ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরের পর বাংলাদেশের প্রাপ্তি কী? এ প্রশ্নটা এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। কেননা ১টি চুক্তি, ৮টি সমঝোতা ও একটি প্রটোকল স্বাক্ষরিত হয়েছে। যা মূলত ভারতের স্বার্থই রক্ষা করবে। বাংলাদেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোনো চুক্তি এই সফরে স্বাক্ষরিত হয়নি। তিস্তার পানিবণ্টনের ব্যাপারে একটি চুক্তির কথা বলা হলেও, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তির মুখে এই চুক্তিটি আর স্বাক্ষরিত হলো না এবং পানিবণ্টনের বিষয়টি প্রশ্নের মুখে থাকল। চুক্তি স্বাক্ষরের আগেই চুক্তির বিরুদ্ধে যখন পশ্চিম দিনাজপুর ও কুচবিহারে বিক্ষোভ হয়, তখন আমরা এই চুক্তিটি নিয়ে তেমন কিছু আশা করতে পারি না। নবায়নযোগ্য জ্বালানি, বিটিভি ও দূরদর্শনের মধ্যে চুক্তি, রাষ্ট্র রক্ষা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে যা অত্যন্ত সাদামাটা। এর জন্য এই ‘হাই লেভেল ভিজিট’-এর প্রয়োজন ছিল না। বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষিত হয় এমন কোনো চুক্তি না থাকায়, মনমোহন সিংয়ের সফরের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন থাকবেই। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে যেসব চুক্তি বা সমঝোতার প্রয়োজন ছিল, তার একটিও স্বাক্ষরিত হয়নি। যা স্বাক্ষরিত হয়েছে, তাতে করে ভারতের স্বার্থই রক্ষিত হবে। বিশেষ করে ১৯৭৪ সালের ইন্দিরা-মুজিব প্রটোকল এবং উন্নয়ন ও সহযোগিতা বিষয়ক ফ্রেমওয়ার্ক সংক্রান্ত যে সমঝোতা হয়েছে তা প্রশ্নের মুখেই থাকবে। কেননা এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলা হয়নি।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
tsrahmanbd@yahoo.com
তিস্তার পানিবণ্টনের বিষয়টি ছিল আমাদের জন্য সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ। এর সাথে বাংলাদেশের স্বার্থ জড়িত। ১৯৮৭ সালের আগ পর্যন্ত তিস্তা নদীই ছিল উত্তরবঙ্গের প্রধান নদী। কিন্তু পানিবণ্টনের ব্যাপারে ভারতের একগুঁয়েমি, ঢিলেমি ও হঠকারিতার ফলে তিস্তা এখন রুক্ষ হয়ে উঠেছে। তিস্তার বুকজুড়ে এখন শুষ্ক মওসুমে কেবল বালু আর বালু। অন্যদিকে বর্ষকালে মূল গতিপথ বদলে তিস্তা প্রচণ্ডভাবে আছড়ে পড়ে দুই তীরে। ফলে নির্দয় ভাঙনে ফি বছর ২০ হাজার মানুষ বাড়িঘর, গাছপালা, আবাদি জমি হারিয়ে ভিখারি হয়ে পড়ে। ১৯৮৫ সালে তিস্তার উৎসমুখে এবং তিস্তা ব্যারেজ সেচ প্রকল্পের মাত্র ৬৫ কিলোমিটার উজানে ভারত গজলডোবা নামক স্থানে ব্যারেজ নির্মাণ করে। এর ফলে তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্পটি এখন একরকম অকার্যকর। এই প্রকল্পের আওতায় রয়েছে ৭ লাখ ৫০ হাজার হেক্টর কৃষি জমি। তিস্তার শাখা নদীগুলো এখন পানিশূন্য। ৬৫ কিলোমিটার নদী ভরাট হয়ে গেছে এরই মাঝে। তিস্তার পানিবণ্টনের ব্যাপারে অতীতে বাংলাদেশের প্রস্তাব ছিল তিস্তা নদীর ৮০ ভাগ পানি সমানভাগে ভাগ হবে, আর ২০ ভাগ রেখে দেয়া হবে নদীর জন্য। কিন্তু ভারত সে প্রস্তাব গ্রহণ না করে উল্টো তিস্তার সমস্ত এরিয়া তাদের বেশি, এ রকম দাবি তুলে বাংলাদেশ তিস্তার পানির সমান ভাগ পেতে পারে না বলে যুক্তি দেখিয়েছিল। ভারত তিস্তা ব্যারেজের সেচ এলাকা কমিয়ে দ্বিতীয় প্রকল্প বাতিল করার জন্য চাপ দিয়েছিল এবং সর্বশেষ এক চিঠিতে তিস্তার মাত্র ২০ ভাগ পানি ভাগাভাগি করার বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিরোধিতা আগামীতে বাংলাদেশ কতটুকু পানি পাবে, তা নিয়ে একটি ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর অত্যন্ত ক্ষমতাবান উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান সম্প্রতি নয়াদিল্লী সফর শেষ করে আমাদের জানিয়েছিলেন তিস্তা নদীর ওপর ‘নির্ভরশীল জমি ও জনসংখ্যার ভিত্তিতে’ নদীর পানির ভাগাভাগি হবে। এর ব্যাখ্যা কি? আমরা কী তিস্তা নদীর ওপর নির্ভরশীল আমাদের জমি ও জনসংখ্যার সঠিক পরিসংখ্যান ভারতীয় পক্ষকে দিয়েছি? নাকি ভারত যে পরিসংখ্যান দিয়েছে, সেই পরিসংখ্যান আমরা গ্রহণ করে নিয়েছি? অবশ্যই একটি চুক্তি ভালো, যদি সেই চুক্তিতে জাতীয় স্বার্থ রক্ষিত হয়। যে চুক্তিতে ভারতীয় স্বার্থ রক্ষিত হবে, সেই চুক্তিকে আমরা সমর্থন করতে পারি না। ১৯৯৬ সালে গঙ্গার পানি চুক্তি আমরা করেছিলাম। কিন্তু চুক্তি অনুযায়ী আমরা পানি পাচ্ছি না। প্রতি বছরই সংবাদপত্রগুলো আমাদের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে এ কথাটা। এখানে জাতীয় স্বার্থটিই হলো আসল। মমতা ঢাকায় আসলেন না। কেননা মমতা তার জাতীয় তথা ভারতীয় স্বার্থটাকেই প্রাধান্য দিলেন। এ বিষয়টায় আমাদের কি কিছু শেখার আছে? আমরাও তো চুক্তি স্বাক্ষরের আগে সকল বিরোধী দলের সাথে আলোচনা করে একটা ঐক্যমতে পৌঁছতে পারতাম। কিন্তু সেটা আমরা করিনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থটাকেই পাধান্য দিয়ে এখন এ চুক্তির বিরোধিতা করলেন। অথচ আমরা বারবারই বলেছি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলাদেশের বন্ধু এবং বাংলাদেশের স্বার্থ তিনি দেখবেন। কিন্তু তিনি দেখলেন ভারতীয় স্বার্থ এটাই আসল কথা। ফেনী নদীর পানি প্রত্যাহার নিয়েও কথা আছে। ভারত ত্রিপুরার সাবরুমে সুপেয় পানির জন্য একটি শোধনাগার নির্মাণ করতে ফেনী নদী থেকে ১ দশমিক ৮২ কিউসেক পানি প্রত্যাহার করার অনুরোধ জানিয়েছিল। এখন শোনা যাচ্ছে ভারত সেচ কাজের জন্যও ফেনী নদীর পানি ব্যবহার করতে চায়। ফেনী নদীর পানি প্রত্যাহারের ফলে মুহুরী সেচ প্রকল্পের আওতাধীন চট্টগ্রাম ও ফেনী জেলার ইরি সেচ হুমকির মুখে থাকবে। আমরা কী এটা বিবেচনায় নিয়েছি?
ভারত থেকে ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ক্রয় করার কথা ছিল। চুক্তি হয়নি, এতে বাংলাদেশ খুব বেশি লাভবান হবে না। বিদ্যুৎ কিনতে ভারতের ন্যাশনাল থারমাল পাওয়ার কোম্পানিকে কমিশন বাবদ ইউনিট প্রতি ৪ পয়সা করে বছরে ৭ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে। এটা মূলত দালালি ‘ফি’। শুধু তাই নয় ভারত সীমান্তের যতদূর থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে বাংলাদেশকে তত বেশি সঞ্চালন ফি (হুইলিং চার্জ) দিতে হবে। ভারতে খুচরা পর্যায়ে প্রতি ইউনিট বিদু্যুতের মূল্য ২ রুপি। বাংলাদেশ এখন কত টাকায় বিদ্যুৎ কিনবে (প্রতি ইউনিট), তা স্পষ্ট নয়। কোন বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ আসবে, তাও আমরা জানি না। বিদ্যুৎ আমদানিতে কোনো জটিলতা হলে, তা কোন আইনে হবে, কোথায় মীমাংসা হবে, তাও স্পষ্ট নয়। উপরন্তু ভারত থেকে বিদ্যুৎ আনতে আমাদের অবকাঠামো গড়ে তুলতে হবে। সব মিলিয়ে বিদ্যুৎ আনতে আমাদের যে বিনিয়োগ, ওই বিনিয়োগ দিয়ে আমরা স্থানীয়ভাবেই বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারতাম। খুলনা এবং চট্টগ্রামে কয়লাভিত্তিক এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য একটি চুক্তি হবে। এই কয়লা আসবে ভারত থেকে, যা অত্যন্ত নিকৃষ্টমানের। এখানে যে প্রশ্নটি করা যায়, তা হচ্ছে যেখানে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে প্রচুর কয়লার সন্ধান পাওয়া গেছে এবং তা উত্তোলিতও হচ্ছে, সেখানে কয়লানীতি প্রণয়ন না করে কেন আমরা ভারতীয় কয়লার ওপর নির্ভরশীল হলাম? এই নির্ভরশীলতার মধ্য দিয়ে জাতীয় স্বার্থ রক্ষিত হবে না।
ছিটমহল ও অপদখলীয় জমি বিনিময়, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, সুন্দরবনের বাঘ রক্ষা, বিটিভি ও দূরদর্শনের সম্প্রচার বিনিময় ইত্যাদি যেসব চুক্তি বা সমঝোতা হয়েছে, তা আমার বিবেচনায় খুব গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমার বিবেচনায় যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা বা চুক্তি হওয়া উচিত, তা হচ্ছে টিপাইমুখ বাঁধ সম্পর্কে একটি সুস্পষ্ট বক্তব্য, যা যৌথ ইশতেহারে থাকতে হবে। বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে ভারতকে উদ্যোগী হতে হবে স্পষ্ট করে। ট্যারিফ, প্যারা ট্যারিফের নামে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা চলবে না। এই ট্যারিফ কমানোর কোনো উদ্যোগ ভারত কখনো নেয়নি। বাণিজ্য ঘাটতি একটি বড় বাধা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাথে বাণিজ্য ঘাটতির যে পরিমাণ তার প্রায় অর্ধেক ভারতের সাথে। ২০১০-১১ সালে এই ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৩ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার, যা এর আগের বছরে ছিল ২ দশমিক ৯০ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ ঘাটতির পরিমাণ দিন দিন বাড়লেও ঘাটতি কমানোর কোনো উদ্যোগ নেই। ভারত অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। যেমন বাংলাদেশের মেলামাইনের চাহিদা ভারতে থাকলেও বাংলাদেশী উদ্যোক্তাদের প্রায় ৩২ ভাগ শুল্ক পরিশোধ করতে হয়। ভারত বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের কোটা ৮০ লাখ পিচ থেকে বাড়িয়ে ১ কোটিতে উন্নীত করলেও, অশুল্কের কারণে বাংলাদেশী পোশাক রফতানিকারকরা উৎসাহী হচ্ছেন না। সম্প্রতি ভারত বাংলাদেশ থেকে আমদানিকৃত সিমেন্টের ওপর অতিরিক্ত ১৮ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। ভারত আগামী ৩ বছরের জন্য ১০ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ ২২৪টি পণ্য বাংলাদেশে রফতানি করার অনুমতি চেয়েছিল। আমরা ভারতে বাংলাদেশী ৬১টি পণ্য শুল্কমুক্তভাবে প্রবেশাধিকারের অনুমতি চেয়েছিলাম। এখন আমরা পেয়েছি ৪৬টি গার্মেন্টস পণ্যের প্রবেশাধিকার। দক্ষিণ এশীয় মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (সাফটা) এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার বিধান অনুযায়ী ভারতে পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নানা ধরনের সুবিধা পাওয়ার কথা। বাংলাদেশ সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে স্বল্পোন্নত। এ জন্য বাংলাদেশের বিশেষ সুবিধা পাওয়ার কথা। কিন্তু ভারত সেই সুবিধা বাংলাদেশকে কখনই দেয়নি। এখন শোনা যাচ্ছে মনমোহনের সফরের সময় এই অশুল্ক বাধা দিয়ে আদৌ কোনো আলোচনা হবে না। যেখানে আমাদের স্বার্থ জড়িত, সেই বিষয়গুলো নিয়ে যদি আলোচনা নাই হয়, তাহলে এই সরকারকে আমরা সফল বলতে পারি না।
টিপাইমুখ নিয়ে আদৌ আলোচনার কোন সুযোগ নেই। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের বলেছিলেন ভারত এমন কিছু করবে না, যাতে বাংলাদেশের স্বার্থ ুণœ হয়। কিন্তু সম্প্রতি হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিয়েছেন নর্থ ইস্টার্ন ইলেকট্রিক পাওয়ার করপোরেশনের চেয়ারম্যান প্রেমাচান্দ পংকোজ। তিনি বাঁধ নির্মাণের সত্যতা স্বীকার করেছেন। বাঁধটি নির্মিত হলে পুরো বৃহত্তর সিলেট অঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত হবে। গ্রীষ্মকালে ৯৪৬ কি. মি. এলাকা মরুভূমির ন্যায় শুকনো থাকবে। এই বিষয়টি যৌথ ইশতেহারে থাকবে না কেন? টিপাইমুখ বাঁধ আমাদের জাতীয় স্বার্থের সাথে সম্পর্কিত।
ট্রানজিট নিয়ে কোনো চুক্তি হয়নি। তবে ট্রানজিটের কাঠামোর বিষয়টি নিয়ে আমাদের এখন ভাবতে হবে। ব্যাপারে সমঝোতা হচ্ছে এখন। অর্থাৎ কীভাবে ট্রানজিট চলবে, এ ব্যাপারে একটি সমঝোতা। ভারত ১৫টি রুটে (নদী পথ, সড়ক পথ ও রেলযোগাযোগ) ট্রানজিট চাচ্ছে। ভারত থেকে ঋণ নিয়ে ভারতের জন্যই আমরা অবকাঠামো তৈরি করে দিচ্ছি। ওই ঋণ (১০০ কোটি ডলার) সুদমুক্ত নয়। আমাদের অবকাঠামো ভারত ব্যবহার করবে। আমাদের স্বার্থ এখানে নেই। প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী নয়াদিল্লী সফর করে এসে আমাদের জানিয়ে দিলেন নতুন করে ট্রানজিট চুক্তি করার কোনো প্রয়োজন নেই। কেননা, ১৯৭২ সালে স্বাক্ষরিত ইন্দিরা-মুজিব চুক্তিতে ভারত এই ট্রানজিট সুবিধা পেতে পারে। ড. রিজভীর এই বক্তব্যের ব্যাখ্যা প্রয়োজন। যদি ১৯৭২ সালের চুক্তি অনুযায়ী ভারতের ট্রানজিট প্রাপ্তির সুযোগ থাকতো, তাহলে ভারত অনেক আগেই এই সুযোগ গ্রহণ করতো। অন্তত গওহর রিজভীর বক্তব্যের জন্য অপেক্ষা করতে হতো না। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ঢাকা সফর করে গেলেন। তার সাথে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর ৪ জন মুখ্যমন্ত্রী এসেছিলেন, (তরুণ গগৈ-আসাম, মানিক সরকার-ত্রিপুরা, মুকুল সাংমা-মেঘালয়, পুলাল-থানওয়ালা-মিজোরাম)। এতেই বোঝা যায় ভারতের স্বার্থ কোথায়। ভারত বাংলাদেশকে সাথে নিয়ে একটি উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা গড়ে তুলতে চায়। এ ধরনের উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষিত হওয়ার আদৌ কোনো সম্ভাবনা নেই। ভারত আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র। আমরা ভারতের বন্ধুত্ব চাই। কিন্তু সেই বন্ধুত্ব হতে হবে সমমর্যাদাভিত্তিক। জাতিসংঘ সনদের ২নং এবং ৪.১নং ধারায় যে সমতা ও সমঅধিকারের কথা বলা হয়েছে, এর আলোকেই আমরা ভারতের সাথে স্থায়ী দৃঢ় সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই। কিন্তু ভারত যদি একরতফাভাবে ও নিজ স্বার্থকে বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলে, তাতে সাধারণ মানুষের কোনো সমর্থন থাকবে না। সাধারণ মানুষ ভারতের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলবেই। সীমিত সময়ের জন্য হয়তো সুবিধা পাওয়া যাবে, কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্ব তাতে তৈরি হবে না। আমরা আশা করবো ভারতের নেতৃবৃন্দের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। বাংলাদেশ একটি ছোট রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচনায় না নিয়ে এবং ‘বড় ভাই’ ও কর্তৃত্ববাদী আচরণ না করে সমস্যাগুলোর দিকে ভারতের নেতৃবৃন্দ যদি নজর দেন, তাহলে বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্ব একটি উদাহরণ সৃষ্টি করতে পারে। এতে করে আন্তর্জাতিক আসরে ভারতের গ্রহণযোগ্যতা আরো বাড়বে।
ড. তারেক শামসুর রেহমান
প্রফেসর, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ,জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
tsrahmanbd@yahoo.com
0 comments:
Post a Comment