রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

তিনি এলেন, দেখলেন, জয় করতে পারলেন কি?

নরেন্দ্র্র
নরেন্দ্র্র
নরেন্দ্র্র
মোদি বাংলাদেশে এসেছিলেন বিশাল এক সম্ভাবনা জাগিয়ে। আবার চলেও গেলেন একরাশ প্রতিশ্রুতি দিয়ে। কিন্তু কতটুকু জয় করতে পারলেন বাংলাদেশের মানুষের মন? বলার অপেক্ষা রাখে না, রোববার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র্রে তিনি যখন বাংলাদেশের সালমা, সাকিব, নিশাত আর ওয়াসফিয়াদের প্রশংসা করছিলেন, তখন আমার মনে হয়েছিল, ভিন্ন এক ভারতীয় নেতাকে আমরা দেখছি। তিনি সত্যিকার অর্থেই বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসা চান। তিনি সত্যিকার অর্থেই বাংলাদেশকে সঙ্গে নিয়ে চলতে চান। তার সেই মনোমুগ্ধকর ভাষণ আমাকে স্মরণ করিয়ে দিল ১৯৬৩ সালের ২৮ আগস্ট ওয়াশিংটনে কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকার আদায়ের অন্যতম নেতা মার্টিন লুথার কিংয়ের সেই বিখ্যাত উক্তি উই হ্যাভ এ ড্রিম। আমি তুলনা করতে চাই না। কিন্তু নরেন্দ্র মোদি যখন বলেন, সূর্য এখানে আগে ওঠে, এরপর আলো আমাদের (ভারত) এখানে যায়। এখানে যত আলোই হোক, আলো আমাদের ওখানেও যায়। একজন কবি, একজন রাজনীতিক নরেন্দ্র মোদি ঢাকায় মানুষকে কাছে টেনেছেন, এটা অস্বীকার করা যাবে না। সেই ইন্দিরা গান্ধী ১৯৭২ সালের মার্চে ঢাকায় এসে এরকম এক উষ্ণ আতিথেয়তা পেয়েছিলেন। তারপর ভারতের কত প্রধানমন্ত্রী এলেন, গেলেন। সম্পর্কের কোনো উন্নতি হয়নি। মনমোহন সিংও এসেছিলেন। কিন্তু কেউই সেই প্রত্যাশা জাগাতে পারেননি। এবার ঢাকায় এসে মোদি যে প্রত্যাশার ঢেউ জাগিয়ে গেলেন, ভারত কি এটা ধরে রাখতে পারবে? আমলাতন্ত্রের ম্যারপ্যাঁচে এই সম্ভাবনার কি মৃত্যু ঘটবে? আগামী দিনগুলোই বলবে মোদি কতটুকু আন্তরিক। তবে আমার ধারণা, বাংলাদেশের মানুষ তার ওপর আস্থা রেখেছে। এটা স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, কিছু আশ্বাস-প্রতিশ্রুতি দিয়ে নরেন্দ্র মোদি তার ঢাকা সফর শেষ করেছেন। তার এ সফরে ইতিবাচক দিক যেমন আছে, তেমনি আছে নেতিবাচক দিকও। তবে তুলনামূলক বিচারে নেতিবাচক দিকই বেশি। টিপাইমুখ বাঁধ হবে না- এটা যৌথ ঘোষণায় স্থান পেয়েছে। এর পেছনে বাংলাদেশের পরিবেশবাদী আন্দোলনকারীদের পাশাপাশি ভারতীয় পরিবেশবাদীদেরও কৃতিত্ব দিতে হবে। তারাই সেখানে জনমত সৃষ্টি করেছিলেন। তবে এ ব্যাপারে ভারতে যে চুক্তিটি হয়েছিল, তার ভবিষ্যৎ কী, সেটা একটা প্রশ্ন বটে। আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে না- এমন স্বীকারোক্তি নেই। তবে বলা হয়েছে, ভারত এমন কিছু করবে না যাতে বাংলাদেশের ক্ষতি হয়। এটা একটা কূটনৈতিক ভাষা। ভারতের উচ্চ আদালতের একটি রায় আছে এ ব্যাপারে। রায়ে আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছিল। ভারত এখন সেই রায়টি কীভাবে বাস্তবায়ন করে, সেটাই দেখার বিষয়।মোদির সঙ্গে খালেদা জিয়া দেখা করেছেন। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের আপত্তিকে মোদি বিবেচনায় নেননি। এটাই হচ্ছে তার রাজনীতির বৈশিষ্ট্য। ঢাকায় এসে তিনি বলেছিলেন, ভারতে সব দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে স্থলসীমানা চুক্তি তিনি সংসদের উভয় কক্ষে পাস করিয়ে নিয়েছিলেন। সব দলের সঙ্গে পরামর্শ করার এই যে মানসিকতা, সেই মানসিকতারই প্রতিফলন ঘটল বাংলাদেশে। এটা বাংলাদেশের নেতাদের জন্যও একটি মেসেজ হতে পারে। সব দলের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়েই জাতীয় ঐক্য নিশ্চিত করা সম্ভব। মোদি পেরেছেন ভারতে। রাজ্যসভায় তার দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকলেও সেখানে তিনি সবার সমর্থন নিশ্চিত করতে পেরেছিলেন। কিন্তু আমরা পারিনি।নরেন্দ্র মোদির এই সফর ও যৌথ ঘোষণাপত্র সব ধরনের বিতর্কের ঊর্ধ্বে তা বলা যাবে না। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বেশকিছু বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না হওয়ায় তা এক ধরনের হতাশার জন্ম দেবে- এটা অস্বীকার করা যাবে না। প্রথমত, তিস্তার পানিবণ্টনের ব্যাপারে কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা না থাকায় আমাদের তা হতাশ করেছে। মমতা ব্যানার্জি ঢাকায় এসেছিলেন আবারও। কিন্তু তা বাংলাদেশের স্বার্থে নয়, পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থেও নয়। তিনি এসেছিলেন মোদির অনুরোধে এবং মোদির স্বার্থে। এবারও আমরা তার কাছ থেকে কোনো কমিটমেন্ট পেলাম না। বরং তিনি বাংলাদেশ আত্রাই নদীতে বাঁধ দিয়ে পানি প্রত্যাহার করে নিয়েছে- কলকাতায় এ অভিযোগ তুলে তিস্তার পানিবণ্টনের বিষয়টি থেকে দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরানোর একটি অপচেষ্টা চালালেন। দীর্ঘ প্রায় ৪৩ বছরের যৌথ নদী কমিশনের বৈঠকের ইতিহাসে ভারতের পক্ষ থেকে কখনও এ ধরনের অভিযোগ উত্থাপিত হয়নি। এবার হল। উদ্দেশ্য পরিষ্কার- মমতা সম্ভাব্য তিস্তা চুক্তির পেছনে ছুরিকাঘাত করতে চান।দ্বিতীয়ত, ৬৫ দফা যৌথ ঘোষণাপত্রে অঙ্গীকার করা হয়েছে যে, ২০২১ সালে বাংলাদেশ যে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করার পরিকল্পনা করছে, সেখানে ভারত অংশীদার হতে চায়। অংশীদার হওয়া এক বিষয়, আর বিদ্যুতের নিয়ন্ত্রণ ভারতের হাতে চলে যাওয়া অন্য বিষয়। এখন পরিস্থিতি কী সেদিকেই যাচ্ছে না? দুটি ভারতীয় কোম্পানির (রিল্যায়েন্স ও আদানি) সঙ্গে ৪ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যাপারে চুক্তি হয়েছে। এতে কি বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষিত হয়েছে? হলে কতটুকু হয়েছে? রিল্যায়েন্স করবে এলএনজি প্ল্যান্ট। তরলকৃত গ্যাস দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে। কিন্তু অবকাঠামো ও বিদ্যুৎ লাইন টেনে নেয়ার দায়িত্বটি বাংলাদেশের। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম কিংবা চুক্তির বিস্তারিত আমরা জানি না। বিদ্যুৎ বিভাগের ওয়েবসাইটেও তা প্রকাশ করা হয়নি। আর আদানি গ্রুপ ভারতীয় কয়লায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে। এটা সবাই জানে, ভারতীয় কয়লা নিকৃষ্টমানের। অথচ আমাদের ৫টি কয়লা খনিতে যে কয়লা পাওয়া যায়, তা উন্নতমানের, বিটুমিনাস কয়লা। প্রশ্ন হচ্ছে, আমাদের কয়লা দিয়ে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র করা হল না কেন? উপরন্তু আমাদের দেশে এখন অনেক উদ্যোক্তা রয়েছেন, যারা বিদ্যুৎ সেক্টরে বড় বিনিয়োগ করতে পারেন। তাদের কেন এ সুযোগটি দেয়া হল না? উন্মুক্ত টেন্ডারেও দুটি ভারতীয় কোম্পানিকে এ কাজ দেয়া হয়নি। সরকারের উচ্চপর্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগের কারণে এবং মোদির ব্যক্তিগত আগ্রহেই এ কাজ ভারতীয় কোম্পানি পেয়েছে। এটা এখন অনেকেই জানেন, আদানি গ্রুপ গুজরাটের ব্যবসায়ী গ্রুপ। তাদের সঙ্গে মোদির ব্যক্তিগত সখ্য রয়েছে। মোদির নির্বাচনী প্রচারণায় এই শিল্পগোষ্ঠীর অবদান ছিল অনেক। এখন তারা বাংলাদেশে একটি কাজ পেল। হয়তো অনেকেই জানেন না, আদানি গ্রুপ বাংলাদেশে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণেও আগ্রহ দেখিয়েছিল। অথচ এ কাজে এদের কোনো অভিজ্ঞতা নেই। রিল্যায়েন্স গ্রুপের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।তৃতীয়ত, ভারত যে ২০০ কোটি ডলার ঋণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তাতে বাংলাদেশ কতটুকু লাভবান হবে? এ ঋণ নেয়া হবে সাপ্লায়ার্স ক্রেডিটের আওতায়। আমরা অনেক আগে থেকেই বলে আসছি সাপ্লায়ার্স ক্রেডিটে নেয়া ঋণ ভালো ঋণ নয়। এতে করে ঋণ দেয়া দেশের কাছে দায়বদ্ধতা বরং ভারতীয় স্বার্থই রক্ষা করবে বেশি। সম্প্রতি ভারতের পত্রিকা টাইমস অব ইন্ডিয়াও একই ধরনের মন্তব্য করেছে। তারা বলেছে, ঋণের অর্থ যেসব প্রকল্প ব্যয় করা হবে, তার কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি ও সেবা ভারত থেকে কিনতে হবে। অর্থাৎ ঋণের দায় বাংলাদেশের, আর সুদাসল ছাড়াও রফতানি ব্যবসা হবে ভারতের। এ ঋণের টাকায় যেসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে, তাতে ভারতের ৫০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে। দেখা যাবে, এসব প্রকল্পে যে জনবল ও পণ্য দরকার হবে (ঠিকাদার, ইস্পাত, সিমেন্ট, ইট, যন্ত্রপাতি, ইঞ্জিনিয়ার), তা সরবরাহ করবেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। এমনকি অদক্ষ জনশক্তিও আসতে পারে। অথচ এসব পণ্য বাংলাদেশ উৎপাদন করে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা বিদেশেও রফতানি হয়। আমাদের দক্ষ জনশক্তি (ইঞ্জিনিয়ার, আর্কিটেক্ট) আছে। কিন্তু আমরা তাদের এ ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারব না। তাই আমরা কখনও বলি না সাপ্লায়ার্স ক্রেডিট একটি ভালো ঋণ। একসময় সমাজতান্ত্রিক দেশগুলো এ ধরনের ঋণ দিত (তারা অবশ্য বার্টার ট্রেড করত; আমাদের পণ্য নিত বিনিময়ে)। ভারত কিন্তু তা করবে না। বার্টার ট্রেডে ভারতের সঙ্গে আমাদের ব্যবসা হয় না।মোদির সফরের প্রাক্কালে আমাদের প্রত্যাশা ছিল অনেক। যেমন বলা যেতে পারে তিস্তাসহ সব নদীর পানিবণ্টন, বাণিজ্য ঘাটতি কমানো, আঞ্চলিক যোগাযোগ বা কানেকটিভিটি, ভারতের স্থলবন্দরগুলোতে ওয়্যার হাউস নির্মাণ, এলসি ওপেন করার ব্যাপারে ভারতের সাতবোন রাজ্যে অবস্থিত ব্যাংকগুলোতে সুযোগ দান, কান্ট্রি অব অরিজিনের ঝামেলা দূর করা, ওষুধের ক্ষেত্রে ভারতের নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর করা, সীমান্ত হত্যা বন্ধ করা, ভিসা সহজীকরণ এবং শুল্ক-অশুল্ক বাঁধা দূর করা। এতে কোনো একটি ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট অগ্রগতি হয়েছে, তা বলা যাবে না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আশাবাদ ও প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। এতে করে আমাদের স্বার্থ রক্ষিত হবে কম।আরও একটি কথা- যৌথ ঘোষণাপত্রে একটি উপ-আঞ্চলিক জোট বিবিআইএন (বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, নেপাল) গঠনের কথা বলা হয়েছে। পাঠকদের একটু স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, এ ধরনের একটি উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার প্রস্তাব ভারত অনেক আগেই দিয়েছিল। ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেবগৌড়ার বাংলাদেশ সফরের সময় (জানুয়ারি ১৯৯৭) ভারত এই ৪টি দেশ নিয়ে (ভারতের সাতবোন রাজ্য) একটি উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়েছিল। পরবর্তীকালে এই উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার নতুন নাম হয় দক্ষিণ এশীয় উন্নয়ন চতুর্ভুজ (এসএজিকিউ)। ১৯৯৭ সালের এপ্রিলে কাঠমান্ডুতে চার দেশের পররাষ্ট্র সচিবদের যে বৈঠক হয়েছিল, তাতে এসএজিকিউ গঠনের সিদ্ধান্তও হয়েছিল। সার্ক সম্মেলনেও এসএজিকিউ গঠনে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এখন এসএজিকিউর পরিবর্তে আমরা পেলাম বিবিআইএন। এটা অনেকেই জানেন, শুধু ভারতের কারণেই সার্ক বিকশিত হতে পারছে না। সার্কের একটি সম্ভাবনা থাকলেও তা বিকশিত হয়নি। এখন বিবিআইএন বাস্তবায়িত হলেও সেখানে ভারতের কর্তৃত্ব ও প্রভাব বাড়বে। ভারত তার সাতবোন রাজ্যের উন্নয়নে এই উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতাকে ব্যবহার করবে। আর এতে ধীরে ধীরে সার্ক একটি অকার্যকর সংগঠনে পরিণত হবে। উল্লেখ্য, ১৯৯৭ সালের ১২-১৪ মে মালেতে স্বাক্ষরিত সাফটার (সাউথ এশিয়ান ফ্রি-ট্রেড অ্যারেঞ্জমেন্ট) ভবিষ্যৎও এখন অনিশ্চিত। সাফটা অনুযায়ী ২০০১ সালের মধ্যেই দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে কোনো ধরনের ট্যারিফ, প্যারা-ট্যারিফ থাকার কথা নয়। সাফটায় বাংলাদেশকে কম উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছিল। এতে করে বাংলাদেশী পণ্য ভারতে প্রবেশের ব্যাপারে বিশেষ সুবিধা পাওয়ার কথা। কিন্তু বাংলাদেশ তা পাচ্ছে না। আসলে বাংলাদেশে ভারতীয় পণ্যের একটি বড় বাজার সৃষ্টি হয়েছে। এখন কানেকটিভিটি চুক্তিটি দ্বিপক্ষীয়ভাবে বাস্তবায়িত হওয়ায় সাতবোন রাজ্যে বাংলাদেশী পণ্যের যে বিশাল বাজার রয়েছে, তা হুমকির মুখে পড়বে। দ্বিপাক্ষিকতা কোনো ভালো অ্যাপ্রোচ হতে পারে না। বহুপক্ষীয়ভাবেই সমস্যার সমাধান ও উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব।জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ভারতের স্থায়ী সদস্যপদ প্রাপ্তিকে আমরা সমর্থন করেছি এবং যৌথ ঘোষণাপত্রেও তা আছে। কিন্তু এতে করে অনেক প্রশ্নের জন্ম হতে পারে এখন। এক. জাপান এতে অখুশি হতে পারে। কারণ জাপানও স্থায়ী সদস্যপদ পেতে চায়। আমাদের জাপানকেও সমর্থন করা উচিত। জাপানের সঙ্গে সম্পর্ক আমাদের অর্থনৈতিক কূটনীতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য। জাপানের সঙ্গে আমাদের স্বার্থ অনেক বেশি। দুই. ভারতের স্থায়ী সদস্যপদে চীনের আপত্তি রয়েছে। এখন ভারতকে বাংলাদেশের সমর্থন চীনের সঙ্গে সম্পর্ককে একটি ঝুঁকির মাঝে ঠেলে দিল। চীন অসন্তুষ্ট হয় এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া আমাদের ঠিক নয়। চীনের সঙ্গে আমাদের স্বার্থ বেশি। চীন সফর করে প্রধানমন্ত্রী একটি ভারসাম্যমূলক পররাষ্ট্র নীতি পরিচালনা করে আসছিলেন, যা সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছিল। কিন্তু এখন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতিতে একটু টিল্ট পলিসি, অর্থাৎ ভারতের দিকে ঝুঁকে পড়ার প্রবণতা লক্ষণীয়। সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ কাজ চীনকে না দেয়া (এ পরিকল্পনা ভারতের আপত্তির কারণে বাতিল হয়েছে), কিংবা বিসিআইএম জোটকে (বাংলাদেশ-চীন-ভারত-মিয়ানমার) গুরুত্ব না দিয়ে বিবিআইএনকে গুরুত্ব দেয়ায় চীনের সঙ্গে সম্পর্ক শীতল হতে বাধ্য। বিসিআইএম জোট বিকশিত না হলে (যা এখন কাগজে-কলমে থেকে যেতে পারে) আশিয়ানভুক্ত দেশে সঙ্গে আমাদের স্বার্থ বিঘ্নিত হবে। আমাদের পণ্যের বাজার সম্প্রসারিত হবে না।নরেন্দ্র মোদির বক্তব্য আর প্রতিশ্রুতির রেশ যে বাংলাদেশের রাজনীতিতে আরও কিছুদিনের জন্য থেকে যাবে, তা অস্বীকার করা যাবে না। নরেন্দ্র মোদি যখন বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে তার বক্তৃতায় আমাদের দেশের সাকিব-নিশাতদের কৃতিত্বকে স্বীকৃতি দেন, তখন একটা ধারণা জন্ম হয় যে, তিনি বাংলাদেশকে সমমর্যাদার দৃষ্টিতে দেখতে চান। আমরা এমনটাই চাই। ভারতের ২,৩০৮ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি থেকে আমরাও উপকৃত হতে চাই। দেখতে চাই নিজেদের উন্নত দেশ হিসেবে। কিন্তু ভারতের আমলাতন্ত্রের মানসিকতায় আদৌ পরিবর্তন আসবে কি-না, সেটাই বড় প্রশ্ন এখন। নরেন্দ্র মোদির দেয়া প্রতিশ্রুতি যদি বাস্তবায়িত না হয়, তাহলে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ককে আরও উন্নত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যাবে না। ভারত যদি শুধু নিজেদের স্বার্থ দেখে, বাংলাদেশের স্বার্থ না দেখে, তাহলে দিল্লির প্রতি অবিশ্বাস আরও বাড়বে। ব্যবসাবান্ধব প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আগামীতে বাংলাদেশের স্বার্থ কতটুকু দেখবেন, সেটাই বড় প্রশ্ন এখন। Daily Jugantor 11.06.15

0 comments:

Post a Comment