রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

ইরান সমঝোতা ও উপসাগরীয় অঞ্চলের রাজনীতি

ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ব্যাপারে ভিয়েনায় ইরানের সঙ্গে ৬ জাতির সমঝোতা এখন আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে অন্যতম একটি আলোচিত বিষয়। এ চুক্তির মধ্য দিয়ে উপসাগরীয় অঞ্চলে আরেকটি যুদ্ধ এড়ানো গেছে বটে কিন্তু রেখে গেছে বিভিন্ন প্রশ্ন। এ চুক্তি যে উপসাগরীয় অঞ্চলের রাজনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে, তা বলার আর অপেক্ষা রাখে না। শুধু তা-ই নয়, এ অঞ্চলের রাজনীতিতে তা গুণগত এক পরিবর্তনও ডেকে আনতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের জন্যও এ ধরনের একটি চুক্তির প্রয়োজন ছিল। এমনিতেই সিরিয়ায় জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে এক ধরনের ‘যুদ্ধ’ শুরু করে ওবামা প্রশাসন। সেখানে কোনো ‘বিজয়’ নিশ্চিত করতে পারেনি। এমন এক পরিস্থিতিতে ইরানের পরমাণু প্রকল্পে বিমান হামলা চালিয়ে এবং তা ধ্বংস করে দিয়ে ওবামা প্রশাসন উপসাগরীয় অঞ্চলে আরেকটি ‘ফ্রন্ট’ ওপেন করতে চায়নি। ফলে ইরানের সঙ্গে একটি সমঝোতা প্রয়োজন ছিল। ইরানের পারমাণবিক প্রকল্প নিয়ে যে সমঝোতা হয়েছে, এতে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ওপর এক ধরনের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এতে দেখা যায়Ñ ১. আগামী ১০ বছরের মধ্যে ইরান পারমাণবিক অস্ত্র বানাতে পারবে না। তাদের পরমাণুকেন্দ্রে চলবে নজরদারি। ২. অস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকছে। ৩. তেহরান শর্ত ভাঙলে ৬৫ দিনের মধ্যে ফের কিছু নিষেধাজ্ঞা বহাল হবে। ৪. ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরিতে কতটা এগিয়েছে, তা তদন্ত করবে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা বা আইএইএ। ৫. ফের আইএইএ ইরান বিরোধ হলে তা মেটাবে সালিশি বোর্ড। এ চুক্তির পর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে ইরানের যে সম্পদ জব্দ করা হয়েছিল, তা ইরানকে ফেরত দেওয়া হবে। অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার ফলে ইরান তার যাত্রীবাহী বিমান সংস্থার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ আমদানি করতে পারবে। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ১০ বছর পর ইরান তার পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে আরও গবেষণা ও উন্নয়নের কাজ করতে পারবে। নিঃসন্দেহে এ অঞ্চলের রাজনীতির জন্য এ চুক্তি আপাতত উত্তেজনা হ্রাস করতে সাহায্য করবে। ওবামা প্রশাসনের ওপর ইসরায়েলি প্রশাসনের প্রচ- একটা ‘চাপ’ থাকা সত্ত্বেও ওবামা প্রশাসন ওই ধরনের শর্তে রাজি হয়েছিলেন। ফলে আলোচনায় বাকি বৃহৎ শক্তিগুলোও রাজি হয়ে যায়। ওবামার জন্য একটি প্লাস পয়েন্ট হচ্ছে, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট কার্টার এবং প্রায় ১০০ সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত ওবামাকে সমর্থন করেছেন। কংগ্রেস সদস্যদের বিরোধিতার মুখে ওবামা এটিও জানিয়ে দিয়েছেন, কংগ্রেস যদি এই সমঝোতা প্রত্যাখ্যান করেÑ তাহলে তিনি ‘ভেটো’ দেবেন। অর্থাৎ তিনি চান কংগ্রেস এ চুক্তি অনুমোদন করুক। চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হলেও এখনই কার্যকর হচ্ছে না। বেশ কয়েকটি দেশের সংসদে এ চুক্তিটি অনুমোদিত হতে হবে। মার্কিন কংগ্রেস, ইউরোপীয় পার্লামেন্টের পাশাপাশি ইরানের পার্লামেন্টে এটি অনুমোদিত হতে হবে। না হলে এটি অকার্যকর হয়ে যাবে। ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রসহ ৬ জাতির যে চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়েছে, সেটিকে ‘ঐতিহাসিক’ভাবে আখ্যায়িত করা হলেও চুক্তিটির ভবিষ্যৎ নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। অবশ্যই মার্কিন কংগ্রেসে এ চুক্তিটি অনুমোদিত হতে হবে। না হলে চুক্তিটির কার্যকারিতা থাকবে না। কংগ্রেসের উভয়কক্ষ, সিনেট ও প্রতিনিধি পরিষদ এখন ওবামাবিরোধী রিপাবলিকানদের নিয়ন্ত্রণে। তাদের কেউ কেউ এরই মধ্যে এ চুক্তির মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষিত হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন। ওবামার ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সমর্থকরা সবাই যে খুশি, তাও তাদের কারও কারও মন্তব্যে মনে হয়নি। বলা ভালো, মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে অন্যতম একটি ফ্যাক্টর হচ্ছে ইসরায়েল। চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু মন্তব্য করেছেন, ‘এটি একটি ঐতিহাসিক ভুল’। ইসরায়েলের নীতিনির্ধারকদের কেউ কেউ চুক্তির কোনো কোনো ধারা নিয়ে সমালোচনা করেছেন। ফলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা ওই চুক্তির প্রশংসা এবং ইরানি প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি এই চুক্তির মধ্য দিয়ে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা সৃষ্টি করবে বলে মন্তব্য করলেও ঈশান কোণে একটি ‘কালো মেঘ’ থাকলই। এখানে একটি কথা বলা প্রয়োজন যে, ইরান পারমাণবিক বোমা তৈরি করছেÑ এই অভিযোগ তুলে ২০০৬ সালে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ইরানের ইউরোপিয়ান সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি বাতিল করার দাবি সংবলিত একটি প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। এরপর অন্তত এ সংক্রান্ত আরও ছয়টি প্রস্তাব পরে গ্রহণ করা হয়েছে এবং ইরান ওই কর্মসূচি বাতিল না করায় ২০১০ সালে ইরানের বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক মালিকানার সম্পদ জব্দসহ দেশটির বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবরোধ এবং নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে জাতিসংঘ। তবে ২০০৬ সাল থেকেই ইরানের সঙ্গে ৬ জাতি (যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চিন, ফ্রান্স, রাশিয়া ও জার্মানি) আলোচনা চলে আসছিল। এতে কোনো ফল পাওয়া যাচ্ছিল না। কিন্তু ২০১৩ সালে ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে উদারপন্থী হিসেবে পরিচিত হাসান রুহানি বিজয়ী হলে পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে ইরানের সম্পর্কের ক্ষেত্রে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দেখা যায়। ফলে এই ৬ জাতি আলোচনা আরও গতি পায়। গত বছরের নভেম্বরে একটি চুক্তি নিয়ে আলোচনা শুরু হয় এবং এপ্রিলে (২০১৫) সুইজারল্যান্ডের লুজানে একটি খসড়া চুক্তিতে ইরান ও ৬ জাতি উপনীত হয়। গত ৩০ জুনের মধ্যে ওই খসড়া চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা ছিল। তা হয়নি। এখন চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হলো। এ চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে অন্তত একটি জিনিস স্পষ্ট হলো। তা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক বৃদ্ধির একটি সম্ভাবনা। মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতির প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এ সম্পর্ক আরও উন্নত করার প্রয়োজন রয়েছে। কেননা যুক্তরাষ্ট্রের সমাজ, প্রশাসন, সেনাবাহিনীতে এখনো ১৯৭৯ সালের ইরান বিপ্লবের পর দীর্ঘ ৪৪৪ দিন রেভলিউশনারি স্টুডেন্টস কর্তৃক তেহরানের মার্কিন দূতাবাস দখল করে নেওয়ার ঘটনার স্মৃতি একটি ‘ক্ষতচিহ্ন’ হিসেবে রয়ে গেছে। ফলে সম্পর্ক বৃদ্ধির সম্ভাবনাটা অত সহজ ছিল না। এরপর যোগ হয় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি। ওই ঘটনার দীর্ঘ ৩৬ বছর পর মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি এই দেশ দুটিকে আরও কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। তাই এ চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হলো যুক্তরাষ্ট্রের ‘বন্ধ’ ইসরায়েলের আপত্তি সত্ত্বেও। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্র্যাটেজিস্টরা মনে করেনÑ মধ্যপ্রাচ্য, বিশেষ করে ইরাক-সিরিয়ায় জঙ্গিবাদী ইসলামিক স্টেটের অগ্রযাত্রা ঠেকাতে হলে তাদের ইরানের সমর্থনের প্রয়োজন রয়েছে। অনেকের স্মরণ থাকার কথা, গত নভেম্বরে (২০১৪) বারাক ওবামা স্বীকার করেছিলেন, তিনি গোপনে ইরানি সমর্থন চেয়ে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনিকে একটি চিঠি লিখেছিলেন। প্রতিউত্তরে খামেনিও তাকে একটি গোপন চিঠি পাঠিয়েছিলেন। আইএস জঙ্গিদের ঠেকাতে খামেনির সমর্থন চেয়েছিলেন ওবামা। পরে ইয়েমেনে ‘কুলি বিদ্রোহ’ প্রমাণ করল, এখানেও একটি স্থিতিশীল সরকার গঠনে ইরানের সমর্থন প্রয়োজন রয়েছে। কেননা হুতিরা শিয়া সম্প্রদায়ভুক্ত এবং অভিযোগ আছে, হুতি বিদ্রোহীরা ইরান থেকে আর্থিক ও সামরিক সাহায্য পেয়ে থাকে। অবশ্য ইরান বারবার তা অস্বীকার করে আসছে। এখন ‘ইরান চুক্তি’ সাক্ষরিত হওয়ায় সৌদি আরবের সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক আরও স্বাভাবিক হবে এবং যুক্তরাষ্ট্র এটিই চাইছে। পারস্যীয় অঞ্চলের রাজনীতিতে একটি সৌদি-ইরান জোট একটি বড় ভূমিকা পালন করুকÑ এটি চাইবেন মার্কিন স্ট্র্যাটেজিস্টরা। কেননা ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহে সেখানে সরকারের পতন ঘটে এবং প্রেসিডেন্ট দেশত্যাগ করতে বাধ্য হন। এরপর মার্চে সৌদি বিমান হুতি বিদ্রোহী ঘাঁটিতে বোমা হামলা চালালেও সেখানে স্থিতিশীলতা ফিরে আসেনি। এখন সৌদি-ইরান একটি ‘সমঝোতা’ সেখানে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনে সাহায্য করবে। একই কথা প্রযোজ্য সিরিয়ার ক্ষেত্রেও। সেখানে একদিকে যেমনই আসাদবিরোধীরা (যাদের যুক্তরাষ্ট্র আর্থিক ও সামরিকভাবে সাহায্য করছে) প্রেসিডেন্ট আসাদকে উৎখাতের জন্য ‘যুদ্ধ’ করছে, অন্যদিকে তেমনি আইএসএর জঙ্গিরা সিরিয়ার ভেতরে তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকা আরও সম্প্রসারিত করছে। এক্ষেত্রে মার্কিন সমরনায়করা মনে করেন, সৌদি-ইরান ‘সমঝোতা’ সিরিয়ায়ও একটি ‘ঐকমত্যের সরকার’-এর জন্ম দিতে পারে। উপরন্তু লেবাননে ইরানি প্রভাব এখন কমে যেতে পারে। তা সৌদি রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য কোনো হুমকি সৃষ্টি করবে না। তবে নিঃসন্দেহে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা এখানে উল্লেখ করার মতো। যুক্তরাষ্ট্র যদি ‘ইরান চুক্তি’র পরও সৌদি আরবের সঙ্গে ইরানের বিরোধ জিইয়ে রাখে, তাহলে এ অঞ্চলে আইএসএর প্রভাব ও কর্তৃত্ব বাড়বে। ১০৭ পৃষ্ঠাব্যাপী ‘ইরান চুক্তি’তে ইরানের করণীয় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। তবে চুক্তির দুটি দিক বিশেষভাবে উল্লেখ করা যায়। প্রথমত, চুক্তিতে ইরানের পরমাণু তৎপরতা কমিয়ে আনা হবে এবং পূর্ণ আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণে থাকবে ইরানের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো। ইরান কোনো কোনো পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র অন্য দেশে স্থানান্তরিত করবে এবং আগামীতে নতুন কোনো পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করবে না। দ্বিতীয়ত, ইরানের ওপর আরোপিত অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ধীরে ধীরে শিথিল করা হবে। তবে ইরানের ওপর থেকে অস্ত্র রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা আপাতত তুলে নেওয়া হচ্ছে না। এখন ইরানের ওপর থেকে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হলে ইরান এ অঞ্চলে অন্যতম একটি অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হবে। ইরানে বিনিয়োগ বাড়বে, বিশেষ করে ইরানের গ্যাস ও তেল সেক্টরে বিনিয়োগ বাড়বে। তবে অনেক বিষয়ের ওপর এ চুক্তির ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। ইসরায়েলের বিরোধিতা ও মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের আপত্তির মুখে এ চুক্তিটি অকার্যকর হয়ে যেতে পারে। অবশ্য ইরানে ব্যাপকভাবে এ চুক্তিটি প্রশংসিত হয়েছে এবং ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি এ চুক্তিটি সমর্থন করেছেন। এ থেকে এটি স্পষ্ট হয়ে গেল, চুক্তির ব্যাপারে ইরানের প্রেসিডেন্ট রুহানির স্পষ্ট নির্দেশ থাকলেও তিনি খামেনির পরামর্শ ছাড়া এদিকে অগ্রসর হননি। এটিই হচ্ছে বাস্তববাদী নীতি। দীর্ঘ ৩৬ বছর ইরান আন্তর্জাতিক আসরে একা। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির কারণে ইরান বিশ্বে একা হয়ে গিয়েছিল। ইরানের বৈদেশিক আয়ের বড় উৎস পেট্রলিয়াম সেক্টরে কোনো বিনিয়োগ আসছিল না, এমনকি ইরান তেল রপ্তানি করতেও পারছিল না। এ জন্যই ইরানিদের প্রয়োজন ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন। কট্টর শিয়া ধর্মীয় ভাবধারায় বিশ্বাসী ইরানি ধর্মীয় নেতারা এটি উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। এটিই হচ্ছে বাস্তববাদী নীতির মূল কথা। ২০১৬ সালে ইরানের পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আমার বিশ্বাস, ওই নির্বাচনে রুহানি সমর্থকরা বিজয়ী হবেন। একই সঙ্গে ২০১৭ সালে ইরানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। ওই নির্বাচনে রুহানির দ্বিতীয়বারের মতো বিজয়ী হওয়ার পথও প্রশস্ত হবে। ইসরায়েলের বিরোধিতার কারণে মার্কিন কংগ্রেসে ওই চুক্তির বিরোধিতা রয়েছে। ২০১৬ সালের নভেম্বর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ওই ইরান ইস্যু কিছুটা হলেও প্রভাব ফেলতে পারে। ফলে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি কিনটনের ‘সহজ বিজয়’ একটি বড় অন্তরায় সৃষ্টি করতে পারে। রিপাবলিকানদের অবস্থান এতে শক্তিশালী হবে। অবশ্য হিলারি কিনটন স্পষ্ট করেই বলেছেন, তিনি কোনো অবস্থাতেই ইরানকে পারমাণবিক বোমা বানাতে দেবেন না। মার্কিনিদের জন্য একটি সুযোগ এসেছে উপসাগরীয় অঞ্চলে এক ধরনের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে। ‘যুদ্ধবাজ’ মার্কিন প্রশাসন যদি ওই ‘সম্ভাবনা’ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সেখানে যুদ্ধ আরও প্রলম্বিত হবে। ইরান চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর ইরানের আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন দার্শনিক রামিন জাহানবেগলু (জধসরহ ঔধযধহনবমষড়ড়) একটি প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতির মেরুকরণে এ মুহূর্তে ইরান একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ’। এটিই হচ্ছে মোদ্দা কথা। ইরানকে ছাড়া যে উপসাগর তথা মধ্যপ্রাচ্যে একটি স্থায়ী শান্তি নিশ্চিত করা যাবে না, এটি প্রমাণিত হয়েছে। এখন দেখার পালা, মার্কিননীতিতে ওই পরিবর্তনটি কীভাবে প্রতিফলিত হয়। অনেকেই স্মরণ করতে পারেন, ১৯৭৯ সালের ইরান বিপ্লবের আগে অর্থাৎ রেজা শাহ পাহলভির শাসন আমলে মধ্যপ্রাচ্যের ব্যাপারে যে মার্কিননীতি, এর কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল ইরান। ইরানকে সঙ্গে নিয়েই যুক্তরাষ্ট্র তার স্বার্থ নিশ্চিত করেছিল। কিন্তু ওই দৃশ্যপট বদলে যায় ইরানে ইসলামি বিপ্লবের পর। এখন নতুন আঙ্গিকে ইরান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক ওই পুরনো বৃত্তে ফিরে যাচ্ছে কি না, সেটিই দেখার বিষয়। Daily Amader Somoy 22.07.15

0 comments:

Post a Comment