ঢাকা সফর শেষ করে নয়াদিলি্ল ফিরে গিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং পশ্চিম বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির মন গলাতে একটি উদ্যোগ নিয়েছেন। তিস্তার পানি বণ্টনের ব্যাপারে তিনি এখন দু'জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে নিয়োগ করেছেন। একজন অম্বিকা সোনী ও অন্যজন জয়রাম রমেস। আগে এই কাজটি করেছিলেন তার নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশংকর মেনন। কিন্তু দেখা গেল মেননের সঙ্গে ঢাকা যাওয়ার প্রাক্কালে মমতা ব্যানার্জির কথা হলেও, শেষ মুহূর্তে মমতা বেঁকে বসেন। যে কারণে চুক্তি স্বাক্ষরে মনমোহন সিং আর রাজি হতে পারেননি। তিস্তার পানি বণ্টনে একটি চুক্তিতে উপনীত হতে ব্যর্থতা বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের মাঝে যথেষ্ট প্রভাব ফেলে। যদিও ঢাকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এক সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, আগামী তিন মাসের মধ্যেই তিস্তার পানি বণ্টনের ব্যাপারে একটি চুক্তি হবে। আমরা এখনো নিশ্চিত নই অম্বিকা সোনী ও জয়রাম রমেস মমতা ব্যানার্জিকে রাজি করাতে পারবেন কি-না। কিংবা যে সমঝোতা হয়েছিল (বাংলাদেশ ৪৮ ভাগ, ভারত ৫২ ভাগ), সেই সমঝোতায় চূড়ান্ত সম্মতি মমতা দেবেন, এ ব্যাপারেও আমরা নিশ্চিত নই। ভারতের রাজনীতিতে মমতা এক অদ্ভুত চরিত্রের মানুষ। এক সময় যুব কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন তিনি। কেন্দ্রের সঙ্গে মনোমালিন্যে তিনি জাতীয় কংগ্রেস ত্যাগ করে গঠন করেছিলেন তৃণমূল কংগ্রেস। জাতীয় কংগ্রেসের বিরোধী বিজেপির সঙ্গে সখ্য করে তিনি কেন্দ্রে রেলমন্ত্রীও হয়েছিলেন। আবার মন্ত্রিত্ব ছেড়েও দিয়েছিলেন। কংগ্রেসের সঙ্গে তার সম্পর্ক কখনো ভালো, কখনো খারাপ। এবার বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে ঐক্য হয়েছে। কিন্তু গেল বিধানসভা নির্বাচনে ঐক্য হয়নি। মমতা ব্যানার্জি ১৯৯৬ সালে গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তিরও বিরোধিতা করেছিলেন। এখন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা। পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে তিস্তা একটি ফ্যাক্টর। তিস্তার পানির ওপর জলপাইগুড়িসহ বিশাল এলাকা নির্ভরশীল। মমতা এ বিষয়টা উপলব্ধি করেন। সামনে তার উপনির্বাচন। তাকে বিধানসভায় নির্বাচিত হয়ে আসতে হবে। সেই সঙ্গে সামনে পঞ্চায়েত নির্বাচন। সব কিছুই মাথায় আছে মমতার। তিনি হুট করে কিছু করবেন, এটা আমার মনে হয় না। তিনি হিসেবি। বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বের চেয়ে, তার দরকার পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের অবস্থান শক্তিশালী করা। তাই সন্দেহ থেকেই গেল। তবে যেখানে আমরা সমঝোতায় পেঁৗছেছি, সেখান থেকে আমরা ফিরে আসতে পারি না। পাবলিক ফোরামে সমঝোতাটি উপস্থাপিত হওয়া উচিত, যাতে করে আমরা একটা ধারণা পেতে পারি। জাতিকে এক ধরনের অন্ধকারে রেখে আমরা একটা চুক্তি করতে পারি না। আরো একটা কথা এখানে বলা দরকার। মহাজোট সরকারের ক্ষমতায় আসা (২০০৯) ও প্রধানমন্ত্রীর নয়াদিলি্ল সফরের (২০১০) আগে দীর্ঘ ৪ বছর যৌথ নদী কমিশনের কোনো সভা হয়নি। এমনকি ৪০ বার বৈঠক বাতিল ঘোষণা করা হয়েছিল। তারপর হঠাৎ করেই সচিব পর্যায়ে বৈঠক হলো, তখন বলা হলো (৫ জানুয়ারি ২০১০) তিস্তার পানি বণ্টনে ঢাকা-নয়াদিলি্ল মতৈক্য। মনমোহনের সফরের আগে আমাদের পানিসম্পদ সচিব নয়াদিলি্ল গেলেন এবং চূড়ান্ত করলেন সেই চুক্তির রূপরেখা। কিন্তু আমরা সেই অন্ধকারেই থেকে গেলাম। ঢাকায় কোথাও আলোচনা হলো না তিস্তার পানি বণ্টনের বিষয়টি নিয়ে। এখন মনমোহনের সফরের পর শোনা যাচ্ছে ভারতের পানিসম্পদ মন্ত্রী ঢাকায় আসবেন চুক্তিটি স্বাক্ষরের জন্য। তার সঙ্গে মমতা ব্যানার্জিও নাকি আসবেন!আমাদের জন্য তিস্তার পানি বণ্টনের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৮৭ সালের আগ পর্যন্ত তিস্তা নদীই ছিল উত্তরবঙ্গের প্রধান নদী। কিন্তু পানি বণ্টনের ব্যাপারে ভারতের একগুঁয়েমি, ঢিলেমি ও হঠকারিতার ফলে তিস্তা এখন রুক্ষ হয়ে উঠেছে। নদীর তলদেশে অজস্র পাথর, নুড়ি, বালু আর পলি জমে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। ফলে তিস্তার বকু জুড়ে এখন শুষ্ক মৌসুমে কেবল বালু আর বালু। অন্যদিকে বর্ষাকালে মূল গতিপথ বদলে তিস্তা প্রচ-ভাবে আছড়ে পড়ে দুই তীরে। ফলে নির্দয় ভাঙনে ফি বছর ২০ হাজার মানুষ বাড়িঘর, গাছপালা, আবাদি জমি হারিয়ে ভিখারি হয়ে পড়ে। ১৯৮৫ সালে তিস্তার উৎসমুখে এবং তিস্তার ব্যারেজ সেচ প্রকল্পের মাত্র ৬৫ কিলোমিটার উজানে ভারত গজলডোবা নামক স্থানে ব্যারেজ নির্মাণ করে। এর ফলে প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে দেশের সর্ববৃহৎ তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্পটি সেচ প্রদানে অকার্যকর হয়ে পড়ে। এই প্রকল্পের উপকৃত এলাকা ৭ লাখ ৫০ হাজার হেক্টর। এ অঞ্চলে প্রবাহিত বুড়ি তিস্তা, যমুনেশ্বরী, দেওনাই, চাড়ালকোটা, বুড়িখোড়া, বাগযোগড়া, ঘাঘটের এখন দুঃসময়। এর প্রধান নদীগুলো নাব্যতা হারিয়ে এখন পানিশূন্য। ফলে এ অঞ্চলের প্রধান সেচনির্ভর ইরি-বোরো চাষাবাদ এখন হুমকির মুখে, যা কি-না আমাদের খাদ্য সংকটকে ঘনীভূত করছে এবং খাদ্য নিরাপত্তাকে আরো ঝুঁকির মাঝে ঠেলে দিয়েছে। তিস্তা নদী এখন শুধু নামে আছে। পানি নেই বললেই চলে। ভরাট হয়ে গেছে ৬৫ কিলোমিটার নদী। এই ধারা অব্যাহত থাকলে ২০২০ সালে এ অঞ্চল মরুভূমিতে পরিণত হবে।
১৯৮৩ সালের জুলাই মাসে দুই দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে তিস্তার পানি বণ্টনে শতকরা ৩৬ ভাগ বাংলাদেশ, ৩৯ ভাগ ভারত ও ২৫ ভাগ নদীর জন্য রাখার একটি সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু তা কার্যকর হয়নি। পরবর্তীকালে বাংলাদেশ তিস্তার পানির ৮০ ভাগ দু'দেশের মধ্যে বণ্টন করে ২০ ভাগ নদীর জন্য রেখে দেয়ার প্রস্তাব করেছিল। কিন্তু ভারত সে প্রস্তাব গ্রহণ না করে উল্টো তিস্তার কমান্ড এরিয়া তাদের বেশি, এরকম দাবি তুলে বাংলাদেশ তিস্তার পানির সমান ভাগ পেতে পারে না বলে যুক্তি দেখিয়েছিল। শুধু তাই নয়, ভারত তিস্তা ব্যারেজের সেচ এলাকা কমিয়ে দ্বিতীয় প্রকল্প বাতিল করার জন্য চাপ দিয়েছিল এবং সর্বশেষ এক চিঠিতে তিস্তার মাত্র ২০ ভাগ পানি ভাগাভাগি করার বিষয়টি জানিয়ে দিয়ে হঠকারী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছিল (নয়াদিগন্ত, ৬ মে ২০০৮)। এই যখন পরিস্থিতি তখন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান বলেছিলেন নদীর উপর নির্ভরশীল জমি ও জনসংখ্যার ভিত্তিতে তিস্তা নদীর পানি ভাগাভাগি হবে। এ কারণেই প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক যে, বাংলাদেশের স্বার্থ এতে করে কতটুকু রক্ষিত হবে? 'নদীর উপর নির্ভরশীল জমি ও জনসংখ্যা' কীভাবে নির্ধারিত হয়েছে, সেটা নিয়ে প্রশ্ন থাকবেই। ভারতের বর্তমান অবস্থানটা আমরা জানি না। শেষ পর্যন্ত কী মমতার দাবির কাছে নতি স্বীকার করে আমরা একটা সমঝোতা করতে যাচ্ছি? এতে করে কী বাংলাদেশের হিস্যা এখন কমে যাবে? ধারণা করছি চুক্তি স্বাক্ষরের পর আমরা বিস্তারিত জানতে পারবো। কিন্তু ততদিনে তো করার কিছুই থাকবে না। আন্তর্জাতিকভাবে একটা চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর, হুট করে সেই চুক্তি বাতিল করা যায় না। এতে আন্তর্জাতিক আসরে একটি দেশের (এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ) ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। ভারত বড় দেশ। বড় অর্থনীতি। বাংলাদেশের কোনো সরকারের পক্ষেই ভারতের সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তি বাতিল করা সম্ভব নয়। অতীতে বিএনপি সরকারও পারেনি। তারা চুক্তির সমালোচনা করেছে। কিন্তু ওই পর্যন্তই।
ফেনী নদীর পানি প্রত্যাহার নিয়ে যে চুক্তি হবে আগামীতে তা নিয়েও কথা আছে। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের সময় আমরা এ ধরনের কথা শুনেছিলাম। আমরা রাজি হয়েছিলাম ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সাবরুমে সুপেয় পানির জন্য একটি শোধনাগার নির্মাণ করতে ফেনী নদী থেকে ১ দশমিক ৮২ কিউসেক পানি ভারতকে প্রত্যাহার করে নেয়ার। কিন্তু এতে করে, অর্থাৎ ফেনী নদীর পানি প্রত্যাহারের ফলে মুহুরী সেচ প্রকল্পের আওতাধীন চট্টগ্রাম ও ফেনী জেলার ইরি সেচ হুমকির মুখে থাকবে। ফেনী নদীর পানি প্রত্যাহার করে নেয়া হলে নদীর নিচু এলাকায় বাংলাদেশের নদী ও তীরবর্তী বিশাল অংশ শুকিয়ে যাবে। প্রত্যাহারকৃত পানি দিয়ে ভারত তার সেচ প্রকল্পগুলো শুরু করতে পারবে। এই বর্ষাকালেও ঢাকা-চট্টগ্রাম পুরাতন মহাসড়কের শুভপুর ব্রিজ এলাকায় ফেনী নদীর প্রশস্ততা ১০০ মিটারের কমে নেমে এসেছে। শীতকালে পানি তলানিতে গিয়ে পেঁৗছবে। সৃষ্টি হবে বালুচরের।
মমতা পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থেই চুক্তি স্বাক্ষরে সম্মতি দিলেন না। মমতার সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গে তিস্তার পানির উপর নির্ভরশীল অঞ্চলে মমতার পক্ষে মিছিল হয়েছে। এতে করেই বোঝা যায় কেন মমতা চুক্তি স্বাক্ষরে তার সম্মতি দেননি। মমতা রাজনীতি করেন। বিধানসভা নির্বাচনে তিনি তাদের ভোট পেয়েছেন। সামনে উপনির্বাচন এবং পঞ্চায়েত নির্বাচন। তার জন্য এই নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই মমতার এই পিছুটান। এখন মমতাকে রাজি করাবে কে? আমাদের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মমতা ব্যানার্জির একটি ব্যক্তিগত সম্পর্ক রয়েছে। বিধানসভার নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর মমতা ব্যানার্জিকে ফোনে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যদিও প্রটোকল অনুযায়ী একজন প্রধানমন্ত্রী একজন মুখ্যমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানাতে পারেন না। তবে 'রাজনীতির স্বার্থে' অনেক সময় প্রটোকলের বাইরেও যেতে হয়। শেখ হাসিনা গিয়েছিলেন। কেননা তিনি জানেন মমতকে তার প্রয়োজন রয়েছে। ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সমস্যা সমাধানে মমতাকে প্রয়োজন রয়েছে বাংলাদেশের। কেননা মমতা ভারতের কেন্দ্রীয় ইউপিএ সরকারের উপর প্রভাব বিস্তার করার ক্ষমতা রাখেন। মন্ত্রিসভায় জাতীয় কংগ্রেসের বাইরে সবচেয়ে বেশি প্রতিনিধিত্ব রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের। পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে, প্রয়োজনে তিস্তার পানি চুক্তির ব্যাপারে শেখ হাসিনা কলকাতা যেতেও রাজি। এটি কোন সরকারি সূত্র নয়। সংবাদটির সত্যতাও যাচাই করা সম্ভব হয়নি। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার একজন দূতকে পাঠাতে পারেন কলকাতায়। আর ভারতের অভিজ্ঞতা বলে 'কোনো আমলাকে' দিয়ে রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। কোনো উপদেষ্টা নয়, বরং 'একজন রাজনীতিবিদ'ই পারেন সমাধানের পথ খুঁজতে। আমরা মমতা ব্যানার্জিকেও বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানাতে পারি। তাকে দেখাতে পারি পানির অভাবে আমাদের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা। আমার বিশ্বাস, মমতা ব্যানার্জিকে রাজি করানো আমাদের জন্য কোনো কঠিন কাজ হবে না আগামীতে।
ফেনী নদীর পানি প্রত্যাহার নিয়ে যে চুক্তি হবে আগামীতে তা নিয়েও কথা আছে। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের সময় আমরা এ ধরনের কথা শুনেছিলাম। আমরা রাজি হয়েছিলাম ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সাবরুমে সুপেয় পানির জন্য একটি শোধনাগার নির্মাণ করতে ফেনী নদী থেকে ১ দশমিক ৮২ কিউসেক পানি ভারতকে প্রত্যাহার করে নেয়ার। কিন্তু এতে করে, অর্থাৎ ফেনী নদীর পানি প্রত্যাহারের ফলে মুহুরী সেচ প্রকল্পের আওতাধীন চট্টগ্রাম ও ফেনী জেলার ইরি সেচ হুমকির মুখে থাকবে। ফেনী নদীর পানি প্রত্যাহার করে নেয়া হলে নদীর নিচু এলাকায় বাংলাদেশের নদী ও তীরবর্তী বিশাল অংশ শুকিয়ে যাবে। প্রত্যাহারকৃত পানি দিয়ে ভারত তার সেচ প্রকল্পগুলো শুরু করতে পারবে। এই বর্ষাকালেও ঢাকা-চট্টগ্রাম পুরাতন মহাসড়কের শুভপুর ব্রিজ এলাকায় ফেনী নদীর প্রশস্ততা ১০০ মিটারের কমে নেমে এসেছে। শীতকালে পানি তলানিতে গিয়ে পেঁৗছবে। সৃষ্টি হবে বালুচরের।
মমতা পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থেই চুক্তি স্বাক্ষরে সম্মতি দিলেন না। মমতার সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গে তিস্তার পানির উপর নির্ভরশীল অঞ্চলে মমতার পক্ষে মিছিল হয়েছে। এতে করেই বোঝা যায় কেন মমতা চুক্তি স্বাক্ষরে তার সম্মতি দেননি। মমতা রাজনীতি করেন। বিধানসভা নির্বাচনে তিনি তাদের ভোট পেয়েছেন। সামনে উপনির্বাচন এবং পঞ্চায়েত নির্বাচন। তার জন্য এই নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই মমতার এই পিছুটান। এখন মমতাকে রাজি করাবে কে? আমাদের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মমতা ব্যানার্জির একটি ব্যক্তিগত সম্পর্ক রয়েছে। বিধানসভার নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর মমতা ব্যানার্জিকে ফোনে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যদিও প্রটোকল অনুযায়ী একজন প্রধানমন্ত্রী একজন মুখ্যমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানাতে পারেন না। তবে 'রাজনীতির স্বার্থে' অনেক সময় প্রটোকলের বাইরেও যেতে হয়। শেখ হাসিনা গিয়েছিলেন। কেননা তিনি জানেন মমতকে তার প্রয়োজন রয়েছে। ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সমস্যা সমাধানে মমতাকে প্রয়োজন রয়েছে বাংলাদেশের। কেননা মমতা ভারতের কেন্দ্রীয় ইউপিএ সরকারের উপর প্রভাব বিস্তার করার ক্ষমতা রাখেন। মন্ত্রিসভায় জাতীয় কংগ্রেসের বাইরে সবচেয়ে বেশি প্রতিনিধিত্ব রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের। পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে, প্রয়োজনে তিস্তার পানি চুক্তির ব্যাপারে শেখ হাসিনা কলকাতা যেতেও রাজি। এটি কোন সরকারি সূত্র নয়। সংবাদটির সত্যতাও যাচাই করা সম্ভব হয়নি। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার একজন দূতকে পাঠাতে পারেন কলকাতায়। আর ভারতের অভিজ্ঞতা বলে 'কোনো আমলাকে' দিয়ে রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। কোনো উপদেষ্টা নয়, বরং 'একজন রাজনীতিবিদ'ই পারেন সমাধানের পথ খুঁজতে। আমরা মমতা ব্যানার্জিকেও বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানাতে পারি। তাকে দেখাতে পারি পানির অভাবে আমাদের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা। আমার বিশ্বাস, মমতা ব্যানার্জিকে রাজি করানো আমাদের জন্য কোনো কঠিন কাজ হবে না আগামীতে।
ড. তারেক শামসুর রেহমান
অধ্যাপক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
tsrahmanbd@yahoo.com
tsrahmanbd@yahoo.com
0 comments:
Post a Comment