যুদ্ধটা শুরু হয়েছিল আজ থেকে ১০ বছর আগে, ২০০১ সালের সেপ্টেম্বরে আফগানিস্তান আক্রমণ করার মধ্য দিয়ে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রে ঘটেছিল নাইন-ইলেভেনের মতো ঘটনা। ১৯ সদস্যের একটি দল চার ভাগে বিভক্ত হয়ে চারটি বিমান হাইজ্যাক করল। দুটো আছড়ে পড়ল নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ারে, একটি ভার্জিনিয়ায় পেন্টাগন সদর দফতরে, অপর একটি বিধ্বস্ত হল পেনসিলভিনিয়ার একটি মাঠে। সারাবিশ্ব জানল ‘আল-কায়দা’ নামের একটি সংগঠন ওই হামলা চালিয়েছে, আর এর নেতা হচ্ছেন ওসামা বিন লাদেন। সেই ওসামা বিন লাদেনকে পাওয়া গেল পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদের একটি বাড়িতে, দুই স্ত্রীসহ গত পাঁচ বছর ধরে এখানেই তিনি অবস্থান করছিলেন। ১ মে রাতে (২০১১) মার্কিন নেভির কমান্ডোরা সেই লাদেনকে হত্যা করল। মৃতদেহ ভাসিয়ে দিল আরব সাগরে কোন ডিএনএ টেস্ট ছাড়াই। টুইন টাওয়ারে সন্ত্রাসী বিমান হামলার পর সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ শুরু করেছিলেন ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’। টার্গেট করা হয়েছিল মুসলমানদের। ২০০১ সালে আফগানিস্তান দখল করার পর ২০০৩ সালে দখল করা হল ইরাক, আর ২০১১ সালে এসে বোমা হামলা চালিয়ে লিবিয়া থেকে উৎখাত করা হল গাদ্দাফিকে। এই যে ‘যুদ্ধ’, তা কি শেষ হয়েছে? ১১ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের ‘গ্রাউন্ড জিরো’তে প্রেসিডেন্ট ওবামা যখন ফুল দিয়ে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানালেন, তখন কিন্তু তিনি ঘোষণা করেননি যুদ্ধ শেষ হয়েছে।
আজ হিসাব-নিকাশের পালা- এই যুদ্ধ বিশ্বকে কী দিয়েছে। কিংবা যুক্তরাষ্ট্রইবা এ যুদ্ধ থেকে কতটুকু উপকৃত হয়েছে। ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ পরিচালনা করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের খরচ যেখানে বলা হচ্ছে ছয় ট্রিলিয়ন ডলারের কথা (Global Research-এর মতে। ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় এর পরিমাণ তিন দশমিক সাত ট্রিলিয়ন ডলার), সেখানে বাংলাদেশের পাঠকরাও জেনেছেন (১৫ সেপ্টেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ছয়জনের একজন গরিব। দেশটির চার কোটি ৬২ লাখ মানুষ এখন বাস করে দারিদ্র্যসীমার নিচে, শতকরা হারে যা ১৫ দশমিক ১। ২০০৯ সালে এ হার ছিল ১৪ দশমিক ৩ শতাংশ। এটা সরকারি তথ্য। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে আবার আফ্রো-আমেরিকান এবং হিস্পানিক জনগোষ্ঠীর হার বেশি (২৭ দশমিক ৪ এবং ২৬ দশমিক ৬)। যুক্তরাষ্ট্রের গত ৫২ বছরের ইতিহাসে এই হার সর্বোচ্চ। বাংলাদেশী-আমেরিকান যারাই যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন, তারা অনেকেই এখন চাকরি হারানোর আশংকা করছেন। যে যুদ্ধের খরচ যুক্তরাষ্ট্রের করদাতারা বহন করেন, সেখানে নতুন করে চাকরির সংস্থান করা হচ্ছে না। অনেকেই রয়েছেন স্বাস্থ্য-শিক্ষার বাইরে। এ সংখ্যা পাঁচ কোটি, যা মোট জনসংখ্যার ১৬ দশমিক ৩ ভাগ। অথচ যুদ্ধের জন্য খরচ হচ্ছে ছয় ট্রিলিয়ন ডলার! বাংলাদেশী টাকায় এর পরিমাণ ৪৪৪ কোটি লাখ টাকা (ডলারপ্রতি ৭৪ টাকা হিসাবে)। কী বিশাল বাজেট! এর একটা অংশ দিয়ে নতুন চাকরির সংস্থান করা যায়, স্বাস্থ্যবীমা নিশ্চিত করা যায়। কিন্তু সাধারণ মানুষের দিকে খেয়াল নেই ওবামাদের। যুদ্ধ তাদের দরকার। যুদ্ধ মানেই ব্যবসা।
যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বব্যাপী ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’-এর যে সূচনা করেছে, তা নিয়ে গবেষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়। তাদের হিসাবে খরচের পরিমাণ তিন দশমিক সাত ট্রিলিয়ন ডলার। পেন্টাগনের হিসাবমতে প্রতি মাসে আফগানিস্তান ও ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের খরচ নয় দশমিক সাত বিলিয়ন ডলার (যার তিন ভাগের দুই ভাগ খরচ হয় আফগানিস্তানে)। প্রশিক্ষণ, অস্ত্রশস্ত্র ও ড্রোন বিমান হামলা চালাতে এই খরচ হয়। অথচ যুক্তরাষ্ট্রকে মহাশূন্যে একটি শাটল মহাকাশযান পাঠাতে খরচ হয়েছিল এক দশমিক পাঁচ বিলিয়ন ডলার। পেন্টাগন ইরাক ও আফগানিস্তানে গত ৪০ মাসে খরচ করেছে ৩৮৫ বিলিয়ন ডলার, যা কিনা বয়োজ্যেষ্ঠদের স্বাস্থ্যবীমা খাতে যুক্তরাষ্ট্র খরচ করেছে গত ১০ বছরে। গবেষণায় দেখা গেছে, শুধু সেনাদের ব্যবহৃত গাড়ির জ্বালানি তেল (আফগানিস্তান) বাবদ (অক্টোবর, ২০১০ থেকে মে, ২০১১) যুক্তরাষ্ট্র খরচ করেছে এক দশমিক পাঁচ বিলিয়ন ডলার। যদি যুদ্ধক্ষেত্রে তেল সরবরাহ ও জনশক্তির খরচ হিসাব করা হতো, তাহলে প্রতি গ্যালন তেলের মূল্য গিয়ে দাঁড়াত ১০০ ডলারে। প্রতি বছর সেখানে অর্থাৎ আফগানিস্তানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বজায় রাখতে (শুধু সেনাদের জন্য) যুক্তরাষ্ট্রের খরচ হয় বছরে ২০ বিলিয়ন ডলার। ২০০৯ সালে আফগানিস্তানে প্রতি মার্কিন সেনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের খরচ ছিল পাঁচ লাখ সাত হাজার ডলার (বছরে)। ২০১০ সালে এটা বেড়ে গিয়ে দাঁড়ায় ছয় লাখ ৬৭ হাজার ডলারে। আর ২০১১ সালে এই খরচ গিয়ে দাঁড়াবে ছয় লাখ ৯৪ হাজার ডলারে। এটা কংগ্রেশনাল রিপোর্ট। ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ইরাকে ২০০৭ সালে প্রতি মার্কিন সেনার জন্য বছরে খরচ ছিল পাঁচ লাখ ১০ হাজার ডলার, আর ২০১১ সালে তা বেড়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে আট লাখ দুই হাজার ডলারে। ২০১১ সালে কংগ্রেস আফগানিস্তানে যুদ্ধের খরচের জন্য বরাদ্দ দিয়েছে ১১৩ বিলিয়ন ডলার। ইরাকের জন্য বরাদ্দ ৪৬ বিলিয়ন (২০১২ সালের জন্য বরাদ্দ কিছুটা কমেছে ১০৭ বিলিয়ন ও ১১ বিলিয়ন ডলার)। বলা ভালো, ইরাক থেকে ‘ক্যামবেট ট্র-পস,’ অর্থাৎ যুদ্ধরত সৈন্যদের প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। প্রায় ৫০ হাজার সৈন্য রয়ে গেছে, যারা শুধু প্রশিক্ষণ কাজে নিয়োজিত। অন্যদিকে ওবামা ঘোষণা করেছেন ২০১৪ সালে আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয়া হবে (ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার জন্য দেখুন McClatchy Newspaper-এর প্রতিবেদন ১৫ আগস্ট, ২০১১)।
যুক্তরাষ্ট্র ‘যুদ্ধ’ চালিয়ে যাওয়ার জন্য যে বিপুল অর্থ ব্যয় করেছে, তা দিয়ে সামাজিক খাতে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে পারত। যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানের জন্য যে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করেছে (১১৩ বিলিয়ন, ২০১১-১২), সেই পরিমাণ অর্থ দিয়ে- ক. ৫৭ দশমিক ৫ মিলিয়ন শিশুর (নিম্ন আয়ের পরিবারের) স্বাস্থ্যসেবা খ. ২৩ মিলিয়ন নিম্ন আয়ের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা গ. ২০২ মিলিয়ন ছাত্রের বৃত্তি ঘ. ১৪ দশমিক ৩৫ মিলিয়ন বয়োজ্যেষ্ঠ নাগরিকের স্বাস্থ্যসেবা ঙ. বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ১৪ দশমিক ২৬ মিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত করা সম্ভব। সেই সঙ্গে প্রাথমিক স্কুলে ১ দশমিক ৭৫ মিলিয়ন শিক্ষক ও ১ দশমিক ৬৫ মিলিয়ন পুলিশ অফিসার নিয়োগ এবং ৬৭ দশমিক ৮ মিলিয়ন সোলার প্যানেল বসানো সম্ভব।
প্রশ্ন এসে যায়, আর কতদিন যুক্তরাষ্ট্র ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে’র পেছনে এত বিপুল অর্থ ব্যয় করবে? ওবামা শান্তিবাদী নেতা হিসেবে নিজেকে পরিচিত করেছিলেন। নোবেল শান্তি পুরস্কারও পেয়েছিলেন। ধারণা করা হয়েছিল তিনি যুদ্ধ বন্ধের ব্যাপারে উদ্যোগ নেবেন। কিন্তু দেখা গেল, যে শক্তি সাবেক প্রেসিডেন্ট বুশকে সামনে রেখে বিশ্বব্যাপী ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ’ পরিচালনা করেছিল, তারাই ওবামাকে পরিচালনা করছে। যুক্তরাষ্ট্রের কর্পোরেট হাউস, সমরাস্ত্র উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত শক্তি প্রেসিডেন্ট ওবামাকে পরিচালনা করছে। ওবামা এদের ওপর নির্ভরশীলও। অধ্যাপক মিশেল চসুডোভস্কি তার একাধিক প্রবন্ধে দেখিয়েছেন কীভাবে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র নিজেই উপকৃত হয়েছে এবং তার নিজ স্বার্থ আদায় করে নিয়েছে। আল কায়দা তথা ওসামা বিন লাদেনকে যুক্তরাষ্ট্র তৈরি করেছিল ১৯৭৯ সালে। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রয়োজন ছিল ওসামা বিন লাদেনকে। আজ সেই প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে। আল কায়দার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র তথাকথিত ‘যুদ্ধ’ শুরু করলেও অধ্যাপক পিটার ডেল স্কট দেখিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপে, যেখানে খ্রিস্টধর্মাবলম্বীর সংখ্যা বেশি, সেখানে আল কায়দাকে ব্যবহার করেছিল (দেখুন Prof. Peter Dale Scot, US-Al Qaeda's Alliance; Bosnia, Kosovo & now Libya- Washington's on going collusion with terrorist, global Research, 29.7.11)। আর অধ্যাপক চসুডোভস্কি তো সরাসরিই মন্তব্য করেছেন, ‘alleged jihadi ploters were the product of US state terrorism’। ১০ বছর আগে নাইন-ইলেভেনের ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্রে এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে ওই ঘটনা নিয়ে প্রচুর প্রবন্ধ ও গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে, যার প্রায় সবই একতরফাভাবে লিখিত।
প্রবন্ধগুলোতে মুসলমান সম্প্রদায়ের ওপর সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য অভিযোগ আনা হয়েছে। তবু এর মাঝেও দু-একজন বিশেষজ্ঞকে দেখা গেছে যারা ওই ঘটনার জন্য মার্কিনি আগ্রাসী শক্তিকে দোষ চাপিয়েছেন। নোয়াম চমস্কি এদের মাঝে অন্যতম। চমস্কির বাইরে যারা বিভিন্ন জার্নালে অধ্যাপক স্টেফেন জুনেস (Prof. Stephen Zunes, University of San Francisco), (Prof. Marry Ellen Connell, Notre Dame), অধ্যাপক মিশেল হাস, অধ্যাপক রবার্ট ফারলের লেখা পাঠ করেছেন, তারা দেখেছেন এরা সবাই যুক্তরাষ্ট্রকে একটি আগ্রাসী শক্তি হিসেবে দেখেছেন। এরা বলার চেষ্টা করেছেন, একটি ‘বিশেষ উদ্দেশ্য’ সামনে রেখেই ‘নাইন-ইলেভেন’ সংগঠিত করা হয়েছিল। অধ্যাপক হাস ২০০৯ সালে লিখিত তার গ্রন্থে (George W. Bush : War Criminal?) সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশকে ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ শুরু করার জন্য যুদ্ধাপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন এবং বিচার দাবি করেছিলেন। তিনি পাঁচটি কারণ উল্লেখ করেছিলেন, যার কারণে ও আন্তর্জাতিক আইন অনুসরণ করে বুশকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে বিচার করা যায়। কারণগুলো হচ্ছে- ১. গৃহযুদ্ধে বিদ্রোহীদের সহযোগিতা ২. আগ্রাসী যুদ্ধের সূচনা ৩. আগ্রাসী যুদ্ধের পরিকল্পনা ৪. যুদ্ধের সূচনা করার জন্য ষড়যন্ত্র ৫. যুদ্ধের জন্য প্রচারণা ও প্রোপাগান্ডা। মার্কিন নীতির কঠোর সমালোচক নোয়াম চমস্কি তার একটি প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন, যদি সত্যিকার অর্থে নুরেমবার্গ যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য প্রণীত আইন অনুসরণ করা যায় (International Military Tribunal at Nuremberg, 1945), তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক প্রেসিডেন্টকে ফাঁসিতে ঝুলতে হবে। এটাই হচ্ছে আসল কথা। হাজার হাজার মানুষকে হত্যার জন্য বুশ কিংবা ওবামাকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যাবে না। কিন্তু ওসামা বিন লাদেনকে আন্তর্জাতিক আদালতের হাতে তুলে না দিয়ে অপর একটি দেশের সার্বভৌমত্ব লংঘন করে তাকে হত্যা করা হয়। ওসামা বিন লাদেন নিঃসন্দেহে অন্যায় করেছেন। তার বিচার হওয়া উচিত ছিল।
যুক্তরাষ্ট্র ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ শুরু করলেও এটা শেষ হবে, তা মনে হয় না। যুক্তরাষ্ট্র লিবিয়ায় ‘তৃতীয় যুদ্ধ’ শুরু করেছে। গাদ্দাফি উৎখাত হয়েছেন। একজন ‘হামিদ কারজাই’কে পাওয়া গেছে সেখানে। তিনি হচ্ছেন মুস্তফা আবদুল জলিল। জলিল ছিলেন একসময়ে গাদ্দাফির বিচারমন্ত্রী। বর্তমানে জাতীয় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান। লিবিয়ার পাশাপাশি সিরিয়ায়ও গঠিত হয়েছে একটি জাতীয় পরিষদ। এখন কবে নাগাদ বাশার আল আসাদ উৎখাত হন, সেটাই দেখার বিষয়। ‘যুদ্ধ’-এর ক্ষেত্র এখন বদলে যাচ্ছে, আফগানিস্তান থেকে লিবিয়া। লিবিয়ার তেলসম্পদ সেখানে ‘যুদ্ধ’কে প্রলম্বিত করবে। পশ্চিমাদের স্বার্থ ওখানে বেশি। প্রথমত জ্বালানি তেল আর দ্বিতীয়ত লিবিয়া হচ্ছে ‘আফ্রিকার গেটওয়ে’, অর্থাৎ আফ্রিকায় যাওয়ার রাস্তা। ইউরেনিয়ামসহ প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে পূর্ব আফ্রিকায়, বিশেষ করে নাইজার, শাদ কিংবা গিনি-বিসাউয়ে। আফ্রিকায় প্রথমবারের মতো প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের মিলিটারি কমান্ড। এখন লিবিয়া নিয়ন্ত্রণে এলো। লিবিয়া দিয়েই নিয়ন্ত্রিত হবে আফ্রিকা। তাই লিবিয়ায় ‘যুদ্ধ’টা প্রয়োজন ছিল। গাদ্দাফির পতনের মধ্য দিয়ে যুদ্ধ শেষ হবে না। নতুন আঙ্গিকে যুদ্ধ পরিচালিত হবে। আফগানিস্তানে ন্যাটোর এশীয় সংস্করণ গঠনের সম্ভাবনা যেমন বাড়ছে, এখন ঠিক তেমনি আফ্রিকায়ও ন্যাটোর আফ্রিকা সংস্করণ গঠনের প্রশ্ন উঠবে। তাই অদূর ভবিষ্যতে ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ বন্ধ হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই।
আজ হিসাব-নিকাশের পালা- এই যুদ্ধ বিশ্বকে কী দিয়েছে। কিংবা যুক্তরাষ্ট্রইবা এ যুদ্ধ থেকে কতটুকু উপকৃত হয়েছে। ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ পরিচালনা করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের খরচ যেখানে বলা হচ্ছে ছয় ট্রিলিয়ন ডলারের কথা (Global Research-এর মতে। ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় এর পরিমাণ তিন দশমিক সাত ট্রিলিয়ন ডলার), সেখানে বাংলাদেশের পাঠকরাও জেনেছেন (১৫ সেপ্টেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ছয়জনের একজন গরিব। দেশটির চার কোটি ৬২ লাখ মানুষ এখন বাস করে দারিদ্র্যসীমার নিচে, শতকরা হারে যা ১৫ দশমিক ১। ২০০৯ সালে এ হার ছিল ১৪ দশমিক ৩ শতাংশ। এটা সরকারি তথ্য। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে আবার আফ্রো-আমেরিকান এবং হিস্পানিক জনগোষ্ঠীর হার বেশি (২৭ দশমিক ৪ এবং ২৬ দশমিক ৬)। যুক্তরাষ্ট্রের গত ৫২ বছরের ইতিহাসে এই হার সর্বোচ্চ। বাংলাদেশী-আমেরিকান যারাই যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন, তারা অনেকেই এখন চাকরি হারানোর আশংকা করছেন। যে যুদ্ধের খরচ যুক্তরাষ্ট্রের করদাতারা বহন করেন, সেখানে নতুন করে চাকরির সংস্থান করা হচ্ছে না। অনেকেই রয়েছেন স্বাস্থ্য-শিক্ষার বাইরে। এ সংখ্যা পাঁচ কোটি, যা মোট জনসংখ্যার ১৬ দশমিক ৩ ভাগ। অথচ যুদ্ধের জন্য খরচ হচ্ছে ছয় ট্রিলিয়ন ডলার! বাংলাদেশী টাকায় এর পরিমাণ ৪৪৪ কোটি লাখ টাকা (ডলারপ্রতি ৭৪ টাকা হিসাবে)। কী বিশাল বাজেট! এর একটা অংশ দিয়ে নতুন চাকরির সংস্থান করা যায়, স্বাস্থ্যবীমা নিশ্চিত করা যায়। কিন্তু সাধারণ মানুষের দিকে খেয়াল নেই ওবামাদের। যুদ্ধ তাদের দরকার। যুদ্ধ মানেই ব্যবসা।
যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বব্যাপী ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’-এর যে সূচনা করেছে, তা নিয়ে গবেষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়। তাদের হিসাবে খরচের পরিমাণ তিন দশমিক সাত ট্রিলিয়ন ডলার। পেন্টাগনের হিসাবমতে প্রতি মাসে আফগানিস্তান ও ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের খরচ নয় দশমিক সাত বিলিয়ন ডলার (যার তিন ভাগের দুই ভাগ খরচ হয় আফগানিস্তানে)। প্রশিক্ষণ, অস্ত্রশস্ত্র ও ড্রোন বিমান হামলা চালাতে এই খরচ হয়। অথচ যুক্তরাষ্ট্রকে মহাশূন্যে একটি শাটল মহাকাশযান পাঠাতে খরচ হয়েছিল এক দশমিক পাঁচ বিলিয়ন ডলার। পেন্টাগন ইরাক ও আফগানিস্তানে গত ৪০ মাসে খরচ করেছে ৩৮৫ বিলিয়ন ডলার, যা কিনা বয়োজ্যেষ্ঠদের স্বাস্থ্যবীমা খাতে যুক্তরাষ্ট্র খরচ করেছে গত ১০ বছরে। গবেষণায় দেখা গেছে, শুধু সেনাদের ব্যবহৃত গাড়ির জ্বালানি তেল (আফগানিস্তান) বাবদ (অক্টোবর, ২০১০ থেকে মে, ২০১১) যুক্তরাষ্ট্র খরচ করেছে এক দশমিক পাঁচ বিলিয়ন ডলার। যদি যুদ্ধক্ষেত্রে তেল সরবরাহ ও জনশক্তির খরচ হিসাব করা হতো, তাহলে প্রতি গ্যালন তেলের মূল্য গিয়ে দাঁড়াত ১০০ ডলারে। প্রতি বছর সেখানে অর্থাৎ আফগানিস্তানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বজায় রাখতে (শুধু সেনাদের জন্য) যুক্তরাষ্ট্রের খরচ হয় বছরে ২০ বিলিয়ন ডলার। ২০০৯ সালে আফগানিস্তানে প্রতি মার্কিন সেনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের খরচ ছিল পাঁচ লাখ সাত হাজার ডলার (বছরে)। ২০১০ সালে এটা বেড়ে গিয়ে দাঁড়ায় ছয় লাখ ৬৭ হাজার ডলারে। আর ২০১১ সালে এই খরচ গিয়ে দাঁড়াবে ছয় লাখ ৯৪ হাজার ডলারে। এটা কংগ্রেশনাল রিপোর্ট। ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ইরাকে ২০০৭ সালে প্রতি মার্কিন সেনার জন্য বছরে খরচ ছিল পাঁচ লাখ ১০ হাজার ডলার, আর ২০১১ সালে তা বেড়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে আট লাখ দুই হাজার ডলারে। ২০১১ সালে কংগ্রেস আফগানিস্তানে যুদ্ধের খরচের জন্য বরাদ্দ দিয়েছে ১১৩ বিলিয়ন ডলার। ইরাকের জন্য বরাদ্দ ৪৬ বিলিয়ন (২০১২ সালের জন্য বরাদ্দ কিছুটা কমেছে ১০৭ বিলিয়ন ও ১১ বিলিয়ন ডলার)। বলা ভালো, ইরাক থেকে ‘ক্যামবেট ট্র-পস,’ অর্থাৎ যুদ্ধরত সৈন্যদের প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। প্রায় ৫০ হাজার সৈন্য রয়ে গেছে, যারা শুধু প্রশিক্ষণ কাজে নিয়োজিত। অন্যদিকে ওবামা ঘোষণা করেছেন ২০১৪ সালে আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয়া হবে (ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার জন্য দেখুন McClatchy Newspaper-এর প্রতিবেদন ১৫ আগস্ট, ২০১১)।
যুক্তরাষ্ট্র ‘যুদ্ধ’ চালিয়ে যাওয়ার জন্য যে বিপুল অর্থ ব্যয় করেছে, তা দিয়ে সামাজিক খাতে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে পারত। যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানের জন্য যে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করেছে (১১৩ বিলিয়ন, ২০১১-১২), সেই পরিমাণ অর্থ দিয়ে- ক. ৫৭ দশমিক ৫ মিলিয়ন শিশুর (নিম্ন আয়ের পরিবারের) স্বাস্থ্যসেবা খ. ২৩ মিলিয়ন নিম্ন আয়ের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা গ. ২০২ মিলিয়ন ছাত্রের বৃত্তি ঘ. ১৪ দশমিক ৩৫ মিলিয়ন বয়োজ্যেষ্ঠ নাগরিকের স্বাস্থ্যসেবা ঙ. বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ১৪ দশমিক ২৬ মিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত করা সম্ভব। সেই সঙ্গে প্রাথমিক স্কুলে ১ দশমিক ৭৫ মিলিয়ন শিক্ষক ও ১ দশমিক ৬৫ মিলিয়ন পুলিশ অফিসার নিয়োগ এবং ৬৭ দশমিক ৮ মিলিয়ন সোলার প্যানেল বসানো সম্ভব।
প্রশ্ন এসে যায়, আর কতদিন যুক্তরাষ্ট্র ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে’র পেছনে এত বিপুল অর্থ ব্যয় করবে? ওবামা শান্তিবাদী নেতা হিসেবে নিজেকে পরিচিত করেছিলেন। নোবেল শান্তি পুরস্কারও পেয়েছিলেন। ধারণা করা হয়েছিল তিনি যুদ্ধ বন্ধের ব্যাপারে উদ্যোগ নেবেন। কিন্তু দেখা গেল, যে শক্তি সাবেক প্রেসিডেন্ট বুশকে সামনে রেখে বিশ্বব্যাপী ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ’ পরিচালনা করেছিল, তারাই ওবামাকে পরিচালনা করছে। যুক্তরাষ্ট্রের কর্পোরেট হাউস, সমরাস্ত্র উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত শক্তি প্রেসিডেন্ট ওবামাকে পরিচালনা করছে। ওবামা এদের ওপর নির্ভরশীলও। অধ্যাপক মিশেল চসুডোভস্কি তার একাধিক প্রবন্ধে দেখিয়েছেন কীভাবে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র নিজেই উপকৃত হয়েছে এবং তার নিজ স্বার্থ আদায় করে নিয়েছে। আল কায়দা তথা ওসামা বিন লাদেনকে যুক্তরাষ্ট্র তৈরি করেছিল ১৯৭৯ সালে। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রয়োজন ছিল ওসামা বিন লাদেনকে। আজ সেই প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে। আল কায়দার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র তথাকথিত ‘যুদ্ধ’ শুরু করলেও অধ্যাপক পিটার ডেল স্কট দেখিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপে, যেখানে খ্রিস্টধর্মাবলম্বীর সংখ্যা বেশি, সেখানে আল কায়দাকে ব্যবহার করেছিল (দেখুন Prof. Peter Dale Scot, US-Al Qaeda's Alliance; Bosnia, Kosovo & now Libya- Washington's on going collusion with terrorist, global Research, 29.7.11)। আর অধ্যাপক চসুডোভস্কি তো সরাসরিই মন্তব্য করেছেন, ‘alleged jihadi ploters were the product of US state terrorism’। ১০ বছর আগে নাইন-ইলেভেনের ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্রে এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে ওই ঘটনা নিয়ে প্রচুর প্রবন্ধ ও গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে, যার প্রায় সবই একতরফাভাবে লিখিত।
প্রবন্ধগুলোতে মুসলমান সম্প্রদায়ের ওপর সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য অভিযোগ আনা হয়েছে। তবু এর মাঝেও দু-একজন বিশেষজ্ঞকে দেখা গেছে যারা ওই ঘটনার জন্য মার্কিনি আগ্রাসী শক্তিকে দোষ চাপিয়েছেন। নোয়াম চমস্কি এদের মাঝে অন্যতম। চমস্কির বাইরে যারা বিভিন্ন জার্নালে অধ্যাপক স্টেফেন জুনেস (Prof. Stephen Zunes, University of San Francisco), (Prof. Marry Ellen Connell, Notre Dame), অধ্যাপক মিশেল হাস, অধ্যাপক রবার্ট ফারলের লেখা পাঠ করেছেন, তারা দেখেছেন এরা সবাই যুক্তরাষ্ট্রকে একটি আগ্রাসী শক্তি হিসেবে দেখেছেন। এরা বলার চেষ্টা করেছেন, একটি ‘বিশেষ উদ্দেশ্য’ সামনে রেখেই ‘নাইন-ইলেভেন’ সংগঠিত করা হয়েছিল। অধ্যাপক হাস ২০০৯ সালে লিখিত তার গ্রন্থে (George W. Bush : War Criminal?) সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশকে ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ শুরু করার জন্য যুদ্ধাপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন এবং বিচার দাবি করেছিলেন। তিনি পাঁচটি কারণ উল্লেখ করেছিলেন, যার কারণে ও আন্তর্জাতিক আইন অনুসরণ করে বুশকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে বিচার করা যায়। কারণগুলো হচ্ছে- ১. গৃহযুদ্ধে বিদ্রোহীদের সহযোগিতা ২. আগ্রাসী যুদ্ধের সূচনা ৩. আগ্রাসী যুদ্ধের পরিকল্পনা ৪. যুদ্ধের সূচনা করার জন্য ষড়যন্ত্র ৫. যুদ্ধের জন্য প্রচারণা ও প্রোপাগান্ডা। মার্কিন নীতির কঠোর সমালোচক নোয়াম চমস্কি তার একটি প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন, যদি সত্যিকার অর্থে নুরেমবার্গ যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য প্রণীত আইন অনুসরণ করা যায় (International Military Tribunal at Nuremberg, 1945), তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক প্রেসিডেন্টকে ফাঁসিতে ঝুলতে হবে। এটাই হচ্ছে আসল কথা। হাজার হাজার মানুষকে হত্যার জন্য বুশ কিংবা ওবামাকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যাবে না। কিন্তু ওসামা বিন লাদেনকে আন্তর্জাতিক আদালতের হাতে তুলে না দিয়ে অপর একটি দেশের সার্বভৌমত্ব লংঘন করে তাকে হত্যা করা হয়। ওসামা বিন লাদেন নিঃসন্দেহে অন্যায় করেছেন। তার বিচার হওয়া উচিত ছিল।
যুক্তরাষ্ট্র ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ শুরু করলেও এটা শেষ হবে, তা মনে হয় না। যুক্তরাষ্ট্র লিবিয়ায় ‘তৃতীয় যুদ্ধ’ শুরু করেছে। গাদ্দাফি উৎখাত হয়েছেন। একজন ‘হামিদ কারজাই’কে পাওয়া গেছে সেখানে। তিনি হচ্ছেন মুস্তফা আবদুল জলিল। জলিল ছিলেন একসময়ে গাদ্দাফির বিচারমন্ত্রী। বর্তমানে জাতীয় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান। লিবিয়ার পাশাপাশি সিরিয়ায়ও গঠিত হয়েছে একটি জাতীয় পরিষদ। এখন কবে নাগাদ বাশার আল আসাদ উৎখাত হন, সেটাই দেখার বিষয়। ‘যুদ্ধ’-এর ক্ষেত্র এখন বদলে যাচ্ছে, আফগানিস্তান থেকে লিবিয়া। লিবিয়ার তেলসম্পদ সেখানে ‘যুদ্ধ’কে প্রলম্বিত করবে। পশ্চিমাদের স্বার্থ ওখানে বেশি। প্রথমত জ্বালানি তেল আর দ্বিতীয়ত লিবিয়া হচ্ছে ‘আফ্রিকার গেটওয়ে’, অর্থাৎ আফ্রিকায় যাওয়ার রাস্তা। ইউরেনিয়ামসহ প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে পূর্ব আফ্রিকায়, বিশেষ করে নাইজার, শাদ কিংবা গিনি-বিসাউয়ে। আফ্রিকায় প্রথমবারের মতো প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের মিলিটারি কমান্ড। এখন লিবিয়া নিয়ন্ত্রণে এলো। লিবিয়া দিয়েই নিয়ন্ত্রিত হবে আফ্রিকা। তাই লিবিয়ায় ‘যুদ্ধ’টা প্রয়োজন ছিল। গাদ্দাফির পতনের মধ্য দিয়ে যুদ্ধ শেষ হবে না। নতুন আঙ্গিকে যুদ্ধ পরিচালিত হবে। আফগানিস্তানে ন্যাটোর এশীয় সংস্করণ গঠনের সম্ভাবনা যেমন বাড়ছে, এখন ঠিক তেমনি আফ্রিকায়ও ন্যাটোর আফ্রিকা সংস্করণ গঠনের প্রশ্ন উঠবে। তাই অদূর ভবিষ্যতে ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ বন্ধ হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই।
ড. তারেক শামসুর রেহমান
অধ্যাপক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
tsrahmanbd@yahoo.com
tsrahmanbd@yahoo.com
0 comments:
Post a Comment