মনমোহন সিং-এর ঢাকা সফর নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেশি। যে ক’টি চুক্তি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবে, তাতে ভারতের পাল্লাটা ভারি। বাংলাদেশের প্রাপ্তি এখানে কম। তিস্তার পানি বন্টন চুক্তিতে মমতা ব্যানার্জির আপত্তি এবং পশ্চিম দিনাজপুর ও কুচবিহারে বিক্ষোভ এই চুক্তির ভবিষ্যেক একটি প্রশ্নের মাঝে ঠেলে দিয়েছে। তিস্তার পানি বন্টনের উপর বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের চাষাবাদ অনেকাংশ নির্ভরশীল। তিস্তার পানির উপর নির্ভরশীল ৭ লাখ ৫০ হাজার হেক্টর কৃষি জমি এখন ঝুঁকির মুখে থাকতে পারে। ফেনী নদীর পানি বন্টনের ফলে ফেনী, ছাগলনাইয়া, পরশুরাম, ফুলগাজী, সোনাগাজী ও মিরসরাই অঞ্চলে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। মুহুরী প্রকল্পও বড় ধরনের ঝুঁকির মাঝে থাকবে। ভারত থেকে ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ আমদানি একদিকে বাংলাদেশের বিদ্যুত্ সংকটে কিছুটা সমাধান দেবে বটে, কিন্তু ভবিষ্যতে নানা জটিলতার জন্ম দিতে পারে। ভারত থেকে কয়লা আমদানি করে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ উত্পাদনের সিদ্ধান্ত ভালো, কিন্তু উত্তরাঞ্চলের ৫টি কয়লাখনি থেকে কয়লা উত্তোলন ও বিদ্যুত্ উত্পাদনের সিদ্ধান্ত নেয়াই উত্তম। ট্র্যানজিটে কাঠামো সম্পর্কে যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হতে যাচ্ছে এবং যার আওতায় ভারত চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরের সুবিধা পাবে তা বিতর্কের মাত্রা বাড়াবে। ট্র্যানজিটের ব্যাপারে একটি পূর্ণাঙ্গ চুক্তি, ফি নির্ধারণ, কোন কোন পণ্য চলাচল করবে তা নিশ্চিত করা, পরিবেশ রক্ষা ইত্যাদি বিষয়গুলো পূর্বাহ্নে সমীক্ষা করা প্রয়োজন ছিল। সুন্দরবন সুরক্ষা, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, বিটিভি ও দূরদর্শনের মধ্যে চুক্তি, বাঘ রক্ষা, স্থল সীমানা চিহ্নিতকরণ সম্পর্কিত সমঝোতা স্মারক অত্যন্ত সাদামাটা। এর জন্য এই হাই লেভেল ভিজিটের প্রয়োজন ছিল না। বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষিত হয় এমন কোন চুক্তি না থাকায় মনমোহন সিং-এর সফরের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন থাকবেই। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে যেসব বিষয় চুক্তিতে থাকা জরুরি ছিল তা হচ্ছে টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে একটি সুস্পষ্ট ঘোষণা, বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে সকল বাংলাদেশী পণ্যের ভারতে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার, পণ্যের স্পর্শকাতর তালিকা বাতিল করা, সাফটার আওতায় স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশের বাণিজ্য অধিকার নিশ্চিত করা, সীমান্ত হত্যা বন্ধ, সমুদ্রসীমায় বাংলাদেশের দাবির প্রতি ভারতের নমনীয় অবস্থান ইত্যাদি। এর একটি ক্ষেত্রেও ভারতের সম্পর্ক আমরা নিশ্চিত করতে পারিনি। আমরা ভারতের সহযোগিতা চাই। বাংলাদেশের উন্নয়নে ভারত একটি বড় ভূমিকা রাখতে পারে। কিন্তু চুক্তি ও সমঝোতাগুলো যদি একপক্ষীয় হয়ে যায় তাহলে মনমোহন সিং-এর সফর নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই।
মূল লেখাটি পড়ুন এখানে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং-এর ঢাকা সফর বিশিষ্ট নাগরিকদের ভাবনা
ড. তারেক শামসুর রেহমান
অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
0 comments:
Post a Comment