রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

রাজনীতিতে সহাবস্থান প্রয়োজন

প্রধানমন্ত্রী, অনেক মন্ত্রী এবং বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার সাম্প্রতিক কোনো কোনো মন্তব্য আগামী দিনের রাজনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। কয়েকটি প্রশ্ন ঘিরে এখন রাজনীতি আবর্তিত হবে। এক. বিশেষ ট্রাইব্যুনালে খালেদা জিয়ার বিচারের সম্ভাবনা, দুই. বিএনপির ভেঙে যাওয়া এবং বিকল্প বিএনপির আবির্ভাবের সম্ভাবনা, তিন. কিছু স্ট্র্যাটেজি সামনে রেখে সরকারের মধ্যবর্তী নির্বাচনের ঘোষণা, চার. চন্দ্রিমা উদ্যান থেকে জিয়ার এবং সংসদ এলাকা থেকে একাধিক রাজনৈতিক নেতার কবর সরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ, পাঁচ. দাতাগোষ্ঠী মধ্যবর্তী নির্বাচনের পক্ষে। উল্লিখিত প্রতিটি ইস্যুতে আগামীতে রাজনীতিতে উত্তেজনা বাড়বে এবং এতে করে আবারও দেশের স্থিতিশীলতা বিপন্ন হতে পারে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের কাছে এটা একটা বড় প্রশ্ন- এখন সরকার কি সত্যি সত্যিই বিশেষ ট্র্যাইব্যুনাল গঠন করে খালেদা জিয়ার বিচারের উদ্যোগ নেবে? প্রধানমন্ত্রী যখন সংসদে এ ধরনের একটি মন্তব্য করেন, তখন বিষয়টাকে হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই। এমনকি তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু যখন বলেন, খালেদা জিয়ার বিচারে ঈদের পরই ট্র্যাইব্যুনাল (যুগান্তর, ১২ জুলাই), তখন বিষয়টাকে আমি গুরুত্ব দিতে চাই। যদিও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর অন্যতম সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এ বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন। জনাব ইনুর বক্তব্যের দুটি দিক আছে। একটি রাজনৈতিক, অপরটি বাস্তবতা। রাজনীতিকরা অনেক কথাই বলেন। জনাব ইনু যে সংগঠনের প্রতিনিধিত্ব করেন, সেই রাজনৈতিক দলের অতীত ভূমিকা, বিশেষ করে স্বাধীনতা-পরবর্তী আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র আন্দোলন(?), স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাড়ি ঘেরাওয়ের ঘটনা জাসদকে বিতর্কিত করলেও দলটি তার অতীত ভূমিকার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে এমন তথ্য আমার জানা নেই। তবে হঠকারি কোনো সিদ্ধান্ত যে দলের ও জাতির মঙ্গল বয়ে আনতে পারে না, বাংলাদেশের রাজনীতি সে কথাই প্রমাণ করে। সরকার ট্রাইব্যুনাল গঠন করতেই পারে। সেই সাংবিধানিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা সরকারের আছে। বিগত তিন মাসের আন্দোলন, বাসে বোমা মেরে ১৫৮ জন সাধারণ মানুষের মৃত্যু- এসব ঘটনার দায়ভার বিএনপি এড়াতে পারে না। যদিও বিএনপির পক্ষ থেকে এসব বোমাবাজি ও হত্যাকাণ্ডের কথা অস্বীকার করা হয়েছে এবং তাদের পক্ষ থেকে একটি আন্তর্জাতিক তদন্তেরও আহ্বান করা হয়েছে। সরকার অবশ্য তাতে সায় দেয়নি। দ্রুত বিচার সম্পন্ন করার জন্য আইনানুযায়ী সরকার ট্র্যাইব্যুনাল গঠন করতে পারে। কিন্তু এতে করে কি রাজনৈতিক সহাবস্থান বিঘ্নিত হবে না?বিগত ৩ মাসের অরাজক পরিস্থিতির পর মানুষের মনে স্বস্তি ফিরে এসেছে। মানুষ এখন নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারছে। অর্থনীতিতেও আবার চাঞ্চল্য এসেছে। বিএনপির ভেতরেও একটা উপলব্ধি এসেছে যে, এভাবে আন্দোলন করা যায় না। বিগত তিন মাসের আন্দোলন থেকে নিশ্চয়ই বিএনপি কিছু শিখেছে। এই উপলব্ধি ভবিষ্যৎ আন্দোলন গড়ে তোলার ব্যাপারে নিশ্চয়ই বিএনপিকে কর্মপন্থা গ্রহণে উৎসাহ জোগাবে। ট্রাইব্যুনালের ব্যাপারে সরকারের সিদ্ধান্ত দুটি বড় দলের মাঝে আস্থার সম্পর্কে ঘাটতি সৃষ্টি করতে পারে। এটি দুদলকে আবারও পরস্পরের মুখোমুখি অবস্থানে ঠেলে দিতে পারে। বিচার শুরু হওয়ার আগেই মন্ত্রীরা যদি খালেদা জিয়াকে কাশিমপুর কারাগারে পাঠানোর কথা বলেন, তাহলে সাধারণ মানুষের মনে সন্দেহ বাড়বেই। গাড়ি পোড়ানো আর মানুষ হত্যার বিচার হোক, আপত্তি নেই। কিন্তু তার আগে একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে তদন্ত করলে ভালো হয়। কারণ অভিযোগ আছে, এসব ঘটনার সঙ্গে অন্য কোনো শক্তি জড়িত!জিয়ার মাজার সরিয়ে নেয়ার কথাও উঠেছে। এত বছর পর মাজার সরিয়ে নেয়ার প্রশ্ন তোলা নিঃসন্দেহে বিতর্কের মাত্রা বাড়াবে। আমরা বারবার বলে আসছি, জাতীয় নেতাদের সম্পর্কে কটূক্তি না করা এবং তাদের বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখার মধ্য দিয়েই জাতীয় ঐক্য নিশ্চিত করা সম্ভব। এ মুহূর্তে জাতীয় ঐক্যটা আরও জরুরি এ কারণে যে, আমরা নিু-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছি। প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখা এবং অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে জাতীয় ঐকমত্য জরুরি। আমরা বিগত তিন মাসের কালো অধ্যায়কে ভুলে যেতে চাই। এগোতে চাই সামনের দিকে। তাই জিয়ার মাজারের ব্যাপারে স্ট্যাটাস কো বজায় রাখাটা জরুরি। তবে সংসদ এলাকায় সাতজন রাজনীতিকের কবর নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। সংসদীয় এলাকায় এ ধরনের কবর থাকা যৌক্তিক নয়। প্রকাশ্য স্থানে তথাকথিত একটা কবরস্থান প্রতিষ্ঠা করে সংসদ এলাকার সৌন্দর্যই শুধু নষ্ট করা হয়নি, বরং একটা বাজে দৃষ্টান্তও স্থাপন করা হয়েছে। ভবিষ্যতে আরও কোনো কোনো জাতীয় নেতাকে এই তথাকথিত জাতীয় কবরস্থানে সমাহিত করার দাবি উঠতে পারে। ফলে এখনই এ ব্যাপারে একটি সিদ্ধান্ত নেয়া যায়। তবে অবশ্যই শহীদ জিয়াউর রহমানের সঙ্গে আমি এদের মেলাতে চাই না। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার অবদানের কারণেই তাকে যথাযথ সম্মান দেয়া প্রয়োজন। এর মাঝে কোনো রাজনীতি থাকা উচিত নয়।বিএনপি ভেঙে যেতে পারে কিংবা কোনো কোনো মহলের উদ্যোগে বিকল্প একটি বিএনপি গঠিত হতে পারে, এমন কথা এখন প্রায়ই উচ্চারিত হচ্ছে। এমনকি বিএনপির স্থায়ী পরিষদের দু-একজন সদস্যের টেলিফোন কথোপকথন ফাঁস হয়ে যাওয়ার ঘটনায় এ ধারণা আরও বদ্ধমূল হয়েছে যে, বিএনপির ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা একেবারে অমূলক নয়। পর্দার অন্তরালে এ ব্যাপারে সরকারের যে কোনো ভূমিকা নেই তাও শতভাগ নিশ্চয়তা দিয়ে বলা যাবে না। সম্প্রতি তিনজন সিনিয়র মন্ত্রীর বক্তব্যও এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি ভাঙার ব্যাপারে সরকারের কোনো গরজ নেই। আর স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম প্রশ্ন রেখেছেন, সরকার কেন বিএনপিকে ভাঙতে যাবে? অন্যদিকে সৈয়দ আশরাফ বলেছেন, এ ব্যাপারে তিনি জ্ঞাত নন। এ ধরনের মন্তব্য আমাকে ওই কথাটাই স্মরণ করিয়ে দেয়- ঠাকুর ঘরে কে রে, আমি কলা খাই না।বিএনপি ভেঙে যাবে কি-না, কিংবা বিএনপি আগামীতে তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারবে কি-না, এটা বিএনপির অভ্যন্তরীণ বিষয়। কিন্তু সরকারি দলের সিনিয়র নেতারা যখন এ ধরনের মন্তব্য করেন, তখন সন্দেহের সৃষ্টি হয় বৈকি! তবে এখানে কিছু কথা বলা প্রয়োজন। বিএনপি ভাঙা কোনো সমাধান নয়। একটি শক্তিশালী বিএনপি সরকার তথা গণতন্ত্রের জন্যও মঙ্গলজনক। বাংলাদেশে একদলীয় গণতন্ত্র নয়, বরং দ্বিদলীয় গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিই জনগণের মঙ্গল বয়ে আনতে পারে। অতীতে যারা বিএনপি ভেঙে আলাদা অবস্থান নিয়েছেন, তারা কেউই সফল হননি। ওবায়দুর রহমানের মতো সংগঠকও শেষ বেলায় আবার বিএনপিতে ফিরে এসেছিলেন। খালেদা জিয়া বাদে কেউই বিএনপির জন্য অপরিহার্য নন। জিয়া আর খালেদা জিয়াকে ঘিরেই বিএনপির রাজনীতি। ফলে বিএনপির স্থায়ী পরিষদের কোনো সদস্যকে ঘিরে বিএনপি ভাঙার প্রক্রিয়া যদি শুরু হয়, তা আদৌ কোনো ফল দেবে না। বরং তারা ইতিহাসে এক একজন মান্নান ভূঁইয়া হিসেবে পরিচিতি পাবেন। তবে পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে খালেদা জিয়াকে এখন দল গোছাতে হবে। স্থায়ী পরিষদে পরিবর্তন আনাও জরুরি। বিগত আন্দোলনে যারা পরীক্ষিত, তাদের স্থায়ী পরিষদে অন্তর্ভুক্তি করা প্রয়োজন। আমি অনেক স্থায়ী পরিষদের সদস্যকে চিনি, যাদের একদিনের জন্যও মাঠে দেখিনি। বয়সের ভারে তাদের অনেকেই ক্লান্ত। সংকটের সময় তারা খালেদা জিয়াকে সাহায্য ও সহযোগিতা করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। এদের স্থায়ী পরিষদে রাখার কোনো যুক্তি নেই। বিগত আন্দোলনের সময় আমরা দেখেছি, বেশ কজন বুদ্ধিজীবী বিএনপির পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন। তাদের কাউকে কাউকে স্থায়ী পরিষদে অন্তর্ভুক্ত করা অথবা তাদের দিয়ে একটি থিংক ট্যাঙ্ক গঠনের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। বয়োজ্যেষ্ঠ স্থায়ী পরিষদের সদস্যদের উপদেষ্টা পরিষদে পাঠানো যেতে পারে।বিএনপির একটি কাউন্সিল আয়োজন করাও জরুরি। কাউন্সিলে দল পুনর্গঠন এবং ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। বিএনপিকে আস্থায় নিয়েই চলমান রাজনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে যারা কাজ করেন, যারা গবেষণা করেন, তারা জানেন বিএনপি এ দেশের জনগণের একটা বড় অংশের প্রতিনিধিত্ব করে। সংসদীয় রাজনীতিতে বিএনপি একটি ফ্যাক্টর। সংসদে বিএনপি না থাকলে যে সংসদ অকার্যকর হয়ে পড়ে, বর্তমান সংসদ এর বড় প্রমাণ। সংসদে বিরোধী দলের জায়গায় জাতীয় পার্টিকে সাধারণ মানুষ গ্রহণ করে নেয়নি। জাতীয় ইস্যুতে সংসদে জাতীয় পার্টিরও কোনো ভূমিকা নেই। ভারতের সঙ্গে সম্প্রতি স্বাক্ষরিত চুক্তিগুলো নিয়ে সংসদে আলোচনা হওয়া উচিত ছিল (সংবিধানের ১৪৫(ক) ধারামতে, বিদেশের সহিত সম্পাদিত সকল চুক্তি রাষ্ট্রপতির নিকট পেশ করা হইবে এবং রাষ্ট্রপতি তাহা সংসদে পেশ করিবার ব্যবস্থা করিবেন)। কিন্তু তা হয়নি। ফলে সংসদে একটি শক্তিশালী বিরোধী দলের অনুপস্থিতি আমরা লক্ষ্য করছি। যদিও এটা সত্য, সংসদ বয়কটের রাজনীতি সংসদীয় রাজনীতিকে আরও উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারেনি। এর দায়ভার বিএনপির ওপর যেমন, তেমনি আওয়ামী লীগের ওপরও বর্তায়।একটি মধ্যবর্তী নির্বাচনের খবর এখন অনেক মহল থেকেই আলোচিত হচ্ছে। সংবাদপত্রেও এমন আভাস দেয়া হয়েছে। কিন্তু আমার বিবেচনায় বেশকিছু বিষয়ের ওপর নির্ভর করছে এই মধ্যবর্তী নির্বাচনের সম্ভাবনা। এক. বিএনপি আদৌ ওই নির্বাচনে অংশ নেবে কি-না? সরকার যতক্ষণ পর্যন্ত না নিশ্চিত হবে যে, বিএনপি এই নির্বাচনে অংশ নেবে, ততক্ষণ পর্যন্ত সরকার এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না। কারণ বিএনপির অবস্থান এখনও একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে। বিএনপি মনে করে, নিরপেক্ষ সরকার না হলে নয়া নির্বাচনে (একাদশ সংসদ) ৫ জানুয়ারির নির্বাচনেরই প্রতিফলন ঘটবে। সুতরাং সরকার অপেক্ষা করবে বিএনপির সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের জন্য। দুই. সরকার তখনই নির্বাচন দেবে, যখন বিএনপির একটা অংশ (বিকল্প বিএনপি, তৃণমূল বিএনপি) মূলধারা থেকে বেরিয়ে গিয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়ার আগ্রহ দেখাবে। তবে এ প্রক্রিয়ায় বিএনপির সিনিয়র নেতারা না থাকলে তা অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। তিন. আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চেয়ে ভারতের ভূমিকা এখানে মুখ্য। ভারত এ মুহূর্তে একটি নয়া নির্বাচন নাও চাইতে পারে। বর্তমান সরকারের সঙ্গে ভারতের নীতিনির্ধারকদের সম্পর্ক ভালো। ভারতের নীতিনির্ধারকরা চাইবে না এই সম্পর্ক নষ্ট হোক। তবে বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সঙ্গে ভারতের নীতিনির্ধারকরা সম্পর্ক রাখছেন। এ ক্ষেত্রে মধ্যবর্তী নির্বাচন নিয়ে যত কথাই বলা হোক, বাস্তবতা বলে ২০১৮ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বরের আগে নির্বাচনের সম্ভাবনা ক্ষীণ। আমরা সব দলের অংশগ্রহণে একটি নির্বাচন চাই বটে; কিন্তু তা নির্ভর করছে একদিকে যেমন বিএনপির ওপর, অন্যদিকে তেমনি সরকারের আচরণের ওপরও। তবে আমি নিশ্চিত নই সরকার আদৌ বিএনপির মূলধারাকে সঙ্গে নিয়ে নির্বাচনে যেতে চায় কি-না।বিএনপির পক্ষ থেকে একটি পজিটিভ অ্যাটিটিউড লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সৈয়দ আশরাফের একটি বক্তব্যকে, যেখানে তিনি প্রশাসনকে নিরপেক্ষ রাখার কথা বলেছেন, স্বাগত ও সমর্থন জানিয়েছে বিএনপি। ভারত অতিসম্প্রতি আন্তঃনদী সংযোগ বাস্তবায়ন করার যে উদ্যোগ নিয়েছে, সে ব্যাপারে সরকার তার দৃঢ় অবস্থানের কথা জানিয়েছে। বিএনপি এই ইস্যুতে সরকারকে সমর্থন করেছে। এটা জাতীয় ইস্যু। জাতীয় ইস্যুতে সরকারকে সমর্থন করছে বিএনপি। গত ২৫ জুলাই বিএনপির মুখপাত্র একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। ড. আসাদুজ্জামান রিপন এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাভাবিক রাজনীতি করার গ্যারান্টি চেয়েছেন। এটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য। এমনকি খালেদা জিয়া গত ২৫ জুলাই যে মন্তব্যটি করেছেন, তাও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার হতে হবে এমন কোনো মানে নেই, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে পারে। বিএনপির থিংক-ট্যাঙ্ক প্রফেসর এমাজউদ্দীন আহমদ মনে করেন, চার শর্ত পূরণ হলে প্রধানমন্ত্রীর অধীনে বিএনপি নির্বাচনে যেতে পারে। শর্তগুলো হল- নির্বাচন কমিশনকে ঢেলে সাজাতে হবে। নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে জড়িত আইনশৃংখলা বাহিনীসহ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের হতে হবে নিরপেক্ষ। মেয়াদ শেষে সংসদ ভেঙে দিতে হবে। নির্বাচনকালীন সরকারে বর্তমান রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীকে স্বপদে রেখেই একটি সরকার গঠিত হবে। এগুলোকে বিবেচনায় নিয়ে সরকার ইতিবাচক মনোভাব দেখাতে পারে।রাজনীতিতে সহাবস্থান প্রয়োজন। সহাবস্থানের স্বার্থে বিএনপিকে স্বাভাবিক রাজনীতি করার অধিকার দিতে হবে। বিএনপি যদি স্বাভাবিক রাজনীতি করার সুযোগ না পায়, তাহলে রাজনীতিতে অস্থিরতা থাকবেই। এ অস্থিরতা আমাদের অর্থনীতির জন্য কোনো মঙ্গল বয়ে আনবে না। দেশে অর্থনীতির ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। বাংলাদেশকে নিু-মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ২০১৮ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে এলডিসির খেতাব মুছে ফেলতে হবে। জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি এ ব্যাপারে ২০১৮ সালেই সিদ্ধান্ত নেবে। আর ২০২৪ সালে জাতিসংঘের কাছ থেকে স্বীকৃতি মিলবে উন্নয়নশীল দেশের। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা যদি নিশ্চিত না হয়, তাহলে বাংলাদেশ তার লক্ষ্য অর্জন করতে পারবে না। তাই বিএনপির সঙ্গে যে কোনো পর্যায়ে একটি সংলাপ প্রয়োজন। খালেদা জিয়ার সর্বশেষ বক্তব্যকে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় নিয়ে এ সংলাপ শুরু করা যেতে পারে। Daily Jugantor ৩০ জুলাই, ২০১৫

0 comments:

Post a Comment