বিশাল একটা প্রত্যাশার ঢেউ জাগিয়ে নরেন্দ্র মোদি ঢাকা ছেড়েছেন গত ৭ জুন। এর আগে তিনি বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের উদ্দেশে একটি আবেগময়ী ভাষণ দেন। কিন্তু মোদির এই সফর রেখে গেছে নানা প্রশ্ন। বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এই সফর সফল কী ব্যর্থ, আমার কাছে তা বড় বিবেচ্য নয়। আমার কাছে বিবেচ্য তিনি যে সম্ভাবনা ও প্রতিশ্রুতি দিয়ে গিয়েছেন, তার কতটুকু অর্জিত হবে এবং কবে হবে?
মূলত চারটি বিষয়ের আলোকে মোদির ঢাকা সফরকে বিশ্লেষণ করা যেতে পারে। এই চারটি বিষয় হচ্ছে অর্থনীতি, নিরাপত্তা, সন্ত্রাস দমন ও কানেকটিভিটি। এর মাঝে অর্থনীতি ও কানেকটিভিটির বিষয়টি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। অর্থনীতির ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, ভারত বাংলাদেশের কিছু প্রকল্পে অর্থায়ন করবে। সংবাদপত্রে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশ ভারতের কাছ থেকে ২০০ কোটি ডলারের সাহায্য পাবে। ইতোমধ্যে বেশ ক’টি প্রকল্পের ব্যাপারে ভারতের কাছে থেকে সম্মতি পাওয়া গেছে। এখানে সমস্যাটা হচ্ছে ভারতের ঋণের ধরন নিয়ে। ভারত এই ঋণ দিচ্ছে ‘সাপ্লাইয়ার্স ক্রেডিট’-এর আওতায়। ভারত নিজে কখনো ‘সাপ্লাইয়ার্স ক্রেডিট’ এ ঋণ গ্রহণ করে না (সর্বশেষ মোদির দক্ষিণ কোরিয়া সফরের সময় ১ হাজার কোটি ডলার ঋণ গ্রহণ করার কথা উল্লেখ করা যায়)। ‘সাপ্লাইয়ার্স ক্রেডিট’ এখন বিশ্বে অচল। কোনো রাষ্ট্রই সাধারণত এর আওতায় কোনো ঋণ গ্রহণ করে না। কেননা তাতে নানা শর্ত থাকে। যেমন বলা যায় ‘সাপ্লাইয়ার্স ক্রেডিট’ এ ঋণ নিলে ওই ঋণের আওতায় শতকরা ৭৫ ভাগ পণ্য আমাদের ওই দেশ (এ ক্ষেত্রে ভারত) থেকে কিনতে হবে। ঠিকাদার নিয়োগ হবে ওই দেশ থেকে। সুদ দিতে হবে শতকরা ১ ভাগ হারে। নির্দিষ্ট সময়ে প্রকল্প শেষ না হলে বাংলাদেশকে জরিমানা গুনতে হবে শতকরা ৫ ভাগ হারে। এটা কোনো ভালো ঋণ নয়। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের আর সুযোগ নেই ভারতের সঙ্গে এ ব্যাপারে আরো আলোচনা করার। এর আগে ভারতের কাছে থেকে ‘সাপ্লাইয়ার্স ক্রেডিট’ এর আওতায় ১০০ কোটি ডলার ঋণ আমরা পেয়েছিলাম। এ ব্যাপারে আমাদের তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে। সূক্ষ্মভাবে দেখলে দেখা যাবে, এখন যেসব প্রকল্পে এই ঋণ ব্যয় হবে, তাতে আমাদের চেয়ে ভারতই উপকৃত হবে বেশি। ভারতের ঋণ এখানে বেশি। দুটো প্রকল্পের কথা আমি উল্লেখ করলাম একটি হচ্ছে আশুগঞ্জ-আখাউড়া সড়ক চার লেনে উন্নীত করা। সাপ্লাইয়ার্স ক্রেডিটে ঋণ নেয়া নিয়ে প্রশ্ন থাকবেই। ভারত নিজেও সাপ্লাইয়ার্স ক্রেডিটে কোনো ঋণ গ্রহণ করে না। সড়কের পাশাপাশি আমরা ৫০০টি ডাবল ডেকার বাসও কিনব। এক্ষেত্রে বাসের মূল্য যা ভারতের নির্ধারণ করে দেবে, আমাদের তা মানতে হবে। এর চেয়ে সস্তায় অন্যত্র বাস পাওয়া গেলেও তা আমরা ক্রয় করতে পারব না। নৌ ট্রানজিটে বাংলাদেশ চেয়েছে ভুটান ও নেপালকে অন্তর্ভুক্ত করতে। কেননা এ দুটো দেশ থেকে নৌপথে কাঠ ও বোল্ডার সহজে আনা যায়। কিন্তু ভারত প্রথমে এ ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছিল। এখন তা মেনে নিয়েছে। ত্রিপুরার চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করার দাবি নিয়েও প্রশ্ন আছে। কেননা সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দরটি নির্মিত না হওয়ায় (ভারতের আপত্তির মুখে) আগামীতে চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের পণ্য রফতানি কিংবা আমদানিতে হিমশিম খাবে। সে ক্ষেত্রে ত্রিপুরা কিংবা ত্রিপুরার দেখাদেখি সাতবোন রাজ্যগুলো যদি এই বন্দর ব্যবহার করতে চায়, তাহলে বড় ধরনের সমস্যা তৈরি হবে। বাংলাদেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় রয়েছে একাধিক বাণিজ্য ঘাটতি কমানো, সাফটা চুক্তির আলোকে বাংলাদেশি পণ্যের ভারতে প্রবেশাধিকারের বিশেষ সুবিধা ও শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার, সীমান্ত হত্যা বন্ধে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ, ভিসা ব্যবস্থা সহজীকরণ, ভুটান ও নেপালকে ট্রানজিট দেয়া ইত্যাদি। এ ক্ষেত্রে কোনো একটি ক্ষেত্রে ভারতের দেয়া প্রতিশ্রুতি ভারত রক্ষা করেনি। ফলে ভারতের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন থাকবেই।
যে প্রশ্নের জবাব পাওয়া যায় নাতবে মোদির এই সফর নানা সম্ভাবনা সৃষ্টি করতে পারে আমাদের জন্য। মনে রাখতে হবে ভারত বড় অর্থনীতির দেশ। দক্ষিণ এশিয়ার মোট আয়তনের মধ্যে ৭২ ভাগ এলাকা একা ভারতের। মোট জনসংখ্যার ৭৭ ভাগ ভারতের। ভারতের অর্থনীতির অবস্থান (পিপিপি) বিশ্বে তৃতীয় কিংবা চতুর্থ এবং জাতিসংঘের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালে ভারতের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৭ ভাগে গিয়ে দাঁড়াবে, যখন চীনের অর্থনীতিতে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৭ দশমিক ২ ভাগ। সুতরাং ভারতের এই অর্থনৈতিক উন্নয়ন থেকে আমরা উপকৃত হতে চাই। অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। ১৯৭২ সালে স্বাক্ষরিত বাংলাদেশ-ভারত নৌ-প্রটোকলের আওতায় নদী খনন করা যেতে পারে, যাতে ভারতীয় পণ্য আমদানিতে আমরা নৌপথ ব্যবহার করতে পারি। এ ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংকের সাহায্য চাওয়া যেতে পারে। ভারত কানেকটিভিটির কথা বলে বাস সার্ভিস চালু করেছে। কলকাতা থেকে যাত্রী নিয়ে বাস যাবে ত্রিপুরায়। আবার ত্রিপুরা থেকে বাস যাবে শিলং ও গৌহাটি। প্রতিটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহƒত হবে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ শুল্ক পাবে কিনা, বাংলাদেশি বাস এই রুটে চলাচল করতে পারবে কিনা, তা স্পষ্ট নয়। কানেকটিভিটি সমর্থনযোগ্য ও এ যুগের বাস্তবতা। কিন্তু এই কানেকটিভিটির আওতায় ভুটান ও নেপালকে অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলা হচ্ছে। এটা যদি হয় তাহলে ভালো। আমরা তাতে উপকৃত হব। এই কানেকটিভিটির আওতায় আগামীতে যদি চীনকেও অন্তর্ভুক্ত করা যায়, সেটা আমাদের জন্যই মঙ্গল। কিন্তু তা কি হবে? সড়কপথে ভুটান ও নেপালের যে কথা বলা হচ্ছে, সেটা কতটুকু বাস্তবায়িত হবে, তা নিয়েও প্রশ্ন আছে। তিস্তা ছিল আমাদের অগ্রাধিকার তালিকায় এক নম্বরে। কিন্তু আমরা আগেই জানতাম তিস্তা নিয়ে আলোচনা হবে না। হয়ওনি। তবে মোদির আশাবাদ তিস্তা চুক্তি হবে।
ঢাকায় মমতা ব্যানার্জি এসেছিলেন বটে। কিন্তু তিস্তার জট এই মুহূর্তেই খুলবে এটা মনে করার কোনো কারণ নেই। উল্লেখ্য, তিস্তা একটি আন্তর্জাতিক নদী। সিকিম হয়ে ভারতের দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ি হয়ে পশ্চিমবঙ্গের ডুয়ামের সমভূমি দিয়ে চিলাহাটি থেকে চার-পাঁচ কিলোমিটার পূর্বে বাংলাদেশের নীলফামারী জেলার উত্তর খড়িবাড়ির কাছে ডিমলা উপজেলার ছাতনাই দিয়ে প্রবেশ করেছে তিস্তা নদী। ছাতনাই থেকে এ নদী নীলফামারীর ডিমলা, জলঢাকা, লালমনিরহাটের সদর, পাটগ্রাম, হাতিবান্ধা, কালীগঞ্জ, রংপুরের কাউনিয়া, পীরগাছা, কুড়িগ্রামের রাজারহাট, উলিপুর হয়ে চিলমারীতে গিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদে মিশেছে। ডিমলা থেকে চিলমারী এ নদীর বাংলাদেশ অংশের মোট ক্যাচমেন্ট এরিয়া প্রায় ১ হাজার ৭১৯ বর্গকিলোমিটার। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ নদী কমিশন গঠনের পর তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। ১৯৮৩ সালের জুলাই মাসে দুই দেশের মন্ত্রিপর্যায়ের এক বৈঠকে তিস্তার পানি বণ্টনে শতকরা ৩৬ ভাগ বাংলাদেশ ও ৩৯ ভাগ ভারত এবং ২৫ ভাগ নদীর জন্যে সংরক্ষিত রাখার বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল। কিন্তু ওই সিদ্ধান্তে তিস্তার পানি প্রবাহের পরিমাণ বা কোন জায়গায় পানি ভাগাভাগি হবে এ রকম কোনো বিষয় উল্লেখ না থাকায় তা আর আলোর মুখ দেখেনি। ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বরে তিস্তার পানির ৮০ ভাগ দু’দেশের মধ্যে বণ্টন করে বাকি ২০ ভাগ নদীর জন্য রেখে দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ভারত সেই প্রস্তাবে রাজি না হয়ে উল্টো তিস্তার কমান্ড এরিয়া তাদের বেশি এই দাবি তুলে বাংলাদেশ তিস্তার পানির সমান ভাগ পেতে পারে না এই দাবি উপস্থাপন করেছিল। এরপর আর তিস্তার পানি বণ্টনের জট খোলেনি। এখানে বলা ভালো বাংলাদেশ উত্তরাঞ্চলের নীলফামারী, রংপুর, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, জয়পুরহাট ও বগুড়া জেলার ৩৫টি উপজেলায় তিস্তা সেচ প্রকল্প হতে বর্ষা মৌসুমে সম্পূরক ও শুষ্ক মৌসুমে সেচ দেয়ার উদ্দেশ্য ১৯৭৯ সালের আগস্টে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের প্রথম ফেজ কাজের উদ্বোধন করে। এরপর ভারত ১৯৮৫ সালের তিস্তার উৎসমুখে এবং তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্পের মাত্র ৬৫ কিলোমিটার উজানে গজলডোবা নামক স্থানে গজলডোবা ব্যারাজ নির্মাণ করে। এর ফলে তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্পটি সেচ প্রদানে অকার্যকর হয়ে পড়ে।
এই সেচ প্রকল্পের উপকৃত এলাকা ৭ লাখ ৫০ হাজার হেক্টর। এ দিকে কিশোরগঞ্জ উপজেলার (নীলফামারী জেলার অন্তর্গত) বাহাগিলি নামক স্থানে তিস্তা প্রকল্পের দ্বিতীয় প্রকল্পের কাজও হাতে নেয়া হয়েছে। এ কাজ সম্পন্ন হলে রংপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া ও জয়পুরহাট জেলার ৪ লাখ ৪৮ হাজার হেক্টর জমি সেচের আওতায় আসবে। কিন্তু পানির অভাবে তিস্তার এখন শুধু নামে আছে। পানি নেই বললেই চলে। ভরাট হয়ে গেছে ৬৫ কিলোমিটার নদী। তিস্তা আন্তর্জাতিক নদী হওয়ায় জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক পানি প্রবাহ কনভেনশন ১৯৯৭ অনুযায়ী বাংলাদেশের পানি প্রাপ্তি স্বীকৃত। এখানে ভারতের কাছে চাওয়ার কিছু নেই। মমতা ব্যানার্জির আপত্তিও গ্রহণযোগ্য নয়। তিস্তা চুক্তিটি হওয়াটা বাঞ্ছনীয়। তিস্তা চুক্তি না হলে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ককে আরো উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া যাবে না। নরেন্দ্র মোদি নিশ্চয়ই এটি বোঝেন। মমতা ব্যানার্জিকে বোঝানোর দায়িত্ব তার। এখানে বাংলাদেশের করণীয় কিছু নেই। এখানে একটা কথা বিবেচনায় নিতে হবে। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর (পশ্চিমবঙ্গ) একটি সমঝোতা যদি হয় তাতে যেন বাংলাদেশের স্বার্থ অক্ষুণœ থাকে। আমরা যেন মমতা ব্যানার্জির চাপের কাছে আত্মসমর্পণ না করি।
বিদ্যুৎ সেক্টরে আমরা দুটি ভারতীয় কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করেছি। কিন্তু তাতে বাংলাদেশের স্বার্থ কতটুকু রক্ষিত হয়েছে? ভারতীয় কয়লায় এখানে বিদ্যুৎ প্লান্ট তৈরি হবে। কিন্তু আমরা কেন বড় পুকুরিয়ার ভালো মানের বিটুমিনাস কয়লা ব্যবহার করত পারব না? এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে অপর একটি কোম্পানি। এখানেও নানা প্রশ্ন আছে। বলা হচ্ছে, প্রায় ৪ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে এই দুটি কোম্পানি। চিন্তা করা যায় কী বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা আমরা ভারতীয়দের হাতে তুলে দিলাম? এতে হয়তো ভবিষ্যতে বিদ্যুৎ নিয়ে রাজনীতি হবে। কোনো এক অনাকাক্সিক্ষত ঘটনায় কোম্পানি যদি বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়, তাহলে কী হবে পরিস্থিতি? অর্থনীতি খাতে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হবে। এভাবে কোনো দেশ তার বিদ্যুৎ সেক্টর বিদেশিদের হাতে তুলে দেয় না। সাধারণত ২৫ থেকে ৩০ ভাগ বিদ্যুৎ যদি বেসরকারি তথা বিদেশিদের হাতে যায়, তাতে তেমন ক্ষতি হয় না। কিন্তু এর বেশি হলে জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে থাকে।
মোদি তার পররাষ্ট্র নীতিতে দক্ষিণ এশিয়াকে গুরুত্ব দিয়েছেন। এটা আমাদের জন্য একটা ভালো খবর এ জন্য যে, আমাদের উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় ভারত বড় অবদান রাখতে পারে। ভারত বড় অর্থনীতির দেশ। ভারতীয় সহযোগিতায় আমরা আমাদের উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে আরো ত্বরান্বিত করতে পারব। তবে এ ক্ষেত্রে ভারতকে বাংলাদেশকে সমমর্যাদার দৃষ্টিতে দেখতে হবে। ভারতকে দেখতে হবে উন্নয়নের সহযোগী হিসেবে। ভারত যদি বাংলাদেশে শুধু তার পণ্যের বাজার সম্প্রসারিত করতে চায়, তাতে সমমর্যাদা নিশ্চিত হবে না। বরং ভারতীয় বন্ধুত্বকে একটি প্রশ্নের মুখে ঠেলে দেবে। ভারতকে বাংলাদেশেরও অনেক কিছু দেয়ার আছে। কিন্তু সেখানে তৈরি হয়ে আছে নানা জটিলতা। তাই সঙ্গত কারণেই আমাদের প্রত্যাশা থাকবে নরেন্দ্র মোদি তার ব্যক্তিগত ক্যারিশমা দিয়ে সমস্যাগুলো সমাধানের উদ্যোগ নেবেন। ভারতীয় গণমাধ্যম এবং ভারতীয় নীতি-নির্ধারকরা ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের যে দ্বিপাক্ষিক সমস্যা রয়েছে, সে সম্পর্কে আদৌ অবগত নন, তা বিশ্বাস করি না। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, জিটুজি পর্যায়ে বাংলাদেশ ‘শক্ত’ অবস্থানে যেতে পারে না। আমাদের আমলারা ভারতের আমলাদের সমকক্ষ নন। দেন-দরবারে তারা বড় দুর্বল। এমনকি তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহেও তাদের রয়েছে সীমাবদ্ধতা। ফলে আমরা আমাদের অবস্থান নিশ্চিত করতে পারি না।
নরেন্দ্র মোদি ভারতের স্বার্থেই বাংলাদেশে এসেছেন। চুক্তিগুলোও হয়েছে তাদের স্বার্থে। তার পরও তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেছেন। আমরা তার ওপর আস্থা রাখতে পারি। একটি পরস্পরনির্ভরশীল সম্পর্ক দু’দেশের সম্পর্ককে আরো উচ্চতায় নিয়ে যাবে। মোদির এই সফরে আমাদের প্রত্যাশা মেটেনি সত্য কিন্তু মোদির ওপর ভরসা রাখতে চাই। দেখতে চাই তিনি বাংলাদেশের ব্যাপারে কতটুকু আন্তরিক।
Daily Manobkontho
14.06.15
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
0 comments:
Post a Comment