলস’র ৪০, নর্থ আয়ারল্যান্ডের ১৮ ও স্কটল্যান্ডের ৫৯। সব মিলিয়ে ৬৫০ আসনে সরকার গঠনের জন্য দরকার হয় ৩২৬টি আসন। এই নির্বাচন প্রমাণ করল যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতে তৃতীয় শক্তির উত্থানের যে সম্ভাবনা ছিল, সে সম্ভাবনা আর নেই। সাধারণ মানুষদের আস্থা দুটি বড় দলের প্রতিই। তবে যুক্তরাজ্যের গণতন্ত্রের এটা একটা সৌন্দর্য যে, দল যদি হেরে যায় তাহলে দল থেকে পরিবর্তন করে। এড মিলিব্যান্ড এখন আর লেভার পার্টির নেতা নন। তিনি পদত্যাগ করেছেন। একই সঙ্গে লিবডেমের নেতৃত্বেও পরিবর্তন এসেছে। নিক ক্লেগের পরিবর্তে আমরা এখন অন্য কাউকে দেখব লিবডেমের নেতৃত্বে। যুক্তিটা হচ্ছে দলের নেতৃত্ব যে ‘নীতি ও আদর্শ’ নিয়ে নির্বাচনে গেল, ভোটাররা তা গ্রহণ করেনি। ফলে দলকে এখন ‘নয়ানীতি ও আদর্শ’ খুঁজে বের করতে হবে। স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি (এসএনপি) এখন হাউস অব কমনস এ তৃতীয় শক্তিশালী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। এই দলটি স্কটল্যান্ডের ৫৯টি আসনের মধ্য ৫৬টি আসন পেয়েছে। অথচ এই দলটি স্কটল্যান্ডকে যুক্তরাজ্য ইউনিয়ন থেকে বের করে নিয়ে একটি স্বাধীন দেশ গড়তে চায়। এটা ছিল তাদের সেøাগান। যদিও গেল সেপ্টেম্বরে (২০১৪) স্কটল্যান্ডে স্বাধীনতার প্রশ্নে যে গণভোট হয়েছিল তাতে যুক্তরাজ্যে থাকার পক্ষেই ভোট পড়েছিল বেশি। এখন এসএসপির নেত্রী নিকোলা স্টারজিওন কী ভূমিকা নেন, সে দিকে অনেকের লক্ষ্য থাকবে। যদিও ইতোমধ্যেই তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতার প্রশ্নে তিনি আবারো একটি গণভোটের উদ্যোগ নেবেন। ফলে তার ভবিষ্যৎ রাজনীতি নিয়ে একটা প্রশ্ন থাকলই।
ইউরোপের মানচিত্র কি বদলে যাবে!প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন নির্বাচনের আগেই বলেছিলেন ভবিষ্যতে যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকবে কিনা, এটা নিয়ে যে বিতর্ক চলছে, তা যাচাই করে দেখার জন্য আগামী ২০১৭ সালে তিনি যুক্তরাজ্যে একটি গণভোটের আয়োজন করবেন। মানুষ এতে সায় দিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকা, না থাকা নিয়ে ব্রিটেনের একটা বিতর্ক আছে। ব্রিটেন ইউরোপীয় ইউনিয়নে আছে বটে, কিন্তু ইউরোপীয় মুদ্রা ‘ইউরো’ তে কখনই যোগ দেয়নি। ১৯৫৭ সালে মাত্র ৬টি রাষ্ট্র নিয়ে ইউরোপিয়ান ইকোনমিক কমিটি (ইইসি) যাত্রা শুরু করে আজ তা ইউরোপীয় ইউনিয়নে পরিণত হয়েছে। ১৯৭৩ সালে যুক্তরাজ্য তৎকালীন ইইসিতে যোগ দেয়। আর ২০০২ সালের ১ জানুয়ারি ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশের মাঝে ১২টি দেশ অভিন্ন মুদ্রা ইউরোপ চালু করে। পরবর্তীতে আরো কয়েকটি দেশ (মোট ১৯টি) ইউরো গ্রহণ করে। কিন্তু যুক্তরাজ্য তাদের মুদ্রা পাউন্ডকে ধরে রেখেছে। তুলনামূলক বিচারে ব্রিটেনের মানুষ কিছুটা কনজারভেটিভ। তারা মনে করে ইইউ বা ইউরোতে যোগ দেয়ার অর্থ হচ্ছে তাদের স্বীকয়তা, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি হারিয়ে যাওয়া। তাই তারা বারবার ইউরো গ্রহণ করার বিপক্ষে মত দিয়ে আসছে। এখন কনজারভেটিভদের বিজয় এই প্রশ্নটাকেই সামনে নিয়ে আসল।
আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন একটি শক্তি। অনেক আন্তর্জাতিক ইস্যুতে ইইউ যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে গিয়ে এককভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু ইউরো জোন এর অর্থনৈতিক সংকট ইইউর ভূমিকাকে সংকুচিত করে দিয়েছে। এখানে বলা ভালো ১৯৫৭ সালে মাত্র ৬টি দেশ নিয়ে (বেলজিয়াম, ফ্রান্স, পশ্চিম জার্মানি, ইতালি, হল্যান্ড, লুক্সেমবার্গ) ইউরোপীয় ঐক্যের যে যাত্রা শুরু করেছিল, তা আজ পরিণত হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ)। ২৮টি দেশ এখন ইইউর সদস্য। এর মাঝে আবার ২৪টি দেশ ন্যাটোর সদস্য। তবে জর্জিয়া ও ইউক্রেন এখনো ন্যাটোর সদস্য হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র এই দুটি দেশকে ন্যাটোর সদস্য পদ দিতে চাচ্ছে, যাতে রাশিয়ার রয়েছে আপত্তি। ইউরোপে এরই মাঝে বেশ কয়েকটি সংস্থার জš§ হয়েছে, যে সংস্থাগুলো ইউরোপীয় ঐক্যকে ধরে রেখেছে। যেমন বলা যেতে পারে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট, ইউরোপীয় কাউন্সিল, কাউন্সিল, ইউরোপীয় কমিশন, ইউরোপীয় আদালত, নিরীক্ষক দফতর, অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিটি, আঞ্চলিক কমিটি, ইউরোপীয় ব্যাংক ও ইউরোপীয় মুদ্রা ইনস্টিটিউট ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কথা। এই সংস্থাগুলো অভিন্নœ ইউরোপের ধারণাকে শক্তিশালী করেছে। কিন্তু ইউরোপের অর্থনৈতিক মন্দা পুরো দৃশ্যপটকে এখন বদলে দিল। এখন শুধু ইউরোই নয়, বরং খোদ ইউরোপীয় ইউনিয়নের অস্তিত্ব প্রশ্নের মুখে। যে যুক্তি তুলে এক সময় ব্রিটেন ও ডেনমার্ক ইউরো জোনে (এক মুদ্রা নিজ দেশে চালু) যোগ দিতে চায়নি সেই যুক্তিটি এখন সত্য বলে প্রমাণিত হলো। অর্থনৈতিক সংকট থেকে উদ্ধারের কাজটি অত সহজ নয়। একটি দেশের সমস্যায় অন্য দেশ আক্রান্ত হচ্ছে। ফলে প্রশ্ন উঠেছে ইউরোর ভবিষ্যৎ নিয়ে। এ ক্ষেত্রে যে প্রশ্নটি সবচেয়ে বড়, তা হচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বর্তমান কাঠামো আদৌ টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে কিনা?
২০০৭ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন যখন তার পঞ্চাশতম পূর্তি উৎসব পালন করে তখনই বার্লিন ঘোষণার মধ্য দিয়ে এটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে ইইউর মাঝে বিভক্তি আছে। লুক্সেমবার্গ ইউরোপের অন্যতম প্রধান অর্জন হিসেবে ইউরোর মুদ্রার কথা উল্লেখ করেছিল। অথচ মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যেই প্রমাণিত হয়েছিল ইউরো সব দেশগুলোর স্বার্থ রক্ষা করতে পারছে না। ব্রিটেন ও ডেনমার্ক প্রথম থেকেই ইউরোকে প্রত্যাখ্যান করে আসছিল। পোল্যান্ড ও ইতালি চেয়েছিল ইউরোপের ক্রিশ্চিয়ান মূল্যবোধকে প্রধান্য দিতে। কিন্তু ফ্রান্স এর বিরোধিতা করেছিল। দেশটি ধর্মকে আলাদা রাখতে চেয়েছিল। চেক রিপাবলিক ও পোল্যান্ড নিরাপত্তার বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দিলেও ফ্রান্স ও জার্মানি এটা নিয়ে চিন্তিত ছিল এ কারণে যে, নিরাপত্তার বিষয়টিতে যে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ রাশিয়াকে খেপিয়ে তুলতে পারে। জার্মানি ও স্পেন ইইউর জন্য নতুন একটি সাংবিধানিক চুক্তি করতে চাইলেও ব্রিটেন ও নেদারল্যান্ডস ছিল এর বিরোধী। পূর্বে ইউরোপের সাবেক সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোও তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল। ১৯৮৯ সালের ‘ভেলভেট রেভ্যুলুশন’ এই দেশগুলোকে সোভিয়েত নির্ভরতা থেকে বের হয়ে আসতে সাহায্য করে। সেখানে সমাজতন্ত্রের পতন হয় ও দেশগুলো গণতন্ত্রের পথে ধাবিত হয়। কিন্তু ২০০৪ সালের আগে পূর্ব ইউরোপের কোনো দেশই ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দিতে পারেনি। এই দেশগুলোর ওপর কোপেনহেগেন ফর্মুলা চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল। কোপেনহেগেন ফর্মুলায় কতগুলো শর্ত দেয়া হয়েছিল। যা পূরণ করলেই ইইউর সদস্যপদ পাওয়া যাবে। শর্তগুলোর মধ্যে ছিল গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি চালু, মুক্তবাজার অর্থনীতি প্রবর্তন, মানবাধিকার রক্ষা, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দান ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা। এসব শর্ত পূরণ হওয়ার পরই কয়েকটি পূর্ব ইউরোপীয় দেশ ২০০৪ ও ২০০৭ সালে ইইউতে যোগ দেয়। বসনিয়া-হারজেগোভিনা, কিংবা ক্রোয়েশিয়া এখনো ইইউতে যোগ দিতে পারেনি। এখন অর্থনৈতিক সংকট সব সংকটকে ছাপিয়ে গেছে। ঋণ সংকটে জর্জরিত ইউরোপে আবারো মন্দার আশংকা বাড়ছে। ২০১৩-২০১৪ সময় সীমায় ইউরো ব্যবহারকারী ইউরো জোনের শূন্য প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। ইইউর প্রবৃদ্ধিও ছিল শূন্যের কোটায়। তাই ইউরোপ নিয়ে শঙ্কা থেকেই গেল। এখন ইইউর ঐক্য নিয়ে যে সন্দেহ, তা আরো বাড়বে। ইতোমধ্যেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোকে দু’স্তরে বিভক্ত করার প্রস্তাব উঠেছে। জার্মানি ও ফ্রান্স একটি দু’স্তর বিশিষ্ট ইউরোপীয় ইউনিয়ন চাচ্ছে। ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট সারকোজি খোলামেলাভাবেই এই বিভক্তির কথা বলেছিলেন। জার্মানির চ্যান্সেলর মার্কেলও চাচ্ছেন একটা পরিবর্তন। তিনি বলছেন এক নয়া ইউরোপ গড়ার কথা। যদিও এই বিভক্তির বিরোধিতা করেছিলেন ইউরোপীয় কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান জোসে ম্যানুয়েল বারোসো। এখন সত্যি সত্যিই ইউরোপ ভাগ হয়ে যাবে কিনা, কিংবা ‘নতুন ইউরোপ’ এর স্বরূপ কি হবে, তা এই মুহূর্তে বলা খুব কঠিন। তবে একটি পরিবর্তন যে আসন্ন, তা গ্রিসের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির দিকে তাকালেই বোঝা যায়। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছোট অর্থনীতির দেশগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি। এটাই ইউরোপীয় ইউনিয়নের বড় ব্যর্থতা। তাই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরন যখন ইইউতে থাকা, না থাকা নিয়ে গণভোট করতে চান, তখন ইউরোপের ঐক্যে যে ফাটলের জš§ হয়েছে, তারই ইঙ্গিত দিলেন তিনি। ক্যামেরন স্পষ্ট করেই বলেছেন, ‘আমরা যদি এখনই এসব সমস্যা নিয়ে উদ্যোগ নিতে না পারি তাহলে ইউরোপের পতন হবে এবং ব্রিটিশরাও পতনের দিকে যেতে থাকবে।’ অতীতে ইইউ সম্পর্কে এত ভয়ঙ্কর কথা কেউ বলেননি। এখন ক্যামেরন সাহস করেই বললেন। সামনের দিনগুলো অত্যন্ত কঠিন সময় ইইউর জন্য। অর্থনীতি ও রাজনৈতিক সংকট যদি ইইউ কাটিয়ে উঠতে না পারে, তাহলে এটা দিব্যি দিয়েই বলা যায় আগামী এক দশকের মধ্যে আমরা এক ভিন্ন ইউরোপের চেহারা দেখতে পাব।
তাই ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভবিষ্যৎ নিয়ে একটা প্রশ্ন থাকলই, এখন ৫ জুলাইয়ের পর গ্রিস যদি ইউরো জোন থেকে বেরিয়ে যায়, তাহলে তা ইউরোপের অন্যান্য দেশকে উৎসাহ জোগাতে পারে। এতে করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এক ধরনের অস্তিত্ব সংকটের মুখে থাকবে। বিশ্ব খুব দ্রুত বদলে যাচ্ছে। চীনের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে ‘এশিয়ান ইনফ্রাস্টাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক’ বা এআইআইবি। জার্মানি কিংবা ডেনমার্কের মতো অনেক ইউরোপিয়ান দেশ ৫৭ সদস্য বিশিষ্ট এই ব্যাংকে যোগ দিয়েছে। বলা হচ্ছে এটা হচ্ছে এশিয়ার বিশ্ব ব্যাংক। এই ব্যাংক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিশ্ব ব্যাংক ও আইএমএফের খবরদারি যে কমবে তা আর কাউকে বলে দিতে হয় না। গ্রিস আইএমএফের শর্ত না মানায় এই সমস্যার মুখোমুখি হয়। রাষ্ট্রটি দেউলিয়া হয়ে যায়। তবে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের ক্ষেত্রেও অতীতে আমরা দেখেছি ওই রাষ্ট্র দুটি এক পর্যায়ে ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় দেউলিয়া হয়ে গিয়েছিল। এক পর্যায়ে শর্ত সাপেক্ষে আইএমএফ পুনরায় ঋণ দেয়। তবে গ্রিসের পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন। তারা ৫ জুলাই গণভোট করবে। এতে করে তারা আইএমএফের চাপিয়ে দেয়া শর্ত মানবে কি মানবে না, এই সিদ্ধান্তটি হবে। শর্ত না মানার পক্ষেই জনমত বেশি। ফলে অন্য ঋণদাতা সংস্থাগুলোও এগিয়ে আসবে না।
স্পষ্টতই ইউরোপ বড় ধরনের সংকটের মুখে পড়েছে। এই সংকট থেকে ওরা কীভাবে বেরিয়ে আসে, সেদিকেই লক্ষ্য থাকবে সবার। কেননা এর সঙ্গে অনেক প্রশ্ন জড়িত। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভেঙে গেলে বিশ্ব অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ইউরোপে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব হ্রাস পাওয়া এবং সর্বোপরি ইউরোপে চীন-রাশিয়ার প্রভাব বৃদ্ধি পাওয়াÑসব কিছুই ঘটতে পারে একের পর এক। গ্রিস এআইআইবি ব্যাংকে যোগ দেয়নি। এখন হয়ত গ্রিস বাধ্য হবে এ ব্যাংকে যোগ দিতে এবং সহজ শর্তে ঋণও গ্রহণ করবে। তাই আগামী দিনের ইউরোপের দিকে লক্ষ্য থাকবে সবার।
Daily Manobkontho
05.07.15
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
0 comments:
Post a Comment